পদ্ধতির পরিচয়
শুরুতেই বলেছি, লোকায়ত দর্শন নিয়ে যতো রকমের সমস্যা ওঠে তা সবই সমাধান করা আমাদের যোগ্যতায় নেই। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস সংক্রান্ত গবেষণার বর্তমান অবস্থায় তা কতোখানি সম্ভব তাও হয়তো অনেকটাই সন্দেহের কথা।
সমস্যা যে ওঠে এবং সমস্যা যে বহু রকমের, ভারতীয় দর্শনের সাধারণ ইতিহাসে সে-কথার স্বীকৃতি নেই। মহামহোপাধ্যায়ের রচনা অনুসরণ করে দেখাবার চেষ্টা করলাম সমস্যাগুলিকে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে এবং সেগুলির সমাধান খোঁজ করা দরকার। এবং সমাধান খোঁজ করবার পদ্ধতিটি কী রকম হতে পারে তারও কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া গেলো সমস্যাগুলির সূত্র ধরে এগোতে-এগোতে : পৃথিবীর পিছিয়ে-পড়া মানুষের ধ্যানধারণা থেকে প্রাচীন পুঁথিপত্রের অনেক কথা এবং অনুন্নত মানুষদের অনেক ক্রিয়াকর্মকে বোঝবার সুযোগ হতে পারে।
এ-পদ্ধতি খুবই মূল্যবান।
এ-পদ্ধতি অনুসরণ শুধু যে লোকায়ত-দর্শন প্রসঙ্গেই প্রয়োজন তাই নয়, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের অনেক অন্ধকার গুহা, প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের অনেক জটিল সমস্যা, প্রাচীন পুঁথিপত্রে লেখা অনেক দুর্বোধ্য কথা—এ-পদ্ধতির সাহায্যে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।
শুরুতে তাই পদ্ধতির সম্যক পরিচয় প্রয়োজন।
কিন্তু পদ্ধতিটিকে বোঝবার ব্যাপার সুবিধে হবে এটির কোনো মূর্ত প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করলে। উপনিষদেরই একটি দুর্বোধ্য পরিচ্ছেদের উপর প্রয়োগ করে পদ্ধতিটির পরিচয় পাবার চেষ্টা করা যাক। লোকায়ত-দর্শনের দিক থেকেও উপনিষদের এই পরিচ্ছেদটি অবান্তর হবে না। কেননা, তার মধ্যে যে-দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে তাকে বস্তুবাদী বা লোকায়তিকই বলতে হবে।