তবে আমার বর্তমান অস্তিত্বের ব্যাখ্যার জন্য আমাকে একটি অতীত ও ভবিষ্যৎ অবস্থায় অবশ্যই বিশ্বাস করিতে হইবে। আর আমরা যদি এই পৃথিবী হইতে চলিয়া যাই, আমাদিগকে নিশ্চয়ই অন্য কোন আকার ধারণ করিতে হইবে। এই দিক্ দিয়া আমার পুনর্জন্মে বিশ্বাস আসে। তবে আমি ইহা হাতে-নাতে প্রমাণ করিতে পারি না। পুনর্জন্মবাদের বদলে অন্য সুষ্ঠুতর কিছু যদি কেহ আমাকে দেখাইতে পারেন, তাহা হইলে আমি এই মত ত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি। এ পর্যন্ত আমি নিজে ঐরূপ সন্তোষজনক কিছু খুঁজিয়া পাই নাই।
মিঃ কানন্দ কলিকাতার অধিবাসী এবং ওখানকার রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। ইংরেজী যাহাদের মাতৃভাষা, তাহাদের মতই তিনি ইংরেজী বলিতে পারেন। ঐ ভাষার মাধ্যমেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভ করিয়াছেন। তিনি ইংরেজ জাতির সহিত ভারতবাসীর সংস্পর্শ লক্ষ্য করিবার প্রচুর সুযোগ পাইয়াছিলেন। কোন বৈদেশিক মিশনরী কর্মী কানন্দের কথাবার্তা শুনিলে ভারতবাসীকে খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী করা বিষয়ে নৈরাশ্য পোষণ করিবেন। এই সম্পর্কে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, পাশ্চাত্যের ধর্মশিক্ষা প্রাচ্যের চিন্তাধারার উপর কতদূর কার্যকরী হইয়াছে। কানন্দ উত্তরে বলেন, ‘একটি দেশে নূতন কোন চিন্তাধারা গেলে উহার কিছু না কিছু ফল অবশ্যই ঘটে, তবে প্রাচ্য চিন্তাধারার উপর খ্রীষ্টধর্মের শিক্ষা যে-প্রভাব বিস্তার করিয়াছে, তাহা এতই সামান্য যে, উহা নজরেই আসে না।’ প্রাচ্য চিন্তাধারা এ দেশে যেমন স্বল্পই দাগ রাখে, পাশ্চাত্য মতবাদসমূহেরও প্রাচ্যে ঐরূপ ফল, বরং অতটাও নয়। অর্থাৎ দেশের চিন্তাশীল লোকের উপর উহার কোনই প্রভাব নাই। সাধারণ লোকের ভিতর মিশনরীদের কাজের ফলও অতি সামান্য। যতগুলি ব্যক্তি খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়, দেশীয় ধর্মসম্প্রদায় হইতে ততগুলি লোক অবশ্যই কমিয়া যায়, তবে দেশের সমগ্র জনসংখ্যা এত বিপুল যে, মিশনরীদের এই ধর্মান্তরীকরণের পরিমাপ নজরে আসে না।