এটা—এটা কি? নবাব সাহেব প্রশ্ন করেন।
এটা কি বুঝতে পারছেন না নবাব সাহেব—এটা মেহেরউন্নিসার বোরখার একটি ছেড়া অংশ। এটা কোথায় পেয়েছি জানেন? হলঘরের মধ্যে ফুপুর ঘরের দরজার গায়ে একটা ছোট পেরেক উঠে আছে, সেই পেরেকে লেগে ছিল। সম্ভবত ঐ বাথরুম পথে আসবার বা যাবার সময় তাড়াতড়িতে বোরখাটা পেরেকে লেগে ছিড়ে যায়। আর সেই সময়
মেহেরের বোরখা? নবাব সাহেব যেন বোকার মতই প্রশ্নটা করেন।
হ্যাঁ দেখুন না-পরীক্ষা করে। ওঁর হাতের কাছে বোরখাটা—উনি হাত তুললেই চোখে পড়বে।
কেমন যেন বোকার মতই নবাব সাহেব মেহেরের দিকে তাকালেন আবার।
উনি দু-দুবার ট্রে হাতে করে এ ঘরে যখন এসে ঢোকেন তখনই আমার দৃষ্টিতে ব্যাপারটা পড়েছে।
না। এতক্ষণে মেহেরউন্নিসা কথা বলে।
সকলেই যুগপৎ ওর দিকে তাকায়।
আমার বোরখা ঘেঁড়াই ছিল, তা ছাড়া এটা আমার বোরখা নয়।
আপনার নয়?
না।
তবে কার বোরখা?
মোতির।
মোতির–মানে জাহানারা বেগমের খাস দাসীর?
হ্যাঁ।
মোতির বোরখা আপনি পরেছেন?
হ্যাঁ।
দয়া করে বোরখাখানা খুলবেন কি—
কথাটা শেষ হলো না কিরীটীর। সহসা মেহের তার মুখ থেকে বোরখাখানা তুলে ফেলল।
সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী যেন চমকে ওঠে।
এ সেই মুখ—চকিতে আরশিতে দেখা সেই অনিন্দ্যসুন্দর মুখখানি।
কিরীটী যেন বোবা। সত্যিই অপরূপ সুন্দরী মেহেরউন্নিসা।
বয়স খুব বেশী হবে না। চব্বিশ কি পঁচিশ—তার চাইতেও কম হতে পারে। কিন্তু ঐ মুখ—ঐ মুখখানি না হলেও ঠিক অমনি একখানি মুখ কিরীটী যেন কোথায় দেখেছে।
কোথায় কোথায় দেখেছে! হঠাৎ কি যেন একটা মনে পড়ে কিরীটীর। সে বলে, এক্সকিউজ মি—এক সেকেণ্ড—আমি আসছি।
কিরীটী দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল। সোজা গেল হলঘরে। ঢুকে দেখল মৃতদেহটা তখনো সেখানে তেমনিই পড়ে আছে।
মৃতার মুখের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে কিরীটী পুনরায় নবাব সাহেবের ঘরে ফিরে এল।
ঘরের মধ্যে তখনো ঠিক তেমনিই সব দাঁড়িয়ে।
মানিক চাটুয্যে, সুশীল মুখার্জী, মেহেরউন্নিসা, আর বসে নবাব আসগর আলী সাহেব।