সাত
চোখ বুজে ফেললাম। এ অবস্থায়ও সাদা আলোর ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি।
এবার ক্যামেরা থেকে ছবিটা হড়কে বেরনোর শব্দ পেলাম।
চোখ মেলে দেখি, আমার ক্যামেরাটার দিকে চেয়ে রয়েছে রয়। হেসে উঠল ও।
‘এটা খেলনা, তাই না? নিশ্চয়ই ফারিহার?’
‘জিনিসটা অনেক পুরনো,’ বললাম। ‘মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে আমার। ওটায় সমস্যা আছে।’
হাতে উল্টেপাল্টে দেখল ও ক্যামেরাটা।
‘দেখো, কী যেন বেরিয়েছে, পানিও ছিটায় নাকি এটা?’
‘পানি ছিটাবে কেন?’ বললাম। এবার দেখলাম ও কী দেখছে। চারকোনা ফিল্মটা। পুরোটা বেরোয়নি। ক্যামেরায় অর্ধেকটা আটকে রয়েছে।
‘খাইছে, দেখলে? নষ্ট হয়ে গেছে,’ বললাম। ‘এটা ফেরত দেব-’
পরমুহূর্তে, থেমে গেলাম। শ্বাস আটকে এল গলায়।
শরীরের মাঝ বরাবর তীক্ষ্ণ, খোঁচানো ব্যথা টের পাচ্ছি।
মনে হচ্ছে যেন ভারী কোন বেল্ট পরেছি। এবং বেল্টটা ক্রমেই আরও এঁটে বসছে…এবং আরও চাপ দিচ্ছে।
গোঙানির শব্দ বেরোল গলা দিয়ে আমার।
দম বন্ধ হয়ে আসছে।
শরীর ভাঁজ হয়ে গেল। কোমরের কাছে তীব্র ব্যথা।
মনে হচ্ছে আমাকে বুঝি কেটে দু’ভাগ করা হয়েছে!
‘মুসা? মুসা?’ কাঁধে রয়ের হাতের স্পর্শ পেলাম। ‘তুমি ঠিক আছ তো? কী হয়েছে?’
সিধে হয়ে দাঁড়াতে পারছি না। মুখে রা ফুটছে না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
কেটে দু’আধখানা করেছে…দু’ভাগ করেছে…
সহসাই উপলব্ধি করলাম কী করতে হবে।
ব্যথার সঙ্গে লড়ে, কষ্টেসৃষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। ক্যামেরাটা আঁকড়ে ধরেছি।
কোমরের কাছে যন্ত্রণাটা আরও বাড়ল।
‘মুসা? আমি ধরব তোমাকে? বাসায় দিয়ে আসব?’
রয়ের গলার স্বর শুনছি। মনে হচ্ছে বহু দূর থেকে আসছে।
‘মুসা? ব্যথা লাগছে তোমার?’ চেঁচাল ও। ‘কাউকে ডাকব?’
জবাব দিতে পারলাম না। চোয়াল টাটাচ্ছে, আঁকড়ে আসছে দেহের প্রতিটা মাংসপেশী।
চোখে লাল দেখলাম। তারপর কালো। বুঝতে পারছি যে কোন মুহূর্তে জ্ঞান হারাব।
দাঁতে দাঁত পিষে চারকোনা কাগজটা চেপে ধরলাম। এবার টানলাম জোরে, ক্যামেরা থেকে বাকিটা টেনে বের করলাম।
এতে কি কাজ হবে?
ব্যথাটা কি দূর হবে এখন?
দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করছি…অপেক্ষা…