সতেরো
ক্যামেরা থেকে ফিল্মটা সড়সড় করে বেরিয়ে আসতেই ওটা মুঠোবন্দি করল ফারিহা। মুখের কাছে তুলে ধরে ডেভেলপ হতে দেখছে।
‘দাও!’ চেঁচিয়ে উঠলাম। থাবা মারলাম। কিন্তু ও ওটা আমার নাগালের বাইরে সরিয়ে ফেলল এক ঝটকায়।
কেমন অসুস্থ লাগছে।
ফারিহার কী ক্ষতি করে বসেছি এখনও জানি না।
ভোমরাটা সামনের জানালা গলে উড়ে বেরিয়ে গেল। তাতেও স্বস্তি পেলাম না।
‘দুর্দান্ত উঠেছে!’ উত্তেজিত গলায় বলে উঠল ফারিহা। হাসছে খুশিতে। ‘মৌমাছিটার ছবিটা কী সুন্দর হয়েছে!’
আমার হাতে দিল ছবিটা। চোখের সামনে ধরতে গিয়ে হাত কাঁপতে লাগল। ভ্রমরটার ক্লোজ-আপ। ওটার পেছনে পুরোটা ঢাকা পড়েছে ফারিহার মুখ।
‘খাইছে, আজব তো,’ আওড়ালাম আনমনে।
ভ্রমরটাকে দানবীয় দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন হরর মুভির কোন দৃশ্য। এবং পতঙ্গটা যেন বসে রয়েছে ফারিহার কাঁধ জুড়ে-মাথার বদলে!
‘অ্যাই!’ উজ্জ্বল ফ্ল্যাশ চোখ ধাঁধিয়ে দিলে চিৎকার ছাড়লাম।
ওহ, না…
রঙের বিস্ফোরণ মিলিয়ে যেতেই, ফারিহার হাতে ক্যামেরাটা দেখলাম। আরেকটা চারকোনা ফিল্ম হড়কে বেরোচ্ছে।
‘খাইছে, তুমি কি আমার ছবি নিলে?’ ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম।
খিলখিলিয়ে হাসল ও।
‘এবার তো আমার পালা ছিল!’
‘বোকা কোথাকার! গর্দভ!’ চেঁচালাম গলা ফাটিয়ে।
হাসতে হাসতে আমাকে ঘিরে নাচতে লাগল বিচ্ছুটা।
‘এমন করো কেন? দেখোই না ছবিটা কেমন আসে,’ বলল।
আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াল ও। দু’জনে ছবিটা ডেভেলপ হতে দেখছি।
‘হেভি উঠেছে!’ ওটা আস্তে-আস্তে দৃশ্যমান হলে ঘোষণা করল ফারিহা।
প্রথমটায় ভেবেছিলাম ছবিটা উল্টো করে ধরেছি বুঝি। কিন্তু তা নয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমি মাথা নিচু করে পড়ে যাচ্ছি।
কোথায় ঘটল এমন ঘটনা? কখন?
ছবিটা খুঁটিয়ে পরখ করলাম। পটভূমিটা একেবারেই ঝাপসা। কিন্তু আমার মুখখানা স্পষ্ট দেখছি-পতনের সময় মরণ চিৎকার করছি।
মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত নামল আমার।
‘না! না! না!’ গর্জালাম।
ছবিটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেললাম।
মেঝেতে ছুঁড়ে মারলাম টুকরোগুলো। তারপর ক্যামেরাটা ছিনিয়ে নিলাম ফারিহার হাত থেকে।
পরক্ষণে, পরম আতঙ্কে হাঁ হয়ে গেলাম।
‘ফারিহা!’
ওর মুখ-ঢাকা পড়েছে। ঘন, হলদে, কাঁটাময় লোমের আড়ালে।
ভ্রমরের রোম!
ওর রোমশ মাথাটায় দুটো সরু-সরু হুল গজিয়েছে। সামনে-পেছনে নড়ছে ওগুলো। দু’হাত তুলে মুখ ঢেকে রাখা রোমগুলো প্রাণপণে টানছে ফারিহা।
‘ফারিহা! কথা বলো!’ আর্তচিৎকার বেরোল আমার গলা চিরে। ‘আমাকে দেখতে পাচ্ছ? কথা বলো!’
‘বযযযযযযযযযযযযযযযযয!’