এক
গ্রামের নাম বাঘমারি। রেল-লাইনের ধারেই গ্রাম, কিন্তু গ্রাম হইতে স্টেশনে যাইতে হইলে মাইলখানেক হাঁটিতে হয়। মাঝখানে ঘন জঙ্গল। গ্রামের লোক স্টেশন যাইবার সময় বড় একটা জঙ্গলের ভিতর দিয়া যায় না, রেল-লাইনের তারের বেড়া টপ্কাইয়া লাইনের ধার দিয়া যায়।
স্টেশনের নাম সান্তালগোলা। বেশ বড় স্টেশন, স্টেশন ঘিরিয়া একটি গঞ্জ গড়িয়া উঠিয়াছে। অঞ্চলটা ধান্য-প্রধান। এখান হইতে ধান-চাল রপ্তানি হয়। গোটা দুই চালের কলও আছে।
যুদ্ধের সময় একদল মার্কিন সৈন্য সান্তালগোলা ও বাঘমারির মধ্যস্থিত জঙ্গলের মধ্যে কিছুকাল ছিল; তাহারা খালি গায়ে প্যান্ট পরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইত, চাষীদের সঙ্গে বসিয়া ডাবা-হুঁকায় তামাক খাইত। তারপর যুদ্ধের শেষে তাহারা স্বদেশে ফিরিয়া গেল, রাখিয়া গেল কিছু অবৈধ সন্তানসন্ততি এবং কিছু ক্ষুদ্রায়তন অস্ত্রশস্ত্র।
ব্যোমকেশ ও আমি যে-কর্ম উপলক্ষে সান্তালগোলায় গিয়া কিছুকাল ছিলাম তাহার সহিত উক্ত অস্ত্রশস্ত্রের সম্পর্ক আছে, তাহার বিশদ উল্লেখ যথাসময়ে করিব। উপস্থিত যে কাহিনী লিখিতেছি তাহার ঘটনাকেন্দ্র ছিল বাঘমারি গ্রাম, এবং যাহাদের মুখে কাহিনীর গোড়ার দিকটা শুনিয়াছিলাম তাহারা এই গ্রামেরই ছেলে। বাক্বাহুল্য বর্জনের জন্য তাহাদের মুখের কথাগুলি সংহত আকারে লিখিতেছি।
বাঘমারি গ্রামে যে কয়টি কোঠাবাড়ি আছে তন্মধ্যে সদানন্দ সুরের বাড়িটা সবচেয়ে পুরাতন। গুটিতিনেক ঘর, সামনে শান-বাঁধানো চাতাল, পিছনে পাঁচিল-ঘেরা উঠান। বাড়ির ঠিক পিছন হইতে জঙ্গল আরম্ভ হইয়াছে।
সদানন্দ সুর বয়স্থ ব্যক্তি, কিন্তু তাঁহার জ্ঞাতি-গোষ্ঠী স্ত্রী-পুত্র কেহ নাই, একলাই পৈতৃক ভিটায় থাকেন। তাঁহার একটি বিবাহিতা ভগিনী আছে বটে, স্বামী রেলের চাকরি করে, কিন্তু তাহারা শহুরে লোক, তাহাদের সহিত সদানন্দবাবুর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা নাই। গ্রামের লোকের সঙ্গেও তাঁহার সম্পর্ক খুব গাঢ় নয়, কাহারও সহিত অসদ্ভাব না থাকিলেও বেশি মাখামাখিও নাই। বেশির ভাগ দিন সকালবেলা উঠিয়া তিনি স্টেশনের গঞ্জে চলিয়া যান, সন্ধ্যার সময় গ্রামে ফিরিয়া আসেন। তিনি কী কাজ করেন সে সম্বন্ধে কাহারও মনে খুব স্পষ্ট ধারণা নাই। কেহ বলে ধান-চালের দালালি করেন; কেহ বলে বন্ধকী কারবার আছে। মোটের উপর লোকটি অত্যন্ত সংবৃতমন্ত্র ও মিতব্যয়ী, ইহার অধিক তাঁহার বিষয়ে বড় কেহ কিছু জানে না।
একদিন চৈত্র মাসের ভোরবেলা সদানন্দ বাড়ি হইতে বাহির হইলেন; একটি মাঝারি আয়তনের ট্রাঙ্ক ও একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ বাহিরে রাখিয়া দরজায় তালা লাগাইলেন। তারপর ব্যাগ ও ট্রাঙ্ক দুই হাতে ঝুলাইয়া যাত্রা করিলেন।
বাড়ির সামনে মাঠের মতো খানিকটা খোলা জায়গা। সদানন্দ মাঠ পার হইয়া রেল-লাইনের দিকে চলিয়াছেন, গ্রামের বৃদ্ধ হীরু মোড়লের সঙ্গে দেখা হইয়া গেল। হীরু বলিল, ‘কী গো কত্তা, সকালবেলা বাক্স-প্যাঁটরা লিয়ে কোথায় চলেছেন?’
