ষড়শীতিতমহ অধ্যায় – পুষ্যস্নানাদি
ঔৰ্ব বলিলেন,–রাজন! পুষ্যস্নানবিধির ক্রম বর্ণন করিতেছি, ইহার বিজ্ঞানমাত্র বিঘ্নসমূহ বিনষ্ট হয়। ১
পৌষমাসে চন্দ্র পুষ্যানক্ষত্রে অবস্থিত হইলে রাজা সৌভাগ্য এবং কল্যাণ কর, দুর্ভিক্ষ-মরকাদি-কেশনাশক পুষ্য-স্নান আচরণ করিবেন। ২
বিষ্ট্যাদি দুষ্টকরণ এবং ব্যতীপাত, বৈধৃতি, বজ্র, শূল, হর্ষণ প্রভৃতি যোগে যদি পুষ্যানক্ষত্ৰ তৃতীয়া তিথি এবং রবি, শনি অথবা মঙ্গলবার যুক্ত হয়, তাহা হইলে সেই দিনে পুষ্যস্নান সৰ্ব্ব দোষ নাশ করে। ৩-৪
যদ্যপি রাজ্যে গ্রহদোষবশত অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি ছয় প্রকার ঈতি জন্মে, তাহা হইলে রাজা পৌষমাস ভিন্ন-মাসেও পুষ্যানক্ষত্রমাত্রে উক্ত স্নান করিবে। ৫
জগৎপতি ব্রহ্মা, ইন্দ্র এবং দেবগণের শান্তির নিমিত্ত দেবগুরু বৃহস্পতিকে এই শান্তি উপদেশ করিয়াছেন। ৬
তুষ, কেশ, অস্থি, বল্মীক, কীট, শর্করা, কৃমি, ভস্ম, শিগ্রু, শ্লেষাতক প্রভৃতি অপবিত্র বস্তু, এবং কাক, পেচক, কুকুর, কঙ্ক, কাকোল, গৃধ্র, বক ও জলৌকা প্রভৃতি দুষ্ট জন্তু-শূন্য সুস্থানে অথবা হংস কারণ্ডব প্রভৃতি শান্ত জলচরযুক্ত শুদ্ধ সরোবতীরে পুষ্যস্নানের নিমিত্ত রাজা উত্তম স্থান সংস্কার করিবেন। ৭-১০
তদনন্তর রাজা পুরোহিতের সহিত নানাপ্রকার বাদ্যের রবে পূৰ্ব্বদিন: প্রাতঃকালে, সংস্কৃত উত্তম স্থানে গমন করিবে। ১১
সেই স্থানের উত্তর দিকে পুরোহিত অবস্থিত হইয়া সুগন্ধ চন্দন কর্পূরাদি সুবাসিত জল, গোয়োচনা সিদ্ধার্থক ফল দিয়া “গন্ধদ্বারা” প্রভৃতি মন্ত্রদ্বারা সেই; স্থানকে অধিবাসিত করিয়া দেবতা-সমূহের পূজা আরম্ভ করিবে। রাজা পুরোহিতের সহিত গণেশ, কেশব, ইন্দ্র, ব্রহ্মা, পার্বতীর সহিত পশুপতি এবং অন্যান্য গণদেবতা ও মাতৃকামণ্ডলের প্রত্যেকের পূজা করিবে। ১২-১৫
মঙ্গলাচরণ সকল করিয়া পায়স, সুস্বাদু ফল, মিষ্টান্ন এবং যাবকপ্রভৃতি নানাপ্রকার নৈবেদ্য দেবোদ্দেশে অর্পণ করিবে। ১৬
দূর্বা এবং সিদ্ধার্থ, অক্ষত প্রভৃতি দ্বারা সেই স্থানকে অধিবাসিত করত মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা ভূতগণকে তথা হইতে দূরীকৃত করিবে। ১৭
যাহারা পৃথিবী পালন করিতেছেন, সেই ভূতগণ দূরীভূত হউন, আমি তাহাদের অবিরোধে স্নানকৰ্ম্ম করিতেছি। ১৮
তদনন্তর রাজা বদ্ধাঞ্জলি হইয়া উক্ত মন্ত্রে দেবগণকে আবাহন করত পুষ্যস্নানপূৰ্ব্বক পূজা করিবেন। ১৯
যাহারা আমার পূজাগ্রহণে ইচ্ছুক, সেই দিকপাল ও দেবগণ আগমন করত নিজ নিজ ভাগ গ্রহণ করুন। ২০
তদনন্তর পুরোহিত, পুষ্পাঞ্জলি প্রদানান্তে “অদ্য দেবগণ মদীয় স্থানে অবস্থান করুন, আগামী দিনে নৃপতিকে বর প্রদান করিবেন” এই স্তব পাঠ করিয়া রাজাকে সেই স্থানে রক্ষা করিবে। ২১-২২
রাজা এবং পুরোহিত স্বপ্নদ্বারা শুভাশুভ বোধ করিবেন। রাজা এইরূপে দেবগণের অর্চনা করিয়া রাত্রিতে সেই স্থানে নিদ্রিত হইবেন। স্বপ্নানুসারে শুভাশুভ অনুমান করিবেন। ২৩-২৪
যদ্যপি দুঃস্বপ্ন দর্শন করেন, তাহা হইলে পুনর্বার পুণ্যস্নান করিয়া পূৰ্ব্বাপেক্ষা চতুর্গুণ হোম করিবেন এবং একশত গো দান করিবেন। ২৫
স্বপ্নে যদি গো, অশ্ব, হস্তী এবং প্রাসাদে আরোহণ করেন, তাহা হইলে রাজ্যসম্পদ বৃদ্ধি ও মঙ্গল লাভ হয়। ২৬
যদি দেব, সুবর্ণ-বর্ণ সর্প, বীণা, দূৰ্ব্বা, অক্ষত, ফল, পুষ্প, ছত্র, বিলেপন, চন্দ্রমণ্ডল, শঙ্খ, এবং মিত্রের দর্শন হয়, তাহা হইলে নিজের লাভ এবং শত্রুর ক্ষয় হয়। ২৭-২৮
হে নৃপ! গ্রহণ দর্শন, নিগড় দ্বারা পাদবন্ধন, মাংস ভোজন, পৰ্বতভ্রমণ, নাভিদেশে বৃক্ষোৎপত্তি, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে রোদন, আগম্যাগমন, কূপপঙ্কে অবতরণ, পৰ্বত-নদীর উত্তরণ, শত্ৰুচ্ছেদন, স্বপুত্র-মারণ, রুধির এবং মদ্যের পান, পায়স ভোজন, মনুষ্যারোহণ প্রভৃতি স্বপ্ন দর্শন রাজার কল্যাণ, সুখ এবং বিপক্ষ ক্ষয়কর হয়। ২৯-৩২
গর্দভ, উষ্ট্র, মহিষ প্রভৃতিতে আরোহণ যদি দর্শন করে, তাহা হইলে রাজ্য নাশ হয়। ৩৩
নৃত্যগীত, হাস্য অশুভ বিষয়ের পাঠ, রক্তবস্ত্র পরিধান, রক্তমাল্য বিভূষণ, রক্ত এবং কৃষ্ণবর্ণা স্ত্রীতে কামনা এই সকল স্বপ্ন দর্শন মৃত্যুকর হয় এবং কূপমধ্যে প্রবেশ, দক্ষিণদিকে গমন, পঙ্কে নিমজ্জিত এবং স্নান, ভাৰ্য্যা পুত্র উভয়ের বিনাশকর হয়। ৩৪-৩৫
রাজা যদি স্বপ্নে নাভিদেশে মৃতব্যক্তির ঊরুর উৎপত্তি দর্শন করে এবং পক্ষীতে গর্ভনাড়ী গ্রহণ করত আকাশপথে পক্ষী উড্ডীয়মান হইয়া অন্য রাজার নিকট উপনীত হয়,–এরূপ প্রদর্শন করিলেও মহা কল্যাণ লাভ করে। ৩৬-৩৭
বিংশতি হস্ত দীর্ঘ, ষোড়শ হস্ত বিস্তৃত, উত্তম লক্ষণান্বিত, উত্তম এক যজ্ঞ মণ্ডপ নিৰ্মাণ করিবে। ৩৮
তদনন্তর পূর্ব এবং পরাহে মাতৃকা মণ্ডলের পূজা করিবে এবং ভিত্তিতে বসুধারা, নান্দীমুখাদি আভ্যুদায়িক শ্রাদ্ধও করিবে। ৩৯
চন্দন, অগুরু, কস্তূরী, ধূপ ও কর্পূর প্রভৃতি দ্বারা সম্মার্জিত মণ্ডল স্থানে ‘হ্রৌং শম্ভবে নমঃ’ এবং ‘অস্ত্রায় হুঁ ফট’ এই মন্ত্রদ্বয় লিখন করিবে। ৪০
মন্ত্রবিৎ এবং মণ্ডলজ্ঞ পণ্ডিত, কম্বলসূত্র অথবা কৌষেয়সূত্রে চারিহস্ত পরিমাণে প্রথমে স্বস্তিকাখ্য মণ্ডল লিখন করিবে। মণ্ডলের মধ্যে এক হস্ত পরিমাণে পদ্ম নিৰ্মাণ করিবে। ৪১-৪২
রাজা মণ্ডলবৃদ্ধির জন্য কর্ণিকা-কেশরে উজ্জ্বল, শুভ্র, রক্ত, পীত, কৃষ্ণ, হরিতবর্ণ চূর্ণ, তণ্ডুল চূর্ণ, কৌসুম্ভ-মণ্ডল এবং হরিতবর্ণ চূর্ণ দ্বারা অৰ্দ্ধ হস্ত পরিমাণ দ্বারা নির্মাণ করিবে। ৪৩-৪৪
সেই পদ্ম হইতে পশ্চিম দ্বারে পশ্চিমগামিনী নামে শতহস্ত বিশিষ্ট এক জনকে নির্দিষ্ট করিবে। ৪৫
মণ্ডল-ভাগ-বিজ্ঞ প্রত্যেক দ্বারের মধ্যে চূর্ণ দ্বারা পৃথক পৃথকৃরূপে অষ্টদল পদ্ম নির্মাণ করিবে। ৪৬
চূর্ণদ্বারা সেই মণ্ডল নির্মিত হইলে সূত্র সকলকে উৎসারিত করিয়া প্রথমে মণ্ডলের পূজা আরম্ভ করিবে। ৪৭
তদনন্তর “ভবনায় নমঃ” এই মন্ত্র উচ্চারণানন্তর হস্ত বিষোজিত করিবে। ৪৮
বাম হস্তের মধ্যমা এবং অনামিকা অঙ্গুলি অবলম্বনপূর্বক যথেচ্ছাক্রমে উপবেশন করত চূর্ণপাতন করিবে। সাবধান হইয়া অঙ্গুলিকে নম্রীভূত করত চুর্ণনিঃক্ষেপ আচরণ করিবে। ৪৯
অঙ্গুলি সকল সমানভাবে পরস্পর অসংলগ্নরূপে বিচ্ছিন্ন রাখিবে এবং বিজ্ঞ ব্যক্তি কৌশলে অঙ্গুলিপর্বকে উন্নতি-অনতি-রহিত এবং সমান করিবে। ৫০
নিপুণ ব্যক্তি, নিজ নৈপুণ্যে অসংলগ্ন, সমান, সূক্ষ্ম, অবিচ্ছিন্ন ও অকৃশ সীমা হইতে অবহির্ভূত অনাবৃত এবং অহ্রস্বরূপে লিখন করিবে। ৫১
মণ্ডল সংলগ্ন রূপে লিখিত হইলে কলহ, উৰ্দ্ধরেখ হইলে বিরোধ, অতিস্থূলে ব্যাধি, মিশ্রিত হইলে প্রত্যহ পীড়া, বিন্দু বিন্দু হইলে বিপক্ষপক্ষ হইতে ভয় হয়। ৫২
কৃশ হইলে অর্থহানি, ছিন্ন হইলে মরণ অথবা ইষ্ট দ্রব্য এবং পুত্র বিয়োগ হয়। ৫৩
যে ব্যক্তি অজ্ঞাতানুসারে যথেচ্ছক্ৰমে মণ্ডললিখনে প্রবৃত্ত হয়, পূর্বে যে যে দোষ বর্ণন করিয়াছি, সেই ব্যক্তি সেই সকল দোষের ভাজন হয়। ৫৪
শ্বেতসর্ষপ ও দূৰ্বাদি দ্বারা প্রমাণানুসারে রেখা অঙ্কিত করিবে। ৫৫
বিমল, বিজয়, ভদ্র, বিমান, শুভদ, শিব, বর্ধমান, দেব, তার্ক্ষ্য, কামদায়ক, রুচক ও মুষ্টিকাখ্য, এই দ্বাদশ প্রকার প্রসিদ্ধ মণ্ডলকে পণ্ডিতগণ স্থানভেদে যজ্ঞভেদে ব্যবহার করিবেন। ৫৬-৫৭
দেবগণ যেকালে সুধার নিমিত্ত সমুদ্র মন্থন করেন, বিশ্বকৰ্ম্মা দেবগণ কর্তৃক মথ্যমান সমুদ্র হইতে উৎপন্ন সুধার সংস্থাপনার্থ যাহাদিগকে নিৰ্মাণ করিয়া ছিলেন, তাহারা দেবগণের কলার কলা অংশ করিয়া নির্মিত হইয়াছিল বলিয়া কলস নামে বিখ্যাত হয়। ৫৮-৫৯
সেই কলস নয়টি লিখিত হইয়া যে যে নামে প্রসিদ্ধ হয়, নামানুসারে তাহাদিগকে শ্রবণ কর। গোহ্য, উপগোহ্য, মরুৎ, ময়ূখ, মনোহা, ঋষিভদ্র, তনুদূষক, ইন্দ্রিয়ঘ্ন, বিজয়-এই নয় কলস, নয়টি নামে খ্যাত হইল। ৬০-৬১
হে ভূপতে! উক্ত কলস নয়টির সকল কালে শান্তিপ্রদ অন্য নয়টি নাম আছে, উক্ত নাম ক্ৰমে শ্রবণ কর। ৬২
প্রথম কলসের নাম ক্ষিতীন্দ্র, দ্বিতীয় জলসম্ভব, তৃতীয় পবন, চতুর্থ অগ্নি, পঞ্চম যজমান, ষষ্ঠ কোষসম্ভব, সপ্তম সোম, অষ্টম আদিত্য এবং নবম কলসের নামান্তর বিজয়। ৬৩-৬৪
পঞ্চমুখবিশিষ্ট উক্ত ঘট পঞ্চবক্ত্র, মহাদেবস্বরূপ; যে প্রকার মহাদেব বামদেবাদি নামে সম্যকরূপে দ্বিত্মণ্ডলে বিরাজমান হন। ৬৫
সেইরূপ পঞ্চবক্ত্র ঘটে পঞ্চমুখ পঞ্চানন স্বয়ং অচঞ্চলরূপে অবস্থান করেন। ৬৬
মণ্ডল-মধ্যস্থিত পদ্মের উপরি পঞ্চবক্ত্র ঘট সংস্থাপিত করিবে। ৬৭
ঐ ঘটের পূর্বভাগে ক্ষিতীন্দ্র, ঘটের পশ্চিমে জলসম্ভব, অগ্নিকোণে অগ্নি সম্ভব, বায়ুকোণে বায়ব্য, নৈর্ঋতকোণে যজমান, ঈশানকোণে কোষসম্ভব, উত্তরদিকে সোম এবং দক্ষিণে আদিত্য ঘটকে সংস্থাপিত করিয়া ঐ ঘটসমুহকে ক্ষিতীন্দ্রাদি ঘটরূপে চিন্তা করিবে। ৬৮-৬৯
কলসসমূহের মুখে ব্রহ্মা অবস্থিত, গ্রীবাদেশে মহাদেব বিরাজমান, মূলে বিষ্ণু অবস্থান করিতেছেন। মধ্যে মাতৃগণ সংস্থিত আছেন। দিকপাল দেবগণও কলসসমূহের দশদিকে অবস্থান করিতেছেন। ৭০-৭১
কুক্ষিদেশে সপ্ত সাগর, সপ্তদ্বীপ অবস্থিত হইয়াছে এবং নক্ষত্র, গ্রহসমূহ, কুলপর্বত, গঙ্গাদি নদী সকল, বেদ-চতুষ্টয় কলসে অবস্থান করিতেছেন। এইরূপে তাহাদের উক্ত উক্ত স্থানে অবস্থান চিন্তা করিবে। ৭২-৭৩
রত্ন, সৰ্ববীজ ফল, পুষ্প, হীরক, মৌক্তিক, বৈদূৰ্য্য, মহাপদ্ম, শ্রেষ্ঠ স্ফটিক প্রভৃতি ধাতু নির্মিত বস্তু কলসে স্থাপন করিবে। ৭৪
বিল্ব, নাগকেশর, উড়ুম্বর, বীজপূরক, আম্রাতক, জম্বীর, আম্র, দাড়িম, যব, শালি, নীবার, গোধুম, শ্বেত-সর্ষপ, কুঙ্কুম, অগুরু, কর্পূর, মদলোচন, চন্দন, মদন, লোচন, মাংসী, এলাইচ, কুষ্ঠ, পত্রচূর্ণ, নিৰ্যাসযুক্ত জল, শৈলেয়, বদর, জাতি, পত্ৰপুষ্প, পর্ণ, বচা, আমলকী, মঞ্জিষ্ঠা, তুরষ্ক অষ্টপ্রকার মঙ্গলদ্রব্য, দূর্বা, মোহনিকা, ভদ্রা, শতমূলী, পূর্ণকোষা, সিতপীতগুঞ্জা শিরীষকানন, ব্যামিক, গজদম্ভ, শতপুষ্প পুনর্নবা, ব্রাহ্মী, ত্রিসন্ধ্যা এই সকল উত্তম দ্রব্য, সমা- হরণকরত কলসে নিহিত করিবে। ৭৫-৮১
কলসের যথাস্থানে ব্রহ্মা বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের সামান্যত যথাক্রমে পূজা করিয়া বিশেষরূপে মহাদেবের পূজা করিবে। ৮২
শম্ভুতন্ত্র-নির্দিষ্ট প্রসন্নমন্ত্রে প্রথমে নানানৈবেদ্য বন্ধন দ্বারা শম্ভুর আরাধনা করিবে। ৮৩
দশদিকপালকে ঘটে যোজিত করত তাহাদের পূজা করিবে। ৮৪
পূৰ্বে বহিঃপ্রদেশে স্থাপিত এবং কলসের মধ্যেও সংস্থাপিত দেবগণকে আরাধনা করিবে। মাতৃগণকে মাতৃঘটে আরাধনা করিবে। ৮৫
সৰ্ব্বদেবগণকে পৃথক পৃথক্ নিজ নিজ ঘটে পূজা করিবে। হে নৃপ! পূর্বোক্ত নয়টি ঘট মুখ্যতম। ৮৬
ঐ ঘটে ভক্ষ্য, ভোজ্য, পেয় নানাপ্রকার পুষ্প, ফল, যাবক, পায়স এবং যথাসম্ভব নিয়োজিত অন্যান্য দ্রব্য দ্বারা পুষ্যস্নানের নিমিত্ত সকল দেবগণের পূজা করিবে। ৮৭-৮৮
বেদবিৎ রাজপুরোহিত মণ্ডলের দক্ষিণদিকে পায়সপূর্ণ কুণ্ড নির্মাণ করত কাষ্ঠ দ্বারা সিদ্ধ শালি-অন্ন, ঘৃত, দূৰ্ব্বা, অক্ষত এবং কেবল আজ্যদ্বারা পূজিত দেবগণকে বৃদ্ধির নিমিত্ত হোমে সকল দেবগণকে সন্তুষ্ট করিবেন। হোমান্তে মণ্ডলের উত্তরভাগে রোচনা রক্ত-পট্ট এবং সর্বপ্রকার অলঙ্কার বেদিকায় সংস্থাপিত করিবে। ৮৯-৯০
বৃদ্ধ অঙ্গুলি আরম্ভ করিয়া ষড়বিংশ অঙ্গুলি পরিমাণে গোলাকার চতুষ্কোণ কিংবা ত্রিকোণ পদ্মের মধ্যে গো, স্বস্তি, বিনায়ক, শ্রী, শ্রীবৃক্ষ, বরারোহা শুভান্বিতা দেবীগণের সকল অলঙ্কার দ্বারা হস্তদ্বয় পরিমাণে পট করিতে হইবে। এক হস্ত পরিমাণে উন্নত সার্ধ নয়হস্ত দশ অল আসনান্বিত বর্তুলস্নানপট্ট করিবে। ৯১-৯৩
স্নানপট্ট হইতে চতুগুণ দীর্ঘ, এক-ধনু পরিমাণে গজ এবং সিংহ পরস্পরের আস্ফালনযুক্ত হেমরত্নবিভূষিত পীঠকযুক্ত শষ্যাপট্ট করিবে। চিত্রিত ব্যাঘ্রমুক্ত অর্ধহস্ত পরিমাণে সিংহাখ্যকুণ্ডলাসনসমন্বিত উপধান করাইবে। ৯৪-৯৫
অথবা কার্পাসপূর্ণ চৰ্মাধারে উপধান করিবে। শয্যার দৈর্ঘ্য আটহাত এবং বিস্তার তাহার অর্ধেক হওয়া চাই এবং উহা মনোহর হইবে। ৯৬
বিদ্যাবান রাজা শয্যা হইতে এক বিতস্তি অপেক্ষা অধিক উন্নত অর্ধচন্দ্রের সদৃশ উপধান করাইবেন। ৯৭
নানাপ্রকার বর্ণ এবং অনেক প্রকার চিত্রবিশিষ্ট কর্ণমূলাদি ভেদে ষোড়শ প্রকার উপধান করাইবেন। ৯৮
বেদির উত্তর ভাগে যান, সিংহাসন, পট্টশয্যা এবং তদুপকরণ প্রভৃতি রাজার যোগ্য নূতন দ্রব্য সকল সংস্থাপন করিবে। ৯৯
এই সকল বস্তুর পশ্চিম দিকে স্বর্ণ এবং রত্নরাশি নির্মিত উত্তম রত্নখচিত কাষ্ঠসমূহ রচিত বৃহৎ চন্দ্রাতপযুক্ত পর্যঙ্ক বৃষভ, ঊর্ণা, সিংহ, শার্দূল–এই চারি জন্তুর চর্মে আবৃত করিবে। ১০০-১০১
পৃধিবীপতি, সেই পৰ্যঙ্কের পৃষ্ঠদেশস্থিত রত্নশোভিত এবং উক্ত চর্ম ও খড়্গযুক্ত পাদপীঠে পাদস্থাপনপূর্ব্বক অবস্থান করিবেন। ১০২
কম্বলাচ্ছাদিত বহুবর্ণবস্ত্র অলঙ্কারশোভিত সুখপরায়ণ রাজাকে ব্রাহ্মণগণের সহিত কলসস্থিত জল, বলি, পুষ্প এবং শালিচূর্ণ দ্বারা স্নান করাইবে। ১০৩-১০৪
অন্যূন অষ্টগুণিত ষোড়শ, বিংশতি অথবা একশত আট ঘট জলে স্নান প্রসিদ্ধ। যত অধিক হইবে, তদনুসারে ফল হয়। ১০৫
জয়-কল্যাণকর, মঙ্গলকর, শিবমন্ত্র অথবা বিষ্ণুমন্ত্র এবং দিকপাল গ্রহ মাতৃকাদি মন্ত্রে স্নান করাইবে। ১০৬
উক্ত দেবগণ হইতে আজ্য উৎপন্ন হইয়াছে, আজ্যই কেবল পাপনাশক, আজ্যই দেবগণের আহার, আজ্যদ্বারা লোক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ১০৭
পৃথিবী, আকাশ, স্বর্গাদি যে কোন স্থানের পাপ তোমার আশ্রিত হইয়াছে, সেই সকল পাপই আজ্যস্পর্শে প্রনষ্ট হউক। ১০৮
তদনন্তর গাত্র হইতে আবৃত কম্বল বস্ত্র প্রভৃতি অপনীত করিয়া, পুষ্যস্নান জলপূর্ণ কলসের জলে রাজাকে স্নান করাইবে। ১০৯
হে নরবর! এই সৰ্ব্বসিদ্ধি-সাধক সকল মন্ত্রে দেবগণ, কপিলাদি পুরাতন সিদ্ধসমূহ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, সাধ্য, মরুদগণ, অদিতিপুত্রগণ, অষ্টবসু, একাদশ রুদ্র, বৈদ্যবর অশ্বিনীকুমারদ্বয়, দেবমাতা অদিতি, মহালক্ষ্মী, সরস্বতী, কীর্তি, লক্ষ্মী, ধৃতি, সিনীবালী, কুহূ, দিতি, সুরসা, বিনতা, কদ্রু,–যে সকল দেবপত্নী গণের নাম কীৰ্ত্তন করিয়াছি; সেই দেবমাতৃগণ তোমাকে সেচন করুন। ১১০-১৪
কল্যাণকর অপ্সরোগণ, নক্ষত্র, মুহূৰ্ত্ত, পক্ষ, অহোরাত্র, উভয়ের সন্ধি, সংবৎসর, নিমেষ, কলা, কাষ্ঠা, ক্ষণ, বৈতনিক দেবগণ, মনুগণ, সাগর, সরিৎ, সর্প, কিন্নর, বৈখানস, মহাত্মা ব্রাহ্মণগণ, সদাচার সপ্তর্ষিমণ্ডল, নিত্যস্থানসমূহ, মরীচি, অত্রি, পুলহ, পুলস্ত্য, ক্রতু, অঙ্গিরা, ভৃগু, সনৎকুমার, সনক, সনন্দন, সনাতন, দক্ষ, জৈগীষব্য-নন্দন, ভৃগু, জাবালি, কশ্যপ, দুৰ্ব্বাসা, দুর্বিনীত, কণ্ব, কাত্যায়ন, মার্কণ্ডেয়, দীর্ঘতমা, শুনঃশেফ, বিদূরথ, ঔৰ্ব, সম্বৰ্ত্তক, চ্যবন পরাশর, দ্বৈপায়ন, যবক্রীত, দেবরাত, তদভ্রাতা–ইহারা এবং অন্য বেদরতবিজ্ঞ সদাচার শিষ্যের সহিত তপোধনগণ তোমাকে সেচন করুন। ১১৫-১২২
পৰ্বত, তরু, নদী, পুণ্যায়তন, প্রজাপতি, ক্ষিতি, জগজ্জননী, গো, দেবগণের বাহনসমূহ, স্থাবর জঙমাত্মকত্রিজগৎ, অগ্নি পিতৃগণ, তারা, মেঘ, আকাশ দশদিক্ ইহারা এবং পুণ্যশ্লোক অন্যান্য সকলে সর্ববিঘ্নবিনাশন এই বারিতে তোমাকে সেচন করুন। ১২৩-১২৫
এই প্রকার মঙ্গলকর দিব্য, সৌর, নারায়ণ, রৌদ্র, ব্রাহ্ম, ইন্দ্রসম্ভবমন্ত্রে এবং “আপো হিষ্ঠা” ইত্যাদি বৈদিকমন্ত্রে স্নাত হইয়া কম্বলদ্বারা গাত্ৰ আবৃত করত কার্পাসবস্ত্র পরিধান করিবে। ১২৬-১২৭।
তদনন্তর রাজা আচমন করত দেবগুরু বিপ্রগুরুগণের পূজা করিবেন এবং মন্ত্র জপপূৰ্ব্বক ধ্বজ, ছত্র, চামর, ঘণ্টা, অশ্ব এবং গজ প্রভৃতি প্রদান করিবেন। পৃথিবীপতি, হুতাশনের সমীপে গমন করত বহ্নিশোভা দর্শন করিবে। বিন্দুদর্শনে সুনিমিত্ত এবং কুনিমিত্ত নিশ্চয় করিবে। ১২৮
দৈবজ্ঞ, কঞ্চুকি, অমাত্য, বন্দী এবং পৌরজনে পরিবৃত হইয়া বাদ্যশব্দে শুভকর তুমুল তৌৰ্যত্রিক শব্দে দিত্মণ্ডল আবৃত করিয়া পুনৰ্বার শান্তি করিবেন এবং ব্রাহ্মণগণের আশীৰ্বাদ গ্রহণ করিবেন। যথাবিধি কর্ম শেষ করিয়া সুবর্ণ দক্ষিণা দান করিবেন এবং ধান্য বস্তু দান করিয়া বিসর্জন দিবেন। ১২৯-১৩০
তদনন্তর পুরোহিত, অবশিষ্ট জলে সকল অমাত্য চতুরঙ্গ, রাজ্যাঙ্গ প্রভৃতি চেন করিবেন। ১৩১
এই প্রকারে মহীপতি সংযম অবলম্বনপূর্বক তিনবার স্নান করিবে এবং মাংস, মৈথুন প্রভৃতি ত্যাগ করিবেন। ১৩২
পষ্যাযুক্ত তৃতীয়া যদি উপস্থিত হয়, তাহা হইলে সেই দিনে মহাদেব ও চণ্ডীর আরাধনা করিবেন। ১৩৩
বালকগণের কৌতুক, পুত্তলিকা-বিবাহ এবং বিবাহবিধি দ্বারা চতুষ্পথসমূহে দেবদেবীগণের গৃহে চণ্ডিকা দেবীর আরাধনা করিবেন এবং দেবদেবীগণের গৃহ পতাকা-পঙক্তিতে পরিশোভিত করিবেন। ১৩৪-১৩৫
রাজা এইরূপে মহাশান্তিক পুষ্যা-স্নান-যজ্ঞ করিয়া চতুৰ্বর্গ ভাৰ্যা পুত্র এবং রাজ্যমণ্ডলের সহিত ইহলোক পরলোক উভয় লোকেই কষ্ট পান না। ১৩৬
ইহা হইতে পুণ্যকর অন্য যজ্ঞ নাই। ইহা অপেক্ষা অন্য মহোৎসব নাই। এতদ্ভিন্ন শান্তি নাই, এতদ্ভিন্ন অন্য মঙ্গল নাই। ১৩৭
রাজপুরোহিত এই বিধান দ্বারা রাজ্যাভিষেক এবং যৌবরাজ্যাভিষেক করাইবে। এই বিধিতে যদি নূতন রাজ্যাভিষেক করান, তবে সেই রাজা চিরকাল নিষ্কণ্টকে রাজ্যসুখ ভোগ করেন। ১৩৮-১৩৯
স্বয়ং ব্রহ্মা এই যজ্ঞ ইন্দ্রের নিমিত্ত আদেশ করিয়াছেন। এই যজ্ঞ করিয়া রাজা উভয়লোকে সুখী হন। ১৪০
ষড়শীতিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৮৬