৩১তম অধ্যায়
হিংসাপ্রবর্ত্তক লোভের দমন উপায়
“ব্রাহ্মণ কহিলেন, “প্রিয়ে! সত্ত্ব, রজ ও তম এই তিনটি মনুষ্যের শত্রু বলিয়া নির্দ্দিষ্ট হইয়া থাকে। বৃত্তিভেদে ওই তিনটিই আবার নয় প্রকার হয়। প্রহর্ষ, প্রীতি ও আনন্দ এই তিনটি সত্ত্বগুণের বৃত্তি। বিষয়বাসনা, ক্রোধ ও দ্বেষাভিনিবেশ এই তিনটি রজোগুণের বৃত্তি। শ্রম, তন্দ্রা ও মোহ এই তিনটি তমোগুণের বৃত্তি। সৰ্ব্বশুদ্ধ এই তিন গুণের নয়টি বৃত্তি হইল। প্রশান্তস্বভাব জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি ধৈৰ্য্যসহকারে শমাদিরূপ শরসমূহদ্বারা এই সমস্ত অন্তঃশত্রুর বিনাশ করিয়া পশ্চাৎ বাক্য প্রভৃতি বাহ্য শত্ৰুদিগের বিনাশে যত্ন করিয়া থাকেন। এক্ষণে শান্তিগুণাবলম্বী মহারাজ অম্বরীষ এই বিষয়ে যেরূপ কাৰ্য্য ও আত্মমত প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।
মহাত্মা অম্বরীষের চিত্তে রাগাদি দোষসমুদয় প্রবল ও শমদমাদি গুণসকল উচ্ছিন্নপ্রায় হইলে, তিনি জ্ঞানবলে রাগাদির উপর আপনার আধিপত্যবিস্তার করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তখন তিনি আপনার দোষসমুদয়কে যথোচিত নিগ্রহ ও শমদমাদির সমুচিত সমাদর করিয়া অল্পকালের মধ্যে সিদ্ধিলাভ করিলেন। তিনি সিদ্ধিলাভ করিয়া কহিয়াছিলেন যে, আমি দোষসমুদয়কে সম্যক পরাজিত করিয়াছি, কিন্তু সর্ব্বাপেক্ষা প্রবল যে একটি দোষ আছে, সে বধার্হ হইলেও আমি তাহাকে সংহার করিতে পারিলাম না। ঐ দোষপ্রভাবে মনুষ্য কোন বিষয়েই শান্তিলাভে সমর্থ হয় না । মনুষ্য উহার বশবর্ত্তী হইয়া সতত নীচ কাৰ্য্যের অনুসরণে প্রবৃত্ত হয়, কিন্তু কখনই উহা অনুধাবন করিতে পারে না। উহার প্রভাবেই জীব নানাপ্রকার অকাৰ্য্য অনুষ্ঠান করিয়া থাকে। ঐ দোষের নাম, লোভ। উহাকে জ্ঞানরূপ অসিদ্বারা ছেদন করা, সৰ্ব্বতোভাবে কৰ্ত্তব্য। ঐ লোভ হইতেই বিষয়তৃষ্ণা উৎপন্ন হয় এবং বিষয়তৃষ্ণাপ্রভাবেই চিন্তা প্রাদুর্ভুত হইয়া থাকে। লোভী ব্যক্তি সর্ব্বাগ্রে সমগ্র রাজসগুণ অধিকার করিয়া পশ্চাৎ তামসগুণসমুদয় প্রাপ্ত হয় এবং ঐ সমুদয় গুণের প্রভাবেই বারংবার জন্মমৃত্যু স্বীকারপূর্ব্বক বিবিধ কৰ্ম্মানুষ্ঠান করে। অতএব সম্যক পর্য্যালোচনা করিয়া ধৈৰ্য্যসহকারে লোভকে নিগ্রহ করিয়া দেহরূপ রাজ্যে রাজত্বলাভের চেষ্টা করিবে। এই রাজত্বই যথার্থ রাজত্ব, স্বয়ং আত্মাই এই রাজ্যের রাজা।’ ”