2 of 3

৯০. মরবি কেন

॥ ৯০ ॥

মরবি! মরবি কেন?

এমন সুন্দর দিন তো আর জীবনেও আসবে না।

সুন্দর দিন বলেই বুঝি মরতে হয়?

তুমি তো মেয়েমানুষের মন জানো না।

মেয়েরা বুঝি খুব মরতে ভালবাসে?

খুব। একটু সুন্দর ভাবে মরতে পারলে আর কী চাই?

তুই বোধহয় খুব বোকা।

মেয়েমাত্রই বোকা।

ধ্রুব শীতে গুটিয়ে যাচ্ছিল। বলল, এবার জানালাটা বন্ধ করতে দে। শীত লাগছে।

তুমি আমার কাছ ঘেঁষে বোসো, তাহলে গরম লাগবে।

তুই বড্ড বাজে বকিস।

নোটন স্বপ্নাতুর চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে থেকে বলল, খুব খারাপ লাগছে আমাকে তোমার না?

খারাপ লাগছে না। তবে বড্ড বকিস।

প্রগল্‌ভতা! তা আজ একট প্রগলভ না হয় হলাম।

এটাও নাটক থেকে দিলি নাকি?

হতে পারে। আজকাল নাটকের ডায়ালগের সঙ্গে মনের কথা গুলিয়ে ফেলি গো।

খুব মুশকিল তো তাহলে তোর।

আমার না। নোটন মাথা নেড়ে বলে, মুশকিল তোমার। তুমি অনবরত আমাকে সন্দেহ করে যাচ্ছো। ভাবছো যা বলছি সব বানিয়ে বলছি। একটাও মনের কথা বলছি না। তাই বড্ড মুশকিল হচ্ছে তোমার।

ধ্রুব অপ্রস্তুতভাবে একটু হাসল। বলল, হবে।

নোটন জানালাটা বন্ধ করে দিল। চুল ঠিক করল। তারপর খুব কাছ ঘেঁষে গায়ে গা লাগিয়ে বসে বলল, আমাকে ঘেন্না করবে না, খবরদার।

ধমকাচ্ছিস কেন? ঘেন্না করলে কি চুমু খেতাম?

নিজের ইচ্ছেয় খাওনি। আমি জোর করে আদায় করেছি।

তা হোক। ঘেন্না যে করি না তা তো বুঝতে পেরেছিস।

নোটন মাথা নেড়ে বলে, না, এখনো বুঝতে পারিনি। তবে বুঝতে চাই।

সন্দেহ বাতিকটা তো তোরই ষোলো আনা দেখছি।

ধ্রুবর কাঁধে মাথাটা রেখে নোটন চোখ বুজে বলল, আজকের পর আর তো আমাকে কোনোদিন পাবো না। আজ ঘেন্না কোরো না।

কী যা যা-তা বলছিস!

একটু জড়িয়ে ধরো।

ধ্রুব অনায়াসে বিনা দ্বিধায় জড়িয়ে ধরল নোটনকে। বলল, ওরকম করিস না। আমি ভাল লোক নই। আমার জন্য কেউ বেশী উতলা হলে খুব খারাপ লাগে।

বউদি তোমাকে খুব ভালবাসে না?

তা বোধহয় বাসে। কিন্তু এ কথা আগে হয়ে গেছে নোটন।

হয়েছে তোক। আরো হবে। আজ কেবল উল্টোপাল্টা বকে যাওয়ার দিন।

সরে বোস। স্টেশন আসছে।

না।

লোকে দেখবে।

দেখুক গে।

ধ্রুব হাসল, নোটনের মাথাটা নেড়ে দিয়ে বলল, তোর যত সাহস আছে আমার তত নেই। সরে বোস।

নোটন মাথাটা তুলল। স্টেশনে গাড়ি থেমে আবার চলল। কেউ উঠল না তাদের কামরায়। নোটন আবার ঘন হয়ে বসে বলল, বড্ড জ্বালাচ্ছো। বলছি না আজ আমি মরব! মরার দিনটায় একটু দয়ামায়া করবে তো আমাকে।

মরবি কেন তা কিন্তু বলিসনি। হেঁয়ালি করছিস।

আর বেঁচে থাকার কি কোনো মানে হয়?

