দশ
‘খাইছে!’ ভীতিমাখা কণ্ঠে অস্ফুটে বলে উঠলাম।
চোখ বুজে ফেলে আবার খুললাম। বানর আর ক্যামেরা দুটোই ওখানে আছে।
ওগুলো এখানে এল কীভাবে? কীভাবে?
বুক ধুকপুক করছে। তলপেট ফাঁকা লাগছে। ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দুদ্দাড় করে নামতে লাগলাম।
কিচেনে ঝড়ের বেগে ঢুকলাম, হাঁফাচ্ছি দস্তুরমত।
‘মা? বাবা? কেউ কি এখানে এসেছিল?’ চিৎকার করে বললাম।
দু’জনেই ঝট করে কাউন্টার থেকে মুখ তুলে চাইল।
‘কেউ এখানে এসেছিল মানে?’ বাবার প্রশ্ন।
‘আমার ঘরে,’ বললাম। ‘কেউ কি এসেছিল?’ ক
টেবিলের তলা থেকে মাথা বের করল ফারিহা।
‘হ্যাঁ। সিলভার স্কাল!’ চিৎকার ছাড়ল। ‘সিলভার স্কাল সবখানে ঘুরে বেড়ায়!’
‘ঠাট্টা নয়, আমি সিরিয়াস!’ বললাম কাটখোট্টা গলায়।
মাথা নাড়ল মা।
‘আমি এখানে সারা বিকেল ধরেই আছি। কই, কাউকে তো দেখিনি বা কারও আসার শব্দও পাইনি। কেন, কারও কি আসার কথা ছিল নাকি?’
‘না, মানে-’ আমতা-আমতা করলাম।
বাবা-মাকে ক্যামেরার কথা বলা যাবে না, বললেও বিশ্বাস করবে না। দু’জনেই তারা যুক্তিবাদী মানুষ।
টেবিলের তলা থেকে হুটোপুটি করে বেরিয়ে এল ফারিহা। যে দুটো অ্যাকশন ফিগার নিয়ে খেলছিল ফেলে দিল হাত থেকে। তারপর ধেয়ে এসে আমার কাছ থেকে ক্যামেরাটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করল।
‘ওটা দাও, আমি ছবি তুলব,’ বলল।
ক্যামেরাটা দিয়ে গুঁতিয়ে ওকে ঠেলে সরালাম।
‘এটা তোমাকে দেয়া যাবে না। অন্যের জিনিস চাইতে নেই জানো না? স্কুলে কিছু শেখায় না?’
‘তুমি একটা কুৎসিত বেবুন,’ বলল ফারিহা।
‘অ্যাই, বাজে কথা বলবি না,’ মা শাসাল ওকে
তোর ক্যামেরাটা দিয়ে ওকে একটা ছবি তুলতে দিলে ক্ষতি কী?’ বাবার প্রশ্ন। ও তো আর ওটা ভেঙে ফেলবে না।’
‘হ্যাঁ, ভেঙেই ফেলব!’ বলল ফারিহা। ঠিক কুৎসিত বেবুনের মত মুখ করে।
আমি বাবার কথার জবাব দিলাম না। পাঁই করে ঘুরেই, এক ছুটে ওপরতলায় নিজের কামরায় চলে এলাম ক্যামেরা নিয়ে।
আবারও ডাঁই করে রাখা ময়লা কাপড়ের নিচে লুকোলাম ওটাকে। তবে জানি এতে ঝুঁকি থেকেই গেল। ফারিহা ছোঁক-ছোঁক করার ওস্তাদ। ও এটা ঠিকই খুঁজে বের করবে। এ-ও জানি আগে হোক কিংবা পরে, মারাত্মক কোন বিপদে পড়বে ও ক্যামেরাটার জন্য।
বাসা থেকে অশুভ জিনিসটা দূর করতে হবে আমার। এমন কোথাও ফেলে আসতে হবে যেখান থেকে আর জাদুবলে ফিরে আসতে পারবে না ওটা।
কিন্তু…ফেলবটা কোথায়?