‘বাল্টিমোর আমেরিকান’, ১৫ অক্টোবর, ১৮৯৪
ভ্রূম্যান ব্রাদার্স-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় আলোচনা-সভাগুলির প্রথমটি গতকল্য রাত্রিতে লাইসিয়াম থিয়েটারে সম্পন্ন হয়। খুব ভিড় হইয়াছিল। আলোচ্য বিষয় ছিল ‘প্রাণবন্ত ধর্ম।’
ভারত হইতে আগত ধর্মযাজক স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন শেষ বক্তা। যদিও তিনি অল্পক্ষণ বলিয়াছিলেন, কিন্তু শ্রোতারা বিশেষ মনোযোগের সহিত তাঁহার কথা শুনেন। তাঁহার ইংরেজী ভাষা এবং বক্তৃতার ধরন অতি সুন্দর। তাঁহার উচ্চারণে বৈদেশিক ধাঁচ থাকিলেও তাঁহার কথা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। তিনি তাঁহার স্বদেশীয় পোষাক পরিয়াছিলেন, উহা বেশ জমকালো। তিনি বলেন, তাঁহার পূর্বে অনেক ওজস্বী ভাষণ হইয়া যাওয়াতে তিনি সংক্ষেপেই তাঁহার বক্তব্য শেষ করিতে চান। পূর্ব-বক্তারা যাহা বলিয়াছেন, তিনি তাহা অনুমোদন করিতেছেন। তিনি অনেক ভ্রমণ করিয়াছেন এবং নানাশ্রেণীর লোকের কাছে ধর্মপ্রসঙ্গ করিয়াছেন। তাঁহার অভিজ্ঞতা এই যে, কি মতবাদ প্রচার করা হইল, তাহাতে অল্পই আসে যায়। আসল প্রয়োজন হইল একটি কার্যকর কর্মপন্থা। বড় বড় কথা যদি কাজে পরিণত করা না হয়, তাহা হইলে মনুষ্যত্বের উপর বিশ্বাস চলিয়া যায়। পৃথিবীর সর্বত্র লোকের ব্যাকুল চাহিদা হইল—উপদেশ কম, খাদ্য বেশী। ভারতবর্ষে মিশনরী পাঠান ভালই, তাঁহার ইহাতে আপত্তি করিবার কিছু নাই, তবে তাঁহার মতে লোক কম পাঠাইয়া বেশী টাকা পাঠান সঙ্গত। ভারতে ধর্মমতের অভাব নাই। নূতন ধর্মমত আমদানী করা অপেক্ষা ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপনই অধিক প্রয়োজনীয়। ভারতবাসী এবং পৃথিবীর সর্বত্র অন্যান্য সকলেই উপাসনার রীতি সম্বন্ধে শিক্ষা পাইয়াছে। কিন্তু মুখে প্রার্থনা উচ্চারণ করা যথেষ্ট নয়। হৃদয়ের আন্তরিকতা দিয়া প্রার্থনা করা চাই। বক্তা বলেন, ‘বাস্তবপক্ষে জগতে প্রকৃত কল্যাণচিকীর্ষুর সংখ্যা খুব অল্প। অপরে শুধু তাকাইয়া দেখে, বাহবা দেয় এবং ভাবে যে, তাহারা নিজেরা অনেক কিছু মহৎ কাজ করিয়া ফেলিয়াছে। প্রেমই যথার্থ জীবন। মানুষ যখন অপরের হিত করিতে ক্ষান্ত হয়, তখন আধ্যাত্মিক দিক্ দিয়া সে মৃত।’
আগামী রবিবার সন্ধ্যায় লাইসিয়ামে স্বামী বিবেকানন্দ হইবেন প্রধান বক্তা।