আমরা ক’জন
শহীদ মিনারের পাদপাঠে এসে দাঁড়ালাম
ফেব্রুয়ারীর শীতবিকেলে। একে একে
আস্তে সুস্থে সেখানে আসতে শুরু করলো অনেকে,
যেমন তীর্থ ভূমিতে অবিরাম
জড়ো হন ভক্তগণ।
সেখানে রোদের ঝলক ছিল না, আকাশ
তখন রাশভারি দার্শনিকের মুখের মতো,
আশেপাশে উজ্জ্বলতার কোনো আভাস
চোখে পড়েনি, তবু অবিরত
কিছু জ্যোতির্বলয়, মনেন হলো, খেলা
করছিল। আমরা ক’জন সেই বিকেলবেলা
চুপচাপ আরো ঘনিষ্ঠ হলাম পরস্পর।
একটু পরে আমাদের কণ্ঠস্বর
হলো মঞ্জরিত। আমাদের উচ্চারণের স্তবক
নিলো ঠাঁই শহীদ মিনারে সমর্পিত ফুলের পাশে।
সে সব শব্দগুচ্ছ ছিল না নিছক
শব্দ শব্দ খেলা, ছিল তারও বেশি, বিশ্বাসে
সঞ্জীবিত, নিশ্বাসে নিশ্বাসে অলৌকিক
ছন্দোময়। হঠাৎ পড়লো মনে সদ্য-প্রয়াত কবিবন্ধুর মুখ;
তার কথা ভেবে আমার চোখ করে চিক চিক
পানিতে যেন মরীচিকা। উন্মুখ
চেয়ে থাকি কিছুক্ষণ, সরে বসে তড়িঘড়ি
আমার পাশে জায়গা করি,
যদি সে আবার আসে। তার বদলে দেবদূতের গান
ভেসে আসে দশদিক থেকে, থর থর
কাঁপি পাতার মতো; মহ্যমান
শহুরে গাছপালা, পথ, সিঁড়ি, প্রধান চত্বর।
আমাদের কবিতাপাঠের সময়
মনে হয়
তাঁরা এলেন শহীদ মিনারে, নিঃশব্দে কিছুক্ষণ
আসা-যাওয়া করে চত্বরে ক’জন
শহীদ দাঁড়ান পাদপাঠে। নিমেষে শস্যক্ষেত্র হয়ে যায়
শহীদ মিনার, তাঁরা কাহাতশাসিত দেশের শস্যের মতো
দুলতে থাকেন ক্রমাগত।
তারপর তাঁরা সব কিছু ছাপিয়ে ওঠেন, এমন দীর্ঘকায়।