অলীক জন্মকাহিনী
যে নদীতে সাঁতার শিখেছিলাম
সেই নদীটিই আর নেই
মাঝে মাঝে নিজের গায়ে হাত বুলিয়ে ভাবি
সত্যিই কি একদিন সেই জলে ড়ুবেছি আর ভেসেছি?
ঝিরঝিরি করে ঝরে পড়ত জামরুল ফুল
বাড়ির ঠিক সামনেই পরমাত্মীয়ের মতন বাহুমেলা সেই গাছ
একটা ল্যাজঝোলা খয়েরি পাখি এসে বসত প্রায়ই
কী জানি কী নাম, লোকে বলত ইষ্টকুটুম
তেমন পাখি আর দেখি না কখনও
জামরুল গাছটা স্বপ্নের মতন ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে
ফুটপাথে জামরুল বিক্রি হয়, ছুঁই না কোনও দিন…
সন্ধেবেলা পুকুরে ড়ুব দিয়ে ভিজে গায়ে হেঁটে আসত
অন্য পাড়ার বিন্তি মাসি
আমার জীবনে সেই প্রথম দেখা নারী
সিংহিনীর মতন কোমরের খাঁজ, কচি বাতাবির মতন
ঘন স্তন
তানপুরার মতন নিতম্বের দোলানিতে মুহূর্তে মুহূর্তে
তাকে মনে হত স্বর্গের দেবী
সেই দেবীই দূর থেকে জাগিয়েছিল এক বালকের
যৌন তেজ
গায়ে আগুন লাগিয়ে বিন্তি মাসি একদিন হারিয়ে গেল হঠাৎ
সেই আগুন আমাকে আজও পোড়ায়!
এক পাশে রান্নাঘর, অন্য পাশে ধলা ঠাকুমার ঘর
আঁতুড় ঘর তৈরি হত মাঝখানের উঠোনে
বৃষ্টি, কী বৃষ্টি, এক বিদ্যুৎ চমকানো ভোরে
মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে দেখেছিলাম
গ্রাম বাংলার প্রথম নীল আলো
একটু দূরে বড় ঘরটার দাওয়ায় হুঁকো হাতে
বসেছিলেন ঠাকুর্দা
ট্যাঁ ট্যাঁ কান্না শুনে অট্টহাস্য করে উঠেছিলেন…
এই সব গল্প শোনানোর মানুষগুলি আর নেই
কোথায় সেই বাড়ি? অলীক হয়ে মিলিয়ে গেছে
সেই রান্নাঘর, সেই উঠোন, সেই দাওয়া, কিছুই নেই
বাস্তুভিটের ওপর দিয়ে এখন চালানো হয় লাঙল
লকলক করে সেখানে সবুজ ধানের শিষ
জন্মস্থানটাই বিলীন, এক এক সময় মনে হয়, সত্যিই কি
আমি কখনও জন্মেছিলাম?