তোমার সঙ্গে হয়েছিল দেখা ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে।
নদীতীরে নয়, বাগানেও নয়, পার্কে নয়,
হয়েছিল দেখা খোলা রাস্তায় দীপ্র ভিড়ে।
যদিও তোমাকে নিশ্চিত আমি দেখিনি আগে,
তবু মনে হয়, ছিল পরিচয় অনাদিকালে।
হয়তো আমরা ছিলাম গুহায় বাকলাবৃত।
এখন আবার জন্মান্তরে দাঁড়াই এসে
আমরা দু’জন পাশাপাশি এই শান-বাঁধানো
কোলাহলময় পথের প্রান্তে মিশ্র ভিড়ে।
শাড়ির আঁচল উড়ছে হাওয়ায়, শিথিল খোঁপা;
স্বেদকণা জমে নাকের ডগায়, কর্ণমূলে।
তোমার কণ্ঠে হয় বাঙ্ময় দিনদুপুর।
সেদিন দুপুরে তোমার দু’চোখে দেখেছিলাম
এলদেরাদোর ঈষৎ আভাস, অতুলনীয়।
শরীর তোমার নিমগ্ন এক গুণীর তান।
প্রথম দেখায় তোমাকে কি ভালো বেসেছিলাম?
হাজার কণ্ঠে মিশেছিল বটে তোমার গলা,
সে গলায় শুনি অলকানন্দা নদীর সুর।
তুমি মনোযোগী ছিলে না তখন আমার প্রতি,
অথচ ছিলাম সকল সময় তোমারই পাশে।
হৃদয়ে আমার ফুটেছিল শত স্বর্ণচাঁপা।
স্বর্ণচাঁপার আভা ছিল নাকি তোমার চোখে?
পথ চলি ভরা রোদ্দুরে আর ইতিহাসের
কাঁসর ঘণ্টা আমরা প্রবল নাড়িয়ে দিই।
হায় দুপুরেই কেমন কুটিল সন্ধ্যা নামে।
পাশা খেলা শেষ, শুরু হলো বুঝি বনপর্ব,
আড়ালে নিষাদ শানাচ্ছে খুব তীরের ফলা।
জোনাকির মতো স্বপ্ন আমার ব্যাপক, ক্রূর
ষড়যন্ত্রের আলখাল্লায় গিয়েছে ঢেকে-
আমরা দু’জন দু’দিকে ছিটকে পড়েছি আজ।
নিচ্ছে বিদায় চোখ কান আর কণ্ঠস্বর;
যায় সব যাক, অন্তত এই পোড়া জীবনে
গ্রিক ট্রাজেডির নায়কের মতো মহিমা থাক।