৮. হাদিস
কোরান একমাত্র মুসলিম আইনের উৎস- এই সাধারণ ধারণাটা ভ্রান্তিমূলক। কোরান সর্বব্যাপী আইনি কোড নয় এবং সব কিছুকে উদ্দেশ্যপূর্ণ করে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়। এর থেকে সাধারণ নীতি পাওয়া, কখনো কখনো একটা নির্দিষ্ট পথনির্দেশ করতে পারে, এমনকি ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে, নামাজ ও হজের ব্যাপারে সব সময় পরিষ্কার নির্দেশ দেয়, দেয় দ্ব্যর্থবোধক ও পরস্পরবিরোধী I
প্রাচীন ধর্মতত্ত্ববিদরা তাই মনে করেন যে মুসলিমদের সর্ববিষয়ে গাইড করার জন্য কোরান যথেষ্ট নয়। কমিউনিটির প্রাথমিক প্রয়োজনে এই গ্রন্থ উদ্দেশ্য পালনে অপারগ এবং সর্ববিষয়ে সম্পূর্ণ একটি আইনি কোড তৈরি করা এ থেকে সম্ভব নয়। তাই একটি নতুন উৎস খাড়া করার জন্য তত্ত্ব ও নিয়মাবলির একটা পদ্ধতিকে বেছে নিতে হলো।
এই পদ্ধতিই হলো হাদিস। হাদিস শব্দ প্রাক-ইসলামী, ইসলামের আগেও আরবে প্রচলিত ছিল। সাধারণভাবে বলা হয় ট্র্যাডিশন- মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনকে পরিচালিত করার জন্য নিয়ম লিপিবদ্ধ করা হতে লাগল। একে ‘সুন্নাহ’ও বলা হয়। সাধারণভাবে হাদিস কোরানের সম্পূরক গ্রন্থরূপে গড়ে উঠলে যেখানে কোরানের টেক্সটসকে সরলভাবে বোঝানোর জন্য ফুটনোট, ব্যাখ্যা ইত্যাদি সংযোজিত হলো; তারপর একে কোরানের পরেই দ্বিতীয় ধর্মগ্রন্থ রূপে গুরুত্ব দেয়া হলো।
৮.১ হাদিসের গোঁড়ার কথা
কোরানকে যেমন আবৃত্ত ওহি বলে ধরা হয়, জিব্রাইল থেকে মোহাম্মদের কাছে তেমনি হাদিসকে অ-আবৃত্ত ‘ওহি’-রিভিলেশন বলা হয় প্রফেটের কথা ও কাজের ওপর ভিত্তি করে। হাদিসের কিছু অংশেকে ধরা হয় ‘কুদসি’- পবিত্র হাদিস বলে, যেগুলো প্রফেটের কাছে আল্লাহ ডিকটেট করেছেন, যদিও হাদিসে কোন অংশটা ‘কুদসি’ তার কোনো সঠিক দিশা পাওয়া যায়নি। বলতে গেলে, হাদিসে প্রাক-ইসমালী যুগ থেকেই মেটিরিয়েল রয়েছে, আর অনেক যোগ হয়েছে প্রফেটের মৃত্যুর পর এবং ইসলামী রাজ্যের প্রসারের সাথে এর বিষয়বস্তু বাড়তে শুরু করেছে। এর সমস্ত বক্তব্যই প্রফেট মোহাম্মদের এবং বিশ্বাস করা হয় তার ছেড়ে যাওয়া বাণী ও দৃষ্টান্ত এই গ্রন্থে ধারণ করা হয়েছে, বিশ্বাসীদের অনুসরণ করার জন্য। কোরান বলে, খোদার রসূলের কাছে তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত রয়েছে। (আসওয়াতন হাসনা) ৩৩ : ২১। সুতরাং প্রফেটকে অনুকরণ করা চরম আদর্শ।
হাদিসে বর্ণনা রয়েছে, প্রফেটের পোশাক-আশাকের ধরন-ধারণ; তাঁর ইঙ্গিত, তিনি কিভাবে দাঁড়াতেন, বসতেন, হাঁটতেন ও কথা বলতেন সবই বলা হয়েছে এবং কিভাবে তিনি হাত-মুখ ধুতেন, খাবার খেতেন, খিলাল ব্যবহার করতেন, পাগড়ি বাঁধতেন ইত্যাদি যেখানে সম্ভব এই সব ব্যাপারে তার দৃষ্টান্ত প্যাটার্নরূপে গ্রহণ করা উচিত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা তা নকল করে চলে।
প্রফেট মোহাম্মদের যে কোনো বিষয়ে মতামত টুকে রাখা হতো; গোত্রীয় সম্পর্ক, মেয়ে মানুষ, পরিবার, সমাজ ও কল্যাণ এবং যুদ্ধবিগ্রহ এমনকি কবিতা ও সঙ্গীতের ওপর তাঁর পছন্দ ও অপছন্দ সম্বন্ধে ক্যাজুয়েল মন্তব্য সব কিছুর বিধান বলে মেনে নিয়ে আইনি নির্দেশ মতে পালন করা উচিত বলে মনে করা হয়।
শুধু যা প্রফেট বলেছেন তা নয় তাঁর সামনে যা করা হয়েছে এবং যাতে তিনি কোনো আপত্তি করেননি, সেগুলোও পালনীয় হাদিস বলে ধরা হয়। বিখ্যাত মুসলিম জুরিস্ট ইমাম হানবল (মৃ. ৮৫৫) তরমুজ খেতেন না এই ভয়ে যে, প্রফেট কেমন করে খেয়েছেন, ভেঙে খেয়েছেন, না কেটে, না দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে হাদিসে এটা উল্লেখ ছিল না বলে। প্রফেট মোহাম্মদ জানতেন যে লোকেরা তাঁর ক্যাজুয়েল মন্তব্য লিখে রাখে এবং এসব গল্প চতুর্দিকে এক কান থেকে অন্য কানে পৌঁছায়। এই বিপদ সম্বন্ধে তিনি সচেতন ছিলেন; তাই এই সব লিখে রাখতে নিষেধ করেন, সাবধান করেন; কিন্তু যে প্রথা একবার চালু হয়েছে, তাকে আটকানো যায়নি, তাঁর মৃত্যুর পর এই সব ক্যাজুয়েল কথাবার্তা লোকমুখে ছড়িয়ে গেছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শুরুতে, এই সব ট্র্যাডিশন মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল কিন্তু পরে লোকেরা লিখে রাখতে আরম্ভ করে।
প্রফেটের কথা ও কাজ সম্বন্ধে যেসব হাদিস রেকর্ড করা হয় তার সত্যতা নির্ধারণ করা বেশ কষ্টকর। হাদিস ও ইসনাদ অথেনটিক কিনা একে প্রতিষ্ঠা করতে ‘মতন’ (text)-এর খোঁজ করা জরুরি হলো, এর উৎসসহ। যেহেতু প্রফেট জীবিত নেই সাহাবা ও সহযোগীদের সূত্র খোঁজার দরকার পড়ল, যারা ট্র্যাডিশনের সত্যায়িত করতে পারেন। প্রফেটের বিধবা পত্নী আয়েশাও অনেক হাদিসের উৎস ছিলেন।
যেহেতু প্রফেটের সাহাবীদের প্রথম জেনারেশনও গত হয়েছেন, হাদিস সংকলকগণ তখন অন্য লোকদের ওপর নির্ভর করলেন, যারা সাহাবীদের দেখেছেন এবং তাদের সাথে কথা বলেছেন, এদের বলা হয় তায়েবী’। এইভাবে ‘ইসনাদ’ অর্থাৎ চেইন (Chain)-এর পরিধি বেড়ে প্রায় ডজনে গিয়ে দাঁড়ায়, অনেক জেনারেশন ধরে। যেমন, বলা হয় মুয়াদ ইবন হাসান আল মামুদ থেকে, মাসুদ শুনেছেন আবদুল্লাহ ইবন আলী থেকে, ইবনে আলী শুনেছেন আবদুর রহমান থেকে, যার কাছে আবু হোবায়রা (সাহাবী) বর্ণনা করেছেন যে প্রফেট মোহাম্মদ বলেছেন : আল্লাহকে যারা ভয় করে তাদের জন্য সিল্কের কাপড় পরিধান করা অনুচিত।
যেহেতু এই ইসনাদে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ লোক হতে হবে এবং যেহেতু তাদের ওপর নির্ভরতা, প্রামাণ্যতা প্রত্যয়ন করা অসম্ভব, তাই ইসনাদের যোগ্যসূত্রগুলো অনেক ধর্মতত্ত্ববিদ বা গোষ্ঠী বিশ্বাসযোগ্য বলে গ্রহণ করেন না। তাই ট্র্যাডিশনের গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে অনেকের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। তবে হাদিস সাহিত্যগুলো এবং এর গ্রন্থকারগণ জীবনচরিত্র ও ইতিহাসে অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন।
প্রথম সংকলনের সময় থেকে মুসলিম স্কলারগণ যথেচ্ছভাবে দুর্বল হাদিস সংগ্রহের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করেছেন যার মধ্যে বেশির ভাগ মিথ্যা। প্রখ্যাত মুসলিম জুরিস্ট কনসাল্ট আবু সালামা (মৃ. ৭১০) আপত্তিকারদের মধ্যে প্রথম, যিনি প্রত্যয়ন ছাড়া হাদিস সংগ্রহের কুফল সম্বন্ধে সাবধান করেছেন। অচিরেই প্রমাণিত হয়েছে হাদিসগুলো শুধু পুনর্লিখিত নয়, আবিষ্কৃত— কারণ প্রফেটের কথা ও কাজের মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা ঐ সব হাদিসে দেখা গিয়েছে। এমন যেগুলোকে সঠিক হাদিস বলে মনে হতো, সেগুলোও পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়েছে।
বহু বছর ধরে হাদিস তৈরি করা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্ম বলে স্বীকৃত হলো এবং সেগুলোকে প্রত্যেকে মেনেও নিল প্রধানত রাজনৈতিক চাপে। এমনকি, সচ্চরিত্র লোকেরা ও ধর্মীয় নেতারা এই ধরনের ফ্রড (fraud) আরম্ভ করেন যাকে ‘তদলিস’ বলা হয়। উমাইয়া ও আব্বাসী খলিফাদের উদ্দেশ্য পালনের জন্য হাদিস আবিষ্কৃত হলো এবং পরবর্তী গোষ্ঠীগত রাজা-বাদশাদের কাছে নেমে এসে বাণিজ্যিক কারবারে পরিণত হলো (Gold zi her 1971, P. 169)। আবার অনেকে এ নিয়ে ব্যবসা শুরু করল। ফলে বেশির ভাগ হাদিসের বিশ্বাসযোগ্যতা রইল না।
তাছাড়া বিদেশী উৎস থেকে বহু জিনিস আমদানি করে সুবিধামতো ইসলামের নামে হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এইরূপে, হাদিস সংগ্রাহকগণ ঐ সব নন ইসলামিক মেটিরিয়াল প্রফেটের বাণী বলে হাদিসে চালিয়ে দিল। এইসব মেটিরিয়েলের মধ্যে গ্রিক প্রবাদ ও দর্শন, রোমান স্টোইক নামক দার্শনিকের মতবাদ, প্রাচীন জনশ্রুতি (Proverb), বুড্ডিস্ট জ্ঞানী ব্যক্তিদের সূত্র (maxim), জোরাস্ত্রার ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মপুস্তক থেকে নীতিবাক্য- মুসার দশাদেশ এবং প্রভুর প্রার্থনা বাণীসহ রাব্বীদের বাণী, অপ্রচলিত সুসমাচার (gospel) থেকে ম্যাসেজ এবং রোমান ও বাইজানটাহন আইন পুস্তকের আদেশ (precepts) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইসলামের রাজ্যসীমা যতই বাড়তে লাগল বিজিত রাজ্যের সামাজিক প্রথাগত ট্র্যাডিশনগুলোও হাদিসের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াল। বিজিত রাজ্যের মধ্যে সেন্ট্রাল এশিয়া আফ্রিকা, ইন্ডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া অন্যতম। এই সব দেশের সামাজিক ও কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের নিয়মকানুন ইসলামী হয়ে গেল।
এইভাবে হাদিসের সংখ্যা এমনভাবে জনসমাজে ছড়িয়ে গেল যে শেষে একে ম্যানেজ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এই অচল অবস্থাকে সচল করার জন্য এটা স্পষ্ট হলো যে এ পর্যন্ত যত মেটিরিয়েল সংগ্রহ করা হয়েছে তাকে ছাঁটাই-বাছাই-এর প্রয়োজন। সবচেয়ে প্রথম সংগ্রহ শুরু হয় প্রফেট মোহাম্মদের মৃত্যুর দেড়শো বছর ও তারও অধিক পরে। একজন সংগ্রাহক ইয়াহিয়া ইবন মাইন (মৃ. ৮৪৮), যিনি ৬০০,০০০ লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন, বলেছেন যে তাঁর সাহায্যকারীরা তাঁর জন্য লিখে দেন ঐ নম্বরের দ্বিগুণ।
সবচেয়ে পরিচিত এবং প্রামাণ্য হাদিস সংগ্রহ করেন আল-বোখারী (মৃ. ৮৭০)। তিনি পারস্যবাসী ছিলেন এবং সংগ্রহ সমাপ্ত করতে তার ১৭ বছর লেগেছিল। তিনি দুই লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন। প্রায় চার লক্ষ হাদিস গণনার মধ্যে আনেননি, অবিবেচ্য বলে বাতিল করেন। শেষ পর্যন্ত আরো ছাঁটাই-বাছাই করে রাখেন ৭,৩০০ হাদিস; কিন্তু পুনরাবৃত্তিগুলো বাদ দিয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৭৬০। তার জীবনের শেষ দিকে তিনি অবশ্য তার শিথিল মতবাদের কারণে (unorthodox view) কর্তৃপক্ষের কুনজরে পড়েছিলেন।
আল-বোখারীর পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন মুসলিম ইবন আল-হাজ্জাজ (মৃ. ৮৭৫)। ইনি পারস্যের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রামাণ্য হাদিসের সংখ্যা তিন হাজার। ছয়জন হাদিস সংগ্রাহকের মধ্যে আল-বোখারী ও মুসলিমকে সুন্নিরা অথরিটি মনে করে।
শিয়াদের পাঁচটি প্রামাণ্য হাদিস আছে যা প্রফেটের সাহাবীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি, হয়েছে ইমাম বা আধ্যাত্মিক নেতাদের কাছ থেকে। অন্যান্য গোষ্ঠীর (Sect) নিজস্ব হাদিস আছে। সুফি সাধকদের নিজস্ব আলাদা হাদিস ছাড়া কিছু অলিখিত গুপ্ত হাদিস আছে যা শুধু সুফিদের কাছেই পরিজ্ঞাত।
হাদিস সংগ্রাহক ছাড়া হাদিসের তফসিরকার আছেন (মোহাদ্দেস) যারা আসল ও নকল হাদিসের তফাৎ ধরতে পারেন। প্রখ্যাত মোহাদ্দেসদের মধ্যে সাতজন মহিলা মোহাদ্দেস আছেন, তাদের মধ্যে মার্ভের করিমা বিনত আহমেদ (মৃ. ১০৭০) অন্যতম। তিনি তাঁর জ্ঞান ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার কারণে সকলের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন।
বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তির দ্বারা হাদিস সংকলন হওয়ার পরও সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ মাউজু (মিথ্যা) হাদিস এর পরেও বর্ণিত হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার কারণে। ধর্মীয়, আইনি, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা জড়িত বিষয়গুলো পুরানো হাদিসকে পরিবর্তন করে বা মিথ্যা হাদিস তৈরি করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হাদিস জাল করা হয়েছে গোত্রীয় দাবি মেটানোর জন্য এবং এটা প্রথাতে বা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক পার্টি, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুরু এবং প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজের মতো হাদিস তৈরি করেছে তাকে সমর্থন জোগাতে। ক্বচিৎ মতবাদ পাওয়া গেছে যা প্রামাণ্য হাদিসের অনুসৃত। একজন মুসলিম অথরিটি বলেছেন, এমন কোনো ধর্মীয় ব্যক্তি ছিল না, যারা আসল হাদিস বাদ দিয়ে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়েছে; অন্য কথায়, সকলেই নিজের রচিত হাদিস দিয়ে, হাদিসের নামে, কাজ সেরেছেন (নিকলসন, ১৯৬৯ পৃঃ ১৪৫)।
হাদিস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভিন্নতর ছিল এবং এককালের হাদিস অন্যকালে মিলেনি; প্রায়ই দেখা গেছে পরস্পরবিরোধী মতবাদ। এক স্কুলের গৃহীত হাদিস অন্য স্কুল দ্বারা পরিত্যক্ত। বিভিন্ন অর্থরিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছে বা গ্রহণযোগ্য না হলে বাতিল করেছে। অনেক অথরিটি স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করেছেন, যে, যে হাদিসে যত বেশি চেইন (ইসনাদ) সেই হাদিস তত বেশি মিথ্যা
প্রফেট মোহাম্মদের ট্র্যাডিশনের এই অনিশ্চয়তার কারণে, কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন যে, ইসলামী আইনের উৎসরূপে প্রায় সব হাদিস গ্রন্থকেই যুক্তিসিদ্ধ (valid) উৎসরূপে গ্রহণ করা যেতে পারে না। প্রায় সব হাদিসের ঐতিহাসিক ভিত্তি বিতর্কিত। এমনকি তথাকথিত ক্লাসিক্যাল হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন উত্থাপিত করা হয়েছে এবং আধুনিক সমালোচনার আলোকে এটা প্রশ্নবিদ্ধ যে, প্রামাণ্য হাদিস থেকেও অল্প কিছুর গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা।
ট্র্যাডিশনের গোড়ার কথা সম্বন্ধে যে সমস্যা, তাদের প্রামাণিকতা, তাদের মূল্য এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে শতাব্দি ধরে তর্কবিতর্ক হয়ে আসছে। কিছু কিছু মুসলিম স্কলার চরম মত প্রকাশ করে বলেন যে, হাদিস পরিপূর্ণভাবে মহৎ ব্যক্তির জীবনের বিশেষ কোনো ঘটনা, উপাখ্যানের সমষ্টি এবং বিশ্বাসের ওপরে, মতবাদের ওপরে এবং আচরণের ওপরে এর প্রভাব মূল্যহীন, অতি ক্ষীণ। তারা বলেন, হাদিসের ওপর আর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করাই নিরাপদ।
৮.২ মুসলিম আইন
একজন গোড়া মুসলিমের প্রত্যেকটি কর্মের জন্য ধর্মীয় অনুমোদন প্রয়োজন এবং এই থিওরিতে একটি মুসলিম ছোট-বড় যে কোনো কাজ করা বা তার পেছনে ধর্মীয় আইনের সমর্থন থাকে। এই ধরনের মুসলিম আইনকে শরিয়া বলে। শরিয়া প্রাক ইসলামী শব্দ, এই শরিয়া আইন একজন মুসলিমের নৈতিক, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের সব কিছুকেই নিয়ন্ত্রিত করে।
এমনকি সমকামিতা, নাবালক/সাবালিকা, প্রাণী এবং মৃতদেহের সাথে যৌনক্রিয়া, যদিও স্পষ্টত পাপ ও নিষিদ্ধ, এসবও শরিয়া আইনের আওতাভুক্ত এবং পেশাব করা, বমি করা এবং বাতকর্ম প্রভৃতিও শরিয়া আইনের বিষয়বস্তু (Ruthven 1984, P. 163)। কিন্তু ‘প্রফেটের হাদিস আমাদের সব কিছুর বিষয়ে শিক্ষাদান করেছে, প্রার্থনা করা থেকে বাহ্য করা পর্যন্ত।’ এই বক্তব্যের প্রভূত বিশ্লেষণ প্রয়োজন, কেননা প্রফেট মোহাম্মদের মুসলিম আইনে অবদান খুব অল্প। শরিয়ার বেশ কিছু মোহাম্মদের পূর্বেই ছিল এবং তার মৃত্যুর পরে অধিকাংশই রচিত হয়েছে।
মুসলিম আইনের মূল (উসুল) বিভিন্ন উৎস থেকে খোঁজা হয়। প্রাচীন উৎস হলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রীতিনীতি (সুন্না) যা প্রাক-ইসলামী যুগে আরবগণ পালন করত, এদের মধ্য থেকে অনেক প্রফেট মোহাম্মদ গ্রহণ করে ইসলামের কাঠামোয় জুড়ে দিয়েছেন। পরবর্তী উৎস হচ্ছে কোরান, যার মধ্যে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের কিছু সংশোধিত অংশ অনুপ্রবেশ করেছে। আর একটি উৎস হলো হাদিস।
কোরান ও প্রাথমিক হাদিসের অংশ বিধিবদ্ধ করে মুসলিম ধর্ম পালনের মূল ভিত গড়া হয়েছে। বিশ্বাস করা অর্থাৎ ঈমান আনার জন্য ছয়টি নীতি বা বিশ্বাসে মূলমন্ত্ৰ (Articles of faith)গুলো হচ্ছে : (১) আল্লাহর একত্ব, (২) ফেরেশতাগণ, (৩) কিতাবসমূহ (৪) প্রফেটগণ (৫) শেষ বিচারের দিন এবং (৬) পূর্ব-নির্ধারিত (pre- destination)। পালনীয় কর্ম পাঁচটি : (১) কলেমা পাঠ, (২) প্রার্থনা, (৩) রোজা বা সওম, (৪) জাকাত বা দান এবং (৫) হজ পালন।
কোরানের তফসির বা ব্যাখ্যা করা নিষিদ্ধ ছিল। পবিত্র গ্রন্থ, বলা হয়েছে, স্ব- ব্যাখ্যাত। কোরান থেকে শুধু আয়াত পাঠ করা যাবে, কিন্তু ব্যাখ্যা করা যাবে না।
প্রফেট মোহাম্মদ আশা করেছিলেন যে, যারা পাঠ করে, তারা বুঝে পাঠ করুক; যদি কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহ হয় বা অর্থ দ্ব্যর্থবোধক হয় তাহলে কয়েকজন সাচ্চা মুসলিম একসাথে বসে এর অর্থ নির্ধারণ করবে। তিনি বলেছিলেন আমার লোকগণ কখনো ‘ভুলের’ ওপর একমত হবে না। কিন্তু তা হলো না। কোরানের টেক্সট্ সহজবোধ্য নয়। এটার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সম্প্রসারণের দরকার, যাতে এর বিধানগুলো স্পষ্ট হয় এবং উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
প্রথম থেকেই কোরানের ভাষা ও পাঠের অসুবিধার কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্নতা দেখা দিল। এতে কেউ একমত হলেন না, মতভেদ ঘন ঘন হতে থাকল, ফলে গোষ্ঠী (sect) এবং ইমাম ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন দল ও স্কুল প্রতিষ্ঠা হলো। সুতরাং একটা স্বতঃসিদ্ধ শরিয়া থেকে ভিন্নতর শরিয়া গড়ে উঠল।
প্রফেটের মৃত্যুর অল্পদিনের মধ্যেই সুন্নি দলের চারটি প্রধান স্কুল প্রতিষ্ঠা পেল। কুফাতে আবু হানিফা, তিনি আফগান বা আরামিয়ান বংশোদ্ভূত, মালিক ইবন আনাস মদিনাতে কেন্দ্র স্থাপন করলেন; প্যালেস্টাইনের আস্কালনে মুহাম্মদ আল-শাফী বসলেন এবং বাগদাদে হুজরা খানা করলেন ইবন হানবল। এছাড়া আরো কিছু ছোট ছোট স্কুলও হলো। শিয়ারা বলল যে, তাদের ইমাম বা ধর্মীয় নেতারা আইন ও ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার অধিকার রাখে।
কোরানিক ব্যাখ্যা অবশ্যই একটা বিবেচিত রায় যা মুজতাহিদরা করে থাকেন, আর তাদের রায়কে ইজতিহাদ বলে অথবা মুজতাহিদদের (ধর্মীয় কাউন্সিল) সম্মিলিত রায়কে ইজমা বলে। সন্দেহজনক কোনো বিষয়কে বিশ্লেষণ করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে কতকগুলো পদ্ধতি আছে, তাদের মধ্যে প্রধান হলো ব্যক্তিগত মতামত, যুক্তি এবং সাদৃশ্য ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত (analogy) কিন্তু এসবের মধ্যেও নির্ভুল সিদ্ধান্ত অল্পই পাওয়া গেছে।
প্রফেট মোহাম্মদ সাবধান করে বলেছিলেন, যে ব্যক্তি নিজের মতামতের (রায়) ওপর ভিত্তি করে কিংবা অজ্ঞতার কারণে কোরান সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করবে, নিশ্চয় তার স্থান হবে নরকের অগ্নিকুণ্ডের কাছে। পরে আবুবকর বলেছিলেন, আল্লাহর কিতাব, যা আমি জানি না, সে সম্বন্ধে বলতে গেলে পৃথিবী বা স্বর্গ কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না।
যুক্তি (আল) প্রয়োগ দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হয়নি। মৃত্যুকালে মালিক ইবন আনাস বহু বিষয়ে যুক্তির দ্বারা সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য অনুতপ্ত হয়েছিলেন।
সাদৃশ্য ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত (Analogy)কে কিয়াস বলা হয়। যেখানে কোনো আইন খুঁজে পাওয়া যায়নি সেখানে কিয়াস ব্যবহার করে সাদৃশ্য ঘটনা থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। মদ (Wine) নিষিদ্ধ ছিল, এই সাদৃশ্য দেখিয়ে ড্রাগ-নেশা হয় এমন দ্রব্যকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেখা গেল এই কিয়াসের যত্রতত্র প্রয়োগ করে অপব্যবহার করে আইনি ব্যাখ্যা করার ফলে সমাজে মারাত্মক বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
এছাড়া অন্য সমস্যাও ছিল। খুব কড়াকড়িভাবে শরিয়া আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে জুরিস্টদের প্রায় আইনের অন্য উপায় অবলম্বন করতে হতো। কোনো একটা সমস্যা আইনের নমনীয় ব্যাখ্যার দ্বারা মিটমাট করতে গিয়ে আর একটি প্রশ্নবিদ্ধ পদ্ধতি (হাইয়াল) গ্রহণ করতে হয়েছে। এইরূপে, সুদ যা কোরানের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ (২ : ২৭৬) এদের সিদ্ধ করতে গিয়ে কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে (Subterfuge was employed) এবং দাতা ও গ্রহীতাকে ব্যবসার অংশীদার দেখিয়ে সুদ খাতককে দান হিসাবে দেখানো হয়েছে। এই চাতুরি (strategem) অবলম্বন করে শরিয়া আইনের কঠোরতাকে অন্য ক্ষেত্রেও নমনীয় করা হয়। যেমন, দেনমোহর, যৌতুক, সম্পত্তি উত্তরাধিকার, শাস্তি (হদ), তালাক ও যাকাত।
শরিয়া আইন প্রয়োগে আর একটা অসুবিধা হলো, ধর্মীয় কারণে ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিকভাবে কোনো নিয়ম ভঙ্গ হলে এবং তা ধর্মীয় আদালতের অধিক্ষেত্র বহির্ভূত হলে এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া মুশকিল হয়। আইন প্রণয়নকারীরা বাধ্য হয়ে তখন ‘কানুন’ অর্থাৎ সেক্যুলার আইন তৈরি করে, রাজার পাওনা রাজাকে আর ঈশ্বরের পাওনা ঈশ্বরে দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হলো। ‘কানুন’ শব্দ গ্রিক শব্দ ক্যানন (canon) থেকে আগত। এইভাবে শরিয়া আইনের বিচার বিভাগে দ্বৈত-বিচার পদ্ধতি শুরু হলো, একটা ধর্মীয় আদালতের মাধ্যমে অন্যটি সেক্যুলার কোর্ট; ধর্মীয় আদালত হতে সম্পূর্ণ আলাদা এবং ধর্মীয় আদালতের আওতায় পড়ে না, এমন সব মামলা- মোকদ্দমা এই সেক্যুলার আদালতে ইকুইটি, সাধারণ জ্ঞান ও ট্র্যাডিশনাল রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি হয়।
ইসলামী রাজ্যের সম্প্রসারণের ফলে, ইসলামী আইন পদ্ধতিতে বিদেশী নিয়ম পদ্ধতি আমদানি হওয়ায়, মুসলিম আইন প্রভাবিত হলো, বিশেষ করে অমুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে এসে, যেমন মেসোপটেমিয়া, পারস্য, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও মিশর, ইহুদি, খ্রিস্টান ও জোরাস্ত্রারের আইনি কোড থেকে বেশ কিছু ধর্মীয় বিধান, কোনো ওজর-আপত্তি ছাড়াই, মুসলিম আইনি কোডে মিশে গেল।
হেলেনিস্টিক, রোমান ও বাইজানটাইন আইনেরও অবদান মুসলিম আইনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। গোল্ডজিহার বলেন- ইসলামী আইনে রোমান আইনের প্রভাব অভ্রান্ত— ‘unmistakable ‘ (1981, P. 4)। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাইজানটাইন সম্রাট জাস্টিনিয়নের (মৃ. ৫৬৫), আইনি স্কুল, কোড ও ডাইজেস্ট প্রভূতভাবে মুসলিম জুরিসপ্রুডেন্সকে প্রভাবিত করেছে।
সময়ের সাথে, আরবের বাইরে যেসব দূর দেশে ও প্রান্তদেশে লোকজন বাস করত তাদের প্রচলিত আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে শরিয়া আইনকে তাদের সুবিধামতো গ্রহণ করা হয়। ধর্মান্তরিত লোকদের মনে হলো, যেহেতু মুসলিমরা তাদের দেশের প্রাচীন রীতি-নীতির ওপর হস্তক্ষেপ করছে না, শুধু মূর্তিপূজা ও শিশু হত্যা ছাড়া, সুতরাং অন্যান্য দেশেও চলতি স্থানীয় আইন ও প্রথা এই এনালজির আদর্শে অপরিবর্তিত থাকবে। ইসলামী মিশনের অংশ রূপে জিম্মিদের কোনো বিপদের সম্মুখীন হবার আশংকা নেই।
নতুন ধর্মে দীক্ষিত মানুষদের ধারণা জন্মে গেল, তাদের প্রাচীন রীতি-নীতির সাথে ইসলামী নীতির বিরোধ বাধবে না এবং তাদের সব প্রাচীন রীতি ও প্রথা আগের মতো চলতে থাকবে। এমনকি, সুদান ও নাইজেরিয়ার কিছু অংশে যে মেয়েদের খানার প্রথা প্রচলিত ছিল এ প্রথারও পরিবর্তন হলো না এবং হাদিস তৈরি করে শরিয়া আইনের অঙ্গীভূত করা হয়েছে।
আফ্রিকার অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে বার্বারদের মধ্যে এবং সেন্ট্রাল এশিয়া, ইন্ডিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে পরিবার আইন, বিশেষ করে মহিলা বিষয়ক তালাক ইত্যাদি ভূমি সংক্রান্ত আইন, সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রথা, শ্রেণী ও জাতিসহ, সব কিছু স্থানীয় আইন অপরিবর্তিত রয়ে গেল। প্রয়োজনবোধে কিছু পরিবর্তন ও সংশোধনের দ্বারা সমন্বয় করা হলো।
প্রায়ই, পুরানো বিশ্বাস ও প্রথা যা ইসলামের আবির্ভাবের সাথে বন্ধ হয়েছিল, সময়ের সাথে তার পুনরাবির্ভাব হলো এবং দেশের মানুষরা আস্তে আস্তে তার পূর্ব- পুরুষের প্রথা গ্রহণ করে নিল; এই ভাবে বুড্ডিস্ট, হিন্দু, সামানিস্ট (তান্ত্রিক) ও এনিমিস্ট (সর্বপ্রাণবাদী বা অধ্যাত্মবাদী) ইসলামী কাঠামোর মধ্যে মিশে গেল। প্রফেসর গিব বলেন, বিভিন্ন মুসলিম দেশের মধ্যে ইসলামী নিয়মকানুনের বিভিন্নতা দেখা দিল, এমনকি কট্টর গোঁড়ামি মতের বিপরীতে।
পরিশেষে, আধুনিক ইউরোপের আইন পদ্ধতি বর্তমান মুসলিম বিশ্বের প্রচলিত আইনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তুরস্কে শরিয়া আইনের বিলোপ সাধনের সাথে ইউরোপীয় আইন প্রবর্তিত হয়েছে, তেমনি হয়েছে কিছু সংশোধন করে মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে। এই সব রাষ্ট্রে আইন কোড সাধারণত তৈরি হয়েছে পশ্চিমা মডেলে।
শরিয়া আইন একাধিক আইন কোড ও ট্র্যাডিশনাল প্রথা ও পদ্ধতির জগাখিচুড়ি; এখানে বিভিন্ন বিজিত দেশের বিভিন্ন আইন ও সামাজিক প্রথার সমাবেশ। শরিয়া আইন শতাব্দি ধরে বিবর্তিত হয়েছে এবং এখনও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতাধীন।