সপ্তম কাণ্ড। পঞ্চম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- গাবো বা এতৎসমাসতাশৃঙ্গাঃ সতীঃ শৃঙ্গাণি নো জায়ন্তা ইতি কামেন তাসাং দশ মাসা নিষগ্না আসন্নথ শৃঙ্গাণ্যজায়ন্ত তা উদতিরাং স্মৃত্যথ যাসাং নাজায়ন্ত তাঃ সম্বৎসরমান্তোদতিষ্ঠন্নরাৎ স্মেতি যাসাং চাজায়ন্ত যাসাং চ ন তা উভয়ীরুদতিষ্ঠন্নরাৎ স্মেতি গোসত্রং বৈ সম্বৎসরো য এবং বিদ্বাংসঃ সম্বৎসরমুপযন্ত্যধুবন্ত্যেব তম্মাপরা বার্ষিকৌ মাসৌ পৰ্বা চরতি সত্রাভিজিতং হ্যস্যৈ তস্মাৎ সম্বৎসরসদো যৎ কিং চ গৃহে ক্রিয়তে তদাপ্তমবরুদ্ধমভিজিতং ক্রিয়তে সমুদ্রং বা এতে প্র প্লবন্তে যে সম্বৎসমুপন্তি যো বৈ সমুদ্রস্য পারং ন পশ্যতি ন বৈ স তত উদেতি সম্বৎসরঃ বৈ সমুদ্রস্তস্যৈতৎপরাং যদতিরাত্রৌ য এবং বিদ্বাংসঃ সম্বৎসরমুপ যন্ত্যনার্ভা এবোদৃচং গচ্ছন্তীয়ং বৈ পূৰ্বোহতিরাত্ৰোহসাবুত্তরো মনঃ পূৰ্বো বাগুত্তরঃ প্রাণঃ পূৰ্বোহপান উত্তরঃ প্ররোধনং পূর্ব উদয়নমুত্তরো জ্যোতিষ্টোমো বৈশ্বানররাইতিরাত্রো ভবতি জ্যোতিরেব পুরস্তাধতে সুবর্গস্য লোস্যানুখ্যাত্যৈ চতুর্বিংশ প্রায়ণীয়ো ভবতি চতুর্বিংশতিরর্ফমাসাঃ সম্বৎসরঃ প্রয়ন্ত এব সম্বৎসরে প্রতি তিষ্ঠন্তি তস্য ত্ৰীণি চ শতানি যষ্টিশ্চ স্তোত্রীয়ান্তাবতীঃ সম্বৎসরস্য রায় উতে এব সম্বৎসরস্য রূপে আয়ুবন্তি তে সংস্থিত্যা অরিষ্টয়া উত্তরৈরহোভিশ্চরন্তি ষডহা ভবন্তি যা ঋতবঃ সম্বৎসর ঋতুভেব সম্বৎসরে প্রতি তিষ্ঠন্তি গৌস্টাইয়ুশ্চ মধ্যতঃ স্তোমৌ ভবতঃ সম্বৎসরস্যৈব তন্মিথুনং মধ্যতঃ দধতি প্রজননায় জ্যোতির ভিতো ভবতি বিমোচনমেব তচ্ছন্দাংস্যেব তদ্বিমোকং যন্ত্যধো উভয়তোজ্যো তিষৈব ষভহেন সুবর্গং লোকং যন্তি ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্ত্যাসতে কেন যন্তীতি দেবযানেন পথেতি ক্ৰয়াচ্ছন্দাংসি বৈ দেবনঃ পন্থা গায়ত্রী ত্রিজগতী জ্যোতির্বৈ গায়ত্রী গৌস্ত্রিগায়ুজ্জগতী যদেতে স্তোমা ভবন্তি দেবযানেনৈব তৎপথা যন্তি সমানং সাম ভবতি দেবলোকো বৈ সাম দেবলোকাঁদেব ন যন্ত্যন্যা অন্যা ঋচো ভবন্তি মনুষ্যলোকো বা ঋচো মনুষ্যলোকাঁদেন্যমন্যং দেবলোকম ভ্যারোহতো যন্ত্যভিবৰ্তো ব্ৰহ্মসামং ভবতি সুবর্গস্য লোকস্যাভিবৃত্ত্যা অভিজিম্ভবতি সুবৰ্গস্য লোস্যাভিজিত্যে বিশ্বজিবতি বিশ্বস্য জিত্যৈ মাসিমাসি পৃষ্ঠান্যপ যন্তি মাসিমাস্যতিগ্রাহ্যাঁ গৃহ্যন্তে মাসিমাস্যেব বীৰ্য্যং দধতি মাসাং প্রতিষ্ঠিত্যা উপরিষ্টাম্মসাং ষ্ঠানপ যন্তি তস্মাদুপরিষ্টাদোষধয়ো ফলং গৃহ্নান্তি ॥১৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–তাদৌ তাবৎ সম্বৎসরসত্রং বিধত্তে। অর্থাৎ–এই প্রপাঠকে সব সম্বৎসরসত্রের বিধি কথিত হয়েছে। প্রথমোহনুবাকে গবাময়ননামকং সম্বৎসরসত্ৰং কৈশ্চিদ্বিশেষৈঃ সহ বিহিত। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে কিছু বিশেষত্ব সহ গবাময়ন নামক সম্বৎসরসত্রের কথা বলা হয়েছে।]
মর্মার্থ– যদিও গো-বর্গ তির্যজাতি (পশু) হওয়ার নিমিত্ত তাদের কর্মের (অর্থাৎ যজ্ঞকর্মের) অধিকার নেই, তথাপিও তাদের অভিমানী দেবতাগণকে এখানে গো-শব্দে বিবক্ষিত (কথিত বা অভিহিত করা হয়েছে। গো-গণের শৃঙ্গের অভাব আপনাতে আরোপিত করে (স্বস্মিন্নারোপ্য) গো-গণ সহ অভিন্নভাবে কথিত হচ্ছে। পুরাকালে গো-বর্গ শৃঙ্গরহিত ছিল (সুতরাং গো-বর্গের অভিমানী দেবতাগণ শৃঙ্গরহিত ছিলেন)। সেই গো-অভিমানী দেবতাগণ শৃঙ্গের উৎপত্তি কামনা পূর্বক এই সম্বৎসরসত্রে দীক্ষিত হয়ে এর অনুষ্ঠান আরম্ভ করেন। এইভাবে শৃঙ্গকামনায় যজ্ঞানুষ্ঠান করতে করতে (প্রবৃত্তাং) তাঁদের দশ মাস অতিক্রান্ত (নির্গত) হয়ে যায়। তারপর দশ মাসের পরেই তাদের শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়। তখন গো-বর্গ তথা গো-অভিমানী দেবতাগণ অপেক্ষিত যজ্ঞফলে সমৃদ্ধ হয়েছি মনে করে সেই যজ্ঞ হতে উত্থিত হলেন। সেই কালে যে গো-গণের (বা গো-অভিমানী দেবতাগণের) শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়নি, তারা পুনরায় অবশিষ্ট দুটি মাস যজ্ঞানুষ্ঠান করে সম্বৎসর-সম্পূর্ণ করে শৃঙ্গ-প্রাপ্ত হলেন। তারা তখন আমরাও সমৃদ্ধ হয়েছি মনে করে যজ্ঞ হতে উত্থিত হলেন। যেহেতু গো-বর্গের দ্বারা এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই হেতু এই সম্বত্যাখ্য সত্ৰ গো-সত্র বা গবাময়ন কর্মবিশেষ নামে অভিহিত হয়। যে যজমান এইরকম জ্ঞাত হয়ে সম্বত্রখ্য কর্মবিশেষের (যজ্ঞবিশেষের) অনুষ্ঠান করেন, তিনি সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হবেন। (অতঃপর প্রকারান্তরে এই সত্রানুষ্ঠানের প্রশংসা, এই সত্রের প্রায়ণীয়-উদয়নীয় দিনবিশেষের বিধি,, এই সত্রের অতিরাত্রের বহুধা প্রশংসা ইত্যাদি কথিত হয়েছে) ॥১॥
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- গাবো বা এতৎ সমাসতাশৃঙ্গাঃ সতীঃ শৃঙ্গাণি সিষাসন্তীস্তাসাং দশ মাসা নিষগ্না আসন্নথ শৃঙ্গাণ্যজায়ন্ত তা অব্রুবন্নরাস্মোত্তিষ্ঠামাব তং কামমরুৎস্মহি যেন কামেন ন্যষদামেতি তাসামু ত্বা অব্রুবন্নর্ধা বা যাবতীৰ্বাহসাম এবেমৌ দ্বাদশৌ মাসৌ সম্বৎসরং সম্পাদ্যোক্তিঠামেতি তাসাম স্বাদশে মাসি শৃঙ্গাণি বৰ্ত্তন্ত শ্ৰদ্ধয়া বাহশ্রদ্ধয়া বা তা ইমা যাপরা উভয্যো বাব তা আধুর্বন্যাশ্চ শৃঙ্গাণ্যসম্বন্যাশ্চো জঁমবারুন্ধতম্নোতি দশসু মাসুত্তিষ্ঠমৃস্নোতি দ্বাদশসু য এবং বেদ পদেন খলু বা এতে যন্তি বিতি খলু বৈ পদেন যন্তদ্বা এতদৃদ্ধময়নং তম্মদেতসেনি ॥২॥ [সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ে দশমাসদ্বাদশমাসবিকল্লোহভিহিতঃ। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে দশ মাস ও দ্বাদশ মাসের বিকল্প ভেদে (অথবা দ্বাদশ মাসের বিকল্পে দশ মাসে সাধ্য সম্বৎসর) যজ্ঞের কথা হলা হয়েছে।
মর্মার্থ- পুরাকালে শৃঙ্গরহিত হওয়ার কারণে গো-বর্গ (গো-অভিমানী দেবতাগণ) শৃঙ্গ লাভের আকাঙ্খয় সম্বৎসরসাধ্য যজ্ঞানুষ্ঠান আরম্ভ করেন। এইভাবে দশ মাস অতিক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে কারো কারো শৃঙ্গ উৎপন্ন হয়। তখন তারা অর্থাৎ সেই উৎপন্ন-শৃঙ্গ গো-গণ পরস্পর কথোপথন করতে লাগলেন–যে কারণে শৃঙ্গবিষয়ে কামনা করে আমরা সত্রানুষ্ঠানে একত্র সমবেত হয়েছি, আমাদের সেই কামনা সম্পাদিত হয়েছে। এই কথা বলে (এবমুক্তা) কিছুসংখ্যক গো কৃতার্থবুদ্ধিতে সত্ৰ হতে উত্থিত হলেন।-জাতশৃঙ্গ গো-বর্গ গমন করলে অবশিষ্ট শৃঙ্গরহিতগণ পরস্পর কথোপথন করতে লাগলেন। এঁরা দুভাগে বিভক্ত হলেন। কেউ শৃঙ্গকাম, অপর কেউ বা বললেন–আমাদের শৃঙ্গের প্রয়োজন নেই, তার চেয়ে আমরা উদরপূরণক্ষম বলকারক অন্ন সম্পন্ন হবো। এইভাবে শৃঙ্গকামী এবং অশৃঙ্গকামী সকলে মিলিত হয়ে স্থির করলেন–এই সম্বৎসরের মধ্যে যে দুমাস দ্বাদশসংখ্যার পূরণে অবশিষ্ট আছে, তা পূর্ণ করে আমরা যজ্ঞ হতে উত্তিষ্ঠ হবো (পশ্চাদুত্তিষ্ঠামেতি)। অতঃপর দ্বাদশমাস পূর্ণ করায় শৃঙ্গ সম্পর্কে যাঁদের শ্রদ্ধা ছিল, তাদের শৃঙ্গ উৎপন্ন হলো; যাঁদের শৃঙ্গ সম্পর্কে শ্রদ্ধা ছিল না, তারা উদরপূরণক্ষম বলকারক অন্ন প্রাপ্ত হলেন। এইভাবে উভয় দলই নিজ নিজ প্রয়োজন সিদ্ধ হওয়ায় সমৃদ্ধ হলেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, দশমাস অনুষ্ঠানের দ্বারা শৃঙ্গমাত্র লব্ধ হলো, এবং দ্বাদশমাসের অনুষ্ঠানে রমণীয় শৃঙ্গত্ব ও যজ্ঞফলভূত অন্য কাম্য সামগ্রী লব্ধ হলো।–যজমান এই দুরকম উপায় বিদিত হয়ে আপন ইচ্ছানুসারে দশ মাস অথবা দ্বাদশ মাসব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠান করলে প্রকারান্তরে অন্যতর সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন।-দশমাস অনুষ্ঠানকারী যজমান অল্পকাল হলেও শাস্ত্রীয় মার্গের অনুসরণ করার নিমিত্ত ইচ্ছানুরূপ ফল প্রাপ্ত হবেনই; যেমন লোকজগতে রাজপথ অবলম্বন করে গমনকারী পুরুষ স্বল্প স্থলন হলেও শেষ পর্যন্ত গ্রাম প্রাপ্ত হয়, সেইরকম এখানেও ফলপ্রাপ্তি যুক্তিযুক্ত। (উপসংহারে কথিত হচ্ছে)–এই গবাময়ন যজ্ঞ দশ মাসেই সমাপ্ত হোক, কিংবা দ্বাদশ মাসব্যাপীই অনুষ্ঠিত হোক, সর্বৰ্থাই ফলপ্রদ হয়, যেহেতু এর অপার মহিমা। তির্যকজাতিরূপ গো-বর্গও অভিমত ফলোভের হেতুভূত যে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, সেই যজ্ঞের অনুষ্ঠান পূর্বক বিশিষ্ট ব্রাহ্মণগণ যে ফল লাভ করবেন তাতে আর বক্তব্য কি? (কিমু বক্তব্যং) ॥২॥
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- প্রথমে মাসি পৃষ্ঠান্যপ যন্তি মধ্যম উপ যন্ত্যত্তম উপ যন্তি তদাহুৰ্যাং ত্রিরেক্যাহ্ন উপসীদন্তি দং বৈ সাহপরাভ্যাং দোহাভ্যাং দুহেইথ কুতঃ সা থোক্ষ্যতে যাং দ্বাদশ কৃত্ব উপসীদন্তীতি সম্বৎসরং সম্পাদ্যোত্তমে মাসি সকৃৎ পৃষ্ঠাপেয়ুশুদ্যজমানা যজ্ঞং পশুনব রুন্ধতে সমুদ্রং বৈ এতেহনবারমপারাং প্র প্লবন্তে যে সম্বৎসরমুপন্তি যবৃহদ্রথন্তরে অহুর্জেয়ুথা মধ্যে সমুদ্রস্য প্লবমন্বর্ফেয়ুস্তাদৃক্তদনুসর্গং বৃহদ্রথষরাভ্যামিত্বা প্রতিষ্ঠাং গচ্ছত্তি সৰ্বেভ্যো বৈ কামেভ্যঃ সন্ধিদুইে তদ্যজমানাঃ সৰ্বান্ কামানব রুগ্ধতে ॥ ৩॥ [সায়ণাচার্য বলেন-অথ তৃতীয়ে পৃষ্ঠ্যষডহ বিষয়ে বিকল্লোহভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই তৃতীয় অনুবাকে ১ পৃষ্ঠ্য ষড়হ বিষয়ে বিকল্প কথিত হয়েছে।
মর্মার্থ- সকল মাসে পৃষ্ঠ্য ষড়হ অনুষ্ঠেয় নয় (নানুষ্ঠেয়ঃ), কিন্তু প্রথম মধ্যম ও উত্তম, এই তিন মাসে অনুষ্ঠান কর্তব্য–এটি এক পক্ষের অভিমত। অপর পক্ষের অভিমত–না, এই তিনমাস অনুষ্ঠান উচিত নয়; যেমন, লোকজগতে দোগ্ধা পুরুষ গাভীকে এক দিনের মধ্যে তিনবার দোহন করলে সেই গাভী প্রথম পর্যায়ে প্রভূত ক্ষীর প্রদান করে, অপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে অল্প অল্প করে দুগ্ধ প্রদান করে। তাহলে সেই গাভীকে এক দিনে দ্বাদশবার দোহন করলে সে কি করে দুগ্ধ প্রদান করবে? দুগ্ধাভাবে দোহন উচিত নয়। সেইরকম, গো-সমান এই পৃষ্ঠ্য ষড়হেবও তিন মাস অনুষ্ঠান অনুচিত; তাহলে দ্বাদশ মাসে যে অনুচিত, তাতে আর বক্তব্য কি? এই পৃষ্ঠ্য ষড়হ বিষয়ে অভিজ্ঞ জনগণ বলে থাকেন–সেই কারণে সম্বৎসরব্যাপী অনুষ্ঠানের অন্তিম (শেষ) মাসে একবার মাত্র পৃষ্ঠ্য ষড়হ অনুষ্ঠান করণীয়। অন্যান্য মাসে পরিব্যাপ্ত (অভিপ্লব) ষড়হ যাগের দ্বারা মাসপূরণ কর্তব্য। তাহলে যজমান পৃষ্ঠ্য ষড়হের সারত্ব ইত্যাদি যা কিছু যজ্ঞফল, তা সম্পূর্ণ প্রাপ্ত হবেন। (অতঃপর বিশেষ আকারে এর বিধি বর্ণিত হয়েছে) ॥৩॥
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- সমান্য ঋচো ভবন্তি মনুষ্যলোকো বা ঋচো মনুষ্যলোকাঁদেব ন যন্ত্যন্যদন্যৎসাম ভবতি দেবলোকো বৈ সাম দেবনোকাঁদেবন্যমন্যং মনুষ্যলোকং প্রত্যবরোহন্তো যন্তি জগতীমগ্র উপ যন্তি জগতীং বৈ ছন্দাংসি প্রত্যবরোহত্যায়ণং গ্রহা বৃহৎ পৃষ্ঠানি এয়স্ত্রিংশং স্তোমিস্তস্মাজ্জ্যায়াংসং কনীয়া প্রত্যবরোহতি বৈশ্বকৰ্ম্মণণা গৃহ্যতে বিশ্বান্যে তেন কৰ্ম্মাণি যজমানা অব রুন্ধত আদিত্যঃ গৃহ্যত ইয়ং বা অদিতিরস্যামেব প্রতি তিন্ত্যন্যোন্যো গৃহ্যেতে মিথুনত্বায় প্রজাতা অবান্তরং বৈ দশরাত্রেণ প্রজাপতিঃ প্রজা অসৃজত যশরাত্রো ভবতি প্রজা এব তদ্যজমানাঃ সজ এতাং হ বা উদঃ শৌল্যায়নঃ সত্ৰস্যৰ্দ্ধিমুবাচ যশরাত্রে যশরাত্রো ভবতি সত্ৰস্যৰ্দ্ধা অথো যদেব পূৰ্বেৰ্ধহঃসু বিলোম ক্ৰিয়তে তস্যৈবৈষা শান্তিঃ ॥৪॥
[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থ উত্তরে পক্ষসি প্রকারবিশেষোহভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই চতুর্থ অনুবাকে সম্বৎসর যাগের বিভাগ বা পক্ষ সম্পর্কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে]।
মর্মার্থ- দ্বে হি সম্বৎসরসত্ৰস্য পক্ষসীসম্বৎসরসত্রের দুটি বিভাগ; প্রথম ছয়মাসাত্মক কাল একটি বিভাগ এবং দ্বিতীয় ছয়মাসাত্মক কাল অপর বিভাগ। উভয়ের মধ্যে প্রথম ছয়মাসাত্মক অর্থাৎ পূর্ববতী পক্ষটি সামের একতা ও ঋকের নানাত্ব পূর্বে অভিহিত হয়েছে। ইদানীং দ্বিতীয় ছয়মাসাত্মক অর্থাৎ উত্তরবর্তী পক্ষটির বিষয় পূর্ববর্তীর বিপরীতক্রমে অর্থাৎ ঋকের একতা ও সামের নানাত্ব। কথিত হয়েছে।-মনুষ্যলোক কর্মক্ষেত্র; অর্থাৎ মনুষ্যলোকে কর্ম সম্পাদন করে, তারপরে দেবলোক প্রাপ্ত হতে হয়। সেইরকম, আধারভূত ঋকের অভ্যাসের পর সামগান গীত হয়। সেই কারণে ঋক্ হলো মনুষলোক-স্বরূপ এবং সেগুলি একরূপ করা কর্তব্য; অর্থাৎ একদিন যে ঋকগুলি প্রযুক্ত হবে, পরের দিনও তা-ই করণীয়। এইরকম করলে খৃকাত্মক মনুষ্যলোক হতে কখনও বিচ্ছেদ হবে না, অপত্য ইত্যদি অর্থাৎ সন্তানগণ অবিচ্ছেদে থাকবে (অপত্যাদিসন্তানাবিচ্ছেদাৎ)। –পশ্চাদ্ভাবিত্বের কারণে সামে দেবলোকত্ব প্রতিষ্ঠিত। সেই রকম পূর্বদিনে যে সাম গীত হবে, পরের দিন সেটি ব্যতীত অন্য সাম গান করা কর্তব্য; লোকজগতেও দেবলোক হতে নির্গত পুরুষ মনুষ্যলোকের অন্যান্য প্রদেশে গমন করে থাকে। অর্থাৎ দেবলোক হতে প্রত্যাবর্তিত পুরুষ বা যজমান কর্মফলের তারতম্য অনুসারে (অর্থাৎ বিবিধত্ব অনুসারে) মনুষ্যলোক প্রাপ্ত হন, এটাই বক্তব্য। [অতঃপর বিশেষান্তর বিধি, অতিগ্রাহ্যদ্বয়ের বিধি, দ্বাদশাহীয় দশরাত্রের বিধি, ইত্যাদি কথিত হয়েছে] ॥৪৷৷
.
