অমরকণ্টক রহস্য – ১১

এগারো

এই বন্দি গুহায় চাঁদু অনুভব করল এখানে চারদিকেই মৃত্যুর শীতলতা। বেলা এখন কত তা কে জানে? খিদেও পেয়েছে খুব। লছমির মুখে বুলানারার কথা শুনে ও মনে মনে বুলানারা সম্বন্ধে আলাদা একটা ছবিই এঁকে ফেলেছিল। এখন এখানে এসে বুঝল, কল্পনার সঙ্গে এই বাস্তব সম্পূর্ণ ভিন্ন। বুলানারা একটা পাতালপুরী বা জ্যান্ত মানুষের কবরখানা ছাড়া কিছুই নয়। এখানে দয়া নেই, মায়া নেই, করুণা নেই, কিছুই নেই। আছে শুধু নির্মম নিষ্ঠুর নিয়তির হাতছানি। নেহাতই দুর্ভাগ্য না হলে এখানে কেউ এসে পৌঁছয় না।

তবু এই মৃত্যুপুরীতেই জুলির খবর পাওয়া গেল। মেয়েটা জীবিত কি মৃত তা নিয়ে ঘোর সংশয় ছিল ওর মনে। এখন কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারলে, জুলিকে নিয়েই ফিরে যাবে ওর মায়ের কাছে। কিন্তু গোলাপ! গোলাপের কী হবে? সে কোথায়? সে কি এখানে এই বুলানারাতেই আছে? এই মৃত্যুগুহায়? যদি থাকে তা হলে কোথায়? কোনখানে?

চাঁদু বলল, আমি না হয় বোকার মতো নিজের থেকেই ধরা দিয়েছি এদের হাতে। কিন্তু তোমাকে এরা ধরল কীভাবে?

সে অনেক কথা। শোন তবে।

সন্দীপ বলতে লাগল, আমার নাম সন্দীপ সরকার। আমি শালিমারের কাছে ভড়পার রোডে থাকি। শালিমারে রেলের গোডাউনে গুন্ডাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ওয়াগন ভাঙার কাজ করি। বিলাসপুর, কাটনি, ঝাড়সুগড়া প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মাঝে মধ্যে রেললাইনের ফিস প্লেট সরিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটাই। আগে তোর বাবা তারাপদবাবু আর কেষ্ট মিত্তির ছিলেন আমাদের লিডার। তোদের ওই যে বিশাল বাড়িটা। কেষ্ট মিত্তিরের ওই যে ফ্ল্যাট বাড়িগুলো সব ওই পাপের টাকায়।

সন্দীপদা!

উত্তেজিত হোস না। তুই যে এত বড়টা হয়েছিস, লেখাপড়া শিখেছিস, এই যে ভাল ভাল পোশাক পরছিস সবই কিন্তু ওই পাপের টাকায়। অসৎপথে উপার্জিত অর্থে প্রতিপালিত হওয়া একজন হলি তুই বা তোদের সবাই। তা যাক গে। তোর আর দোষ কী বল? তবে একটা কথা, তুই যেন তোর বাবার মতো হোস না।

তুমি যা বলছ তা সত্যি?

মৃত্যু আসন্ন জেনেও কেউ কি মিথ্যে বলে?

তারপর?

তুই যখন খুব ছোট, তখন আমি কতবার তোদের বাড়িতে গেছি। তোকে কোলে করে আদর করেছি। তোর ওপর আমার মায়া পড়ে গিয়েছিল।

সেইজন্য সেদিন বিলাসপুরে নদীর ধারে তোমাকে দেখার সময় মনে হয়েছিল তুমি আমার কত চেনা। কতবার যেন দেখেছি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না।

এখনও নিশ্চয়ই মনে পড়েনি। মনে পড়বার কথাও নয়। তা যাক, এই সময় অরিন্দম হাজরা নামে এক ঘুঘু এই লাইনে ভীষণভাবে মাথা চাড়া দেয়। সেই অরিন্দম হাজরারই দুই ছেলে শংকর ও অর্জুন। শয়তানিতে এদের জুড়ি নেই। সবাই বলে শংকরার্জুন। তা সেই অরিন্দম হাজরা শালিমারের তিন নম্বর গেটের কাছে নৃশংসভাবে খুন হন। খুনটা অবশ্য আমরাই করেছিলাম। চক্রান্তের মধ্যমণি ছিলেন তোর বাবা এবং কেষ্ট মিত্তির দু’জনেই। অনেকদিন পরে ব্যাপারটা যখন ফাঁস হয়, কেষ্ট মিত্তির তখন পুরো দায়টা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সাজেন। এবং শংকর-অর্জুনকে দলে রাখেন।

চাঁদু দু’হাতে মুখ ঢেকে বলল, আমার বাবা খুনি?

অন্তত এই একটা ক্ষেত্রে। যাই হোক, এর পরে নিজেদের মধ্যে হিস্যা নিয়ে বিবাদ এবং অবিশ্বাস দেখা দেওয়ায় বা লাইনে ক্রমাগত নতুন লোকের আমদানি হওয়ার ফলে আমাদের দলটা পুরোপুরি ভেঙে যায়। তোর বাবা এখন সম্পূর্ণ অন্য ধরনের মানুষ হয়ে গেছেন। অর্থ প্রতিপত্তি কোনও কিছুরই অভাব নেই তাঁর। কেষ্ট মিত্তিরও এখন এক ঝানু ব্যবসাদার। আর আমি তো চুনোপুঁটি। মাঝে মধ্যে খারাপ কাজ একটু আধটু করলেও মূলত এখন আমি কোল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাছে একটা ছোট্ট কারখানা করেছি। সম্প্রতি এইখানে বহিরাগত এক অত্যাচারী গুন্ডা এই পাহাড়-জঙ্গলে বেশ পাকাপাকিভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। জনা কয়েক লোককে নিয়ে সে ওয়াগন ভাঙা থেকে শুরু করে ড্রাগের ব্যবসা পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে ছোট বড় মেয়ে দেখলেই চুরি করে পাচার করছে অন্য শহরে। আমি রকির দলেও কিছুদিন কাজ করেছি। তাই ওর সবকিছু এত ভাল করে বলতে পারলাম।

ওর দল তুমি ছেড়ে দিলে কেন?

একটাই মাত্র কারণে। সেটা হল মেয়েচুরি। ওকে আমি অনেক বারণ করেছি, কিন্তু ও শোনেনি। সেই নিয়ে ওর সঙ্গে আমার দারুণ মতভেদ। পালটা দল আমারও আছে। আমি বেশ কিছুদিন ধরেই ওকে এই পথ থেকে সরিয়ে দেবার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু মুশকিল হল কী, ওরই দু’–একজন লোক যে ওর স্পাই হয়ে আমার দলে ভিড়ে কাজ করছিল তা আমি ভাবিনি। না হলে আমি হচ্ছি ফাঁকা মাঠের বেড়াল। আমার হাতে বেড়ি দেবে এমন কেউ ছিল না। অর্থাৎ তোমার দলের লোকই তোমাকে ফাঁসাল!

ঠিক তাই।

কিন্তু শংকর ও অর্জুনের সঙ্গে রকির সম্পর্ক কী?

স্মাগলিং-এর। ওরা দু’জনেই এখন ওর দলের লোক। পুলিশ যদি না আসত তা হলে ওরা দু’জনেই খুন হত আমার হাতে। শুধু তোকে সতর্ক করতে গিয়েই সব চাল ভেস্তে গেল। উলটে আমিই ওদের প্যাঁচে জড়িয়ে পড়লাম।

চাঁদু সব কিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। বলল, বুঝেছি। এই কারণেই বাবা বাড়ি আসার ব্যাপারে প্রথমে প্রচণ্ড আপত্তি জানিয়েছিলেন। উনি চাননি এই বেল্টে আমি কখনও আসি।

ঠিক তাই।

পরে অবশ্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উনি আমাকে এখানেই পাঠান। কেন না তিনি হয়তো ভেবেছিলেন কেষ্ট মিত্তিরের কালো হাত এত দূরে পৌঁছবে না। এবং আমাকেও ফোনে সতর্ক করে বলেছিলেন, ছেলেটাকে একটু দেখিস। স্ট্রেঞ্জ! বাবা জানতেন তুমি এখানে আছ?

না হলে আমি জানলাম কী করে তুই এখানে আসছিস? শংকর আর অর্জুন যে তোকে খুন করবার জন্যে এখানে আসছে বা আসতে পারে, সে খবরও তোর বাবার কাছ থেকেই পাই?

চাঁদু বলল, সন্দীপদা! আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। আমার মরে যাওয়াই ভাল।

তুই কি বাঁচবি? মরতে তোকে হবেই। আমাকেও। রকি এলে আমাদের দু’জনকেই ওই গুহামুখের কাছ থেকে খাদের ভেতর ফেলে দেবে। চাঁদু শিউরে উঠল।

সন্দীপ বলল, কীরে ! মরবার নাম শুনে ভয় পেলি? অথচ একটু আগেই তো মরতে চাইছিলি তুই?

