পরিশিষ্ট

অমৃতের মৃত্যু – ২

দুই

ব্যোমকেশ আমাকে লইয়া সান্তালগোলায় আসিয়াছিল একটা সরকারী তদন্ত উপলক্ষে। সরকারের বেতনভুক পুলিস-কর্মচারীরা ব্যোমকেশকে স্নেহের চোখে দেখেন না বটে, কিন্তু মন্ত্রিমহলে তাহার খাতির আছে। পুলিসের জবাব দেওয়া কেস্‌ মাঝে মাঝে তাহার ঘাড়ে আসিয়া পড়ে।

গত মহাযুদ্ধের সময় অনেক বিদেশী সৈন্য আসিয়া এদেশের নানা স্থানে ঘাঁটি গাড়িয়া বসিয়াছিল; তারপর যুদ্ধের শেষে বিদেশীরা চলিয়া গেল, দেশে স্বদেশী শাসনতন্ত্র প্রবর্তিত হইল। স্বাধীনতার রক্ত-স্নান শেষ করিয়া দেশ যখন মাথা তুলিল তখন দেখিল হ্রদের উপরিভাগ শান্ত হইয়াছে বটে, কিন্তু তলদেশে হিংসুক নক্রকুল ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। বিদেশী সৈন্যদলের ফেলিয়া-যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে এই নক্রকুলের নখদন্ত। রেলের দুর্ঘটনা, আকস্মিক বোমা বিস্ফোরণ, সশস্ত্র ডাকাতি—নূতন শাসনতন্ত্রকে উদ্‌ব্যস্ত করিয়া তুলিল।

পুলিস তদন্তে দু’চারজন দুর্বৃত্ত ধরা পড়িলেও, বোমা পিস্তল প্রভৃতি আগ্নেয়াস্ত্র কোথা হইতে সরবরাহ হইতেছে তাহার হদিস মিলিল না। বিদেশী সিপাহীরা যেখানে ঘাঁটি গাড়িয়াছিল, অস্ত্রগুলি যে তাহার কাছেপিঠেই সঞ্চিত হইয়াছে তাহা অনুমান করা শক্ত নয়; কিন্তু আসল সমস্যা দাঁড়াইয়াছিল অস্ত্র-সরবরাহকারী লোকগুলাকে ধরা। যাহারা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কালাবাজার চালাইতেছে তাহাদের ধরিতে না পারিলে এ উৎপাতের মূলোচ্ছেদ হইবে না।

সরকারী দপ্তরের সহিত পরামর্শ করিয়া ব্যোমকেশ প্রথমে সান্তালগোলায় আসিয়াছে। স্থানটি ছোট, কোন অবস্থাতেই তাহাকে শহর বলা চলে না। স্টেশনের কাছে রেল-কর্মচারীদের একসারি, কোয়ার্টার। একটা পাকা রাস্তা স্টেশনকে স্পর্শ করিয়া দুই দিকে মোড় ঘুরিয়া গিয়াছে এবং কুড়ি পঁচিশ বিঘা জমিকে বেষ্টন করিয়া ধরিয়াছে; এই স্থানটুকুর মধ্যে কয়েকটা বড় বড় আড়ত, পুলিস থানা, পোস্ট-অফিস, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, সরকারী বিশ্রান্তিগৃহ ইত্যাদি আছে। যে দু’টি চাল-কলের উল্লেখ পূর্বে করিয়াছি সে দু’টি এই রাস্তা-ঘেরা স্থানের দুই প্রান্তে অবস্থিত। স্থানীয় লোক অধিকাংশ বাঙালী হইলেও, মাড়োয়ারী ও হিন্দুস্থানী যথেষ্ট আছে।

আমরা সরকারী বিশ্রান্তিগৃহে আড্ডা গাড়িয়াছিলাম। ব্যোমকেশের এখানে আত্মপরিচয় দিবার ইচ্ছা ছিল না, এ ধরনের তদন্তে যতটা প্রচ্ছন্ন থাকা যায় ততই সুবিধা; কিন্তু আসিয়া দেখিলাম ব্যোমকেশের পরিচয় ও আগমনের উদ্দেশ্য কাহারও অবিদিত নাই। স্থানীয় পুলিসের দারোগা সুখময় সামন্ত পুলিস বিভাগ হইতে ব্যোমকেশ সম্বন্ধে পূর্ব হইতেই ওয়াকিবহাল ছিলেন, তাঁহার কৃপায় ব্যোমকেশের খ্যাতি দিকে দিকে ব্যাপ্ত হইয়াছে।

দারোগা সুখময়বাবুর মুখ ভারি মিষ্ট, কিন্তু মস্তিষ্কটি দুষ্টবুদ্ধিতে ভরা। তিনি প্রকাশ্যে ব্যোমকেশকে সাহায্য করিতেছিলেন এবং অপ্রকাশ্যে যত ভাবে সম্ভব বাগড়া দিতেছিলেন। পুলিস যেখানে ব্যর্থ হইয়াছে, একজন বাহিরের লোক আসিয়া সেখানে কৃতকার্য হইবে, ইহা বোধ হয় তাঁহার মনঃপুত হয় নাই।

যাহোক, বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও ব্যোমকেশ কাজ আরম্ভ করিল। পরিচয় গোপন রাখা সম্ভব নয় দেখিয়া প্রকাশ্যভাবেই অনুসন্ধান শুরু করিল। খোলাখুলি থানায় গিয়া দারোগা সুখময়বাবুর নিকট হইতে স্থানীয় প্রধান প্রধান ব্যক্তির নামের তালিকা সংগ্রহ করিল। স্টেশনে গিয়া মাস্টার, মালবাবু, টিকিট-বাবু, চেকার প্রভৃতির সহিত ভাব জমাইল; কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে গিয়া ম্যানেজারের নিকট হইতে স্থানীয় বিত্তবান ব্যক্তিদের খোঁজখবর লইল। সকলেই জানিতে পারিয়াছিল ব্যোমকেশ কি জন্য আসিয়াছে, তাই সকলে সহযোগিতা করিলেও বিশেষ কোনও ফল হইল না।

চার পাঁচ দিন বৃথা ঘোরাঘুরির পর ব্যোমকেশ এক মতলব বাহির করিল। স্থানীয় যে-কয়জন বর্ধিষ্ণু লোককে সন্দেহ করা যাইতে পারে তাহাদের বেনামী চিঠি লিখিল। চিঠির মর্ম : আমি তোমার গোপন কার্যকলাপ জানিতে পারিয়াছি, শীঘ্রই দেখা হইবে। —চিঠিগুলি আমি দুই-তিন স্টেশন দূরে জংশনে গিয়া ডাকে দিয়া আসিলাম।

চার ফেলিয়া বসিয়া আছি, কিন্তু মাছের দেখা নাই। এইভাবে আরও দুই তিন দিন কাটিয়া গেল। নিষ্কর্মার মতো দিন রাত্রে ঘুমাইয়া ও সকাল সন্ধ্যা ভ্রমণ করিয়া স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হইতে লাগিল। কিন্তু কাজের সুরাহা হইল না।

তারপর একদিন সকালবেলা বাঘমারি গ্রাম হইতে তিনটি ছেলে আসিয়া উপস্থিত হইল।

বেলা আন্দাজ আটটার সময় গরম জিলাপী সহযোগে গরম দুদ্ধ সেবন করিয়া অভ্যন্তরভাগে বেশ একটি তৃপ্তিকর পরিপূর্ণতা অনুভব করিতেছি, এমন সময় দ্বারের কাছে কয়েকটি মুণ্ড উঁকিঝুঁকি মারিতেছে দেখিয়া ব্যোমকেশ বাহিরে আসিল, ‘কি চাই?’

বিশ্রান্তিগৃহে পাশাপাশি দু’টি ঘর, সামনে ঢাকা বারান্দা। তিনটি যুবক বারান্দায় উঠিয়া ইতস্তত করিতেছিল, ব্যোমকেশকে দেখিয়া যুগপৎ দন্তবিকাশ করিল। একজন সসম্ভ্রমে জিজ্ঞাসা করিল, ‘আপনিই ব্যোমকেশবাবু?’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘হ্যাঁ।’

যুবকদের দন্তবিকাশ কর্ণচুম্বী হইয়া উঠিল। একজন বলিল, ‘আমরা বাঘমারি গ্রাম থেকে আসছি।’

‘বাঘমারি গ্রাম! সে কোথায়?’

‘আজ্ঞে, বেশি দূর নয়, এখান থেকে মাইলখানেক।’

‘আসুন’—বলিয়া ব্যোমকেশ তাহাদের ঘরে লইয়া আসিল। বিশ্রান্তিগৃহের বাঁধা বরাদ্দ আসবাব—একটি চেয়ার, একটি টেবিল, একটি আরাম-কেদারা, দু’টি খাট, মেঝেয় নারিকেল-ছোবড়ার চাটাই পাতা। যুবকেরা দু’জন মেঝেয় বসিল, একজন টেবিলে উঠিয়া বসিল। ব্যোমকেশ আরাম-কেদারায় অর্ধশয়ান হইয়া বলিল, ‘কী ব্যাপার বলুন দেখি?’

যে ছোকরা অগ্রণী হইয়া কথা বলিতেছিল তাহার নাম পটল। অন্য দু’জনের নাম দাশু ও গোপাল। পটল বলিল, ‘আপনি শোনেননি! আমাদের গ্রামে একটা ভীষণ হত্যাকাণ্ড হয়ে গেছে।’

‘বলেন কি! কবে?’ ব্যোমকেশ আরাম-কেদারায় উঠিয়া বসিল।

দাশু ও গোপাল একসঙ্গে বলিয়া উঠিল, ‘পরশু সন্ধ্যের পর।’

পটল বলিল, ‘পুলিসে তক্ষুনি খবর দেওয়া হয়েছিল। কাল সকালবেলা ন’টার সময় দারোগা সুখময় সামন্ত গিয়েছিল। লাশ নিয়ে চলে এসেছিল, তারপর আর কোনও খবর নেই। আজ আমরা আপনার কাছে আসবার আগে থানায় গিয়েছিলাম, সুখময় দারোগা আমাদের হাঁকিয়ে দিলে। লাশ নাকি সদরে পাঠানো হয়েছে, হাসপাতালে চেরা-ফাঁড়া হবে। আপনি এসব কিছুই জানেন না? তবে যে শুনেছিলাম আপনি পুলিসকে সাহায্য করবার জন্য এখানে এসেছেন!’

ব্যোমকেশ শুষ্কস্বরে বলিল, ‘দারোগাবাবু বোধ হয় এ খবর আমাকে দেওয়া দরকার মনে করেননি। সে যাক। কে কাকে খুন করেছে? কী দিয়ে খুন করেছে?’

পটল বলিল, ‘বন্দুক দিয়ে। খুন হয়েছে আমাদের এক বন্ধু—অমৃত। কে খুন করেছে তা কেউ জানে না। ব্যোমকেশবাবু, অম্‌রার মৃত্যুর জন্য আমরাও খানিকটা দায়ী, ঠাট্টা-তামাশা করতে গিয়ে এই সর্বনাশ হয়েছে। তাই আমরা আপনার কাছে এসেছি। সুখময় দারোগার দ্বারা কিছু হবে না, আপনি দয়া করে খুঁজে বার করুন কে খুন করেছে। আমরা আপনার কাছে চিরঋণী, হয়ে থাকব।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘বন্দুক দিয়ে খুন হয়েছে। আশ্চর্য!—সব কথা খুলে বলুন।’

অতঃপর পটল, দাশু ও গোপাল মিলিয়া কখনও একসঙ্গে কখনও পর্যায়ক্রমে যে কাহিনী বলিল তাহা পূর্বে বিবৃত হইয়াছে। অমৃতের মৃত্যুতে তাহারা খুব কাতর হইয়াছে এমন মনে হইল না, কিন্তু অমৃতের রহস্যময় মৃত্যু তাহাদের উত্তেজিত করিয়া তুলিয়াছে। এবং ব্যোমকেশকে হাতের কাছে পাইয়া এই উত্তেজনা নাটকীয় রূপ ধারণ করিয়াছে।

অমৃতের মৃত্যু-বিবরণ শেষ হইতে আন্দাজ দু’ঘণ্টা লাগিল; ব্যোমকেশ মাঝে মাঝে প্রশ্ন করিয়া অস্পষ্ট স্থান পরিষ্কার করিয়া লইল। শেষে বলিল, ‘ঘটনা রহস্যময় বটে, তার ওপর বন্দুক। —কিন্তু শুধু গল্প শুনলে কাজ হবে না, জায়গাটা দেখতে হবে।’

তিনজনেই উৎসাহিত হইয়া উঠিল। পটল বলিল, ‘বেশ তো, এখুনি চলুন না, ব্যোমকেশবাবু। আপনি আমাদের গ্রামে যাবেন সে তো ভাগ্যের কথা।’

ব্যোমকেশ হাতের ঘড়ি দেখিয়া বলিল, ‘এ-বেলা থাক। দু’দিন যখন কেটে গেছে তখন একবেলায় বিশেষ ক্ষতি হবে না। আমরা ও-বেলা পাঁচটা নাগাদ যাব।’

‘বেশ, আমরা এসে আপনাকে নিয়ে যাব।’

তাহারা চলিয়া গেল।

কিছুক্ষণ পরে দারোগা সুখময়বাবু আসিলেন। চেয়ারে নিজের সুবিপুল বপুখানি ঠাসিয়া দিয়া বলিলেন, ‘বাঘমারির ছোঁড়াগুলো এসেছিল তো? আমার কাছেও গিয়েছিল। বাঙালীর ছেলে, একটা হুজুগ পেয়েছে, আর কি রক্ষে আছে! আপনি ওদের আমল দেবেন না মশাই, আপনার প্রাণ অতিষ্ঠ করে তুলবে।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘না না, আমল দেব কেন? আপনি তো ওদের আগে থাকতেই চেনেন, কেমন ছেলে ওরা?’

সুখময়বাবু বলিলেন, ‘পাড়াগাঁয়ের বকাটে নিষ্কর্মা ছেলে আর কি। বাপের দু’বিঘে ধান-জমি আছে, কি তিনটে নারকেল গাছ আছে, ব্যস্‌, ঘরে বসে-বসে বাপের অন্ন ধ্বংস করছে।’

ব্যোমকেশ বলিল, ‘যে ছেলেটা মারা গেছে সেও তো ওদেরই দলেরই ছেলে।’

‘হ্যাঁ, সে ছিল আবার এককাটি বাড়া। মামার ভাতে ছিল, বকামি করে বেড়াতো।’

‘বন্দুকের গুলিতে মরেছে শুনলাম।’

‘তাই মনে হয়, তবে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না।’

‘হুঁ। কে মেরেছে কিছু সন্দেহ করেন?’

‘কি করে সন্দেহ করব বলুন দেখি? কেউ কিছু দেখেনি, সবাই একজোট হয়ে মাঠে আড্ডা দিচ্ছিল। তবে একটা ব্যাপারের জন্যে একজনের ওপর সন্দেহ হচ্ছে। সেদিন সকালবেলা অমৃত নাদুর বৌকে অপমান করেছিল। নাদু একরোখা গোঁয়ার মানুষ, লাঠি নিয়ে অমৃতকে মারতে ছুটেছিল। সন্ধ্যেবেলা মাঠের আড্ডাতেও সে ছিল না। তাকে একবার থানায় আনিয়ে ভালো করে নেড়ে-চেড়ে দেখতে হবে। —কিন্তু এসব বাজে কথা এখন থাক। একটা জরুরী খবর আপনাকে দিতে এলাম।’ সহসা গলা খাটো করিয়া বলিলেন, ‘যমুনাদাস গঙ্গারামের নাম জানেন তো, এখানকার মস্তবড় আড়তদার। সে একটা বেনামী চিঠি পেয়েছে।’

ব্যোমকেশ গাঢ় ঔৎসুক্য দেখাইয়া বলিল, ‘বেনামী চিঠি! কি আছে তাতে?’

সুখময়বাবু বলিলেন, ‘যমুনাদাস চুপিচুপি আমাকে চিঠি দেখিয়ে গেছে। খামের চিঠি, তাতে স্রেফ লেখা আছে : আমি সব জানতে পেরেছি, শীগ্‌গিরই দেখা হবে।’

‘তাই নাকি! তাহলে তো যমুনাদাসের ওপর নজর রাখতে হয়।’

‘সে-কথা আর বলতে! আমি একজন লোক লাগিয়ে দিয়েছি যমুনাদাসের পেছনে। সে অষ্টপ্রহর যমুনাদাসের ওপর নজর রেখেছে।’

‘ভালো, ভালো! আপনি পাকা লোক, ঠিক কাজই করেছেন। এবার হয়তো একটা সুরাহা হবে।’

সুখময়বাবুর মুখে একটু বিনীত আত্মপ্রসন্নতা খেলিয়া গেল, ‘হে-হে—এই কাজ করে চুল পেকে গেল, ব্যোমকেশবাবু। তা সে যাক। এখন আপনার কি খবর বলুন। কিছু পেলেন?’

ব্যোমকেশ হতাশ স্বরে বলিল, ‘কৈ আর পেলাম! যতদূর চাই, নাই নাই সে-পথিক নাই।’

সুখময়বাবু উদ্ধৃতিটা ধরিতে পারিলেন না, কিন্তু যেন বুঝিয়াছেন এমনিভাবে হে-হে করিলেন। তিনি চেয়ারে একেবারে জাম হইয়া বসিয়াছিলেন, এখন টানা-হেঁচড়া করিয়া নিজেকে চেয়ারের বাহুমুক্ত করিলেন। বলিলেন, ‘আজ উঠি, থানায় অনেক কাজ পড়ে আছে।’

ব্যোমকেশও উঠিয়া দাঁড়াইল, ‘ভালো কথা, অমৃতের পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট পেয়েছেন নাকি?’

সুখময়বাবু একটু ভ্রূ তুলিয়া বলিলেন, ‘এখনও পাইনি। কাল পরশু পাব বোধ হয়। কেন বলুন দেখি?’

‘পেলে এবার আমাকে দেখাবেন।’

সুখময়বাবু একটু গম্ভীর হইয়া বলিলেন, ‘দেখতে চান, দেখাব। কিন্তু ব্যোমকেশবাবু, আপনি রুই-কাতলা ধরতে এসেছেন, আপনি যদি চুনোপুঁটির দিকে নজর দেন তাহলে আমরা বাঁচি কি করে?’

‘না না, নজর দিইনি। নিতান্তই অহেতুক কৌতূহল। কথায় বলে—নেই কাজ তো খই ভাজ।’

সুখময়বাবুর মুখে আবার হাসি ফুটিল, তিনি দ্বারের দিকে যাইতে যাইতে প্রথম আমাকে লক্ষ্য করিলেন; বলিলেন, ‘এই-যে অজিতবাবু, কেমন আছেন? গল্প-টল্প লেখা হচ্ছে? আপনার আজগুবি গল্পগুলো পড়তে মন্দ লাগে না—হে-হে। তবে রবার্ট ব্লেকের মতো নয়। আচ্ছা, আসি।’

তিনি শ্রুতিবহির্ভূত হইয়া গেলে ব্যোমকেশ আমার দিকে ফিরিয়া চোখ টিপিল; বলিল, ‘হে-হে।’