পঞ্চম অনুবাক
যদি সোমৌ সংসুতৌ স্যাং মহতি রাত্রিয়ৈ প্রাতরনুবাকমুপাকুৰ্য্যাৎ পূৰ্ব্বো বাচং পুব্বো দেবতাঃ পূৰ্ব্বচ্ছন্দাংসি বৃঙক্তে বৃষন্বতীং প্রতিপদং কুৰ্য্যাৎ প্রাতঃসনাদেবৈ যামিং বৃক্তেহথো খাহঃ সবনমুখে সবনমুখে কাৰ্যেতি সবনমুখাৎ সবন মুখাদেবৈষামিং বৃক্তে সম্বেশায়োপৰেশায় গায়ত্রিয়াস্ক্রিষ্ঠুভো জগত্যা অনুষ্ঠুভঃ পঙক্ত্যা অভিভূত্যৈ স্বাহা ছন্দাংসি বৈ সম্বেশ উপবেশচ্ছন্দোভিরেবৈষম ছন্দাংসি বৃক্তে সজনীয়ং শস্যং বিহং শস্যমগস্ত্যস্য কয়াশুভীয়ং শস্যমেতাবদ্বা অস্তি যাবদেত্যাবদেবাস্তি দেং বৃক্তে যদি প্রাতঃসবনে কলশো দীৰ্য্যেত বৈষ্ণবীযু শিপিবিষ্টবতী বীরন্যৰৈ যজ্ঞঃ স্যাতিরিচ্যতে বিষ্ণুং তচ্ছিপিবিষ্টমভ্যতি রিচ্যতে তদ্বিষ্ণুঃ শিপিবিক্টোহতিরিক্ত এবাতিরিক্তং দধাতাখো অতিরিক্তেনৈতিরিক্ত মাদ্বাহব রুন্ধতে যদি মধ্যন্দিনে দীৰ্য্যেত বষট্কারনিধনং সাম কুৰ্যৰ্বষট্কারো বৈ যজ্ঞস্য প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠামেবৈনাময়ন্তি যদি তৃতীয়সবন এতদেব ॥৫
[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে মাৎসর্যের্ণ প্রবৃত্তয়োৰ্ধয়োর্গবাময়নয়োর্বিশেষোভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুবাকে মাৎসর্যে প্রবৃত্ত দুই গবাময়ন যাগকারী যজমানের বিষয়ে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে।]
মর্মার্থ– যদি কখনও দুই যজমান সঙ্গের মধ্যে পরস্পর মাৎসর্য বশতঃ গবাময়ন যাগের নিমিত্ত সোম অভিযুত হয় (সদ্ভুয়াভিযুতৌ), তবে মহারাত্রে (অর্থাৎ অর্ধরাত্রের পর মুহূর্তদ্বয় রাত্রিকালে) উখিত হয়ে প্রাতরনুবাক নামক (অর্থাৎ প্রাতর্যাবভ্যো দেবেভ্য ইত্যাদি মন্ত্রে) শস্ত্রের দ্বারা উপকরণ করণীয়। যে যজমান-সঙ্ঘ পূর্বে প্রবৃত্ত হয়ে উপকরণ করেন, তারা অপর সঘের বাক্ ইত্যাদি আয়ত্ত করে থাকেন। [অতঃপর প্রাতরনুবাকের ঋবিশেষ, অভিভূতি-হোমমন্ত্র, মন্ত্রের তাৎপর্য, শস্ত্রবিশেষের বিধি, নৈমিত্তিক স্তোত্রবিশেষ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সবনবিশেষ, ইত্যাদি বিধৃত হয়েছে] ॥৫॥
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- ষডহৈৰ্মাসাৎসম্পাদ্যাহরুসৃজন্তি ষডহৈহি মাসাসম্পশ্যত্যৰ্ধৰ্মসৈৰ্ম্মাসাৎ সম্পাদ্যাহরুসৃজস্ত্যৰ্দ্ধমাসৈহি মাসাৎসম্পশ্যামাবাসায়া মাসাসম্পাদ্যাহরুৎ সৃজষ্যমাবস্যায় হি মাসাসম্পশ্যন্তি পৌৰ্ণমাস্যা মাসাৎসম্পাদ্যাহরুৎসৃজন্তি পৌর্ণামাস্যা হি মাসানসম্পশ্যন্তি যো বৈ পূর্ণ আসিঞ্চতি পরা স সিঞ্চতি যঃ পূর্ণাদুদচতি প্রাণমস্মিৎস দধাতি যৎ পৌৰ্ণমাস্যা মাসাসম্পাদ্যাহরুসৃজন্তি সম্বৎসরায়ৈ তপ্রাণং দধতি তদনু সত্ৰিণঃ প্রাণন্তি যদহনোসৃজেয়ুৰ্যথা দৃতিরু পনদ্ধো বিপতত্যেবং সম্বৎসরো বি পতেদাৰ্ত্তিমাচ্ছেয়ুষৎ পৌৰ্ণমাস্যা মাসানৎ সম্পাদ্যাহরুসৃজন্তি সম্বৎসরায়ৈব তদুদানং দধতি তদনু সত্ৰিণ উৎ অনস্তি নাহৰ্ত্তিমাচ্ছন্তি পূর্ণমাসে বৈ দেবানাং সুতো যৎ পৌৰ্ণমাস্যা মাসাসম্পাদ্যা হরুসৃজন্তি দেবানামেব তদ্যজ্ঞেন যজ্ঞং প্রত্যবরোহস্তি বি বা এতদ্যজ্ঞং ছিন্দন্তি যৎ ষডহসন্ততং সন্তমথাহরুৎসৃজন্তি প্রাজাপত্যং পশুমা লভন্তে প্রজাপতিঃ সৰ্বা দেবতা দেবতাভিরেব যজ্ঞঃ সং তম্বস্তি যাস্ত বা এতে সবনাদ্যেহহঃ উৎসৃজন্তি তুরীয়ং খলু বা এতসবনং যৎসান্নায্যং যৎসামায্যং ভবতি তেনৈব সবনা যন্তি সমুপহুয় ভক্ষয়ন্ত্যেতৎ সোমপীথা হ্যেতৰ্হি যথয়তনং বা এতেষাং সবনভাজো দেবতা গচ্ছত্তি যেহহরুৎসৃজত্যনুসনং পুরোশানিৰ্বপত্তি যথায়তনাদেব সবনভাজো দেবতা অব রুন্ধতেইষ্টাকপালান্ প্রাতঃসবন একাদশকপালাম্মাধ্যন্দিনে সবনে দ্বাদশক পালাংতৃতীয়সবনে ছন্দাংস্যেবাহপ্ৰাহব রুন্ধতে বৈশ্বদেবং চরুং তৃতীয়সবনে নির্বপত্তি বৈশ্বদেবং বৈ তৃতীয়সবনঃ তেনৈব তৃতীয়সবনান্ন যন্তি, ॥