চাইছিলাম। কিন্তু এইরকম মৃত্যুকে চাইছিলাম না।

মরণ সুমনোহর বেশে সবার জীবনে আসে না রে। এরপর দীর্ঘ নীরবতা।

চাঁদু বলল, সব শুনলাম। সব বুঝলাম। এখন বলো জুলিকে তুমি পেলে কোথায়?

হ্যাঁ, এবার জুলির কথাই বলি। সেই অভিশপ্ত দিনটিতে ফিরে যাওয়া যাক। জুলি আমাকে বলেছে তুই নাকি ওকে টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলি মোড়ের মাথার একটা দোকান থেকে কচুরি কিনে আনতে।

হ্যা। জুলি ঠিকই বলেছে। আমিই পাঠিয়েছিলাম ওকে।

বেচারি জুলি। নিষ্পাপ মেয়েটি যখন মোড়ের মাথায় এল ঠিক তখনই…। এমন সময় বাইরে মস মস শব্দ।

সন্দীপ চুপ করে গেল। কে বা কারা যেন আসছে। চাঁদুও সভয়ে পিছিয়ে এল দরজার কাছে।

ঘরের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকল শংকর আর অর্জুন। ওরা এসে সন্দীপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, তা হলে সন্দীপবাবু! আমাদের মারতে গিয়ে তুমি নিজেই এই মরণফাঁদে ধরা পড়লে শেষকালে? যাক, ভালই হয়েছে। এখন আমাদের কোনও শত্রু নেই। এবার বলো তো, সেই মেয়েটাকে কোথায় রেখেছ? সন্দীপ হেসে বলল, লাভ কী তাতে? বললেও মরব। না বললেও মরব।

মরবে তো নিশ্চয়ই। এই যে কেউটের বাচ্চাটা। এও তো মরবে। একে টোপ দিয়েই তো এর বাবাকে চারে ফেলব। এর বাবা লোকটা নিশ্চয়ই আমাদের খুন করবার জন্য মদত দিয়েছিল তোমাকে? কেষ্ট মিত্তিরের মুখে সব শুনেছি আমরা। জেনে রেখো বাবার হত্যাকারীদের কিন্তু আমরা সহজে ছাড়ব না। সেই হত্যার বদলা আমরা হত্যা দিয়েই নেব। এতদিন ওত পেতেছিলাম। এবার কাজ শুরু করেছি।

সন্দীপ হোঃ হোঃ করে হেসে উঠে বলল, এতই যদি বাবার ওপর দরদ তোমাদের, এতই যদি আদর্শের জোর, তা হলে যে কেষ্ট মিত্তিরের হয়ে এতদিন কাজ করলে সেই কেষ্ট মিত্তিরও তো তাদেরই একজন।

সেটা অবশ্য আগে জানতে পারিনি। যেদিন পারলাম সেদিন থেকেই চেষ্টা করতে লাগলাম ওর ক্ষতি করবার। শুধু রকির দলে জড়িয়ে পড়ায় আর পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়ানোর জন্যই এতদিন তা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই যে মুহূর্তে সুযোগ পেলাম সেই মুহূর্তেই সরিয়ে দিলাম ছেলেটাকে।

তোমরাই তা হলে রাজুর হত্যাকারী?

হ্যাঁ। এবার পালা কেষ্ট মিত্তিরের। তবে এখনও ওর সময় হয়নি। ওকে তিল তির করে শোষণ করে একেবারে ছিবড়ে করে দিয়ে তবেই মারব। অবশ্যই ওর মরণও হবে এই মরণগুহায়।

চমৎকার পরিকল্পনা। কিন্তু এমন আদর্শবাদী যুবক হয়ে তোমাদের বোনের বয়সি একটি নিষ্পাপ কিশোরীর নামে খুনের বদনামটা চাপিয়ে দিতে বিবেকে বাধল না?

বাঃ রে। আমরা কেন বদনাম দেব? পুলিশ দিয়েছে। খবরের কাগজ দিয়েছে। রাজুর বন্ধুরা মেয়েটিকে ওর সঙ্গে যেতে দেখেছে। দোকানদার দেখেছে, আরে! মেয়েটাকে তো আমরা খুন করছি না। হোক না মেয়েটা দাগি। কী যায় আসে তাতে? ও তো এখন আমাদের মূলধন। কিন্তু তুমি আমাদের মুখের গ্রাম কেড়ে নিলে কেন?

তোমরা তো জান ভাই, আমার দুর্বলতাটা কোথায়? আমার মা যখন আমাদের নিয়ে কলকাতার ফুটপাথে বড়লোকের গাড়ি বারান্দার নীচে রাত কাটাতেন, তখন এক গভীর রাতে আমার দশ বছরের আদরের ফুটফুটে বোনটাকে কখন কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেল। সেই শোকে মা আমার হাওড়ার ব্রিজ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। তাই কোনও মেয়ের গায়ে কেউ হাত দিলে বা মেয়েচুরির কাজ করলে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি না।

ঠিক তাই কি?

না হলে তোমাদের কারও সঙ্গে অন্য কোনও ব্যাপারে আমার গরমিল কখনও হয়েছে। এই রকির সঙ্গেও আমার বিবাদ তো সেই নিয়ে। আজ আমি অসহায়। আমি বন্দি। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর প্রহর গুণছি। কিন্তু একবার তোমরা ভেবে দেখো তো, কেন তোমরা আমাকে মারতে এসেছ? কেন চাইছ এই অসহায় নির্দোষ ছেলেটাকে মেরে ফেলতে? বাবার হত্যার বদলা নিতে। এই তো? এখন আমিও যদি আমার বোনের অপহরণকারীদের না-পেয়ে ওই ধরনের কাজ যারা করে তাদের বিরোধিতা করি তা হলে কী অন্যায়টা করেছি? আমার আপত্তি তো শুধু ওই কাজটিতে। এর বাইরে তো আমরা সবাই এক। আমাদের সবারই তো একই পরিচয়— ওয়াগন ব্রেকার। আমরা সবাই তো একই সূত্রে গাঁথা এক-একটি ক্রিমিনাল। তাই না?

শংকর আর অর্জুন চুপ করে রইল।

সন্দীপ আবার বলল, এখনও সময় আছে ভাই, রকিকে তোমরা বোঝাও। এই সর্বনাশা মেয়েচুরির খেলা ও যেন বন্ধ করে।

অর্জুন বলল, ঠিক আছে। এতসব ব্যাপার আমরা জানতাম না। মেয়েচুরির কাজে ঝক্কি অনেক। টাকাও অনেক। ও কাজ আর করব না। এখন তোমাকে আমরা মুক্তি দিতে পারি। কিন্তু একটি মাত্র শর্তে।

রকির হাতে মর্মান্তিক মৃত্যু আমি কামনা করি না। এখনও আমি বাঁচতে চাই। মুক্তির বিনিময়ে আমি যে কোনও শর্তে রাজি।

ওই জুলি মেয়েটার দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। ও কখনও ওর মায়ের কাছে ফিরে যাবে না। কেন না ও ফিরে গেলে পুলিশের জেরার মুখে যদি সব কথা বলে দেয়, তা হলে কিন্তু খুনের দায়ে ধরা পড়ব আমরা। তার চেয়ে মেয়েটা তোমার কাছেই থাক। তোমার হারানো বোনের অভাব পূর্ণ করুক।

সন্দীপ বলল, ভাল কথাই বলেছ। তবে এও জেনো মেয়েটা বললেই কী, না বললেই কী পুলিশের খাতা থেকে আমাদের ব্ল্যাক লিস্টের নাম তো কেউ মুছে দিতে পারবে না। তা ছাড়া খুন তো আরও হবে। কেষ্ট মিত্তিরের জন্য একটা বুলেট খরচা করতে হবে না? তোমরা ওর ছেলেকে মেরেছ। আমি মারব ওকে। বিশ্বাসঘাতক শয়তান। তোমাদের বাবার হত্যাকারীদের চক্রে আমিও একজন ছিলাম। কিন্তু আমি তখন সাধারণ একজন কর্মী মাত্র। এই ছেলেটির বাবাও ছিলেন নেপথ্যে। কিন্তু আসল ঘুঘু কেষ্ট মিত্তির। ওইসব ঘটনার পর এর বাবা অবশ্য একেবারেই লাইন ছেড়ে সরে যায়। কিন্তু কেষ্ট মিত্তির এখনও সমানে ওর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শংকর বলল, ছেলেটা তো সব শুনল। ও বলে দেবে না?

না। ওর চোখ দেখছ না? ও নিজেও চাইছে ওর অপরাধী বাপের হাতে হাতকড়া পড়ুক। একটু আগে আমার মুখে ওর পিতৃপরিচয় পেয়ে ও নিজেই মরতে চাইছিল।

শংকর আর অর্জুন দু’জনেই সবিস্ময়ে বলল, তাই নাকি? সত্যিই কী বাপের কী ছেলে। অবশ্য আমরা যখন ওকে চুরি করে আনি, তখন কিন্তু ও একটুও বেগ দেয়নি আমাদের।

শংকর ডাকল, মুশা !

