দ্বিতীয় দৃষ্টির জাগরণ

আপাতদৃষ্টির অন্তরালে
দ্বিতীয় দৃষ্টির জাগরণ থাকে, একটি পায়ের
শব্দকে ছাপিয়ে ওঠে ভিন্ন পদধবনি। ভোরবেলা
প্রজাপতি কলমদানিতে
উড়ে এসে বসে, দূর বাগানের পলায়নপর
গোলাপের কথা
শোনাতে শোনাতে মৃত্যু দিয়ে জীবনের
একটি নিরালা ভঙ্গি নিঃশব্দে ফোটায়।

কুকুর-কান্নায় আর্ত গহন রাত্তিরে ফ্ল্যাটবাড়িতে যে-যুবা
ঝুলেছিলো ফাঁসির দড়িতে,
মনে হলো, শাগালের ছবির ধরনে
ভেসে ভেসে এলো সে আমার
ঘরের ভেতরে, দিলো বাড়িয়ে আমার দিকে হেসে
একটি ডালিম। মৃতেরা কি জীবিতের
হাতে এরকম
ফল তুলে দেয়? ওরা এরকম হাসতে
পারে অনাবিল? চার দেয়ালে ভোরের
তুলির রঙিন স্পর্শ, দেখি
করতলে ফল নয় কবিতার কিছু বীজ নিয়ে
ব’সে আছি লেখার টেবিলে।

মৃত প্রজাপতিটিকে বাজে কাগজের
ঝুড়িতে গচ্ছিত রাখি। অকস্মাৎ মিসিমার তরবারি-চেরা
পেট উদ্ভাসিত, ক্যালেন্ডার
রক্তবমি করে, রক্তচক্ষু মাল্যবিভূষিত মহিষের মুন্ড খোঁজে
বুকসেল্‌ফে কবিতার বই, প্রস্রাবের তীব্র কটু
গন্ধ রেখে ঘরময় চ’লে যায় লেজ নেড়ে নেড়ে,
মেঘের আড়াল থেকে উড়ন্ত বিবাগী
দরবেশ নেমে এসে পুলিশকে অস্তগামী চাঁদ
দেখিয়ে আবার
মেঘের কপাট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন।

পারমাণবিক মেঘ ফেটে, মনে হলো,
আত্মা-দাহ-করা
তেজের ভীষণ বিকিরণ দশদিকে।

স্বপ্নে দেখি, একটি দেয়াল ধ’সে যার জরাগ্রস্ত
মানুষের মতো আর্তনাদ ক’রে, চাপা
পড়ে এক ঝাঁক কবুতর, শাদা, কালো, পীত,
বেগনি, বাদামি, স্বপ্নে দেখি
পায়রার মৃত্যু, ঘোড়াদের মৃত্যু দেখি। মৃত সব
ঘোড়ার কঙ্কাল ফুঁড়ে, পোকা মাকড়ের
দঙ্গল ছাপিয়ে সূর্যমুখী
বুকে নিয়ে সূর্যোদয় জেগে ওঠে রাশি-রাশি। স্বপ্নে দেখি,
নর্দমার গাদে
বালিকার হাত ভাসে কাগজের নৌকার ধরনে। পূর্ণিমার
চাঁদ ঝুলে থাকে স্টেনগান
দানবের চুম্বনের মতো;
পরিত্যক্ত বুটের ভেতরে ক্রমাগত কোলাহল
করে ব্যাঙ, সায়াহ্নের কর্দমাক্ত, ভগ্নকণ্ঠ ব্যাঙ; যেন কবি
অনস্তকে ঠোকরায় শুধু
দ্বিতীয় দৃষ্টির জাগরণে, ঠোকরায়, ঠোকরায়।।