৮ জুন, মঙ্গলবার ১৯৭১
আজকের কাগজে দুই ইঞ্চি মোটা আট কলামজুড়ে হেডিং ছাপা হয়েছে :
পাঁচশো ও একশো টাকার নোট অচল ঘোষণা।
গত রাতেই টিভিতে অবশ্য এই চাঞ্চল্যকর ঘোষণা দেওয়া হয়ে গেছে। স্তম্ভিত যা হবার, লোকে গতকাল রাতেই হয়েছে। সে সময়টা আমি খুব পরিতৃপ্ত মুখ নিয়ে চুপ করেছিলাম। শরীফও চুপ করে ছিল, তবে জ কুঁচকানো অবস্থায়। অবশ্য আমার এ পরিতৃপ্তি বেশিক্ষণ বজায় থাকে নি, রুমী একটা কথায় বেলুন ফুটো করে দিল, আম্মা, আমার প্যান্টের মুড়িতে পাঁচটা একশো টাকার নোট সেলাই করা আছে।
বিকেলে নজলু আর কলিম এসেছে। নোট অচল ঘোষণা করার ফলে কি যে হৈচৈ পড়ে গেছে সারা শহরে। সেই সব কথাই শুনলাম ওদের মুখে। কতোজন যে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা যারা কখনো ব্যাঙ্কের ধার ধারে না, নগদেই সব সময় কারবার করে, তাদের মাথায় বাড়ি। যে বুড়ো লোকটা আজ তার মেয়ের বিয়ের বাজার করার জন্য গতকাল ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক হাজার টাকা তুলেছিল তার কি উপায় হবে? কতোজনে কত জরুরী পেমেন্ট আজ সকালেই করবার জন্য গতকাল টাকা তুলেছে, তাদেরমহাসর্বনাশ। পাওনাদারের কাছে তাদের মুখ নষ্ট। কারো কারো বাড়িতে বাজার করার মতো টাকা পর্যন্ত নেই। এক কথায় নোট অচল করে সামরিক সরকার দেশের সমগ্র জনজীবন স্থাণু করে দিয়েছে।