অক্টোপাসের চোখ

অক্টোপাসের চোখ

বিজ্ঞান আকাদেমির মহাপরিচালক মহামান্য কিহি কালো গ্রানাইট টেবিলের চারপাশে বসে থাকা অন্য সদস্যদের মুখের দিকে একনজর তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, অনেক দিন পর আজ আমি তোমাদের সবাইকে আমার এখানে ডেকে এনেছি। আমার ডাক শুনে তোমরা সবাই এসেছ সেজন্যে তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।

আকাদেমির তরুণ সদস্য ফিদা তার মাথার সোনালি চুলকে হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে বলল, মহামান্য কিহি, আপনি আমাদের ডেকেছেন, এটি আমাদের জন্যে কত বড় সৌভাগ্য!

অন্য সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল, বলল, অনেক বড় সৌভাগ্য।

মহামান্য কিহি মৃদু হেসে বললেন, অনেক বয়স হয়েছে, কখন পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়, তাই ভাবলাম একবার তোমাদের সবার সাথে বসি। একটু খোলামেলা কথা বলি।

জীববিজ্ঞানী রিকি মাথা নেড়ে বলল, আপনাকে আমরা এত সহজে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে দেব না। আপনি আরো অনেক দিন আমাদের সাথে থাকবেন।

অন্যেরাও মাথা নাড়ল, গণিতবিদ টুহাস সোজা হয়ে বসে বলল, মহামান্য কিহি, আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে বিজ্ঞান আকাদেমির সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপরিচালক। আপনার সময়ে এই পৃথিবী সব দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় পৌঁছেছে।

বিজ্ঞানী ফিদা মাথাটা সামনে এগিয়ে এনে বলল, হ্যাঁ। এই মুহূর্তে পৃথিবী যে অবস্থায় পৌঁছেছে আর কখনো সেরকম অবস্থায় ছিল না। জ্ঞানে বিজ্ঞানে শিল্পে সাহিত্যে সব দিক দিয়ে পৃথিবীর মানুষ একটা নূতন অবস্থায় পৌঁছেছে।

গণিতবিদ টুহাস বলল, এর পুরো কৃতিত্বটা আপনার।

মহামান্য কিহি বাধা দিয়ে বললেন, না-না, তোমরা তোমাদের কথায় অতিরঞ্জন করছ। এটা মোটেই আমার একক কৃতিত্ব নয়। আমি কখনোই একা কোনো সিদ্ধান্ত নিই নি। তোমাদের সবার সাথে কথা বলেছি, কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাজেই যদি কোনো কৃতিত্ব থাকে তা হলে সেটা আমার একার নয়-আমাদের সবার।

বিজ্ঞানী ফিদা বলল, কিন্তু নেতৃত্বটুকু দিয়েছেন আপনি।

মহামান্য কিহি বললেন, যাই হোক আমি এটা নিয়ে তোমাদের সাথে তর্ক করতে চাই। বরং তোমাদের কী জন্যে ডেকেছি সেটা নিয়ে কথা বলি।

সবাই মাথা নেড়ে সোজা হয়ে বসে উৎসুক চোখে মহামান্য কিহির দিকে তাকাল। মহামান্য কিহি খানিকটা অন্যমনস্কভাবে বললেন, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে মানুষ হচ্ছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষ এই পর্যায়ে এসেছে বিবর্তনের ভেতর দিয়ে, তার জন্যে সময় লেগেছে লক্ষ লক্ষ বছর। সেই দুইশ হাজার বছর আগের হোমোস্যাপিয়েন বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান মানুষের পর্যায়ে এসেছে। এই বিবর্তনটুকু পুরোপুরি এসেছে প্রকৃতি এবং পরিবেশের প্রভাবে, স্বাভাবিকতাবে।

মহামান্য কিহি একটু থামলেন, তিনি ঠিক কী বলতে চাইছেন বোঝার জন্য সবাই আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। মহামান্য কিহি আবার শুরু করলেন, বললেন, এই মুহূর্তে এই পৃথিবীতে মানব প্রজাতি তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থায় আছে। আমরা কি জানি, আজ থেকে এক লক্ষ বছর পর কিংবা এক মিলিয়ন বছর পর আমরা কোন পর্যায়ে থাকব? আমরা কি আমাদের মতোই থাকব নাকি অন্যরকম হয়ে যাব?

জীববিজ্ঞানী টুহাস বললেন, আমরা সিমুলেশন করে সেটা দেখেছি।

মহামান্য কিহি মাথা নাড়লেন, বললেন, হ্যাঁ, আমি সেই সিমুলেশন দেখেছি। তোমরাও দেখেছ। আমি দেখে একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছি। এবং সেজন্যেই আমি তোমাদের ডেকেছি।

মহামান্য কিহি একটু থামলেন, সবার চোখের দিকে তাকালেন এবং বললেন, মানুষ প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের ভেতর দিয়ে এখানে এসেছে কিন্তু এখন বিজ্ঞানের মহিমায় আমাদের আর বিবর্তনের ওপর নির্ভর করতে হয় না। মানুষের ভেতরে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয় আমরা ইচ্ছে করলে সেটা আনতে পারি।

জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, মহামান্য কিহি! আপনি কি বলতে চাইছেন যে আমরা নিজে থেকে মানুষের ভেতরে কোনো পরিবর্তন আনি?

আমি সেটা সেভাবে বলতে চাইছি না। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য হিসেবে এই পৃথিবীর মানবজাতির পুরো দায়িত্ব আমাদের হাতে। ভবিষ্যতের মানুষ এই পৃথিবীতে কীভাবে থাকবে সেটা নির্ভর করে বর্তমানের মানুষকে আমরা কীভাবে ভবিষ্যতের জন্যে প্রস্তুত করি। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি পৃথিবীর মানুষ কি ভবিষ্যতের জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত। মানবদেহ কি নিখুঁত?

হঠাৎ করে সবাই একসাথে কথা বলতে শুরু করল, আবার প্রায় সাথে সাথেই সবাই। চুপ করে গেল। জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, না মহামান্য কিহি, মানবদেহ নিখুঁত নয়, এর মাঝে অনেক ত্রুটি আছে-আমরা সবাই সেটা জানি। বিবর্তনের কারণে আমাদের চোখটা ভুল, চোখের ভেতরে আলো সংবেদন কোষ নিচে, নার্ভ উপরে। অক্টোপাসের চোখ হচ্ছে সঠিক।

বিজ্ঞানী ফিদা বলল, তুমি চোখের কথা বলছ কিন্তু আমরা তো সাধারণত চোখের সীমাবদ্ধতাটা দৈনন্দিন জীবনে টের পাই না। যেটা টের পাই সেটার কথা বল না কেন?

সেটা কী?

নবজাতকের মাথা। তুমি জান মানবশি মাথা কত বড়? একজন মায়ের গর্ভনালি দিয়ে মানবশিশু বের হতে পারে না, মায়ের সন্তান জন্ম দিতে কত কষ্ট হয় তুমি জান?

জীববিজ্ঞানী টুহাস বলল, আমি পুরুষ মানুষ, সন্তান জন্ম দিতে হয় না। তাই কষ্টের পরিমাণটুকু জানি না। কিন্তু বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি।

গণিতবিদ রিকি বলল, বিবর্তনের কারণে মানুষ হঠাৎ করে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু হাড়ের সংযোগটা মানুষের পুরো ওজন ঠিকভাবে নিতে পারে না। দুটি পা না হয়ে চারটি পা হলে ওজনটা ঠিকভাবে নিতে পারত। মানুষের হাঁটুও খুব দুর্বল।

প্রযুক্তিবিদ রিভিক কম কথা বলে, সে সবাইকে বাধা দিয়ে বলল, তোমরা কেউ এপেনডিক্সের কথা কেন বলছ না? এটা শরীরের কোনো কাজে লাগে না-হঠাৎ হঠাৎ সংক্রমিত হয়ে কী ঝামেলা করে দেখেছ?

রিভিকের কথার ভঙ্গিতে সবাই হেসে উঠল, জীববিজ্ঞানী সুহাস বলল, এটা ঝামেলা দিতে পারে কিন্তু এর রুত্ব কম। এর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পুরুষ এবং মহিলার জননেন্দ্রীয় এবং এগুলো কোনোভাবেই সঠিক নয়। এর অবস্থান খুবই বিপজ্জনক!

বিজ্ঞানী ফিদা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল মহামান্য কিহি হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিলেন। মৃদু হেসে বললেন, আমি জানি মানবদেহের ডিজাইনের অসম্পূর্ণতা নিয়ে তোমাদের সবারই অনেক কিছু বলার আছে! আমরা ইচ্ছে করলে এটা নিয়ে সারা দিন কথা বলতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করতে চাইছি না। আমাদের কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে মানবদেহের সীমাবদ্ধতার পুরো তালিকা রয়েছে। তোমরা এখন যা যা বলেছ সেখানে তার বাইরেও আরো অনেক বিষয় আছে। আমি তোমাদের কাছে জানতে চাইছি, আমরা কি প্রাকৃতিক বিবর্তনের ওপর ভরসা করে অপেক্ষা করে থাকব, নাকি আমরা নিজেরা মানবদেহের সীমাবদ্ধতাগুলো মিটিয়ে দেবার চেষ্টা করব?

বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা আবার সবাই একসাথে কথা বলতে শুরু করলেন, কিছুক্ষণের মাঝেই তারা অবশ্য থেমে গেলেন। তারপর একজন একজন করে নিজের বক্তব্য বললেন। দীর্ঘ আলোচনার পর বিজ্ঞান আকাদেমি থেকে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেয়া হল। বিজ্ঞান আকাদেমি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিল মানবজাতির জিনোমে আগামী একশ বছরে খুব ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনা হবে যেন একশ বছর পর মানবদেহে আর কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকে। মানবদেহ হবে নিখুঁত, যেন তারা ভবিষ্যতে এই পৃথিবীতে অত্যন্ত সফল একটা প্রজাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারে। সিদ্ধান্ত নেবার পর মহামান্য কিহি নরম গলায় বললেন, তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতের মানব আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্যে তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

সবাই মাথা নাড়ল, বিজ্ঞানী ফিদা বলল, আপনার নেতৃত্ব ছাড়া আমরা কখনোই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না মহামান্য কিহি।

***

বিজ্ঞান আকাদেমির মহাপরিচালকের সামনে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি মাথা তুলে বললেন, এটি আপনি কী বলছেন মহামান্য কিহি।

আমি এটা ঠিকই বলছি। আমি অনেক চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মহামান্য কিহি বললেন, তুমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কর।

চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক বলল, আপনার দেহ সুস্থ এবং নীরোগ। আপনি আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন। আপনি কেন এখনই শীতলঘরে যেতে চাইছেন?

মহামান্য কিহি বললেন, তার দুটি কারণ। প্রথমত, আমি নূতন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাই। আমি দীর্ঘদিন বিজ্ঞান আকাদেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছি এখন অন্য কেউ করুক। দ্বিতীয়ত, আমি খুব বেশি বৃদ্ধ হয়ে অচল হবার আগেই শীতলঘরে যেতে চাই। আজ থেকে একশ বছর পর আমি জেগে উঠে পৃথিবীর মানুষকে দেখতে চাই। মানবদেহের সকল অসম্পূর্ণতা আর ত্রুটি দূর করার পর তারা পৃথিবীতে কীভাবে বসবাস করবে আমি সেটা নিজের চোখে দেখতে চাই।

চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক বিষণ্ণ গলায় বললেন, আপনি যদি সেটাই চান তা হলে আমরা সেটাই করব। তবে মহামান্য কিহি-পৃথিবীর মানুষ কিন্তু আপনাকে এভাবে হারাতে চাইবে না।

মহামান্য কিহি মৃদু হেসে বললেন, তুমি সেটা নিয়ে মাথা ঘামিও না। আমাকে একটা শীতলঘরে রাখার ব্যবস্থা কর। আমাকে জাগিয়ে তুলবে আজ থেকে ঠিক একশ বছর পর।

চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক মাথা নুইয়ে বলল, আপনার আদেশ আমাদের সবার জন্যে শিরোধার্য।

***

ক্যাপসুলের ভেতর খুব ধীরে ধীরে চোখ খুললেন মহামান্য কিহি। ভেতরে আবছা এবং নীলাভ এক ধরনের আলো। মাথার কাছে কোনো একটা পোর্ট থেকে শীতল বাতাস বইছে, সেই বাতাসে এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ। চোখের কাছাকাছি একটা প্যানেল সেখানে সবুজ আলোর একটা সংকেত, ছোট মিটারটিতে দেখাচ্ছে পৃথিবীতে এর মাঝে একশ বছর কেটে গেছে। মহামান্য কিহি শান্ত হয়ে শুয়ে রইলেন, তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিছুক্ষণের মাঝেই সচল হয়ে উঠবে তখন তিনি এই ক্যাপসুলের ভেতর থেকে বের হয়ে আসবেন। তিনি নিজের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করতে থাকেন।

মহামান্য কিহি যখন ক্যাপসুল খুলে বের হয়ে এলেন তখন পৃথিবীতে সূর্য ঢলে পড়ে বিকেল নেমে এসেছে। তিনি সুরক্ষিত ঘরের ভারী দরজা খুলে বের হয়ে আসতেই বাইরের সতেজ সবুজ পৃথিবীর ঘ্রাণ অনুভব করলেন। চারপাশে বড় বড় গাছ, ঘাস উঁচু হয়ে আছে ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘ। তিনি কান পেতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পেলেন, তার বুকের ভেতর তিনি এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করলেন, ফিসফিস করে নিজের মনে বললেন, আহা! এই পৃথিবীটা কী অপূর্ব। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যে!

মহামান্য কিহি ঘাসের উপর পা দিয়ে সামনে হেঁটে যেতে থাকেন, তাকে একটা লোকালয়, একটা জনপদ খুঁজে বের করতে হবে। পৃথিবীর পূর্ণাঙ্গ মানুষকে নিজের চোখে দেখতে হবে। তার কৌতূহল আর বাধ মানতে চাইছে না। হঠাৎ মহামান্য কিহি এক ধরনের সতর্ক শব্দ শুনে মাথা ঘুরিয়ে তাকালেন-খানিকটা দূরে কয়েকটি চতুষ্পদ প্রাণী তাদের চারপায়ের ওপর ভর করে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কী বিচিত্র এই প্রাণীটি আর কী বিচিত্র তার দৃষ্টি, তার সময়ে কখনো তিনি এই ধরনের কোনো প্রাণী দেখেন নি।

প্রাণীগুলো এক ধরনের হিংস্র শব্দ করতে করতে হঠাৎ চারপায়ে ভর করে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে এবং হঠাৎ করে মহামান্য কিহি বুঝতে পারেন এগুলো আসলে মানুষ। ভয়াবহ আতঙ্কের একটা শীতল স্রোত ভঁর মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায় তার ভবিষ্যতের মানুষের এটি কোন ধরনের পরিণাম? মানুষগুলো একটু কাছে এলে তিনি বুঝতে পারেন। মাদের সন্তান জন্ম দেবার কষ্ট লাঘব করার জন্যে এদের মাথা ছোট করে দেয়া হয়েছিল, সেজন্যে মস্তিষ্কের আকারও ছোট হয়েছে। এখন তারা আর বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ নয়, তারা এখন বুদ্ধিবৃত্তিহীন পশু। তারা সবাই উলঙ্গ, কাপড় পরার প্রয়োজনীয়তাটুকু পর্যন্ত অনুভব করে না। শরীরের ওজন সঠিকভাবে ছড়িয়ে দেবার জন্যে তারা এখন চার হাত-পায়ে ছোটাছুটি করে। বিবর্তনে মানুষ একবার দুই পায়ে দাঁড়িয়েছিল এখন উল্টো বিবর্তনে আবার তারা চার পায়ে ফিরে গেছে। মহামান্য কিহি এই মানুষগুলোর দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। তাদের ভেতরে আরো অনেক সূক্ষ্ম পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সেগুলো বোঝার আগেই মানুষগুলো তাকে ধরে ফেলল-তারা তাদের হাতগুলো এখনো ব্যবহার করতে পারে। শক্ত হাতে তাকে ধরে ফেলে হিংস্র শব্দ করতে করতে মানুষগুলো দাঁত দিয়ে কামড়ে তার কণ্ঠনালি ছিঁড়ে ফেলল।

মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তিনি তাদের চোখের দিকে একবার তাকাতে পেরেছিলেন, বোধহীন পত্র হিংস্র চোখ, কিন্তু সেগুলো ছিল নিখুঁত অক্টোপাসের চোখ।