সদানন্দ থামিলেন, ‘দিন কয়েকের জন্য বাইরে যাচ্ছি।’
হীরু বলিল, ‘অ। তিত্থিধম্ম করতে চললেন নাকি?’
সদানন্দ শুধু হাসিলেন। হীরু বলিল, ‘ইরির মধ্যে তিত্থিধম্ম? বয়স কত হল কত্তা?’
‘পঁয়তাল্লিশ।’ সদানন্দ আবার চলিলেন।
হীরু পিছন হইতে ডাক দিয়া প্রশ্ন করিল, ‘ফিরছেন কদ্দিনে?’
‘দিন ছ’সাতের মধ্যেই ফিরব।’
সদানন্দ চলিয়া গেলেন।
তাঁহার আকস্মিক তীর্থযাত্রা লইয়া গ্রামে একটু আলোচনা হইল। তাঁহার প্রাণে যে ধর্মকর্মের প্রতি আসক্তি আছে এ সন্দেহ কাহারও ছিল না। গত দশ বৎসরের মধ্যে এক রাত্রির জন্যও তিনি বাহিরে থাকেন নাই। সকলে আন্দাজ করিল নীরব-কর্মা সদানন্দ সুর কোনও মতলবে বাহিরে গিয়াছেন।
ইহার দিন তিন চার পরে সদানন্দের বাড়ির সামনের মাঠে গ্রামের ছেলে-ছোকরারা বসিয়া জটলা করিতেছিল। গ্রামে পঁচিশ-ত্রিশ ঘর ভদ্ৰশ্রেণীর লোক বাস করে; সন্ধ্যার পর তরুণ-বয়স্কেরা এই মাঠে আসিয়া বসে, গল্প গুজব করে, কেহ গান গায়, কেহ বিড়ি-সিগারেট টানে। শীত এবং বর্ষাকাল ছাড়া এই স্থানটাই তাহাদের আড্ডাঘর।
আজ অমৃত নামধারী জনৈক যুবককে সকলে মিলিয়া ক্ষেপাইতেছিল। অমৃত গাঁয়ের একটি ভদ্রলোকের অনাথ ভাগিনেয়, একটু আধ-পাগলা গোছের ছেলে। রোগা তালপাতার সেপাইয়ের মত চেহারা, তড়বড় করিয়া কথা বলে, নিজের সাহস ও বুদ্ধিমত্তা প্রমাণের জন্য সর্বদাই সচেষ্ট। তাই সুযোগ পাইলে সকলেই তাহাকে লইয়া একটু রঙ্গ-তামাশা করে।
সকালের দিকে একটা ব্যাপার ঘটিয়াছিল। —নাদু নামক এক যুবকের সম্প্রতি বিবাহ হইয়াছে; তাহার বৌয়ের নাম পাপিয়া। বৌটি সকালবেলা কলসী লইয়া পুকুরে জল আনিতে যাইতেছিল, ঘাটে অন্য মেয়েরাও ছিল। অমৃত পুকুরপাড়ে বসিয়া খোলামকুচি দিয়া জলের উপর ব্যাঙ-লাফানো খেলিতেছিল; নাদুর বৌকে দেখিয়া তাহার কি মনে হইল, সে পাপিয়ার স্বর অনুসরণ করিয়া ডাকিয়া উঠিল—‘পিউ পিউ—পিয়া পিয়া পাপিয়া—’
মেয়েরা হাসিয়া উঠিল। বৌটি অপমান বোধ করিয়া তখনই গৃহে ফিরিয়া গেল এবং স্বামীকে জানাইল। নাদু অগ্নিশর্মা হইয়া লাঠি হাতে ছুটিয়া আসিল। তাহাকে দেখিয়া অমৃত পুকুরপাড়ের একটা নারিকেল গাছে উঠিয়া পড়িল। তারপর গাঁয়ের মাতব্বর ব্যক্তিরা আসিয়া শান্তিরক্ষা করিলেন। অমৃতের মনে যে কু-অভিপ্রায় ছিল না তাহা সকলেই জানিত, গোঁয়ার-গোবিন্দ নাদুও বুঝিল। ব্যাপার বেশিদূর গড়াইতে পাইল না।
কিন্তু অমৃত তাহার সমবয়স্কদের শ্লেষ-বিদ্রূপ হইতে নিস্তার পাইল না। সন্ধ্যার সময় সে মাঠের আড্ডায় উপস্থিত হইলেই সকলে তাহাকে ছাঁকিয়া ধরিল।
পটল বলিল, ‘হ্যাঁরে অমর্ত, তুই এতবড় বীর, নাদুর সঙ্গে লড়ে যেতে পারলি না? নারকেল গাছে উঠলি!’
অমৃত বলিল, ‘হুঁঃ, আমি তো ডাব পাড়তে উঠেছিলাম। নেদোকে আমি ডরাই না, ওর হাতে যদি লাঠি না থাকত অ্যায়সা লেঙ্গি মারতাম যে বাছাধনকে বিছানায় পড়ে কোঁ-কোঁ করতে হত!’
গোপাল বলিল, ‘শাবাশ! বাড়ি গিয়ে মামার কাছে খুব ঠেঙানি খেয়েছিলি তো?’
অমৃত হাত মুখ নাড়িয়া বলিল, ‘মামা মারেনি, মামা আমাকে ভালবাসে। শুধু মামী কান মলে দিয়ে বলেছিল—তুই একটা গো-ভূত।’
সকলে হি-হি করিয়া হাসিল। পটল বলিল ‘ছি ছি, তুই এমন কাপুরুষ! মেয়েমানুষের হাতের কানমলা খেলি?’
অমৃত বলিল, ‘মামী গুরুজন, তাই বেঁচে গেল, নইলে দেখে নিতাম। আমার সঙ্গে চালাকি নয়।’
দাশু বলিল, ‘আচ্ছা অম্রা, তুই তো মানুষকে ভয় করিস না। সত্যি বল দেখি, ভূত দেখলে কি করিস?’
একজন নিম্নস্বরে বলিল, ‘কাপড়ে-চোপড়ে—’
অমৃত চোখ পাকাইয়া বলিল, ‘ভূত আমি দেখেছি কিন্তু মোটেই ভয় পাইনি।’
সকলে কলরব করিয়া উঠিল, ‘ভূত দেখেছিস? কবে দেখলি? কোথায় দেখলি?’
অমৃত সগর্বে জঙ্গলের দিকে শীর্ণ বাহু প্রসারিত করিয়া বলিল, ‘ঐখানে।’
‘কবে দেখেছিস? কী দেখেছিস?’
অমৃত গম্ভীর স্বরে বলিল, ‘ঘোড়া-ভূত দেখেছি।’
দু’একজন হাসিল। গোপাল বলিল, ‘তুই গো-ভূত কিনা, তাই ঘোড়া-ভূত দেখেছিস। কবে দেখলি?’
‘পরশু রাত্তিরে।’ অমৃত পরশু রাত্রের ঘটনা বলিল, ‘আমাদের কৈলে বাছুরটা দড়ি খুলে গোয়ালঘর থেকে পালিয়েছিল। মামা বললে, যা অম্রা, জঙ্গলের ধারে দেখে আয়। রাত্তির তখন দশটা; কিন্তু আমার তো ভয়-ডর নেই, গেলাম জঙ্গলে। এদিক ওদিক খুঁজলাম, কিন্তু কোথায় বাছুর! চাঁদের আলোয় জঙ্গলের ভেতরটা হিলি-বিলি দেখাচ্ছে—হঠাৎ দেখি একটা ঘোড়া। খুরের শব্দ শুনে ভেবেছিলাম বুঝি বাছুরটা; ঘাড় ফিরিয়ে দেখি একটা ঘোড়া বনের ভেতর দিয়ে সাঁ করে চলে গেল। কালো কুচকুচে ঘোড়া, নাক দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে। আমি রামনাম করতে করতে ফিরে এলাম। রামনাম জপ্লে ভূত আর কিছু বলতে পারে না।’
দাশু জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোন্ দিক থেকে কোন্ দিকে গেল ঘোড়া-ভূত?’
‘গাঁয়ের দিক থেকে ইস্টিশানের দিকে।’
‘ঘোড়ার পিঠে সওয়ার ছিল?’
‘অত দেখিনি।’
সকলে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। ভূতের গল্প বানাইয়া বলিতে পারে এত কল্পনাশক্তি অমৃতের নাই। নিশ্চয় সে জ্যান্ত ঘোড়া দেখিয়াছিল। কিন্তু জঙ্গলে ঘোড়া আসিল কোথা হইতে? গ্রামে কাহারও ঘোড়া নাই। যুদ্ধের সময় যে মার্কিন সৈন্য জঙ্গলে ছিল তাহাদের সঙ্গেও ঘোড়া ছিল না। ইস্টিশানের গঞ্জে দুই-চারিটা ছ্যাকড়া-গাড়ির ঘোড়া আছে বটে। কিন্তু ছ্যাকড়া-গাড়ির ঘোড়া রাত্রিবেলা জঙ্গলে ছুটাছুটি করিবে কেন? তবে কি অমৃত পলাতক বাছুরটাকেই ঘোড়া বলিয়া ভুল করিয়াছিল?
অবশেষে পটল বলিল, ‘বুঝেছি, তুই বাছুর দেখে ঘোড়া-ভূত ভেবেছিলি।’
অমৃত সজোরে মাথা ঝাঁকাইয়া বলিল, ‘না না, ঘোড়া। জলজ্যান্ত ঘোড়া-ভূত আমি দেখেছি।’
‘তুই বলতে চাস্ ঘোড়া-ভূত দেখেও তোর দাঁত-কপাটি লাগেনি?’
‘দাঁত-কপাটি লাগবে কেন? আমি রামনাম করেছিলাম।’
‘রামনাম করেছিলি বেশ করেছিলি। কিন্তু ভয় পেয়েছিলি বলেই না রামনাম করেছিলি?’
‘মোটেই না, মোটেই না’—অমৃত আস্ফালন করিতে লাগিল, ‘কে বলে আমি ভয় পেয়েছিলাম! ভয় পাবার ছেলে আমি নয়।’
দাশু বলিল, ‘দ্যাখ অম্রা, বেশি বড়াই করিসনি। তুই এখন জঙ্গলে যেতে পারিস?’
‘কেন পারব না!’ অমৃত ঈষৎ শঙ্কিতভাবে জঙ্গলের দিকে তাকাইল। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া চাঁদের আলো ফুটিয়াছে, জঙ্গলের গাছগুলা ঘনকৃষ্ণ ছায়া রচনা করিয়াছে; অমৃত একটু থামিয়া গিয়া বলিল, ‘ইচ্ছে করলেই যেতে পারি, কিন্তু যাব কেন? এখন তো আর বাছুর হারায়নি।’
গোপাল বলিল, ‘বাছুর না হয় হারায়নি। কিন্তু তুই গুল মারছিস কিনা বুঝব কি করে?’
অমৃত লাফাইয়া উঠিল, ‘গুল মারছি! আমি গুল মারছি! দ্যাখ্ গোপ্লা, তুই আমাকে চিনিস না—’
‘বেশ তো, চিনিয়ে দে। যা দেখি একলা জঙ্গলের মধ্যে। তবে বুঝব তুই বাহাদুর।’
অমৃত আর পারিল না, সদর্পে বলিল, ‘যাচ্ছি—এক্ষুনি যাচ্ছি। আমি কি ভয় করি নাকি?’ সে জঙ্গলের দিকে পা বাড়াইল।
পটল তাহাকে ডাকিয়া বলিল, ‘শোন্, এই খড়ি নে। বেশি দূর তোকে যেতে হবে না, সদানন্দদা’র বাড়ির পিছনে যে বড় শিমুলগাছটা আছে তার গায়ে খড়ি দিয়ে ঢ্যারা মেরে আসবি। তবে বুঝব তুই সত্যি গিয়েছিলি।’
খড়ি লইয়া ঈষৎ কম্পিতকণ্ঠে অমৃত বলিল, ‘তোরা এখানে থাকবি তো?’
‘থাকব।’
অমৃত জঙ্গলের দিকে পা বাড়াইল। যতই অগ্রসর হইল ততই তাহার গতিবেগ হ্রাস হইতে লাগিল। তবু শেষ পর্যন্ত সে সদানন্দ সুরের বাড়ির আড়ালে অদৃশ্য হইয়া গেল।
মাঠে উপবিষ্ট ছোকরার দল পাণ্ডুর জ্যোৎস্নার ভিতর দিয়া নীরবে জঙ্গলের দিকে চাহিয়া রহিল। একজন বিড়ি ধরাইল। একজন হাসিল, ‘অম্রা হয়তো সদানন্দদা’র বাড়ির পাশে ঘাপ্টি মেরে বসে আছে।’
কিছুক্ষণ কাটিয়া গেল। সকলের দৃষ্টি জঙ্গলের দিকে।
হঠাৎ জঙ্গল হইতে চড়াৎ করিয়া একটা শব্দ আসিল। শুক্নো গাছের ডাল ভাঙ্গিলে যেরূপ শব্দ হয় অনেকটা সেইরূপ। সকলে চকিত হইয়া পরস্পরের পানে চাহিল।
আরও কিছুক্ষণ কাটিয়া গেল। কিন্তু অমৃত ফিরিয়া আসিল না। অমৃত যেখানে গিয়াছে, ছোকরাদের দল হইতে সেই শিমুলগাছ বড়জোর পঞ্চাশ-ষাট গজ। তবে সে ফিরিতে এত দেরি করিতেছে কেন!
আরও তিন-চার মিনিট অপেক্ষা করিবার পর পটল উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ‘চল্ দেখি গিয়ে। এত দেরি করছে কেন অম্রা!
সকলে দল বাঁধিয়া যে-পথে অমৃত গিয়াছিল সেই পথে চলিল। একজন রহস্য করিয়া বলিল, ‘অম্রা ঘোড়া-ভূতের পিঠে চড়ে পালাল নাকি?’
অম্রা কিন্তু পালায় নাই। সদানন্দ সুরের বাড়ির খিড়কি হইতে বিশ-পঁচিশ গজ দূরে শিমুলগাছ। সেখানে জ্যোৎস্না-বিদ্ধ অন্ধকারে সাদা রঙের কি একটা পড়িয়া আছে। সকলে কাছে গিয়া দেখিল—অমৃত।
একজন দেশলাই জ্বালিল। অমৃত চিৎ হইয়া পড়িয়া আছে, তাহার বুকের জামা রক্তে ভিজিয়া উঠিয়াছে।
অমৃত ভূতের ভয়ে মরে নাই, বন্দুকের গুলিতে তাহার মৃত্যু হইয়াছে।