2 of 2

P.A. – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

P.A. – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

উচ্চতায় মাঝারি।

বর্ণে শ্যাম।

মুখশ্রী, কখনও ভয়াবহ, কখনও অম্লমধুর, কখনও প্রেম প্রোজ্জ্বল।

আচরণে, নেকড়ে বাঘ সদৃশ।

এবম্বিধ গুণসম্পন্ন মানুষটি মন্ত্রী না হয়ে অন্য কিছু হলে, বেমানান হত। বিধাতার আশীর্বাদে ইনি মন্ত্রীই। এবং চুনোপুঁটি নয় বেশ ভারী মন্ত্রী। দপ্তর এর কটুকাটব্যে তটস্থ। ইনি স্বভাবে ব্লটিং পেপার সদৃশ। যে কোনও মুখের হাসি সহসা মুছে দিতে পারেন। যে কোনও চোখে জল এনে দিতে পারেন। যে কোনও সংসার উদার দাক্ষিণ্যে জমজমাট করে দিতে পারেন যেমন, তেমনি যে কোনও সংসারের ভিটেয় জোড়া ঘুঘুও চবিয়ে দিতে পারেন। ইনি কখনও ঝরা কখনও খরা।

‘আমায় ভয় পায়।’ এই ভেবেই তাঁর আনন্দ। ‘আমি টেরিবল’। এই প্রসাদগুণেই ইনি সুখ্যাত। এ হেন একজন দুরন্ত মন্ত্রীর দপ্তরে শ্যামাচরণ পি এ হবার সৌভাগ্য নিয়ে আদি সপ্তগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিল উনিশশো ছত্রিশ সালের কোনও এক মাসে। তখন সে জানত না তার ভাগ্যে কি লেখা আছে। যখন জানল তখন আর পালাবার পথ নেই। বঙ্কিমবাবু বি এ পাশ করে ডেপুটি হয়েছিলেন। শ্যামাচরণ বিশ্ববিদ্যালয় গুলে খেয়ে এ দপ্তর সে দপ্তরে হাত ফেরতা হতে হতে খোদ মন্ত্রীর দপ্তরে পি এ হয়ে বসেছে। সিনিয়ররা বললেন, বরাত তোমার ভাল হে শ্যামাচরণ। হলে খুব হবে না হলে হেলে পড়বে। জিনিসটা বেশ ভালই। ট্যাকল করতে পারলেই টাকা না পারলেই ফাঁকা। সার্কাসের সেই তন্বী মহিলাটিকে স্মরণ কর, যে বীরাঙ্গনা সিংহের গলা জড়িয়ে ধরে গোঁফে চুমু খায়। এও সেই একই পদ্ধতি—টেমিং এ লিও।

সার্কাসের সিংহ আফিমের মৌতাতে থাকে। মন্ত্রী থাকেন ক্ষমতার টাটে। বিলিতি কোম্পানির ঘূর্ণায়মান ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর চেয়ারে। গদির ওপর গদি (পশ্চাদ্দেশ বড়ই স্পর্শকাতর। সামনে অশ্বক্ষুরাকৃতি ডবল ডেকার টেবিল। ঝকঝকে, চকচকে। ব্র্যাসো দিয়ে মাজা পেতলের পেপারওয়েট, মুণ্ডিতোলা, সারি সারি। যেন ক্ষমতার বোতাম। মেজাজের মুরগি ঘড়ি। ঠকাস ঠকাস করে ঠুকে কাগজে চাপা দিলে অরডারলি পিওন বুঝতে পারে মালিক কাপুরের মেজাজ চড়ে আছে। টুকুস টুকুস করে নাড়াচাড়া করলে বুঝতে পারে মন্ত্রী মহোদয় এখন খেলোয়াড়ি মেজাজে আছেন। ঘরজোড়া নরম কার্পেট। পা ডুবে যায়। প্রিয়দর্শিনী টেলিফোনের সারি। কখনও একটা বাজে, কখনও সবকটা কোলের শিশুর মতো কঁকিয়ে ওঠে। ফোন বাজার দাপট দেখলে দেশের পরিস্থিতি বোঝা যায়। যখন মৃদু মৃদু একটি কি দুটি রিরিরিং, রিরিরিং করে তখন বুঝতে হবে বিবোধীরা শান্ত, লাশটাশ তেমন পড়ছে না, ঝাণ্ডা তেমন উড়ছে না, মিছিল রাজপথে তেমন পাক মেরে মেরে ঘরমুখো অফিস যাত্রীদের পাকদণ্ডীতে বেঁধে ফেলছে না, বিধানসভায় জুতো, ঝাঁটা, লাথি চলছে না। শিবিরে শিবিরে বিরাজ করছে সমঝোতার শাস্তি। ফোন তখন প্যানের প্রেমের বুলি! কিন্তু লাল, গোলাপি নীল সবকটাই যখন তেড়েফুঁড়ে বাজতে থাকে, যখন এ কানে একটা ও কানে একটা, দু কাঁধে দুটো সরব সপ্তগ্রামে, তখন বুঝতে হবে গেল গেল অবস্থা। গদি করে টলটল পাসরাতে ওঠে জল।

আজ সেইরকম একটা দিন। মন্ত্রীর কানে লাল টেলিফোন। তিনি খ্যাসখ্যাসে গলায় ও প্রান্তের মানুষটিকে বেজায় ধমকাচ্ছেন। কথায় সামান্য গ্রাম্য টান। সেই টানটাকে সযত্নে ধরে রেখেছেন কারণ তিনি মনে করেন—তিনি জনতার প্রতিনিধি। ঠাণ্ডা ঘরে কাচ মোড়া টেবিলে টাট সাজিয়ে বসে থাকলেও তিনি আছেন মৃত্তিকার কাছাকাছি তাঁদের সেবক, দাসানুদাস হয়ে।

মন্ত্রী বলছেন—দাঁত মেলছ মনে হচ্ছে। (ও প্রান্তে যিনি তিনি বোধহয় হেঁ হেঁ করে হাসির ভাব এনেছিলেন কথায়। ডাক্তারি ভাষায় এ ব্যাধিকে বলে গ্রেট ম্যান প্রকসিমিটি রিফ্লেকস। অনেকের যেমন বাইরে যাবার নাম শুনলেই নিম্নবেগ আসে। বড় মানুষের সামনা সামনি হলেই অনেকে অজান্তেই হাত কচলাতে থাকেন আর গলা দিয়ে হেঁ হেঁ করে বিচিত্র শব্দ ক্ষেপণ করতে থাকেন। মুখের চেহারা হয়, কুমোরে তৈরি কাঁচা মুখ মাটিতে জোর করে থেবড়ে বসিয়ে দিলে যেরকম হবে সেই রকম) ওই দাঁত আমি একটা করে খুলে স্যাপারেট পার্সেল করে তোমার বউয়ের কাছে পাঠিয়ে দোব হারামজাদা। মালা করে পরবে। মানকে! মানকে বড় না আমি বড় শুয়োর? মন্ত্রী সেই ভদ্রসন্তানকে শুয়োর বলে ঝপাং করে ফোন ফেলে দিয়ে পায়ের কাছে বোতামে চাপ দিলেন।

শ্যামাচরণের মাথার ওপর লাল আলো দুরুদুরু করে জ্বলে উঠল। শ্যামাচরণ স্টেনোর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিল। হাসি ফিউজ হয়ে গেল। পেটে মৌরলা মাছের ঝোল পাক খেয়ে উঠল, অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছের মতো। (শ্যামাচরণ হালে বিয়ে করেছে। নতুন বউ স্মৃতি বাড়াবার জন্যে ইদানীং এই বঙ্গসন্তানটিকে মৌরলা মাছের ঝোল সেবন করাচ্ছেন। মন্ত্রীর পি এ। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে স্মৃতি আর শ্রুতির ওপর। মন্ত্রীর নেকনজরে হয় প্রোমোশন না হয় লিকুইডেশান। এখন স্বামী আমার রং চটা পতপতে তেরপল ঢাকা জিপে চেপে অফিস যায়। মই বেয়ে আর একটু উঠতে পারতেই মটর গাড়ি। ফোন হবে, ফ্রিজ হবে, ট্যুর হবে, টি এ হবে।)

শ্যামাচরণ হিলহিলে ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকল। মন্ত্রী তখন দু দাঁতের মাঝে একটা টুথপিক ধরে তিরতির করে নাচাচ্ছেন। টেবিলের ওপর হাতের চেটো আঙুল নিয়ে খেলছে। শ্যামাচরণ ঢুকতেই মন্ত্রী টেনে টেনে বললেন—শুয়োরের বাচ্চা।

শ্যামাচরণ বলল—ইয়েস স্যার। (কেরিয়ার গাইড বলছে—ডোন্ট প্রোটেস্ট এ মিনিস্টার। অ্যাকসেন্ট এভরিথিং অ্যাজ অমৃতং বাল/মন্ত্রী ভাষিতং)

মন্ত্রী বললেন—বাঁশ দেবো। আছোলা বাঁশ।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

মন্ত্রী: দিল্লি থেকে বাঁশ আনব।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

মন্ত্রী: ইও আর এ ফুল।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

মন্ত্রী: আজই আমি দিল্লি যাব।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার (কেরিয়ার গাইড বলছে, ট্যাকল এ মিনিস্টার উইথ লিমিটেড ভোকাব্যুলারি। প্লে ক্লেভারলি উইথ টু ওয়ারডস—ইয়েস অ্যান্ড স্যার। প্লেস ইট বিফোর প্লেস ইট আফটার, পাঞ্চ ইট হিয়ার পাঞ্চ ইট দেয়ার অ্যাজ অন অ্যাজ ইউ গেট ইওর চানস। হোয়েন ইউ লিভ দেয়ার শুড রিমেন নাথিং বাট ইয়েস অ্যান্ড স্যার।)

মন্ত্রী: কীসে যাব?

শ্যামাচরণ: প্লেন নয় স্যার ট্রেনে।

মন্ত্রী: কেন ট্রেনে?

শ্যামাচরণ: অ্যাস্ট্রলজার অ্যাডভাইস করেছেন স্যার প্লেনে স্যার গেলে স্যার অ্যাকসিডেন্ট হবে স্যার।

মন্ত্রী: রাজধানীর টিকেট চাই। দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও, এখুনি জোগাড় করো (সুর করে)। ইডিয়েট।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

প্যান্টটাকে ভুঁড়িতে বেল্ট ধরে টাইট করে শ্যামাচরণ চু কিত কিত করে ছুটল রাজধানীর টিকিট জোগাড়ে। ভি আই পি কোটা বললেই তো হল না, ভি আই পি-র সংখ্যা কম নাকি? একটা ট্রেন অনেক ভি আই পি। শ্যামাচরণের মন্ত্রী, অন্যের তো তিনি মন্ত্রী নন। হুঁ কেয়ারস হুম? তোমার মন্ত্রী। তুমি মাথায় করে দিল্লি নিয়ে যাও। এ যেন তোমার বউ তুমি ম্যাও সামলাও। শ্যামাচরণ অতি কষ্টে, কান ধরে ওঠ বোস করে পাঁচটা সিমেন্টের টোপ ফেলে একটা টিকিট ম্যানেজ করল। কেরিয়ার গাইড বলছে, স্ত্রীকে এবং মন্ত্রীকে জীবন দিয়েও সন্তুষ্ট রাখবে। আর প্রমিস? প্রমিস ইজ এ থিং হুইচ ইও আর নেভার একসপেকটেড টু ফুলফিল। মন্ত্রীদের কেরিয়ার তো অঙ্গীকারের শত শত মৃত স্তূপের ওপরেই হাসছে, খেলছে, ভাঙছে, জুড়ছে।

মন্ত্রী বললেন, টিকিট পেয়েছ?

শ্যামাচরণ: পেয়েছি স্যার।

মন্ত্রী: সিকিউরিটিকে জানিয়ে রাখো। আমার ব্যাগেজ রেডি করো।

(জনতার সেবক হলেও, জনতা মন্ত্রী সেবক নাও হতে পারেন। হাতের কাছে হ্যান্ডি কিছু পেয়ে ছুড়ে মেরে দিতেও পারে। তখন? ক্ষতি তো দেশেরই হবে। মন্ত্রীর আর কি? তিনি মরে ভূত হবেন। কে বলে, মন্ত্রীর উপদ্রবের চেয়ে ভূতের উপদ্রব ভাল। তাদের কোনও ধারণা নেই।) শ্যামাচরণের আছে। সে দেখেছে কোনও মন্ত্রী তাঁর পি এ-কে মনে মনে অথবা সশব্দে একশো আট বার মনুষ্যেতর প্রাণীতে সম্বোধন করলেই একটি প্রোমোশান। তার অর্থ কি তা হলে, দুধ মেরে যেমন করি, পশুত্ব ঘন হলেই একটি উচ্চপদ। শ্যামাচরণ চা খেয়ে চেয়ারে চিতিয়ে পড়ল। ভুঁড়িটা এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

এদিকে বেলা বাড়ছে। আশে ঘন মেঘ। এল বুঝি বৃষ্টি। লাঞ্চের সময় শুরু হল শহর ভাসানো বৃষ্টি। মন্ত্রী আর পি এ যখন রাস্তায় নামলেন তখন রাজপথের যা অবস্থা তাতে আর মটর নয় স্পিডবোট চলতে পারে।

মন্ত্রী তাল ঠকে বললেন, ‘তোমাদের ষড়যন্ত্র।’

শ্যামাচরণ ইয়েস স্যার বলতে গিয়েও সামলে নিল। ‘নো স্যার।’

মন্ত্রী: তোমরা জানতে আমি আজ দিল্লি যাব।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

মন্ত্রী, তবে নো স্যার বললে কোন আক্কেলে। অ্যা! খোদার খাসি।

শ্যামাচরণ: ইয়েস স্যার।

মন্ত্রী: তোমরা আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেবে। যেভাবেই হোক। আই মাস্ট ক্যাচ দি ট্রেন।

মন্ত্রী উঠলেন গাড়িতে। পেছনের আসনে তিনি। সামনে সিকিউরিটি আর পি এ, শ্যামাচরণ। গাড়ি চলেছে স্টেশনের দিকে। মন্ত্রী ড্রাইভারকে ধমকেছেন, ট্রেন যদি ধরাতে না পারিস তোকে আমি বিরোধী বলে বরখাস্ত করব। ষড়যন্ত্র। আই নো হু আর বিহাইন্ড দিস। এর পিছনে আমার দলের ফ্যাকসান আছে আর আছে অপোজিশান। ড্রাইভার মনে মনে বললে, সব করবি শ্লা। আজ আছিস কাল নেই। শ্যামাচরণ বললে, অপোজিশান হল ঈশ্বর স্যার। মন্ত্রী শুয়োরের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা জপ করতে করতে পুরমন্ত্রীর মুণ্ডপাত করতে লাগলেন। জপাৎ সিদ্ধি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মনে হল সারা শহরে এক হাঁটু নোংরা জলে থই থই করছে পালপাল শূকর। একটা দাড়িওলা শূকর একটা লরি চালিয়ে তার গাড়ির সামনে পথরোধ করে দাঁড়িয়েছে।

মন্ত্রী ড্রাইভারকে বললেন, সাইরেন লাগাও। হঠাৎ তাঁর মনে হল, গাড়ির সামনে পতাকা লাগানো হয়নি। হোয়াই। ষড়যন্ত্র। শ্যামাচরণ! গো। গেট দি ফ্ল্যাগ। রাশকেল।

ভগবান বাঁচালেন। ফ্ল্যাগ গাড়িতেই ছিল। এক কোমর জলে নেমে শ্যামাচরণ পতাকাদণ্ডে পতাকা পরালেন। ঘন ঘন সাইরেন, দণ্ডে জলে ভেজা পতাকা, মন্ত্রীর শূকোরোক্তি, সিকিউরিটির চড়চাপড় কোনও কিছুতেই জ্যাম খুলল না। মন্ত্রী মনে মনে তিনজন ব্যক্তিকে বরখাস্ত করে ফেললেন। তার মধ্যে সাদা বর্ষাতি মোড়া ট্রাফিক পুলিশটিও পড়ল। পুরমন্ত্রী যে তাঁর অ্যান্টি গ্রুপে সে সত্যটিও জলমগ্ন রাস্তায় গাড়িতে বসে তাঁর খেয়াল হল। মনে মনে বললেন, আই উইল সি৷ সি শব্দটি মনে আসতেই হাত ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখলেন। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। শ্যামাচরণ?

ইয়েস স্যার।

নেমে পড়।

শ্যামাচরণ জলে নামল। নেমেই বুঝল চাকরির জল কত ঘোলা।

মন্ত্রী—দৌড়োও। তুমি দৌড়ে গিয়ে ট্রেন ধরে রাখো। গার্ডকে বলো মিনিস্টার আসছেন। গোও।

শ্যামাচরণ সেই হাঁটু জলে হাঁচর-পাঁচর করে দৌড়োতে শুরু করল। উঃ ভুড়িটাই এখন দেখছি কাল হল। লরির ফাঁক গলে, ট্রামের পাশ দিয়ে, রিকশার ফাল গলে, খানাখন্দ পেরিয়ে পি এ ছুটছে।

হাওড়া স্টেশন। গার্ড সায়েব বাঁশি মেরেছেন। পতাকা পটাপট করছে। ট্রেন ছাড়ল বলে। কাকভেজা একটি লোক ইঞ্জিনের চেয়েও বেশি হাঁপাতে হাঁপাতে সটান তাঁর পায়ে এসে পড়ল।

শ্যামাচরণ স্টপ স্টপ, মিনিস্টার ইজ কামিং।

গার্ডসায়েব তলায় পড়ে থাকা মানুষটিকে দেখলেন। প্ল্যাটফর্মেও পুলিশের আয়োজন ছিল যেহেতু মন্ত্রী যাবেন। শ্যামাচরণ জ্ঞান হারাবার আগে পরিষ্কার বাংলায় বলল, বাঁচান, গাড়ি থামান, মন্ত্রী আসছেন। আমি তাঁর পি এ।

গাড়ি লেগে রইল। পুলিশ তৎপর হলেন। আসছেন তিনি আসছেন। কামরায় কামরায় অসন্তুষ্ট যাত্রী। কে হরিদাস পাল। অবশ্য তাঁরা জানতেই পারলেন না, কেন ট্রেন ছাড়ছে না। গার্ড সাহেব বললেন, টেকনিক্যাল প্রবলেম।

হঠাৎ পুলিশবাহিনী সজাগ হয়ে অ্যাটেনশানের ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন। একটি মাঝারি উচ্চতার পাজামা পাঞ্জাবি পরা মানুষ গটগট করে এগিয়ে এসে প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেন। পি এ শ্যামাচরণ সবে তখন জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। শীতে কাঁপতে কাঁপতে ফাইলে নোট লেখার ভাষায় বললে—ডান স্যার অ্যাজ ডাইরেকটেড।

মন্ত্রী চলমান গাড়ির জানালা থেকে স্নেহের গলায় বললেন, আই উইল সি।

উপসংহার: সত্যিই তিনি দেখেছিলেন! শ্যামাচরণ মাছের মতো জল কাটতে পারে। হ্যাজ প্রুভড ইট। শ্যামাচরণকে মৎস্য বিভাগের উচ্চপদে রেখে মন্ত্রী ‘উইল সি’ করলেন। শ্যামাচরণ দম্পতি সেই প্রবাদবাক্যের বিপরীত উদাহরণের মতো, লেখাপড়া শিখেও মৎস্য ধরিতে লাগিলেন এবং সুখে খাইতে লাগিলেন দীর্ঘকাল। আর মন্ত্রীমহোদয় নির্বাচনে গভীর জলে তলাইয়া গেলেন।

২৯ মার্চ ১৯৮১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *