হে নিশীথ, আজ আমি কিছুই করতে পারব না।
বই পড়া, চিঠি লেখা অথবা বন্ধুর পাশে ব’সে
নিবিড় আলাপ-আজ কিছুই হবে না। সারা রাত
নির্ঘুম কাটবে অতিশয়; আমি কি অসুস্থ তবে?
থার্মোমিটারের নেই প্রয়োজন; যদিও শরীর
পুড়ে যাচ্ছে তাপে, তবু নেবু পানি, বার্লি, তপ্ত জল
কমলালেবুর রস চাই না কিছুই আজ রাতে।
কোমল অনল আমি পান করে এসেছি এক্ষুণি।
আমার সম্মুখে ছিল একরাশ মদির স্নিগ্ধতা,
তবে আমি মিছেমিছি অনলের কথা কেন বলি?
রজনীগন্ধা কি আগুনের রেণু শিরায় শিরায়
তুমুল ছড়াতে পারে এই মতো, হে নিশীথ, বলো?
ঘর কি সমুদ্র হতে পারে? নইলে কী করে সেখানে
সহজেই আফ্রোদিতি আসে তার সমস্ত শরীরে
স্বপ্নের মতন ফেনা নিয়ে? যখন সে এলো ভেসে,
ঘরের দেয়াল মুছে গেল; গেল উবে আসবাব।
এ কাকে দেখেছি আমি? এত চেনা, তবুও কেমন
সুদূর অচেনা; তার কণ্ঠস্বরে কথা নয়, ঝরে
স্মৃতি, স্মৃতি গান হয় স্তব্ধতায়। সহসা বিদায়,
যেন স্বপ্ন জাতক্রোধে ছুড়ে দেয় ধুলায় আমাকে।
ব্যর্থ মানুষের মতো চেয়ে থাকি, ঘরের দেয়াল
ফিরে আসে, দেখি ঠিক মাথার ওপরে আছে ছাদ।
ত্র্যাশট্রেতে পোড়া সিগারেট, তার সত্তার সৌরভ
ঘরে, সে মুহূর্তে বন্ধ হতে পারত হৃদয়স্পন্দন।
আমি একজন রাগী মানুষের মতো আকাশকে
সে মুহূর্তে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলতে চেয়েছি। সূর্যাস্তকে
চেটেপুটে সাফ করে দিতে লাগে কতক্ষণ বলে
সেদিকেই দৌড়ে গেছি, দৌড়ুতে দৌড়ুতে ক্লান্ত বড়।
হে নিশীথ, আজ আমি কিছুই করতে পারব না।
আমার মগজে ফণিমনসার বন বেড়ে ওঠে,-
দেখি আমি পড়ে আছি যুদ্ধ-ধ্বস্ত পথে কী একাকী;
ভীষণ আহত আমি, নেকড়ের মুখে আফ্রোদিতি!