৬৷৷ [সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠে গবাময়নস্য গুণবিকাররূপ উৎসগোহভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে গবাময়ন যাগের গুণবিকাররূপ উৎসর্গের বিষয় কথিত হয়েছে)
মর্মার্থ- সেবিত (অভিপ্লব) ষড়হের পাঁচ বার আবৃত্তি পূর্বক (পঞ্চকৃত্ব আবৃত্তৈঃ) এক মাস অনুষ্ঠানের পর (অনুষ্ঠায়ানন্তরে) পরবর্তী মাসের প্রথম দিনে জ্যোতি-নামে আখ্যাত দিন উৎসর্গ করণীয়। অথবা চারটি অভিপ্লব ও একটি পৃষ্ঠ্য যাগের দ্বারা মাস সমাপনের পর পরবর্তী দিনের প্রসারণ কর্তব্য, লোকে যেমন পাঁচটি ছদিন হিসাবে ত্রিশ দিন গণনা করে এটি সাবন মাস–এই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে থাকে। (অতঃপর পক্ষান্তর, চান্দ্রমাসাভিপ্রায়ের পক্ষদ্বয়, প্রকারান্তরে পক্ষের প্রশংসা, পুনরায় কর্তব্যান্তর, ইত্যাদি কথিত হয়েছে) ॥৬॥
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- উত্সজ্যাং নোসৃজ্যামিতি মীমাংসন্তে ব্ৰহ্মবাদিনস্তদ্বাহুরুত্সজ্যমেবেত্যমা বাস্যারাং চ পৌর্ণমাস্যাং চোসৃজ্যমিত্যাহুরেতে হি যজ্ঞং বহত ইতি তে ত্বাব নোসৃজ্যে ইত্যাহুর্ষে অবান্তরং যজ্ঞং ভেজাতে ইতি যা প্রথমা ব্যষ্টকা তস্যামুসৃজ্যমিত্যাহূরেষ বৈ মাসো বিশর ইতি নাহদিষ্ট উৎসৃজেয়ুযদাদিষ্টমূৎ সৃজেয়ুর্যাদৃশে পুনঃ পৰ্য্যাপ্লবে মধ্যে ষডহস্য সম্পদ্যেত ষডহৈম্মাসাৎসম্পাদ্য যৎসপ্তমমহস্তম্মিসৃজেয়ুস্তদষ্ময়ে বসুমতে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেয়ু রৈং দধীন্দ্রায় মরুত্বতে পুরোডাশমেকাদশকপালং বৈশ্বদেবং দ্বাদশকপাল মঙ্গেৰ্বৈ বসুমতঃ প্রাতঃসবনং যদগ্নয়ে বসূমতে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিপন্তি দেবতামেব তদ্ভাগিনীং কুৰ্ব্বস্তি সবনমষ্টাভিরূপ যন্তি যদৈং দধি ভবতীন্দ্রমেব তদ্ভাগধেয়ান্ন চ্যাবয়ন্তীন্দ্রস্য বৈ মরুত্বততা মাধ্যন্দিনং সবনং যদিন্দ্রায় মরুত্বতে পুরোডাশমেকাদশকপালং নিৰ্বপন্তি দেবতামেব তদ্ভাগিনীং কুন্তি সবনমেকাদশভিরূপ যন্তি বিশ্বেষাং বৈ দেবানামৃভুমতাং তৃতীয়সবনং যদ্বৈশ্বদেবং দ্বাদশকপালং নিৰ্বপন্তি দেবতা এব তদ্ভাগিনীঃ কুন্তি সবনং দ্বাদশভিঃ উপ যন্তি প্রাজাপত্যং পশ্চমা লভস্তে যজ্ঞো বৈ প্রজাপতির্যজ্ঞস্যা ননুসৰ্গায়াভিবৰ্ত্ত ইতঃ ষষ্ম্যাসো ব্ৰহ্মসামং ভবতি ব্ৰহ্ম বা অভিবৰ্ত্তো ব্ৰহ্মণৈব তসূবর্গং লোকমভিবৰ্ত্তয়ন্তো যন্তি প্রতিকূলমিব হীতঃ সুবর্গো লোক ইন্দ্র তুং ন সূ ভর পিতা পুত্রেভ্যো যথা।। শিক্ষা নো অস্মিন্ পুরুহত যামনি জীবা জ্যোতিরশীমহত্যমুত আয়তাং যগ্মসো ব্ৰহ্মসামং ভবত্যয়ং বৈ লোকো জ্যোতিঃ প্রজা জ্যোতিরিমমেব তল্লোকং পশ্যন্তোহভিবদন্ত আ যন্তি৷৷ ৭৷
[সায়ণাচার্য বলেন–সপ্তমে তত্রৈব বিশেষহভিধীয়তে। অর্থাৎ-পূর্বোক্ত অনুবাকে গবাময়ন যাগের গুণবিকাররূপ যে উৎসর্গের বিষয় কথিত হয়েছে, এই সপ্তম অনুবাকে সেই বিষয়েই কিছু বিশেষ কথা কথিত হচ্ছে।]
মর্মার্থ–উৎসর্গপক্ষে যজ্ঞবিচ্ছেদ, অনুৎসর্গপক্ষে শ্বাসনিরোধ–এই দুটি দোষ মনে রেখে ব্রহ্মবাদীগণ গবাময়ন যাগের কর্তব্যাকর্তব্য বিচার করেছেন। এই ক্ষেত্রে ব্রহ্মবাদীগণের বিচারের বিষয় হলো প্রতি, অর্থাৎ একটিকে উল্লম্বন করে অপরটির সঙ্টন। এই সম্পর্কে অভিজ্ঞ জনগণ নিশ্চিতরূপে নির্দেশ করেন–প্রাজাপত্য (প্রজা বা অপত্য) পশু ইত্যাদির দ্বারা বিচ্ছেদের সমাধান সাধনযোগ্য হওয়ার নিমিত্ত শাসনিরোধ পরিহার পূর্বক উৎসর্জন পক্ষ গ্রহণীয়। (অতঃপর দিনবিশেষ, উৎসর্গের অনুষ্ঠান বিশেষের বিশদ বিবরণ, হবিঃ-প্রশংসা, ইত্যাদি কথিত হয়েছে) ॥৭॥
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- দেবানাং বা অন্তং জগুষামিয়িং বীৰ্য্যমপাক্রামত্তৎক্রোশেনাবারুন্ধত তৎক্রোশস্য ক্রোশত্বং যৎক্রোশেন, চাত্বালস্যান্তে ত্তবন্তি যজ্ঞস্যৈবান্তং গত্বেন্দ্ৰিয়ং বীৰ্য্যমব রুন্ধতে মন্ত্রস্যৰ্দ্ধাহহাবীয়স্যান্তে স্তবত্যগ্নিমেবোপদ্রষ্টারং কৃতৰ্দ্ধিমুপ যন্তি প্রজাপতেহৃদয়েন হবির্ধানেহন্তঃ স্তুবন্তি প্রেমাণমেবাসা গচ্ছত্তি শ্লোকেন পুরস্তাৎ সদসঃ ওবষ্যনুশ্লোকেন পশ্চাদ্যজ্ঞস্যৈবান্তং গত্বা শ্লোকভাজো ভবন্তি নবভিরধ্বযুরুদায়তি নব বৈ পুরুষে প্রাণাঃ প্রাণানেব যজমানেষু দধাতি সৰ্বা ঐন্দ্রিয়ো ভবন্তি প্রাণেম্বেবেন্দ্ৰিয়ং দধত্যপ্রতিহৃতাভিরুস্সায়তি তস্মাল পুরুষঃ সৰ্ব্বাণ্যন্যানি শীষ্ণোঙ্গানি প্রত্যচতি শির এব ন পঞ্চদশং পথন্তরং ভবতীন্দ্রিয়মেবাব রুন্ধতে সপ্তদশম বৃহদন্নাদ্যস্যাবরুদ্ধ্যা অথো বৈ তেন জায়ন্ত একবিংশং ভদ্রং দ্বিপদাসু প্রতিষ্ঠিত্যৈ পত্নয় উপ গায়ন্তি মিথুনত্বায় প্রজাত্যৈ প্রজাপতি প্রজা অসৃজত সোহকাময়তাহসামহং রাজ্যং পরীয়ামিতি তাসাং রাজনেনৈব রাজ্যং পৰ্য্যৈত্তদ্ৰাজনস্য রাজনত্বং যদ্ৰাজনং ভবতি প্রজানামেব অদ্যজমানা রাজাং পরি মন্তি পঞ্চবিংশং ভবতি প্রজাপতেঃ আপ্তৈা পঞ্চভিস্তন্তঃ স্তুবন্তি দেবলোকমেবাভি জয়ন্তি পঞ্চভিরাসী মনুষ্যলোকমেবাভি জয়ন্তি দশ সম্পদ্যন্তে দশাক্ষরা বিরাডম্নং বিড়বিরাজৈবান্নাদ্যমব রুন্ধতে পঞ্চধা বিনিষদ স্তুবন্তি পঞ্চ দিশো দিবে প্রতি তিষ্ঠত্যেককয়াহদত্ততয়া সমায়ন্তি দিভ্য এবান্নাদং সংরন্তি, তাভিরুগ্যাতাগায়তি দিভ্য এবান্নাদ্যমু সত্য তেজ আত্মন্ধধতে তম্মদেকঃ প্রাণঃ সৰ্বাণ্যঙ্গান্যবত্যথো যথা সুপর্ণ উৎপতিষ্যঞ্ছির উত্তমং কুরুত এবমেব দ্যজমানাঃ প্রজানামুত্তমা ভবত্যাসন্দীমুদ্গাতাহবরাহতি সাম্রাজ্যমেব গচ্ছন্তি প্লেখং হোতা নাকস্যৈব পৃষ্ঠং রোহন্তি কুচ্চাবধ্বষুব্রধস্যৈব বিষ্টপং গচ্ছন্ত্যেতাবন্তো বৈ দেবলোকাস্তেবে যথাপুৰ্ব্বং প্রতি তিষ্ঠ্যথো আক্রমণমেব তংসেতুং যজমানাঃ কুৰ্ব্বতে সুবর্গস্য লোস্য সমষ্ট্যৈ ॥৮৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন-তাব বিকৃতিং সমাপ্যাথ প্রকৃতাবেব গবাময়নে যন্মহাব্ৰতমস্তি তস্মিন্ননেনা নুবাকত্রয়েণ বিশেষাঃ কেচিদুচ্যন্তে। অর্থাৎ–অষ্টম হতে দশম অনুবাক পর্যন্ত তিনটি অনুবাকে গবাময়নে যে মহাব্রত আছে, সেগুলি কথিত হয়েছে। তারমধ্যে এই অষ্টম অনুবাকে সামবিশেষ উক্ত হয়েছে]
মর্মার্থ– পুরাকালে কোন সময়ে সত্রের সমাপ্তি প্রাপ্ত হওয়ার পর দেবতাগণ তাদের ইন্দ্রিয় এবং ইন্দ্রিয়সামর্থ্য অপক্রান্ত (গত) হয়েছিল। তখন দেবতাগণ ক্রোশ নামে আখ্যাত সামের দ্বারা পুনরায় তা প্রাপ্ত হন। কুশ ধাতু আহ্বানার্থক; সুতরাং এই ধাতু হতে উৎপন্ন হওয়ায় ক্রোশ শব্দে আহ্বানসাধন বোঝানো হয়েছে। সেই নিমিত্ত অপগত বীর্যের আহ্বানসাধনত্ব সম্পন্ন সামকে ক্রোশ, নামে অভিহিত করা হয়। সেই ক্রোশ নামে আখ্যাত সামের দ্বারা হোমকুণ্ডের নিকট (চাত্বালসমীপে) স্তুতি করণীয়। তাতে যজ্ঞসমাপ্তি প্রাপ্তির পর ইন্দ্রিয়সামর্থ্যের প্রাপ্তি ঘটে। (অতঃপর সত্রের ঋদ্ধিনামক সামান্তর, ভদ্র নামে আখ্যাত সামগান, ইত্যাদি কথিত হয়েছে) ॥৮॥
