৪৫তম অধ্যায়
দানাদি সৎকারান্তে যুধিষ্ঠিরের কৃষ্ণসাক্ষাৎকার
জনমেজয় কহিলেন, হে তপোধন! ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির পৈতৃক রাজ্য অধিকার করিয়া কোন্ কোন্ কার্য্যের অনুষ্ঠান করিলেন এবং চরাচরগুরু ভগবান হৃষীকেশই বা ঐ সময় কি কার্য্যানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইলেন, আপনি তাহা কীর্ত্তন করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! পাণ্ডবগণ বাসুদেবের সহিত মিলিত হইয়া যে যে কাৰ্য্য করিয়াছিলেন, তাহা আদ্যোপান্ত কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন। ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির রাজ্য অধিকার করিয়া চতুৰ্ব্বর্ণাত্মক লোকসমুদয়কে স্ব স্ব কাৰ্য্যে সন্নিবেশিত করিলেন। তৎপরে তিনি সহস্র স্নাতক ব্রাহ্মণের প্রত্যেকের হস্তে সহস্র নিষ্ক প্রদান, অনুজীবী, ভৃত্য, আশ্রিত, অতিথি, দীন ও যাচকদিগকে প্রার্থনাধিক অর্থদান এবং পুরোহিত ধৌম্যকে অযুত গো, সুবর্ণ, রজত ও বিবিধ বস্ত্র প্রদান করিয়া কৃপাচার্য্যকে গুরুর ন্যায় সম্মান ও বিদুরকে যথোচিত সৎকার করিতে লাগিলেন। ধৰ্ম্মরাজ্যে আশ্রিত ব্যক্তিগণ তাঁহার নিকট উপযুক্ত অন্ন, পান, বস্ত্র, শয়ন ও আসন প্রাপ্ত হইয়া যারপরনাই সন্তুষ্ট হইল। তিনি স্বীয় লব্ধরাজ্যে শান্তিস্থাপন ও যুযুৎসুর সম্মান করিয়া আহ্লাদিতচিত্তে ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী ও বিদুরের উপর রাজ্যের কর্তৃত্বভার সমর্পণ করিলেন।
এইরূপে ধৰ্ম্মরাজ নগরস্থ সমস্ত ব্যক্তিকে প্রীত ও প্রসন্ন করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে বাসুদেবের নিকট গমনপূর্ব্বক দেখিলেন, নীলনীরদসমপ্রভ[নীলমেঘতুল্য কান্তি], দিব্যাভরণভূষিত, তেজঃপুঞ্জকলেবর, মহাত্মা মধুসূদন পীতাম্বর পরিধানপূৰ্ব্বক হেমমণ্ডিত মণির ন্যায় অপূৰ্ব্ব শোভা ধারণ করিয়া মণিকাঞ্চনসমলঙ্কৃত পর্য্যঙ্কে উপবিষ্ট রহিয়াছেন। ঐ মহাত্মার বক্ষঃস্থলে কৌস্তুভমণি বিরাজিত হওয়াতে উঁহাকে উদয়োম্মুখ সূৰ্য্যমণ্ডলে লাঞ্ছিত উদয়াচলের ন্যায় বোধ হইতেছে। এই ত্রিলোকমধ্যে তাঁহার উপমা নাই। তখন ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির মহাত্মা হৃষীকেশের সন্নিহিত হইয়া হাস্যমুখে মধুরবাক্যে কহিলেন, “ত্রিলোকনাথ! তুমি ত’ পরমসুখে এই নিশা অতিবাহিত করিয়াছ? তোমার জ্ঞান ও বুদ্ধি ত’ সুপ্রসন্ন আছে? আমরা তোমারই অনুগ্রহে রাজ্য অধিকার করিয়া পৃথিবীস্থ সমস্ত লোককে বশীভূত করিয়াছি। তোমার অনুগ্রহেই আমাদের জয়লাভ ও যশোলাভ হইয়াছে। তোমার কৃপাবলেই আমরা ধৰ্ম্মপথ হইতে পরিভ্রষ্ট হই নাই।” হে মহারাজ! ধৰ্ম্মরাজ এইরূপে বিবিধ বিনীতবাক্য প্রয়োগ করিলেও মহাত্মা বাসুদেব কিছুমাত্র প্রত্যুত্তর প্রদান না করিয়া মৌনভাবে অবস্থান করিতে লাগিলেন।