হিন্দু বিধবা যখন মৃত পতির সহিত স্বেচ্ছায় অগ্নিতে প্রবেশ করিয়া মৃত্যু বরণ করিতেন, তখন ভুরিভোজন এবং সঙ্গীতাদিসহ একটি উৎসবের পরিবেশ সৃষ্ট হইত। মহিলা নিজে তাঁহার সর্বাপেক্ষা দামী বস্ত্র পরিতেন। তিনি বিশ্বাস করিতেন, স্বামীর সহিত সহমরণে তাঁহার নিজের এবং পরিবারবর্গের স্বর্গলোকে গতি হইবে। আত্মবলিদাত্রীরূপে তাঁহাকে সকলে পূজা করিত এবং তাঁহার নাম পরিবারের বিবরণীতে গৌরবান্বিত হইয়া থাকিত।
সহমরণ-প্রথা আমাদের নিকট যত নৃশংসই মনে হউক, খ্রীষ্টীয় সমাজের ডাইনী-দহনের তুলনায় ইহার একটা উজ্জ্বল দিক্ রহিয়াছে। যে-স্ত্রীলোককে ডাইনী বলিয়া ঘোষণা করা হইত, গোড়া হইতেই তাহাকে পাপী সাব্যস্ত করা হইত। তারপর একটি বদ্ধ কারাকক্ষে তাহাকে আবদ্ধ করিয়া পাপ স্বীকারের জন্য চলিত নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং ঘৃণিত বিচার-প্রহসন। অবশেষে শাস্তিদাতাদের হর্ষধ্বনির মধ্যে বেচারীকে টানিয়া বধ্যস্থানে লইয়া যাওয়া হইত। বলপূর্বক অগ্নিদাহের যন্ত্রণার মধ্যে তাহার সান্ত্বনা থাকিত শুধু দর্শকবৃন্দের আশ্বাস যে, মৃত্যুর পর অনন্ত নরকাগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হইয়া তাহার আত্মার ভাগ্যে ভবিষ্যতের যে ভীষণতর কষ্ট লেখা আছে, বর্তমান কষ্ট শুধু তাহার সামান্য একটি নিদর্শন।