৯. জঙ্গলের মধ্যে অসীম আর অপর্ণা

॥ ৯ ॥

জঙ্গলের মধ্যে অসীম আর অপর্ণা আলাদা অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। বিকেল শেষ হয়েছে একটু আগে, এখনো সন্ধ্যে নামেনি, জঙ্গলের মধ্যে আবছা আলো। রবি তখনো না ফেরায় সবাই ক্রমশ চিন্তিত হয়ে উঠছিল। কিন্তু কোথায় তাকে খোঁজা হবে—তারও ঠিক নেই। জয়া-অপর্ণাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে, শেখর চেয়েছিল ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে। কিন্তু অপর্ণা রাজী হয়নি। রবি ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল।

বাংলোটা আবার নির্জন। শুধু পাখিগুলো রাত্তিরের ঘুম শুরু করার আগে শেষবার ঝাঁক বেঁধে ডেকে নিচ্ছে। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, অসীম অপর্ণাকে বলেছিলো, চলো রুণি, একটু জঙ্গলে বেড়িয়ে আসি। তোমাকে একটা অদ্ভুত ফুলগাছ দেখাবো!

অপর্ণা বললো, এখন জঙ্গলটা বেশ ভালো লাগছে—দিনের বেলা গাছগুলোকে এমন লম্বা লম্বা মনে হয়, আমার ভালো লাগে না—আমার খালি পায়ে হাঁটতে ইচ্ছে করছে।

—না, খালি পায়ে হেঁটো না, কাঁটা ফুটতে পারে।

—কিচ্ছু হবে না। আপনিও জুতো খুলে ফেলুন না। এখানে থাক—ফেরার সময় নিয়ে যাবো। ইস্‌, কতদিন খালি পায়ে হাঁটিনি!

অপর্ণার লালরঙের চটি জোড়ার পাশে অসীমও নিজের শূ খুলে রাখলো। ওর মুখে অল্প একটু হাসির আভাস দেখা গেল। যেন ওর মনে পড়লো, কাল ওরা সমস্ত পোশাকই খুলে ফেলেছিল, কিন্তু অপর্ণাকে সে কথা বলা হয়তো ঠিক নয়।

কাল রাত্রে বাংলোয় ফেরার পথে একটা ফুলগাছ দেখেছিল অসীম, কী যেন এক নাম-না-জানা গাছ, যে গাছে একটিও পাতা নেই, শুধু ফুল। অপর্ণাকে সেই গাছটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। বললো, আশ্চর্য, গাছটায় একটাও পাতা নেই, শুধু থোকা থোকা সাদা ফুল—এরকম গাছ আমি আগে কখনো দেখিনি!

অপর্ণা কিছুতেই ঠিক আশ্চর্য বোধ করে না, সে বললো, এ আর এমন কি, দিশি আমড়া গাছেও তত একসময় কোনো পাতা থাকে না—শুধু ফুল, তারপর যখন ফুল থেকে ফল বেরোয়—তখন পাতা বেরোয় সেই ফলগুলোকে লুকোবার জন্য!

অসীম একটু আহত হয়ে বললো, না, না, আমড়া গাছ নয়, ছোট গাছ, এতে বোধহয় কোনো ফল হয় না, শুধু ফুল।

অপর্ণার ছিপছিপে ধারালো শরীর শুকনো পাতা ভাঙতে ভাঙতে যাচ্ছে অনায়াস ছন্দে। যে-কোনো মুহূর্তে কাঁটা ফোটার ভয়ে অসীমের প্রতি পদপাত সন্ত্রস্ত। ঝুপঝুপ করে অরণ্যের মধ্যে বড় তাড়াতাড়ি অন্ধকার নামে। এখন আর গাছগুলোকে আলাদা করে চেনা যায় না। কোথায় সেই ফুল গাছ, অসীম আর খুঁজে পাচ্ছে না। একবার অসীম বললো, চলো রুণি, তা হলে আমরা ফিরে যাই, তোমার দিদি ভাববেন হয়তো—

—বাঃ, গাছটা খুঁজে পাওয়া যাবে না?

—গাছটা সত্যি আছে কিন্তু, আমি কাল রাত্তিরবেলাও দেখেছিলুম—মিথ্যে কথা বলিনি।

—আমি তো অবিশ্বাস করিনি—কিন্তু খুঁজে বার করতে হবে তো! মিথ্যে হলে আমি ঠিকই বুঝতে পারতুম।

—ইস্‌, তোমার ভারি গর্ব, তুমি সব মিথ্যে কথা বুঝতে পারো?

—সব! প্রত্যেকটা অক্ষর-চেষ্টা করে দেখুন।

—আচ্ছা, আমি যদি বলি, আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি, তুমি বিশ্বাস করবে?

অপর্ণা হা-হা করে হেসে উঠলো। তার হাসি থামতেই চায় না। অন্ধকারে এখন তার শরীর ভালো দেখতে পাওয়া যায় না—শুধু তার শরীরময় হাসি—।

অসীম বললো, তুমি বিশ্বাস করলে না?

—কেন বিশ্বাস করবো না? এতে আর সত্যি-মিথ্যে কি আছে? এ তো অন্যরকম।

—না, অন্যরকম নয়, আমার মন বার বার এই কথাটা জানাতে চাইছে।

অপর্ণা অসীমের থেকে একটু দূরে, সে বললো, তাতে কি হয়েছে, আমরা ফুল ভালোবাসি, কোকাকোলা ভালোবাসি, চিকেন চৌমিন ভালোবাসি, ট্রেনের জানলার ধারের সীট ভালোবাসি, অনেক ছেলেকে ভালোবাসি, অনেক মেয়েকে ভালোবাসি—এর মধ্যে মিথ্যের কি আছে? আমাকে তো আপনি ভালোবাসবেনই, আমি তো আর দেখতে খুব খারাপ না—

অসীম বললো, তুমি ছেলেমানুষ নাকি! আমি সে-রকম ভাবে বলছি না—

—অন্য রকম আবার কী আছে বলুন। মনে করুন, এখানে আমার সঙ্গে যদি আপনার দেখা না হতো—তা হলেও আপনি কী করে আমাকে ভালোবাসতেন? কিংবা, আমার বদলে যদি অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা হতো—আমার চেয়েও সুন্দরী, তাকেও কি আপনি ভালোবাসতেন না?

—মোটই না। আমি আগেও অনেক মেয়ের সঙ্গে মিশেছি, কারুকে এমন ভালোবাসিনি!

—বাসেননি? আমি তো অনেক ছেলের সঙ্গে মিশেছি, তার মধ্যে অনেককেই আমি ভালোবাসি।

—যাঃ, সে রকম নয়। তুমি কি এতই ছেলেমানুষ যে, কিছু বুঝতে পারো না!

—বাঃ, এর মধ্যে না বোঝার কি আছে?

—তুমি বুঝতে পারছে না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে?

অপর্ণা আবার সেইরকম অনাবিল ভাবে হেসে উঠলো। তার মুখ স্পষ্ট দেখা না গেলেও, সেই হাসিরও যেন একটা রূপ আছে। অসীমের থেকে একটু দূরে সরে গেছে অপর্ণা, সেখান থেকেই সরল গলায় বললো, বাঃ কষ্ট হবে কেন? আপনার সঙ্গে বেড়াতে আমার তো খুব ভালো লাগছে! কেউ কারুকে দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু পাশাপাশি হাঁটছি, বেশ মজা, না?

অসীম সত্যি এক ধরনের কষ্ট বোধ করছিল। সে অনুভব করছিল, অপর্ণার সঙ্গে তার প্রায় এগারো-বারো বছর বয়েসের তফাত। এই বারো বছরে যেন আর একটা অন্য যুগ এসে গেছে। অপর্ণার মতন মেয়েরা ভালোবাসার কথা শুনলে হাসে, তোমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে, শুনলে হাসে। ওদের কাছে এইসব কথা অন্য ভাষায় বলা দরকার। কিন্তু কী সেই ভাষা, অসীম জানে না। ভারী গলায় অসীম বললো, তুমি সত্যিই ছেলেমানুষ!

—আমি মোটেই ছেলেমানুষ নই! আমি অনেক কিছু বুঝি, আপনি যা ভাবছেন—তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু বুঝতে পারি।

—তাহলে এটা বুঝতে পারছে না, এক ধরনের ভালোবাসা আছে, যা শুধু একজনেরই জন্য, যার জন্য বুকের মধ্যে টনটন করে, যাকে না পেলে জীবনটা ব্যর্থ হয়ে যায়। জানো না?

—আপনি জানেন বুঝি? আপনার আগেকার অভিজ্ঞতা আছে?

—না, নেই। আমি মেয়েদের ভালোবাসতে ভয় পেতুম। আমি খেলা করতে জানি, কিন্তু ভালোবাসা…মেয়েদের আমি একটু ভয়ই করি। তোমাকে নিয়েও খেলা করবো ভেবেছিলাম—কিন্তু তোমার হাতের রক্ত দেখে আজ কী রকম যেন অন্যরকম হয়ে গেল, তারপর, এই অন্ধকার জঙ্গলে এসে মনে হলো, আমি শুধু একমাত্র তোমাকেই ভালোবাসতে পারি।

—আবার জঙ্গল থেকে বেরুলেই অন্যরকম মনে হবে।

—না—

—হ্যাঁ, আমি জানি।

—তা হলে চলো, এখুনি ফিরে যাই। ফিরে গিয়ে দেখি—

—বাঃ, সেই গাছটা খুঁজবো না? সেটা দেখতেই তো এলাম।

—সেটা বোধহয় এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি টর্চ আনিনি…দেরি হয়ে যাচ্ছে…তোমাদের বাড়িতে কি ভাবছেন!

—এমন কিছু দেরি হয়নি। আসুন খুঁজে দেখা যাক অস্তুত।

এখন দু’জনের কারুর মুখ দেখা যাচ্ছে না! অন্ধকারে একটু দূরত্বে ওরা—আকাশে অভূতপূর্ব রকমের বিশাল চাঁদ উঠেছে, চাঁদটা যেন আকাশ থেকে অনেকটা নেমে এসেছে বনের মাথায়, মাঝে মাঝে তার জ্যোৎস্নায় ওরা পথ দেখতে পাচ্ছে—আর দু’জনের শরীরের অস্পষ্ট রেখা। তীব্র কোনো ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে—কিন্তু দেখা যাচ্ছে না কোনো আলাদা ফুলের গাছ।

একটুক্ষণ নীরব থাকার পর অসীম আবার বললো, ইস্‌, তোমার হাতটা আজ কেটে দিলাম! ব্যথা হয়েছে? দেখি তোমার হাতটা!

হাতে হাত নিলে কি আর ব্যথা বোঝা যায়! কিন্তু অপর্ণা সে কথা বললো না, হাতটা এগিয়ে দিলো। অসীম হাতটা ধরেই রইলো, ছাড়লো না। দু’জনে এখন পাশাপাশি। জঙ্গলের মধ্যে সত্যিই অনেক নিয়ম বদলে যায়। অসীম বুঝতে পারে, অপর্ণাকে ভালোবাসার কথাটা সে খুবই তাড়াতাড়ি বলে ফেলেছে। সরল ধরনের ছটফটে মেয়ে অপর্ণা, শরীরে সদ্য যৌবন পেয়ে তাতেই টলটল করছে। এখন গাঢ়স্বরে বলা কথা শোনার ধৈর্য তার নেই। কিন্তু পশুর মতন চঞ্চলতা বোধ করে অসীম এই অন্ধকারে, অরণ্যের মধ্যে অপর্ণাকে পাশে পেয়ে তার বুকের মধ্যে—না, সারা শরীরে অস্পষ্ট যন্ত্রণা হয়, মনে হয়, আর সময় নেই, আর সময় নেই, অপর্ণাকে এক্ষুনি বুকের মধ্যে নিয়ে পিষে ফেলতে না পারলে আর কোনোদিনই পাওয়া যাবে না। অসীম ওর আর একটা হাত অপর্ণার কাঁধে রাখলো, অপর্ণার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। অসীম জিজ্ঞেস করলো, রুণি, তোমার ভয় করছে না?

—ভয় কি? আপনি তো সঙ্গে আছেন।

—আমাকে ভয় করছে না?

—কেন, ভয় করবে কেন?

—আমার সঙ্গে একলা এতদূর এসেছো—দু’দিন আগেও তো আমাকে চিনতে না! সত্যি, একটু ভয় করছে কিনা বলো?

—উঁহুঃ, আমি যাকে-তাকে ভয় পাই না।

—রুণি, আমাকে ভয় পাবার কারণ আছে। আমি একবার একটা মেয়েকে খুন করেছিলাম।

অপর্ণা অসীমের হাত ছাড়িয়ে দিলো না, দূরে সরে গেল না, কেঁপে উঠলো না, শুধু বললো, ওসব কথা বলতে নেই!

—রুণি, তুমি তো সত্যি-মিথ্যে বুঝতে পারো, এটা আমি সত্যি কথা বলছি—আমি একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছিলাম, ইচ্ছে করে নয় যদিও, কিন্তু…আমার মন থেকে সে কথা কখনো মোছে না। সেই মেয়েটির মুখ মনে পড়লেই আমার মনে হয়, আমি একটা জঘন্য লোক, আমি পাপী, আমি খুনী। আর জানো তো, একবার যে খুন করেছে, দ্বিতীয়বার সে খুন করতে একটুও দ্বিধা করে না।

মুখ দেখা যাবে না জেনেও অপর্ণা একদৃষ্টে তাকালো অসীমের দিকে। অসীমের খাড়া নাক আর চিবুকের এক অংশ শুধু চকচক করছে জ্যোৎস্নায়। এলোমেলো হাওয়ায় এমন শব্দ হয় গাছের পাতায়, যেন মনে হয় এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে। মাটিতে ঝরা শুকনো পাতায় মাঝে মাঝে সর সর শব্দ হয়—মেঠো ইঁদুর কিংবা গিরগিটির—অথবা সাপও হতে পারে। সবই অনুমান, অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই প্রত্যক্ষ নয়। অপর্ণা একটু চঞ্চল ভাবে বললো, আপনি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলে আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন বুঝি?

যে-হাত অপর্ণার কাঁধে ছিল, অসীম নিজেই সে হাত সরিয়ে নিলো। আপন মনে কথা বলার মতন বললো, জীবনে এর থেকে সত্যি ঘটনা আর কখনো ঘটেনি, আমার বাবা একটা মোটর গাড়ি কিনেছিলেন, ঊনিশ শো একষট্টি সালে, আমি রেড রোডে আমাদের ড্রাইভারের সঙ্গে ড্রাইভিং শিখতাম…ভালো করে শেখা হয়নি তখনো—এলগিন রোডের কাছে…আমার হাতে স্টিয়ারিং, মেয়েটি অফিস যাবার জন্য বাস স্টপে দাঁড়িয়েছিল, আমি মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে ভেবেছিলাম, বাঃ, বেশ দেখতে তো…ওকে আরেকবার ঘুরে দেখার জন্য আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম…আমার গাড়ির ঠিক সামনে একটা কুকুর পড়েছিল—এমনিই রাস্তার ঘিয়ে-ভাজা কুকুর, কিন্তু সেটাকে বাঁচাবার জন্য আমি দিগ্‌বিদিক্‌ জ্ঞানশূন্য হয়ে…চাপা দেবার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা মরে গিয়েছিল, বীভৎস, রুণি, সেই দৃশ্য এখনো আমি দেখতে পাই, পরে শুনেছিলাম—

—থাক, আর বলতে হবে না, এটা তো অ্যাকসিডেন্ট।

—না, শুধু অ্যাকসিডেন্ট নয়, পরে শুনেছিলাম, সেই মেয়েটির আর দু’মাস বাদে বিয়ে হবার কথা ছিল, আমারই একজন চেনা লোকের সঙ্গে।

—তবুও অ্যাকসিডেন্টই তো।

—অ্যাকসিডেন্ট হোক, কিন্তু শাস্তি পেলো কে জানো? আমাদের ড্রাইভার—তার তিন বছর জেল হয়, বিনা দোষে। আমার বাবা খুব ইনফ্লুয়েনশিয়াল লোক ছিলেন, পুলিশের বড়কর্তার সঙ্গে তার চেনা ছিল, দু’একজন মন্ত্রীকে চিনতেন, নানান সাক্ষী যোগাড় করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, সে সময় আমি গাড়িতেই ছিলাম না, শুধু ড্রাইভার ছিল, সে লোকটার বিনা দোষে…আমি স্বীকার করতে পারিনি তখন, আমার সাহস হয়নি। আমি খুব ভয় পেয়ে হাজারীবাগে পালিয়ে ছিলাম একমাস। সব সময় ভাবতাম, মেয়েটার রূপ দেখার জন্যই আমি অন্যমনস্ক হয়ে তাকে মেরে ফেলেছি। আমার বাবা ডিফেন্স ফাণ্ডে আমাদের বন্দুক দান করেছিলেন, ইলেকশানে এক হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন—আমি শাস্তি পাইনি!

—শাস্তি পেলেই বা কি হত? মেয়েটার জীবন তো বাঁচতো না?

—কিন্তু অন্য একজন শাস্তি পেলো বলেই আমি অপরাধী হয়ে রইলুম চিরকাল। আমি ভুলতে পারি না, রুণি, আমাকে তুমি ভুলিয়ে দেবে?

—আমার সে-রকম কোনো ক্ষমতা নেই।

—কিন্তু রুণি, আমার আর উপায় নেই। তুমি বিশ্বাস করেছো তো আমাকে, আমি একজন কারুর কাছে সান্ত্বনা না পেলে—

—আমি মুখে সান্ত্বনা জানালে আপনার জীবনের কিছু বদলাবে? কিছু বদলাবে না!

অসীম দু’হাতে অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে, অপর্ণার কাঁধের কাছে মুখ এনে গরম নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে, রুণি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো, আমি খারাপ লোক নই—

অপর্ণা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় না, বিচলিতও হয় না, একটি মেয়ের ওরকম মৃত্যুর কথা শুনে কোনোরকম দুঃখও তার গলায় প্রকাশ পায় না। যেন পৃথিবীতে অনেক মেয়েই অনেক ভাবে মরে—এই সত্যটা সে জেনে রেখেছে। অসীমের আলিঙ্গনের মধ্যে থেকেও সে শিহরণ বোধ করে না, নিজের সম্পর্কেও ভয় না পেয়ে সে শরীরটা ঈষৎ শক্ত করে বলে, আপনি শুধু আপনার কথাই বললেন। আমার কথা তো ভাবলেন না। আমারও তো কোনো কথা থাকতে পারে?

—কী কথা বলো, আমি তোমার কথাও শুনবো।

—না, এখন নয়, ছাড়ুন!

—আমি আর পারছি না।

—ছিঃ, ওরকম করে না—ছাড়ুন!

—অসীম অপর্ণাকে বুকের ওপর চেপে ধরেছে, তার হাত স্পষ্টত অপর্ণার বুকে, সেখানে সে তার মুখ এগিয়ে আনে। অপর্ণা এবার সামান্য জোর করে বলে, ওরকম করছেন কেন? না, এখন ছাড়ুন। না—

—আমি আর পারছি না—আমি একবার তোমার বুকে মুখ রাখতে চাই, একবার—

—না, এখন নয়—

—এখন নয়? কখন? না, এই তো সময়, আমার একমাত্র আশা—

—এখন নয়।

—কখন?

—আসুন আগে আমরা সেই ফুলগাছটা খুঁজি—যেটায় পাতা নেই, শুধু ফুল।

—এখন হয়তো সেটাকে খুঁজে পাবে না! কিন্তু সেটা আছে, বিশ্বাস করো—

—কিন্তু সেটাকে খুঁজে পেতেই হবে। সেটা পাবার আগে আর কিছু না, ছাড়ুন—

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *