হালিমা বেগম টেলিফোন করেছেন, আনিছ ভাই, আপনে অ্যাকবারো আমারে দেকতে আইলেন না।
আমি বলি, মনে মনে আমি আপনাকে প্রতিদিনই দেখছি।
হালিমা বেগম বলেন, কিন্তু সামনে আইসা কি অ্যাকবারো আমারে দেকতে ইচ্ছা হয় না আপনের? আমি কি এমুনই পেত্নী?
আমি বলি, আপনাকে তো আমার পরীই মনে হয়।
হালিমা বেগম বলেন, আপনের পায়ে ধইর্যা আমার চুমা খাইতে ইচ্ছা হয়, আপনের লগে না আইলে আমিঅতো কাজির লগে চইল্যা যাইতাম।
আমি বলি, তখন হয়তো অন্য রকম হতো।
হালিমা বেগম বলেন, অত বড় কামেল পীরে কাজিরে বাঁচাইতে পারল না, আমারে কে বাঁচাইত?
আমি বলি, রাব্বুল আল আমিন।
হালিমা বেগম বলেন, কার কতা কইলেন বুজতে পারলাম না। এমুন কঠিন কতা কইয়েন না, আনিছ ভাই, আমি ত আসলে আছিলাম রহিম ড্রাইবরের বউ।
আমি বলি, আপনি আমার কাছে মিসেস কাজি আহমদ সালেকিন।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আপনেরে এখনই একটু আসতে হইব, একটা গোপন কথা আছে আপনের লগে। আর কারে কইতে পারতেছি না।
বিকেলে আমি মিসেস কাজির সাথে দেখা করতে যাই; দেখে আমার ভালো লাগে; আমি আবার একটু উত্তেজনা বোধ করি, এবং উত্তেজনাটুকু গোপন করে আমি পরিপূর্ণ নিষ্পাপ বোধ করি।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আপনে নিচ্চই বুজতে পারছেন কাজির মরনে আমি কষ্ট পাই নাই।
আমি বলি, তবে একথা অন্য কাউকে বলবেন না।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আছিলাম রহিম ড্রাইবরের বউ হইলাম সেকরেটারির বউ, কতাটা যে সকলকে বলন ঠিক না তা আমি বুজি; তয় সকলকে মিছা কতা কইতে কইতে আমার ঘিন্না ধইর্যা গ্যাছে, আপনেরে সইত্য কতাটা কইলাম। এখন আমার ইকটু শান্তি লাগতেছে।
আমি বলি, কী একটা গোপন কথা বলবেন বলছিলেন?
হালিমা বেগম বলেন, আপনের কাছে আর শরম কইর্যা কী হইব, আনিছ ভাই; কতাটা কইয়াই ফালাই। কাজির মাইজ্যা পোলা আমারে বিয়া করতে চায়।
আমি একবার চমকে উঠি।
হালিমা বেগম বলেন, কিন্তু কতাটা হইল সরকার আমারে একটা বাড়ি দিবো ঘোষণা করছে, কিন্তু বিয়া বইলে কি বাড়িটা আমি পামু?
আমি বলি, বোধ হয় পাবেন না।
হালিমা বেগম বলেন, আরেকটা কতা হইল আমার দুই মাসের প্যাট চলতাছে।
আমি বলি, তাহলে তো বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
হালিমা বেগম বলেন, তয় আমার প্যাটের জিনিশটা কাজির না, কাজির মাইজ্যা পোলারই।
বাসায় ফিরে বোতল থেকে চুমুক দিয়ে একটু পান করার সময় মনে পড়ে দীন মুহাম্মদের মেয়ের চোখের অপারেশনটা কি হয়ে গেছে? ক-তারিখে হবে বলে যেনো দীন মুহাম্মদ বলেছিলো? সে কি আমাকে বলেছিলো? নিশ্চয়ই বলেছিলো; হয়তো একবারের বেশি বলতে সাহস করে নি, তাই আমার মনে নেই। মেয়েটি ক্লাশে ফার্স্ট হয়? ফার্স্ট হয়ে কী হবে? কতো মেয়েই ফার্স্ট হয়, আরো কতো মেয়েই তো ফার্স্ট হতে পারতো। কতো নম্বর কেবিনে আছে মেয়েটি? আমি বলে দিয়েছি, কেবিনেই রাখবে মেয়েটিকে, কিন্তু কত নম্বর কেবিন? দীন মুহাম্মদ কি আমাকে কেবিনের নম্বর বলেছিলো? নিশ্চয়ই বলেছিলো; দীন মুহাম্মদকে কয়েক দিন ধরে উদ্বিগ্ন দেখছি না, খুশিখুশি দেখছি, মেয়েটি কেবিনেই আছে। কিন্তু কতো নম্বর? আমার কি মেয়েটিকে