অষ্টাদশ অধ্যায়
জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় জয় সীতানাথ।
জয় নিত্যানন্দ-রাম ভক্তগণ সাথ।।
এক দিন শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর নিকটে।
সীতা কহে উখাড়িয়া মনের কবাটে।।
কত দিন গেল নাহি দেখি গোরাচাঁদে।
নিরবধি তার লাগি মন প্রাণ কান্দে।।
কবে মোর শুভ ভাগ্যের উপজিবে ফল।
পুন নিরখিমু গোরার শ্রীমুখমণ্ডল।।
কবে প্রিয়তম বস্তু গৌরে সমর্পিয়া।
জুড়াইমু গৌর-বিচ্ছেদ-দাব-দগ্ধ হিয়া।।
কবে গোরার কথামৃত পুনঃ পুন পিয়া।
অসাম্য সংসার ক্ষুধা ফেলিমু ঠেলিয়া।।
মনের যে দুখ মুঞি করিল বিদিতে।
প্রতিকার কর যদি স্নেহ থাকে চিতে।।
এত কহি প্রেমাবেশে করয়ে ক্রন্দন।
প্রভু কহে ধন্য ধন্য তোমার জীবন।।
কহিতেই হৈলা প্ৰভু প্রেমে মাতোয়ারা।
হুঙ্কার করয়ে ঘন বুলি গোরা গোরা।।
প্রভু কহে শ্রীচৈতন্যগত যার প্রাণ।
তাহারে জানিয়ে সত্য মহাভাগ্যবান।।
গোরা নাম শুনি যায় পুলক উদ্দ্গম।
সেই জানে জানোঁ মুঞি সাধক উত্তম।।
গৌরাঙ্গ বলিতে যার বহে অশ্রুধার।
সেই জন নিত্য সিদ্ধ ভক্ত অবতার।।
এত কহি কৈলা তিঁহ গভীর গর্জ্জন।
ঊর্দ্ধবাহু হঞা করে নৰ্ত্তন কীৰ্ত্তন।।
কতোক্ষণে সীতানাথ বাহ্য প্রকাশিলা।
গৌর গুণালাপে সীতায় সান্ত্বনা করিলা।।
হেনকালে এক বৈষ্ণব প্রভু নমস্করি।
সেন-শিবানন্দের বার্তা কহয়ে ফুকারি।।
অহে প্রভু সীতনাথ কর অবধানে।
শিবানন্দ মোরে পাঠাইলা তব স্থানে।।
রথযাত্রা উপলক্ষে শ্রীপুরুষোত্তমে।
তিনি সব তলিবেন লই গৌরগণে।।
প্রভু নিত্যানন্দ আর শ্রীবাস পন্ডিত।
গদাধর আদি সভে হইলা মিলিত।।
শ্রীবৈষ্ণব মুখে প্রভু শুভবাৰ্তা পাঞা।
সীতা সহ সীতানাথ চলিলা সাজিয়া।।
মহাসাধ্বী সীতাদেবী আনন্দিত মনে।
গৌরের প্রিয়বস্তু সভ লইলা যতনে।।
শ্রীগোপাল দাস নিত্য গৌরগত প্রাণ।
গৌরাঙ্গ দেখিতে তিঁহ করিলা পয়ান।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব কৃপায় মুঞি নরাধম।
সেই সঙ্গে ভৃত্য কাৰ্যে করিনু গমন।।
শ্রীগৌরাঙ্গগণ সহ প্রভুর মিলনে।
আনন্দ বাঢ়িল দন্ডবৎ আলিঙ্গনে।।
সংকীৰ্ত্তনানন্দে সভে গমন করিলা।
পথে তীর্থ-ক্ষেত্র দেখি নীলাচলে আইলা।।
নিজ-গণের শুভাগমন শুনি গৌরচন্দ্র।
ভক্ত সঙ্গে আগুলিলা পাঞা মহানন্দ।।
দূর হৈতে শ্রীগৌরাঙ্গে দেখি ভক্তগণ।
প্রেমাবেশে চলে করি উচ্চ সংকীৰ্ত্তন।।
শ্ৰীকৃষ্ণ-চৈতন্য সহ ভক্তের মিলনে।
যে আনন্দ হইল তাহা না যায় বর্ণনে।।
প্রেমাবেশে গৌরে বেঢ়ি শ্রীবৈষ্ণবগণ।
নাম সংকীর্ত্তন আর করয়ে নর্তন।।
মহাপ্রভু-প্রেম-মহাসমুদ্র কল্লোলে।
ডুবাইলা সৰ্ব্ব ভক্তগণে অবহেলে।।
ক্রমি তাহে আপনার হইল সাঁতার।
নয়ান যুগলে বহে সুরধুনীর ধার।।
প্রভু নিত্যানন্দ শুদ্ধ প্রেমেতে মাতিয়া।
হরে কৃষ্ণ বলি নাচে উৰ্দ্ধবাহু হঞা।।
শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর প্রেম না যায় বর্ণনে।
পাষণ্ড দলিমু বলি করয়ে গর্জ্জনে।।
হেনকালে জগন্নাথ রথেতে চঢ়িলা।
দেখি গোরা গোপী-ভাবে এক পদ গাইলা।।
“বহুকালে তোরে কালা লগি পাইলাঙ।
অন্তরে রাখিমু ভরি নাহি ছাড়িবাঙ।।”
এই গীত মহাপ্রভু ধরে ভাবাবেশে।
তাহে দুই প্রভু দিব্য আখর পরকাশে।।
ক্রমে ভাব সিন্ধুর তরঙ্গ উথলিল।
স্তম্ভাদি রতন ভক্ত সৰ্ব্বাঙ্গে পরিল।।
তবে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাভাবের উদ্দামে।
সংকীৰ্ত্তন মাঝে পড়ে হঞা অচেতনে।।
সেই পদ পুন গীতে চৈতন্য জাগিলা।
বাহু পাশরিয়া নিত্যানন্দে কোল দিলা।।
নিতাই দুই হাতে গৌরের দুই হাত ধরি।
সুমধুর নৃত্য করে অদ্বৈতেরে ঘেরি।।
প্রভু কহে তো দোঁহার রঙ্গ বুঝা ভার।
গৌর নিতাই কহে তুঞি রঙ্গের সূত্রধার।।
তবে পরস্পর করি গাঢ় আলিঙ্গন।
হরি বুলি তিন ঠাকুর করয়ে ক্রন্দন।।
কভু কহে আইস জীব আর ভয় নাই।
হরি বলি নাচি গাই ভব পারে যাই।।
তাহা শুনি ভক্তগণ করয়ে নর্তন।
কেহ প্রেমে কান্দে কেহ করয়ে গর্জ্জন।।
হেন কালে শ্রীগোপাল অদ্বৈত-নন্দন।
দুই বাহু তুলি নাচে ভুবন-মোহন।।
নাচিতে নাচিতে গোপাল হইলা মুৰ্চ্ছিত।
বহু নাম কীৰ্ত্তনে নহিল সংজ্ঞা প্রাপ্ত।।
মৃত্যুপ্রায় গোপালদাসে দেখি সীতানাথ।
হা কৃষ্ণ কি হৈলা বলি করে আর্তনাদ।।
হেনকালে মহাপ্রভু শ্রীশচীনন্দন।
উঠহ গোপাল বলি ডাকে ঘনে ঘন।
যাহার কৃপাতে জগতের সচৈতন্য।
তাঁহার আজ্ঞাতে কেবা থাকে অচৈতন্য।।
শ্রীচৈতন্য কৃপা লভে শ্রীগোপাল দাস।
জাগি কহে মুঞি হঙ চৈতন্যের দাস।।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য বলি ছাড়য়ে হুঙ্কার।
ভক্তগণ কহে ইহোঁ ভক্ত-অবতার।।
স্নেহার্দ্র হইয়া গোরা গোপালেরে ধরি।
আলিঙ্গিলা প্রেমাশ্রুতে অভিষেক করি।।
শ্রীঅদ্বৈত প্রেমানন্দে অঙ্গজ গোপালে।
কোলে করি নাচি বেড়ায় হরি হরি বৈলে।।
নিত্যানন্দ প্রেমে তার শ্রীঅঙ্গ মার্জ্জয়।
সর্ব্ব ভক্ত গোপালের পদধূলি লয়।।
শ্রীগোপালদাস প্রভুর মহিমা অপার।
তার সব বর্ণিতে নারিনু মুঞি ছার।।
শ্রীজগন্নাথের রথযাত্রা মহোৎসব।
দেখি সৰ্ব্বজনে করে হরি হরি রব।।
কি আনন্দ হৈল তাহে কহনে না যায়।
সর্ব্ব গৌরগণ প্রেমে ধূলায় লোটায়।।
উৎসবান্তে শ্রীমহাপ্রসাদ কিনি খাইলা।
ইষ্ট গোষ্ঠি আলাপিয়া নিজ বাসায় গেলা।।
এক দিন শুন এক অপূৰ্ব্ব আখ্যানে।
সীতানাথ কহে তথা সীতাদেবী সনে।।
মনোমত শ্রীগৌরাঙ্গে নারি খাওয়াইতে।
এই দুঃখ দিবানিশি জাগে মোর চিতে।।
যবে যবে গৌরে নিমন্ত্রিয়া আনি ঘরে।
বহুত সন্ন্যাসী তার সঙ্গে সদা ফিরে।।
সব দ্রব্য খাওয়ায় গোরা সন্ন্যাসীরে দিয়া।
মোহর যে অভিলাষ যায় পণ্ড হঞা।।
শুনি সীতা কহে সত্য এই মন কথা।
একা গৌরে পাঙ যদি যায় মনোব্যথা।।
তার প্রিয়বস্তু পূর্ণ খাওয়াইলে তারে।
তবে মোর চির-হৃদয়ের সাধ পুরে।।
হেন কালে শুন এক অদ্ভুত ঘটনে।
দিনে অন্ধকার হৈল মেঘের সাজনে।।
দেখিতে দেখিতে হৈল অতি বড় ঝড়।
বহু শিলাবৃষ্টি পড়ে লোক ভয়ঙ্কর।।
শ্রীচৈতন্যের ইচ্ছা ইহা কেহ নাহি জানিল।
তাহে ব্যক্তি মাত্রে বাসা ছাড়িতে নারিল।।
হেন কালে শ্রীগৌরাঙ্গ সর্ব্ব অন্তর্যামী।
ভক্ত বাঞ্ছা পুরাইতে চলিলা আপনি।।
একলে আসিলা অদ্বৈতের বাসা ঘরে।
গৌরে দেখি সীতাদ্বৈত ভাসে প্রেম-নীরে।।
সীতাদ্বৈত দোঁহে গৌর-প্রেমামৃতের খনি।
আত্যন্তিকী নিষ্ঠা তাহে নিত্য সিদ্ধ জানি।।
গৌরাঙ্গ দেখিয়া দোহে উঠে ত্বরা করি।
আইস আইস প্রাণ-গোরা কহয়ে ফুকারি।।
তুহুঁ সৰ্ব্বজান ভক্ত-হৃৎপদ্মের ভৃঙ্গ।
শুদ্ধ দয়ামৃত মহার্ণব তোর অঙ্গ।।
এত কহি দিব্যাসনে গৌরে বসাইলা।
তাঁর সেবা লাগি বহু আয়োজন কৈলা।।
গৌরের পাদ ধৌত লাগি মুঞি কীট গেনু।
তিঁহ কহে রহ রহ বিপ্ৰ বিষ্ণু-তনু।।
মুঞি কহি হায় হায় কি মোর দুর্ভাগ্য।
শ্রীগৌরাঙ্গ-পদ সেবায় হইনু অযোগ্য।।
পুন কহি অনস্তাদ্যের সেব্য যে চরণ।
তাহা মোর প্রাপ্তি শিশুর চন্দ্র-স্পর্শ-সম।।
পুন মনে হৈল কৃষ্ণ দয়ার সাগর।
পতিত পাষন্ডোদ্ধারে এই অবতার।।
মো পতিতে কাহে তিঁহ দয়া না করিবে।
কান্দিয়া পড়িলে পদে দয়া উপজিবে।।
তবে সেবা-বাদী এই যজ্ঞসূত্র হয়।
আর আত্ম অভিমান স্বভাবে জন্মায়।।
ইহা লাগি শ্রীবৈষ্ণবে করয়ে বর্জ্জনে।
এত ভাবি যজ্ঞসূত্র ছিনু তখনে।।
তাহা দেখি মোর প্রভু হাসিয়া কহিলা।
কি লাগি ঈশান বিপ্র-ধৰ্ম্ম বিনাশিলা।।
দ্বিজাতির যজ্ঞসূত্র চিত্ত-শুদ্ধি দাতা।
নিরন্তর পরব্রহ্মে হৃদয় নিযোক্তা।।
এত কহি প্ৰভু পুন পৈতা দিলা মোরে।
প্রভুকে কহিনু মুঞি কাতর অন্তরে।।
কিবা কাজ গৌর-সেবা-বাদী উপবীতে।
না বঞ্চহ বলি মুঞি লাগিনু কান্দিতে।।
মোর খেদে প্রভু গৌরে কহে বারেবার।
ভক্ত মনে দুঃখ দেহ এই অবিচার।।
প্রভু বাক্যে মহাপ্রভুর মৌনাবলম্বনে।
তিঁহ কহে যাহ ঈশান শ্রীপাদ সেবনে।।
শুনি মুঞি ডুবিলাঙ আনন্দ সাগরে।
গুরু-কৃপা গৌরসেবায় আজ্ঞা দিলা মোরে।।
কোটি কোটি জন্মের সুকৃতিতে না পায় যাহা।
শ্রীগুরু কৃপাতে অবহেলে মিলে তাঁহা।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব কৃপার অনন্ত মহিমা।
মুঞি কোন্ ছার ব্রহ্মা দিতে নারে সীমা।।
তবে মহাপ্রভু গেলা ভোজন মন্দিরে।
শুদ্ধাসনে বসিলেন আনন্দ অন্তরে।।
গোরা কহে বৈস আসি আচার্য্য গোসাঞি।।
মোর প্রভু কহে গৌর ছাড় চতুরাঞি।
সব দ্রব্য আজি তুমি করিলা ভোজন।
তবে সে ছাড়িমু মুঞি এ সত্য বচন।।
হাসি মহাপ্রভু তবে ভোজনে বসিলা।
সীতামাতা পারশ করিতে আরম্ভিলা।।
আর আর ব্যঞ্জনাদি দিলা সারি সারি।
পিঠা পানা দিলা কত লিখিতে না পারি।।
গৌরের প্রিয় বস্তু যত সীতা যত্নে দিলা।
আনন্দে গৌরাঙ্গ সব ভোজন করিলা।।
গোরা কহে আচার্য্য মুঞি কহিতে না পারি।
জন্মে হেন গুরুতর ভোজন না করি।।
হাস্য মুখে প্রভু কহে শুনহ নিমাঞি।
মোর কাছে ছাপা নাই তোর চতুরাঞি।।
তোর জিহ্বায় আছে নিত্য তিন মহাশক্তি।
ভক্ত-শ্লাঘা সাধু-উপদেশ দৈন্য-উক্তি।।
শুনি মহাপ্রভু কৈলা শ্রীবিষ্ণু স্মরণ।
আচমন করি কৈলা তাম্বুল সেবন।।
আচাৰ্য্য আগ্রহে তিঁহ করিলা শয়ন।
হেনকালে শিলাবৃষ্টি হৈল নিবারণ।।
অলৌকিক লীলা করে শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য।
ভক্তে নিত্যানন্দাদিরে হৈলা অবতীর্ণ।।
কৃষ্ণ বড় দয়াময় নাহিক উপমা।
মহাবিষ্ণু আদি যার দিতে নারে সীমা।।
কৃষ্ণ কৃষ্ণের শুদ্ধ-ভক্তে নাহি কিছু ভেদে।
ঊর্দ্ধবাহু হঞা ফুকারিছে সর্ব্ব বেদে।।
কৃষ্ণভক্ত ইচ্ছার স্বতঃসিদ্ধ শক্তি হয়।
তার ইচ্ছায় হয় কৃষ্ণ ইচ্ছায় উদয়।।
আর কবে হৈব মোর শুভ ভাগ্যোদয়।
গুরু বৈষ্ণব কৃপা করি দিবে পদাশ্রয়।।
কবে গৌর প্রেমামৃত-সাগরের নীরে।
ডুবি সর্ব্বেন্দ্রিয় আত্মার পাপ যাইবে দূরে।।
পূর্বতন নারদাদি ভকত প্ৰধান।
কৃষ্ণ কিবা রাধা ভজি পাইলা পরিত্রাণ।।
কেহ বা যুগল মূর্ত্তি করিয়া সেবন।
সিদ্ধ দেহ পাঞা গেলা নিত্য বৃন্দাবন।।
রসরাজ মহাভাব দুই সম্মিলন।
হেনরূপ কভু কেহ না পাইলা দর্শন।।
এই ধন্য কলিতে সেই রূপের প্রচার।
গৌরাঙ্গ হইয়া কৈলা জীবের উদ্ধার।।
এইরূপ দেখে ভজে পূজে যেই জন।
অনায়াসে পায় সুদুর্লভ প্রেমধন।।
হেন দয়াল অবতারি কাঁহা নাহি শুনি।
সর্ব্ব কৃষ্ণ-প্রকাশের হয় মূল খনি।।
হরিনাম দিয়া কুক্কুরাদি নিস্তারিলা।
বৈষ্ণব উচ্ছিষ্টের গুণ যেহ প্রকাশিলা।।
সেন-শিবানন্দ নামে মহাভাগবত।
গৌরাঙ্গের প্রিয়-ভক্ত সুগত বিখ্যাত।।
তার গৃহে এক কুক্কুর করিলা বসতি।
বৈষ্ণবের উদ্দিষ্ট খাঞা শুদ্ধ হৈল মতি।।
শিবানন্দ আইলা সবে শ্রীপুরষোত্তমে।
তার সঙ্গে সেই কুকুর আইলা ভাগ্যক্রমে।।
চৈতন্য কৃপায় তার কৰ্ম্ম-বন্ধ গেল।
হরেকৃষ্ণ উচ্চারিয়া সিদ্ধ-দেহ পাইল।।
সিদ্ধ-বস্তু শ্রীবৈষ্ণবের উদ্দিষ্ট নিশ্চয়।
যার এক লব খাইলে কৃষ্ণ-ভক্তি হয়।।
বৈষ্ণবের পদ রেণুর মহিমা অপার।
তার একবিন্দু স্পর্শি যার ভব পার।।
বৈষ্ণব দর্শনে হয় বিষ্ণুর দর্শন।
বৈষ্ণব সেবাতে হয় কৃষ্ণের ভোজন।।
শ্রীকৃষ্ণ কহিলা ভক্ত আমা হইতে বড়।
অপরাধ খণ্ডে ভক্তে ভক্তি কৈলে দৃঢ়।।
বৈষ্ণবাপরাধীর আর নাহিক নিস্তারে।
কৃষ্ণ সেই অপরাধ খণ্ডাইতে নারে।।
ভাগ্যে যদি শ্রীবৈষ্ণবের দয়া উপজয়।
তার সেই অপরাধ অগ্রে খণ্ডয়।।
কৃষ্ণেচ্ছাতে শুদ্ধ-ভক্তি শক্ত্যাধিক্য হয়।
সেই ভক্তস্থানে কৃষ্ণ আপনি বিকায়।।
স্বভাবে শ্রীকৃষ্ণদাস আপন আচার।
জীবে শিক্ষাইয়া নিত্য করয়ে উদ্ধার।।
রাধাকৃষ্ণ দুয়ে এবে হঞা ভক্তরূপ।
জীবের মঙ্গলে দয়া কৈলা অপরূপ।।
গৌর কৃপায় সেন শিবানন্দের নন্দনে।
অতি বাল্যে সর্ব্বশাস্ত্রে হইল স্ফুরণে।।
কবি কর্ণপুর নামে হৈলা তিঁহ খ্যাত।
জগদ্ধিস্মাপক লীলা কৈলা শচীসুত।।
এবে কহি মহাপ্রভুর সেবা বিবরণে।
যার স্মৃতি মাত্রে জীব হয় পরিত্রাণে।।
শ্রীঅদ্বৈত সিংহের কৃপা গঙ্গান্ধিসঙ্গমে।
অতি সুদুর্লভ সেবা দিলা এ অধমে।।
গৌরের রাঙ্গা পাদপদ্ম অতি সুকোমল।
তাহা সম্বাহনে যোগ্য শ্ৰীহস্ত কমল।।
তবে মুঞি কীট হর্ষে কহিনু চৈতন্যে।
দয়া করি কহ কিছু এই ভক্তি-শূন্যে।।
সহাস্যে মধুর ভাব গৌরাঙ্গ কহিলা।
শুনহ ঈশান শাস্ত্র যাহা প্রকাশিলা।।
সাধুস্থানে করিবে সদ্ধর্ম্মের শিক্ষণ।
সর্ব্ব ধর্ম্ম শ্রেয় হরিনাম সংকীর্ত্তন।।
তপ জপ হৈতে নামের মহিমা প্রচুর।
নাম কৈলে সর্ব্ব অপরাধ যায় দূর।।
প্রকৃতি সম্ভাষা উদাসীনের ধর্ম্ম নাশ।
নানা দেব-দেবীর কৃষ্ণে না হয় বিশ্বাস।।
এই শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য মুখ-পদ্ম বাণী।
যেই শুনে পড়ে তার বড় ভাগ্য মানি।।
অনন্ত প্রণাম মোর গৌরাঙ্গ-চরণে।
জগৎ শিক্ষাইলা প্রিয় ভক্তের বর্জ্জনে।।
গায়ক শ্রীহরিদাস গন্ধর্ব্বের সম।
গৌরগত প্রাণ যিহ ভাগবতোত্তম।।
ভিক্ষার তন্ডুল তিঁহ গৌর-সেবা লাগি।
পরিবর্ত্ত করি ভাল তণ্ডুল লৈল মাগি।।
উত্তম তন্ডুল দেখি গৌরাঙ্গ পুছিলা।
হরিদাস কাঁহা এই তণ্ডুল পাইলা।।
হরিদাস কঁহে শ্রীমাধ্বী-মাতা স্থানে।
পরিবর্ত্ত করি ইহা আনিনু যতনে।।
গোরা কহে হরিদাস কি কৰ্ম্ম করিলা।
উদাসীনের নিত্য-সিদ্ধ ধৰ্ম্ম বিনাশিলা।।
যদ্যপি মাধ্বী মহা সাধ্বী ধৰ্ম্মরতা।
গুরু বৈষ্ণবেতে নিষ্ঠা শুদ্ধ কৃষ্ণ-ভক্তা।।
তথাপি প্রকৃতি তিঁহ তার সম্ভাষণে।
উদাসীনের ধর্ম্ম কৈছে হয় সুরক্ষণে।।
ইহার কারণে তোরে করিনু বৰ্জ্জন।
শুনি হরিদাস বহু করিলা ক্রন্দন।।
গৌরে প্রণমিয়া তিঁহ গমন করিলা।
সৰ্ব্ব ভক্তগণ মনে চমৎকার হৈলা।।
আহা শ্রীগৌরাঙ্গ-লীলার গুহ্য অভিপ্রায়।
গৌর ভক্ত বিনা তার অন্ত নাহি পায়।।
তবে শ্রীঅদ্বৈত আদির গৌড়েতে গমন।
গৌরাঙ্গ-বিচ্ছেদে সবার সুদুঃখিত মন।।
গৌর গৌরগণের লীলার নাহি পার।
মুই ক্ষুদ্র-সূত্র মাত্র করিনু প্রচার।।
শ্রীচৈতন্য শ্রীঅদ্বৈত পদে যার আশ।
নাগর ঈশান কহে অদ্বৈত-প্ৰকাশ।।
ইতি শ্রীঅদ্বৈত-প্রকাশে অষ্টাদশোধ্যায়ঃ