সেই বামনাকৃতি দারোয়ান গোছের লোকটা ভেতরে এল।

অর্জুন বলল, হাতকড়াটা খুলে দাও।

নেহি। রকি হামকো বহুত মারেগা।

শংকর এক ঝটকায় ফেলে দিল মুশাকে।

আর সঙ্গে সঙ্গে দুটো গুলির শব্দ শোনা গেল, ডিস্যুম ডিস্যুম।

শংকর আর অর্জুনের দেহ লুটিয়ে পড়ল মেঝেয়।

দু’জন লোককে সঙ্গে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে এলেন এক সর্দারজি। চাঁদুকে দেখেই বললেন, ইয়ে লেড়কা কৌন হ্যায়? কাঁহাসে আয়া?

দারোয়ানটা বলল, উয়ো দোনো বদমাশনে লে আয়া।

সর্দারজি মাথার পাগড়ি, চোখের কালো চশমা আর নকল দাড়ি এক টানে খুলে বললেন, বাহার লে যাও। ফিক দো নীচে। যাও, জলদি করো।

চাঁদুর শিরদাঁড়া বেয়ে যেন একটা হিমস্রোত নেমে এল। এই কি রকি ! লোকটি ওকে হাত ধরে টেনে আনল ঘরের বাইরে।

চাঁদু কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, জল। একটু জল দাও আমাকে।

লোকটির দয়া হল বুঝি। সে হিংস্র চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, হাঁ। মরণে সে পহলে পি লো। বলে পিছন ফিরতেই চাঁদু ওর পায়ের ফাঁকে পা গলিয়ে জোরে একটা টান দিল। মুখ থুবড়ে পড়ে গেল লোকটা। আর সেই মুহূর্তেই চোখের পলকে বন্দিগৃহের দরজাটা টেনেই তাইতে শিকল আটকে দিল চাঁদু।

ভেতরে যারা ছিল দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল তারা। চিৎকার করে বলতে লাগল, খোলো খোলো। দরোয়াজা খোলো। এ মুশা!

আর মুশা। চাঁদু তখন আবার নিজমূর্তি ধরেছে। যে টুলটার ওপর বসে বসে চৌকিদারি করছিল মুশা, সেই টুলটার বাড়ি বেশ ঘা কতক দিয়ে ওর নাকমুখ থেঁতো করে দিল। মুশার যখন আর উঠে দাঁড়াবারও শক্তি রইল না চাঁদু তখন ওর বুকের ওপর চেপে বলল, গোলাপ কোথায়? কোন ঘরে রেখেছিস তাকে?

মুশার কথা বলবারও শক্তি নেই। তবু কোনওরকমে বলল, মুঝে না মালুম।

তুমহারা বস এক লেড়কি কো চুরাকে লে আয়া। ও কাঁহা হ্যায়? মুশার সেই একই উত্তর, মুঝে না মালুম। চাঁদু সেই টুলের বাড়ি ওর মুখের ওপর আরও এক ঘা দিয়ে বলল, এবার মালুম হয়েছে?

নেহি।

ফের এক ঘা দিয়ে বলল, এবার?

আভি হুয়া।

কাঁহা হ্যায় ও।

মুশা বহুকষ্টে আঙুল দেখিয়ে বলল, উ-উ-উধার।

পাশের একটা ঘরে, মানে যে ঘরে মুশা থাকত, সেই ঘরের দরজার শিকল খুলে মুশাকে টেনেহিঁচড়ে ঢোকাল চাঁদু। ওর যদিও আর নড়বার ক্ষমতা নেই, তবু কথায় আছে সাবধানের মার নেই। তাই ওকে ঘরে ঢুকিয়ে ঘরের ভেতর হাতড়ে একটা টচ আর একটা গুপ্তি ছোরা বার করে দরজায় শিকল দিল। শিকল দিয়ে ফিরে আসতে গিয়েও কী ভেবে যেন আবার শিকল খুলে ঘরে ঢুকে একটা তালাচাবি জোগাড় করে সেই বন্দি ঘরে তালা দিল।

ভেতর থেকে আস্ফালন তখনও সমানে চলছে।

চাঁদু বাইরে থেকেই বলল, সন্দীপদা! আমি যে ভাবেই হোক পুলিশ নিয়ে এখানে আসছি। আর কয়েক ঘণ্টা কষ্ট করো তুমি। আমাকে ভুল বুঝো না যেন। সন্দীপ ভেতর থেকেই বলল, কিচ্ছু ভুল বুঝব না। খুব চালাকিটা করেছিস তুই। দরজা খুললে তুইও মরবি, আমিও মরব। মাঝখান থেকে এই পাপীরা পার পেয়ে যাবে। তার চেয়ে তুই বাঁচলে অনেকে বাঁচবে। চম্পার দেবীমন্দিরে পূজারিজির ঘরে জুলিকে রেখেছি। ওকে উদ্ধার করিস। আর এই বাড়ির বাইরের দিকে পিছনের অংশে একটা সিঁড়ি দেখতে পাবি। সেই সিঁড়ির নীচে… ডিস্যুম।

আবার একটা গুলির শব্দে। আর সেই গুলির শব্দের সঙ্গেই সন্দীপের কণ্ঠস্বর নীরব হয়ে গেল।

চাঁদু বলল, সন্দীপদা! কী হল তোমার?

ভেতর থেকে ক্রুদ্ধ কন্ঠস্বর শোনা গেল, দরোয়াজা খোল শয়তানকা বাচ্চা। নেহি তো তেরা ভি অ্যায়শা হাল হোগা।

চাঁদু বলল, দরজা খুললে আমার হাল যে কী হবে তা তো জানি। তাই এ দরজা আমি কখনও খুলছি না।

চাঁদু এক-পা এক-পা করে বাইরে এল এবার। তারপর এদিক সেদিক করে অনেক খুঁজেও সিঁড়ি কোথাও দেখতে পেল না। ও যখন ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে কী করবে ভাবছে তেমন সময় হঠাৎই এক জায়গা থেকে একটা কুকুর ভৌ ভৌ করে

ছুটে আসতেই, ও একটা পাথর কুড়িয়ে ছুড়ে মারল কুকুরটাকে। পাথরটার মোক্ষম ঘা কুকুরের মুখে পড়তেই ‘ভ্যাক’ করে একটা ডাক ছেড়ে পালাল কুকুরটা। আর তখনই চাঁদু দেখতে পেল, ছোট একটা দেড় ফুটের মতো সরু সিঁড়ি একটা কাঠের আগড়ে ঢাকা আছে। সেটা সরিয়ে একটু ঝুঁকে নীচে নামতেই একটা বড়সড় গুহার ভেতরে এসে পড়ল। কিন্তু সেই গুহামুখে জেলখানার মতো মোটা মোটা লোহার গরাদের একটা আটকানো আছে। সেটাও আবার তালা দেওয়া। বেশ ভারী ধরনের মজবুত তালা। ভাগ্যে মুশার ঘর থেকে টর্চটা নিয়েছিল তাই এদিক সেদিক ফেলতেই এক জায়গায় পেরেক ঝোলানো একটা চাবি দেখতে পেল ও। চাবিটা নিয়ে এসে তালা খুলে, তালাটা একপাশে রেখে, চাবিটা পকেটে পুরে নিল। বলা যায় না কেউ যদি দূর থেকে লক্ষ করে থাকে ওকে, তা হলে আবার হয়তো এই তালাতেই বন্দি হবে ও। তালা খুলে ভেতরে ঢুকল চাঁদু। এর ভেতরে শত্রুপক্ষের কেউ নেই। তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু বাইরে যদি কেউ থাকে? তাই বেশ কিছুক্ষণ ঘাপটি মেরে বসে রইল। কেউ এসে ওকে আটকাবার চেষ্টা করলেই ও গুপ্তি হোরার ফলা দিয়ে লড়ে যাবে তার সঙ্গে।

কিন্তু না। প্রায় মিনিট দশেক কেটে গেলেও কেউ এল না।

ও তখন টর্চের আলোয় পথ দেখে এক-পা এক-পা করে নীচে নামতে লাগল। ওঃ সে কী ভীষণ অন্ধকার। ভাগ্যে টর্চটা এনেছিল। স্যাঁতস্যাঁতে হিমশীতল অন্ধকারের গুহা। আলো নেই, বাতাস নেই, কিছুই নেই। শুধু ওই লৌহদণ্ডের আটকানোর ফাঁক দিয়ে যেটুকু অক্সিজেন ভেতরে ঢোকে। কী ভয়ংকর! কে বা কারা আবিষ্কার করেছিল এই গুহাটাকে তা কে জানে? সেকালের কোনও রাজা রাজড়া হয়তো। দুষ্ট প্রজাদের ধরে এনে হয়তো বা বন্দি করে রাখত এখানে। নয়তো এটাই ছিল তাদের কোষাগার, এখন দুষ্কৃতীরা এটাকে তাদের কাজে লাগাচ্ছে।

চাঁদু ভয়ে ভয়ে আলতো পায়ে সিঁড়ির নীচে নেমে এল।

এখানটা বেশ প্রশস্ত।

আবার একটা জেলখানার মতো ঘর চোখে পড়ল। সেই ঘরের প্রকাণ্ড লৌহদরজায় তালা দেওয়া। ঘরের ভেতরটা অবশ্য তত অন্ধকার নয়। একটা চিমনি লণ্ঠন জ্বলছে একপাশে। তাতেই ও দেখতে পেল সেই ঘরের এক কোণে দু’ হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে এক সোনার প্রতিমা। এ নিশ্চয়ই গোলাপ। গোলাপ ছাড়া আর কেউ নয়।

চাঁদু ডাকল, গোলাপ।

কে! কে তুমি!

আমি চন্দ্ৰকান্ত।

তুমি ! তুমি এখানে কী করে এলে চাঁদুদা? এ আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? ততক্ষণে চাঁদু পাশের একটি খোপে রাখা চাবি নিয়ে তালাটা খুলে ফেলেছে। আর গোলাপ! সে সবকিছু ভুলে মুক্তির আনন্দে ছুটে এসেই জড়িয়ে ধরল চাঁদুকে। সে কী প্রবল উচ্ছ্বাস। চাঁদুও ওকে যেন একগুচ্ছ রজনীগন্ধার মতো লুফে নিল।

গোলাপ বলল, তুমি কি আমাকে উদ্ধার করবার জন্য এখানে এসেছ? কী করে জানতে পারলে আমি এখানে আছি?

পরে তোমাকে সব বলব। শুধু জেনে রাখো লছমি নামের একটি মেয়ের জন্য।

ভাগ্যিস এলে। না হলে ওরা আমাকে কোথায় পাচার করে দিত কে জানে? চাঁদু বলল, দিলেই হল? ভগবান নেই?

আছে আছে। নিশ্চয়ই আছে। ভগবান আছে বলেই তো তুমি আমার ভগবান হয়ে এখানে এলে। না হলে আমি তো ভাবতেও পারিনি এই অবস্থা থেকে কখনও মুক্তি পাব বলে। দেখছ না সূর্যের আলোও এখানে আসতে ভয় পায়।

চাঁদু বলল, যাক। আর কোনও ভয় নেই। এবার একটা সুখবর শোনো, তোমাকে যারা বন্দি করে রেখেছিল আমি কৌশলে তাদের বন্দি করেছি। আমাকে হত্যা করবার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিল তারা দু’জনেই মরেছে। আর জুলিরও সন্ধান পেয়েছি। তুমি আমি দু’জনেই গিয়ে উদ্ধার করব তাকে।

গোলাপ যেন একটু আহত হয়ে বলল, তবে আর কী। এবার নিশ্চয়ই ভুলে যাবে তুমি আমাকে।

চাঁদু হেসে বলল, এই জাল থেকে একবার কেটে বেরোলে জুলিদের বাড়িই আর কখনও যাব না আমি।

সে কী! তা হলে তো আমাদের বাড়িও যাবে না।

চাঁদু হঠাৎ ছল ছল চোখে বলল, আচ্ছা গোলাপ! তুমি তো তোমার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমি যদি তোমার মা-বাবার কাছে বরাবরের জন্য তাঁদের ছেলের মতো থাকতে চাই, তোমার বন্ধু হিসেবে, তাঁরা কি আমাকে রাখবেন না?

তোমার কথার মানেটা আমি ঠিক বুঝলুম না।

আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এটা নয়।

তোমার বাবা-মা আত্মীয়স্বজন, ঘরবাড়ি সব ছেড়ে তুমি আমাদের বাড়ি কেন থাকবে? পারবে থাকতে?

যদি তোমার মা-বাবা আমাকে থাকতে দেন তা হলে নিশ্চয়ই থাকব। না হলে এই আমাদের শেষ দেখা। আমি কিন্তু আর কখনও ঘরে ফিরব না।

তোমার কী হল তা জানি না। যদি তাই হয় তা হলে জেনো, আমাদের বাড়িতে তোমার অবারিত দ্বার।

চাঁদু গোলাপের একটা হাত ধরে বলল, যদি তুমি আমাকে বন্ধুর মতো ভাবো তা হলে আমি তোমাকে দেখব বোনের মতো।

সেভাবেই বলেই বলল, না। আর দেরি নয়। চলো আমরা অমরকণ্টকে ফিরে যাই। গিয়ে সব কথা সকলকে বলি। তুমিও আমার সব শুনবে।

চাঁদু ও গোলাপ যখন সেই গুহা থেকে বেরিয়ে এল বাইরে তখন প্রচুর পুলিশ। অমরকণ্টকের সেই ইনস্পেক্টর আছেন। লছমি, বিরজু আছে। আর আছেন সিদ্ধিবাবা।

সিদ্ধিবাবা আনন্দে উল্লসিত হয়ে বললেন, ওই ওইতো ছেলেমেয়ে দুটো। লছমিবেটির কথাই তো ঠিক দেখছি।

চাঁদু আর গোলাপ সিদ্ধিবাবাকে প্রণাম করল।

লছমি ছুটে এসে চাঁদুর হাতদুটি ধরে বলল, তুম কাঁহা থে দাদা?

চাঁদু বলল, আমার স্বপ্নের বুলানারায়। কিন্তু তুই সেই যে গেলি, আসতে অত দেরি করলি কেন? তাই তো আমি ওই খারাপ লোকদুটোর পাল্লায় পড়ে গেলাম। মুছে মাফ কর দো।

দিলাম। তবে ওদের পাল্লায় পড়ে আমার খারাপ হয়নি। ভালই হয়েছে।

সিদ্ধিবাবা বললেন, হঠাৎ কীভাবে কী হয়ে গেল আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো শুনি। আমি তো সকালেই তোমার সঙ্গে দেখা করলাম। তারপর তুমি এখানে এলে কী করে?

চাঁদু সব বলল।

সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল সকলে। সবাই তখন হইহই করে ছুটে চলল সেই বন্দিগুহায়।

চাঁদুর কাছে চাবি ছিল। তাতেই তালা খুলে ভেতরে ঢুকেই টেনে বার করল রকি ও তার সঙ্গীদের। সেই সঙ্গে সন্দীপ, শংকর ও অর্জুনের লাশ। সন্দীপের হাতকড়ার চাবি মুশার কাছে ছিল। ওর পকেট হাতড়ে সেই চাবি বার করে হাতকড়া খোলা হল সন্দীপের। এরপর শুরু হল ঘরে ঘরে হানা দিয়ে তল্লাশি। অর্ধমৃত মুশাকেও অ্যারেস্ট করা হল।

চাঁদ সিদ্ধিবাবাকে বলল, বাবাজি, আপনি কীভাবে জানতে পারলেন আমার খবর?

বাবাজি দেখিয়ে দিলেন লছমিকে।

লছমি যা বলল, তা হল এই— ও তো চাঁদুকে বসিয়ে রেখে বাড়ি চলে গেল। সেখানে ওর ঘরের কাজ সামান্য একটু সেরে কিছু লাড্ডু আর চানা সঙ্গে নিয়ে ফিরে এসে দেখল চাঁদু নেই। প্রথমটায় ভাবল এদিক সেদিক কোথাও গেছে বুঝি। আবার একবার হাসপাতালেও ফিরে এসে দেখল। কিন্তু কোথায় কে? ও তখন উঁচু একটা গাছের ডালে উঠেই দেখতে পেল দু’জন লোকের সঙ্গে বহু দূরে চাঁদু কোথায় যেন যাচ্ছে। গাছ থেকে নেমে ও যে কী করবে তা ভেবে পেল না। কেন না ও তো চাঁদুর মুখে ওর কথা সব শুনেছে। তাই ও বুঝতে পারল সে নিশ্চয়ই রকির লোকেদের পাল্লায় পড়ে গেছে। ঠিক এই সময়ই এসে পড়েছিল বিরজু। সে এসেছিল চাঁদুকে দেখতে।

লছমি চিনত বিরজুকে। তাই ছুটে গিয়ে ওকে সব কথা বলল। সব শুনেই বিরজু অমরকণ্টককে ফোন করে জানিয়ে দিল সব কথা। অমরকণ্টকও জানাল অনুপপুরকে। বিরজু আর লছমি অনুপপুর পুলিশের গাড়িতে চেপে বুলানারায় এল। সিদ্ধিবাবাও এলেন অমরকণ্টকের দিক থেকে। তিনি যখন ফিরে আসছিলেন ঠিক সেই সময়েই পথে অমরকণ্টকের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে গেলে তিনিও ওদের সঙ্গেই চলে এলেন। সবে ওনারা নেমে কীভাবে কোনদিক দিয়ে তল্লাশি শুরু করবেন ভাবছেন এমন সময়ই চাঁদু ও গোলাপের দেখা পেলেন ওঁরা।

পুলিশের কাজ পুলিশ করতে লাগল। অন্য একটা জিপে সিদ্ধিবাবা সকলকে নিয়ে অমরকণ্টকে ফিরে এলেন।