অভিশপ্ত তিড্ডিম – ১০

দশ

আমরা দেখলাম আমাদের চোখের সামনে গুহাটা যেখানে শেষ হয়েছে এবং সামনেই পাঁচিলের খাড়াই ঠিক সেইখানে কে যেন একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরের অর্ধাংশ দেখা যাচ্ছে না। বাকিটা দেখা যাচ্ছে।

তাকে যে কী বলব তা ভেবে পেলাম না। সেটা না দৈত্য, না দানব, না অন্য কিছু। শুধু এক অতিকায় নবরূপী ভয়ংকর। এক কথায় অবশ্য তাকে নর-দানব বলা যেতে পারে।

খুব কম করেও বারো থেকে পনেরো ফুট উঁচু তার দেহ। গায়ে ঘন লোম। বনমানুষের মতো। কিন্তু জন্তু নয়। তবে দেখে মনে হল গরিলার চেয়েও সাংঘাতিক।

সেখানে দাঁড়িয়ে গুহার দিকে তাকিয়ে যেন ওত পেতে আছে সে। আমাদের দেখেই সেটা চোখের পলকে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

বাহাদুর বলল, কী সাংঘাতিক।

আমরা প্রায় অচৈতন্য রামদুলালবাবুকে ধরাধরি করে তাঁর ঘরে নিয়ে এলাম। তারপর অনেকক্ষণ ধরে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিতেই জ্ঞান ফিরে এল রামদুলালবাবুর। জ্ঞান ফিরতেই রামদুলালবাবু প্রথম কথা বললেন, সেটা গেছে? আমি বললাম, সেটা যাক বা না-যাক তাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না। এখন বলুন আপনি সুস্থ কি না?

হ্যাঁ। আমি সুস্থ।

বাহাদুরকে বললাম, বাহাদুর, আর দেরি নয়। এবার চলো ওই রত্নভাণ্ডারটাকে ধ্বংস করে দিয়ে আসি।

রামদুলালবাবু বললেন, আমিও যাব। আমাকেও সঙ্গে নাও। তোমরা দু’জনে যেয়ো না।

আমরা ধ্বংসের বারুদ নিয়ে ধ্বংস করতে চললাম।

যখন আবার সেই পাঁচিলের খাড়াইয়ের কাছে এসেছি, বাইরে তখন প্রচণ্ড হট্টগোল। চারদিক আলোয় আলো।

জেগে উঠেছে জংলিরা। হই হই করছে সব।

সেই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে প্রাণান্তকর চিৎকার আর আর্তনাদ।

অভিশপ্ত তিড্ডিমে মূর্তিমান বিভীষিকা যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে। সে এক ভয়াবহ ব্যাপার। তবে কি ওরা টের পেয়েছে? ওরা কি জানতে পেরেছে, যে আমরাই এই ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছি?

বাহাদুর বলল, একবার দেখব বাবু উঁকি মেরে?

আমি বাধা দিলাম, কী দরকার? এখন তাড়াতাড়ির সময়। চলো গুপ্তধনের ঘরে যাই।

যদি ওরা সতর্ক হয়ে গিয়ে থাকে?

তবুও যাব। তবে ওদের কোলাহল শুনে মনে হচ্ছে ওরা অন্য কোনও ব্যাপারে দাপাদাপি করছে। আর যদি ওরা জেনেও গিয়ে থাকে, তবুও আমাদের বাঁচার পক্ষে ওই জায়গাটাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। শুধু ওদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য নয়, ওই নর-দানবের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যও বটে। ওটা আর যাই করুক এখানকার পথ খুঁজে ওই জায়গায় কিছুতেই পৌঁছতে পারবে না।

বাহাদুর বলল, তা হলে চলুন।

রামদুলালবাবু একটা মশাল ধরিয়ে আগে আগে চললেন। আমরা চললাম পিছনে। যেতে যেতে রামদুলালবাবু বললেন, আমি এখানে এতদিন আছি কিন্তু ওইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি কখনও হইনি। ওরকম জীব দেখা তো দূরের কথা, অমন যে হতে পারে বা আছে, তা ধারণাতেও ছিল না।

আমি বললাম, হিমালয়ের তুষারমানবের কথা শুনেছি বটে। খবরের কাগজে পড়েছি পাহাড়ের উচ্চস্থানে বরফের ওপর মাঝে মাঝে তাদের অতিকায় পায়ের ছাপও নাকি দেখা যায়।

বাহাদুর বলল, তা যদি হয়, তা হলে তুষারমানব তো বরফের দেশে থাকবে। এখানে কেন? এখানে তো বরফ নেই?

কে জানে? তবে আমার মনে হয় এটাও ওইরকমই জীব। এরাই যখন বরফের ওপর দিয়ে চলে, তখন এদেরই পায়ের ছাপ দেখে আমরা চমকে উঠি। বরফের ওপর দিয়ে চলবার সময় ঝুরঝুরে বরফে এদের সর্বাঙ্গ ঢাকা পড়ে যায়। তখন এদের দেখলে মনে হবে একটা বরফের তৈরি মানুষই যেন বরফের দেশে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু ওটা এখানে কী করে এল?

কাছাকাছিই ছিল হয়তো। ডিনামাইটের শব্দে ভয় পেয়ে চলে এসেছে। কিন্তু বরফের মানুষ এই রুক্ষ প্রান্তরে কী করে আসবে?

ওটা যে কী তাই তো আদৌ জানি না। ওর সম্বন্ধে যা কিছু আলোচনা করলাম, সবই কল্পনার ওপর নির্ভর করে।

কথা বলতে বলতেই আমরা যথাস্থানে পৌঁছে গেলাম।

তারপর পাথর সরিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে, সিংহ দরজার তালা খুলে ফেললাম। আলোয় ভরে আছে ঘর। কী অপরূপ ছটা চারদিকে। সোনার পিলসুজে সোনার প্রদীপ জ্বলছে। আর রেলিংঘেরা ঘরের ভেতর বাস করছে বিষধর সাপেরা। কত ধনরত্ন থরে থরে সাজানো আছে সেখানে।

রামদুলালবাবু বললেন, এর কিছুও যদি পেতাম।

আমি বললাম, লোভ করবেন না রামদুলালবাবু। যা আমাদের নয়, তা পাবার চেষ্টা করবেন না।

বাহাদুর ততক্ষণে সেই তারে বাঁধা ডিনামাইট রেলিংঘেরা ঘরের মধ্যে ঢোকাতে শুরু করেছে। রেলিং-এর ফাঁকে ফাঁকে তার জড়িয়ে জোড়ের মুখে ডিনামাইট ফিট করে ওপরে উঠে এল।

তারপর একেবারে শেষপ্রান্তে চলে এসে শেষমাথাতেও একটি ডিনামাইট ফিট করে পলতেটা একটু লম্বা করে রাখল।

অনেকটা তার ছিল। তাই গুহামুখে সেই পাঁচিলের মতো খাড়াইটা যেখানে ছিল, সেখান পর্যন্ত চলে এল তারটা।

হাতের কাছেই রইল সবকিছু। এখন সময়মতো পলতের মুখে আগুনটা ছুঁইয়ে দিতে পারলেই সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।

বাইরে তখন প্রচণ্ড কোলাহল। সেই সঙ্গে লকলকে আগুনের হলকা ছুটছে চারদিকে।

আগুনের লেলিহান শিখায় চারদিকে লালে লাল। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। যেন কোনও বহ্ন্যুৎসব শুরু হয়ে গেছে এই তিড্ডিমের পাহাড়ে।

জ্বলছে আগুন। আর সেই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে গোঁ গোঁ শব্দ।

জংলিরা চিৎকার করছে।

পোড়া গন্ধে, কোলাহলে, চিৎকারে আর অগ্নিশিখার আলোয় শেষরাতের অন্ধকার যেন সংহার মূর্তি ধারণ করছে তখন।

আমরা সবে পলতের মুখে আগুনটা দিতে যাচ্ছি, এমন সময় দেখি গুহার ভেতর দিক থেকে হুড়হুড় করে একদল জংলি ছুটতে ছুটতে আসছে।

কাজেই আগুন আর দেওয়া হল না। চকিতে আমরা তিনজনে অন্ধকারে দেওয়াল ঘেঁষে ঘেঁষে সরে দাঁড়ালাম।

জংলিদের হাতে মশালের আগুন।

তারা সেই মশাল হাতে নিয়ে কাচ্চাবাচ্চা সমেত হই হই করতে করতে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসছে।

আমরা নিশ্বাস বন্ধ করে এমনভাবে লুকিয়ে রইলাম যে, ওরা আমাদের অস্তিত্বও টের পেল না।

আস ওরা তখন প্রাণভয়ে ভীত।

পাঁচিলের খাড়াইয়ের পথে বাধা পেয়ে বিপরীত দিকের পথ ধরে আসছে। প্রত্যেকেই দেখলাম নিরস্ত্র। তার মানে, হয় তারা অস্ত্র নেবার সময় পায়নি, নয়তো সেই ভয়ংকরের মুখোমুখি হতে গিয়ে সব কিছুই খুইয়ে বসে আছে। ওরা সকলেই গুপ্তকক্ষের দিকে চলেছে। একদল ঢুকে যেতেই দেখি আর একদল আসছে।

সে দলটা ঢুকে যেতেই দেখা গেল সর্দার এবং তার দুই অনুচরকে।

সর্দারও এখন পালকি চেপে নয়, আসছে ছুটতে ছুটতে। প্রাণের দায়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে। আর ওদের ঠিক পিছনেই তাড়া করে আসছে সেই ভয়ংকর দানবের মতন না-মানুষ না-জন্তুটা।

বাহাদুর চেঁচিয়ে উঠল, ফায়ার।

আমরা তিনজনেই এবার ছুটে গেলাম দেওয়ালের পাশ থেকে সেই পাঁচিলের খাড়াইয়ের দিকে।

সর্দার আমাদের দেখেই চমকে উঠল। শুধু চমকে ওঠা নয়, তার তখনকার সেই মুখের অবস্থা অবর্ণনীয়।

রামদুলালবাবু বললেন, ভয় নেই সর্দার। আমরা এদের ভুল বুঝেছিলাম। আসলে এরা আমাদের বন্ধু। আমাদের কোনও ক্ষতি করবে না। ততক্ষণে আমার পিস্তল গর্জে উঠেছে।

গুহা কাঁপিয়ে সেই নর-দানবের বুকে লেগেছে গুলি। গুলি খেয়েই এক অমানবিক চিৎকারে এবং প্রচণ্ড আর্তনাদে মুখর করে তুলল চারদিক। সে কী ভয়ংকর ডাক ছাড়তে লাগল এক একটা।

সর্দার তখন সাহস পেয়ে ছুটে এল আমাদের কাছে। কিন্তু সর্দারের সঙ্গী দু’জন এদিকে না-এসে দারুণ ভয় পেয়ে ছুটে ঢুকে গেল রত্নভাণ্ডারের দিকে।

আমি সঙ্গে সঙ্গে আড়াল থেকেই জন্তুটার পিছনদিক লক্ষ্য করে আর একটা গুলি ছুড়লাম৷ অমন বিশাল শরীর যেখানে, সেখানে লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার কোনও ব্যাপারই নেই। তাই অব্যর্থ লক্ষ্যভেদে গুলি গিয়ে লাগল তার পিঠে। লাগা মাত্রই আবার একটা হাঁফ ছেড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সে।

এতক্ষণে আমরা আত্মপ্রকাশ করলাম।

সর্দার আনন্দে রামদুলালবাবুকে জড়িয়ে ধরল। তারপর এগিয়ে এল আমার দিকে।

রামদুলালবাবু ওদের ভাষায় সর্দারকে বুঝিয়ে বললেন, এরা আমাদের বন্ধু। এরা গুপ্তধন নেবে না। গুপ্তধন নিতে এরা আসেনি। সত্যি সত্যিই ভুল করে গুহার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। এবং সেইজন্যই দেবী নাগেশ্বরীও বিপদে এদের রক্ষা করেছেন।

সর্দার খুশি হয়ে কী যেন বলল।

রামদুলালবাবু বললেন, সর্দার খুশি হয়েছেন তোমাদের ওপর। তোমরা সর্দারের প্রাণ বাঁচিয়েছ। সেজন্যে সর্দার তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তোমরা মুক্তি পাবে।

আমরা সেই নর-দানবটার কাছে এগিয়ে গেলাম। সেটা তখনও যন্ত্রণায় চিৎকার করছে আর হাত-পা ছুড়ছে। তার সে কষ্ট দেখা যায় না। তাই তার সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটাতে আমি তার বুকের বাঁদিক লক্ষ্য করে আর একটা গুলি করলাম।

গুলি খেয়ে সেটা যেন তার আর্তনাদের মাত্রা আরও একটু বাড়িয়ে তুলল। এদিকে গুলির শব্দে জংলিদের মধ্য থেকে মানে যারা গুপ্তকক্ষে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের দু’–একজন করল কী, ব্যাপারটা কী হচ্ছে দেখবার জন্য বেরিয়ে এল।

আমাদের সঙ্গে সর্দারকে দেখেই সাহস যেন বেড়ে গেল তাদের।

পথের ধারে একদিকে আমরা। অপরদিকে জংলিরা।

মধ্যে সেই অতিমানব, নর-দানব বা জন্তুটা।

সেটা অর্তনাদ করে হাত-পা ছুড়ে তার যন্ত্রণার প্রকাশ করতে লাগল। যখন সেটা একেবারেই নিস্তেজ হয়ে স্থির হয়ে গেল, তখন ওদিক থেকে জংলিদের একজন জন্তুটার বুকের ওপর এসে দাঁড়াল।

তারপর একেবারেই মরে গেছে কি না দেখবার জন্য একটা মশাল নিয়ে সেটার মুখে একটু ছুইয়ে দিতে আর একবার নড়ে উঠল সেটা।

যেই না নড়ে ওঠা, অমনি হাতের মশাল ফেলে দারুণ ভয় পেয়ে এক লাফ দিল জংলিটা। তারপর আবার ভেতর দিকে ছুটে গেল। ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেছে।

প্রচণ্ড ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল বাহাদুর, বাবু! সর্বনাশ হয়েছে। শিগগির পালিয়ে চলুন।

কী হয়েছে রে?

ওই দেখুন পলতেয় আগুন ধরে গেছে।

সে কী!

ওই— ওই— দেখুন।

দেখলাম জংলিটার হাত থেকে মশালটা ছিটকে পড়ে পলতেয় আগুন ধরে গেছে।

তখন এমনই অবস্থা যে আর কোনও উপায় নেই, সেই ভয়াবহ ধ্বংসলীলার হাত থেকে শাতকর্ণি গুহার গুপ্তকক্ষে আশ্রিত অতগুলো জীবনকে রক্ষা করবার।

আগুন তখন ডিনামাইট ছুঁই ছুঁই করছে। বাহাদুর বলল, আর কেন? এবার নিজেদের প্রাণ বাঁচান। শিগগির চলে এসো সর্দার। না হলে সবাই মরব।

সর্দারও বোধহয় বুঝতে পারল ব্যাপারটা। কাজেই আর একটুও দেরি না করে আমাদের পিছু নিল।

আমরা ঊর্ধ্বশ্বাসে গুহার ভেতর দিয়ে ছুটতে ছুটতে সেই বারান্দার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম, যেখানে মাত্র কিছুক্ষণ আগে ডিনামাইট চার্জ করে পথ পরিষ্কার করে এসেছি আমরা

হঠাৎ আমাদের মনে হল চারদিকে যেন ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে, কী প্রচ শব্দ। শব্দের পর শব্দ।

