৯. মেয়ের সাফল্য

মেয়ের সাফল্যে অভাবনীয় আনন্দিত বিমলবাবু ও অনুপমা দেবী; মা-বাবার আনন্দ দেখে খুশি মৌ-ও।

সারাদিন কাজকর্মের পর মৌ বাড়ি ফিরে এলে তিনজনে মিলে কত কথা, কত গল্পগুজব। মৌ উত্তরবঙ্গ বা সিকিম গেলেও প্রত্যেক দিন সন্ধের পর মা-বাবার সঙ্গে কতক্ষণ ধরে টেলিফোনে কথা বলে।

অনুপমা দেবী জিজ্ঞেস করেন, তুই কবে ফিরবি? কোচবিহার আর গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি ফিরেছিস কী?

হ্যাঁ, ঘণ্টা খানেক আগেই ফিরেছি। কাল সকালে জলপাইগুড়ি গিয়ে দু’টো-আড়াইটের মধ্যে শিলিগুড়ি ফিরে সাড়ে চারটের প্লেনে কলকাতা রওনা হব।

তার মানে কাল সন্ধের মধ্যেই ফিরে আসবি?

হ্যাঁ, মা।

ওদিকে বিধাতাপুরুষ যে আমাদের সবার অজ্ঞাতে, অলক্ষে জমা-খরচের হিসেব লিখে চলেছেন, তা আমরা জানতে পারি না। পূর্ণিমার চাঁদও ক্ষয় হতে হতে অমাবস্যার অন্ধকারে পৃথিবী ডুবে যায়, যাবেই কিন্তু অন্ধকারও অনন্তকাল রাজত্ব করতে পারে না। আবার আকাশে চাঁদের দেখা পাওয়া যায়, যাবেই। এইভাবেই ঘুরে চলে আমাদের সুখ-দুঃখের কালচক্র।

ভোরের আলো ফুটলেও তখনও মৌ অঘোরে ঘুমুচ্ছে।

হঠাৎ অনুপমা দেবীর বিকট চিৎকার, ওরে মৌ, তোর বাবার কী হল? কথা বলছে না কেন?

ঐ চিৎকার শুনেই মৌ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে ছুটে যায় মা-বাবার ঘরে।

অনুপমা দেবী হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ওরে, তোর বাবার কী হল? ও মৌ, তোর বাবা কথা বলছে না কেন?

দু’হাত দিয়ে বাবার মুখখানা ধরে মৌ-ও পাগলের মতো চিৎকার করে, বাবা! ও বাবা! বাবা!

মা-মেয়ের কান্নাকাটি আর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন ঠিক পাশের বাড়ির ডা. চ্যাটার্জী আর তার স্ত্রী।

প্রথমে নাড়ি, তারপর চোখের মণি দেখেই ডা. চ্যাটার্জী মাথা নেড়ে বলেন, মৌ, তোর বাবা অনেক আগেই চলে গিয়েছেন।…

জ্যেঠু, কী বলছেন আপনি?

ম্যাসিভ সেরিব্রালে মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়েছে অন্তত ঘণ্টা চারেক আগে।

অনুপমা দেবী কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করেন, মানুষটা চলে গেল অথচ আমি টের পেলাম না! ও চলে যাবার পরও আমি ওর পাশে চার ঘণ্টা ঘুমোলাম কী করে?

দেখতে দেখতে প্রতিবেশীদের ভীড়ে ঘর-বাড়ি ভর্তি। কেউ সান্ত্বনা দেন অনুপমা দেবীকে, কেউ কেউ সান্ত্বনা দেন মৌ-কে। কেউ কেউ বলেন, এ তো মহা ভাগ্যবানের মৃত্যু; নিজে না ভুগে, কাউকে কোন কষ্ট না দিয়ে দাদা চলে গেলেন। এর চাইতে ভাল মৃত্যু আর কি হয়!

কান্নাকাটি করতে করতেই মৌ কোনমতে খবরটা জানায় শান্তকে; শান্ত বলে, আমি নেক্সট ফ্লাইটেই আসছি।

কয়েক মিনিট পর মৌ ওর বাবার টেলিফোনের খাতাটা ডাক্তার জ্যেঠুর মেয়ে সায়নীর হাতে দিয়ে বলে, এর মধ্যে বাবার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী আর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের টেলিফোন নম্বর আছে; তুই এদের খবরটা জানিয়ে দে।

আমি এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ফোন করছি।

তারপর?

আধ ঘণ্টার মধ্যেই আসতে শুরু করেন বিমলবাবুর পুরনো সহকর্মী আর ছাত্র-ছাত্রীরা। সবার চোখেই জল। ক’জন ঘনিষ্ঠ ছাত্রী জড়িয়ে ধরেন অনুপমা দেবী আর মৌ-কে।

প্রতিবেশী সুভাষবাবু বলেন, দাদা শুধু কাউকে কষ্ট দিলেন না, অন্যদের যাতে কাজকর্মে ক্ষতি না হয়, সেজন্য মারা গেলেন রবিবার ভোরে।

সঙ্গে সঙ্গে দু’ চারজন বলেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।

এগারটা বাজতে না বাজতেই শান্ত এসে হাজির। ও কাঁদতে কাঁদতে অনুপমা দেবীকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা-বাবার পর ভাল কাকাও ফাঁকি দিয়ে চলে গেল; এবার তুমিও যাও। তোমরা সবাই চক্রান্ত করে পালাতে শুরু করেছ।

অনুপমা দেবী ওকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ওরে শান্ত, তোর ভাল কাকা আমার সঙ্গে এমন সর্বনাশা রসিকতা কেন করলেন বলতে পারিস?

.

তারপর?

তারপর আর কি? পাড়ার লোকজনই অন্তিম যাত্রার উদ্যোগ-আয়োজন করেন। বিমলবাবু জামাই সেজে জনা চারেকের কাঁধে উঠতেই অনুপমা দেবী মূর্ছা গেলেন; মৌ-ও মাথা ঘুরে পড়ে যেতে যেতে ক’জনে তাকে ধরে ফেলে। তবুও মৌ-কে যেতে হয় বাবার পিছন পিছন।

তারপর?

পঞ্চভূতে বিলিন হল বিমলবাবুর মরদেহ।

.

অনুপমা দেবী যেন তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তার মুখে কোন কথা নেই বললেই হয়। সব সময় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। অনেক অনুরোধ-উপরোধ করেও এক চামচের বেশি ভাত তার মুখে ওঠে না।

আর?

হঠাৎ কখনও কখনও খুব জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রায় আপন মনেই বলেন, তুমি চলে যাবার আগে একবার ডাকলেও না?

আবার কখনও কখনও বলেন, আমি এমন অপদার্থ স্ত্রী যে তুমি চলে যাবার পরও তোমারই পাশে অঘোরে ঘুমুলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা! আমার মতো স্ত্রীকে নিয়ে তুমি এত বছর ঘর করলে কী করে?

.

তবু সূর্য ওঠে, অস্ত যায়। কখনও চাঁদের আলো, কখনো আবার অমাবস্যার অন্ধকার। স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত যথারীতি আগের মতোই চলছে। মানুষজনও তাদের নিত্যকর্ম করে চলেছে। না, কোথাও ছন্দপতন হচ্ছে না, হবেও না।

শান্ত ফিরে গিয়েছে। মৌ-কেও আবার কাজ শুরু করতে হয়েছে। তবে মা-কে দেখার জন্য দুটি নার্স পালা করে দেখাশুনা করছে। এছাড়া পাড়ার মেয়ে-বউরা হরদম আসা-যাওয়া করছেন।

শান্ত রোজই ফোন করে। তাছাড়া প্রত্যেক শনিবার বা রবিবার এসে ভাল মা-কে দেখে যাচ্ছে। ডা. চ্যাটার্জী প্রত্যেক দিন অনুপমা দেবীর পালস্ দেখছেন, প্রেসার দেখছেন, স্টেথোর চেস্ট পিস ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেন বুক-পিঠ। ক’দিন অন্তর ই-সি-জি হচ্ছে।

ডা. চ্যাটার্জীকে গম্ভীর দেখেই মৌ বলে, জ্যেঠু, মা-কে কেমন দেখলেন?

উনি যে বিশেষ ভাল নেই, তা তো তুই বুঝতে পারছিস। তবে ওকে ঠিক মতো খাওয়াতে পারলে ভাল হয়।

অনেক অনুরোধ-উপরোধ করেও তো মা-কে বেশি খাওয়ানো যাচ্ছে না; তবে সিস্টাররা খুবই দেখাশুনা করছেন।

ওরা খুব ভাল বলেই তো আমি তোর মা-কে দেখাশুনার জন্য লাগিয়েছি। যাইহোক ওষুধ পত্তর তো খাচ্ছেন; লেট আস হোপ ফর দ্য বেস্ট।

এইভাবেই বিমলবাবুর মৃত্যুর পর তিন মাস কাটলো।

.

সেদিন শনিবার।

সকালের ফ্লাইটে শান্ত এসেছে। ও অনুপমা দেবীকে জড়িয়ে ধরে একটু হেসে বলে, ভাল মা, আমি এলে তোমার ভাল লাগে?

অনুপমা দেবীও একটু হেসে খুব আস্তে আস্তে বলেন, খুব ভাল লাগে।

ঠিক সেই সময় ডা. চ্যাটার্জী এলেন।

শান্তকে দেখেই উনি বলেন, তুই কখন এলি?

একটু আগে এসেছি।

আর কথা না বাড়িয়ে ডা. চ্যাটার্জী অনুপমা দেবীকে পরীক্ষা করে ঘরের বাইরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই সিস্টার বলেন, স্যার, কিছু ওষুধ চেঞ্জ করবেন নাকি?

কোর্স শেষ হয়েছে?

স্যার, আরো দুদিনের ওষুধ আছে।

এই কোর্স শেষ হবার পর চেঞ্জ করব।

ডা. চ্যাটার্জী ঘরের বাইরে যেতেই শান্ত বলে, জ্যেঠু, ভাল মা-কে কেমন দেখলেন?

মৌ-এর কাঁধে একটা হাত রেখে উনি বলেন, তোর ভাল কাকা মারা যাবার পরও যে তার পাশে শুয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন, সেই অপরাধ বোধের ব্যাপারটা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

হ্যাঁ, জ্যেঠু, ঠিক বলেছেন।

মন থেকে যদি এই অপরাধবোধ না চলে যায়, তাহলে ওর শারীরিক উন্নতি হওয়া খুবই কঠিন।

ডা. চ্যাটার্জী চলে যেতেই মৌ আর শান্ত ঐ ঘরে ফিরে যায়।

সিস্টার ওদের বলেন, মাসিমা, অনেকক্ষণ শুয়ে আছেন; এবার ওকে একটু উঠে বসাব।

আমি ওকে উঠে বসাচ্ছি।

কথাটা বলেই শান্ত ওকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে বসিয়ে দিতেই অনুপমা দেবী ওরই গায় হেলান দেন। সিস্টার ওকে একটু দুধ খাওয়াতে যেতেই মৌ ওর হাত থেকে দুধের গেলাস আর চামচ নিয়ে নিজেই মা-কে একটু একটু করে দুধ খাওয়ায়।

দু’তিন চামচ দুধ খাওয়ার পরই অনুপমা দেবী হঠাৎ বেশ খানিকটা বমি করেই দু তিনবার হিক্কা তুলে এক হাত দিয়ে মেয়ের হাত ধরে শান্তর গায়ের পর ঢলে পড়েন।

মৌ গলা চড়িয়ে বলে, মা, ও মা, কী হয়েছে?

শান্ত দু’হাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে বলে, ভাল মা, বল, কী কষ্ট হচ্ছে?

সিস্টার সঙ্গে সঙ্গে ওকে শুইয়ে দেয়।

রাধা মাসি ছুটে গিয়ে ডা. চ্যাটার্জীকে ডেকে আনে।

ডা. চ্যাটার্জী ওর পালস দেখেই কানে স্টেথো দিয়ে চেস্ট পিস দিয়ে বুক পরীক্ষা করেই বলেন, সরি, সী ইজ নো মোর।

.

পুরো এক মাস ছুটির পর মৌ বোম্বে এসেছে পাতিল সাহেবের তলব পেয়ে; তবে ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে শান্তর সঙ্গে জরুরী কথাবার্তা বলবে বলে সোমবারের বদলে শনিবার সকালের ফ্লাইটেই এসেছে।

সারাদিন দু’জনেই আনন্দে খুশিতে কাটাবার পর সন্ধের সময় ব্যালকনিতে পাশাপাশি বসেই মৌ বলে, শান্তদা, এবার তো আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে।

হ্যাঁ, তা তো ভাবতেই হবে।

বল, কবে আমাদের বিয়ে হবে।

বলব, বলব।

একটু চুপ করে থাকার পর শান্ত বলে, তুই আমার মায়ের গুরুদেবকে দেখেছিস?

হ্যাঁ, একবার দেখেছি।

কবে?

হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষা শেষ হবার কদিন পর।

ওকে তোর কেমন লেগেছিল।

অসম্ভব ভাল; দেখলেই মাথা নুয়ে আসে। তাছাড়া ওর চোখের দিকে কিছুতেই তাকানো যায়

শান্ত বলে, উনি খুবই বড় সাধক ছিলেন।

সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

কী করে বুঝলি?

মৌ একটু হেসে বলে, উনি আমাকে দেখেই বলেছিলেন, বেটি, তুই এম. এ পাস করেই খুব বড় চাকরি পাবি।

তাই নাকি?

হ্যাঁ, শান্তদা।

শান্ত একটু হেসে বলে, আমি যখন মা-র পেটে মাত্র ছ’মাসের তখনই উনি মাকে দেখে বলেছিলেন, তুই তো ছেলের মা হতে যাচ্ছিস।

হ্যাঁ, আমি দু’মায়ের কাছেই এই কথা শুনেছি।

শান্ত উঠে দাঁড়িয়েই বলে, এবার ঘরে চল; তোকে মায়ের একটা চিঠি দেখাব।

হ্যাঁ, চল।

শান্ত ঘরে এসে আলমারীর লকার খুলে একটা চিঠি বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, পড়ে দ্যাখ।

..স্নেহের শান্ত, তোকে একটা বিশেষ কথা জানাবার জন্যই এই চিঠি লিখছি। আমি আমার পরমপূজ্য গুরুদেবকে বলেছিলাম, বাবা শান্ত যদি আমার হৃৎপিণ্ড হয় তাহলে মৌ আমার চোখের মণি। মৌ আমার গর্ভে না জন্মালেও ও আমার মেয়ে, আমি ওর মা। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই শান্ত আর মৌ-এর ভাব-ভালবাসা; ওরা যত বড় হয়েছে, তত গম্ভীর হয়েছে। ওদের ভালবাসা। আপনি দয়া করে অনুমতি দিলে আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই।

গুরুদেব দু’এক মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকার পর বললেন, আনুষ্ঠানিক বিয়ের তিন মাসের মধ্যে তোর মৌ বিধবা হবে; তবে আনুষ্ঠানিক বিয়ে না করে ওরা যদি শুধু মালাবদল করে একসঙ্গে জীবনযাপন করে তাহলে ওদের কোন অমঙ্গল হবে না।…

চিঠিটা পড়ে মৌ যেন বাকরুদ্ধ হয়; আপন মনে শুধু আকাশ-পাতাল চিন্তা করে।

শান্ত এক হাত দিয়ে আলতো করে ওকে ধরে বলে, আমরা মালাবদল করেই একসঙ্গে জীবন কাটিয়ে দেব।

মৌ একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে বলে, না, শান্তদা তা হয় না।

কেন?

আমি সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে সবাইকে বলতে চাই, আমি তোমার স্ত্রী, তুমি আমার স্বামী।

আমরা একসঙ্গে থাকলেও তো সবাইকে সেই পরিচয় দেওয়া হবে।

আমি বালির উপর স্বপ্নের প্রাসাদ গড়তে চাই না।

বালির উপর প্রাসাদ গড়বি কেন? আমি কথা দিচ্ছি, জীবনেও কোনদিন তোর অমর্যাদা করব না।

আমি রক্ষিতার মতো জীবন কাটাতে চাই না।

না, শান্ত আর একটাও কথা বলে না; নীরব থাকে মৌ-ও।

খাওয়া-দাওয়া করে দু’জনেই শুতে চায় কিন্তু মাঝখানে অনেক দূরত্ব থাকে।

অন্যান্য রবিবারের মতো শান্ত দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে কিন্তু ফ্ল্যাটের কোথাও মৌ-কে দেখে না। ও মনে মনে ভাবে, মৌ হয়তো কোন হোটেলে চলে গেছে।

সোমবার অফিসে গিয়েই শান্ত জানতে পারে, মৌ চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।

.

মৌ শূন্য মন নিয়ে শূন্য বাড়িতে ফিরে এল।

বাবাকে হারিয়ে মনে হয়েছিল যেন মাথার উপর এক আস্ত পাহাড় ভেঙে পড়ল; মাকে হারিয়ে মনে হল পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। তারপর? শেষ পারানির কড়ি শান্তদা।

শৈশব, কৈশোরের প্রাণের বন্ধু, প্রথম যৌবনে যাকে ভালবেসে, যার ভালাবাসা পেয়ে মনে-প্রাণে রামধনুর রঙে রাঙিয়ে উঠেছে, সেই শান্তদাকে বহুদিন পরে যৌবনের ভরা জোয়ারে পেয়ে উত্তাল আনন্দে দু’জনেই ভেসে গিয়েছি তাজ হোটেলের স্বপ্নময় পরিবেশে।

আর কী?

জীবনে প্রথম একটা বিচিত্র আনন্দঘন পূর্ণতার স্বাদ পায় মৌ।

আর শান্ত?

সে বাবাকে হারিয়েছে, হারিয়েছে মাকে আর তারপর থেকেই নিঃসঙ্গতার জ্বালায় জ্বলেপুড়ে মরেছে। মৌকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে তার অশান্ত মন শান্ত হয়েছে।

মেরিন ড্রাইভের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসে দু’জনে দু’জনের হাত ধরে দু’জনেই ভবিষ্যতের আনন্দময় দ্বৈত জীবনের স্বপ্ন দেখেছে। রহস্যময় মধ্যরাত্রির অন্ধকারে দুটি প্রাণ যেন দরবারী কানাড়ার সুরের যাদুতে আন্দোলিত হয়।

তারপর?

বোধনেই হঠাৎ বিসর্জনের বাজনা বেজে ওঠে।

মৌ-এর মনপ্রাণ হঠাৎ জ্বালা করে ওঠে। শূন্য মন, শূন্য দৃষ্টি। সামনে যেন সব অন্ধকার।

.

কী হল মৌ? খেতে এসো। সব যে ঠান্ডা হয়ে গেল।

রাধা মাসি আপন মনেই বলে, তিন তিনবার তোমাকে ডেকে গেলাম, তা কি তোমার কানে যায়নি?

হ্যাঁ, মাসি আসছি।

মৌ খেতে বসতেই রাধা বলে, কাজকর্ম না করে সারাদিন বাড়িতে বসে কি যে ভাবো তা তুমিই জানো। তাছাড়া চব্বিশ ঘণ্টা বাড়ির মধ্যেই বা বসে থাক কেন? তোমার তো কম বন্ধুবান্ধব নেই; তাদের কাছে গেলেও তো মন ভাল হয়।

মৌ ওর কথার কোন জবাব দেয় না। কী জবাব দেবে? চুপ করে থাকে।

মৌ বেশ বুঝতে পারে, বুকের মধ্যে একটু চোরা কুঠী আছে যেখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজন প্রাণের মানুষ পাকপাকি আসন বিছিয়ে বসেন। কী আশ্চর্য! সেখানেও শান্তদা?

মৌ মনে মনে বলে, ‘নয়ন ছেড়ে চলে গেলে। এলে সকল মাঝে/তোমায় আমি হারাই যদি/তুমি হারাও না যে..’। কী আশ্চর্য মানুষের মন? যাকে হারাতে চাই, সে কিছুতেই হারিয়ে যায় না। যাকে শত যোজন দূরে ফেলে এসেছি, সেই মনের পর্দায় অহরহ ভেসে ওঠে।

তাইতো ওর বলতে ইচ্ছা করে ‘মনে রবে কি না রবে সে আমার মনে নাই।/ক্ষণে ক্ষণে আমি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই’।

আবার কোন কোনদিন মৌ সাত সকালে উঠেই মা-বাবার ঘরে এদিক-ওদিক ঘুরে দেখে। হঠাৎ একটা আলমারী খুলে বাবার জামা-কাপড়গুলোতে হাত দেয়, গন্ধ শোঁকে। একটু হেসে মনে মনে বলে, জানো বাবা, তোমার জামাকাপড়ে এখনও তোমার গায়ের গন্ধ লেগে আছে।

তারপর এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতেই হঠাৎ একটা ছবি হাতে তুলে নিয়েই মৌ গলা চড়িয়ে বলে, ও মাসি, শিগগির একটা জিনিষ দেখে যাও।

রাধা ঘরে ঢুকেই বলে, ডাকছ কেন?

এই ছবিটা দেখ।

রাধা মাসির হাতে ছবিটা দিয়েই হাসতে হাসতে বলে, আমি যেদিন প্রথম শাড়ি পরে স্কুলে যাই, সেদিন বাবা আমার এই ছবি তোলেন।

তাই নাকি?

মাসি, বাবা সেদিন কি বলেছিলেন জানো?

কী বলেছিলেন?

বলেছিলেন, তোক দেখতে ঠিক আমার মায়ের মতো লাগছে।

আচ্ছা!

হ্যাঁ, মাসি।

সে মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, বাবা সত্যি আমাকে মায়ের মতো ভালবাসতেন। তাইতো বাবা আমাকে কখনও ডাকতেন ‘মৌ মা’ বলে, কখনো আবার ‘মাদার’ বা জননী’ বলে।

রাধা হাসতে হাসতে নিজের কাজে চলে যায়।

মৌ সেদিন নিজের ঘরে বসেই হঠাৎ একটা পুরনো দিনের অ্যালবাম হাতে তুলে নিয়ে কয়েকটা পাতা উল্টিয়ে দেখার পরই একটা ছবি দেখে আপন মনেই বলে, তখন আমার বয়স কত? এগারো না বারো।

সেদিনের ঘটনা মৌ জীবনেও ভুলবে না; অথচ সেদিনের কথা মনে হলেই হাসি পায়।

.

সেদিন রবিবার।

মৌ বাথরুমে যাবার আগে প্রায় চিৎকার করে বলে, মা, আমি বাথরুমে যাচ্ছি; আমার দেরি হবে। ডাকাডাকি করো না।

দেরি হবে কেন?

অন্যদিন স্কুল থাকে বলে তো ভাল করে চান করতে পারি না; আজ সাবান মেখে ভাল করে চান করব, শ্যাম্পু করব। দেরি তো হবেই।

বেশি দেরি করিস না।

মৌ সে কথার জবাব না দিয়েই বাথরুমে ঢুকে যায়।

মিনিট দশেক পরের কথা।

হঠাৎ মৌ আতঙ্কে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতো চিৎকার করে, ও মা, শিগগির এসো, আমি আর বাঁচব না।

মনিকা দেবী প্রায় দৌড়ে বাথরুমে যান।

মৌ কাঁদতে কাঁদতেই বলে, ও মা আমার পেট থেকে কি রক্ত বেরুচ্ছে! দু’পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

মনিকা দেবী একটু হেসে বলেন, তোর কিছু হয়নি; সব মেয়েদেরই এইরকম হয়। তুই সত্যি বড় হয়ে গেলি।

.

তারপর?

বিকেলের দিকে শান্ত আসতেই সেই ইসতে হাসতে বলে, জানো মা আজ আমাকে কী বলেছে?

ভাল মা কী বলেছে?

বলেছে, আমি বড় হয়ে গেলাম।

তার মানে?

তার মানে তাই।

ভাল মা হঠাৎ ও কথা বলল কেন?

মৌ একটু হেসে বলে, সে তুমি বুঝবে না।

আমি বুঝব না?

না।

কেন?

আমি অত-শত জবাব দিতে পারব না। আসল কথা হচ্ছে, কোন ছেলেকেই বলতে পারব না, মা কেন ও কথা বলেছে।

মৌ, প্লীজ আমাকে বল।

মৌ দুহাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে দু’গালে আলতো করে চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে বলে, মাই ডিয়ার শান্তদা, তোমাকেও সে কথা বলা যাবে না।

বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি করতে করতে আরো কত কথা মনে হয়।

এইভাবেই বোম্বে থেকে আসার পর তিন মাস কেটে গেল।

.

রেজিষ্ট্রি চিঠিটা হাতে নিয়েই মৌ অবাক হয়। এইতো দিন পনের আগে নিজের ব্যাপারে সব প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে একটা আবেদন পত্র পাঠিয়েছিলাম। এরই মধ্যে…

হাজার হোক লোরেটো কলেজ; ওরা তো সরকারী বা পরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলোর মতো বিলম্বিত লয়ে কাজ করে না। ওখানে অধ্যাপনা করতে হবে জেনে মৌ-এর মন অনেক দিন পূর্বআনন্দে খুশিতে ভরে ওঠে।

ও মাসি, শিগগির শুনে যাও।

মৌ প্রায় চিৎকার করে বলে।

রাধা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ও ঘরে ঢুকেই বলে, আবার কী হল যে অমন চিৎকার করে ডাকলে?

মৌ দু’হাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে মুখের সামনে মুখ নিয়ে হাসতে হাসতে বলে, সামনের সোমবার থেকেই আমি একটা কলেজে পড়াব।

রাধাও হাসতে হাসতে বলে, তাহলে তুমিও দাদাবাবুর মতো কলেজে পড়াবে; সত্যি খুব ভাল খবর।

ও না থেমেই বলে, তোমার মতো গুণী মেয়ে কোন কাজ না করে বাড়ির মধ্যে বসে থাকবে, তা আমি ভাবতেই পারি না।

ও মাসি, আমার কলেজ শুরু ন’টায়; সাড়ে আটটার মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরুতে হবে।

তুমি খাবে ক’টয়, সেটা বল।

ঠিক আটটায় খেতে বসব।

তখন কী তুমি ভাত-টাত খেয়ে যাবে?

না, না; অত সকালে কী ভাত খাওয়া যায়?

ঠিক আছে, জলখাবার খেয়েই যেও কিন্তু তুমি ফিরবে কখন?

বোধহয় আড়াইটে-তিনটের মধ্যে।

মৌ সঙ্গে সঙ্গেই বলে, আমি কাল সকালে একবার কলেজে যাব প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে; তখন সবকিছু জেনে আসব।

রাধা ডান হাত দিয়ে ওর গাল টিপে একটু হেসে বলে, আমাদের সোনার টুকরো মেয়েটা আবার সেজেগুজে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে পড়াতে যাবে ভেবেও আমার ভাল লাগছে।

মৌ দু’হাত দিয়ে ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, তোমাকে মাসি বলে ডাকলেও তুমিও তো আমার একটা মা। আমার ভাল হলে যে তোমার ভাল লাগবে, তা কি আমি জানি না?

.

অনেক দিন পর মৌ অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে থাকে, খুব ভাল করে সাবান মাখে; স্নানের পর ‘ফেস ওয়াস’ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে। ভাল লাগার আনন্দে ড্রেসিং টেবিলে বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাল করে দেখে; একটু প্রসাধনও করে। মনে মনে বলেন, ইয়েস, আয়াম স্টীল লুকিং প্রেটি গুড!

দুপুরবেলায় মৌ খেতে বসতেই রাধা জিজ্ঞেস করে, তুমি কী দাদাবাবুর মতো যোগমায়া আর আশুতোষ কলেজেই পড়াবে?

না, না, ও কলেজে না।

তবে কোন কলেজে?

মৌ একটু হেসে বলে, আমি পড়াব লোরেটো কলেজে।

সে আবার কাদের কলেজ?

মাসি, ওই কলেজ চালায় খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীরা।

তার মানে ওটা মেমসাহেবদের কলেজ?

হ্যাঁ, তা বলতে পারো।

ওখানে কারা পড়ে?

স্কুলের শেষ পরীক্ষায় যেসব মেয়েরা অনেক নম্বর পেয়ে খুব ভালভাবে পাস করে, শুধু সেই সব মেয়েরাই ওই কলেজে পড়ার সুযোগ পায়।

একটু চুপ করে থাকার পর রাধা বলে, ওই কলেজে কী খ্রিস্টান মেয়েরাই পড়ে?

মাসি, সব স্কুল-কলেজেই সব ধর্মের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারে; লোরেটো কলেজেও নিশ্চয় সব ধর্মের মেয়েরাই পড়ে।

.

সন্ধের পর মৌ-কে লেখাপড়ার টেবিলে বইপত্তর নিয়ে বসতে দেখেই রাধা বলে, তুমি কী আবার কোন পরীক্ষা দেবে যে বইপত্তর নিয়ে বসেছ?

মৌ একটু হেসে বলে, না, মাসি, আমি কোন পরীক্ষা দেব না; তবে অনেক দিন পড়াশুনার সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই বলে কলেজ যাবার আগে একটু বইপত্তর উল্টেপাল্টে দেখছি।

ঠিক বুঝলাম না।

মাসি, ভাল ছেলেমেয়েদের পড়াতে হলে, যারা পড়াতেন তাদেরও একটু পড়াশুনা করে কলেজে যেতে হয়।

এবার বুঝেছি।

পরের দিন মৌ কলেজে গিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে; খুবই আন্তরিক কথাবার্তা হয় দু’জনের মধ্যে। তারপর প্রিন্সিপাল ওকে পরিচয় করিয়ে দেন কিছু অধ্যাপিকার সঙ্গে। মৌ খুশি মনেই বাড়ি ফিরে আসে।

শোনো মাসি, মঙ্গলবার আর শুক্রবার আমার ক্লাস শুরু সাড়ে এগারোটায়; ওই দু’দিন ভাত খেয়েই কলেজ যাব। অন্যান্য দিন আমি দুটো আড়াইটের মধ্যে কলেজ থেকে ফিরে ভাত খাব।

ঠিক আছে।

.

সোমবার।

মৌ অভ্যাস মতো ছ’টার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। বাথরুম থেকে ঘুরে আসতেই রাধা ওকে চা-বিস্কুট দেয়। চা খেতে খেতে মৌ খবরের কাগজের উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতেই বারবার ঘড়ি দেখে।

না, মৌ আর দেরি না করে বাথরুমে যায়। ভালভাবে স্নান করে, মাথায় শ্যাম্পু করে, তারপর ফেস ওয়াস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে।…

ঘরে এসে অন্তর্বাস পরার পর চিকনের কাজ করা সাদা ব্লাউজ পরার পর চিকনের কাজ করা সাদা খোলের শাড়ি পড়ে প্লিটগুলো ঠিক করে। বড় আয়নার সামনে বারবার ঘুরেফিরে নিজেকে দেখে; গোড়ালি দিয়ে শাড়ির পিছন দিকটা একটু নীচে নামায়। দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়েই মৌ গলা চড়িয়ে বলে, মাসি, খেতে দাও।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, খাবার রেডি, তুমি এস।

চারটে লুচি হালুয়া দিয়ে খেয়েই মৌ উঠে পড়ে।

একি, আর খেলে না?

এখুনি তো দৌড়তে হবে; এখন কী বেশি খাওয়া যায়?

মুখ ধুয়েই ঘরে এসে ফেস টাওয়েল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে, ঠোঁটের উপর দিয়ে ন্যাচালার কালারের লিপস্টিক বুলিয়ে নিয়েই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে মৌ নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে মা-বাবার ঘরে গিয়ে ওদের ছবিতে প্রণাম করে।

মৌ ওই ঘর থেকে বেরিয়েই রাধাকে প্রণাম করে বলে, মাসি, আশীর্বাদ করো, কলেজে যেন ঠিক মতো পড়াতে পারি।

নিশ্চয়ই ঠিক মতো পড়াতে পারবে।

তারপর রাধা হাসতে হাসতে বলে, তোমাকে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে; তবে বাঁ হাতে কিছুই পরলে না?

বাঁ হাতে কিছু পরতে আমার ভাল লাগে না; ডান হাতে ঘড়ি আছে, তাই যথেষ্ট।

.

পৌনে ন’টা বাজতেই মৌ কলেজে পৌঁছে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে।

সিস্টার, গুড মর্নিং।

গুড মর্নিং ডক্টর মিস চৌধুরী।

দু পাঁচ মিনিট কথাবার্তা বলার পরই ঘণ্টা বাজে; তবে ওটা ওয়ার্নিং বেল। ফাঁইন্যাল বেল বাজতেই প্রিন্সিপাল সিস্টার জোনস্ মৌ-কে নিয়ে সেকেন্ট ইয়ার ক্লাসে যান।

ওরা দু’জনে ক্লাসে ঢুকতেই সব মেয়ে উঠে দাঁড়ায়। সিস্টার জোনস্ ওদের বসতে বলার ইঙ্গিত করেই বলেন, আই হ্যাভ টু ইনট্রোডিউস ইওর নিউ ইকনমিক্স লেকচারার ডক্টর মিস মহুয়া চৌধুরী। ডক্টর চৌধুরী স্টুডেন্ট লাইফে অত্যন্ত কৃতি ছাত্রী ছিলেন। গবেষণা করেছেন ভারত বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর কেজরিওয়ালের অধীনে এবং ওর গবেষণার থিসিস বিচার করেছেন অন্য দু’জন বাদে অক্সফোর্ডের প্রফেসর ম্যাক্সওয়েল। তাহলেই তোমরা বুঝতে পারছ, তোমাদের নতুন লেকচারার কী অসাধারণ গুণী। যাইহোক আমার স্থির বিশ্বাস, ডক্টর চৌধুরীকে লেকচারার হিসেবে তোমাদের খুবই ভাল লাগবে আর তোমরা খুবই উপকৃত হবে।

এই কথাগুলো বলেই সিস্টার জোনস্‌ চলে যান।

মৌ একটু হেসে বলে, মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস, আজ আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। দীর্ঘদিন আমি তোমাদেরই মতো ছাত্রী ছিলাম আর আজ আমি প্রথম ছাত্রীদের পড়াবার সুযোগ পেলাম। সেজন্য আমি বোধহয় সারা জীবনেও তোমাদের কথা ভুলতে পারব না। তোমরা আমাকে বন্ধু মনে করলে আমি খুশি হব।

মৌ একটু থেমে বলে, আজ আমি জানব তোমরা কি পড়ছ এবং সেই মতো কাল থেকে আমি তোমাদের পড়াতে শুরু করব। আজ আমি তোমাদের সবার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই।

…ইয়েস, হোয়াট ইজ ইওর নেম…আমি চৈতালী, আমি গার্গী, আমি মধুরিমা, আমি লিলি, আমি সায়ন্তনী, আমি ফিরোজা, আমি শ্রাবণী, আমি ডরোথী…

ঘণ্টা পড়তেই মৌ বলে, আমি আবার বলছি, আমার সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক যত ইনফর্মাল হবে, আমরা উভয়েই তত বেশি উপকৃত হব।

মৌ ক্লাস থেকে বেরুবার উদ্যোগ নিতেই ছাত্রীরা ওকে ঘিরে ধরে সমস্বরে বলে, ম্যাম, আপনাকে আমাদের দারুণ ভাল লেগেছে। সায়ন্তনী একটু হেসে বলল, আপনার সুন্দর মুখে সুন্দর হাসি দেখেই আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। অন্য মেয়েরাও কত কি বলে; সবার মুখেই খুশির হাসি। মৌ নিজেও খুশির হাসি হাসতে হাসতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে।

.

মেয়েরা সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে তাদের নতুন লেকচারারকে নিয়ে আলোচনা।…

শ্রাবণী বলে, সী ইজ সো বিউটিফুল!

লিলি বলে, সোজা কথায় সী ইজ চার্মিং!

ফিরোজা বলে, মাই গড! কি দারুণ ফিগার!

সায়ন্তনী বলে, যেমন রূপ তেমনি রুচিসম্পন্ন।

চৈতালী বলে, আমি বলব, সী কেম, সী স-অ, সী কংকার্ড!

অন্য মেয়েরাও কত কি বলে।

অধ্যাপিকা হিসেবে প্রথম দিন খুবই ভাল কাটল মৌ-এর।

.

বাড়ি ফিরতেই রাধা জিজ্ঞেস করে, কলেজ কেমন লাগল?

মাসি, কলেজের পরিবেশ এত ভাল যে কি বলব।

তাই নাকি?

হ্যাঁ, মাসি।

ছাত্রীদের কেমন লাগল?

খুব ভাল লেগেছে।

ছাত্রীরা নিশ্চয়ই তোমাকে পেয়ে খুশি?

মৌ হাসতে হাসতে বলে, তাইতো মনে হল।

সপ্তাহ দুয়েক পড়াবার পরই ছাত্রীরা বলতে শুরু করল, ম্যাম, আপনার পড়াবার স্টাইল একেবারে আলাদা।

পড়াবার স্টাইল আলাদা হলেই ভাল হবে, তার কোন অর্থ নেই; আসল কথা হচ্ছে, আমার পড়াবার স্টাইল তোমাদের ভাল লাগছে কি না বা ব্যাপারটা বুঝতে সাহায্য করছে কিনা।

হ্যাঁ, ম্যাম, খুব ভাল লাগছে। আমাদের কাছে যা কঠিন মনে হয়, তা আপনি অল্প কথায় খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন।

যাক, শুনে ভাল লাগল।

মৌ সঙ্গে সঙ্গে বলে, তোমরাও আমাকে টুকটাক প্রশ্ন করবে।

ওর কথা শেষ হতে না হতেই মনীষা জৈন উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যাম হোয়াট ইজ ইনফ্লেশন? মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপারটা কী?

জি. ডি. পি অর্থাৎ গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন। সোজা কথায় আমাদের দেশে মোট যা উৎপন্ন হয়, অ্যাম আই ক্লিয়ার?

ইয়েস ম্যাম।

এবার চিন্তা করো দেশে কি কি উৎপন্ন হয়। আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে সব চাইতে বেশি টাকার জিনিষ উৎপন্ন হয় কৃষিতে।

ম্যাম, স্টীল, সিমেন্ট, ফার্টিলাইজার না?

না।

মৌ মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, ধান, গম, বজরা, তৈলবীজ, শাকসজি, ফলমূল, তামাক, ডাল, ওষুধ তৈরির গাছপালা ইত্যাদি ইত্যাদি হচ্ছে কৃষিজাত দ্রব্য। আমাদের দেশে সব মিলিয়ে যা উৎপন্ন হয়, তার পঁচাত্তর আশি ভাগ আয়ই আসে কৃষিজাত দ্রব্য থেকে।

দু’চারটি মেয়েকে হাসতে দেখে বলে, তোমরা ভাবতে না পারলেও এটাই সত্যি, এটাই বাস্তব।

ও একটু থেমে বলে, এরপর আছে কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র-মাঝারি-ভারী শিল্প আর সার্ভিস সেক্টর অর্থাৎ ভারতের লোকজন যা কাজ করে এর টোটাল যোগফল প্লাস কৃষিজাত দ্রব্যের টোটাল যোগফল অর্থাৎ সব মিলিয়ে যত টাকার জিনিষ উৎপাদন হয় তাই হল গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন।

অ্যাম আই ক্লিয়ার?

ইয়েস, ইয়েস, ইউ আর ক্লিয়ার।

মনে করো, আমাদের দেশে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন এর মূল্য হচ্ছে, দশ হাজার কোটি টাকা। এবার যদি কেন্দ্রীয় সরকার মোট দশ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ে, তাহলে কোন ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি হয় না।

মৌ একটু থেমেই বলে, দশ হাজার কোটি টাকার যত বেশি টাকা বাজারে ছাড়বে তত বেশি মুদ্রাস্ফীতি হবে অর্থাৎ পাঁচ পার্সেন্ট বেশি টাকা বাজারে ছাড়লে পাঁচ পার্সেন্ট মুদ্রাস্ফীতি…দশ পার্সেন্ট বেশি টাকা ছাড়লে দশ পার্সেন্ট ইনফ্লেশন হবে।

ডরোথী উঠে দাঁড়িয়ে বলে, এবার ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার হল।

.

প্রতিদিন কলেজে শত শত প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর সদ্য যৌবনা মেয়ের মাঝখানে কাটিয়ে মৌ রোজ খুশি মনেই বাড়ি ফেরে। সব ছাত্রীদের হাসি মুখ দেখতে দেখতে মৌ-এর মুখেও হাসি ফিরে আসে, আনন্দ ফিরে আসে।

তবে কলেজের ছুটি হলে মৌ কিছুতেই বাড়ির মধ্যে বন্দিনী হয়ে থাকতে পারে না; বেরিয়ে পড়ে কোথাও না কোথাও। কখনো দার্জিলিং, কখনো পুরী, কখনো শিলং বা কোদাইকানাল, কখনো জৈসালুমের যোধপুর-উদয়পুর-জয়পুর সিমলা-ডালহৌসী।

এইভাবেই কেটে যায় বছরের পর বছর।

.

কলেজ ছুটি হবার দু’চারদিন আগে রাধা মৌ-কে বলে, এবার ছুটিতে কোথায় যাবে ঠিক করেছ?

মাসি, এবার ঠিক করেছি, পুরো ছুটিটাই-হরিদ্বারে কাটাব।

হরিদ্বারে?

হ্যাঁ, হরিদ্বারে।

তুমি তো পুরো ছুটি কখনই এক জায়গায় কাটাও না, তুমি তো চড়ুই পাখির মতো উড়ে বেড়াও নানা জায়গায়।

মৌ একটু হেসে বলে, মাসি, বুড়ি হয়ে গেছি, এই বয়সে আর পাঁচ জায়গায় ঘুরে না বেড়িয়ে হরিদ্বারেই…

তুমি বুড়ি হয়েছ?

তবে কী আমি কচি খুকি?

রাধা একগাল হেসে বলে, তোমাকে দেখে কেউ বলবে না তোমার বয়স পঁচিশ ছাব্বিশের বেশি।

কী পাগলের মতো কথা বলছ?

সত্যি বলছি, তোমাকে দেখে কেউ বলবে না, তোমার তেত্রিশ-চৌত্রিশ বছর বয়স হয়েছে। আজকাল তো বহু মেয়েই এই বয়সে বিয়ে করে।

সে যাইহোক, আমি এবার পুরো ছুটি হরিদ্বারেই কাটাব।

হ্যাঁ, তা কাটাও কিন্তু শরীরের দিকে খেয়াল রেখো।

মৌ শুধু হাসল।

.

রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লী; তারপর ইন্টারস্টেট বাস টার্মিনাস থেকে শেয়ারের ট্যাক্সিতে ডেরাডুন বাস স্ট্যান্ড। তারপর হরিদ্বারের বাসে উঠতে যাবার মুখেই দু’জনের দেখা।

বিস্মিত হয়ে দু’জনেই একসঙ্গে বলে, তুমি?

দু’জনের মুখেই হাসি।

মৌ একটু হেসে বলে, কলেজের ছুটি, তাই ছুটি কাটাতে হরিদ্বার যাচ্ছি কিন্তু তুমি?

শান্ত একটু হেসে বলে, আমি তো হরিদ্বারেই থাকি।

হরিদ্বারে?

হ্যাঁ, হরিদ্বারে।

তুমি চাকরি করছ না?

না, অনেক দিন ছেড়ে দিয়েছি।

শান্তর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটিকে দেখিয়ে মৌ জিজ্ঞেস করে, ও কে?

আমার মেয়ে।

তোমার মেয়ে?

হ্যাঁ, আমার মেয়ে।

শান্ত মেয়েটির মুখ আলতো করে তুলে ধরে বলে, মাগো, আমি তোমার বাবা না?

হ্যাঁ, তুমি আমার বাবা।

মৌ বলে, তুমি বিয়ে করলে কবে?

শান্ত একগাল হেসে বলে, বিয়ে তো বহুকাল আগেই করেছি।

তোমার বউ কোথায়? হরিদ্বারে?

সে আমার সঙ্গে থাকে না।

কেন?

শান্ত আবার একটু হেসে বলে, সে প্রায় বছর দশেক আগেকার কথা। একদিন একটু মতবিরোধ হল বলে এক রবিবার খুব ভোরে আমাকে কিছু না বলেই…

এবার মেয়েটি বলে, বাবা ইনি কে?

মাগো, ইনি তোমার মা; তুমি মাকে প্রণাম করো।

পার্বতী প্রণাম করতেই মৌ দু’হাত দিয়ে ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে স্নেহচুম্বন দেয়।

মৌ শান্তকে জিজ্ঞেস করে, এমন সোনার টুকরো মেয়েকে পেলে কোথায়?

দেবতাত্মা হিমালয় জুটিয়ে দিয়েছেন বলেই তো ওর নাম রেখেছি পার্বতী।

প্লীজ বল না, কী করে ওকে পেলে।

.

শান্ত একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, চাকরি ছেড়ে বেশ মোটা টাকা পেলাম; তাছাড়া বাবা মায়ের জন্য যে ইন্সিওরেন্স করেছিলেন, তার টাকা ব্যাঙ্কেই পড়েছিল বহুদিন। এই সব টাকা পাবার পর হরিদ্বারে এসেই গঙ্গার ধারের একটা কমপ্লেক্সে একটা সুন্দর দু’কামরার ফ্ল্যাট কিনলাম।

তারপর?

প্রথম দু’এক মাস বেশ কাটল, তারপর আর একলা থাকতে ভাল লাগছিল না বলে রোজই এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতাম।

শান্ত একটু হেসে বলে, সেদিন হৃষিকেশে গঙ্গার ধারে চুপচাপ বসেছিলাম। হঠাৎ পাঁচ-ছ’ বছরের একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে এসে বলল, বাবা, বড্ড খিদে লেগেছে; আমাকে কিছু খেতে দেবে?

তারপর?

ওকে খাইয়ে আবার ওকে নিয়ে গঙ্গার ধারে বসে ওর মা-বাবার কথা জিজ্ঞেস করি।

ও কী বলল?

বলল, গত কুম্ভমেলার সময় ও মা-বাবার সঙ্গে হরিদ্বারে এসেছিল। চার-পাঁচ দিন পরই ওর বাবা হাসপাতালে ভর্তি হয় ও দু’তিন দিন পরই মারা যায়।

ওর বাবার কী হয়েছিল?

বোধহয় কলেরা।

তারপর?

ওর মা কান্নাকাটি করতে করতে ছুটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল।

বেরিয়ে কোথায় গেল?

তারপর ও আর মায়ের দেখা পায়নি।

শান্ত চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, বেচারা বছর দুয়েক কান্নাকাটি করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে আর কোনমতে ভিক্ষা করে বেচে থেকেছে।

তারপর তোমার সঙ্গে দেখা?

হ্যাঁ।

শান্ত সঙ্গে সঙ্গে বলে, দুটো কাগজে ওর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিলাম, তারপর কোর্ট-কাছারি করে ওকে আমি আডপ্ট করলাম আর নাম দিলাম পার্বতী।

এই কাহিনী শুনে খুশিতে মন ভরে যায় মৌ-এর। একটু থেমেই বলে, তোমরা ডেরাডুনে এসেছ কেন?

শান্ত একটু হেসে বলে, মা জননীকে এখানকার একটা খুব ভাল স্কুলে ভর্তি করেছি। ও থাকে হস্টেলেই। তবে শনি-রবিবার ছুটি বলে শুক্রবার বিকেলে আমি ওকে নিয়ে যাই আবার সোমবার ভোরের বাস ধরে ওকে হস্টেলে পৌঁছে দিই।

এতক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্বতী একগাল হেসে বলে, জানো মা, শনি-রবিবার আমি আর বাবা যে কি আনন্দ করি, তা তুমি ভাবতে পারবে না।

পার্বতী, মা, তুমি কোন ক্লাসে পড়ছ?

এবার আমি ক্লাস টেন-এ উঠেছি।

বাঃ! খুব ভাল।

শান্ত বলে, জানো মৌ, পার্বতী সত্যি ভাল ছাত্রী। ও কোন সাবজেক্টে আশির কম নম্বর পায় না।

সঙ্গে সঙ্গে পার্বতী বলে, জানো মা, বাবার কোচিং এত ভাল যে কি বলব! বাবার কোচিং ঠিক মতো ফলো করলে আমার রেজাল্ট আরো ভাল হওয়া উচিত।

তোমার বাবা তো খুব ভাল ছাত্র ছিলেন; সে তো ভাল কোচিং করবেই।

মৌ না থেমেই বলে, রাজধানী এক্সপ্রেসে ব্রেকফাস্ট করার পর আর কিছু খাইনি; আমার বেশ খিদে লেগেছে।

বাবা, চল আমরা ‘কোয়ালিটি’তে যাই।

হ্যাঁ, চল।

শান্ত সঙ্গে সঙ্গে বলে, মৌ, একটু হাঁটতে পারবে তো?

খুব বেশি দূর না তো?

না, না খুব বেশি দূর না।

তাহলে চল, কথাবার্তা বলতে বলতে হেঁটে যাই।

হাঁটতে হাঁটতেই পার্বতী বলে, বাবা, মা আমাদের কাছে থাকে না কেন?

তোমার মা যে কলকাতার কলেজে পড়ায়।

পার্বতী হাসতে হাসতে বলে, বাবা, মাকে দেখে তো মনে হয়, সী ইজ এ কলেজ স্টুডেন্ট!

মৌ একটু হেসে বলে, এই বাঁদর মেয়ে এই বুড়ীকে দেখে তোমার কলেজ স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে?

সত্যি বলছি মা, তোমাকে দেখতে এত সুন্দর, এত ইয়াং যে তোমাকে কলেজ স্টুডেন্টই মনে হয়।

মৌ হাসতে হাসতে বলে, পার্বতী, এবার তোমাকে আমি পিটুনি লাগাব।

তুমি যে কি পিটুনি লাগাবে, তা আমার জানা আছে।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর পার্বতী বলে, মা, তুমি কী আমাদের ছেড়ে কলকাতা চলে যাবে?

আমি তো তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না কিন্তু তোমার বাবা কী আমাকে থাকতে দেবে?

মা, তুমি ভাল করেই জানো বাবা হ্যাঁজ এ গোল্ডেন হার্ট!

পার্বতী না থেমেই বলে, তুমি কাছে থাকো না বলে বাবা তো তোমার ছবি দিয়ে সারা বাড়ি সাজিয়ে রেখেছে।

রিয়েলী?

হ্যাঁ, মা, সত্যিই তাই। তিনজনেই হাঁটছে; হাঁটতে হাঁটতে পার্বতী ওদের থেকে একটু এগিয়ে যায়।

.

শান্ত মৌ-এর কাছে এসে চাপা গলায় বলে; তোমাকে দেখেই তো আমার মনে ঝড় উঠেছে; কার জন্য যৌবন ধরে রেখেছ?

আমার ডাকাত বরের জন্য।

মৌ ওর চোখের পর চোখ রেখে হাসতে হাসতে বলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *