কিরীটীর বিশ্লেষণ
জাস্টিস মৈত্র অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, সেদিন সকালবেলা যখন কিরীটীর ভৃত্য জংলী এসে একটা ছাতা, একটা পুলিন্দা ও দশ-বারো পৃষ্ঠাব্যাপী একটা খামে-আঁটা চিঠি তাঁর হাতে দিল।
এসব কি?
আজ্ঞে বাবু পাঠিয়ে দিলেন।
তোর বাবু কোথায়?
আজ্ঞে তিনি ও সুব্রতবাবু গতকাল সন্ধ্যার গাড়িতে পুরী বেড়াতে গেছেন।
কবে ফিরবেন?
দিন পনের বাদে বোধ হয়।
জংলী চলে গেলে জাস্টিস্ মৈত্র প্রথমেই পুলিন্দাটা খুলে ফেললেন। তার মধ্যে দুখানা চিঠি, একটি পাঁচ সেলের টর্চবাতি, কতকগুলো ক্যাশমেমো, ইনভয়েস দুটি, সতীনাথ লাহিড়ীর একটি হিসাবের খাতা। একজোড়া লোহার নাল-বসানো দারোয়ানী প্যাটার্নের নাগরাই জুতো।
জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে এক পাশে সরিয়ে রেখে জাস্টিস মৈত্র কিরীটীর চিঠিটায় মনসংযোগ করলেন।
প্রিয় জাস্টিস্ মৈত্র,
আপনি আমার রহস্য-উদঘাটনের কাহিনীগুলো শুনতে খুব ভালোবাসেন জানি চিরদিন। তাই আজ আপনাকে একটা চমৎকার কাহিনী শোনাব। এবং আমার কাহিনী শেষ হলে, তার সব কিছু ভাল-মন্দ বিচারের ভার আপনার ওপরেই তুলে দিতে চাই, কারণ ধর্মাধিকরণের আসনে আপনি বসে আছেন, আপনিই যোগ্যতম ব্যক্তি। নিরপেক্ষ বিচার আপনার কাছেই পাব। ভাগ্যবিড়ম্বনায় ও দশচক্রে একজন নির্দোষ ব্যক্তি কারাগারে বন্দী হয়ে আছেন, তাঁর প্রতি সুবিচার করবেন। পুলিসের কর্তৃপক্ষ এ কাহিনীর বিন্দুবিসর্গও জানে না; একটিমাত্র পুলিসের লোক ছাড়া, কিন্তু সেও আমার নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আপনার নির্দেশ ব্যতীত সে কোনো কিছুই করবে না। আপনাদের বিচারে প্রমাণিত হয়েছে, রায়পুরের ছোট কুমার সুহাস মল্লিকের হত্যাপরাধী ডাঃ সুধীন চৌধুরী। এবং তার শাস্তিভোগ করছে সে আজ কারাগারের লৌহশৃঙ্খল পরে। এতটুকুও সে প্রতিবাদ জানায়নি। আপনি আজও জানেন না—একজনকে বাঁচাতে গিয়ে, সমস্ত অপরাধের গ্লানি সে নীরবে মাথা পেতে নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে।
গোড়া থেকে শুরু না করলে হয়ত আপনি বুঝতে পারবেন না। তাই এই কাহিনী আমি গোড়া হতেই শুরু করব।
এদেরই, মানে রায়পুর রাজবংশের পূর্বপুরুষ রাজা রত্নেশ্বর মল্লিক, তাঁর তিন পুত্র, জ্যেষ্ঠ শ্রীকণ্ঠ মল্লিক, মধ্যম সুধাকণ্ঠ ও কনিষ্ঠ বাণীকণ্ঠ মল্লিক। শ্রীকণ্ঠ সুধাকণ্ঠের চেয়ে ন বৎসরের বড়, আর সুধাকণ্ঠের চেয়ে বাণীকণ্ঠ সাত বৎসরের ছোট। রত্নেশ্বরের একমাত্র মেয়ে কাত্যায়নী দেবী। কাত্যায়নীর একমাত্র ছেলে সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, সুরেন চৌধুরীর স্ত্রী হচ্ছেন সুহাসিনী দেবী, তাঁরই একমাত্র ছেলে ডাঃ সুধীন চৌধুরী যে সুহাসের হত্যাপরাধে অপরাধী, বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদে কারারুদ্ধ। রাজা রত্নেশ্বরের পিতা যজ্ঞেশ্বর মল্লিক মশাই ছিলেন সেকালের একজন অত্যন্ত দুর্ধর্ষ জমিদার। নৃসিংহগ্রামের কোনো একটি প্রজাকে যজ্ঞেশ্বর একদা স্টেট-সংক্রান্ত কোনো একটি মামলায় মিথ্যা সাক্ষী দিতে বলেন, কিন্তু প্রজাটি রাজী না হওয়ায় তাকে যজ্ঞেশ্বর হত্যা করেন। যজ্ঞেশ্বরের নায়েব ছিলেন শ্রীদীনতারণ মজুমদার মহাশয়। দীনতারণ যজ্ঞেশ্বরকে দেবতার মত ভক্তি-শ্রদ্ধা করতেন, হত্যাপরাধে সমস্ত দোষ স্বীয় স্কন্ধে নিয়ে দীনতারণ হাসিমুখে ফাঁসীর দড়িতে গলা বাড়িয়ে দিলেন। এবং মৃত্যুর পূর্বে তাঁর মাতৃহারা একমাত্র সন্তান শ্রীনিবাস মজুমদারকে যজ্ঞেশ্বরের হাতে দিয়ে যান। যজ্ঞেশ্বর নিজের সন্তানের মতই শ্রীনিবাসকে মানুষ করে পরবর্তীকালে স্টেটে নায়েবীতে বহাল করেন। যজ্ঞেশ্বরের পুত্র রত্নেশ্বর কিন্তু শ্রীনিবাসকে সুচক্ষে দেখতে পারেননি কোনোদিনই। শ্রীনিবাসের প্রতি একটা প্রচণ্ড হিংসা তাঁকে সর্বদা পীড়ন করত। যজ্ঞেশ্বর এ কথা জানতে পেরে মৃত্যুর পূর্বে একটা উইল করে রায়পুর স্টেটের সর্বাপেক্ষা লাভবান জমিদারী নৃসিংহগ্রামের অর্ধেক অংশ মুজমদার বংশকে লিখে দিয়ে যান। যজ্ঞেশ্বরের মৃত্যুর পর রত্নেশ্বর পিতার ঋণ সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন এবং নামমাত্র মূল্যে কৌশল করে আবার তিনি নৃসিংহগ্রামটি সম্পূর্ণরূপে নিজের ভোগদখলে নিয়ে এলেন। এমন কথাও শোনা যায় যে, রত্নেশ্বর নাকি বিষপ্রয়োগে পিতা যজ্ঞেশ্বরকে হত্যা করেন। সত্য-মিথ্যা জানি না।
রায়পুরের মর্মন্তুদ হত্যা-নাটকের বীজ সেইদিন রায়পুর বংশের রক্তে সংক্রামিত হয়। এবং সেই বিষ বংশপরম্পরায় এই বংশের রক্তধারায় সংক্রামিত হতে থাকে। রত্নেশ্বর লোকটা ছিলেন অত্যন্ত সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর। এবং তাঁর ছেলেদের মধ্যে একমাত্র শ্রীকণ্ঠ মল্লিক ব্যতীত সুধাকণ্ঠ ও বাণীকণ্ঠ ছিলেন ঠিক পিতারই সমধর্মী। রাজা রত্নেশ্বর দীর্ঘকাল বেঁচে ছিলেন। একবার সুধাকণ্ঠ ও বাণীকণ্ঠ বিষপ্রয়োগে তাঁদের পিতা রত্নেশ্বরকে হত্যার চেষ্টা করেন। রত্নেশ্বর সে কথা জানতে পেরে এক উইল করেন। সেই উইলে সুধাকণ্ঠ ও বাণীকণ্ঠর জন্য সামান্য মাত্র মাসোহারার ব্যবস্থা করে সমস্ত সম্পত্তি শ্ৰীকণ্ঠকেই দিয়ে যান। রত্নেশ্বরের মৃত্যুর পর যখন সেকথা প্রকাশ পেল, সুধাকণ্ঠ তার একমাত্র মাতৃহারা পুত্র হারাধনকে নিয়ে রায়পুর ছেড়ে ভাগলপুরে চলে গেলেন।
হারাধন ভাগলপুর থেকে এন্ট্রান্স পাস করবার পর সুধাকণ্ঠ হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান। হারাধন লোকটা অত্যন্ত সরল ও নিলোভী। অত্যন্ত অর্থকষ্টের মধ্যেও তিনি রায়পুরের রাজবংশের কাছে কোনোদিন হাত পাতেননি। নিজের চেষ্টায় মোক্তারী পাস করে সেখানেই প্র্যাকটিস শুরু করেন। এবং কিছুকাল পরে প্রবাসী বাঙালীর একটি মেয়েকে বিবাহ করে সংসার পাতেন। পরে আবার ভাগলপুর থেকে রায়পুর ফিরে এসে প্র্যাকটিস শুরু করলেন। এককালে প্রচুর অর্থ উপায় করেছেন তিনি। রায়পুরে থাকলেও, তিনি রাজবাড়ির সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখেননি। তাঁর একটি মাত্র ছেলেকে বিলেত থেকে ব্যারিস্টারী পাস করিয়ে নিয়ে এলেন। ছেলের পশার বেশ জমে উঠেছে, এমন সময় অতর্কিতে ছেলে মারা গেল। হারাধন তাঁর একমাত্র পৌত্র জগন্নাথকে নিজের কাছে নিয়ে এলেন। হারাধনের ছেলে ঠিক পিতার আদর্শেই গড়ে উঠেছিলেন, কিন্তু জগন্নাথ হল একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। জগন্নাথের কথা পরে বলব। রত্নেশ্বরের কনিষ্ঠ পুত্র বাণীকণ্ঠ পিতার মৃত্যুর দুমাস পরেই তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র নিশানাথকে রেখে মারা যান। নিশানাথ রায়পুরেই থাকেন এবং পরে আর্ট স্কুল থেকে পাস করে শোলপুর স্টেটের চিত্রকরের চাকরি নিয়ে চলে যান। নিশানাথ অবিবাহিত। মাস পাঁচেক হল তাঁর মস্তিষ্কের সামান্য বিকৃতি হওয়ায় রায়পুরের বর্তমান রাজা বাহাদুর তাঁকে রায়পুরে নিয়ে এসে রাখেন। শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিক ছিলেন দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। দুই পুরুষের পাপ ও অন্যায়ের প্রতিকারকল্পে তিনি নিহত হওয়ার দিন দশেক পূর্বে হারাধনের সঙ্গে যুক্তি করে একটি উইল করেন। এই উইলই হল কাল। যে পাপ ঐ বংশে ঢুকেছিল সেই পাপ স্খলন করতে গিয়েই তিনি যে মহাভুল করলেন, সেই ভুলেরই কঠোর প্রায়শ্চিত্ত চলেছে একটির পর একটি নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে। উইলের মধ্যে প্রধান সাক্ষী ছিলেন নায়েবজী শ্রীনিবাস মজুমদার ও হারাধন মল্লিক, শ্ৰীকণ্ঠের ভ্রাতুস্পুত্র। শ্রীকণ্ঠের কোন পুত্রাদি না হওয়ায় বৃদ্ধ বয়সে রসময়কে দত্তক গ্রহণ করেন। জীবনে শ্রীকণ্ঠ তিনটি ভুল করেছিলেন, ১নং উইল করা, ২নং রসময়কে দত্তক গ্রহণ করা। রসময়ের পিতা ছিল একজন প্রচণ্ড নেশাখোর স্বার্থান্বেষী ও নীচ প্রকৃতির লোক। রসময় তাঁর জন্মদাতার সব গুনগুলোই পেয়েছিলেন এবং দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে শিশুকালটা অতিবাহিত করে। পরবর্তীকালে অগাধ প্রাচুর্যের মধ্যে এসে যতটুকু তার মধ্যে সপ্রবৃত্তি অবশিষ্ট ছিল, তাও নিঃশেষে লুপ্ত হয়ে গেল। শ্রীকণ্ঠ গোপনে একটা উইল করেছিলেন, তাঁর স্টেটের সমুদয় সম্পত্তি সমান ভাগে নিম্নলিখিতদের মধ্যে ভাগ হবে—হারাধনের পুত্র হৃদয়নাথ মল্লিক, নিশানাথ মল্লিক, সহোদরা কাত্যায়নী দেবীর পুত্র সুরেন চৌধুরী ও দত্তকপুত্র রসময় মল্লিক। তাঁর অবর্তমানে রসময় ও শ্রীনিবাস মজুমদারই স্টেট-সংক্রান্ত সকল কিছু দেখাশুনা করবেন। স্টেটের কোন অংশীদারই কারও অংশ বিক্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর উইলের ব্যাপারটা যে গোপন থাকেনি তিনি জানতে পারেননি। এবং তারই আকস্মিক পরিণতি হচ্ছে তাঁর মৃত্যু মৃত্যু ঠিক বলবনা—তাঁকে নিহত হতে হল। উইল করবার দিনপাঁচেক বাদে শ্রীকণ্ঠ নৃসিংহগ্রাম মহালটি পরিদর্শন করতে যান। সঙ্গে যায় তাঁর দত্তকপুত্র রসময় মল্লিক। নৃসিংহগ্রামে পৌঁছবার পর পিতাপুত্রের মধ্যে সামান্য কারণে প্রচণ্ড একটা কলহ বাধে। সেই কলহের সময়ই শ্ৰীকণ্ঠ রাগতভাবে তাঁর উইলের কথা পুত্রকে জানিয়ে দেন। জীবনে এই তৃতীয় ভুলটি তিনি করলেন। পরদিন প্রত্যুষে দেখা গেল, শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিক তাঁর শয়নকক্ষের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত হয়ে পড়ে আছেন। এদিকে শ্রীনিবাস প্রভুর নিষ্ঠুর হত্যাসংবাদ যখন পেলেন, তখন একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। জোর তদন্ত হয়েও শ্রীকণ্ঠের মৃত্যুরহস্যের কোন মীমাংসা হল না। এদিকে সিন্দুক খুলে দেখা গেল, শ্রীকণ্ঠের কোন উইলই নেই। ফলে রসময় মল্লিকই হলেন রায়পুরের সর্বময় কতা।
নতুন নাটক শুরু হল।
রসময় মল্লিকের দুই বিবাহ। প্রথম পক্ষ আগেই গতাসু হয়েছিলেন, তাঁর ছেলে সুবিনয় এবং দ্বিতীয় পক্ষে মালতী দেবীর সন্তান সুহাস। সুবিনয় ও সুহাসের মধ্যে বয়সের পার্থক্য প্রায় আট বৎসর। এদিকে শ্রীকন্ঠের মৃত্যুর পর যখন তাঁর সিন্দুকে কোন উইল পাওয়া গেল না, শ্রীনিবাস বা হারাধন কেউই কোন উচ্চবাচ্য করলেন না,কারণ উইলটি আইনসিদ্ধ করা তখনও হয়নি। ঠিক ছিল শ্রীকণ্ঠ নৃসিংহগ্রাম হতে প্রত্যাবর্তন করলে, উইলটির পাকাপাকি ব্যবস্থা করা হবে আদালতে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে। উইলের ব্যাপারটা গোপনই রয়ে গেল। নায়েবজী শ্রীনিবাস মজুমদারের এক জ্যেষ্ঠ খুল্লতাত ভাই ছিল, তাঁরই সঙ্গে রত্নেশ্বর তাঁর একমাত্র কন্যা কাত্যায়নীর বিবাহ দিয়েছিলেন। রত্নেশ্বরের প্রবল ইচ্ছে ছিল, শ্রীনিবাসের সঙ্গেই কাত্যায়নীর বিবাহ দেন, কিন্তু শ্রীনিবাস স্টেটের নায়েব ছিলেন বলে এবং একই সংসারে শ্রীনিবাস ও কাত্যায়নী ভাই-বোনের মত প্রতিপালিত হওয়ায় রত্নেশ্বরের স্ত্রী ঐ বিবাহ ঘটাতে দেননি। অগত্যা শ্রীনিবাসের জ্যেষ্ঠ খুল্লতাত ভ্রাতার সঙ্গেই কাত্যায়নীর বিবাহ হয়। শ্রীনিবাসের মৃত্যুশয্যায় কাত্যায়িনী দেবী উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে শ্রীনিবাসই কাত্যায়িনীর নিকট শ্রীকন্ঠের উইলের কথা উল্লেখ করেছিলেন। যাই হোক শ্রীনিবাসের মৃত্যুর পর রসময় কি ভেবে জানি না, সুধীনের পিতা তরুণ উকিল সুরেন্দ্র চৌধুরীকে স্টেটের নায়েবীতে বহাল করলেন। সুবিনয় কিন্তু পিতার এই কাজে এতটুকুও খুশী হলেন না। ফলে মাস ছয় যেতে না যেতেই লোকে জানল সুরেন চৌধুরী নৃসিংহগ্রাম মহাল পরিদর্শন করতে গিয়ে যে কক্ষে শ্রীকণ্ঠ মল্লিক নৃশংসভাবে নিহত হয়েছিলেন, সেই কক্ষেই নৃশংসভাবে কোন এক অদৃশ্য আততায়ীর হস্তে নিহত হয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সুরেনের স্ত্রী সুহাসিনী তিন বৎসরের শিশুপুত্র সুধীনকে বুকে নিয়ে রায়পুর ত্যাগ করে তাঁর ভাইয়ের গৃহে চলে এলেন। সুরেনের মৃত্যুর (?) কয়েক মাস আগে তাঁর মা কাত্যায়নীর কাশীপ্রাপ্তি হয়েছিল। হতভাগ্য সুহাসের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই হল মোটামুটি ইতিহাস। আগাগোড়া ব্যাপারটাই অত্যন্ত জটিল। এবারে আমি বর্তমান অধ্যায়ে আসব, সুহাসের মৃত্যুর ব্যাপারে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, শোনা যায় রসময়েরও নাকি আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। একদিন আহারাদির পর হঠাৎ তিনি অসুস্থ বোধ করেন, ডাক্তার-বদ্যি এল, কিন্তু কোন ফল হল না, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তিনি মারা (?)গেলেন। এবারে সুবিনয় মল্লিক হলেন রায়পুরের রাজাবাহাদুর। কিন্তু রসময় উইল করে গিয়েছিলেন, সমগ্র সম্পত্তি সমান দুভাগে সুবিনয় ও সুহাসে বর্তাবে। পিতা রসময়ের মৃত্যুর পরই সুবিনয় স্টেটের কিছু অদলবদল করলেন।
নতুন খাজাঞ্চী এল তারিণী চক্রবর্তী ও তার কিছুকাল পরে স্টেটের ম্যানেজার হয়ে এলেন অধুনা মৃত সতীনাথ লাহিড়ী। এইভাবে তৃতীয় অঙ্ক শুরু হল। সুবিনয় চেষ্টা করছিলেন, কি ভাবে সুহাসকে চিরদিনের মত তাঁর পথ থেকে সরিয়ে সমস্ত সম্পত্তি একা ভোগ করবেন। ষড়যন্ত্র শুরু হল। সুবিনয়ের পরামর্শ ছাড়াও সহায় হলেন ডাক্তার কালীপদ মুখার্জী, খাজাঞ্চী তারিণী চক্রবর্তী, ম্যানেজার সতীনাথ লাহিড়ী ও নৃসিংহগ্রামের নায়েব শিবনারায়ণ চৌধুরী। এবারে রাণীমা মালতী দেবী আমাকে যে পত্রটি দিয়েছিলেন, যা মামলার অন্যতম evidence হিসাবে আপনাকে পাঠালাম, সেটা পড়ুন। তারপর আবার আমার চিঠি পড়বেন।