বাবলির ভাবতেই ভালো লাগছিল। কত মাস পরে দেখতে পাবে অভীকে। প্রেসারাইজড প্লেনের ভিতরে বসে শুনতে পাওয়া মৃদু গুনগুনানির মতো ওর মনও গুনগুন্ করছিল।
আগে সবাই বলত কৈরাঙ্গী। কৈরাঙ্গী এয়ারস্ট্রীপ। কংক্রীটের ছিল না। তখন এক ফালি সবুজ মাঠ শুধু।
কিন্তু এখন যেখানে প্লেন নামে ইম্ফলে, সেখানে এয়ারপোর্ট, নাম তুলিহাল।
নাগা পাহাড়ের মাথার উপর দিয়ে অনেকক্ষণ ফকার-ফেন্ডশিপ প্লেনটা উড়ে আসে শিলচর থেকে। তারপরই, হঠাৎ, স্বপ্নের শাংগ্রিলার মতো–দুটো উঁচু পাহাড়ের মাঝের ফাঁক ফুড়ে প্লেনটা চিলের মতো ছায়া ফেলে ইম্ফল উপত্যকার উপর।
সবুজ, সবুজ, চারদিকে যতদূর দেখা যায় শুধু হলুদ, আর সবুজ। পাকা ধানের হলুদ, কঁচা ধানের সবুজ। ইম্ফল উপত্যকাকে অনেকে বলেন, “গ্রানারী অফ গড।”
উপর থেকে দেখা যাচ্ছিল, এয়ারপোর্টের পাশে গাড়ি, জীপ, ট্রাক সব দাঁড়িয়েছিল।
প্লেনটা নামছিল। পেটের তলার চাকা-দুটো একটা ঝাঁকি দিয়ে আগেই নেমে পড়েছিল নীচে। ধীরে ধীরে নীচের বাড়ি, গাড়ি, জমি সব কাছে চলে এলধ্বস-ধ্বসস্ করে প্রথমে সামনের চাকাটা তারপর পিছনের চাকাদুটো মাটি ছুঁল। তারপর ট্যাক্সিংই করে এসে প্লেনটা স্থির হয়ে দাঁড়াল টারম্যাকের উপর।
সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় বেড়ার কাছে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধু। বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের নিতে আসা ও বিদায় দিতে-আসা লোকজনের দিকে তাকাল বাবলি।
ও ভেবেছিল, সকলের মাথা ছাড়িয়ে ও অভীর মাথা দেখতে পাবে। হ্যান্ডসাম, ভালো, স্মার্ট; সত্যিই স্মার্ট, অভীকে। বাবলির একান্ত অভীকে।
কিন্তু কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ও যখন প্যাসেঞ্জারস্ লাউঞ্জে এসে ঢুকল, তখনও অভীর দেখা পেল না।
শুধু অবাকই নয়। রীতিমত ক্ষুব্ধ হল বাবলি।
বাবলি আসার তারিখ জানিয়ে শেষ চিঠি লিখেছিল ও। তার উত্তরে মস্ত বড় : চিঠি পেয়েও ছিল অভীর কাছ থেকে। টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিল তিনদিন আগে অভীকে এয়ারপোর্টে আসতে বলে। তা সত্ত্বেও এয়ারপোর্টে ওকে নিতে না আসার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেল না ও।
অভীর অসুখ-বিসুখ করে নি তো?
এ-কথা ভেবেই ওর মনটা দ্রবীভূত হয়ে গেল। ভাবল, আহা বেচারা! বিদেশ-বিভুই জায়গা; একেবারে একা থাকে। হয়তো জ্বরের ঘোরে বেহুশই হয়ে আছে। অভীর অসুখের কথা মনে হওয়ায়–দুঃখের সঙ্গে একরকম ভালো লাগাতেও ওর মন ছেয়ে এল। অভীকে ও অনেক যত্ন করবে, সেবা করবে, ওর কপালে ওডিকোলনের পটি দেবে, থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর দেখবে, নিয়ম করে ওষুধ পথ্য খাওয়াবে–দরকার হলে সারারাত জেগে বসে থাকবে ওর মাথার কাছে। এমন কি, বাবলি কল্পনায় অভীর ঘরও যেন দেখতে পেল, যে ঘর ও কখনও দেখে নি। অভীর ঘর, ঘরের আসবাবপত্র, অভীর শয্যাশায়ী চেহারা, সবই যেন ওর চোখের সামনে ফুটে উঠল!
মনে মনে অভীকে ক্ষমা করে দিল বাবলি।
কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা হল, যাবে কি করে অভীর বাড়িতে? বাড়ি তো চেনে না। তারপর নিজেই মুশকিল আসান করল এই ভেবে যে, মেসোমশায়ের অফিসের দারোয়ান বা কেয়ারটেকারের কাছ থেকে ঠিকানাটা যোগাড় করে নেবে।
প্যাসেঞ্জার-লাউঞ্জে বেশ অনেকক্ষণ বসে থাকার পর মালপত্র এল প্লেন থেকে। ওর স্যুটকেসটাও এসে পৌঁছল, কিন্তু তখনও অভী এল না। অভীর আসার আর কোনোই সম্ভাবনা নেই। একথা বোঝাল ও নিজেকেই।
এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি দেখতে পেল না। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের বাসেই যাবে ঠিক করল।
ট্যাগ মিলিয়ে স্যুটকেসটা বের করে যখন বাসে তোলার বন্দোবস্ত করছে, এমন সময় দূর থেকে একটা ঘন বাদামী রঙা গাড়িকে আসতে দেখল এয়ারপোর্টের দিকে প্রচণ্ড বেগে।
গতবারে এখানে এসে যাদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল বাবলি, তাদের মধ্যে কারোরই এ-রঙের গাড়ি নেই।
অতএব গাড়িটার দিকে না-চেয়েই চিন্তান্বিত মুখে বাবলি বাসে উঠে পড়ল।
গাড়িটা ততক্ষণে এসে গেছে।
গাড়িটা থামতেই, বাঁদিকের দরজা খুলে ঝুমা দৌড়ে নামল–নেমেই দৌড়ে এসে এদিক-ওদিক কাকে যেন খুঁজতে লাগল।
ঝুমা এপাশে-ওপাশে তাকিয়ে তারপর এয়ার-হোস্টেসদের মধ্যেই একজনকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ল, বলল, হাই!
ঝুমা এয়ারহোস্টেসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগল।
বাসের জানালায় বসে বাবলির মনে হল ঝুমা তার বন্ধু এয়ার হোস্টেসকে বাবলির মতো কেউ এসেছে কিনা সেকথা জিজ্ঞেস করছে।
ইতিমধ্যে অভীও নেমে এসেছে গাড়ি থেকে।
একটা নেভীরু কডুরয়ের ফ্লেয়ার পরেছে অভী, তার উপরে সাদা কলারওয়ালা গেঞ্জী। গায়ে নেভী ব্লু ব্লেজার। ব্লেজারের পিতলের বোতামগুলো, অভীর সানগ্লাসের কাঁচ ও অভীর হাসতে-থাকা দাঁত, রোদে ঝিমিক করছে।
বাবলি এই ঝকঝকে পুজো-পুজো রোদভরা সকালেও গায়ে-জল-পড়া বেড়ালনীর মতো মিইয়ে গেল।
প্রথমেই ওর মনে হল যে, রিটার্ন-ফ্লাইটে একটা সীট পেলে ও এখুনি দমদম হয়ে দিল্লি ফিরে যায়। কিন্তু কি করবে ও বুঝতে পারল না।
যেদিকে ঝুমা ও অভী ছিল, তার বিপরীত দিকে ও চেয়ে রইল, যাতে ওদের চোখে না পড়ে ও। ওরা ওকে দেখতে না-পেয়ে ফিরে গেল, একটা দিন কোনও হোটেলে কাটিয়ে ও কালই আবার দিল্লি ফিরে যাবে। আর যদি অভীরা ফিরে চলে যায় এখুনি, তবে তো আজই যাবে। নিশ্চয়ই যাবে।
অন্যদিকে চেয়ে, শক্ত করে গ্রীবা ঘুরিয়ে বসেছিল বাবলি।
এমন সময় একেবারে ওর কানের কাছে ঝুমার গলা পেল ও।
ঝুমা বলল, অ্যাই বাবলি!
ঝুমার গলার সুরে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সহজ বন্ধুত্বের উদার সুরই ছিল তাতে। ঝুমা বাবলির কাঁধে হাত রেখে ওর কানের কাছে মুখ নামিয়ে এনে বলল, চল শীগগির। তোর জন্যে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবলি ধরা পড়ে গেছিল। তখন না-নেমে উপায় ছিল না। নইলে লোকজনের সামনে যাত্রা করতে হত।
বাস থেকে নামতেই অভী হাত জোড় করে নমস্কার করে বলল, স্বাগতম। আমি হোটেল দ্য অভীর ম্যানেজার। আপনাকে নিতে এসেছি। আই উইশ উ্য আ ভেরী হ্যাপী হলিডে।
বাবলি ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক করল।
একটু দুঃখ ও আনন্দ মেশা হাসিতে বাবলির ঠোঁট ভরে গেল। অনেকদিন পর অভীকে দেখে ভারি ভালো লাগল বাবলির।
অভী বাবলির স্যুটকেসটা তুলতে তুলতে বলল, বাবা, এত ভারী কেন? সোনা-টোনা আনলেন নাকি স্মাগল করে?
বাবলি অনেক কষ্টে স্বাভাবিক হল। স্বাভাবিক করল নিজেকে। ঝুমার সামনে নিজেকে ছোট করতে রাজী ছিল না ও।
বলল, সোনা নয় তবে অনেক পাটালি গুড় আছে। কাকীমা দিয়ে। দিয়েছেন আপনার জন্যে। কোলকাতা থেকে দিল্লিতে আনিয়ে দিল্লি থেকে ইম্ফলে পাঠিয়েছেন আপনার জন্যে শুধু।
ঝুমা অভীকে বলল, তুমি বুঝি খুব পাটালি গুড়ের ভক্ত অভীদা? তুমি কথাটা বাবলির কানে ধক করে লাগল।
বাবলি বুঝল, এই পুজোটা মিছিমিছি নষ্ট করল ও। দিব্যি দিল্লির কালীবাড়ির পুজোতে মজা করা যেত। দিল্লির বাঙালিদের কাছে পুজো একটা খুব বড় ব্যাপার। কোলকাতার বাঙালিদের চেয়েও হয়তো বড়। পুজো একটা সম্মিলনী–সত্যিকারের রি-ইউনিয়ন। কত লোকের সঙ্গে মেলামেশা হত। কত বান্ধবী আর বন্ধু ওর। তা না, সব ছেড়ে এই পচা ইম্ফলে মরতে এল বাবলি। রাক্ষুসীটা এতদিনে অভীর মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছে। কি করে এরই মধ্যে ঝুমার সঙ্গে অভীর এতখানি অন্তরঙ্গতা হল, বাবলি বুঝতে পারল না। কিন্তু অভী ঘুণাক্ষরেও এই অন্তরঙ্গ তার কথা জানায় নি বাবলিকে। এতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, এই অন্তরঙ্গতা অভীও গোপন রাখতে চেয়েছিল।
বাবলির কানে কানে ঝুমা বলল, কনগ্রাচুলেশানস্।
তারপর বলল, তুই যে এত বড় চালাক আর মিথ্যাবাদী তা আমি জানতাম না। যাই-ই হোক, দমদমে সেদিন যা বলেছিলাম, তা ভুলে যাস। আমি এয়ারহোস্টেস। দিনের মধ্যে অনেকবার মুখের মেক-আপ ধুতে হয় আমাদের। আমার সেই ভুল করে, ভুল লোককে ভালোবাসার ভুল ধুয়ে ফেলতে সময় লাগে নি। আমি কপিটিটর নই। তুই আমাকে ভুল বুঝিস
তারপর হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গিয়ে বলল, তোকে আমার এইটুকুই বলার ছিল। অভীদা তোর সম্বন্ধে সব কিছু বলেছে আমাকে। তবে, তুই যদি বলতিস যে তুই চিনিস অভীদাকে, তাহলে হয়তো আমি আমার নিজের কাছে এত বড় একটা প্রবলেম হতাম না। তোর কাছেও হয়তো ছোট হতাম না।
অভী এসে দরজা খুলে স্টিয়ারিংয়ে বসল। দুম করে দরজা বন্ধ করল।
ঝুমা সঙ্গে সঙ্গে অন্য লোক হয়ে গিয়ে বলল, বাবাঃ, আনন্দের চোটটা দরজার উপরে কেন?
অভী হেসে ফেলল। কিন্তু জবাব দিল না।
পথে বাবলি বিশেষ কথা বলছিল না। যা বলার ঝুমাই বলছিল। নিজে হাসছিল, ওদের হাসাচ্ছিল। পেছনের সীটে বসে বাবলিও দুহাত অভীর প্রায় দুধের উপরে রেখে, সমানে বব করছিল।
কথা খুব ভালো বলে ঝুমা। ঝুমার মতো ভালো কথা বলতে পারে এমন কাউকে বাবলি অন্তত জানে না।
হঠাৎ অভী বলল ঝুমাকে, এখন তো তোমার বান্ধবী এসে গেছে, এবারে তো আর তোমার আমার বাড়িতে থাকতে আপত্তি নেই। তবে চল, তোমার হোটেল ঘুরে যাই। স্যুটকেসটা তুলে নিয়ে যাই একেবারে।
বাবলির গা রাগে জ্বালা করতে লাগল।
ও এখানে এসেছিল অনেক আশা নিয়ে। অভীর সঙ্গে একা থাকবে, গাড়ি করে দুজনে ঘুরবে অনেক জায়গায়। ঝুমার সঙ্গে এবং ঝুমার খপ্পরে যে তাকে থাকতে হবে, এ তার জানা ছিল না।
বাবলির নীরবতা দেখে, ঝুমা বলল, না না, আমি হোটেলেই থাকব। সব গুছিয়ে-টুছিয়ে বসেছি, আবার ঝামেলা করা কেন? তাছাড়া আর ক’দিনই বা থাকব?
অভী অবাক হল। একবার চকিতে বাবলির মুখের দিকে তাকিয়েও নিল ও। তারপর বলল, সে কি? তুমি না বলেছিলে, ছুটি নিয়েছ–এখানেই কাটাবে পুজোটা?
বলেছিলাম।
হেসে বলল, ঝুমা।
তারপর বলল, ছুটি নিলে বুঝি ছুটি ক্যানসেল করা যায় না?
অভী বলল, বাবলি কি বলছে?
বাবলি বলল, আমি আবার কি বলব? ঝুমা সঙ্গে থাকলে তো মজাই হত, কিন্তু ওর বোধহয় মজা হবে না আমার সঙ্গে থাকলে। ওকে জোর করা কি ঠিক হবে?
ঝুমা আবারও হাসল।
হেসেই বলল, যা বলেছিস বাবলি। ঠিক হবে না।
বাবলি মনে মনে খুব রেগে গেল। ঝুমা চিরদিনই এমন, ও এত সপ্রতিভ যে সবসময়ই বাবলি ওর কাছে এলেই হীনমন্য বোধ করেছে। কোনোদিক দিয়েই বাবলি ঝুমার যোগ্য যে নয় সেকথা বাবলি জানে বলেই, ঝুমাকে ও কখনই তেমন সহ্য করতে পারে নি। আজ যখন ঝুমা তার জীবনের একটা অন্যতম প্রধান প্রাপ্তির পথে দাবিদার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ঝুমাকে সহ্য করা ওর পক্ষে সত্যিই মুশকিল।
ঝুমার হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়ে অনেক পীড়াপীড়ি করল অভী ওদের সঙ্গে যেতে। কিন্তু ঝুমা তেমনি হেসে হেসেই নেমে গেল।
বাবলি চুপ করে ছিল।
ঝুমা যাওয়ার সময়, চলি রে বাবলি, বলে চলে গেল দৌড়ে।
মাঝপথে হোটেলের বারান্দায় ফিরে দাঁড়িয়ে হাত তুলে বলল, হ্যাভ আ নাইস টাইম।
বাবলি একটা সংক্ষিপ্ত, থ্যাঙ্ক উ্য! বলল উত্তরে।
অভী চেঁচিয়ে বলল, দুপুরে খাওয়ার পর আসছি কিন্তু। দুটোর সময়! লটা লেকে যাব। রেডি হয়ে থাকবে।
বাদবাকী পথটা কোনো কথা বলল না অভী বাবলির সঙ্গে।
ওর বাড়ির কাছাকাছি এসে অভী বলল, আমার মনে হয় ঝুমাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে খুব বড় ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যাচ্ছে। ঝুমার কথা তুমি আমাকে দিল্লিতে বলেছিলে। এখানে ফিরে আসার পর ও প্রত্যেকবারই এখানে এলে আমাকে ফোন করত। মাঝে একবার দুদিন থেকে গেছিলও ছুটি নিয়ে। ও আমার বন্ধুর বোন। তাই ওকে আমি তুমি বলি। ও প্রথমদিন থেকেই আমাকে ‘অভীদা’ ‘তুমি’ বলে ডাকে। খুব প্রাণ আছে ওর মধ্যে। আমি ওকে পছন্দ করি, কিন্তু সেই পছন্দ করার সঙ্গে তোমাকে পছন্দ করার তফাৎ আছে অনেক।
ওকে আমি প্রথমদিনই তোমার কথা বলি। তোমার পরিচয় শুনেই ও বলেছিল যে, তুমি ওর ছোটবেলার বন্ধু। তুমি পুজোর ছুটি কাটাতে এখানে আসছ শুনে ও বলল, আমি বাবলি আসার একদিন আগেই আসব। ওকে চমকে দেব। খুব মজা হবে। তাহলে পুজোটা আমিও এখানে কাটাব।
গাড়িটা ওর কম্পাউন্ডে ঢোকাতে ঢোকাতে অভী বলল, সত্যি বলছি, এই ইনোসেন্ট ব্যাপারটাকে যে তুমি এত সিরিয়াসলি নেবে তা আমি ভাবতে পারি নি।ও যখন এসে পড়েছে, বলতে গেলে আমারই নিমন্ত্রণে, তখন ওকে হোটেলে থাকতে দেওয়া বা এখান থেকে চলে যেতে বলা কি ঠিক হবে আমার পক্ষে? এখানের হোটেল একা মেয়েদের থাকার পক্ষে নিরাপদও নয়। তাছাড়া, ও তো আমার এবং তোমার সম্পর্কটার কথা ভালোভাবেই জানে। আমি তো ভেবেছিলাম, তোমার বন্ধুকে এখানে পেয়ে তুমি খুশীই হবে। অথচ…
গাড়ি থেকে নামতে নামতে বাবলি বলল, আপনার পক্ষে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক তা আপনিই স্থির করবেন। এতে আমার মতামতের অবকাশটা কোথায়?
অভী অবাক হল। বলল, ওঃ। যাক্গে।
ওরা গাড়ি থেকে নেমে বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসল।
কুলো সিং চা এনে দিল।
বাবলি চা ঢালতে ঢালতে প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বলল, চা খেয়ে চান করব। আমার ঘর কোনটা?
তারপর বলল, আপনার বাড়িটা ঘুরে দেখি। ব্যাচেলররা খুব নোংরা হয়ে থাকেন বলে শুনেছি। কিন্তু বাইরে থেকে দেখে তো আপনার বাড়িকে
নোংরা বলে মনে হচ্ছে না।
অভী বলল, ইন্সপেক্ট করে তারপরই সার্টিফিকেট দিও। তুমি কি স্যানিটারী ইন্সপেক্টর?
বাবলি হাসল। তারপর বলল, এখানে আমাদের কি প্রোগ্রাম?
অভী বলল, পাঁচদিনের ট্যুরে যতখানি ভালো প্রোগ্রাম করা যায় তাই ই করেছি।
আজ দুপুরের খাওয়ার পর লকটা লেকে যাব। লটাকের বাংলোয় রাত কাটাব। কাল সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ফিরে আসব ইম্ফলে। দুপুরে রেস্ট করে বিকেলে তোমাকে কবরখানা দেখাতে নিয়ে যাব। এখানের কবরখানার এপিটাগুলোতে যে-সব লেখা আছে, তা পড়লে চোখে জল পড়বে।
বাবলি বলল, চোখ দিয়ে জল পড়ার যথেষ্ট কারণ জীবনে এমনিতেই অনেক আছে। আমি কবরখানা মোটেই দেখতে রাজী নই। আপনি এত কবরখানার ভক্ত কেন বলতে পারেন? কোহিমাতে গিয়েও তো প্রথমেই। কবরখানায় নিয়ে গেছিলেন।
–তাহলে যাব না। অভী বলল।
–তারপর? বাবলি শুধোল।
–তারপর কবরখানা না দেখতে চাইলে–এমনিই এদিক ওদিক ড্রাইভে যাব, রাতে পুং-চোলো আর থৈবী-থাম্বার নাচের প্রোগ্রাম। আশা করি ভালো লাগবে তোমার। তার পরদিন খুব ভোরে বেরিয়ে পড়ব। বর্মার সীমান্তের দিকে।
–কতদূর ইম্ফল থেকে? বাবলি শুধোল।
–অনেক দূর। সারাদিনের না হলেও প্রায় একবেলার ড্রাইভ। প্যালেলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট পার হয়ে যেতে হবে ‘মোরে’তে। ‘মোরে ভারতের শেষ গ্রাম। পথে পড়বে টেংনোপাল। খুব উঁচু পাহাড়। প্রায় কার্সিয়াং-এর মতো উঁচু। সবসময় কুয়াশা-ঘেরা থাকে। সারা রাস্তাটাই পাহাড়ের আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে।
–আমরা রাতে কোথায় থাকব? বাবলি শুধোল খুশি খুশি গলায়।
অভী বলল, ‘মোরে’র বাংলোতে। সুন্দর বাংলো আছে দুটো। ছোট বাংলোটাই বেশি সুন্দর। কিন্তু বড় বাংলোটা না হলে আমার, তোমার ও ঝুমার থাকার অসুবিধে হবে।
বাবলির ভুরু দুটো কুঁচকে উঠল।
কথা বলল না কোনো।
অভী নিজেই বলে চলল, ‘মোরে’তে তো থাকব রাতে কিন্তু তার আগে তোমাকে বার্মাতেও ঘুরিয়ে আনব। মোরের ওপাশে বার্মিজ গ্রাম “তামু”। নো-ম্যান্স ল্যান্ড পেরিয়ে। সেখানে প্যাগোডা আছে–দেখাব। হাটে “খাউসুয়ে” খাওয়াব–বার্মিজ নুডলস। দারুণ খেতে। বার্মিজ ছাতা, তানাখা, লুঙ্গি এসব কিনতে পার ইচ্ছা করলে।
তারপর একটু চুপ করে থেকে বলল, চলই না। দেখবে কী ভালো লাগে। সারাদিন টো-টো করে তারপর রাতে এসে বাংলোয় থাকব। রাতে তোমাদের কি কি খাওয়াব তার মেনু পর্যন্ত ঠিক করৈ আগে থাকতে পাঠিয়ে দিয়েছি আমি। কোনো কষ্টই হবে না তোমাদের।
–বুঝতেই পারছি। সংক্ষিপ্তভাবে ঠাট্টার গলায় বলল বাবলি। তারপরই বলল, তুলিহালে নেমে অবধি বুঝতে পারছি যে, হবে না।
বলেই বাবলি অপ্রস্তুত অভীর মুখে তাকিয়ে হাসল, ওকে আশ্বাস দেবার জন্যে।
তারপর বলল, এবার উঠুন মশায়। আমায় ঘর দেখান। চান করব।
বাবলি চান করার কথা বলতেই অভীর সারা শরীর শিরশির করে উঠল।
বাবলিকে চিঠি লিখতে লিখতে, বাবলির লেখা চিঠি পড়তে পড়তে অভীর ইচ্ছে করেছে অনেকরকম। ভবিষ্যতের কথা অনেকভাবে ভেবেছে অভী। তেমন করে এর আগে আর কখনও ভাবে নি। এমন করে যে ভাবা যায়, সেকথা পর্যন্ত আগে কখনও জানত না অভী।
ও অনেকবার ভেবেছে যে, বাবলিকে ও একদিন নিজে হাতে, কোনো সুগন্ধি সাবানে অনেক ফেনা তুলে চান করাবে।
তাই এই চান করার কথা উঠতেই সেকথাটা মনে পড়ে গেছিল অভীর।
ঘর দেখে, ওর ঘর-সাজানো দেখে বিলক্ষণ খুশী হল বাবলি। সুন্দর একটা রুচির ছাপ আছে ঘরময়। পাপোশ থেকে বেডকভারে দেওয়ালের ছবি থেকে টেবিলের ম্যাটস্-এ।
বাবলির ঘর প্রদক্ষিণ শেষ হলেই, অভী দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে দরজার দিকে পেছন করে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে দুহাত মেলে ধরল বাবলির দিকে।
বলল, দৌড়ে এস। আমার বুকে দৌড়ে এস। আমি অনেকদিন স্বপ্ন দেখেছি যে তুমি দৌড়ে আমার বুকে আসছ।
বাবলি হাসল। দুষ্টু হাসি।
এতক্ষণে বোধহয় ওর মনের আকাশ থেকে ঝুমার ভাবনার মেঘ কেটেছে।
বাবলি বলল, কি করে দৌড়ে আসতে হয় আমি জানি না। আমি অনেক কিছুই জানি না।
অভী রোম্যান্টিক গলায় বলল, আমিও কি জানি নাকি? কাব্য করে বললে বলতে পারি, বোধহয় শ্রাবণের বৃষ্টির মতো। এস, দৌড়ে এস; ঝমঝম্ করে এসে আমাকে ঝুপঝুপিয়ে তোমার ভালোবাসায় ভিজিয়ে দাও।
বাবলি তবুও দৌড়ে এল না। ধীরে, নিশ্চিন্তে, আত্মবিশ্বাস-ভরা পদক্ষেপে ভেসে এল অভীর দিকে, তারপর মুখ রাখল অভীর বুকে।
অভী ওর সিঁথিতে, ওর চোখে, ওর চিবুকে, ওর বুকে অনেক অশান্ত, অবাধ্য চুমু খেল অনেকক্ষণ ধরে।
বাবলি ফিসফিস করে বলল, তুমি আমাকে ভালোবাস সত্যি?
অভী থমকে দাঁড়াল।
অবাক হয়ে বলল, মিথ্যা?
তারপর বলল, হঠাৎ এ সন্দেহ? এতদিন পরে? এতকিছুর পরে?
বাবলি আবারও বলল, আমাকেই বাসো? একা আমাকে?
অভী বাবলিকে দুহাতে ওর বুকের মধ্যে পিষে ফেলে বলল, হিংসুটি, মেয়ে মাত্র হিংসুটি!
তারপর বলল, বাসি বাসি, বাসি। তোমাকে, একা তোমাকেই ভালোবাসি।
আর কাউকে না তো? একটুও না? বাবলি ভুরু তুলে বলল।
অভী ওর ঠোঁট বন্ধ করে দিল চুমোর শীলমোহরে।
খেতে বসে অভী একবার ঝুমার প্রসঙ্গ তুলেছিল।
বলেছিল, এ কাজটা কিন্তু ভালো হল না। বেচারী ঝুমাকে কিন্তু আমি বলে রেখেছিলাম যে তুমি এলেই ওকে বাড়িতে আনব হোটেল থেকে। তুমি ওর বন্ধু জানতাম। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে সদ্ভাব নেই একথা জানতাম না।
বাবলি ছুরি দিয়ে ফল কাটতে কাটতে বলল, ও আমার বন্ধু এবং কিরকম বন্ধু সেকথা পরে বলব, কখনও যদি শুনতে চাও, তার আগে তুমি বল, ঝুমা তোমার কি রকম বন্ধু?
–মানে? অবাক হয়ে অভী শুধোল।
–মানে বুঝতে পারলে না? বাবলি বলল।
–না। প্রাঞ্জল করে বল।
অভী গম্ভীর গলায় বলল।
–মানে, তোমার ও ঝুমার বন্ধুত্বের গভীরতা কতখানি? তুমি ঝুমা সম্বন্ধে কতটুকু জান?
–বেশি জানি না। জানতে চাইও নি। তোমার বন্ধু এ জানাটাই তো আমার কাছে অনেকখানি ছিল। তোমার শত্রু যে, সেকথা আগে জানলে আরো বেশি জানার চেষ্টা করতাম।
বাবলি বলল, তুমি আমাকে ঝুমার সম্বন্ধে লেখো নি তো আগে, একবারও জানাও নি যে ওকে তুমি এমনভাবে নেমন্তন্ন করে এনেছ এখানে। তা জানলে আমি এখানে আসতাম না।
এবার অভীর স্বর আর তরল রইল না।
অভী বলল, দ্যাখ বাবলি, তুমি বোধহয় বাড়াবাড়ি করছ।
বাবলি বলল, না। আমি বাড়াবাড়ি করছি না।
–তাহলে তুমি কি চাও যে ঝুমাকে আমি চলে যেতে বলি ইম্ফল থেকে?
–তুমি বলবে কেন? ওর আত্মসম্মান থাকলে ও নিজেই চলে যাবে। কিন্তু আমি জানি যে, ওর আত্মসম্মান নেই। ওকে না তাড়ালে, ও যাবে না।
অভী অসহায়ের ভঙ্গীতে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল, তাহলে একথা ওকে এক্ষুনি বলা দরকার। তুমি রেস্ট করো, আমি ওর হোটেলে যাচ্ছি।
–না। তুমি যাবে না। বাবলি বলল।
অভী একটু বিরক্ত হল বলে মনে হল।
বলল, দ্যাখ বাবলি, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মি! তোমার সঙ্গে ঝুমার কি কারণে ঝগড়া তা আমি জানি না, কিসের তোমাদের শত্রুতা তাও জানি না। কিন্তু তার জন্যে আমি কেন নিজেকে ওর কাছে ছোট করতে যাব? ও তো আমার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করে নি। এবং একথাও সত্যি যে, ও যতবার এর মধ্যে ইম্ফলে এসেছে গেছে সে সময়ে তোমার সম্বন্ধে অনেক কথা হয়েছে আমাদের, কিন্তু ও বরাবর তোমার প্রশংসাই করেছে। তোমাকে ভালোই বলেছে, আমাকে বলেছে, আমি খুব লাকি যে তোমার মতো মেয়ের ভালোবাসা পেয়েছি। অথচ তুমি আসতে না আসতেই ওর সঙ্গে যে ব্যবহার করছ, ওর সম্বন্ধে যা-যা বলছ তা কিন্তু একেবারে অন্যরকম। আমি যদি পুরোপুরি মেনেও নি যে, তুমি যা বলছ তার সবই ঠিক; তবুও ওর সঙ্গে আমার খারাপ ব্যবহার করাটা কি ভদ্রতার হবে?
বাবলি একরোখা গলায় বলল, আমি অত জানি না। আমি যা বলছি তা তোমাকে করতে হবে। তোমার এখন ওখানে যাওয়া চলবে না। গেলে দুজনে একসঙ্গেই যাব। যখন যাবে বলেছ, তখন, ওকে তুলতে। তার আগে নয়!
অভী চেয়ার ছেড়ে উঠে, একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল।
–কি জানি? আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না।
–পারবে। আজ না পারলেও একদিন পারবে।
বাবলি বলল।
তারপর অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে, ফল কেটে রেখে অথচ না-খেয়ে বাবলি চেয়ার ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে বসল।
অভীর বাংলোর সামনেই বড় রাস্তা। ব্রিটিশ আমলে লাগানো বড় বড় মহীরূহ পথের দুপাশে। কেসিয়া ভ্যারাইটির রেইনট্রি। পথটাকে ছায়াচ্ছন্ন করে রেখেছে সব সময়। মাঝে মাঝে গাড়ি যাচ্ছে দু-একটা। জীপ ও ট্রাক যাচ্ছে সেনাবাহিনীর। কতগুলো দাঁড়কাক কাঠের গেটের উপরে বসে কর্কশ গলায় ডাকছে কা-কা করে।
অভী বারান্দায় এসে চেয়ার টেনে বসল।
ওর মুখ দেখে মনে হল যে অভী খুব অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। বাবলির সঙ্গে ওর সম্পর্কটা এতখানি পুরোনো নয় যে অকপটে ঝগড়া করতে পারে, আবার এমন নতুনও নয় যে ফর্মালিটি করে নিজের মনের ভাব বুকের গভীরে নিঃশ্বাস চাপা দিয়ে রাখে। কি যে করা উচিত; বুঝতে পারছিল না। অভী।
হঠাৎ বাবলি চাপা-গলায় বেঁকা চোখে চেয়ে বলল, ঝুমাকে তোমার সুন্দরী বলে মনে হয় না?
অভী অবাক হল। অবাক হয়ে অনেকক্ষণ বাবলির চোখে তাকাল।
তারপর বলল, নিশ্চয়ই।
–ঝুমার ব্যবহার ভালো লাগে না?
–খু-উ-ব! অভী আবার বলল, অন্যদিকে তাকিয়ে।
–সব মিলিয়ে ওকে তোমার ভালো লাগে নি?
–হ্যাঁ। তাও লেগেছে। ভালো লেগেছে বই কি!
–তাহলে আর সত্যি কথাটা আমার কাছে লুকানো কেন? তুমি ঝুমাকে নিয়ে এখানে এস। আমি ঝুমার হোটেলে যাচ্ছি। কাল সকালের ফ্লাইটে আমি চলে যাব।
অভী উত্তেজিত হয়ে উঠল বলে মনে হল ওর চোখ দেখে।
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, দ্যাখ, ভালো লাগলেই যে সব ভালো লাগা একরকম হবে তার কোনো মানে নেই। আমার সঙ্গে ঝুমার যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কের সঙ্গে তোমার আমার সম্পর্কের কোনোই মিল নেই। এ দুই সম্পর্ক একেবারেই আলাদা আলাদা। কাউকে ভালো লাগলেই যে ভালোবাসতে হবে, বা বিয়ে করতে হবে তার কোনো মানে নেই। তাছাড়া, ঝুমার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে তোমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার অনেক পরে। তোমার বান্ধবী বলেই সে আলাপ হয়তো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তুমি যে পুরো ব্যাপারটার এমন কদৰ্থ করবে, তা আমি ভাবতেও পারি নি।
বাবলি রেগে উঠে প্রায় কেঁদে ফেলল। ‘
বলল, তুমি কি জান, ঝুমা তার ব্যাগে তোমার সুইমিং-ট্রাস্ক পরা ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কতদিন হল? তুমি জান কি যে, ও কত ছেলের মাথা চিবিয়ে খেয়েছে? কত ছেলে আত্মহত্যা করেছে ওর জন্যে? ওর মুখশ্রী আর ওর অভিনয় দিয়ে ও কত ঘর ভেঙেছে?
তারপর একটু চুপ করে থেকে হতাশ গলায় বলল, তুমি ওর সম্বন্ধে কিছুই জান না। তুমি জান না ও কত নীচ, ইতর; কত কুচক্রী। ও আমার কত বড় সর্বনাশ করার জন্য এখানে এসেছে।
অভী চেয়ারে সোজা হয়ে বসল।
বলল, দারুণ ইন্টারেস্টিং সব ব্যাপার। ঝুমা যে এত গুণী মেয়ে আমি জানতাম না তো! নিজেকে, নিজের গুণাবলীকে লুকিয়ে রাখার আশ্চর্য ক্ষমতা যে ও রাখে, তা আমাকে স্বীকার করতেই হবে। রিয়্যালি ভেরী ভেরী ইন্টারেস্টিং। আমি ভাবতাম, আমার জীবনে তুমিই সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মেয়ে। কিন্তু ঝুমা যে তোমার চেয়ে আরো অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং–তা আমার জানা ছিল না। ইটস স্ট্রেঞ্জ রিয়্যালি স্ট্রেঞ্জ!
–তার মানে? বাবলি বলল।
অভী বলল, মানে নেই। সব কথার মানে হয় না।