অক্ষরবৃত্তের টানে

এতই কি জাঁহাবাজ হ’তে পারে পায়ের তলার
মাটি, এত হিংস্র, যে রকম আসমান
যখন তখন চোখ রাঙায় এবং মনে হয়
এ রকম গাছপালা যারা শান্ত থাকে প্রায়শই
তারাও কেমন যেন মূল ছিঁড়ে ছুটে এসে আমাদের ঘাড়
মুচড়ে দেয়ার সাধ অন্তরে লালন করে, নদ
নদীও বিরূপ অতিশয়। এ রকম ভয়াবহ অন্ধকার
নামেনি কখনও চারদিক লুপ্ত ক’রে অর্থহীনতায় আর।

মানবের, বানবীর মুখচ্ছদ এই মতো পাথরস্বরূপ,
দেখিনি কখনও আগে। হাটে, মাঠে, ঘাটে
হেঁটে যায় যারা, যেন চলমান কিছু পুতুলের
নিষ্প্রাণ মিছিল!

অকস্মাৎ মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি
আমাদের প্রিয় বাংলাভাষার প্রদীপ্ত কতিপয়
স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ বিছানার কিনারে দাঁড়িয়ে
আমাকে কী যেন বলবার অপেক্ষায়
রয়েছে অনেকক্ষণ থেকে। তাদের নির্দিষ্ট প্রতিনিধি
বিনীত ভঙ্গিতে বলে, ‘আর কতকাল কবি তুমি
আমাদের কেবলই অক্ষরবৃত্ত ছন্দে ব্যবহার
করবে বলো তো? আমরা তো ব্যবহৃত হতে হতে ক্লান্ত
ক্লান্ত হ’য়ে ঝিমিয়ে পড়েছি, তা’কি বুঝতে পারো না
তুমি আজও? অক্ষরবৃত্তের মায়াজাল থেকে মুক্তি দাও কবি’।

নিরুত্তর আমি ভোরবেলা আপন টেবিলে ঝুঁকে
রাতের ঘটনা ভুলে অক্ষরবৃত্তেরই টানে ফের লিখে চলি।
১৬-১২-২০০২