দেখতে যেতে ইচ্ছে করছে না, দীন মুহাম্মদের মেয়ে কোন কেবিনে পড়ে আছে, তা নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পরপর চারটি ফোন এলো; আমার এ-সন্ধ্যায় দু-জায়গায় নিমন্ত্রণ রয়েছে; আমি বারবার বলছি, না, না, অত্যন্ত দুঃখিত, কোনো নিমন্ত্রণেই আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। বাসায় বসে থাকতেও কি আমার ইচ্ছে করছে? আমি হাসপাতালে ফোন করি। অভ্যর্থনায় করি না, সেখানকার মেয়েগুলো আমাকে চিনবে না; আমি বড়ো ডাক্তারটিকেই করি; ফোন পেয়ে সে পাগল হয়ে ওঠে; জানায় যে রোকেয়ার অপারেশন হয়ে গেছে, খুব ভালো অপারেশন হয়েছে, কোনো চিন্তার কারণ নেই, তিনি নিজেই করেছেন, তার দেখাশোনার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না, একটি নার্স সব সময় তার পাশে থাকছে; সে পনেরো নম্বর কেবিনে আছে, ভিআইপি কেবিন। আমার হাসি পাচ্ছে। মেয়েটির তো দু-চোখে পর্দা পড়ে চোখ দুটি বুজে যাওয়ার কথা। দীন মুহাম্মদের মেয়ের বড়ো জোর বারান্দায় পড়ে থাকার অধিকার আছে। তার বেশি অধিকার তাকে আমরা দিই নি; দেবো না। কিন্তু সে এখন কেবিনে? এই কেবিনে থাকা কি তার সারাটি জীবনকে নষ্ট করে দেবে না? সে কি মনে করবে না দেশ তার জন্যে কেবিনের ব্যবস্থা করে রেখেছে? আমার হাসি পাচ্ছে। কয়েক বছর পর যদি আমার দরকার হয়, আমি কি ভিআইপি পাবো? একটা নার্স সব সময় আমার দেখা শোনা করবে? দীন মুহাম্মদ এসে দরোজায় শব্দ করছে, খাবো কি না জানতে চাচ্ছে; আমি কিছু বলছি না। আমি বেরোচ্ছি। দীন মুহাম্মদকে বলি যে আমি একটু বাইরে বেরোচ্ছি; সে জানায় যে ড্রাইভার নেই; না থাকায় আমি স্বস্তি পাই। আমি একটি রিকশায় উঠি, লোকটি কোথায় যাবো জানতে চাইলে আমার কোনো জায়গার নাম মনে পড়ে না, এবং হাসপাতালটির নাম মনে পড়ে; আমি হাসপাতালটির নাম বলি। পনেরো নম্বর কেবিনে ঢুকে দেখি মেয়েটি শুয়ে আছে, তার ডান চোখটি বাঁধা।
তুমি কি দীন মুহাম্মদের মেয়ে? বলতে গিয়ে আমি থেমে যাই; মেয়েটির খোলা একটি চোখ আর চুলের দিকে তাকিয়ে, শুয়ে থাকার ভঙ্গি এবং একটি হাতের আঙুলগুলো দেখে দীন মুহাম্মদকে আমি দীন মুহম্মদ বলতে পারি না; আমি বলি, তুমি কি দীন মুহাম্মদ সাহেবের মেয়ে?
মেয়েটি উঠে বসতে চায়, নার্স তাকে বসতে দেয় না।
মেয়েটি বলে, জি।
আমি বলি, তোমার নাম কি রোকেয়া?
মেয়েটি আবার উঠে বসতে চায়, নার্স তাকে বসতে দেয় না।
মেয়েটি বলে, জি।
আমি বলি, তুমি ভালো আছো?
মেয়েটি বলে, জি।
আমি বলি, আচ্ছা, এখন চলি।
মেয়েটি বলে, আপনি কে; আব্বাকে কী বলবো?
আমি বলি, কিছু বলতে হবে না, তুমি ঘুমাও।
দু-দিন পর বারান্দা থেকে দেখতে পাই দীন মুহাম্মদ মেয়েকে নিয়ে দেয়ালের পাশে তার ঘরটিতে ঢুকছে। দীন মুহাম্মদের ঘরটি কেমন আমি কখনো দেখি নি। কিছুক্ষণ পর দীন মুহাম্মদ আসে।
দীন মুহাম্মদ বলে, স্যার, মাইয়ার চোখ ভাল অইয়া গেছে, হাসপাতাল থেইক্যা, লইয়া আইলাম, তয় আরো একমাস থাকতে অইব।
আমি বলি, তোমার মেয়ে কোথায় থাকবে।
দীন মুহাম্মদ বলে, আমার ঘরেই থাকব, স্যার।
আমি বলি, তোমার মেয়ে কি তোমার ঘরে থাকতে পারবে? কেবিনের পর কি ওই ঘর ভালো লাগবে?
দীন মুহাম্মদ বলে, অর ত কেফিনে থাকনের কতা আছিল না, স্যার, আপনের দয়ায় সেইটা অইছে।
আমি বলি, তোমার মেয়েকে একবার ডাকতে পারবে?
দীন মুহাম্মদ বেশ দ্রুত বেরিয়ে যায়, এতোটা সে আশা করে নি; এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসে। দীন মুহাম্মদের পেছনে তার মেয়ে, রোকেয়া, শালোয়ার কামিজপরা; আমাকে দেখেই সে চমকে ওঠে; আমি তার চমকানোটা উপভোগ করি। দীন মুহাম্মদ বারবার মেয়েটিকে সালাম করতে বলে, রোকেয়া আমাকে সালাম করার জন্যে মাথা নিচু করে, আমি তাকে ধরে রাখি, সে সালাম করতে পারে না। আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে আনি; মনে হচ্ছিলো দীর্ঘ সময় ধরে তাকে আমি ধরে আছি। এই মেয়ে দীন মুহাম্মদের? কোনো সেকরেটারির নয়? চারপাশের সেকরেটারিদের মেয়েগুলোকে দেখে আপনা থেকেই আমার চোখ বুজে আসে, তাই এ-বয়সেও সাধারণত তাদের দিকে তাকাই না; কিন্তু আমি দীন মুহাম্মদের মেয়েকে দেখি।
আমি বলি, রোকেয়া, তুমি এখন ভালো আছো?
রোকেয়া বলে, জি, ভালো আছি।
আমি বলি, তুমি কি তোমার বাবার ঘরে থাকতে পারবে?
রোকেয়া বলে, জি, পারবো।
আমি বলি, পশ্চিম দিকের ঘরটি তো খালি পড়ে আছে, ইচ্ছে করলে তুমি থাকতে পারো।
দীন মুহাম্মদ খুশি হয়ে ওঠে; রোকেয়ার মুখেও ঝিলিক দেখা দেয়।
দু-তিন দিন বা তার বেশি হবে আমি মেয়েটিকে দেখি নি; একটি মেয়ে যে পাশেই একটি ঘরে আছে, তাও টের পাই নি। সেদিন বিকেলে বাসায় গাড়ি ঢুকতেই দেখি রোকেয়া ঘাসের ওপর দাঁড়িয়ে চারদিক দেখছে, হয়তো চোখটিকে পরীক্ষা করছে; ঘাস আর ফুলের বাগানে ওকে বেশ মানিয়েছে; আমি নামতেই সালাম দেয়। এই প্রথম ওকে আমি হাসতে দেখি। ওর হাসিটি আমার ভালো লাগে, অনেক দিন কোনো হাসি এতোটা ভালো লাগে নি; আরো দেখতে ইচ্ছে করে; কিন্তু আমি কি ওকে আমার সাথে ওপরে উঠতে বলতে পারি? ও কি রাজি হবে? আমার সাথে ওপরে উঠতে কি ওর ভালো লাগবে? দীন মুহাম্মদকে আমি যে-কোনো আদেশ দিতে পারি, ওকে পারি না; ও দীন মুহাম্মদ নয়। আমার ইচ্ছে করে আমার সাথে ও ওপরে আসুক। আমি ওকে আমার সাথে আসতে বলি, বলার আগে একটু দ্বিধা হচ্ছিলো, কিন্তু বলার সময় আমার কোনো দ্বিধা থাকে না। ভেবেছিলাম ও আসবে না; লজ্জা পাবে, বা ভয়, কিন্তু ও আমার সাথে হাঁটতে থাকে, এমনভাবে হাঁটে যেনো খুব সুখ পেয়েছে, এমন সুখ ও চেয়েছিলো মনে মনে, না পেলে খুব দুঃখ পেতো। ও সিঁড়ি দিয়ে আমার সাথে দোতলায় ওঠে, আমার সাথে ঘরে ঢোকে। আমি সোফায় বসি, ওকে বসতে বলি না; শুধু জিজ্ঞেস করি ও কেমন আছে। ও জানায় ভালো আছে, কিন্তু একলা লাগছে; আসার সময় একটিও বই আনে নি, মনে হয়েছিলো পড়তে পারবে না; কিন্তু এখন কয়েকটি বই পেলে ওর সময় সুন্দরভাবে কাটতো। আমি ওকে আমার পড়ার ঘরে নিয়ে যাই, বইয়ের আলমারিগুলো খুলে দিই। এতো বই ও কখনো দেখে নি, দেখে ওর চোখ থেকে আলো বেরোতে থাকে। আমি শেলফ থেকে একটির পর একটি বই নামিয়ে দিতে থাকি, বইগুলোর নাম দেখে দেখে ও দু-হাতে বুকে চেপে ধরতে থাকে; বুক ভরে যাওয়ার পর বইগুলো নামিয়ে রেখে আমার হাত থেকে আরো বই নিতে থাকে। আমি আলমারি খালি করে ফেলতে থাকি; ও যে এতো বই পড়তে পারবে না, আমার মনে থাকে না; বই নামাতে আমার ভালো লাগে।
মেয়েটি বলে ওঠে, খালু, আপনার এতো বই!
আমি বলি, তুমি আমাকে খালু বলবে না।
মেয়েটি চমকে ওঠে, দীন মুহাম্মদের মতো ভয় পায় না।
সে জানতে চায়, কেনো?
আমি বলি, আব্বা, বাবা, কাকা, খালু এসব ডাক আমি পছন্দ করি না।
মেয়েটি বলে, কেনো পছন্দ করেন না?
আমি বলি, আমি কারো আব্বা, চাচা, খালু হতে চাই না।
মেয়েটি বলে, তাহলে আপনাকে কী ডাকবো?
আমি বলি, দীন মুহাম্মদ যা ডাকে তুমি তাই ডাকতে পারো।
মেয়েটি একটু বিষণ্ণ হয়, জিজ্ঞেস করে, স্যার?
আমি কথা বলি না, মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আবার কয়েক দিন দেখি নি মেয়েটিকে। সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর একটু শুয়ে আছি, শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না, একটু পরেই বেরিয়ে পড়তে হবে; শুনতে পাই মেয়েটি দরোজায় টোকা দিয়ে বলছে, স্যার, আমি কি ভেতরে আসবো?
আমি বলি, এসো।
ভেতরে ঢুকে ও সালাম দেয়, আস্তে আস্তে আমার দিকে এগোয়, মুখে ওর নিজস্ব হাসিটি, এবং হাতে কয়েকটি বই।
মেয়েটি বলে, স্যার, বইগুলো পড়া হয়ে গেছে, তাই এলাম।
আমি বলি, বসো।
মেয়েটি বলে, আমি এভাবেই ভালো আছি, স্যার, দাঁড়িয়ে কথা বলতেই আমার ভালো লাগে।
আমি আবার বলি, বসো।
মেয়েটি বিব্রত হয়ে বলে, আপনার সামনে বসতে আমার সাহস হবে না।
কথাটি শুনতে আমার ভালো লাগে। ওর চলতি বাঙলাটিও ভালো লাগে, মাঝেমাঝেই ওর চলতি উচ্চারণের মধ্যে আঞ্চলিক ঢুকে ওর কথাগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলছে।
আমি বলি, তুমি বসো।
মেয়েটি চেয়ারের দিকে তাকিয়ে যেনো ভয় পায়, বলে, আপনার সামনে আমি চেয়ারে বসতে পারবো না, স্যার।
আমি বলি, তাহলে বিছানায়ই বসো।
মেয়েটি বিছানায় আমার পায়ের দিকে বসে, বিব্রত হয়ে হাসে, ওর ঠোঁটের মাংস ফুলে ওঠে; আর অমনি ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে টেলিফোন বেজে ওঠে।
আমি বলি, হ্যালো।
ডলি বলে, তোমাকে আমি ভুলে যাই নি, তুমিও আমাকে ভুলে যাবে তা আমি হতে দেবো না, তুমি মনে রেখো।
আমি বলি, ডলি, এখন আমি একটি সুন্দর সময় কাটাচ্ছি, সত্যিই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
ডলি বলে, আমার সঙ্গে কথা বলতে তোমার ইচ্ছে করবে কেনো? তোমার ইচ্ছে করবে কোনো বুড়ীর সাথে কথা বলতে। হয়তো কোনো একটা বুড়ীকে শোয়ানোর ফন্দি করছে; এর চেয়ে সুন্দর সময় তুমি কোথায় পাবে?
আমি বলি, তুমি কি এর জন্যেই ফোন করেছো?
ডলি বলে, তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো ভাবছি।
আমি বলি, তোমার ভাবনার ওপর আমার কোনো হাত নেই।
ডলি বলে, কিন্তু আমার মনে হয় তোমাকে ছেড়ে দিলে তুমি সুখী হবে, তোমাকে আমি ওই সুখটা দিতে চাই না।
আমি বলি, আমি কখনো সুখী হতে চাই নি, সুখের মতো সামান্য জিনিশ আমি চাই না।
ডলি বলে, তোমার মুখে আমি থুতু দিই।
ডলি ফোন রেখে দেয়।
আমি মেয়েটিকে বলি, আমার স্ত্রী ফোন করেছিলো।
মেয়েটি বলে, তিনি কোথায় থাকেন?
আমি বলি, লন্ডনে।
আমার মনে হয় মেয়েটি আরো কথা বলতে চায়, আমাদের সম্পর্কে ওর মনে আরো অনেক কথা জমে গেছে, কিন্তু বলে না।
আমি বলি, তুমি কি আরো কিছু জানতে চাও?
মেয়েটি বলে, না, না; আমি আর কিছু জানতে চাই না।
আমি বিছানার নিচে থেকে বোতলটি বের করে একবার চুমুক দিই, ছিপি লাগিয়ে বোতলটি রাখি, মেয়েটি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
আমি বলি, তোমার কি আরো বই লাগবে?
মেয়েটি বলে, জি, স্যার।
আমি বলি, ওই ঘরে গিয়ে তুমি যেগুলো ইচ্ছে নিয়ে নাও।
মেয়েটি বলে, আরেকটু বসি, স্যার?
আমি বলি, কেনো বসতে চাও?
মেয়েটি বলে, বসতে ইচ্ছে করছে।
আমিই উঠি; শুয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে, শুয়ে থাকতে আমার খারাপ লাগছে। মেয়েটিকে আমি পড়ার ঘরে নিয়ে যাই, আলমারি থেকে বই নামিয়ে দিতে থাকি, মেয়েটি দু-হাতে বই জড়িয়ে ধরতে থাকে।
আমি বেরিয়ে যাই, বেশ রাত করেই ফিরি, অনেক কাজ ছিলো। ফেরার সাথে সাথে দীন মুহাম্মদ এসে জানতে চায় খেতে দেবে কি না। আমি তাকে খাবার দিতে বলি। খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি রোকেয়া টেবিল সাজাচ্ছে; ওর টেবিল সাজানো দেখে আমার ভালো লাগে।
মেয়েটি বলে, স্যার, আজ আমি বেঁধেছি, কেমন যে হয়েছে জানি না।
দীন মুহাম্মদ বলে, আমি অরে রানতে দিতে চাই নাই, স্যার, ওই জোর কইর্যা রানলো। ভাল না অইলে মাপ কইরা দিয়েন।
খাওয়ার ব্যাপারটি কখনোই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়; খুব স্বাদ হলে আরো খাওয়ার জন্যে পাগল হই না, স্বাদ না হলে ছুঁড়ে ফেলি না; কেউ যত্ন করে খাওয়ালে তৃপ্তিতে ভরে উঠি না; কেউ পাতে খাবার দিতে থাকলে উচ্ছ্বসিত হই না। আমার কাছে খাওয়া হচ্ছে খাওয়া, তার বেশি নয়। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি ভয়ে আছে, হয়তো আমি বলবো রান্না ভালো হয় নি; আবার একটু প্রত্যাশায়ও রয়েছে, হয়তো আমি বলবো চমৎকার হয়েছে, কিন্তু আমি কিছুই বলি না। ভয় আর প্রত্যাশার মধ্যে থেকে থেকে মেয়েটি ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
কিছু একটা আমার বলা উচিত; মেয়েটি বেশ ক্লান্তিতে রয়েছে।
আমি বলি, রোকেয়া, তুমি কতোটা রাত জেগে থাকো?
রোকেয়া বলে, একটা-দুটো হবে, স্যার।
আমি বুলি, এতো রাত জেগে কী করো?
রোকেয়া বলে, পড়ি, আর মাঝেমাঝে ভাবি, স্যার।
আমি বলি, কী ভাবো?
রোকেয়া বলে, মাধ্যমিক পাশ করার পর আমার কী হবে, সেকথা ভাবি, স্যার। আমার তো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি চমকে উঠি।
রোকেয়া বলে, আপনি কখন ঘুমোন, স্যার।
আমি বলি, বারোটা-একটা হবে।
বেশ রাত হয়েছে, আমি ঘুমোই নি; দু-তিনটি বই একসাথে পড়ছি, একটি সিনেমা পত্রিকাও অনেকক্ষণ ধরে উল্টোচ্ছি, মাঝেমাঝে ছিপি খুলে বোতল থেকে একটু একটু পান করছি, ডলির টেলিফোনের কথা বারবার আমার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, আমার হাসি পাচ্ছে, খুব দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে, অ্যাসট্রেতে একটি সিগারেট রেখে আরেকটি সিগারেট একবার জ্বালিয়ে ফেলেছি, এমন সময় দরোজায় একটু শব্দ হয়।
আমি জিজ্ঞেস করি, কে?
মেয়েটি বলে, আমি, স্যার।
আপনি জেগে আছেন?
আমি বলি, ভেতরে আসবে?
মেয়েটি বলে, জি, স্যার।
রোকেয়া ভেতরে ঢুকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে, আমি ওকে বসতে বলি না; ও যেনো আগে থেকেই জানে কোথায় ওর বসার স্থান, কোথায় ও বসবে। ও বিছানায় আমার পায়ের কাছে এসে বসে। ওর বসার ভঙ্গিটি ভাস্কর্যের মতো; আমার ভালো লাগে। এখন কতো রাত? দুটো? তিনটে? মেয়েটিকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে; আমি ওর দিকে সরাসরি তাকাই, আমি দেখি।
আমি বলি, তোমার ঘুম আসছে না?
মেয়েটি বলে, ইচ্ছে করেই ঘুমোচ্ছি না, স্যার। জেগে থাকতে ইচ্ছে করছে।
আমি বলি, এখানে কেনো এলে?
মেয়েটি বলে, ইচ্ছে করলো, আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করলো।
আমি বলি, কেনো ইচ্ছে করলো?
মেয়েটি বলে, তা আমি বুঝতে পারছি না।
মেয়েটি কথা বলার সময় হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে, এই ওর অভ্যাস; ওর প্রতিটি কথায় হাসির একটা ঝংকার লেগে থাকে। আমার ভালো লাগে।
আমি বলি, আমার সাথে সারারাত জেগে থাকতে পারবে?
ও ঝলমলিয়ে ওঠে, পারবো, স্যার। এক রাত কেনো, দু-তিন রাতও জেগে থাকতে পারবো।
আমি বলি, একরাত পারবে তো?
মেয়েটি বলে, আপনি কি সত্যিই সারারাত জেগে থাকবেন?
আমরা সারারাত জেগে থাকি। এর আগে আমি কখনো সারারাত জেগেছি? জেগে থাকতে ইচ্ছে করেছে? আমার মনে পড়ে না। ডলিকে নিয়ে কখনো সারারাত জেগেছি? আমার মনে পড়ে না। এ-মেয়েটি যদি ডলি হতো, সারারাত জেগে থাকতে পারতাম? জেগে থাকতে ইচ্ছে করতো? না, ইচ্ছে করতো না। রোকেয়াকে আমি একটি বই পড়তে বলি, ও পড়তে থাকে; অনেকখানি পড়া হয়ে গেলে আরেকটি বই পড়তে বলি, ও পড়তে থাকে, আমি শুনতে থাকি, এবং আমি ওকে দেখি। দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি যে ওকে দেখছি, ও বুঝতে পারছে; ওর ভালো লাগছে। ওর ঠোঁট দুটি বেশ মাংসল, ওর পড়ার সময় মাংসের আশ্চর্য সঞ্চালন চোখে পড়ে। ওর মুখটিও পরিপূর্ণ, কোথাও শুষ্কতা নেই, সবটাই সজল। আমি ওকে দেখি। আমার কি ওকে দেখা ঠিক হচ্ছে? একবার পড়া বন্ধ করে ও আমার কাছে গল্প শুনতে চায়। ওকে আমি কোন গল্পটি শোনাতে পারি? আমি ঠিক করতে পারি না। শেষে একটি গল্প বলি, এক পুত্র খুন করে পিতাকে; সে খুন করতে চায় নি, তবু খুন করে, আর বিয়ে করে মাকে, রাজা হয়, এগিয়ে যায় নিজের নিয়তির দিকে, এক দিন উপড়ে ফেলে নিজের চোখ। শুনে ও শিউরে ওঠে, আমি দেখতে পাই ও বয়স্ক হয়ে উঠছে। আমি রাতের শব্দ শুনতে পাই; আমার বারান্দায় যেতে ইচ্ছে করে, আমরা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। অন্ধকার ও আলোর মধ্যে চারপাশের বাড়িগুলো, গাছগুলো কখনো দেখি নি; এ-রাতে দেখতে পেয়ে আমি সুখ পাই। রোকেয়ার কাঁধের ওপর হাত রেখে আমার অন্ধকার দেখতে ইচ্ছে করে, আমি রোকেয়ার কাঁধে হাত রাখি; রোকেয়া আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুখ নিচু করে, আবার আমার দিকে তাকায়।
আমি বলি, আমাকে ধরতে তোমার ইচ্ছে করে না?
রোকেয়া বলে, করে।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরি, ও আমাকে ধরে; কিন্তু এখনো ধরতে শেখে নি, ওর হাত দুটি আমার শরীরে ঝুলে থাকে। আমার চুমো খেতে ইচ্ছে করে, আমি ওকে চুমো খাই; ওর মাংসল ঠোঁট দুটি ঠোঁটের ভেতরে পুরে রাখি, ও ঝুলে পড়ে যেতে চায়, আমার দু-হাতে ঝুলতে থাকে; অন্ধকার আর অস্পষ্ট আলো দিকে দিকে কাঁপতে থাকে।
আমি বলি, তুমি কি সব কিছু গোপন রাখতে পারো?
রোকেয়া বলে, পারি।
বাইরে, আকাশে, গাছের পাতায়, ফুলের পাপড়িতে, ঘাসের শিখায়, শিশিরে, পাখির পালকে ভোর হয়।
আমি কি অপরাধ করেছি? আমি কি সুখী বোধ করি নি? সুখী বোধ করা অপরাধ? এ-বয়সে সুখী বোধ করা ঠিক নয়, এটা পীড়িত হওয়ার সময়, এখন যতোই পীড়িত বোধ করবো ততোই নিজেকে সৎ মনে করবো; কিন্তু আমি পীড়িত বোধ করছি না, অপরাধ বোধ করছি না। সুখে ভেসে যাচ্ছি বা আনন্দে কাঁপছি বা আবেগে অধীর হয়ে উঠছি, তাও নয়; অদ্ভুত ভারী শান্ত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার। অফিসে গিয়ে সারা অফিসটার দিকে তাকিয়ে আমার নিঃশব্দে হাসি পায়, কী হাস্যকর চারপাশ। অফিসটায় আমার থাকতে ইচ্ছে করে না, কোনো অফিসেই নয়। অফিস থেকে ফিরে বারান্দায় রোকেয়াকে দেখি, ওর মুখেও কোনো অপরাধ দেখতে পাই না; ওকে নির্মল দেখাচ্ছে, প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। হয়তো ওকে আগেও এমনই দেখাতো, আমি খেয়াল করি নি, তাই আজ ওকে আমার এমন নির্মল আর প্রফুল্ল মনে হচ্ছে। দোতলায় ওঠার সময় দেখি ও সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে খাবার দিতে বলি।
দীন মুহম্মদ দাঁড়িয়ে আছে, রোকেয়া খাবার দিচ্ছে, আমি খাচ্ছি।
রোকেয়া বলে, স্যার, আজ আমি চশমা নিতে যাবো।
দীন মুহাম্মদ বলে, অনেকগুলিন ট্যাকা লাইগ্যা যাইব, স্যার।
আমি বলি, টাকাটা তুমি আমার থেকে নিয়ে যেয়ো।
দীন মুহাম্মদ বলে, আপনে না হইলে অর চোকটা নষ্ট অইয়া যাইত, স্যার।
আমি বলি, ওর জন্যে কিছু জামাকাপড়ও কেনো, আমার থেকে টাকাটা নিয়ো।
আগামীকাল ভোরে, মেয়েটি, রোকেয়া, চলে যাবে। আমি কি ওর অভাব বোধ করবো? না। আমি কারো অভাব বোধ করি না; ডলির অভাব বোধ করি না, ওর অভাবও বোধ করবো না। আমি কি চাই ও চলে যাক? হ্যাঁ, আমি চাই, ও চলে যাক। কিন্তু কেনো? আমি জানি না। আজ ভোর থেকেই ও আমার ঘরে আসছে, হাসছে, কথা বলছে, এমন কি আমি যেনো অফিসে না যাই এমন এক অনুরোধও করে আমাকে। বিস্মিত করে দিয়েছে; আমি অফিসে গেছি, প্রচণ্ড কাজ করেছি, পাঁচটি বৈঠক করেছি, ওর কথা আমার মনে পড়ে নি। মনে পড়ে নি? সত্যিই মনে পড়ে নি? না পড়াই ভালো। আমি কি আজ একটু আগে অফিস থেকে ফিরেছি? হয়তো। কিন্তু তা ঘটেছে বৈঠকগুলোকে আমি বেশি সময় নষ্ট করতে দিই নি বলে; আর কয়েকবার কফি খেলে, পরস্পরকে আরেকটুকু বেশি প্রশংসা করলেই বাসায় ফিরতে বিকেল করে দিতে পারতাম। তা আমি করি নি। কেনো করি নি? এভাবেই, কোনো কারণ নেই; বিকেল করে দিতে আমার ইচ্ছে করে নি। আমি তাড়াতাড়ি ফেরায় মেয়েটি, রোকেয়া, কেনো এতো খুশি হলো? ও দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে। ওর দৌড়ে নেমে আসাটা আমার ভালো লেগেছে, ভরাট হাসিটি আমার ভালো লেগেছে; আমি বাসায় ঢোকার সময় ও আমার একটু পেছনে পেছনে বাসায় ঢুকেছে, আমার ঘরে ঢুকেছে। আমি খেয়েই বেরিয়ে পড়েছি, আমার আরো কয়েকটি বৈঠক আছে; বেরোনোর সময় ও খুব অবাক আর বিষণ্ণ হয়েছে। বৈঠক করে সন্ধ্যার বেশ পরে আমি বাসায় ফিরি।
দীন মুহাম্মদ আমাকে খেতে দেয়, আমি খাই। রোকেয়াকে দেখতে পাই না।
দীন মুহাম্মদ বলে, স্যার, কাউলকা সকালেই যামু, দুই দিনের মধ্যেই ফির্যা আসুম।
আমি বলি, দেরি কোরো না, আমার অসুবিধা হবে।
দীন মুহাম্মদ বলে, না, স্যার, দেরি অইব না।
একটু পরেই বারোটা বাজবে, বোতল থেকে চুমুক দিয়ে আমি একটু একটু পান করি, আর একটি বই পড়ি, এবং পড়তে পারি না; এমন সময় দরোজা ঠেলে রোকেয়া ঢোকে। আজ ও বিছানায় আমার পায়ের কাছে বসে না, আমার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ও কি এতোক্ষণ ধরে কাঁদছিলো? এজন্যেই ওকে সুন্দর লাগছে?
রোকেয়া বলে, স্যার, আজ সারাদিন আপনি বাইরে রইলেন কেনো?
আমি বলি, খাবার সময় থেকে তো বাসায়ই আছি। তোমাকে দেখলাম না।
রোকেয়া বলে, ইচ্ছে করছিলো আপনাকে না দেখেই কালকে চলে যাবো; আপনাকে আর দেখবো না।
এমন সময় ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে টেলিফোন বেজে ওঠে।
ডলি বলে, তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো ঠিক করেছি।
আমি বলি, তুমি ছেড়ে দিতে চাইলে আমি আর কী করতে পারি?
ডলি বলে, শিগগিরই তুমি কাগজপত্র পাবে।
আমি বলি, কাগজপত্রের কী দরকার?
আমি টেলিফোন রেখে দিই।
রোকেয়া বলে, আপনি একলা হয়ে যাবেন।
আমি বলি, না। আবার টেলিফোন বাজতে থাকে, আমি ধরি না।
রোকেয়ার একটি হাত কি আমি এততক্ষণ ধরে ছিলাম? আমি ওকে কাছে টানি, ও বিছানায় উঠে আসে। আমি ওকে খুলি; ও গভীর ঘুমের মতো জেগে থাকে, ওর মাংস কদম হতে থাকে, এবং একবার কেঁপে ডুকরে ওঠে।
ভোরে ঝলমল ক’রে ও আসে। ওর হাতে আমি একটি বড়ো প্যাকেট দিই।
ও জিজ্ঞেস করে, এটায় কী আছে, স্যার?
আমি বলি, এখন দেখবে না, গিয়েই ব্যাংকে জমা দেবে।
রোকেয়া প্যাকেটটি বুকে চেপে ধরে।
সময় হয়ে গেছে; সালাম করে দীন মুহাম্মদের সাথে ও বেরিয়ে যায়; গেইটের কাছে গিয়ে একবার ফিরে তাকায়; আমি ওকে দেখি, ও হয়তো কিছু দেখতে পায় না। একটু পর আমি অফিসে যাই। অফিসে গিয়ে এক পেয়ালা কফি খাই, কফিটা খেতে আমার অনেক সময় লাগে, সময় লাগাতে আমার ভালো লাগে; কাউকে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করে দিই, কোনো টেলিফোন ধরি না। আমি পদত্যাগ পত্র লিখি, মাত্র একটি বাক্য; সহকারীর হাতে দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। বাইরে এসে রিকশা নিই; রিকশাঅলা জানতে চায় কোথায় যাবো, আমি শুধু বলি, চালাও। আমার ইচ্ছে করে শহর ছেড়ে যেতে, এখনই ছেড়ে যেতে, আর না ফিরতে। শহরকে আমার অচেনা মনে হয়, চিনতে ইচ্ছে করে না। রিকশাঅলাকে আমি শহরের বাইরে যেতে বলি; সে একটি খেতের পাশে এসে জানতে চায় আমি নামবো কি না। আমার ভালো লাগে, আমার নামতে ইচ্ছে করে; আমি নামি, হাঁটতে থাকি; হেঁটে হেঁটে অনেক দূরে যেতে ইচ্ছে করে, অনেক দূরে; আমি হাঁটতে থাকি; আমি হাঁটি, আমি হাঁটতে থাকি, শহর ছেড়ে অনেক দূরে যেতে থাকি, আমি হাঁটতে থাকি।