সপ্তাশীতিতম অধ্যায় – শক্রোত্থান
ঔর্ব বলিলেন;–হে রাজন! সম্প্রতি শক্রোত্থান-দিনকৰ্তব্য শক্ৰধ্বজোৎসব বর্ণন করিতেছি। ইহার অনুষ্ঠানে ভূপতি শত্রুকর্তৃক পরাজিত হন না। ১
সূর্যদেব, সিংহরাশিগত হইলে (ভাদ্রমাসে) দ্বাদশী তিথিতে রাজা সৰ্ব্ববিঘ্ন বিনাশের নিমিত্ত শক্ৰধ্বজ উৎসব আচরণ করিবেন। ২
বসুনামক মহারাজ উপরিচর-নৃপতির নিকট অনুপম এই যজ্ঞ বৃত্তান্ত বর্ণন করিয়াছিলেন। ৩
রাজপুরোহিত বর্ষাঋতু ভাদ্রমাসের শুক্ল দ্বাদশী তিথিতে নানাপ্রকার বাদ্য নৃত্য গীত সঙ্গে লইয়া ইন্দ্ৰধ্বজের নিমিত্ত নির্দিষ্ট বৃক্ষকে আনয়ন করত বর্ধিত করিবেন। ৪
সংবৎসরে সেই বৃক্ষ বর্ধিত হইলে সকৌতুকে মঙ্গল কাৰ্য-কলাপের অনুষ্ঠান করিবেন। ৫
উদ্যান, দেবগৃহ, শ্মশান এবং পথমধ্যে যে সকল বৃক্ষ উৎপন্ন হয়, সে বৃক্ষ সমূহ ইন্দ্ৰধ্বজে অনুপযুক্ত। ৬
অনেক লতামণ্ডল-বেষ্টিত শুষ্ক, বহু কণ্টকযুক্ত, বক্র বৃক্ষান্তরযুক্ত এবং লতাকীর্ণ বৃক্ষকে গ্রহণ করিবেন না। ৭
পক্ষিকুলের কুলায়-সঙ্কুল, বহুকোটরযুক্ত বায়ুবেগে বিধ্বস্ত, অনলদগ্ধ বৃক্ষকেও যত্নে ত্যাগ করিবেন। ৮
নারী নামে যে সকল বৃক্ষ বিখ্যাত এবং অতি হ্রস্ব, অতি কৃশ, ধীর ব্যক্তি সেই বৃক্ষ সকল শক্ৰধ্বজে গ্রহণ করিবেন না। ৯
অর্জুন, অশ্বকর্ণ, প্রিয়ক, উড়ুম্বর এবং বট এই পাঁচ বৃক্ষ ইন্দ্ৰধ্বজ সম্বন্ধে প্রসিদ্ধ। ১৯
অন্য প্রকার দেবদারু এবং শাল প্রভৃতি বৃক্ষও প্রসিদ্ধ। তাহাদিগকেও গ্রহণ করিবে। অপ্রশস্ত বৃক্ষ কদাচ গ্রহণ করিবে না। ১১
তৎপূৰ্ব্বে রাত্রিতে সেই বৃক্ষকে স্পর্শ করিয়া “এই বৃক্ষে যে সকল ভূত অধিষ্ঠান করিতেছে, তাহাদের মঙ্গল হউক এবং আমি তাহাদিগকে নমস্কার করি। ১২
মদর্পিত এই উপহার গ্রহণ করত ইন্দ্ৰধ্বজের নিমিত্ত অভিপ্রায় সিদ্ধ হউক, হে বৃক্ষবর! মহারাজ দেবরাজ ইন্দ্ৰধ্বজের নিমিত্ত তোমাকে প্রার্থনা করিতেছেন, তোমার মঙ্গল হউক। ১৩
এই পূজা গ্রহণ কর” এই মন্ত্র পাঠ করিবেন। তদনন্তর পরদিনে সেই বৃক্ষকে ছেদন করত অষ্টাঙ্গুল পরিমাণে মূল এবং চতুরঙ্গুল পরিমাণে অগ্ৰছেদন করিয়া জলে নিক্ষেপ করিবে। ১৪
তদনন্তর সেই বৃক্ষকে পুরদ্বারে আনয়ন করত সেই স্থানে ধ্বজনিৰ্মাণ করিবে। ১৫
ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষীয় অষ্টমীতে উক্ত ধ্বজকে বেদীতে সংস্থাপন করিবে। ১৬
দ্বাত্রিংশৎ হস্ত পরিমিত কেতু অধম, তাহা অপেক্ষা উন্নত দ্বিপঞ্চাশৎ হস্ত পরিমিত কেতু উত্তম। ১৭
হে নরবর! ইন্দ্রের শালকাষ্ঠ নির্মিত পাঁচজন কুমারী করিবে এবং ইন্দ্রমাতাও নিৰ্মাণ করিবে। ১৮