সব যেন থরথর করে কাঁপতে লাগল। যেন এখুনি একটা মহাপ্রলয়ে শেষ হয়ে যাবে সবকিছু। শেষ অবশ্য হল একসময়। চারদিক আবার আগের মতোই চিরশান্ত, নিশ্চুপ হয়ে গেল। ধ্যানগম্ভীর তিড্ডিমের আগেকার পরিবেশ আবার থমথম করতে লাগল।

আমরা যখন আবার ফিরে এলাম আগেকার জায়গায়, তখন কিছুই আর চেনা যাচ্ছে না।

সেই ভয়ংকর নর-দানবের শরীরের অর্ধেক আছে, অর্ধেক বিস্ফোরণে উধাও। কোথাও কিছু নেই। সব ফাঁকা। শুধু পাথর ও মাটির বিরাট একটা স্তূপ চোখে পড়ল আমাদের।

আমি বললাম, দুঃখ কোরো না সর্দার। পারো তো আমাদের ক্ষমা কোরো। এর জন্য আমরাই দায়ী।

সর্দার কী যেন বলল বিড় বিড় করে।

রামদুলালবাবু বললেন, সর্দার বলছেন উনি জানতেন এরকমটা হবেই। ওদের পুরাণে আছে, যা কিছু সৃষ্ট হয়, তা ধ্বংস হবার জন্য। শুধু তিড্ডিমের এই অংশটা নয়, সমস্ত পৃথিবীটাই ধ্বংস হয়ে যাবে একদিন। এই ধ্বংসলীলার হাত থেকে কারও রক্ষা নেই। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা— যা কিছু দেখছ সবই ধ্বংস হবে।

রাতের আঁধার মুছে গিয়ে ভোর হয়ে আসছে তখন। আঁধারের ধূসর যবনিকা একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসছে। পাখিরাও একটি দুটি করে ডাকতে আরম্ভ করেছে। আর একটু পরেই মেতে উঠবে কলরবে। পুবের আকাশটা লাল হবে। নানান রঙের ছটা ছড়িয়ে সূর্য উঠবে আলোর রথে।

আমরাও আবার ফিরে যাব আমাদের মুক্তির জগতে।

সর্দারের কাছে বিদায় চাইলাম আমরা।

সর্দার নীরবে নিজেই আমাদের পথপ্রদর্শক হল। এবং একটি অজ্ঞাত সুড়ঙ্গপথ দিয়ে কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের গুহার বাইরে, যেখান দিয়ে আমরা প্রথম প্রবেশ করেছিলাম সেইখানে পৌঁছে দিল।

বাহাদুর, আমি আর রামদুলালবাবু সর্দারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিড্ডিমের অরণ্যভূমি পার হয়ে এগিয়ে চললাম।

গুহামুখে দাঁড়িয়ে সর্দার আমাদের বিদায় জানাল।

সর্দারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে এসে পিছু ফিরেই দেখি অদ্ভুত কাণ্ড। সর্দার ততক্ষণে নিজের কোমর থেকে ধারালো ছুরিটা বার করে নিজের বুকেই আমূল বসিয়ে দিয়েছে।

আমরা তিনজনেই ছুটে গেলাম সর্দারের কাছে।

রামদুলালবাবু বললেন, এ তুমি কী করলে সর্দার?

সর্দার সে কথার কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু ইঙ্গিতে আমাদের চলে যেতে বলল।

আমরা একটু সময় থেমে দাঁড়িয়ে চলে এলাম।

দিনের আলোয় চারদিক তখন সোনারোদে ঝলমল করছে।

কিছু পথ হেঁটে আসার পর দেখলাম, এক জায়গায় ছোট ছোট কয়েকটা তাঁবু পড়েছে। এবং কিছু লোক সেখানে শিকারশেষে ফিরে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাদের সঙ্গে জিপও আছে দুটো। আমরা আমাদের বিপদের কথা তাদেরকে বুঝিয়ে বলে হাফলঙে ফেরার জন্য তাদের সঙ্গী হয়ে গেলাম।