এটাও হেঁয়ালি।

তোমার কাছে হেঁয়ালি লাগছে কেন জানো? তুমি আমার মনকে তো বুঝতে পারোনি।

মন বোঝাবুঝির সময় দিলি কোথায়? এখনকার এই তোকে আমি কতটুকু চিনি বল তো! তুই বা কতটুকু এখনকার আমাকে চিনিস?

তেমনি স্বপ্নাচ্ছন্ন চোখে নোটন নিষ্পলক কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে ধুবর দিকে। ঠোঁট দুটি অল্প ফাঁক। এক মায়াবী আলো যেন ঘিরে আছে মুখমণ্ডল। জীবনে এই প্রথম নিজের স্ত্রী ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে তেমন অস্বস্তি বোধ করছে না ধ্রুব। বরং ভাল লাগছে। মায়া হচ্ছে।

ধ্রুবর মাথাটা কেমন হয়ে গেল। বুকের মধ্যে সামান্য তরঙ্গ খেলে গেল। নোটনকে সোজা করে বসিয়ে দিয়ে বলল, মরিস না নোটন। তুই তো পাগল, হয়তো যা বলছিস তাই করে বসবি।

নোটনের দুই চোখ টলটল করে উঠল জলে। ধরা গলায় বলল, আমি তোমাকে কিন্তু চিনি। খুব চিনি।

কি ভাবে চিনিস?

সারা দিন রাত এক সময়ে তোমাকেই ধ্যান করতাম তো। বোঝাতে পারব না। তবে চিনি। তুমি আমাকে একটুও চেনো না।

ধ্রুব চুপ করে ফাঁকা দীর্ঘ কামরাটার দিকে চেয়ে রইল শূন্য চোখে। তারপর বলল, আমার সেন্টিমেন্ট বলে কিছু নেই। আবেগ নেই। আমি সত্যিই ইমোশন্যাল ব্যাপারগুলো বুঝি না। যদি বুঝতাম তাহলে তোর অবস্থাটাও বুঝতে কষ্ট হত না।

সবই বোঝে। স্বীকার করতে অহঙ্কারে বাধে।

অহঙ্কার! তা একটু বোধহয় আমার আছে।

আছেই তো। তুমি অহঙ্কারী, নাক উঁচু। কিন্তু ওরকমই থেকো। অহঙ্কারই তো তোমাকে মানায়। সস্তা হবে কেন?

ও বাবা! আবার উল্টো চাপান!

নোটন মাথা নেড়ে বলে, এও তুমি বুঝবে না। আজ তোমাকে যত কাছে টেনে এনেছি এত কাছে টানা উচিত নয়। তোমাকে একটু তফাতে, একটু দূরে রাখলেই ভাল। তবে আজকের কথা তো আলাদা। এ রকম দিন তো আর আসবে না।

ফের নোটন!

তোমাকে ছুঁয়ে বলছি আজ আমি মরব।

গাড়ি শিয়ালদায় ঢুকছে নোটন।

চটকা ভেঙে নোটন তাকাল, বলল, ফুরিয়ে গেল রাস্তা?

তোকে কি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবো?

অসুবিধে না হলে দাও।

অসুবিধে কি! বেশী রাতও হয়নি।

তাহলে চলো।

প্ল্যাটফর্ম পার হওয়ার সময় কেউ কথা বলল না তেমন। মল্লিকপুরের কুয়াশাচ্ছন্ন সেই স্টেশনের স্বপ্নলোক গাড়ির কামরার নিরঙ্কুশ নির্জনতার পর এত আলো আর লোকজনের মধ্যে এসে একটা বেসুর বাজল।

ধ্রুব বাইরে এসে একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করল। নোটনকে পাশে বসিয়ে বলল, আমাদের ফোন নম্বর তো জানিস।

জানি।

কাল একবার ফোন করিস।

কাল! কেন বলো তো!

করিস তো। কথা আছে। তোর ভাইয়ের একটা চাকরির ব্যাপারে কিছু হয়ে যেতে পারে।

নোটন হঠাৎ খিল খিল করে দুলে দুলে হাসতে লাগল।

হাসছিস কেন?

তুমি ভয় পেয়েছে।

ভয় কিসের?

কাল আমি সত্যি বেঁচে থাকব কিনা সেটা ভেবে ভীষণ ভয় পেয়েছো তুমি।

আবার খিলখিল হাসি। অনাবিল, সত্যিকারের খুশিতে ভরা সেই হাসি শুনে ধ্রুবও হেসে ফেলল।

নোটন বলল, বলো ভয় পেয়েছে কিনা।

একটু পেয়েছি।

আমি মরলে তোমার কি?

মরার কথায় আমার ভীষণ খারাপ লাগে।

কিন্তু আমার যে ইচ্ছে করছে।

ইচ্ছে ওরকম হয়। রোমান্টিক ইচ্ছে। ওটার কোনো মানে নেই।

নোটন এবার নিঃশব্দে হাসতে লাগল। ছোট্ট একটা চিমটি দিল ধ্রুবর হাতে। বলল, আজ আমাদের কী হয়েছে গো!

ধ্রুব চুপ করে ভাবতে লাগল। এই যে লঘুভার সময় সে কাটাচ্ছে, উপভোগ করছে একটি চপলা বেহায়া মেয়ের সঙ্গ, এর মানে কি? কেন ওরকম হচ্ছে? নিজেকে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। ক’দিন আগে তার ভিতরকার আর এক ধ্রুব ধারার গলা টিপে ধরেছিল। আজ আর এক ধ্রুব এই কবেকার চেনা একটা মেয়ের সঙ্গে দেয়ালা করছে। এর কোনো মানে হয়?

কি ভাবছো?

কিছু না।

চুপ করে আছো যে!

তোকে একটু পরে ছেড়ে দিতে হবে তো, তাই মন খারাপ।

আবার চিমটি দিয়ে নোটন বলে, ইয়ার্কি দিচ্ছো? তোমাকে আমি চিনি না, না?

সত্যিই।

তুমি অন্য কথা ভাবছো।

তুই কি অন্তযামী?

তাই তো।

তবে বল কী ভাবছি।

একটা খারাপ মেয়েকে ছুঁয়ে আজ অপবিত্র হয়েছে কিনা তাই ভাবছো।

দূর বোকা। পবিত্রতা অপবিত্রতা নিয়ে বহুদিন মাথা ঘামাইনি। ওসব নয়। তবে তোর কথা ভাবছি।

কি ভাবছো? সে তোর শুনে কাজ নেই।

পায়ে পড়ি, বলো। না শুনলে মরে যাবো।

তোর কথাই ভাবছি, সঙ্গে নিজের কথাও।

কি ভাবছো বলো। বলে নোটন ধ্রুবকে আঁকড়ে ধরে।

ধ্রুব নিজেকে ছাড়াল না। নরম হাতে নোটনের মাথাটা নিজের শরীরে একটু চেপে ধরে বলে, আমাকে তুই আজ হিপনোটাইজ করলি কি করে? আজ অবধি কেউ এতটা পারেনি।

সত্যি বলছো?

সত্যি ছাড়া মিথ্যে বলব কেন? তাই ভাবছি আমার কি বয়স হয়ে গেল? প্রতিরোধ ভেঙে যাচ্ছে।

নোটন চুপ করে বেড়ালের মতো কাছ ঘেঁষে বসে রইল কিছুক্ষণ। সামনে ড্রাইভার বার বার আয়না দিয়ে তাদের দেখছে। কিন্তু তারা গ্রাহ্য করল না। নোটন বলল, আমি জানি। বলব?

বল না।

আমি তোমাকে এত ভালবাসি বলেই তুমি ঠেকাতে পারনি আমাকে? সত্যিকারের ভালবাসার কাছে ধরা তো দিতেই হয়।

সমস্যা সেখানেও।

কিসের সমস্যা?

তোর অত ভালবাসা কোথা থেকে এলো? ইজ ইট বিলিভেবল?

আমি ঢং করছি না গো।

জানি। তবু বিশ্বাস হচ্ছে না।

এক কাজ করবে?

কি কাজ?

আজ রাতটা আমার কাছে থাকো।

তার মানে?

মানে আবার দু রকম হয় নাকি? মানে একটাই। আজ আমার কাছে থাকো।

ধ্রুব কিছুক্ষণ নোটনের দিকে চেয়ে থেকে বিভ্রম বোধ করল। প্রস্তাবটা তার প্রত্যাখ্যান করতে ইচ্ছে হল না। কিন্তু সে বললও না কিছু।

ঘেন্না হচ্ছে?

বার বার ঘেন্নার কথা বলছিস কেন?

তাহলে থাকো।

ধ্রুব মৃদু একটু হাসল। বলল, বাড়িতে মা ভাই নেই?

ওখানে কে যাবে?

তাহলে?

কোনো হোটেলে চলো।

ধ্রুব হতাশায় মাথা নাড়ল, না রে। ওটা খারাপ দেখাবে, খারাপ লাগবে।

খারাপ কেন?

মনে হবে যেন তোকে নিয়ে ফুর্তি করছি। তা তো নয়।

না। না, তা নয়। তাহলে?

নোটনের উন্মুখ ভাব দেখে ধ্রুব বলে, অত অস্থির হচ্ছিস কেন?

নোটন বলে, অস্থির হবো না? কী জীবন যাপন করি জানো?

সে জীবন থেকে তোকে বাঁচাবে কে?

তুমি। তুমি ছাড়া আর কে?

কি ভাবে? তোর সঙ্গে রাত কাটিয়ে?

মাথা নেড়ে নোটন বলে, না। কিন্তু যদি আমি বুঝতে পারি আমার জন্য তুমি আছো তাহলে এখনো আমার আশা আছে।

কিসের আশা নোটন?

এই বহু পুরুষের সঙ্গ করা, অনেকের মন রেখে চলা, দিন রাত টাকা রোজগারের কথা ভাবা এসব থেকে মুক্তি।

রোজগার করা কি খারাপ?

খারাপই তো। মেয়ে হয়ে রোজগার করে মরছি। আমার যে ভাল লাগে না।

তোর শরীরে এখনো পুরুতের রক্ত রয়ে গেছে।

আছেই তো। আমি ইচ্ছে করে রোজগারে নামিনি।

যখন নেমেছিস তখন মেনে নেওয়াই তো ভাল।

আমাকে এড়াতে চাইছো?

মোটেই নয়।

শোনো,আমার জন্য তোমাকে কিছুই করতে হবে না। বিয়ে করতে বলব না, ভরণ পোষণ চাইব না, রাত কাটাতেও না। শুধু আমাকে তোমার বলে ভেবো একটু, একটু ভালবেসো তাহলেই হবে। আর যখন খুব কান্না পাবে তখন কাছে ডাকলে এসো। তোমাকে কিল চড় ঘুঁষি মারব হয়তো, তারপর বুকে পড়ে কাঁদবো। সেটুকু সহ্য কোরো। পারবে না এটুকু?

ধ্রুব মাথা নেড়ে বলল, এই যা বলছিস এও তোর মনের কথা নয়। যে রকম চাইছিস সে রকম পেলেও তুই খুশি হবি না। তোর ভিতরে বড় অস্থিরতা।

ঠিকই তো। ভীষণ অস্থিরতা, মাঝে মাঝে পাগল-পাগল লাগে।

যে জীবন কাটাচ্ছিস তা অ্যাকসেপ্ট করতে পারছিস না।

ঠিক তাই।

আমি বলি অ্যাকসেপ্ট করে নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

তুমি এ কথা বলবে কেন?

আমি যা বিশ্বাস করি তাই বলি।

না। তুমি এরকম জীবন বউদিকে যাপন করতে দেবে?

ধ্রুব হাসল, বলল, এখন বুঝলাম তুই আমাকে সত্যিই চিনিস না।

কেন?

আমি রেমি সম্পর্কে অন্ধ নই, পজেজিভও নই।

প্লীজ, ওরকম বোলো না। ভয় পাই।

ভয় পাস কেন?

তোমাকে অত নিষ্ঠুর ভাবতে ভয় করে।

গাড়িওয়ালা লোকটা এতক্ষণ দক্ষিণে চলছিল। এবার জিজ্ঞেস করল, বাঁ হাতি রাস্তাটা নেবো?

ধ্রুব সচকিত হয়ে বাইরের দিকে তাকায়। জায়গাটা বুঝে নেয়। বলে, ঠিক আছে।

নোটন দু হাতে মুখটা ঢেকে রেখেছিল। সোজা হয়ে বসে হাত সরিয়ে বলল, আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাও।

কোথায় যাবি?

যেখানে খুশি। আমি বাড়ি যাব না।

কেন?

আজ বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না।

কেন সেটা বলবি তো?

বাড়িতে আমার কে আছে বলো তো! মা দিন রাত নানারকম খোঁটা দেয়, ভাই ঘেন্না করে। অথচ আমার রোজগার খেয়ে বেঁচে আছে।

এই জন্য? দূর!

আমি বাড়ির অ্যাটমোসফিয়ার সইতে পারি না।

সেটা তোর মনের দোষ।

কেন, মনের দোষ হবে কেন?

তুই রোজগার করছিস বলে নিশ্চয়ই পরিবারের সবাইকে নিজের তাঁবে রাখতে চাস।

অত শত ভেবে দেখিনি। বাড়ি যখন ফিরি তখন ভীষণ টায়ার্ড থাকি। বোঝো তো। ফিরে এসে সকলের মুখ আষাঢ়ের মেঘের মতো দেখলে কেমন লাগে বলো তো!

আমি তো কারো মুখের দিকে তাকাই না। তুইও তাকাবি না।

না তাকালেই কি! বাক্যবাণ আছে না! কানও কি বুজে রাখতে বলো?

বলি।

না। ওসব হয় না। তার চেয়ে আমি যদি আলাদা থাকি?

একা?

ধরো যদি তাই থাকি!

আজকাল মেয়েরা তো একা থাকেই।

বলছো থাকতে?

আমি বলার কে? ইচ্ছে হলে থাকবি।

তুমি বলো। তুমি যা বলবে শুনবো।

কারো আজ্ঞাবাহী না হলে চলছে না?

না। তোমার আজ্ঞাবহী হয়ে থাকবো। বলো।

তাহলে বলি এবার একটা বিয়ে করে আলাদা হ। যা রোজগার করবি তা তোর মাকে পাঠিয়ে দিবি। বিয়ে করলেই সব ঝামেলা মিটে যাবে।

বিয়ে?

নয় কেন?

তুমি বলছো?

বলছি।

এই আমার প্রতি তোমার ভালবাসা?

আমার সঙ্গে তো তোর আজ হঠাৎ দেখা। না হলে কী করতিস?

আর যাই করি বিয়ে করতাম না।

কেন বল তো!

দূর, ও একটা জীবন নাকি?

আর আমার আজ্ঞাবাহী হয়ে দিন কাটানোটা জীবন?

তোমার জন্য সব পারি।

ধ্রুব মৃদু হাসল। আস্তে আস্তে তার ভিতরটা কঠিন হচ্ছে। দানা বেঁধে উঠছে প্রতিরোধ। এতক্ষণে এই অস্থিরমতি মেয়েটির প্রতি তার প্রত্যাখ্যানের ভাবটা আসছে।

সে বলল, না পারিস না।

কে বলল পারি না?

তাহলে একটা কথা বলি, শুনবি?

শুনবো।

আজ বাড়ি যা। আমাকে ছেড়ে দে।

তোমাকে কি ধরে রেখেছি।

রাখার চেষ্টা করছিস।

দু হাতে তাকে আঁকড়ে ধরে নোটন। বলে, আমাকে ঘেন্না কোরো না গো।

কে ঘেন্না করছে?

তোমার চোখ করছে। আমি টের পাচ্ছি।

ছাড় নোটন।

না। ছাড়ব না। কিছুতেই না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *