নয়
ওকে দেখেই সাইকেলের ব্রেক কষল বিরজু, হাল ক্যায়সা?
চাঁদু বলল, দেখতেই তো পাচ্ছ ভাই। কিন্তু তুমি এত দেরি করলে কেন? ছিলে না বুঝি?
এই তো খবর পেলাম।
সে কী! গোলাপ এতক্ষণ কী করছিল?
আর বলো কেন? একটা স্টোন চিপ গেঁথে গিয়ে ওর সাইকেলের সামনের চাকার টায়ারটা ফেটে যায়। প্রায় দু’ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই গেছে বেচারি। আর আমি এদিকে হানটান করছি।
বিরজু একটা চায়ের দোকানের সামনে এসে সাইকেল থামিয়ে বলল, চা পিয়োগে?
এখন নয়।
আরে পিয়ো পিয়ো।
দোকানদারকে দু’ কাপ চা করতে বলে বিরজু হঠাৎ একটা প্রশ্ন করল, আচ্ছা দোস্ত, সাচ মুচ একটা কথা বলবে?
কী কথা বলো?
ওই যে লেড়কি তোমার সঙ্গে রয়েছে ওর সাথে তোমার কী সম্পর্ক আছে? চাঁদু হেসে বলল, হঠাং এরকম প্রশ্ন করলে যে?
বুরা না মানো ভাই। কী সুন্দর ফেস কাটিং ওর। কী চমৎকার দেখতে। তাতে কী হয়েছে?
ও তোমার আপনা বহিন ভি না আছে।
দোকানদার চা দিলে, চা খেতে খেতে খেতে চাঁদু বলল, বিরজু ভাই, তোমার যদি কোনও বহিন থাকত আর সে যদি কোনওকারণে এইভাবে আমার সঙ্গে জুটে যেত, তবে কি তুমি কোনও সম্পর্ক যাচাই করতে? ও আমার বহিন কা মাফিক।
লেকিন তোমার নামে তো একটু পুলিশ কেস হয়ে আছে
। আমার নামে! কীরকম?
তোমার নামে রিপোর্ট আছে তুমি বিলাসপুর থেকে ওই লেড়কিকে নিয়ে পালিয়ে এসেছ।
মিথ্যে কথা। ও নিজেই এসেছে এবং স্বেচ্ছায় এসেছে।
হ্যাঁ, লেকিন যাদের মেয়ে তারা তো সন্দেহ করছে
তোমাকে।
বয়ে গেল। ওতে আমি ভয় পাই না। তার কারণ আমি নির্দোষ। তোমার বাবাকে এবং ইনস্পেক্টরকে কাল রাতে সব কথা খুলে বলেছি আমি। আমাদের দু’জনেরই বাড়ির ফোন নম্বর দিয়েছি। কাজেই পালিয়ে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এর পরেও ওরা যদি গায়ের জ্বালায় কিছু বলে তো বলুক। গোলাপ নিশ্চয়ই সে কথা বলবে না।
ও সে কথা বলছেও না। তবে সম্ভবত ওকে বিলাসপুরেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বেশ তো। ও যদি যেতে চায় যাক না।
চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে ওরা সোজা থানায় এল। এসেই দেখল সুজয়ের বাবা গম্ভীর মেজাজ়ে বসে আছেন। বিরজুর বাবাও আছে। আর রাগি গোলাপ স্থির হয়ে বসে আছে একপাশে। ইনস্পেক্টর নেই। পরিবেশটা কেমন থমথমে।
চাঁদুকে দেখেই বোমার মতো ফেটে পড়লেন সুজয়ের বাবা। বিরজুর বাবাকে বললেন, ইমিডিয়েটলি এই ছোকরাকে লকআপে ঢোকাও। জেলের ঘানি না-টানিয়ে আমি ছাড়ব না একে। এইটুকু বয়সে একটা ক্রিমিনাল তৈরি হয়ে গেছে।
চাঁদু বলল, এসব কী বলছেন আপনি?
চোপ। বদমাশ কোথাকার।
আপনি অযথা উত্তেজিত হচ্ছেন।
অযথা উত্তেজিত হচ্ছি? কেন তুমি চোরের মতো আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে এলে?
চোরের মতো পালিয়ে আসব কেন? আমি প্রকাশ্যে দিবালোকে সকলকে সব কথা জানিয়েই চলে এসেছি। না-আসা ছাড়া আমার কোনও উপায়ও ছিল না। আসবার আগে আমার সঙ্গে একবার দেখা করে আসা উচিত ছিল না? ছিল। কিন্তু সময় ছিল না।
তুমি এই মেয়েটাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে এলে কেন?
ওর আসার ব্যাপারটা আপনি বাড়িতে ভাল করে শুনেছেন?
শুনেছি। কিন্তু তোমার সঙ্গে যে এসেছে এই খবরটা তখন পাইনি। যখন পেলাম, তখন মনে হল এটা একটা সাজানো নাটক। তোমার বিপদটা কোথায় আমি জানি। কিন্তু তাই বলে পরের মেয়েকে ভুলিয়ে নিয়ে আসা শিক্ষিত ভদ্রছেলের কাজ নয়। তুমি চলে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটা যেভাবে বাড়ি থেকে চলে এল এবং তোমার সঙ্গেই এল তাই তে বুঝতে বাকি থাকে না তোমার চাতুরিটা কোথায়।
আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আপনাকে আমি একটু মাথা ঠান্ডা করে ব্যাপারটা বুঝে দেখবার অনুরোধ করছি। বিষয়টাকে আপনি এইভাবে নেবেন না প্লিজ। শোনো চাঁদু, ও যদি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে সোজা ওর বাবার কাছে ধানবাদে চলে যেত, তা হলে কিন্তু আমার বলবার কিছু ছিল না। কিন্তু যেই শুনলাম স্টেশনে এসে দু’জনে একসঙ্গে হয়েছ এবং পেনড্রা রোডের টিকিট কেটেছ, তখনই মাথাটা গরম হয়ে উঠল আমার। তাই তোমাকে আমি ছাড়ব না। মেয়ে চুরির কেসে জেলের ঘানি টানাব।
লজ্জায়, অপমানে আর শারীরিক অবসন্নতায় চাঁদু তখন থরথর করে কাঁপছে। গোলাপ এতক্ষণ পরে মুখ খুলল, চাঁদুদা! তুমি একদম উত্তেজিত হয়ো না। একটু বসো। অফিসারকে আসতে দাও। তারপর এই সমস্ত নির্বোধ লোকের কথার জবাব কী করে দিতে হয় আমি জানি।
চাঁদু কোনও কথা না বলে একটা চেয়ারে বসে কপালটা ধরে টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ল। রক্তে ওর রুমালটাও তখন ভিজে গেছে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে সমানে রক্ত পড়ছে তখনও।
সুজয়ের বাবা বললেন, তুই আমাকে নির্বোধ বললি? গুরুজনের সঙ্গে এইভাবে কথা বলতে কে শেখাল তোকে? এই ছেলেটা?
ও কেন শেখাবে? আপনাদের ব্যবহারই আমার চোখ ফুটিয়ে দিয়েছে! আপনার নিজের যদি মেয়ে থাকত। আর সেও যদি এইভাবেই তার দাদার বন্ধুর কোনও বিপদে এগিয়ে আসত তা হলে তাকেও কি সন্দেহ করতেন আপনি? আজকের দিনে একটি ছেলেমেয়ের মেলামেশাকে আপনারা সহজভাবে মেনে নিতে শেখেননি?
আমার নিজের মেয়ে হলে কোনও কিছুই আমি ভাবতাম না। কিন্তু তুই যে এইভাবে চলে এলি, তোর বাবাকে আমি কী কৈফিয়ত দেব বল?
গোলাপ ফোঁস করে উঠল, কৈফিয়ত আপনি কী দেবেন? যা বলবার আমিই আমার বাবাকে বলব। আপনার অনুপস্থিতিতে কাল এমন কিছু ও বাড়িতে ঘটে গেছে যাতে বাড়ি ছাড়তে আমি বাধ্য হয়েছি।
তোর বাবার সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়েছে। তুই এখুনি আমার সঙ্গে যাবি। তোর বাবা এসে আমার ওখান থেকে তোকে নিয়ে যাবে।
আমার বাবার সঙ্গে আপনার যা কথা হয়েছে তা এক তরফা। আমি নিজে বাবার সঙ্গে কথা না বলে কোনও সিদ্ধান্তই নেব না। তবে এ-ও জানবেন, বাবা-মা দু’জনে বললেও ওই বাড়িতে আর কখনও যাব না আমি।
বেশ, না যাবি। কিন্তু ওই খুনে ছেলেটার সঙ্গেও থাকতে পাবি না তুই। দরকার হলে আমি পুলিশ হেফাজতে থাকব।
চাঁদু এবার উত্তেজিত হয়ে বলল, না জেনেশুনে আপনি কিন্তু যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। আমি খুনি নই। বরং আমাকে খুন করবার জন্য কিছু দুষ্কৃতী ওত পেতে আছে। এই দেখুন, আমারই কপাল দিয়ে খুন ঝরছে। যদিও এটাকে আমি দৈব-দুর্ঘটনা বলে মনে করছি। তবু এর পিছনেও কোনও চক্রান্ত থাকতে পারে! আমি হয়তো তারই বলি।
সুজয়ের বাবা বললেন, তুমি বলছ, তুমি খুনি নও। কিন্তু কলকাতার কাগজ বলছে, রেডিয়ো, টিভি বলছে। আমরা কার কথা বিশ্বাস করব! তোমার, না সরকারি রেফারেন্সের?
জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো চুপসে গেল চাঁদু।
গোলাপও এবার কীরকম যেন ভয়ে ভয়ে চাঁদুর দিকে তাকাল। ভাবটা এই ফুলের মতো সুন্দর এই সুকুমারমতি ছেলেটা সত্যিই কি খুনি? আজকাল তো এরকম কত হয়। কিন্তু ওর যা ব্যবহার, ওর মধ্যে যে সরলতা আছে, তা দেখে তো, ওকে সেরকম বলে মনে হয় না। হয়তো বড়লোকের ছেলে, রাগের মাথায় বা ঘটনাক্রমে খুন একটা করেইছে। তাই ওর বাবাও চাইছে ছেলেটিকে চোখের আড়ালে পাঠিয়ে অবস্থার সামাল দিতে। না হলে ওর পিছনেই বা লোক লাগবে কেন? কিন্তু ওর মুখের দিকে তাকালে তো বারেকের তরেও মনে হয় না ও কখনও ওই ধরনের অপরাধ করে থাকতে পারে বলে।
এমন একটা সময় পুলিশের জিপ এসে থামল বাইরে থানার সামনে। ইনস্পেক্টর এবং আরও দু’জন অফিসার ঘরে ঢুকলেন।
বিরজুর বাবা এবং অন্যান্য কনস্টেবলরা উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানাল। চাঁদুকে দেখেই শিউরে উঠলেন ইনস্পেক্টর, এ ক্যা!
চাঁদু সব কথা খুলে বলল ইনস্পেক্টরকে। তো তুম ডক্টরকো পাস কিউ নেহি গিয়া? চাঁদু বলল, আমরা তো এইমাত্র আসছি।
ইনস্পেক্টর বিরজুর বাবাকে বললেন, তুম বহৎ বুঢ়া হো গিয়া বাবা। নোকরি ছোড় দো। ইতনা উমর হো গিয়া লেকিন আভি তক ইয়ে খেয়াল নেহি হুয়া যো ডক্টরকো বোলনা চাহিয়ে?
মেরা বাত তো শুনিয়ে।
হম কুছ নেহি শুননা চাতে।বলেই রিসিভার তুলে ডায়াল ঘুরিয়ে বললেন, হ্যালো! ডক্টর লোহিয়া! ম্যায় পুলিশ ইনস্পেক্টর বোল রহা হুঁ। জলদি আইয়ে আপ। এক লেড়কাকো শির মে বহুতই চোট লাগা। খুন নিকলতা। থোড়া ফার্স্ট এড দেনে পড়েগা।
ফোন করে রিসিভার নামিয়ে রেখে ইনস্পেক্টর সুজয়ের বাবাকে বললেন, বঙ্গালিবাবু! আপনি কিন্তু কাল একটু ফলস স্টেটমেন্ট দিয়েছেন পুলিশকে। একটা ভাল ছেলের নামে আপনি কিডন্যাপিং কেস চাপিয়ে দিয়েছেন?
তার মানে? আমার স্টেটমেন্ট ফলস? তা হলে এই যে মেয়েটে এখানে বসে আছে এটাও কি মিথ্যে?
বসে আছে তো কী হল? কাল রাত্রে আমি এদের মুখে সবকিছু শুনেই বিলাসপুর পুলিশকে জানাই। বিলাসপুর পুলিশ আমাকে জানায় কাল নাকি ওই ছেলেটার নামে থানায় একটা রিপোর্টও করেছেন আপনি। যেটা ঠিক নয়। করবই তো?
আচ্ছা মশাই বলুন তো, পুলিশে রিপোর্ট তো আপনি করলেন। কিন্তু আপনার বাড়িতে থাকা এই দুটি ছেলেমেয়েকে আপনি প্রোটেকশন দিতে পারলেন না কেন? এদের বাবা-মা তো আপনার বাড়িতে নির্ভাবনায় রেখেছিল এদের। এখন যদি এদের কিছু হয়ে যেত তা হলে তাদের কী কৈফিয়ত দিতেন আপনি? ওই পুলিশের খাতায় লেখানো ডায়েরি দেখিয়েই কি আপনি পার পেতেন?
ছেলেটি বা মেয়েটির চলে আসার ব্যাপারে আমি কিন্তু কিছুই জানতাম না। ছেলেটির অবশ্য লাইফ ডেঞ্জার হয়ে উঠেছিল—
সে কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন?
না। কারণ আমি কোনও কিছুই জানতাম না। বাড়ি গিয়েই সব শুনলাম। আর এও শুনলাম মেয়েটিও বাড়ি থেকে রাগারাগি করে চলে গেছে।
চলে গেছে না তাড়িয়ে দিয়েছিল আপনার বাড়ির লোকেরা?
তাড়িয়ে দেবে কেন? আসলে মেয়েটা অসম্ভব জেদি। ও একবার যাব বললে, ওকে কেউ আটকাতে পারে না।
তাই? তবু আপনার পরিবারের কারও তো সঙ্গে আসা উচিত ছিল!
আমি বাড়িতে থাকলে সে ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হত। কিন্তু না-থাকাতেই যত গোলমাল। ও-ও চলে এল। ওরাও যেতে দিল।
তা হলে বলছেন মেয়েটিকে আপনারা তাড়িয়ে দেননি, ও স্বেচ্ছায় চলে এসেছে?
হ্যাঁ। নিজের থেকেই চলে এসেছে।
আপনি কীরকম ভদ্দরলোক মশাই? আপনার জবানের কোনও দামই নেই দেখছি। আপনি অমরকণ্টক-পুলিশকে বলছেন, মেয়েটি নিজের ইচ্ছেয় চলে এসেছে। আর বিলাসপুর-পুলিশকে বলেছেন মেয়েটিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আপনাকে তো অ্যারেস্ট করা উচিত।
সুজয়ের বাবা মাথা হেঁট করে বসে রইলেন।
ইনস্পেক্টর চাঁদুকে বললেন, তোমার স্টেটমেন্ট কাল আমি বিলাসপুর-পুলিশকে জানিয়েছিলাম। সেইমতো কাল রাত্রে চিরুনি অভিযান চালিয়ে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে যারা এসেছিল তাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
চাঁদুর বুকটা যেন হালকা হয়ে গেল। বলল, তা হলে আর আমার কোনও ভয় নেই, কী বলুন?
মনে তো হয় তাই। লেকিন উয়ো তিসরা আদমি কৌন আছে?
কার কথা বলছেন আপনি?
ওই বিলাসপুরবালে। যে তোমাকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল।
তা তো জানি না।
কথা বলতে বলতেই ডাক্তারবাবু এসে গেলেন। এই অঞ্চলের নামকরা ডাক্তার। আগে মিলিটারিতে ছিলেন। এখন এখানে আছেন। ডাক্তারবাবু চাঁদুকে বেশ ভাল করে পরীক্ষা করে ওর ক্ষতস্থান দেখে বললেন, স্টিচ করনা পড়েগা। ইধার নেহি হোগা, অনুপপুর হসপিটালমে ভেজ দিজিয়ে।
চাঁদু তো লাফিয়ে উঠল, ওরে বাবা! হাসপাতালে যাব না আমি। তাতে যা হয় হবে।
যা না হি পড়েগা। হামারা পাস ইন্সট্রুমেন্ট নেহি। আউর তুমকো নার্সিং, ড্রেসিং করেগা কৌন? দু’-চার রোজ-কে লিয়ে রেস্টেরও জরুরত আছে তোমার।
চাঁদুর চোখদুটো ছল ছলিয়ে উঠল।
থানা থেকেই ডাক্তারবাবু ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স আনালেন, আর তাতে করেই ওরা ওকে নিয়ে গেল অনুপপুর হাসপাতালে।
গোলাপও যাচ্ছিল সঙ্গে। কিন্তু ইনস্পেক্টর যেতে দিলেন না, বললেন, তুম কাঁহা যাওগী? বৈঠো।
গোলাপ বসে রইল চুপ করে।
এরপর সঙ্গে আসা পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কী সব আলোচনা করে ইনস্পেক্টর গোলাপকে বললেন, তুম এক কাম করো। বিলাসপুর চলা যাও।
বিলাসপুর! কেন? সেখানে কী আছে? গেলে আমি আমার বাড়িই চলে যাব। আপনি কি আমার বাবাকে কোনও খবর দিতে পেরেছেন? না। সময় করে উঠতে পারিনি।
সুজয়ের বাবা বললেন, আমি খবর দিয়েছি। তোমার বাবা শিগগির আসছেন। তুমি আমার সঙ্গে চলো।
না। আমি আর ও বাড়িতে ফিরে যাব না।
ইনস্পেক্টর বললেন, তব তুম ক্যা করোগে?
আমি এইখানেই থাকব। বাবা বিলাসপুরে এলে, বাবাকে পাঠিয়ে দেবেন। বাবার সঙ্গেই যাব আমি।
লেকিন এখানে তুমি থাকবে কোথায়?
কেন যেখানে আছি। সার্কিট হাউসে।
ও নেহি হো সকতা। অকেলে তুম মাত ঠারো।
আমার কিছু হবে না ইনস্পেক্টর। দু’-চারটে দিন বইতো নয়। আমি ঠিক থাকতে পারব। ততক্ষণে চাঁদুদাও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আর সার্কিট হাউসে থাকার যা খরচ, তা আমার বাবাই দিয়ে দেবেন। সুজয়ের বাবা এবার অন্য সুরে কথা বললেন, কেন এরকম করছিস গোলাপ?
যদি কিছু দোষত্রুটি হয়ে থাকে আমাদের তা হলে সেটা তুই ক্ষমা করে নে। আমি তো একবার বলেছি ওখানে আমি যাব না।
আর কখনও যেতে হবে না তোকে, কিন্তু এইবারের মতো চল।
ইনস্পেক্টর বললেন, বুরা মাত বনে৷। যানা হি আচ্ছা হোগা তুমহারে লিয়ে। গোলাপ মাথা হেঁট করে বসে রইল।
সুজয়ের বাবা বললেন, আমি কিন্তু আর অনুরোধ করব না। এবারে জোর করব। তোমার মালপত্তর কী আছে নিয়ে এসো। যাও। একদম দেরি কোরো না। আমি ট্যাক্সির ব্যবস্থা করছি।
দু’ ফোঁটা চোখের জল ফেলে উঠে গেল গোলাপ। সুরে বাঁধা বীণার তারটা হঠাৎই কীরকম যেন ছিঁড়ে গেল। চাঁদুদা এখন কী করছে কে জানে? এই দূর দেশে ছেলেটা এখন কতই না অসহায়।
কিন্তু সেই যে গেল গোলাপ, ঘণ্টা পার হলেও আর এল না। সুজয়ের বাবা ইনস্পেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে সার্কিট হাউসে গিয়েই শুনলেন মেয়েটি অনেক আগেই এখানকার হিসাবনিকাশ চুকিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
সমস্যার পর সমস্যা।
গোলাপ কি সত্যিই পালাল? নাকি তরতাজা ফুলের মতো মেয়ে দেখে হাপিস করে দিল কেউ?
ইনস্পেক্টর সঙ্গে সঙ্গে থানায় এসে ফোনে ফোনে খবর পাঠালেন চারদিকে। আর এই সময়ই বিলাসপুর থেকে এক নিদারুণ তারবার্তায় জানা গেল কাল রাতে ধৃত দু’জন আসামিই এক রহস্যময় উপায়ে লকআপ থেকে পালিয়েছে।