ধ্বজের পাদ পরিমাণে ইন্দ্রের পঞ্চকন্যা নিৰ্মাণ করিবে। এবং মাতৃকার অর্ধ পরিমাণে কিংবা হস্তদ্বয় পরিমাণে যন্ত্র নির্মাণ করিবে। ১৯
এই প্রকারে কুমারী মাতৃকা এবং কেতু নির্মাণ করিয়া শুক্লপক্ষীয় একাদশীতে উক্ত কেতুকে অধিবাসিত করিবে। ২০
“গন্ধদ্বারাদি” মন্ত্রে যষ্টিকে অধিবাসিত করিয়া অতি বিস্তৃত বাসবমণ্ডল নিৰ্মাণ করিবে। ২১
প্রথমতঃ আদিদেব হরির পূজা করিবে। তদনন্তর সুবর্ণনির্মিতা কিংবা দারুনির্মিতা অথবা পিত্তলাদি ধাতু নির্মিতা সৰ্বাভাবে মৃন্ময়ী ইন্দ্রের প্রতিমূর্তি নির্মাণ করত পূজা করিবে। ২২
মণ্ডলের মধ্যে ইন্দ্র মূর্তিকে বিশেষরূপে পূজা করিবে। তদনন্তর রাজা সুন্দরকালে কেতু উত্থাপিত করিয়া “বজ্রহস্ত! দৈত্যদমন! সহস্রনয়ন! পুরন্দর! সৰ্ব্বজগতের হিতসাধনার্থে এই পূজা গ্রহণ কর। ২৩-২৫
হে সকলামর-সিদ্ধ-সংস্তুত! হে বজ্রধর! সকল দেবগণের সহিত আগমন কর। তুমি শ্রবণা নক্ষত্রের আদ্যপাদে উত্থিত হইয়াছ, তোমাকে প্রণাম করি। ২৬
এই পূজা অঙ্গীকার কর” এই উত্তর তন্ত্রোক্ত মন্ত্রে এবং দহন প্লবনপ্রভৃতি ইন্দ্রমন্ত্রে নানাপ্রকার নৈবেদ্য নিবেদন করিবে। ২৭
অপূপ, পায়স, গুড়, ধান্য এবং নানাপ্রকার ভোজ্য দ্রব্য দ্বারা সম্পৎ বৃদ্ধির নিমিত্ত পূজা করিবে। ২৮
ঘটে দশদিকপাল এবং গ্রহগণের পূজা করিবে। সাধ্যাদি দেবগণ এবং মাতৃগণেরও যথাক্রমে পূজা করিবে। ২৯-৩০
তদনন্তর রাজা সুন্দরকালে বৃদ্ধ জ্ঞানিগণের সহিত এবং বিপ্র পুরোহিত গণের সহিত যজ্ঞবেদীর পশ্চিমভাগে মঙ্গলকর কেতুসংস্থাপনভূমিতে গমন করিবে। ৩১
রজ্জুপঞ্চকদ্বারা যন্ত্রের সহিত সুশ্লিষ্টরূপে বদ্ধ মাতৃগণ এবং কুমারী পঞ্চকযুক্ত দিকপালগণের এবং বৃহস্পতি ও অনন্তের বহু-দ্রব্যপূর্ণ বর্ণানুসারে যথাস্থানে স্থাপিত অস্ত্ৰবেষ্টিত পেটক-সমন্বিত, কিঙ্কিণীজাল এবং বৃহৎ ঘন্টাসমূহ চামরসংযুক্ত উচ্চ মকর এবং নানাপ্রকার মাল্যদ্বারা বিভূষিত সুগন্ধ অনেক পুষ্প ও রত্নমালাশোভিত, নানাপ্রকার মাল্য বস্ত্র এবং চারিটি তোরণযুক্ত ধ্বজকে অল্পে অল্পে উত্থাপিত করিবে। ৩২-৩৭
এবং সেই ধ্বজের নিম্নদেশে, মণ্ডল মধ্যে পূজিত ইন্দ্র প্রতিমাকে উত্থাপিত করিয়া অবস্থাপিত করিবে এবং ইন্দ্রদেবকে স্মরণ করিবে। ৩৮
পূৰ্ব্ববৎ সেই ধ্বজে শচী, মাতলি, কুমারজয়ন্ত, বজ্র, ঐরাবত, গ্রহগণ, দিকপাল, দেবসমূহ এবং সকল গণদেবতার পূজা করিবে। ৩৯
অপূপ পায়স প্রভৃতি পূজোপহারে অর্চনা করিবে। এবং পূজিত দেবগণকে নিরন্তর হোমদ্বারা পরিতৃপ্ত করিবে। ৪০
হোমান্তে ইন্দ্রের বলি প্রদান করিবে। ৪১
নরোত্তম! তিল, ঘৃত, অক্ষত, পুষ্প এবং দূৰ্বাদি দ্রব্যদ্বারা নিজ নিজ মন্ত্রে হোম করিয়া দেবগণকে সন্তুষ্ট করিবে। ৪২
তদনন্তর হোমান্তে ব্রাহ্মণগণকে ভোজন করাইবে। এই প্রকারে সপ্তরাত্রে প্রতিদিন পূজা করিবে। ৪৩
বেদবিদ্য-বিশারদ ব্রাহ্মণগণের সহিত সকল রাজা শক্র পূজা এবং যজ্ঞে যশোলাভ করেন। “ত্রাতারং” ইত্যাদি মন্ত্র বাসবের অতিশয় প্রিয়। ৪৪
এই রূপে প্রথমত দিবাভাগে শক্রোত্থাপন করিয়া রাজা স্বয়ং শ্রবণা নক্ষত্রযুক্ত দ্বাদশীতে ভরণীর অস্তভাগে রাত্রিযোগে বিসৰ্জন করিবে। ৪৫
রাজা যদ্যপি স্বপ্নে বিসর্জন দর্শন করেন, তাহা হইলে তাহাকে ছয়মাসে মৃত্যুমুখে নিপতিত হইতে হয়। ৪৬
হে নৃপশার্দূল! অতএব রাজা শত্রুর বিসর্জন দর্শন করিবেন না। “হে শতক্ৰতো! ধ্বজরূপিন পুরন্দর! এই উপহার গ্রহণ করিয়া স্বস্থানে গমন কর। পুরাবিং পশুতগণ বিসর্জনের এই মন্ত্র নির্ণয় করিয়াছেন। ৪৭-৪৯
জাতাশৌচ সমুৎপন্ন হইলে কিংবা মঙ্গল এবং শনিবারে অথবা ভূমিকম্পাদি উৎপাত উৎপন্ন হইলে ইন্দ্ৰধ্বজ বিসৰ্জন করিবে না। ৫০
উৎপাত উপস্থিত হইলে কিংবা উপদ্রব দৃষ্ট হইলে শনি মঙ্গল ভিন্ন বারে সপ্তাহের পর বিসর্জন করিবে। ৫১
সূতকাশৌচ উপস্থিত হইলে যেদিনে সূতকাশৌচ শেষ হয়, সেই সূতকান্ত দিনে বিসৰ্জন করিবে। ৫২
হে নৃপমণে! যেকাল পর্যন্ত বিসর্জন না হয়, সেকাল পর্যন্ত কেতুতে পক্ষি প্রভৃতি যাহাতে উপবেশন না করে, তাহা করিবে। ৫৩
যে প্রকারে অল্পে অল্পে উত্থাপন করা হয়, সেই প্রকারে অল্পে অল্পে নিপাতিত করিবে। অনবধানতায় উক্তকেতু ভগ্ন হইলে মরণ হয়। ৫৪-৫৫
রাজারা রাত্রিকালে শক্রকেতুকে অলঙ্কারাদির সহিত অগাধ জলে “হে বিঘ্নবিনাশিন মহাভাগকেতো! সৰ্ব্ব জগতের উৎপত্তির নিমিত্ত সংবৎসরকাল জলে অবস্থান কর” এই মন্ত্রে নিক্ষেপ করিবে। ৫৬
পুনৰ্বার সৰ্ব্বলোকের সম্মুখে তূৰ্য্যধ্বনিতে উত্থাপন করিবে, ইহাই এই পূজার বিশেষ। ৫৭
এই প্রকারে যে ব্যক্তি মহাত্মা ইন্দ্রের পূজা করে, সে চিরকাল পৃথিবীর আধিপত্য করিয়া অন্তে ইন্দ্রলোকে অবস্থান করে। ৫৮
তাহার রাজ্যে দুর্ভিক্ষ হয় না। শস্যবিঘ্নকর ছয়প্রকার ইতি থাকে না। প্রজাগণ অধার্মিক হয় না এবং অকালমৃত্যু তাঁহার রাজ্যে অবস্থান করে না, প্রজাগণও অকালে কালগ্রাসে পতিত হয় না। ৫১
হে রাজন! ইন্দ্রের তাহার ন্যায় প্রিয় অন্য কেহও হয় না, তাহার পূজা সকলের পৃজাস্বরূপ, অধিক কি বিষ্ণু প্রভৃতি দেবও তাহাতে অনুকূল হন। ৬০
সকল কলুষহর ব্যাধিহর দুর্ভিক্ষনাশক সকল সৌভাগ্য-বৰ্দ্ধক, অমরাবতী গামি-শক্রকেতুর অর্চন শ্রীবৃদ্ধির নিমিত্ত প্রতিবর্ষে নিয়মিত দিনে করিবে। ৬১
সপ্তাশীতিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৮৭