৯. রসূলুল্লাহর অনিয়মিত নফল নামায সমূহ

৯. রসূলুল্লাহর অনিয়মিত নফল নামায সমূহ

সালাতুদ্দোহা (চাশতের নামায)

সকালে সূর্য উঠে আলোকময় হয়ে যাবার পর থেকে সূর্য মাথার উপর আসা পর্যনত এই মধ্যবর্তী সময়টাকে দোহা বা চাশ্ত বলা হয়। এ সময় কখনো কখনো রসূলুল্লাহ (ﷺ) কিচু নফল নামায পড়েছেন এবং সাহাবীগণকে পড়তে উৎসাহিত করেছেন। তিনি এ নামায কখনো কখনো দুই রাকাত, কখনো চার রাকা, কখনো ছ’রাকাত এবং কখনো আট রাকাত পড়েছেন।

তবে রসূলুল্লাহ (ﷺ) এ সময় পড়েছেন এবং পড়তে উৎসাহিত করেছেন বলে যেমন হাদিসে আছে, তেমনি এ সময় তিনি নামায পড়েন নাই বলেও হাদিস আছে।

সহীহ বুখারতে আয়েশা রা. থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) –কে চাশতে নামায পড়তে দেখিনি, তবে আমি এ (সময়) নামায পড়ি।

সহীহ বুখারিতে মুরিক আল আজলি থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন আমি ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি কি চাশতে নামায পড়েন? তিনি জবাব দেন: না। অতপর আমি জিজ্ঞাসা করি: নবী করীম (ﷺ) কি পড়তেন? তিনি বললেন: না, তিনিও পড়তেন না।”

ইমাম বুখারি ইবনে আবি লায়লা থেকেও একটি হাদিস উল্লেখ করেচেন উক্ত হাদিসে ইবনে আবি লায়লা বলেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতে নামায পড়েছেন বলে কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তবে কেবলমাত্র উম্মে হানি বলেছেন: মক্কা বিজযের দিন রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার ঘরে এসে গোসল করেন, তারপর আট রাকাত নামায পড়েন। আমি তাকে এতো সংক্ষেপ নামায পড়তে আর কখনো দেখিনি। তবে রুকূ সাজদা পূর্ণভাবেই আদায় করেন। এ সময়টা ছিলো দোহা (অর্থাৎ-চাশ্ত) এর সময়।”

সহীহ মুসলিম আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশরা রা. –কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম রসূলুল্লাহ (ﷺ) কি চাশতের নামায পড়তেন? তিনি জবাব দেন: না। তবে ঐ সময় সফর থেকে এলে কিছু নামায পড়তেন।

একইভাবে রসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতে নামায পড়েছেন বলেও বর্ণনা আছে। যেমন-

সহীহ মুসলিমে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতে নামায পড়তেন এবং চার রাকাত পড়তেন। আবার আল্লাহ চাইলে এর বেশিও পড়তেন।

বুখারি-মুসলিমে উম্মে হানি রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে চাশতের সময় আট রাকাত নামায পড়েছেন।

মুসতাদরকে হাকিম- এ আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সফরে চাশতে আপ রাকাত নামায পড়তে দেখেছি।

হাকিম তার ‘চাশতের ফযীলত’ অধ্যায় আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতে নামায পড়েন। তারপর একশ বার এ দু’আটি পাঠ করেন: (আরবী******************)

অর্থ: আয় আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে রহম (অনুগ্রহ) করো আর আমার তওবা কবুল করো। নিশ্চিতই তুমি দয়াময়, ক্ষমাশীল, তওবা কবুলকারী।”

মুজাহিদ বলেছেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) চাশতের সময় দুই রাকাত, চার রাকাত, ছ’রাকাত এবং আট রাকাত নামায পড়েছেন।

হাকিম আয়েশরা এবং উম্মে সালাম রা. –এর সূত্রে বার রাকাতর কথাও উল্লেখ করেছেন।

চাশতের সময় নামায পড়া না পড়া উভয় ব্যাপারেই যেহেতু হাদিস রয়েছে। সে কারণেই এ নামায পড়া না পড়া উভয় ব্যাপারেই মুহাদ্দিসগণের মতামত রয়েছে।

এ নামায পড়া এবং না পড়ার ফযীলত সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়। অতীত বুযুর্গদের অনেকেই হাদিস অনুসারে এ নামায পড়েছেন।

আরেকদল মুহাদ্দিস এ নামায বর্জনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে সাহাবাগণের না জানার বিষয়টিও সামনে এনেছেন।

বুখারিতে উদ্ধৃত হাদিসে ইবনে উমর রা. বলেছেন: রসূল (ﷺ) আবু বকর রা. উমর রা. এবং তিনি নিজেও এ নামায পড়তেন না।

আমি ওকী’র সূত্রে শুনেছি, আবু হুরায়রা রা. বলেছেন: আমি রসূলুল্লাহ (ﷺ) –কে মাত্র একদিন চাশতের সময় নামায পড়তে দেখেছি।

আলী ইবনে মাদানি আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের সূত্রে বর্ণনা করেন একদিন আবু বকর রা. একদল লোককে চাশতের সময় নামায পড়তে দেখে বলেন: তোমরা এমন নামায পড়ছো, যা না রসূল পড়েছেন, না তার কোনো সাহাবী পড়েছেন।

অবশ্য তৃতীয় একদল লোক চাশতের সময় নামায পড়াকে মুস্তাহাব বলেন। তাই তাঁর কোনো কোনোদিন এ নামায পড়তে বলেন।

তবে তাঁরা কোনো কোনোদিন এ নামায পড়তে বলেন।

তবে চাশতের সময় নামায পড়া সংক্রান্ত হাদিসগুলো সুপ্রমাণিত নয়।

রসূল (ﷺ) কখনো কখনো এ সময় নামায পড়েছেন একথা প্রমাণিত, কিন্তু তাঁর এ নামাযগুলো ঐ (চশতের) সময়ের সাথে জড়িতহ নয়। যেমন, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি উম্মে হানির ঘরে গিয়ে গোসল করে আট রাকাত নামায পড়েছেন। -এ নামায ‘ঐ সময়ের’ সাথে জড়িত নয়, বরং মক্কা বিজয়ের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি এ নামায পড়ছেন। আবার আয়েশরা রা. বলেছেন, এ (চাশতের) সময় সফর থেকে ফিরে এলে তিন নামায পড়তেন। -এটাও ‘ঐ সময়ে’ সাথে জড়িত নামায নয়, বরং সফর থেকে ফিরে আসার নামায।

-এভাবে এ সময় তাঁকে যারা কখনো কখনো নামায পড়তে দেখেছেন, সেটা এ সময়ের সাথে জড়িত (অর্থাৎ-চাশতের) নামায নয়, বরং বিভিন্ন কারণে এ উদ্দেশ্যে তিনি কখনো কখনো এ সময় নামায পড়েছেন। এটাই প্রামাণিত।

শোকরানা সাজদা

রসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবীগণের রীতি ছিলো, যখন তাঁরা আল্লাহর কোনো নিয়ামত লাভ, কিংবা বিপদ দূর হবার কারণে আনন্দিত হতেন, তখন তাঁরা কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহকে সাজদা করতেন।

মুসনাদে আহমদে আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূল (ﷺ)- এর জীবনে যখন আনন্দের কিচু ঘটতো, তখন তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাজদায় লুটিয়ে পড়তেন।

ইবনে মাজাহ আনাস রা. –এর সূত্রে বর্ণনা করেছন। একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) –কে একটি বিষয়ে সুসংবাদ প্রদান করা হয়। সংবাদটি শুনে তিনি আল্লাহর সমীপে সাজদায় লুটিয়ে পড়েন।

ইমাম বায়হাকি ইমাম বুখারি কর্তৃক সূত্র সহীহ হবার শর্তবালী অনুযায়ী বিশুদ্ধ হাদিস উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: আলী রা. কর্তৃক প্রেরিত হামদান গোত্রের ইসলাম গ্রহণ করার লিখিত সংবাদ পেয়ে রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাজদায় লুটিয়ে পড়েন। অতপর মাথা উঠিয়ে বলেন আসসালামু আলা হামাদান আসসালামু আলা হামাদান।

মুসনাদে আহমদে আবদুর রহমান ইবনে আুফ রা. থেকে বর্নিত হয়েছে:

আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যখন এই সুসংবাদ এলো যে, কোনো ব্যক্তি যদি তোমার প্রতি সালাত (দরূদ) পাঠ করে, তবে আমিও তার প্রতি সালাত (অনুগ্রহ) করি। আর কোনো ব্যক্তি যদি তোমাকে সালাম করে, তবে আমিও তাকে সালাম (তার প্রতি শান্তি বর্ষণ) করি। এই সুসংবাদটি আসার সাথে রসূলুল্লাহ (ﷺ) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাজদায় লুটিয়ে পড়েন।

সুনানে আবু দাউদে সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) উপরে হাত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে কিছুক্ষণ প্রার্থনা করেন। অতপর সাজদায় লুটিয়ে পড়েন। এভাবে তিনবার সাজদা করেন। শেষে তিনি আমাদের বলেন, আমি আমর প্রবুর কাছে কিছু প্রার্থণা করেছি এবং আমার উম্মতের (অনুসারিরৈদ) জন্যে সুপারিশ করেছি। তিনি এক তৃতীয়াংশ উম্মতের জন্যে প্রার্থনা করি। এবার তিনি আরেক তৃতীয়াংশের জন্যে আমার প্রার্থনা কবুল করেন। সাথে সাথে আমি প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতার সাজদায় লুটিয়ে পড়ি। অতপর আবার মাথা উঠিয়ে আমি আমার উম্মতের জন্যে প্রার্থনা করি। এবার তিনি আমার উম্মতের [এই হাদিসটি উম্মত শব্দটি এসেছে। ‘উম্মত’ মানে-একই নীতি ও আদর্শের অনুসারী দল। ‘উম্মতে মুহাম্মদী’ মানে- মুহাম্মদ (ﷺ) –এর নী ও আদর্শের অনুসারী দল। এই হাদিসে রসূলে (ﷺ) –এর বাণী: ‘আমার উম্মতের জন্যে সুপারিশ করেছি’ মান আমার নীতি ও আদর্শের অনুসারী লোকদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে সুপারিশ করেছি।] অবশিষ্ট তৃতীয়াংশের জন্যে আমার প্রার্থনা কবুল করেন। সাথে সাথে আমার প্রভুর জন্যে কৃতজ্ঞতার সাজদা লুটিয়ে পড়ি।

রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর মতো সাহাবায়ে কিরামও কৃতজ্ঞতার সাজদা করেছেন। সহীহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, কা’আব ইবনে মালিক রা. যখন ক্ষমা লাভের সুসংবাদ পেলেন, তখন আল্লাহ পাকের প্রতি কৃতজ্্যঞতায় আনত হয়ে সাজদায় লুটিয়ে পড়েন। [সাহাবি কা’আব ইবনে মালিক রা. অলসতা বশত তবুক যুদ্ধে যেতে না পারা তিনজন সাহাবির একজন। তবুক থেকে ফিরে এসে রসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর নির্দেশে এই তিন সাহাবিকে বয়কোট করেন। ফলে তাঁদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। দুনিয়া তাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাঁরা কান্নাকাটি ও তওবা করতে থাকেন। পঞ্চাশ দিনের চরম তওবার পর আল্লাহ পাক তাদের জন্যে ক্ষমা ঘোষণা করে কুরআনের আয়াত নাযিল করেন। এসময় কা’আব রা. শোকরানা রসাজদা করেন।

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে, আলী রা. যখন যুস সাদিয়াকে খারিজিদের নিহত লোকরেদ মধ্যে দেখতে পেলেন, তখন আল্লাহর দরবারে সাজদায়ে লুটিয়ে পড়েন।

সায়ীদ ইবনে মানসুর বর্ণনা করেছেন আবু বকর রা. যখন (নবুয়তের মিথ্যা দাবীদার) মুসাইলামা কাযযাবর নিহত হবার সংবাদ জানতে পারেন, তখন সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে সাজদায়ে লুটিয়ে পড়েন। [এ অনুচ্ছে শোকরানার সাজদার কথা উল্লেখ হয়েছ, নামাযের কথা উল্লেখ হয়নি। তাছাড়া হাদিসে এ সাজদার জন্যে অযু করার প্রয়োজন আছে বলেও উল্লেখ নেই।]

তিলাওয়াতের সাজদা

কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যে যখন কোনো কোনো স্থানে সাজদার হুকুম আসতো তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) সাথে সাথে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সাজদায় লুটিয়ে পড়তেন। তিলাওয়াতের সাজদায় তিনি প্রায় সময়ই এ কথাগুলো পাঠ করতেন।

(আরবী***************)

অর্থ : আমার মুখমণ্ডল সেই মহান সত্তার সামনে সাজদায় অনবত হলো, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তম আকৃতি দান করেছেন। তাছাড়া নিজ ক্ষমতা ও কুদরতের তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।”

কখনো কখনো তিনি তিলাওয়াতের সাজদায় নিম্নোক্ত দু’আটি পড়তেন:

(আরবী******************)

অর্থ আয় আল্লাহ! এ সাজদার বিনিময়ে আমার পাপের বোঝা সারিয়ে দাও। এর বিনিময়ে আমর জন্যে সওয়াব ও প্রতিদান লিখে রাখো। এ সাজদাকে আমার পরকালর সঞ্চয় বানিয়ে রাখো। আর আমার এই সাজদা তেমনিভাবে তুমি কবুল করো, যেভাবে তুমি তোমার সাদ দাুদের সাজদা কবুল করেছো।”

এই দুটি বর্ণনা সুনান সংকলনকগণ বর্ণনা করেছেন। তবে এ দুটি বর্ণনার কোনোটিতেই একথা বলা হয়নি যে, তিনি এই তিলাওয়াতের সাজদা থেকে মাখা উঠাবার সময়ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছেন।

এ সাজদায় রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাশাহহুদ পড়েছেন বলেও জানা যায়না এবং সালাম ফিরিয়েছেন বরেও জানা যায়না।

প্রত্যেক অযুর পর বিলালের দুই রাকাত [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

বিলাল রা. যখনই অযু করতেন, অযুর পর দুই রাকাত নামায পড়তেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর এই দুই রাকাত সমর্থন করেছেন।

সহীহ বুখারি ও মওসুলিমে আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ফজরের নামাযের পর বিলাল রা. –কে জিজ্ঞাসা করেন, হে বিলাল! আমাকে বলো দেখি, ইসলাম গ্রহণ করার পর তুমি এমন কি আমল করেচো, যার বিনিময়ে তুমি আল্লাহর কাছে অধিক প্রতিদানের আশা করো? আমি এজন্যে তোমাকে এ প্রশ্ন করেছি যে, আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। জবাবে বিলাল বলেন: আমি যে আমলের জন্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রতিদান পাবার আশা করি, তা হলো, আমি দিনে রাত্রে যখনই অযু করেছি, তখন সে অযু দ্বারা আমি কছিু না কিছু নামায পড়েছি, যতোটুকু আল্লাহ পাক আমাকে তৌফিক দিয়েছেন।

প্রত্যেক আযানের পর বিলালের দুই রাকাত [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

বিলাল রা. প্রত্যেক আযানের পর দুই রাকাত নামায পড়তেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর এই দুই রাকাত সমর্থন করেছেন।

ইমাম তিরমিযি সহীহ সনদসহ বুরাইদা রা. থেকে হাদিসি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: একদিন সকালে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বিলালকে ডাকলেন। তারপর বললেন, হে বিলাল! তুমি এমন কী আমল করেছো, যার ফলে আমার আগেই জান্নাতে চলে গিয়েছো? আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করেছি, আমার সামনে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি।

জবাবে বিলাল বললেন হে রসূলুল্লাহ! আমি যখনই আযান দিয়েছি, আযানের পর দুই রাকাত (নফল) নামায পড়েছি। তাছাড়া যখনই আমার অযু গিয়েছে, সাথে সাথে অযু করেছি এবং অযুর পর আল্লাহর জন্যে দুই রাকাত নামায পড়াকে আমার জন্যে কর্তব্য করে নিয়েছি।

তখন রসূল (ﷺ) বলে উঠেন: হ্যাঁ, এরি জন্যে।

ক্ষমা প্রার্থনা ও দুশ্চিন্তার নামায [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আবু বকর রা. আমাকে বলেছেন আর তিনি অবশ্যিূ সত্য বলেছেন যে, আমি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে কোনো ব্রীক্ত যদি পাপ বা অপরাধ করে ফেলে, তারপর (গোসল বা অযু দ্বারা) পবিত্রতা অর্জন করে এবং কিছু (নফল) নামায পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্্যথনা করে, তবে অবশ্যি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। অতপর রসূল (ﷺ) কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করেন:

(আরবী******************)

অর্থ যারা কখনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে, কিংবা কোনো গুনাহের কাজ করে নিজেদের প্রতি যুলম করে বসলে সাথে সাথে আল্লাহর কথা স্মরণ করে, অতপর কৃত পাপের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে- কারণ আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ মাফ করবার?- এবং জেনে বুঝে নিজেদের এই কৃতকর্মের উপর জোপর দেয়না, এসব লোকরেদ জন্য তাদের প্রভুর কাচে রয়েছে ক্ষমা আর জান্না, সেই জান্নাত যার পাদদেশে ঝর্ণনাধারা সমূহ: প্রবস্থমান, আর ডিচরকাল তারা খাকবে সেখানে।” (সূরা আলে ইমরান : ১৩৫-৩৬ আয়াত)

-হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ। তবে ইবনে মাজাহ আয়াতটির কথা উল্লেখ করেননি।

আবু দাউদে হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোনো কারণে চিন্তিত হতেন, তখন তিনি (কিছু নফল) নামায পড়তেন।” আসলে আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদেই এই নির্দেশ দিয়েছেন: “হে ঈমানদার লোকেরা! সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” (সূরা ২ আল-বাকারা ১৫৩ আয়াত)

ইস্তেখারর নামায ও দু’আ [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

জাবির রা. বর্ণনা করেছেন রসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে যাবতীয় কাজে ইস্তেখারা করতে শিক্ষা দিয়েছেন, যেমন তিন আমাদের শিক্ষা দিতেন কুরআনের কোনো সূরা। তিনি বলতেন তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজ করবার মনস্থ করবে, তখন সে যেনো ফরয ছাড়া (অর্থাৎ নফল) দুই রাকাত নামায পড়ে। তারপর যেনো এভাবে দু’আ করে:

(আরবী******************)

অর্থ আয় আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমারই জ্ঞানর সাহায্যে এ বিষয়ে ইস্তেখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) করছি। তোমার ক্ষমতার সাহায্যে তোমার কাছে এ বিষয়ে কল্যাণ লাভের সামর্থ প্রার্থনা করছি। আমি তোমার কাছে তোমার মহান অনুগ্রহ ও কল্যাণের ভাণ্ডার থেকে প্রার্থনা করছি। তুমি তো সবকিছুর ক্ষমতা রাখো, আর আমার তো কোনো ক্ষমতা নেই। মতুমি তো সবকিছু জানো, আর আমি তো জানিনা। আর সকল অদৃশ্যের তুমিই তো একমাত্র জ্ঞানী। আয় আল্লাহ! তুমি যদি (আমার মনস্থ করা) এই বিষয়টি আমার জন্যে, আমার দীন, জীবন জীবিকা এবং আমর প্ররকাল ও পরিস্থিতির জন্যে কল্যাণকর হবে বলে জানো (মমেন করো), তবে তা আমার জন্যে বরকত দান করো।

পক্ষান্তরে তুমি যদি এই বিষয়টি আমার জন্যে, আমার দান, জীবন-জীবিকা ও পরকাল-পরিণতির জন্যে ক্ষতিকর হবে বলো জানো (মনে করো), তবে তুমি তা আমার থেকে (অন্যদিকে) ফিরিয়ে দাও এবং আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখো। আর আমার জন্যে কল্যাণ নির্ধারণ করো তা যেখানেই থাকনা কেন এবং তার উপর আমাকে সন্তুষ্ট রাখো।” (সহীহ বুখারি)

সালাতুত তাসবীহ [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি ইবনে আব্বাস রা. থেকে এবং তিরমিযি আবু রাফে থেকে রসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক তাঁর চাচা আব্বাস রা. –কে শিখানো চার রাকাত অদ্ভুত ধরনের নামানের কথা উল্লেখ করেছেন। এই নামায ‘সালাতুত তাসবীহ’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এই নামায সংক্রান্ত হাদিসটি নিম্নরূপ:

ইবনে আব্বাস বলেন, একদিন নবী করীম (ﷺ) (আমার পিতা) আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বলণে: হে আব্বাস! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে প্রদান করবোনা? আমি কি আপনাকে দেবোনা? আমি কি আপনাকে সংবাদ জানাবোনা? আমি কি আপনাকে শিখিয়ে দেবোনা দশটি কাজ? আপনি যদি তা করেন, তবে আল্লাহ আপনার অপরাধ মাফ করে দেবেন। আগের পরের, পুরাতন নতুন, ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত, ছোট বরড় এবং গোপন ও প্রকাশ্য সব অপরাধ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। সেই কাজ হলো, আপনি চার রাকাত নামায পড়বেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং আরেকটি সূরা পড়বেন। এভাবে প্রথম রাকাতের বিরাত শেষ করার পর দাঁড়ানো অবস্থাতেই পনেরবার এই বাক্যটি পড়বেন:

(আরবী****************)

অতপর রুকূতে যাবেন। রুকূতে গিয়ে সেই বাক্যটি দশবার পাঠ করবেন। তারপর রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে দাঁড়াবেন এবং এই দাঁড়ানো অবস্থায় উক্ত বাক্য দশবার পাঠ করবেন। তারপর সাজদা থেকে মাথা উঠিয়ে বসবেন এবং বসা অবস্থায় উক্ত বাক্য দশবার পাঠ করবেন। তারপর দ্বিতীয় সাজদায় যাবেন এবং এই সাজদাতেও বাক্যটি দশবার পাঠ করবেন। এভাবে বাক্য এক রাকাতে মোট পঁচাত্তর বার পাঠ করা হলো। এই প্রথম রাকাতের মতো একই নিয়মে চার রাকাত পড়বেন। আপনার পক্ষে সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে একবার পড়বেন। তাও সম্ভব না হলে প্রতি মাসে একবার পড়বেন। সেটাও সম্ভব না হলে বৎসরে একবার পড়বেন। তাও সম্ভব না হলে জীবনে একবার হলেও পড়বেন।”

হাকিম ইবনে খুযাইমা ও দারু কুতনি এটিকে সহীহ হাদিস বলে উল্লেখ করেছন। তবে ইমাম ইবকনুল কায়্যিম আল জাওযী এটাকে ‘মওদু’ (মনগড়া) হাদিস বলেছেন।

তারাবীর নামায [এই অনুচ্ছেদ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।]

তারাবীর নামায রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর সুন্নত কিনা- তা নিয়ে মতভেদ আছে। আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ আবু যর গিফারি রা. –এর সূত্রে রমযানে রসূলুল্লাহা (ﷺ)- এর নফল নামায সম্পর্কে হাদিস উল্লেখ করেছেন। তাতে আবু যর রা. বলেন, আমরা রমযান মাসে রসূলুল্লাহ (ﷺ) –এর সাথে রোযা রেখেছি। কিন্তু আমাদের সাথে নিয়ে তিনি এ মাসে নফল নামায পড়ার রীতি চালু করেননি। তবে মাসের সাতদিন বাকি থাকতে তিনি এসে আমাদের সাথে নফল নামায পড়তে শরু করলেন। তাও চারদিন পড়িয়ে তিনি আর এ নামায পড়াননি।

বুখারি ও মুসলিমে যায়েদ বিন সাবিত রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। একবার রসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে মাদুরে হুজরারয় থাকতে শুরু করলেন। [অর্থাৎ: রমযানের শেষ দশদিন ইৎতেকাফের উদ্দেশ্যে।] সেখানে তিনি কয়েক রাত্রি (নফল) নামায পড়লেন। এমনকি লোকেরাও তাঁর সাথে নামায পড়তে শুরু করলো। অতপর একদিন লোকেরা তাঁর কোনো সাড়া শব্দ পেলনা। তারা ভাবলো, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাকরাতে শুরু করলো, যাতে করে তিনি তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তাদের অবস্থা লক্ষ্য করে তিনি বলে উঠলেন: এই নামাযের ব্যাপারে আমি তোমাদের তৎপরতা লক্ষ্য করেছি। আমার আশংকা হয়, এই নামায তোমাদের উপর ফরয হয়ে না পড়ে। যদি ফরয হয়ে যায়, তবে তোমরা তালন করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা এ নামায ঘরে পড়ো। কারণ, ফরয নামায ছাড়া অন্য নামায ঘরে পড়াই উত্তম।”

সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে: রসূলুল্লাহ (ﷺ) রমযানের রাতে নামায পড়ার জন্যে আমাদের উৎসাহ দিতেন। তবে এ ব্যাপারে আমাদের খুব তাকিদ করতেন না। তিনি বলতেন যে ব্যক্তি ঈমান ও আশা নিয়ে রমযান মাসে (রাত্রি ) নামাযে দাঁড়াবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” অতপর রসূরুল্লাহ (ﷺ) ওফাত লাভ করেন এবং এ ব্যাপারে অবস্থা একই রকম থাকে। আবু বরক রা.-এর খিলাফতকালে একই অবস্থা খাতে। [অর্থাৎ: তারাবীর জামাত কায়েম হতোনা। কেউ পড়লে ব্যক্তিগতভাবে পড়তো।] উমর রা. –এর খিলাফতের প্রথম দিকেও একই অবস্থা থাকে।

সহীহ বুখারিতে আবদুল রহমান বিন আবদুল কারী থেকে বর্ণিত হয়েছে: এক রাত্রে আমি (খলিফা) উমর ইবনুল খাত্তাবের সাথে বেরিয়ে মসজিদের দিকে এলাম। আমরা এসে দেখি, লোকেরা মসজিদে ভাগে ভাগে নামায পড়ছে। কেউ কেউ নামায নিজে পড়ছে, আবার কারো কারো সাথে কয়েকজন একত্র হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা দেখে উমর রা. বললেন:ঢ় আমি যদি এই সবাইকে একজন ইমামের পিছে একত্র করে দিই, তবে তো উত্তম হয়। অতপর এ বিষয়ে তিনি মনস্্যিথর করেন এবং সবাইকে উবাই ইবনে কা’আবের পিছনে একত্র করে দেন।

আবদুর রহমান বরেন: এরপর আরেক রাত্রে আমি উমরের সাথে বেরুলাম। আমরা দেখেলাম, লোকেরা তাদের কারীর (পড়িয়ের) পেছনে নামায পড়ছে। এ (সুশৃংখল) অবস্থা দেখে উমর রা. বলে উঠলেন এটা একটা উত্তম বিদ’আত (নতুন নিয়ম)। তিনি লোকদের বলরেন: তোমরা যে সময়টিতে ঘুমিয়ে থাকো তা তোমাদের এই নামায পড়ার সময়ের চাইতে উত্তম (অর্থাৎ শেষ রাত)।”

মু’আত্তায়ে মালিক-এ সায়েব ইবনে ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত হযেছে, তিনি বলেন খলিফা উমর রা. উবাই ইবনে কা’আব এবং তামীম দারীকে রমযান মাসে লোকরে এগার রাকাত (বিতিরসহ) নামায পড়াতে নির্দেশ প্রদান করেন। অতএব ইমাম শত আয়াতের কিরাত দিয়ে আমাদের নামায পড়াতেন। এতো লম্বা কিয়ামের কারণে আমরা শেষ পর্যন্ত লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হই। ফজহরের কাছাকাছি সময় আমরা এ নামায থেকে ফারেগ হতাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *