৮. ত্রিবেণী
ত্রিবেণী : ‘মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে’।
অতি প্রাচীন তীর্থ—গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর মহাসঙ্গমে।
দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত লক্ষ্মণসেনের সভাকবি ধোয়ীর ‘পবনদূতম্’ কাব্যে এর উল্লেখ আছে। বঙ্গাধিপ ফিরোজ এখানে কিছুকাল বাস করেছিলেন। মুসলমান ঐতিহাসিকেরা তাই অনেক সময় একে বিকল্প নামে উল্লেখ করেছেন : ‘ফিরোজাবাদ’।
কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ষোড়শ শতাব্দীতে বর্ণনা করছেন
“বামদিকে হালিশহর দক্ষিণে ত্রিবেণী।
যাত্রীদের কোলাহলে কিছুই না শুনি।।”
স্থাপত্যের ছাত্রদের কাছে এখানে জনান্তিকে কিছু নিবেদন করি : ত্রিবেণীতেই আছে বাঙলা, বিহার, উড়িষ্যার প্রাচীনতম একটি মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন—জাফর খাঁ মসজিদের মিরাবটি। সপ্তগ্রাম-বিজেতা জাফর খাঁর সমাধি আছে যে প্রাচীন মসজিদে সেটি ভাগীরথী ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে। এই সুবৃহৎ মসৃজিদটি প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরের প্রস্তরখণ্ড দ্বারা নির্মিত। কিন্তু মন্দিরের মিত্রাবটি অন্য মসজিদ থেকে সংগৃহীত। তার গায়ে শিলালেখে উৎকীর্ণ করা আছে যে তারিখ, সেটা 1298 খ্রীষ্টাব্দ!
পর পর দুইটি শতাব্দীতে ত্রিবেণী বঙ্গসংস্কৃতিকে উপহার দিয়েছে দুটি দুর্লভ প্রতিভা। গোটা অষ্টাদশ শতাব্দীব্যপী পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন এবং উনবিংশতি শতাব্দীতে বাঙলার এডমন্ড বার্ক : রামগোপাল ঘোষ (1815-68 )।
রামগোপাল ‘সেই সময়’ কালের মানুষ, আমাদের এক্তিয়ারের বাহিরে। আমরা আছি ‘সেইতর সময়ে’, তাই শুধু জগন্নাথের কথা বলি :
জগন্নাথের যখন জন্ম হয় (1694) তখন তাঁর পিতৃদেব রুদ্রদেব তর্কবাগীশের বয়ঃক্রম তিনকুড়ি-ছয়। জগন্নাথের জননীকে যখন বিবাহ করেন তখনই তাঁর বয়স ষাটের উপর, তার পশ্চাতে এক অদ্ভুত লোকগাথা। জগন্নাথের দাদামশাই বাসুদেব ব্রহ্মচারী একজন বিখ্যাত জ্যোতিষীর কাছে শুনতে পান যে, জরাজীর্ণ-রুদ্রদেবের বৃদ্ধ বয়সে এক পুত্রসন্তান হবে এবং সেই পুত্রটি হবে অলৌকিক গুণসম্পন্ন এক ক্ষণজন্মা। নিতান্ত পীড়াপীড়ি করে তিনি য়াজ্যেষ্ঠ রুদ্রদেবকে সম্মত করেন এবং তাঁকেই কন্যা সম্প্রদান করেন। কেটে গেল দু-চার বছর—বাসুদেব ব্রহ্মচারীর দৌহিত্র আবির্ভূত হল না। তখন তিনি কন্যার পুত্রকামনায় পুরুষোত্তম ধামে চলে যান। পুরশ্চরণাদি পুত্রেষ্টী যজ্ঞ করেন। তাঁর প্রতি স্বপ্নাদেশ হয়—‘তুমি গৌড়মণ্ডলে প্রত্যাবর্তন কর। তোমার কন্যা গর্ভবতী হয়েছে। পুত্র জন্মিলে নাম রেখ জগন্নাথ।’
বাসুদেব ফিরে এলেন ত্রিবেণীতে। শুনলেন, যা স্বপ্নে প্রত্যাদেশ হয়েছে তা সত্য।
দৌহিত্রের নামকরণ তাঁরই ইচ্ছানুসারে হল : জগন্নাথ।
পাঁচ বৎসরে শিক্ষারম্ভ। অক্ষর-পরিচয় হওয়ার পূর্বেই নাকি তিনি মুখে মুখে ব্যাকরণের সূত্রগুলি শিখে ফেলেন। অসাধারণ মেধা, স্মৃতিশক্তি আর অলৌকিক প্রতিভাবলে তিনি দ্বাদশবর্ষ বয়ঃক্রমকালেই প্রায় সর্বশাস্ত্ৰ আয়ত্ত করে নেন। যদিচ রুদ্রদেব তর্কবাগীশ একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, তাঁর প্রণীত ‘প্ৰবোধ চন্দ্রোদয়’ নাটকের টীকা সে সময়ে প্রামাণ্য, তবু পিতার আদেশে তিনি জ্যেষ্ঠতাত ভবদেব ন্যায়ালঙ্কারের বংশবাটীস্থিত চতুষ্পাঠীতে ভর্তি হলেন।
চতুর্দশবর্ষ বয়ঃক্রমকালে অশীতিপর পিতৃদেব এক সুলক্ষণা কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিলেন। অতঃপর ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন। পিতার মৃত্যু হল যখন, তখন তাঁর বয়স চব্বিশ বৎসর। তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি—যা তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন—তা হল একটি পিতলের গাড়ু, একটি ‘অমৃতি’ জলপাত্র, অনধিক দশ বিঘা নিষ্কর ভূমি এবং একটি ভগ্ন কুটীর। নিজের মৃত্যুকালে তিনি অন্যূন এক লক্ষ টাকা নগদ, বার্ষিক চারি সহস্র তঙ্কা লাভের নিষ্কর ভূমি, তিন পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং তস্যপুত্রদের রেখে যান। জ্যেষ্ঠ পুত্র কালিদাস নিঃসন্তান, কিন্তু কনিষ্ঠপুত্র কৃষ্ণচন্দ্রের জ্যেষ্ঠপুত্র ঘনশ্যাম সার্বভৌম ছিলেন অলৌকিক প্রতিভাসম্পন্ন। স্বয়ং জগন্নাথ বলেছিলেন, ‘বাগদেবীর কৃপার আমি কিছু কিছু প্রসাদ পেয়েছি, কিন্তু ঘনশ্যাম যে প্রসাদ লাভ করেছে তা আমার সৌভাগ্যকেও অতিক্রম করে যায়।’
দুর্ভাগ্যবশতঃ জগন্নাথোত্তীর্ণ প্রতিভার সম্যক পরিচয় আমরা পাইনি। যৌবনকালেই তিনি ঘোর উন্মাদ হয়ে যান।
চতুষ্পাঠী থেকে ‘তর্কপঞ্চানন’ উপাধি লাভ করে জগন্নাথ নিজ ভদ্রাসনে একটি টোল খুলে বসেন। অনতিবিলম্বে তাঁর বুদ্ধি ও প্রতিভার যশ দিগবিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সৌভাগ্যলক্ষ্মী এই সরস্বতীর বরপুত্রটিকে একই ভাবে আশীর্বাদ করলেন। ক্রমে তদানীন্তন বঙ্গদেশের প্রধান ব্যক্তিদের সঙ্গে তর্কপঞ্চাননের বিশেষ হৃদ্যতা জন্মায়। শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেববাহাদুর, নবাবের দেওয়ান মহারাজ নন্দকুমার, নদীয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস, স্যার জন শোর প্রভৃতি। সদর দেওয়ানী আদালতের প্রধান বিচারপতি হ্যারিংটন ছিলেন তাঁর বিশেষ বন্ধু। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি অগাধবিদ্য স্যার উইলিয়ম জোন্স্ ছিলেন তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রায়ই স্যার জোস্ নৌকাযোগে সস্ত্রীক ত্রিবেণীঘাটে এসে ঐ ব্রাহ্মণটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। অন্যান্য সাহেবদের তুলনায় স্যার উইলিয়ম জোন্স্ যে তাঁর দিকে অধিক পরিমাণে আকৃষ্ট হয়ে পড়বেন সেটাই স্বাভাবিক, কারণ স্যার জোন্স ছিলেন প্রাচ্য সংস্কৃতি-বিশারদ। ওদিকে গ্রীক, ল্যাটিন, গথিক, কেল্টিক থেকে শুরু করে ইংরাজী, ফরাসী পর্তুগীজ, জার্মান আবার এদিকে সংস্কৃত, আরবী, ফার্সি তাঁর আয়ত্তে। ‘গ্রীস, ইটালী ও ভারতের দেবদেবী’, ‘হিন্দুরাজগণের কালক্রম’, ‘হিন্দু সঙ্গীত’, ‘জ্যোতিষ ও সাহিত্য”, ‘হিন্দু আয়ুর্বেদ’ জাতীয় মনোগ্রাম লিখে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা তাঁর প্রতিষ্ঠানের মুখপত্র ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস্’ পত্রিকায় একে একে প্রকাশ করেছেন। সেইসব বিষয়ে তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহমানসে জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের মতো মানুষের কাছে তাঁকে বারবার ছুটে যেতে হত। সোসাইটির তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনে স্যার জোন্স্ ‘হিন্দু জাতির ইতিহাস ও সভ্যতা’ সম্বন্ধে যে মনোজ্ঞ ভাষণ দিয়েছিলেন (1786) তার বহু তথ্যের সত্যাসত্য নির্ধারণে তাকে ঐ পণ্ডিতের কাছে আসতে হত। সুবলচন্দ্র মিত্র তাঁর অভিধানে লিখেছেন, “দেশে সে সময় ডাকাতির অত্যন্ত প্রাদুর্ভাব হওয়ায় জগন্নাথ সেই ভয়ে সর্বদাই শঙ্কিত থাকিতেন। এই ব্যাপারে অবগত হইয়া স্যার উইলিয়াম জোন্স্ নিজ ব্যয়ে কয়েকজন বন্দুকধারী প্রহরী জগন্নাথের বাটীতে নিযুক্ত করিয়াছিলেন।”
মিত্র মহাশয়ের অভিধানে যে তথ্যটা অনুল্লেখিত এবার তা তোমাদের জনান্তিকে জানাই। তথ্যটি আমি সংগ্রহ করেছি দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের প্রামাণিক গ্রন্থ “বাঙ্গালীর সারস্বত অবদান” থেকে—
স্যার জোন্স্ ঐ বন্দুকধারীর ব্যবস্থা করে দেন জগন্নাথের বাড়িতে ডাকাতি হওয়ার পরে। এই ডাকাতির জন্য জগন্নাথ নিজেই দায়ী! শোন তবে মজার কিসসা :
স্যার উইলিয়াম জোন্স্-এর অনুরোধে জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন দুইখানি দায়-সংক্রান্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেন। একটির নাম “অষ্টাদশ বিবাদের বিচার গ্রন্থ” অপরটির নাম “বিবাদ-ভঙ্গার্ণব”। এর সাহায্যে সে-সময় এ-দেশে বিচারপদ্ধতি পরিচালিত হত। নানা লোক নানান বিষয়ে বিধান নিতে তাঁর দ্বারস্থ হত। উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিয়ে পণ্ডিতমশাই শাস্ত্রসম্মত নিদান হাঁকতেন। ঐ দুইখানি বিচার-বিভাগীয় গ্রন্থ রচনার পর তাঁর মক্কেলদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পেল। পণ্ডিতজীর বিধান পেলে আদালত কিছু করতে সাহস পাবে না, এটাই ছিল সকলের ধারণা। বিশেষ দেওয়ানী আদালতের প্রধান বিচারপতি হ্যারিংটন, এমনকি সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার জোও তাঁর বন্ধুস্থানীয়। বিচারের প্রয়োজনে ঐ পণ্ডিতকে দিয়ে গ্রন্থ লিখিয়ে নিচ্ছেন, মাসিক সাতশত টাকা সম্মানমূল্য দিয়ে (এ জন্য গ্রন্থ সমাপ্ত হবার পর মাসিক তিনশত টাকা পেন্সনও পেয়েছেন)।
একদিন পণ্ডিতমশায়ের কাছে এসে হাজির হল অপরিচিত একজন ‘মক্কেল’। পণ্ডিতের চতুষ্পাঠী সে-সময়ে ব্যারিস্টার সাহেবের চেম্বারে রূপান্তরিত। ‘জুনিয়ার’দের কাছে ঐ লোকটা তার নাম কিছুতেই জানাতে চাইছে না। বলছে, যা বলবার তা স্বয়ং পণ্ডিতমশাইকে বলবে জনান্তিকে। এমন আবদারও মেনে নেওয়া হল। বোধ করি আগন্তুক ‘জুনিয়ার’দের যথাযোগ্য কাঞ্চনমূল্যের ব্যবস্থা ঠিক মতোই করেছিল।
নির্জন কক্ষে পণ্ডিতের সাক্ষাৎ পেল আগন্তুক।
জগন্নাথ তাকে বলতে গেলেন, কে বাবা তুমি? কী চাও?
বলা হল না। লোকটাকে দেখে মনে হল, ‘কুরুক্ষেত্র’ যাত্রার আয়োজন হলে আর সেই সাক্ষাৎপ্রার্থীকে ঘটোৎকচের ভূমিকাটি প্রদান করলে ‘মেক-আপ্’-এর প্রয়োজন হবে না।
দশাসই জোয়ান লোকটি বিনয়ে বিগলিত হয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বললে, ছিচরণের দাসের নাম শ্যাম মল্লিক আজ্ঞে, বড় বিপদে পড়ি আপনার ছামুতে আস্যে পড়ছি ঠাউর। টুক চরণামৃৎ দে উদ্ধার করি দেন।
জগন্নাথের পরিবর্তে পণ্ডিতটি রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত হলে এবম্বিধ অনুরোধে নির্ঘাৎ ঠ্যাঙ-জোড়া সামনে বাড়িয়ে ধরে বলতেন, নাও বাবা। চরণধূলি নিয়ে বিদেয় হও। আমার অনেক কাজ বাকি।
জগন্নাথ তা বললেন না। তিনি তো শুধু বাগদেবীরই বরপুত্র নন। বুঝলেন, ঐ শ্যাম-ঘটোৎকচ বিপদে পড়ে ওঁর বিধান নিতে এসেছে। ওর ‘অনুপপত্তি’ অন্য জাতের।
বলেন, ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছিস্ মনে হচ্ছে? জামিন দিলে?
—তা দিছে! গোটা একটা আসরফি বেমক্কা খৰ্চা হই গেল, ঠাউর!
—তা আমার কাছে মরতে এসেছিস্ কেন?
—মর্তে নয়, ঠাউর। বাঁচতি। টুক বিধান দে মোরে বাঁচায়ে দ্যান, কর্তা।
বোঝ ব্যাপার! ব্যাটা ডাকাতি করতে গিয়ে ফেঁসেছে। এখন শাস্ত্রের বিধান চাইতে দৌড়ে এসেছে ত্রিবেণী। হাঁকিয়ে দেবেন ভাবছিলেন, তার পূর্বেই শ্যাম-ঘটোৎকচ ওঁর চরণমূলে নামিয়ে রাখল এক মুঠি সিক্কা টাকা।
কাঞ্চনমূল্যে সব কিছুই শোধন হয়ে যায়। জগন্নাথ মা লক্ষ্মীর ঐ রূপালী আশীর্বাদ-কয়টা তুলে নিয়ে বললেন, বইপত্র দেখে রাখব, কাল আসিস্।
লোকটা পেন্নাম করে প্রস্থান করল।
‘ফী’ নিয়েছেন। তঞ্চকতা করতে পারেন না। ‘বিবাদ-ভঙ্গার্ণব’ থেকে দু-ছত্র নিদান লিখে। দিলেন ভূর্জপত্রে। একটি মর্মান্তিক উদ্ধৃতি। সে ‘অং-বং’ নিদানের সবটা তোমরা বুঝবে না দিদি ভাই—কী বলে ভাল, আম্মো বুঝিনি—তবে দীনেশ ভট্টাচার্য মহাশয় বুঝেছিলেন। হুবহু মাছি মারা কেরানির ভূমিকায় নেমে পড়া যাক :
বিষ্ণুধর্মোত্তরে, পার্শ্বিকদ্যুতচৌর্য্যাদি প্রতিরূপসাহসৈঃ। ব্যাজেনাপার্জিতং যচ্চ ত কৃষ্ণং সমূদাহৃতম্।। ইতি বচনেন চৌর্য্যস্য স্বত্বজনকত্বম্। অতএব তচন্দ্রস ঋণদানেইপি চৌরস্য বৃদ্ধিলাভঃ এবং তদ্ধনেন পুণ্যকর্ম্মানুষ্ঠানেন কিঞ্চিৎ ফলং ভবতি পিতামহচরণাশ্চ চোরিতদ্রব্যে চৌরস্য স্বত্বং স্বীকুৰ্ব্বন্তি।।
সবটা না বুঝলেও কিছু কিছু বুঝেছি। অনুবাদ করতে সাহস হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আমার বইটি আইনের প্যাচে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবার আশঙ্কা। চুরি-ডাকাতির সহায়তা করছি বলে থানা থেকেও আমার নিমন্ত্রণ আসতে পারে। কিন্তু তত্ত্বটা বিচার করে দেখার। সাহসী ডাকাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, দুরন্ত বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও তার বৃত্তিতে অবিচল। ফলে ‘চোরিতদ্রব্যে চৌরস্য স্বত্বং’ স্বীকার করা যাবে না কেন?
মোটকথা তুমি-আমি না বুঝলেও বিচারপতি আধাআধি বুঝতে পারলেন তাঁর আদালতের সংস্কৃতভাষী পণ্ডিতদের সাহায্যে। বাকিটা বুঝলেন প্রশ্ন করে, টেল মি অন ওথ, ঐ নিদানের নিচে সিগনেচার জগরনাট পণ্ডিতের আছে? করেক্ট?
আদালতের পণ্ডিত ইতিবাচক গ্রীবাভঙ্গি করায় শ্যাম-ঘটোৎকচ বেকসুর খালাস পেয়ে গেল।
ভাবছ এটাই আমার কিসসার ক্লাইম্যাক্স? না গো। কিসসার আর কিছু বাকি আছে।
পরের সপ্তাহেই জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের ভদ্রাসনে হল ডাকাতি। নগদ সিক্কা টাকা, সোনার অলঙ্কার, বাসনপত্র (সম্ভবত উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত গাড়ু ও অমৃতি জলপাত্র দুটি বাদে) ডাকাতেরা নিয়ে গেছে। পরিবর্তে রেখে গেছে একটি পত্র। ব্রজবুলিতে, দেবনাগরী হরফে। শ্যাম-ঘটোৎকচের ভাষায় অনূদিত করলে যার মর্মার্থ, ‘ফালতু ঝ্যামেলা করেন না ঠাকুর-মোশা আমার জেব্-এ জগু-পণ্ডিতের বেম্হাস্ত্র আছে! কোন শালা কোতোয়াল আমারে ছোঁবেনি; বুয়েছেন?’
সম্ভবত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন তাঁর ভদ্রাসনে ডাকাতির পশ্চাদপটে এবম্বিধ আতান্তরির দুঃসংবাদটি স্যার জোসের গোচরে আনেননি।
.
জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের বুদ্ধি, মেধা ও শ্রুতিধরপ্রতিম স্মৃতিশক্তির বিষয়ে নানান কাহিনী প্রচলিত। তার ভিতর একটি হয়তো শুনে থাকবে—সেই আদালতে সাক্ষী দেবার কিসসাটা। সেটা সুবলচন্দ্রের জবানীতে পেশ `করি, “একদিন ইনি ত্রিবেণীর বাঁধাঘাটে বসিয়া আহ্নিক করিতেছিলেন, এমন সময়ে সেখানে একখানি বজরা আসিয়া উপস্থিত হইল। বজরা হইতে দুইজন গোরা তীরে অবতীর্ণ হইয়া তুমুল ঝগড়া বাধাইয়া দিল। কথান্তর হইতে হইতে দুইজনে শেষে হাতাহাতি পর্যন্ত হইয়া গেল। জগন্নাথ আহ্নিক করিতে করিতে তাহাদিগের ঝগড়া আদ্যোপান্ত শুনিলেন। অতঃপর সাহেবদ্বয় পরস্পরের নামে আদালতে অভিযোগ উপস্থিত করিল। বিচারপতি জানিতে পারিলেন, সে সময়ে জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন ঘাটে আহ্নিক করিতেছিলেন। বিচারপতি কর্তৃক আহূত ও সাহেবদ্বয়ের বিবাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইয়া তর্কপঞ্চানন বলিলেন, ‘উহারা মারামারি করিয়াছে, দেখিয়াছি। দুইজনের বচসাও শুনিয়াছি, কিন্তু ইংরেজী জানি না বলিয়া উহাদের কথার অর্থ বুঝিতে পারি নাই, তবে কে কী শব্দ প্রয়োগ করিয়াছিল, অবিকল বলিতে পারি।’ এই বলিয়া যে যাহাকে বলিয়াছিল, যথাক্রমে সমুদায় অবিকল বলিলেন। ইহার এতাদৃশী স্মৃতিশক্তি অতি প্রাচীনকাল পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। কালিদাসের সংস্কৃত অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ ইঁহার আদ্যোপান্ত কণ্ঠস্থ ছিল।”
কোন প্রামাণিক গ্রন্থে আমি এই কাহিনীর সমর্থন পাইনি। অথচ জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের প্রসঙ্গে সুশিক্ষিত যাঁর সঙ্গেই আলোচনা করেছি, লক্ষ্য করে দেখেছি, এ কাহিনীটি তাঁর জানা। যেন এটিই জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ খণ্ডকাহিনীটি আদৌ বিশ্বাস করি না। জানি দিদিভাই, এবার তুমি আমাকে প্রশ্ন করবে, বিশ্বাস যদি না-ই করেন তাহলে অতবড় উদ্ধৃতিটা না লিখে আপনার হাত আর আমাদের চোখকে নিষ্কৃতি দিলেন না কেন? দিইনি অন্য একটি হেতুতে। বলি, শোন :
এটা বঙ্গ-সংস্কৃতির অধোগমনের একটি উদাহরণ। এই অতিভঙ্গ বঙ্গদেশে অনেক অনেক মনীষী এসেছেন, অনেক কথা বলে গেছেন। তুমি-আমি তার সারাংশ বর্জন করে ভূষিমাল নিয়ে বাহবা দিই। ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ আদ্যন্ত কণ্ঠস্থ থাকা কোন বাহাদুরী নয়। আমার ভগ্নিপতি ত্রিপুরারী চক্রবর্তী মশায়ের কণ্ঠস্থ ছিল আদ্যন্ত সংস্কৃত মহাভারত। গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে দশ-পনের বছর ধরে তিনি প্রতি সপ্তাহে মহাভারত পাঠ করেছেন—তোমরা তাঁকে দেখনি, দাদু-দিদারা দেখেছেন, শুনেছেন—তাঁদের জিজ্ঞেস্ কর, কোনদিন বক্তৃতামঞ্চে তাঁর হাতের কাছে ‘মহাভারত’ গ্রন্থটি থাকত না। চক্রবর্তী-মশাইকে আমি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার হেতু এ নয় যে, অষ্টাদশপর্ব মহাভারত তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল।
ভেবে দেখ, সুবল মিত্র মশায়ের কাহিনীটি যদি আমরা ‘হোল ট্রুথ অ্যান্ড নাথিং বাট দ্য ট্রুথ’ বলে স্বীকার করে নিই তাহলে সেই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে আমরা কোন নরকে নামিয়ে নিয়ে আসি। পাতা উল্টে এ বইয়ের 136 পৃষ্ঠাটি আর একবার দেখবে দিদিভাই? কী প্রভেদ তাহলে জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের সঙ্গে দুর্গা-খুড়োর? দুজনেই আঙুলে পৈতে জড়িয়ে গায়ত্রী মন্ত্ৰ জপ করতে করতে কান-জোড়াকে সজাগ রাখেন—কে কী বলছে? একজন পট্টবস্ত্র পরিধান করে পূজা ঘরে যন্ত্রচালিতের মতো অং বং করছেন, আর জন সর্বাঙ্গে গঙ্গামৃত্তিকা মেখে গঙ্গাজলে আবক্ষ নিমজ্জিত করে জপ করার ঢং করছেন। ‘যথা সংহরতে চায়ং কর্ম্মোহঙ্গানিব সর্ববশঃ’[১] নির্দেশনা কেউই মানছেন না। রবিশঙ্করের সেতার অথবা জর্জদার রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে, সাহিত্য-রচনা বা তার রসাস্বাদন করতে করতে তুমি-আমি যেভাবে তন্ময় হয়ে যাই, বাহ্যজ্ঞানশূন্য একাগ্রতায় তন্নিষ্ঠ হয়ে যাই, তর্কপঞ্চানন সেটুকুও হতে পারতেন না? এ কি বিশ্বাস্য?
[১. কূর্ম যেমনভাবে তার হাত-পা দেহের ভিতর টেনে নেয় সেইভাবে ধ্যানরত যোগী তাঁর যাবতীয় ইন্দ্রিয়কে সংহত করে ধ্যানস্থ থাকেন।—গীতা, দ্বিতীয় অধ্যায়।]
কিন্তু না! ভারতীয় সাধকদের এভাবেই বিচার করা হয়। কে কমণ্ডলুর জল ছিটিয়ে মরা বাঁচিয়েছেন, অন্ধের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন, অপুত্রের পুত্র আর নির্ধনকে ধনদান করেছেন এই সব আষাঢ়ে গপ্পোই আমাদের অভিভূত করে। তাঁদের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে ভুলে যাই আমরা। তাঁদের বিভূতিতেই অভিভূত হই, তাঁদের বাণী ও নির্দেশ হয়ে যায় ঝরাপাতার চেয়েও ঝরা।
সরস্বতী ও লক্ষ্মীর আশীর্বাদ তুল্যমূল্যভাবে লাভ করা কোন অপরাধ নয়। বুনো রামনাথ শুধু পণ্ডিত ছিলেন না, ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, সাধক। তর্কপঞ্চানন পণ্ডিত, বিদ্বান তথা বিষয়ী। সংসদ ‘বাঙ্গালী চরিতাভিধানে’ যে-কথা বলা হয়েছে—‘দীর্ঘজীবী এই পণ্ডিত একক প্রচেষ্টায় সংস্কৃতচর্চায় নবদ্বীপের খ্যাতি প্রায় নিষ্প্রভ করে তোলেন’—সেটাই কি কম কৃতিত্ব?
অথবা স্বয়ং রাজা রায়মোহনের মূল্যায়ন “ Jagannath was universally acknowledged to be the first literary of his day and his authority has as much weight as that of Raghunandana.”[১]
[১. ‘সংবাদপত্রে সেকালের কথা’, দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ: 731.]
কথোপকথনে, বাকপ্রয়োগের চাতুর্যে তাঁর রসিকমনের পরিচয়।
একবার নবদ্বীপের একজন পণ্ডিত কথাপ্রসঙ্গে এক পণ্ডিতসভায় বলেছিলেন, সরস্বতী সারাদিনের মধ্যে অন্তত একবার নবদ্বীপে অধিষ্ঠিত হতে বাধ্য হন—কোন না কোন পণ্ডিতের ভদ্রাসনে—
ইঙ্গিতটি পরিষ্কার। নবদ্বীপে অসংখ্য পণ্ডিত, ত্রিবেণীতে একমেবাদ্বিতীয়ম্। সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নবদ্বীপই শ্রেষ্ঠ।
জগন্নাথ তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তরে বলে ওঠেন, ওখানেই নবদ্বীপের সঙ্গে ত্রিবেণীর পার্থক্য। ত্রিবেণীতে সরস্বতী দিবারাত্র অধিষ্ঠান করেন।
চমকে উঠলেন সভাস্থ সবাই! এ কী দত্ত! আত্মপ্রশংসা না আত্মহত্যার সমতুল্য? তর্কপঞ্চানন এ কী বললেন? এতদূর স্পর্ধা! স্বয়ং যাজ্ঞবল্ক্য পর্যন্ত অনুরূপ অবস্থায় বলেছিলেন, ‘ব্রহ্মিষ্ঠের পদে শতকোটি নমস্কার’, আর এ লোকটা…
জগন্নাথ ওঁদের বিস্ময়বিমূঢ় ভাব দেখে অট্টহাস্য করে ওঠেন। বলেন, কী আশ্চর্য! বুঝলেন না? এটা ‘শ্লেষ’ অলঙ্কার! ত্রিবেণীতে সরস্বতী-নাম্নী নদী নিত্য প্রবহমানা। নয় কি?
পণ্ডিত তথা বিদ্বৎসমাজে জগন্নাথের প্রভাব কী আকাশচুম্বী ছিল সেকথা বোঝাতে আর একটি কৌতুককর কাহিনী শোনাই।
রাজা নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুর তাঁর মাতৃশ্রাদ্ধে অযুত-নিযুত ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতকে নিমন্ত্ৰণ করেছেন। জনৈক পণ্ডিত সেই তালিকায় নিজের নামটি দেখতে না পেয়ে মর্মাহত হলেন। শুধু ভালমতো পণ্ডিত বিদায়টুকুই নয়, এ নিমন্ত্রণ-তালিকায় নাম-না-থাকার অর্থ পণ্ডিতসমাজে এক ধাপ নিচে নেমে যাওয়া। পণ্ডিত এসে মুরুব্বি পাকড়াও করলেন উপস্থিত-কবি কবিচন্দ্রকে বললেন, আপনি অনুগ্রহ করে একবার ত্রিবেণীর তর্কপঞ্চানন ঠাকুরকে অনুরোধ করুন। তিনি নির্দেশ দিলেই আমার নামটি তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে।
কবিচন্দ্র বললেন, তাতে আর সন্দেহ কী? কিন্তু জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন নিজেই একজন আমন্ত্রিত, রাজা-বাহাদুরকে এ জাতীয় অনুরোধ করা কি তাঁর পক্ষে শোভন? আপনি বরং চতুর্ভুজ ন্যায়রত্নকে ধরুন।
চতুর্ভুজ ন্যায়রত্ন হচ্ছেন মহাকবি বাণেশ্বরের পৌত্র, আমাদের এই খণ্ড-কাহিনীর কালে তিনি রাজা নবকৃষ্ণের সভাপণ্ডিত।
উপেক্ষিত পণ্ডিত বলেন, শুনেছি তালিকাটি চূড়ান্তভাবে রাজাবাহাদুরের অনুমোদন লাভ করেছে। এত বিলম্বে চতুর্ভুজের এ ব্যাপারে আর হাত নেই।
উপস্থিত-কবি কবিচন্দ্র তখন বলেন, ‘চতুর্ভুজে ভুজো নাস্তি নির্ভুজং কিং করিষ্যতি?’[২]
[২. চতুর্ভুজ চার হাতে যার নাগাল পেলেন না ঠুটো জগন্নাথ তা কেমন করে পাবেন?]
এই ক্ষণজন্মা পুরুষটির দৈহিক বর্ণনা সমকালীন প্রত্যক্ষদর্শীরা যেভাবে দিয়েছেন তাতে নিম্নোক্ত বিশেষণ তাঁর প্রতি প্রযোজ্য—উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, প্রিয়দর্শন, লোমশ, দীর্ঘ ভুজদ্বয়, উন্নত নাসিকা, প্রশস্ত ললাট, মুণ্ডিত মস্তক, দীর্ঘ অকফলা।
গৌতম বুদ্ধদেবের সমকালে কোনও ভাস্কর তাঁর মূর্তি গড়েনি। শরদিন্দুর ‘চন্দনমূর্তি’ সাহিত্যসত্য মাত্র। সৌভাগ্যক্রমে জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের প্রায় সমকালে একজন প্রখ্যাত ভাস্কর তাঁর একটি মূর্তি গড়েছিলেন। তথ্যটি সংগ্রহ করেছি একটি প্রাচীন সূত্র[২] থেকে। লর্ড কর্নওয়ালিসের মৃত্যু হয় 1805 খ্রীষ্টাব্দে, যুক্তপ্রদেশের গাজীপুরে। সেখানে তাঁর একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই মর্মরমূর্তির পাদদেশে একজন মুসলমান গাজী এবং একজন হিন্দু পণ্ডিতের মূর্তি উৎকীর্ণ করার আদেশ দেওয়া হল ভাস্করকে। ভাস্করের নাম : ফ্ল্যাক্সম্যান। তিনি হিন্দুপণ্ডিতের মূর্তির মডেল হিসাবে নির্বাচন করেন জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননকে। মূর্তিটি গাজীপুরে গেলে দেখতে পাবে। সে সুযোগ না হলে আপাতত আমার এই পিটুলি-গোলাতেই তৃপ্ত হতে হবে।
[1. Fisher : N. W. P Gazetteer- Gazipur, 1883, pp 12-3.]
তাই বা কেন? চলে যাও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। দক্ষিণ প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে বাঁ-হাতি—গঙ্গার দিকে দেখতে পাবে উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর একটি মর্মরমূর্তি। তার পাদদেশে সতীদাহের একটি অতি অনবদ্য ভাস্কর্য—অর্ধোৎকীর্ণ, অর্থাৎ ‘অলটো-রিলিভো’। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, ‘সতীদাহ’ বিষয়ে সেটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্প-নিদর্শন। যদি কলকাতার বাসিন্দা হও এবং শিল্পবিষয়ে উৎসাহ থাকে তবে সেটি না-দেখা একটা অপরাধ। যখন দেখতে যাবে তখন এ বইটি নিয়ে যেও। আমার অক্ষম স্কেচ-এর সঙ্গে মিলিয়ে দেখ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের মূর্তিটি!
সতীদাহের নিষ্ঠুর নির্দেশ প্রত্যাহার করতে পারছেন না বলে সেই পণ্ডিত কী নিদারুণ মর্মপীড়ায় ভুগছেন!
অনবদ্য ভাস্কর্য!