৩. ইহুদি কোম্পানি

৩. ইহুদি কোম্পানি

রূপরেখা

ইহুদি কোম্পানি কিছুটা জমি-অধিগ্রহণকারী বৃহৎ কোম্পানির আদলে নকশা করা। এটিকে ইহুদি চার্টার্ড কোম্পানিও বলা যেতে পারে। যদিও এটি সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না এবং পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাজ ছাড়াও এটির অন্য কার্যক্রমও আছে। ইহুদি কোম্পানিটি একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর এখতিয়ারের সীমা হবে ইংলিশ জুরিসডিকশন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের সুরক্ষার অধীনে এটি ইংলিশ আইন অনুযায়ী তৈরি হবে। এর প্রধান কেন্দ্র হবে লন্ডন। কোম্পানির মূলধন কত বড় হওয়া উচিত তা আমি এখনই বলতে পারব না; এই হিসাব আমি আমাদের অসংখ্য অর্থদাতার ওপর ছেড়ে দেব। তারপরও অস্পষ্টতা এড়াতে আমি এটিকে এক হাজার মিলিয়ন দ্বারা (প্রায় ৫ কোটি পাউন্ড কিংবা ২০ কোটি ডলার) সংখ্যায়িত করব; এটা হতে পারে এর চেয়ে কম বা বেশি। সাবস্ক্রিপশন ফর্মে বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে, পুরো অংকের কত ভগ্নাংশ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে তা সেই ফর্মে নির্ধারণ করা থাকবে। পরিবর্তনকালে সংগঠনের বৈশিষ্ট্য যেমন হয় ইহুদি কোম্পানির সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য তেমন হবে। এটি হবে একেবারেই একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং অবশ্যই এটি হবে ইহুদি সোসাইটি থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা। ইহুদি কোম্পানি সর্বপ্রথম প্রস্থান-উন্মুখ ইহুদিদের রেখে যাওয়া সমস্ত স্বার্থকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত করবে। যে পদ্ধতি গৃহীত হবে তা সংকটকালীন ঘটনাগুলো রোধ করবে, প্রতিটি মানুষের সম্পদের সুরক্ষা দেবে এবং খ্রিস্টান নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরকে সহজতর করবে, এ বিষয়ে এই পুস্তিকায় আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্থাবর সামগ্রী

স্থাবর (অস্থানান্তরযোগ্য) পণ্য হিসেবে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আসে সেগুলো হচ্ছে, জমি, স্থানীয় ব্যবসায়িক সংযোগ। ইহুদি কোম্পানি প্রথমে শুধু এই পণ্য বিক্রি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আলোচনার কাজটুকু করবে। এই বিক্রয় হবে অবাধ এবং দামের কোনো গুরুতর পতন ঘটবে না। বিভিন্ন শহরে কোম্পানির শাখাগুলো ইহুদি সম্পত্তি বিক্রির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হয়ে উঠবে এবং লেনদেনের ওপর কেবল ততটুকুই কমিশন ধার্য করবে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন। এ কার্যক্রম তরান্বিত হওয়ার পর জমির দাম উল্লেখযোগ্য হারে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং শেষপর্যন্ত বাজার পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। এ ধরনের সংকটে ইহুদি কোম্পানি তাদের আরেক ধাপের কার্যক্রম শুরু করবে। কোম্পানি পরিত্যক্ত সম্পত্তির দায়িত্ব নেবে। যতদিন না সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্পত্তি জটিলতার নিষ্পত্তি হচ্ছে ততদিন সেগুলো কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় থাকবে। কোম্পানি বাড়িভাড়া সংগ্রহ করবে, জমি লিজ দেবে, ব্যবসা ব্যবস্থাপক নিয়োগ করবে। ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে সম্ভব হলে তারা ভাড়াটেও বসাবে। ভাড়াটেরা, যারা খ্রিস্টান, যাতে সহজে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে সেজন্য কোম্পানি সবধরনের চেষ্টা চালাবে। কোম্পানি ইউরোপের শাখাগুলোতে খ্রিস্টান কর্মীদের (আইনজীবী এবং অন্যান্য কর্মী) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ধীরে ধীরে নিজেদের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেবে। আর এই নতুন কর্মীরা কোনো অর্থেই ইহুদিদের দাস হবে না। খ্রিস্টান জনগণের মধ্যে তাদের স্বাধীন প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবকিছু করা হবে সমতা, সুষ্ঠুতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে এবং তা করা হবে জনগণের অভ্যন্তরীণ কল্যাণকে কোনোরকম বিঘ্নিত না করেই।

একই সময়ে কোম্পানি সম্পত্তি বিক্রি করবে, কিংবা বিনিময় করবে। একটি বাড়ির জন্য নতুন দেশে একটি বাড়ি; জমির জন্য নতুন দেশে সমপরিমাণ জমির প্রস্তাবনা রাখবে কোম্পানি। পুরোনো স্থানে যা যে অবস্থায় ছিল নতুন দেশে একই অবস্থায় যতদূর সম্ভব স্থানান্তর করবে। এই স্থানান্তর কোম্পানির লাভের একটি বড় ও স্বীকৃত উৎস হবে।

পুরোনোর বিনিময়ে ‘সেখানে’১ যে বাড়িগুলোর প্রস্তাব দেওয়া হবে সেগুলো হবে নতুন, আরও সুন্দর এবং আরও আরামদায়ক। যে জমি দেওয়া হবে সেগুলোও হবে ছেড়ে যাওয়া জমির চেয়ে বেশি দামের। এতেও কোম্পানির তুলনামূলকভাবে কম খরচ হবে, কারণ, কোম্পানি তো এটি খুব সস্তায় আগে কিনে নিয়েছে।

[১১ এই বইয়ের ‘সেখানে’ বলতে প্রস্তাবিত নতুন দেশকে বুঝিয়েছেন লেখক। যে কারণে নির্দিষ্ট এই অর্থ বোঝাতে ‘সেখানে’ শব্দটি উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখা হয়েছে।]

জমি ক্রয়

আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে ইহুদি সোসাইটি যে জমি হস্তগত করবে সেগুলো অবশ্যই তাদের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে সুরক্ষিত হবে। বসতির জন্য কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো সম্পত্তি নিয়ে থাকলে সেটির সুরক্ষার বিষয় ইহুদি সমাজের হাতে থাকবে না। কোম্পানির নিজস্ব প্রয়োজনে এবং আমাদের প্রয়োজনে বৃহৎ এলাকার প্রয়োজন হবে এবং তা অবশ্যই কেন্দ্ৰীয় ক্রয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত হতে হবে।

‘ওখানে’ জমির দখল পেতে যাতে খুব বেশি দাম না দিতে হয় সেই মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ফিসকাল ডোমেইনগুলো (আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো) অধিগ্রহণের জন্য প্রধানত এই কোম্পানি আলোচনা করবে,

বিক্রির ক্ষেত্রে ঠিক যেভাবে দাম যাতে খুব কম না হয় সে খেয়াল তারা রাখে। জমির দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা যাবে না। জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির কাজের সঙ্গে ইহুদি সমিতির তত্ত্বাবধান থাকবে। উদ্যোগটি পানামা হয়ে গেল কি না সেটি দেখবে ইহুদি সোসাইটি। উদ্যোগটি পানামা১২ না হয়ে সুয়েজ১৩ হবে। কোম্পানি তার কর্মকর্তাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত হারে নির্মিত সাইটগুলো বিক্রি করবে এবং বাড়ি তৈরির জন্য এগুলো তারা যাতে বন্ধক রাখতে পারে, সে অনুমতিও দেবে, এক্ষেত্রে বকেয়া তাদের বেতন থেকে কেটে নেবে কিংবা বাড়তি অর্থ বর্ধিত বেতন হিসেবে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা দেবে। এটি, তারা যে সম্মান আশা করে তারচেয়েও বেশি হবে এবং তারা যে পরিষেবা দেবে তার জন্য বাড়তি প্ৰাপ্য।

[১২ পানামা: বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের একটি হচ্ছে পানামা। পানামা খাখের দখল নিয়ে মধ্যযুগ থেকে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে লড়াই ছিল। এই খাল ঘিরে রাজনীতির ফলাফল হিসেবে পানামা হয়ে উঠেছে স্বাধীন দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ১৯০৪ সালে খাল খননের কাজ পায় এবং দীর্ঘ মেয়াদে এ খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকে।

১৩ সুয়েজ: বিশ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর সুয়েজ। সুয়েজ বন্দর ও খালের দখল নিয়েও মধ্যযুগ থেকে লড়াই ছিল বিভিন্ন পক্ষের। বিশ শতকে ইসরায়েলও এ খালের দখল পেতে চেয়েছিল। ১৮৫৪ সালে মিসরের কাছ থেকে সুয়েজ খালের অধিকার পায় ফ্রান্স। পানামা ও সুয়েজ খাল খনন, নির্মাণ এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে যে চুক্তি সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন লেখক থিওডর হার্ৎজেল।]

জমির এই ফটকাবাজারি (স্পেকুলেশন) থেকে বিপুল যে লাভ আসবে তার সবই কোম্পানির কাছে যাবে। কোম্পানি এই উদ্যোগের যে ঝুঁকি নেবে সেটির কারণে বিনিময়ে সে এই অনির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পেতে বাধ্য। কোনো উদ্যোগে যখন ঝুঁকি থাকে তখন যারা এই ঝুঁকি বহন করে মুনাফা অবশ্যই তাদেরও মুক্তহস্তেই দিতে হবে; কিন্তু অন্য কোনো অবস্থাতেই তাদের লাভের অনুমতি দেওয়া হবে না। ঝুঁকি ও লাভের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেই আর্থিক নৈতিকতা বিদ্যমান থাকে।

নির্মাণ

কোম্পানি এভাবে বাড়িঘর ও এস্টেট বিনিময় করবে। যারা জমির মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের যে কারো কাছে অবশ্যই এটা সহজবোধ্য হতে হবে যে জমিকে উপযোগী করার ফলে কোম্পানি এ থেকে লাভ করতে বাধ্য। শহর ও দেশের জমির খণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মূল্য বৃদ্ধির জন্য আশপাশের এলাকাগুলোতে নির্মাণ কাজ চালানো হয় না। প্যারিস শহরের সম্প্রসারণের কাজ যারা করেছিল তারা এক্ষেত্রে খুব সহজভাবে দারুণ বুদ্ধিমত্তা দেখিয়েছিল। শহরের একবারে শেষ বাড়িটির পরপরই নতুন বাড়ি নির্মাণের পরিবর্তে তারা ওই বাড়ির লাগোয়া জমি কিনে নিল এবং ওই জমির একেবারে শেষপ্রান্ত থেকে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করল। তাদের নির্মাণের এই বিপরীত ক্রমটি খুব দ্রুতই তাদের নির্মিত ভবনের সাইটগুলোর মূল্য বাড়িয়ে দিল। বাইরের চক্র সম্পন্ন করার পর, তারা কিন্তু প্রান্তের দিকের পুরো নির্মাণকাজ শেষ করল না, তারা অত্যন্ত দামি এই শহরের মধ্যখানের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করল।

কোম্পানি কি নিজেরাই ভবন নির্মাণ চালাবে, নাকি স্বাধীন স্থপতিদের নির্মাণের ভার দিয়ে দেবে? এক্ষেত্রে দুটোই হতে পারে। এক্ষেত্রে কাজের একটা বিশাল যজ্ঞ আছে যেটা শিগগিরই দেখানো হবে, কোম্পানির মাধ্যমে তা হবে না; কিন্তু জীবনের জন্য উন্নত ও সুখকর পরিস্থিতি গড়ে তোলার এই কাজে বাড়াবাড়ি রকম ব্যয় করা ঠিক হবে না। নির্মাণের জন্য সাইটগুলো যখন বাছাই করা হয়ে যাবে তখন আমাদের ভূতাত্ত্বিকরা নির্মাণসামগ্রীর বিষয়গুলোর দিকে নজর দেবেন।

এক্ষেত্রে নির্মাণনীতি কী হবে?

কর্মীদের বাসস্থান

শ্রমিকদের বাসস্থান (যার মধ্যে সব ধরনের কর্মীর বাসস্থান অন্তর্ভুক্ত) কোম্পানির নিজস্ব ঝুঁকি এবং খরচে নির্মাণ করা হবে। তাদের এই বাসস্থান ইউরোপীয় শহরগুলোর শ্রমিকদের সেই বিষণ্ণ ব্যারাকের মতো হবে না, কারখানার চারপাশে থাকা সেই ঝুপড়িগুলোর মতো হবে না; নিশ্চয়ই সেগুলোর একটি অভিন্ন চেহারা থাকবে, কারণ কোম্পানি যেহেতু সমস্ত নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করবে সেহেতু কোম্পানিকে সেগুলো অবশ্যই সস্তায় নির্মাণ করতে হবে। ছোট ছোট বাগানের ভিতর বিচ্ছিন্ন বাড়িগুলো মিলে প্রতিটি এলাকায় এক একটি আকর্ষণীয় স্তবক গড়ে তুলবে। ভূমির প্রাকৃতিক গঠন আমাদের তরুণ স্থপতিদের মধ্যে (যাদের চিন্তাভাবনা এখনও গতানুগতিক কাজের দ্বারা সংকোচিত হয়ে পড়েনি) উদ্ভাবনী শক্তিকে জাগিয়ে তুলবে। এমনকি জনগণ যদি পুরো পরিকল্পনাটি না-ও নেয়, তবে তারা যেকোনো মাত্রায় তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থাকে একটি যুথবদ্ধতা দেবে। এক্ষেত্রে উপাসনাগৃহটি অনেক দূর থেকেও দেখা যাবে, কারণ এটিই আমাদের একমাত্র প্রাচীন বিশ্বাস যা আমাদের একসাথে রেখেছে। শিশুদের জন্য হালকা, আকর্ষণীয়, স্বাস্থ্যকর স্কুল থাকবে, যেটি পরিচালিত হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আধুনিক পদ্ধতিতে। কর্মীদের জন্য অব্যাহত-বিদ্যালয় (কন্টিনিউয়েশন স্কুল) থাকবে, যে স্কুলগুলো তাদের বৃহত্তর প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষা দেবে এবং কাজের যন্ত্রপাতি ও উপাদানের সঙ্গে পরিচিত করে তুলবে। কর্মীদের বিনোদনের যথার্থ জায়গা থাকবে যেটির দায়দায়িত্ব থাকবে ইহুদি সোসাইটির হাতে।

যা হোক, আমরা এখন কেবল ভবনগুলোর কথাই বলছি, সেগুলোর ভেতরে কী থাকতে পারে তা বলছি না।

আমি বলেছিলাম যে কোম্পানি সস্তায় কর্মীদের বাসস্থান তৈরি করবে। কোম্পানির কাছে সাইটগুলোর মালিকানা এবং প্রচুর নির্মাণসামগ্রী থাকবে- এসব কারণেই শুধু সস্তায় বাসস্থান নির্মাণ করবে তা নয়, এ কারণেও যে কোম্পানিকে কর্মীদেরও কোনো মজুরি দিতে হবে না।

আমেরিকান কৃষকরা গৃহনির্মাণে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে। এই ব্যবস্থা শিশুসুলভ, একেবারেই তাদের নির্মিত ব্লক হাউসগুলোর মতোই নড়বড়ে, কিন্তু এই ব্যবস্থাকেই আরও উন্নত করে তোলা যেতে পারে।

অদক্ষ শ্রমিক

আমাদের অদক্ষ শ্রমিকরা প্রথমে আসবে রাশিয়া ও রুমানিয়ার বিশাল ভান্ডার থেকে। গৃহনির্মাণে তারা অবশ্যই পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। শুরুতে এত লোহা পাওয়া যাবে না। শুরুতে তারা কাঠ দিয়ে নির্মাণ কাজ চালাবে। পরবর্তীতে এই অস্থায়ী গৃহগুলো আর থাকবে না, আরও উন্নত বাসগৃহ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।

আমাদের অদক্ষ শ্রমিকেরা প্রথমে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক শ্রমের মাধ্যমে এই আশ্রয়গুলো নির্মাণ করবে এবং পরে তারা তাদের কাজের বিনিময়ে এই বাড়িগুলো স্থায়ী সম্পত্তি হিসেবে পাবে— তবে তা অবিলম্বে নয়, তিন বছরের ভালো আচরণের পরে। এইভাবে আমরা উদ্যমী ও সক্ষম পুরুষদের সুরক্ষিত করব এবং সুশৃঙ্খলভাবে এদের তিন বছর ধরে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবনের জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।

আমি আগেই বলেছি যে কোম্পানিকে এই অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে না। তাহলে তারা বাঁচবে কীভাবে?

সামগ্রিকভাবে, আমি ট্রাক সিস্টেমেরo পক্ষে নই, তবে এই প্ৰথম বসতিস্থাপনকারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করতে হবে। কোম্পানি তাদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। যেভাবেই হোক না কেন, ট্রাক সিস্টেম শুধু প্রথম কয়েক বছর চলবে। এতে করে শ্রমিকরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জমির মালিকদের মতো লোকদের শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমাদের লোকদের মধ্যে যারা নিজেদের হকার ও ফেরিওয়ালা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে তাদের বিরত রাখবে। কোম্পানি মাতাল ও উচ্ছৃঙ্খলদেরও বিরত রাখবে। বন্দোবস্তের প্রথম মেয়াদে মজুরি না থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের পরে মজুরির ব্যবস্থা করা হবে।

[১৪ ট্রাক সিস্টেমের: কাজের বিনিময়ে অর্থ নয়, খাদ্য ও পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা।]

দিনে সাত ঘণ্টা কাজ

নিয়মিত কর্মদিবসে কাজ করতে হবে সাত ঘণ্টা।

এর অর্থ এই নয় যে কাঠ কাটা, খনন করা, পাথর ভাঙা এবং আরও একশত দৈনন্দিন কাজ এই সাত ঘণ্টায় করতে হবে। আসলে তা নয়। কাজ হবে চৌদ্দ ঘণ্টা। শিফট ভাগ করা থাকবে। প্রতিটি শিফট হবে সাড়ে তিন ঘণ্টার। এসব ক্ষেত্রে সংগঠন হবে সামরিক চরিত্রের; নির্দেশনা, পদোন্নতি ও পেনশন থাকবে। পেনশন প্রদানের উপায় পরে আরও ব্যাখ্যা করা হবে।

একজন সুস্থ মানুষ সাড়ে তিন ঘণ্টায় নিবিষ্টতার সাথে অনেক কাজ করতে পারে। একই দীর্ঘতার সময়ের বিরতিতে— যা সে বিশ্রামের জন্য, পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য এবং নির্দেশনার আওতায় শিক্ষার জন্য ব্যয় করবে— সে আবার কাজের জন্য বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এই ধরনের শ্রমে বিস্ময়কর সুফল মেলে।

দিনের সাত ঘণ্টার কাজ যৌথশ্রমে এভাবে মোট চৌদ্দ ঘণ্টা হয়। এক দিনে এর চেয়ে বেশি করা যাবে না।

আমি নিশ্চিত যে দিনে সাত ঘণ্টা কাজের এই প্রক্রিয়া সাফল্যের সাথে শুরু করা খুবই সম্ভব। বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের এই ধরনের উদ্যোগের কথা সবার জানা। অগ্রগামী কিছু রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ, যারা এ বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন, তারা ঘোষণা করেছেন যে এক্ষেত্রে দিনে পাঁচ ঘণ্টাই যথেষ্ট। ইহুদি সোসাইটি এবং ইহুদি কোম্পানি, যেকোনো ক্ষেত্রে, নতুন ও ব্যাপক পরীক্ষা চালাবে, যা বিশ্বের অন্যান্য জাতিরও কাজে লাগবে। দিনে সাত ঘণ্টা কাজের বিষয়টি প্রায়োগিক দিক থেকে প্রমাণিত হলে তা আমাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রে আইনগতভাবে বৈধ এবং নিয়মিত কর্মঘণ্টা হিসেবে চালু করা হবে।

এরই মধ্যে কোম্পানি কর্মীদের সবসময় দিনে সাত ঘণ্টা কাজের অনুমতি দেবে এবং এই অবস্থানে তারা সবসময় সংহত থাকবে।

সাত ঘণ্টার এই কর্মদিবস হবে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে আমাদের লোকদের প্রতি একটা আহ্বান। আমাদের প্রতিশ্রুত ভূখণ্ডের জন্য সবাইকে অবশ্যই এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।

যারাই দিনে সাত ঘণ্টার বেশি কাজ করবে তাদের অতিরিক্ত সময়ের জন্য নগদ অর্থে মজুরি দেওয়া হবে।

সব চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে এবং পরিবারের কাজ করতে অক্ষম সদস্যদেরও প্রতিস্থাপিত ও কেন্দ্রীয় জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে দেখে সে হয়তো সামান্য অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে।

মিতব্যয়িতাকে, যা ইতিমধ্যেই আমাদের জনগণের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হবে, কারণ এটি প্রথমে ব্যক্তির জীবনমানের উন্নয়ন সহজতর করবে; এবং দ্বিতীয়ত, সঞ্চিত অর্থে ভবিষ্যতের ঋণের জন্য একটি বিশাল রিজার্ভ তহবিল গড়ে উঠবে।

ওভারটাইম অনুমোদনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শপত্র প্রয়োজন হবে এবং তা তিন ঘণ্টার বেশি হবে না। কারণ আমাদের লোকরা নতুন দেশে কাজ করার জন্য ভিড় করবে এবং বিশ্ব তখন দেখবে যে, আমাদের লোকরা ভীষণ পরিশ্রমী মানুষ।

পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন, এই আশঙ্কায় আমি ট্রাক সিস্টেমের নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব না। বস্তুত, কোনো প্রক্রিয়ারই বিস্তারিত বিবরণ এখানে দিতে যাব না। নারীদের কঠিন কোনো শ্রম করতে দেওয়া হবে না, বা ওভারটাইম করার অনুমতিও দেওয়া হবে না। গর্ভবতী নারীদের কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না এবং তাদের ট্রাকের মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হবে। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হোক শক্তিশালী পুরুষ ও নারী।

শুরু থেকেই আমরা যেমনটা চেয়েছি, শিশুদের আমরা সেভাবেই শিক্ষা দেব; কিন্তু এখানে এ বিষয়ে আমি আর বিস্তারিত বলতে যাচ্ছি না।

শ্রমিকদের বাসস্থান, অদক্ষ শ্রমিক এবং তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে আমার মন্তব্য আমার বাকি পরিকল্পনার চেয়ে খুব বেশি ইউটোপীয় নয়। আমি যা বলেছি তার সবকিছুই ইতিমধ্যেই বাস্তবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তবে তা হয়েছে একেবারে ছোট পরিসরে, যা চোখেও পড়েনি, উপলব্ধও হয়নি। ‘লা অ্যাসিস্টেন্স পার লে ট্রাভেইল’[১৫] সম্পর্কে আমি প্যারিসে জানতে ও বুঝতে শিখেছিলাম। ইহুদি সমস্যা সমাধানে আমার জন্য অনেক উপকারী ছিল।

[১৫ লা অ্যাসিস্টেন্স পার লে ট্রাভেইল: কাজের বিনিময়ে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা।]

শ্রমের বিনিময়ে ত্রাণ

শ্রমের বিনিময়ে ত্রাণের ব্যবস্থা এখন প্যারিসসহ ফ্রান্সের অন্য অনেক শহরে, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও আমেরিকায় খুব ছোট পরিসরে চালু আছে। এটির সর্বাধিক সম্প্রসারণ সম্ভব।

শ্রমের বিনিময়ে ত্রাণের নীতি কী হবে?

নীতিট হলো: প্রতিটি অভাবী মানুষকে দক্ষতা লাগে না এমন সহজ কাজ দেওয়া, যেমন কাঠ কাটা কিংবা প্যারিসে গৃহস্থালি কাজের চুলা জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত ফ্যাগট কাটা। চরিত্র নষ্ট হওয়ার আগেই যে অপরাধ করা হয়েছে সে রকম অপরাধীদের জন্য এটি এক ধরনের কারাশ্রম। মানুষকে অনিচ্ছাকৃত অপরাধ থেকে বিরত রাখতে তা করা হয়। তাদের কাজ দেওয়া হয় এবং কাজের ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা আছে কি না, তা যাচাই করা হয়। অনাহার যাতে কখনোই মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করতে না পারে; কেননা এই ধরনের আত্মহত্যা একটি সভ্যতার জন্য গভীরতম কলঙ্ক, যে সভ্যতা ধনী ব্যক্তিদের তাদের কুকুরের দিকে খাদ্যের টুকরো ছুড়ে দেওয়ার অনুমোদন দেয়।

শ্রমের বিনিময়ে ত্রাণ এভাবে প্রত্যেককে কাজ প্রদান করে; কিন্তু এই ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি আছে; নিযুক্ত অদক্ষ শ্রমিকদের উৎপাদনের ওপর পর্যাপ্ত পরিমাণে বড় চাহিদা নেই, তাই যারা তাদের নিয়োগ দেয় তাদের ক্ষতি হয়, যদিও এটি সত্য যে সংস্থাটি জনহিতকর বলে এই ক্ষতির জন্য প্রস্তুতই থাকে; কিন্তু লাভের ব্যাপারটি তো আসলে কাজের জন্য প্রদত্ত মূল্য ও কাজটির প্রকৃত মূল্যের পার্থক্যের মধ্যে থাকে। এক্ষেত্রে যা হয়, ভিক্ষুককে দুটি পয়সা দেওয়ার পরিবর্তে, প্রতিষ্ঠান তাকে কাজ সরবরাহ করে, যাতে তার দুটি পয়সা লোকসান হয়। সে দুটি সস হারায়। কিন্তু এর মাধ্যমে একই সময়ে প্রতিষ্ঠান একজন অকম্মা ভিক্ষুককে একজন সৎ উপার্জনকারীতে রূপান্তরিত করে। যে সম্ভবত ১ ফ্রাঁ ও ৫০ সেন্ট রোজগার করেছে। ১০ সেন্টের ১৫০ সেন্ট। অর্থাৎ যে কল্যাণে অপমানজনক কিছুই নেই তার গ্রহীতা তা পনেরো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে! অর্থাৎ এক হাজার কোটির জন্য ১৫ হাজার কোটি!

প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই ১০ সেন্ট হারায়। ইহুদি কোম্পানি কিন্তু এক হাজার মিলিয়ন হারাবে না; এটি এই ব্যয় থেকে প্রচুর মুনাফা করবে। এর একটা নৈতিক দিকও আছে। শ্রমের বিনিময়ে ত্রাণের ক্ষুদ্র ব্যবস্থা যা এখন বিদ্যমান রয়েছে শিল্পের মাধ্যমে ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা করে এমন একটা সময় পর্যন্ত যতক্ষণ না কর্মহীন লোকটি তার সক্ষমতা অনুযায়ী তার পুরোনো পেশায় কিংবা নতুন কোথাও উপযুক্ত একটি পদ খুঁজে পায়। নতুন কর্মক্ষেত্র খুঁজে নিতে প্রতিদিন তাকে কয়েক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। এ কাজে প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে সহায়তা করে।

এই ছোট সংগঠনগুলোর ত্রুটি হচ্ছে, যত দূর, কাঠ ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের প্রতিযোগিতায় নামতে নিষেধ করা হয়েছে, ইত্যাদি। কাঠ ব্যবসায়ীরা ভোটার; তারা প্রতিবাদ করবে এবং তাদের প্রতিবাদ ন্যায্যতা পাবে। রাষ্ট্রীয় কারাগারে শ্রমের সাথেও প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কারণ রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার অপরাধীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, একটি পুরোনো-প্রতিষ্ঠিত সমাজে কাজের মাধ্যমে সহায়তার (লা অ্যাসিস্টেন্স পার লে ট্র্যাভেল) এই ব্যবস্থা সফলভাবে প্রয়োগের সুযোগ খুব কম।

কিন্তু নতুন সমাজে এই সুযোগ আছে।

সর্বোপরি, বসতি স্থাপনের প্রথম কঠিন কাজ, রাস্তা তৈরি, গাছ লাগানো, মাটি সমতল করা, রেলপথ নির্মাণ, টেলিগ্রাফ স্থাপন করা ইত্যাদির জন্য আমাদের বিপুলসংখ্যক অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। এর সবই সম্পাদিত হবে একটি বৃহৎ ও পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী।

বাণিজ্য

নতুন দেশে নিয়ে যাওয়া শ্রম স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য তৈরি করবে। প্রথম বাজারগুলো কেবল জীবনের নিতান্ত প্রয়োজনীয়তা জিনিসগুলো সরবরাহ করবে; গবাদি পশু, শস্য, কাজের জামাকাপড়, সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র— মাত্র কয়েকটি জিনিসের কথা উল্লেখ করলাম। এগুলো আমরা প্রথমে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে সংগ্রহ করতে বাধ্য হব; কিন্তু আমরা নিজেদের এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীন করে তুলব। ইহুদি উদ্যোক্তারা শিগগিরই নতুন দেশ যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে তা উপলব্ধি করবে।

কোম্পানির কর্মকর্তাদের সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে জীবনের আরও পরিমার্জিত প্রয়োজনীয়তার প্রবর্তন করবে। (কর্মকর্তাদের মধ্যে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছে, যারা সবসময় আমাদের উপনিবেশের লোকদের দশভাগের এক ভাগ হবে। তাদের এই সংখ্যা বিদ্রোহ দমনের জন্য যথেষ্ট হবে, কারণ, আমাদের উপনিবেশের অধিকাংশ মানুষই শান্তিপূর্ণ জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়বে।)

ভালো অবস্থানে থাকা আমাদের কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রবর্তিত জীবনের পরিমার্জিত প্রয়োজনীয়তা একইসঙ্গে বাজার ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটাবে, যা নিজে থেকেই আরও উন্নত হতে থাকবে। ‘সেখানে’ যখনই নতুন বাসস্থান তৈরি হবে তখনই বিবাহিতরা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাবে, অবিবাহিতরা নিয়ে যাবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ইহুদিরা সবসময় এভাবেই গিয়েছে। খাবারের রুটি এবং মাথার ওপর ছাদ পাওয়ার সাথে সাথে তারা নিজেদের লোকদের ডেকে পাঠিয়েছে; কারণ, আমাদের পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়। ইহুদি সোসাইটি এবং ইহুদি কোম্পানি শুধু নৈতিকভাবে নয়, বস্তুগতভাবেও পরিবারের যত্ন নেওয়া এবং পারিবারিক বন্ধনকে জোরদার করার ক্ষেত্রে যৌথভাবে ভূমিকা রাখবে। কর্মকর্তারা বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানের জন্য অতিরিক্ত বেতন পাবে, কারণ সেখানে যারা আছে আর যারা আসবে তাদের সবাইকে আমাদের প্রয়োজন।

অন্যান্য শ্রেণির জন্য আবাসন

শ্রমিকদের নিজেদের নির্মিত আবাসনের কথাই শুধু আগে বর্ণনা করেছি এবং অন্যান্য শ্রেণির আবাসনের কথা একেবারেই উল্লেখ করিনি। এবার তাদের আবাসনের কথা বলব। কোম্পানির স্থপতিরা দরিদ্র শ্রেণির নাগরিকদের জন্যও আবাসন নির্মাণ করবেন, যা নগদ অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ধরনের শ’খানেক বাড়ি তৈরি করা হবে, এবং অবশ্যই, পুনরাবৃত্তিও থাকবে। সুন্দর এই বাড়িগুলো আমাদের প্রচারণার অংশ হবে। বাড়িগুলোর নির্মাণের গুণগত মান কোম্পানি নিশ্চিত করবে। এই বাড়িগুলো নির্দিষ্ট একটি দামে বসতিস্থাপনকারীদের কাছে বিক্রি করে প্রকৃতপক্ষে কোনো লাভই হবে না। এই বাড়িগুলো কোথায় তৈরি করা হবে? স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো নিয়ে আলোচনার সময় আমরা তা বলব।

কোম্পানি ভবনের কাজ থেকে লাভ করতে চায় না, লাভ করছে শুধু জমি থেকে। এটা দেখে, আশা করা যায়, অনেক স্থপতি ব্যক্তিগত চুক্তির মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণে এগিয়ে আসবে। ফলে জমির দাম বাড়বে। এতে করে বিলাসিতারও প্রবর্তন ঘটবে এবং অনেক উদ্দেশ্যও হাসিল হবে। বিলাসিতা শিল্পকলা ও শিল্প-কারখানাকে উৎসাহিত করে, বড় ভূসম্পত্তির ভবিষ্যতের উপবিভাগের পথ প্রশস্ত হয়।

ধনী ইহুদিরা, যারা এখন সাবধানে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র গোপন রাখতে এবং আনত পর্দার আড়ালে তাদের উৎসবের বিষণ্ণ সামগ্রী আড়াল করতে বাধ্য, তারা ‘সেখানে’ শান্তিতে তাদের সম্পত্তি ভোগ করতে সক্ষম হবে। তারা যদি অভিবাসনের এই প্রকল্প পরিচালনায় সহযোগিতা করে, তাহলে তাদের মূলধন পুনর্বাসিত করা হবে এবং তা নজিরবিহীন এক উদ্যোগকে উন্নীত করার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। ধনী ইহুদিরা নতুন বসতিতে তাদের প্রাসাদগুলো পুনর্নির্মাণ শুরু করলে, যা ইউরোপে শুরু হয়েছে, যেদিকে ঈর্ষান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে তারা, শিগগিরই সেখানে সুন্দর আধুনিক বাড়িতে বসবাস করা ফ্যাশনেবল হয়ে উঠবে

ব্যবসা গুটিয়ে আনার কিছু উপায়

ইহুদি কোম্পানি ইহুদিদের (নন-ট্রান্সফারেবল গুডস) অ-হস্তান্তরযোগ্য (বা স্থাবর) পণ্যের গ্রহণকারী এবং প্রশাসক হতে চায়। বাড়িঘর ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে এর পদ্ধতিগত উপায়গুলো সহজেই কল্পনা করা যেতে পারে, তবে ব্যবসা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এটি কী পদ্ধতি অবলম্বন করবে? এক্ষেত্রে প্রয়োগ করার মতো অসংখ্য প্রক্রিয়া রয়েছে, সব প্রক্রিয়া এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। এসবের কোনোটিই বড় কোনো অসুবিধা হয়ে দাঁড়াবে না, কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে তার নিজ জেলার কর্মকর্তাদের সাথে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়ে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে, যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের চেয়ে ব্যবসার মালিকের ব্যক্তিগত কার্যক্রমই মুখ্যত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই প্রক্রিয়া খুব সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব। কোম্পানি অভিবাসী ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র তৈরি করবে; তার পণ্যগুলোর জন্য এক টুকরো জমি বরাদ্দ দেবে এবং সেইসাথে যন্ত্রপাতিও ধার দেবে। ইহুদিরা জীবিকা উপার্জনের যেকোনো উপায়ের সাথে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য পরিচিত এবং তারা দ্রুতই একটি নতুন শিল্প-কারখানা চালানোর প্রক্রিয়া রপ্ত করে নেবে। অনেক ক্ষুদ্ৰ ব্যবসায়ী এভাবে ক্ষুদ্র জমির মালিকে পরিণত হবে। কোম্পানি দরিদ্রতম অভিবাসীদের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে যে ক্ষতি হবে তা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকবে। কারণ এর ফলে বিশাল জমিকে বিনামূল্যে বাসযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে ওই অভিবাসীরা উৎসাহিত হবে। এতে করে সংলগ্ন বিশাল বিশাল জমিগুলোর মূল্যও বেড়ে যাবে।

মাঝারি ব্যবসায় গুরুত্বের দিক থেকে কখনো পণ্য ও প্রতিষ্ঠান এবং মালিকের ব্যক্তিগত কার্যকলাপ দুটোই সমান। এক্ষেত্রে কোথাও আবার পণ্য ও প্রতিষ্ঠানই মুখ্য, আবার কোথাও মালিকের যে বৃহত্তর সংযোগ তা অ- হস্তান্তরযোগ্য। এসব ক্ষেত্রেও বিভিন্ন উপায়ে ব্যবসা গুটিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইহুদিদের ছেড়ে দেওয়া অবস্থানে খ্রিস্টান নাগরিকদের অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের সুযোগ আছে। প্রস্থানকারী ইহুদি তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক কৃতিত্ব হারাবে না, তবে এটি তার সাথেই বহন করবে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নতুন দেশে এটির যথার্থ প্রয়োগ করবে। ইহুদি কোম্পানি তার জন্য ব্যাংকে একটি চলতি হিসাব খুলবে।

তিনি চাইলে আসল ব্যবসার সুনাম বিক্রি করতে পারেন বা কোম্পানির কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপকদের অধীনে তা হস্তান্তর করতে পারেন। ব্যবস্থাপকরা ব্যবসা ভাড়া নিতে পারে বা কিনতে পারে, এবং এর জন্য কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে পারে; কিন্তু কোম্পানি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে অভিবাসীদের তত্ত্বাবধানে কিউরেটর হিসেবে কাজ করে এবং দেখে যে সব পাওনা-দাওনা ঠিকভাবে সংগ্রহ হচ্ছে কি না।

কোনো ইহুদি যদি তার ব্যবসা বিক্রি করতে না পারে বা কোনো প্রতিনিধির কাছে এটির দায়ভার ন্যাস্ত করতে চায় কিংবা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে সে যেখানে আছে সেখানেই থাকতে পারে। যে ইহুদিরা থাকবেন তাদের আর খারাপ হবে না, কারণ যারা চলে যাবে তাদের প্রতিযোগিতা থেকে তারা মুক্তি পাবে এবং “ইহুদিদের কাছ থেকে কিনবেন না’ এই ইহুদিবিদ্বেষী চিৎকার আর শুনতে হবে না।

অভিবাসী ব্যবসায়ী নতুন দেশে পুরোনো ব্যবসা চালাতে চাইলে একবারে শুরু থেকেই সে ব্যাপারে কাজ শুরু করতে পারবেন। এখানে আমি যা বলতে চাচ্ছি, তা একটি উদাহরণ দিলে আরও স্পষ্ট হবে। এক্স নামের ফার্ম শুকনো পণ্যের একটি বড় ব্যবসা চালায়। ফার্মের প্রধান দেশত্যাগ করতে চায়। সে তার ভবিষ্যতের আবাসস্থলে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা স্থাপন করে এবং সেখানে পণ্যের নমুনার স্টক পাঠাতে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমে বসতি স্থাপনকারী দরিদ্ররাই তার প্রথম গ্রাহক হবে, পরে উঁচু শ্রেণির অভিবাসীরা তাদের অনুসারী হবে। উঁচু শ্রেণির আবার উঁচু মানের পণ্য প্রয়োজন হবে এবং তাদের জন্য ব্যবসায়ী সেখানে তার শাখায় নতুন পণ্য পাঠাবে। মূল প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান থাকা অবস্থায়ই নতুন দেশের শাখা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হতে থাকে। যে কারণে এক্স ফার্মটি লাভজনক দুটি ব্যবসা চলমান অবস্থায়ই পুরনো দেশে ব্যবসার সমাপ্তি টানতে পারে। ব্যবসায়ী তার মূল ফার্মটি বিক্রি করে দিতে পারে কিংবা সেটির ব্যবস্থাপনা খ্রিস্টান প্রতিনিধির হাতে সমর্পণ করে নতুন দেশে নতুন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে চলে যায়।

আরও একটি বৃহত্তর উদাহরণ, ওয়াই অ্যান্ড সন বড় ব্যবসায়ী। তাদের নিজস্ব খনি ও কারখানা রয়েছে। বিশাল ও জটিল এই ব্যবসা কীভাবে তারা গুটিয়ে নেয়? এক্ষেত্রে প্রথমে যেটা হতে পারে, খনি এবং খনি সংশ্লিষ্ট সবকিছু যে রাষ্ট্রে আছে সেই রাষ্ট্র তা কিনে নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইহুদি কোম্পানি তা নিয়ে নিতে পারে। এক্ষেত্রে মালিককে নগদ অর্থ এবং নতুন দেশে জমি দিতে পারে। তৃতীয় পদ্ধতিটি হবে ওয়াই অ্যান্ড সনকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা। চতুর্থ পদ্ধতি হতে পারে, মূল স্বত্বাধিকারীদের অধীনেই ব্যবসা চালু থাকবে। যারা মাঝে মাঝেই বিদেশি হিসেবে নিজেদের ব্যবসায়িক সম্পদ পরিদর্শনে আসবেন। প্রত্যেক সভ্য দেশের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবসার আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে। ওপরের এই পরামর্শগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে নিয়মিতই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পঞ্চম এবং সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি, যেটি বিশেষভাবে লাভজনক হতে পারে, সেটির কথা আমি একটু উল্লেখ করব, কারণ, এই পদ্ধতি বর্তমানে খুব বেশি অনুসরণ করা হয় না। তবে আধুনিক সচেতনতা এই পদ্ধতি গ্রহণে প্রস্তুত হতে পারে। ওয়াই অ্যান্ড সন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি সংস্থা গঠন করবে, যারা আবার সীমিত দায়ের (লিমিটেড লায়াবিলিটি) একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি গঠন করবে, সেটির কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে পারে। এই কো-অপরাটিভ সোসাইটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সাহায্য নিয়ে ব্যবসার মূল স্বত্বাধিকারীকে প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের খুব বেশি সুদও বহন করতে হবে না।

কর্মচারীরা ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করে দেবে। এই ঋণ হতে পারে সরকার, ইহুদি কোম্পানি কিংবা ব্যবসার স্বত্বাধিকারীদের কাছে। পুরো প্রক্রিয়াটি এইভাবে এগিয়ে নিতে হবে। ইহুদি কোম্পানি বড় বিষয়গুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট বিষয়গুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে হস্তান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকবে। ইহুদিরা যখন নিঃশব্দে অভিবাসন নিতে থাকে এবং তাদের নতুন আবাসস্থল প্রস্তুত করতে থাকে তখন ইহুদি কোম্পানিটি বৃহত্তম নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তাদের প্রস্থানের আয়োজন করে, পরিত্যক্ত সম্পত্তির দায়িত্ব নেয়, দৃশ্যমান ও স্পর্শমান নিজস্ব সম্পত্তিসহ (ভিজিবল অ্যান্ড ট্যানজিবল প্রপার্টি) স্থানান্তরের প্রক্রিয়া যথার্থ করার নিশ্চয়তা দেয় এবং যারা আগেই বসতি স্থাপন করেছে তাদের স্থায়ী নিরাপত্তা প্রদান করে।

কোম্পানির নিরাপত্তা

দেশত্যাগের কারণে তারা দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হবে না— এ ব্যাপারে কোম্পানি তাদের কী ধরনের নিশ্চয়তা দেবে?

আমি আগেই বলেছি যে সৎ ইহুদিবিদ্বেষীরা তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার সময় আমাদের এস্টেট হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণে আমাদের কর্মকর্তাদের সাথে একত্রে কাজ করবে।

কিন্তু করদাতাদের একটি অংশকে হারানোর কারণে রাষ্ট্রের রাজস্ব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নাগরিকদের এই অংশটি নাগরিক হিসেবে খুব একটা দাম না পেলেও রাষ্ট্রের অর্থের বিবেচনায় কিন্তু তারা খুব মূল্যবান। রাষ্ট্রের তো এই ক্ষতির একটা ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমরা ইহুদিরা ব্যবসায়িক দক্ষতা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে যে বাণিজ্য গড়ে তুলেছিলাম তা ছেড়ে দিয়ে, আমাদের খ্রিস্টান সহ-নাগরিকদের আমাদের ছেড়ে দেওয়া জায়গাজমিতে অবস্থান নিতে দিয়ে বৃহত্তর সমৃদ্ধির দিকে বহুসংখ্যক লোককে এগিয়ে যাওয়ার সুবিধা করে দিতে পারি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এবং খুবই অতুলনীয় উপায়ে। এটি আমাদের দিক থেকে তাদের জন্য সুবিধা প্রদানের এক ধরনের পরোক্ষ প্রস্তাবনা। ফরাসি বিপ্লবেরও, ছোট পরিসরে হলেও, এই ধরনের কিছু ফল মেলেছিল। তবে সে ফল মিলেছিল ফ্রান্সের প্রতিটি প্রদেশে গিলোটিনে এবং ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তপাতের মাধ্যমে। অধিকন্তু, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত এবং অর্জিত অধিকারগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং ধূর্ত ক্রেতারাই কেবল রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ক্রয় করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছিল।

ইহুদি কোম্পানি তার কর্মপরিধির মধ্যে থাকা রাষ্ট্রগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধার প্রস্তাব দেবে। এটি সরকারকে প্রথমত, ইহুদিদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি প্রদানের প্রস্তাব দেবে এবং এক্ষেত্রে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করবে। সরকার আবার সুনির্দিষ্ট সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই জমির বন্ধুত্বপূর্ণ বরাদ্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।

দেশটির অভ্যন্তরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকদের সরাসরি অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের কাজে ইহুদি কোম্পানি সরকার ও সংসদকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

ইহুদি কোম্পানি বৃহৎ করগুলোও দেবে। এটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হবে লন্ডনে, যাতে এটি এমন একটি শক্তির আইনি সুরক্ষার অধীনে থাকবে যে দেশটি বর্তমানে ইহুদিবিদ্বেষী নয়। কোম্পানি যদি সরকারি বা আধা সরকারি সমর্থন লাভ করে তবে সবক্ষেত্রে তারা ব্যাপকভিত্তিক কর প্রদান করবে। এই লক্ষ্যে এটি সবখানে করের আওতাধীন শাখা স্থাপন করবে। অধিকন্তু, এটি পণ্যের দ্বিগুণ স্থানান্তরের জন্য দ্বিগুণ হারে শুল্ক প্রদান করবে। এমনকি লেনদেনের ক্ষেত্রেও যেখানে কোম্পানি নিতান্ত একটি রিয়েল এস্টেট এজেন্সি ছাড়া আর কিছু নয় সেখানে এটি সাময়িকভাবে শুধু পারচেজার (ক্রেতা) হবে এবং জমির নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী অধিকারী হিসেবে নিবন্ধিত হবে।

এগুলো এমন কোনো বিষয় নয় যে হিসাব করা যায় না। কোনো ধরনের ব্যর্থতার আশঙ্কা ছাড়া কোম্পানি প্রতিটি ক্ষেত্রে কতদূর যেতে পারবে তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোম্পানি যেকোনো বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে নিঃসংকোচে আলোচনা করতে পারবে। অর্থমন্ত্রীও আমাদের উদ্যোগের বন্ধুত্বপূর্ণ শক্তিকে স্বীকৃতি দেবেন। সফলতা অর্জনের জন্য এই মহান উদ্যোগে সব ধরনের সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দেবেন।

পণ্য ও যাত্রী পরিবহন থেকে যে আরও এবং প্রত্যক্ষ মুনাফা আসবে তা সরকারের কাছে জমা হবে এবং রেলওয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হলে লাভালাভের হিসাব পেতেই খুব দেরি হবে না। আর এসব যদি প্রাইভেট কোম্পানির মালিকানাধীন হয় তাহলে ইহুদি কোম্পানিকে অনুকূল শর্তাবলির মাধ্যমে তা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে, ব্যাপকভিত্তিক পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পরিবহনকারীকে ঠিক যেমন সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের লোকজনের মালামাল পরিবহনের খরচ যতটা সম্ভব কম রাখতে হবে, কারণ ভ্রমণকারীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মালামালের পরিবহন খরচ নিজেরাই বহন করবে। মধ্যবিত্তদের জন্য কুক’স টিকিটের[১৬] ব্যবস্থা থাকবে। অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা অভিবাসী ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে। যাত্রী ও পণ্য কমানোর মাধ্যমে কোম্পানি নিশ্চয়ই একটা ভালো ব্যবস্থা করবে; কিন্তু এক্ষেত্রে, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও, একটা নীতি কোম্পানিকে মেনে চলতে হবে। তারা খরচের চেয়ে খুব বেশি কামাই করার জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় টিকিটের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে না।

[১৬ কুক’স টিকিট: থমাস কুক প্রবর্তিত টিকিট ব্যবস্থা। যে টিকিট দিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্যাকেজ সুবিধা পাওয়া যায়।]

অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থার ওপর ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ আছে; এবং পরিবহন ব্যবসা প্রথমত, ইহুদি কোম্পানির হাতে আসা প্রয়োজন হবে এবং এই কোম্পানির মাধ্যমেই প্রথমত, এটির অবসায়ন হতে হবে। পরিবহন ব্যবসার প্রকৃত মালিকরা হয় কোম্পানির আওতায় আসবেন কিংবা ‘সেখানে’ নিজেদের স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন। নবাগতদের নিশ্চয়ই তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে এবং তাদের একটি আয়যোগ্য পেশা থাকতে হবে, জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা অবশ্যই তা সেখানে করতেও পারবে। উদ্যোগ্যের এই উদ্দীপনারও যাত্রা শুরু হবে। বিরাট এই অভিযানের সবকিছু বর্ণনা করা অপ্রয়োজনীয়। অনেক দক্ষ মানুষের মূল পরিকল্পনা থেকে বিচক্ষণতার সাথে এগুলো বের হয়ে আসবে, যারা নিশ্চিতভাবে সর্বোত্তম পদ্ধতি অর্জনের জন্য মনোনিবেশ করবে।

কোম্পানির কিছু কার্যক্রম

অনেক কাজই পরস্পর সংশ্লিষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নতুন বসতিতে কোম্পানি ধীরে ধীরে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে, একেবারে শুরুর দিকে অবশ্যই সেটিকে একেবারে সেকেলে মনে হবে। পোশাক, কাপড় এবং জুতা- শুরুতে আমাদের গরিব অভিবাসীদের জন্য এসব উৎপাদন করা হবে। নতুন এই পোশাকগুলো ইউরোপের বিভিন্ন অভিবাসন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে। তাদের এই পোশাক খয়রাতি হিসেবে দেওয়া হবে না। তা করলে তাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগবে। পুরোনো কাপড়চোপড়ের বিনিময়ে তাদের নতুন এই পোশাকগুলো দেওয়া হবে। এতে করে কোম্পানির যদি কোনো লোকসান হয় সেই লোকসানকে বাণিজ্যিক ক্ষতি হিসেবে ধরা হবে। যাদের একেবারেই কোনো অর্থ থাকবে না তারা ন্যায্য হারের মজুরির মাধ্যমে ওভারটাইমে কাজ করে কোম্পানির কাছে তাদের যে ঋণ তা পরিশোধ করে দেবে।

বিদ্যমান অভিবাসন সমিতিগুলো মূল্যবান সহযোগিতা দিতে সক্ষম হবে, কারণ তারা তা করবে কোম্পানির বসতি স্থাপনকারীদের জন্য, যা তারা করেছিল প্রস্থান করছে এমন সব ইহুদিদের জন্য। সহযোগিতার ধরন কেমন হবে তা সহজে নির্ধারণ করা যাবে।

এমন কি বসতি স্থাপনকারী দরিদ্রদের পোশাকেরও একটা প্রতীকী অর্থ থাকতে হবে। তা হবে— ‘আপনি এখন এক নতুন জীবনে প্রবেশ করছেন। প্রস্থানের অনেক আগে থেকে এবং যাত্রার সময়টাতে প্রার্থনা, জনপ্রিয় বক্তৃতা, অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নির্দেশনা, নতুন আবাসস্থলের স্বাস্থ্যবিধি-সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং তাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনার মাধ্যমে গুরুগম্ভীর কিন্তু উৎসবমুখর প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে কি না, তা ইহুদি সোসাইটিকে নিশ্চিত করতে হবে।

‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ [১৭] হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। পৌঁছানোর পর আমাদের প্রধান কর্মকর্তারা অভিবাসীদের যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে নতুন ভূমিতে স্বাগত জানাবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বোধের মতো বিজয়োল্লাস করা যাবে না। প্ৰতিশ্ৰুতি ভূমি এখনো তো জয় করা হয়নি; কিন্তু দরিদ্র এই লোকেরা দেখবে যে তারা তাদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে।

[১৭ প্ৰতিশ্ৰুত ভূমি: পূর্বে উল্লেখিত টীকায় বাইবেলে ক্যানানের ঈশ্বর প্রতিশ্রুত ভূমি সম্পর্কে বলা হয়েছে।]

যথাযথ সাংগঠনিকতা ছাড়া কোম্পানির পোশাক কারখানাগুলো অবশ্যই কোনো পণ্য উৎপাদন করবে না। ইহুদি সোসাইটি স্থানীয় শাখা থেকে বসতি স্থাপনকারীদের সংখ্যা, প্রয়োজনীয়তা (রিক্রুটমেন্টস) ও আগমনের তারিখ সম্পর্কে তথ্য পাবে এবং ইহুদি কোম্পানিকে উপযুক্ত সময়ে এই ধরনের সব তথ্য জানাবে। এভাবে তাদের জন্য সব রকম পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব হবে।

কোম্পানির উন্নতি

ইহুদি কোম্পানি এবং ইহুদি সোসাইটির দায়িত্ব-কর্তব্যের বিষয়গুলো এই রূপরেখায় কঠোরভাবে আলাদা রাখা যাবে না। এই দুটি মহান সংস্থাকে ক্রমাগত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, কোম্পানিকে সোসাইটির নৈতিক কর্তৃত্ব ও সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হয়, ঠিক যেমন সোসাইটিও কোম্পানির বৈষয়িক সহায়তা ছাড়া চলতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ প্রথমে কম রাখা হবে যাতে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়; এবং কোম্পানি যেখানেই নতুন শিল্প সংস্থানের ভার নেবে সেখানেই একই পূর্ব-সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কোম্পানির বাইরে থাকা আলাদা উদ্যোগের ক্ষেত্রে কিন্তু কোম্পানির উচিত হবে না কখনোই উচ্চতর শক্তি দিয়ে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা সেখানেই কেবল সম্মিলিতভাবে কাজ করব যেখানে কাজের বিরাট সমস্যা সাধারণ পদক্ষেপের দাবি রাখে; আমরা, সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে, নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যক্তির অধিকারকে সম্মান করব। ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যা স্বাধীনতার অর্থনৈতিক ভিত্তি, অবাধে উন্নয়ন করা যাবে এবং আমরা এক্ষেত্রে শ্রদ্ধাশীল থাকব। আমাদের প্রথম অদক্ষ শ্রমিকরা একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত মালিকানায় কাজ করার সুযোগ পাবে।

উদ্যোক্তা চেতনাকে অবশ্যই প্রতিটি সম্ভাব্য উপায়ে উৎসাহিত করতে হবে। সুবিবেচনামূলক ব্যবস্থাবিধির মাধ্যমে, সস্তা কাঁচামাল কাজে লাগানোর মাধ্যমে, শিল্প-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও প্রকাশের জন্য একটি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হবে।

কিন্তু উদ্যোগের এই চেতনাকে অবশ্যই বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার সাথে উৎসাহিত করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জল্পনা এড়াতে হবে। প্রতিটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার আগে দীর্ঘ সময় ধরে অবশ্যই সেটির বিজ্ঞাপন দিতে হবে, যাতে ছয় মাস পর যারা একই ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চায়, তাদের ব্যর্থতার ঝুঁকি কমানো যায়। যখনই একটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে তখনই তা কোম্পানিকে অবহিত করা উচিত, যাতে আগ্রহীরা এটির ব্যাপারে কোম্পানির কাছ থেকে তথ্য পেতে পারে।

শিল্পপতিরা কেন্দ্রীভূত শ্রমসংস্থাগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। এই সংস্থাগুলো ঠিক ততটুকুই কমিশন নেবে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম চালু রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিল্পপতিরা তিন দিন, তিন সপ্তাহ কিংবা তিন মাসের জন্য পাঁচশ অদক্ষ শ্রমিক চেয়ে শ্রমসংস্থাকে টেলিগ্রাফ করতে পারেন। শ্রমসংস্থা তখন প্রতিটি সম্ভাব্য উৎস থেকে এই পাঁচশ অদক্ষ শ্রমিক সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে কৃষি বা শিল্প খাতের কাজের জন্য শ্রমসংস্থা তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।

শ্রমিকদের দলগুলোকে এভাবে সৈন্যদলের মতো জায়গায় জায়গায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাঠানো হবে। এই লোকেরা অবশ্যই পেরেশান হবে না, তবে তারা দিনে সাত ঘণ্টা কাজ করবে এবং স্থান পরিবর্তন সত্ত্বেও, তারা তাদের সংগঠন সংরক্ষণ করবে, তারা চাকরির শর্ত অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করবে এবং নির্দেশনা, পদোন্নতি ও অবসর সুবিধা পাবে।

কিছু প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে অন্য উৎস থেকে অবশ্যই তাদের কর্মী সংগ্রহ করতে পারবে; কিন্তু তারা তা করা সহজ মনে করবে না। অবাধ্য নিয়োগকর্তাদের বয়কট, অবৈধ বাণিজ্য ও চলাচলে বাধা এবং অন্য নানা পদ্ধতির মাধ্যমে সোসাইটি অ-ইহুদি কাজের দাসদের অনুপ্রবেশ রোধ করতে সক্ষম হবে। সাত ঘণ্টার কর্মীদের এই কারণেই নিয়ে আসা হবে; এবং আমরা এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের লোকদের নিয়ে আসব, কোনো জোর-জবরদস্তি ছাড়াই, দিনে সাত ঘণ্টা কাজের স্বাভাবিকতায় তাদের অভ্যস্ত করে তুলব।

দক্ষ শ্রমিকদের জন্য বন্দোবস্ত

এটা স্পষ্ট যে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য যা করা যেতে পারে দক্ষ শ্রমিকদের জন্য তা আরও সহজে করা যেতে পারে। তারা কারখানায় একই ধরনের প্রবিধানের অধীনে কাজ করবে এবং কেন্দ্রীয় শ্রমসংস্থা যখন প্রয়োজন হবে, তখন কারখানাগুলোতে এই শ্রমিক সরবরাহ করবে।

বৈজ্ঞানিক উন্নতি সম্পর্কে ধারণার দ্রুত অগ্রগতির জন্য স্বাধীন অপারেটিভ (স্বাধীন ব্যবসা উদ্যোগ) এবং ছোট নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই যত্ন সহকারে শেখানো উচিত, খুব অল্প বয়সী না হলে তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে হবে, অবশ্যই জলবিদ্যুৎ অধ্যয়ন করতে হবে এবং বিদ্যুৎ-শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। সোসাইটির এজেন্সি স্বাধীন শ্রমিকদের খুঁজে বের করবে এবং তাদের কারখানায় সরবরাহ করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্থানীয় শাখা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবেদন করবে- ‘আমাদের অনেক ছুতার, তালার মিস্ত্রি ও কাচের কারিগর দরকার।’ কেন্দ্রীয় কার্যালয় তাদের এই চাহিদার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে এবং যারা এসব কাজ জানে তারা তখন এসব কাজ পেতে আবেদন করবে। নিয়োগের পর তারা তাদের পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে চলে যাবে। সেখানে গিয়ে তারা কোনো ধরনের অযাচিত প্রতিযোগিতায় পড়বে না। এভাবে তাদের স্থায়ী ও স্বস্তিদায়ক আবাসন সরবরাহ করা হবে।

মূলধন উন্নয়নের পদ্ধতি

কোম্পানি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সম্পর্কে আগে যে ধারণা করা হয়েছিল তা ছিল অস্বাভাবিক রকম বেশি। প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, তা অর্থদাতারা স্থির করবেন। পরিমাণ যাই হোক না কেন তা সামর্থ্যের মধ্যে থাকতে হবে। মূলধনের পরিমাণ বাড়ানোর তিনটি উপায় আছে। সব উপায়ই সোসাইটি বিবেচনায় নেবে। ইহুদি সোসাইটি, ইহুদিদের মহান ‘জেস্টর’[১৮] আমাদের সেরা এবং সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত হবে, যারা অবশ্যই তাদের সদস্যপদের মাধ্যমে কোনো ধরনের বস্তুগত সুবিধা নেবে না। যদিও সোসাইটি শুরুতেই কর্তৃত্ব নিতে পারে না, তবে তাদের নৈতিক কর্তৃত্ব থাকবে। জাতির কাছে স্বীকৃতি লাভের জন্য ইহুদি কোম্পানির এই কর্তৃত্বই যথেষ্ট হবে। সোসাইটির অনুমোদন না পেলে ইহুদি কোম্পানি তার উদ্যোগের ক্ষেত্রে সফল হতে পারবে না; কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই অর্থদাতাদের কোনো নিছক গ্রুপের মাধ্যমে এটি গঠিত হবে না। সোসাইটি পরিমাপ করবে, নির্বাচন করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে। সোসাইটি যতক্ষণ না এই প্রকল্পটি ন্যায়নিষ্ঠভাবে পরিচালনার ব্যাপারে একটি সঠিক ভিত্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাতে অনুমোদন দেবে না। সোসাইটি এ নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষারও অনুমতি দেবে না, কারণ এই উদ্যোগকে অবশ্যই প্রথম প্রচেষ্টায় সফল করতে হবে। যেকোনো প্রাথমিক ব্যর্থতা পুরো ধারণাটিকে আগামী বহু দশকের জন্য দুর্বল করে দেবে, কিংবা এমন ধারণা দেবে যে এটি বোধহয় কোনো দিনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

[১৮ জেস্টর: বাণিজ্যিক প্রতিনিধি, ব্যবস্থাপক, মক্কেলের পক্ষে প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রের সাথে যে দেনদরবার করে।]

মূলধন বাড়ানোর তিনটি পদ্ধতি হচ্ছে: ১. বড় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, ২ ক্ষুদ্র ও প্রাইভেট ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, ৩. পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে।

মূলধন সংগ্রহের প্রথম পদ্ধতি হলো বড় ব্যাংকের মাধ্যমে তা করা। মূলধনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা সাপেক্ষে বৃহৎ আর্থিক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ নেওয়া যেতে পারে; এই পদ্ধতির বড় সুবিধা হলো যে এতে সম্পূর্ণরূপে অবিলম্বে হাজার মিলিয়ন (মূল অঙ্কে রাখার জন্য) অর্থ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যাবে।

আরও একটি সুবিধা হবে যে এই শক্তিশালী অর্থপ্রদানকারী (ফাইন্যান্সার) ঋণও (ক্রেডিটও) এন্টারপ্রাইজের পরিষেবার কাজে লাগবে। আমাদের আর্থিক শক্তির মধ্যে অনেক সুপ্ত রাজনৈতিক শক্তি নিহিত থাকে, আমাদের শত্রুরা এই শক্তিকে খুব কার্যকর বলে মনে করে। এটা হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। দরিদ্র ইহুদিরা কেবল সেই ঘৃণা অনুভব করে যা এই আর্থিক শক্তি উস্কে দেয়; একটি শক্তি হিসেবে এটি যে তাদের জন্য উপশমকারক হতে পারে, তা তারা এখনো অনুভব করেনি। বৃহৎ ইহুদি অর্থদাতাদের অর্থ আমাদের জাতীয় আদর্শের সেবায় নিয়োজিত করতে হবে; কিন্তু এই ভদ্রলোকরা, যারা তাদের প্রাচুর্য নিয়ে সন্তুষ্ট, তারা যদি তাদের ইহুদি ভাইদের জন্য কিছু করতে অস্বস্তি বোধ করেন, যারা অন্যায়ভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিশাল সম্পত্তির কুক্ষীগত করে রাখার জন্য দায়ী, তাহলে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তাদের এবং অন্য সব ইহুদিদের মধ্যে সুস্পষ্ট একটি ভেদরেখা টানার সুযোগ করে দেবে।

বৃহৎ ফাইন্যান্সারদের, অধিকন্তু, বিশুদ্ধ জনহিতকর উদ্দেশ্য থেকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে বলা হবে না; সেটা হলে খুব বেশি আশা করা হয়ে যাবে। বরং আশা করা যায়, এর বিপরীতে, ইহুদি কোম্পানির প্রমোটর এবং স্টক হোল্ডারদের এ থেকে ভালো ব্যবসা হবে। এক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা কতটুকু তা তারা আগে থেকেই হিসাব করতে সক্ষম হবে। কারণ, ইহুদি কোম্পানির সম্ভাবনাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য সব ধরনের ডকুমেন্ট ও রেফারেন্স ইহুদি সোসাইটির হাতে থাকবে। কোম্পানি প্রমোটররা যতটা সহায়তা আশা করে ততটুকু সহায়তা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করতে বিশেষ করে নতুন আসা ইহুদিদের গমনাগমন ও গতিবিধি কতটা বিস্তৃত হবে সে বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করবে ইহুদি সোসাইটি। সোসাইটি ইহুদি কোম্পানিকে বিস্তৃতভাবে আধুনিক ইহুদি পরিসংখ্যান সরবরাহ করবে। এই কাজটি করবে ফ্রান্সে যাকে বলা হয় ‘সোসাইটি ডি’চুড’ (অধ্যয়ন সংস্থা, সমিতি, সমাজ বা কোম্পানি), তাদের মতো করে। বৃহৎ কোনো উদ্যোগে অর্থায়নের আগে ‘সোসাইটি ডি’চুড’ সব রকম প্রাথমিক গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। এমনকি তারপরও এই প্রতিষ্ঠান আমাদের মানি ম্যাগনেটদের কাছ থেকে মূল্যবান সহযোগিতা নাও পেতে পারে। এমনকি তারা, সম্ভবত, তাদের গোপন এজেন্টদের মাধ্যমে ইহুদি গমনাগমনের বিরোধিতা করার চেষ্টাও করতে পারে। এ ধরনের বিরোধিতা আমরা নিরলস দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করব। মনে করুন যে এই ম্যাগনেটরা কেবল মুচকি হাসি দিয়ে এই পরিকল্পনাটিকে প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারলেই খুশি।

এটা, অতএব, এখানেই শেষ, তাই না?

না।

তখন অর্থ সংগ্রহ করা হবে অন্য উপায়ে। মধ্যম ধনী ইহুদিদের কাছে আবেদন করা হবে। ছোট ইহুদি ব্যাংকগুলোকে জাতীয় ধারণার (ন্যাশনাল আইডিয়া) নামে বড় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে একত্রিত হতে হবে, যতক্ষণ না তারা একটি দ্বিতীয় এবং শক্তিশালী আর্থিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে; কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, এর জন্য প্রথমে প্রচুর অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। সেটি প্রায় পাঁচ কোটি পাউন্ড। কাজ শুরু করার আগেই সাবস্ক্রিপশনের লক্ষ্য পূর্ণ করতে হবে। যেহেতু এই অঙ্কটি খুব ধীরে ধীরে বাড়বে, তাই প্রথম কয়েক বছরে সব ধরনের ব্যাংকিং ব্যবসা এবং ঋণ কার্যক্রম এর মাধ্যমেই চালাতে হবে। এমনও হতে পারে যে, এসব লেনদেনের সময় তারা তাদের আসল উদ্দেশ্যই ভুলে যাবে; মধ্যম ধনী ইহুদিরা একটি নতুন ও বৃহৎ ব্যবসা তৈরি করে ফেলবে এবং ইহুদিদের দেশত্যাগের বিষয়টি ভুলে যাবে।

এভাবে অর্থ সংগ্রহের ধারণা কোনোভাবেই অবাস্তব কিছু নয়। বড় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে একটি বিরোধী শক্তি গঠনের মাধ্যমে খ্রিস্টান অর্থ সংগ্রহের পরীক্ষা ইতিমধ্যেই চালানো হয়েছে। যেহেতু কেউ এখনো ইহুদিদের অর্থ দিয়ে তেমন কিছু করার চেষ্টা এখনো করেনি, তাই কেউ হয়তো এর বিরোধিতা করতেই পারে।

কিন্তু এই আর্থিক দ্বন্দ্ব সব ধরনের সংকট নিয়ে আসবে; যে দেশে তা ঘটেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ইহুদি-বিদ্বেষ প্রবল হয়ে উঠবে।

এই কারণেই এই পদ্ধতির ব্যাপারে সুপারিশ করা হয় না। আমি কেবল এ পরামর্শ দিয়েছি, কারণ এক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত কোনোকিছু ঘটার থাকলে ধারণাটির যৌক্তিক বিকাশের সময়ই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

বেসরকারি ছোট ব্যাংকগুলো এই আইডিয়া গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হবে কি না, আমি অবশ্য তাও জানি না।

যাই হোক না কেন, এমনকি মধ্যম সারির ধনী ইহুদিদের প্রত্যাখ্যানেও এই পরিকল্পনা শেষ হয়ে যাবে না। বরং বিপরীতটি ঘটবে, এটিকে তখন সত্যিকারের আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা হবে।

ইহুদি সোসাইটি, যেটির সদস্যরা ব্যবসায়ী নন, কোম্পানিটিকে একটি জাতীয় সাবস্ক্রিপশনের আওতায় আনার চেষ্টা করবে।

কোম্পানির মূলধন সরাসরি পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী কোনো সিন্ডিকেট ছাড়াই বাড়ানো যেতে পারে। শুধু দরিদ্র ইহুদিরাই নন, খ্রিস্টানরাও— যারা এই ইহুদিদের থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন— তারাও এই তহবিলের একটা ছোট অ্যামাউন্ট সাবস্ক্রাইব করবেন। এভাবে গণভোটের একটি নতুন ও অদ্ভুত ধরন প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে যে লোকরা ইহুদি সমস্যার এই সমাধানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রিপশনে তাদের মতামত প্রকাশ করবে। নির্দিষ্ট পরিমাণের এই শর্ত নিরাপত্তা তৈরি করবে। সাবস্ক্রাইব করা তহবিলগুলো প্রয়োজনীয় অ্যামাউন্টে পৌঁছলেই কেবল পরিশোধ করা হবে, তা না হলে প্রাথমিক যে পেমেন্ট ছিল তাই ফেরত দেওয়া হবে।

কিন্তু যদি প্রয়োজনীয় অংকের অর্থের পুরোটাই পপুলার সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়, তাহলে প্রতিটি ছোট অংকের অর্থই অন্যান্য ছোট ছোট অংক মিলিয়ে যে বড় অংকটি হবে সেটির মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে।

এসব কিছুর জন্য অবশ্যই আগ্রহী সরকারগুলোর সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন।