চোদ্দ
লেন্সের সামনে হাতটা মেলে ধরলাম।
ক্যামেরা নামাল রয়।
‘কী হলো? তোমার সমস্যাটা কী?’ চেঁচিয়ে উঠল।
জবাব দিলাম না। দুপদাপ পা ফেলে রয়ের উদ্দেশে এগিয়ে গিয়ে পিছাতে বাধ্য করলাম ওকে।
‘খাইছে, ক্যামেরাটা দিয়ে কী করছ তুমি?’ উগ্রকণ্ঠে জবাব চাইলাম।
শ্রাগ করল রয়।
‘এত খেপছ কেন? বাবার কাছ থেকে ধার নিয়েছি এটা। বাবা বলল তোমার আর ক্যামেরাটা লাগবে না।’
‘কিন্তু-কিন্তু’ কথা আটকে গেল আমার।
‘তুমি না এটার হাত থেকে বাঁচতে চাইছিলে?’ বলল রয়। ‘জানি তো আমি।’
‘জানো মানে?’ রীতিমত হতবিহ্বল আমি। কীভাবে জানলে?’
আবারও শ্রাগ করল ও।
‘আমি তোমার ওপর চোখ রেখেছিলাম,’ মৃদুকণ্ঠে বলল। রহস্যময় এক স্মিত হাসি ফুটেছে ওর মুখে। ‘আমি তোমাকে ফলো করেছি, মুসা।’
‘ফলো করেছ? তুমি?’ চেঁচিয়ে উঠলাম।
‘আর কে?’ হাসিমুখে বলল রয়। ‘দিনে-রাতে টিকটিকিগিরি করেছি তোমার ওপর। ওই ছোট বাসাটায় ক্যামেরাটা রেখে আসতে দেখেছি তোমাকে। এঁদো পুকুরটাতেও ফেলতে দেখেছি। দু’বারই জিনিসটা ফিরিয়ে দিয়েছি তোমার কাছে।’
চোয়াল ঝুলে পড়ল আমার।
‘পুকুরের তলা থেকে ওটা উদ্ধার করলে কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘কেন, পুকুরটা তো মাত্র ফুটখানেক গভীর। খুব সহজেই তুলে এনেছি,’ বলল রয়।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম ওর দিকে। মুখে কথা জোগাল না।
‘তুমি লুকিয়ে আমার বাসায় ঢুকেছ? এই অপয়া ক্যামেরাটা রেখে গিয়েছ? গুপ্তচরগিরি করেছ আমার ওপর? কিন্তু কেন?’ চিৎকার করে বললাম।
‘স্রেফ তোমার মনের ওপর চাপ ফেলতে,’ জবাব দিল রয়। ‘আমি মনেপ্রাণে প্রতিযোগিতায় জিততে চাই, মুসা। ভেবেছিলাম তোমাকে মানসিকভাবে চাপে রাখতে পারলে সহজেই জেতা যাবে।’
বিরস হাসলাম।
‘তুমি আমাকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দিয়েছ, রয়,’ বললাম। ‘খুব ভাল দেখিয়েছ। কিন্তু কনটেস্ট আমিই জিতছি।’
কিছু বলতে যাচ্ছিল ও। কিন্তু ববি মঞ্চ থেকে বাধা দিল।
‘রয়-বর্ষপঞ্জির জন্যে আমাদের ছবি নাও!’ ববি আর এমা দু’জনেই হাত নেড়ে ওকে মঞ্চে ডাকছে।
আমি রয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে ডিজিটাল ক্যামেরাটা তুললাম।
‘আমি নিচ্ছি,’ বললাম। ‘আমি এখানে আগে এসেছি।’
‘কিন্তু আমরা চাই না তুমি আমাদের ছবি নাও,’ নোংরা ভঙ্গিতে বলল এমা।
‘হ্যাঁ, মু-মু। তুমি ফটোগ্রাফির কচু জানো!’ সুর মেলাল ববি।
ওরা হাসিতে ফেটে পড়ে হাই ফাইভ দিল পরস্পরকে। – ভাবখানা এমন যেন না জানি কী মজার কথা বলে ফেলেছে!
‘কেটে পড়ো, মু-মু,’ বলল এমা। ‘রয় আমাদের ছবি তুলবে। ওর ক্যামেরাটা তোমারটার চাইতে অনেক ভাল।’
রয়ের দিকে চাইলাম।
‘এই ক্যামেরাটা দিয়ে ছবি তুলো না,’ বললাম। ‘তোমাকে সাবধান করছি।’
হেসে উঠল ও।
‘সাবধান করছ? আমাকে?’
‘কারণ আছে বলেই ওটার হাত থেকে বারবার মুক্তি পেতে চেয়েছি আমি,’ বললাম। ‘রয়, শোনো-
কিন্তু কে শোনে কার কথা। দু’হাতে ক্যামেরাটা তুলে ধরল ও। মেয়ে দুটির উদ্দেশে তাক করল।
‘না!’ প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইলাম ওটা।
দেরি হয়ে গেছে।
জ্বলে উঠল ক্যামেরা। ফিল্মটা হড়কে বেরোল।
‘ক্যামেরাটা দারুণ!’ খুশিতে আত্মহারা রয়। ববিকে ছবিটা দিল।
ও আর এমা ঝুঁকল ওটার ওপরে, ডেভেলপ হতে দেখছে।
হাসি দু’জনের। কিন্তু শীঘ্রিই মুছে গেল হাসি।
‘এহ, কী বিশ্রী!’ চিৎকার ছাড়ল ববি।
গুঙিয়ে উঠল এমাও।
‘এক্কেবারে যা তা!’