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- অর্কোণ বৈ সহস্রশঃ প্রজাপতিঃ প্রজা অসৃজত তাভ্য ইলান্দেনেরা নূতামরুন্ধ যদৰ্কং ভবতি প্রজা এব তদ্যজমানাঃ সৃজন্ত ইলাং ভবতি প্রজাভা এব সৃষ্টাভ্য ইরাং তামব রুন্ধতে তস্মাদ্যাং সমাং সত্রং সমৃদ্ধং ক্ষোধুকাস্তাং সমাং প্রজা ইং হ্যাঁসামুজ্জমাদদতে যাং সমাং বদ্ধমক্ষোধুকাস্তাং সমাং প্রজাঃ ন হ্যাঁসামিষমূৰ্জ্জু মাদদত উংক্রোদং কুৰ্ব্বতে যথা বন্ধাম্মুমুচানা উৎক্রোদং কুব্বত এবমেব তদ্যজমা নাদেব বন্ধাম্মসুচানা উৎপোদং কুৰ্ব্বতে ইমূৰ্জ্জুমাত্মধানা বাণঃ শততর্ভবতি শতায়ুঃ পুরুষঃ শতেন্দ্রিয় আয়ুষ্যেকেন্দ্রিয়ে প্রতি তিষ্ঠ্যাজিং ধাবন্ত্যনভি জিতস্যাভিজিত্যৈ দুন্দুভীৎ সমাঘুন্তি পরমা বা এষা বাগ্যা দুন্দুভৌ পরমামের বাচমব রুন্ধতে ভূমিদুন্দুভিমা ঘুন্তি যৈবেমাং বাক প্রবিষ্টা তামেবাব রুন্ধতেহথো ইমামেব জয়ন্তি সৰ্বা বাচো বদন্তি সৰ্বাসাং বাঁচামবরুদ্ধ্যা আর্জ্যে চৰ্ম্মন্ধ্যাযচ্ছেতে ইন্দ্রিয়স্যাবরুদ্ধ্যা আইন্যঃ ক্রোশতি প্রাণ্যঃ শংসতি স আক্রোশতি পুনাত্যেবৈনাৎস যঃ প্রশংসতি পুতেম্বেবান্নাদ্যং দধাতৃষিকৃতং চ বা এতে দেবকৃতং চ পূৰ্বৈৰ্মাসৈরব রুন্ধতে যতেচ্ছদাং স্যমানি ভবন্তুভয়স্যাবরুদ্ধ্যৈ যন্তি বা এতে মিথুনাদ্যে সম্বৎসরমুপযন্তৰ্বেদি মিথুনৌ সং ভবতস্তেনৈব মিথুনান্ন যন্তি ॥৯॥
[সায়ণাচার্য বলেন–নবমে শততন্তুবীণাদিকমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই নবম অনুবাকে গবাময়নের মহাব্রত সম্পর্কিত শততন্তু বীণা ইত্যাদি কথিত হয়েছে।]
মর্মার্থ- পুরাকালে প্রজাপতি অর্ক নামধেয় কোনও সামের দ্বারা বহুবিধ সহস্রসঙ্রূপ প্রজা সৃষ্টি করেন। ইলা নামধেয় সামান্তরের দ্বারা আপন সৃষ্ট প্রজাগণের নিমিত্ত পূর্ব-বিচ্ছিন্ন অন্ন পুনরায় অবিচ্ছেদে সম্পাদন করেন। সেইরকমে যজমানগণও ঐ দুই সামের দ্বারা প্রজা সৃষ্টি পূর্বক তাদের নিমিত্ত অন্ন সম্পাদন করেন। যে সত্রে সামের দ্বারা অন্ন সম্পাদিত হয়, সেই সম্বৎসরব্যাপী নিরন্তর সমৃদ্ধ সত্রে ক্ষুধিত প্রজাগণ সকল দিক হতে সমাগত হয়ে থাকে। সত্রানুষ্ঠাতা এইসকল প্রজাগণকে নানারকম অন্ন ও রস প্রদান করে থাকেন। যে সম্বৎসর-সত্রে ক্ষুধিত প্রজাগণকে ব্রীহি ইত্যাদি অন্ন এবং ক্ষীর ইত্যাদি রস প্রদান করা হয় না, সেই সম্বৎসর সত্রে প্রজাগণের আগমন ঘটে না।–সত্ৰ সমাপ্ত হলে সকল যজমানের পক্ষে সন্তুষ্ট হয়ে উৎক্ৰোদ করণীয়। (হর্ষের নিমিত্ত অতি উচ্চধ্বনিকে উৎক্রোদ বলা হয়)। যেমন লোকজগতে দীর্ঘকাল (চিরং) শৃঙ্খলে আবদ্ধ পুরুষ পরে বিমুক্ত (অর্থাৎ মুক্তিপ্রাপ্ত) হয়ে আনন্দে উচ্চধ্বনি উৎসারিত করে, সেইরকম এই যজমানবৃন্দ দীর্ঘকালব্যাপী অনুষ্ঠেয় সত্ররূপ দেববন্ধন দৈবকর্মের সাধনে সঙ্কল্পবদ্ধ অবস্থা) হতে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে (অর্থাৎ সত্রানুষ্ঠান সার্থকভাবে সম্পন্ন করে), সেই যজ্ঞের সামর্থ্যে স্বয়ং অন্ন ও রস লাভ পূর্বক আনন্দে উচ্চধ্বনি উৎসারিত করে থাকেন। তখন শততন্তু বীণা ইত্যাদি এবং দিকে দিকে স্থাপিত দুন্দুভিগুলি বাদিত হয়। শততন্তু বীণা শতায়ু (শতবৎসর আয়ুশালী) ও শতেন্দ্রিয় (শত ইন্দ্রিয়শালী) পুরুষের দ্যোতক এবং ঐ দুন্দুভিগুলির ধ্বনি সকল ধ্বনি অপেক্ষা উত্তম বা অতি উচ্চ; এগুলির বাদনের দ্বারা সভার (যজ্ঞসভায় সমবেত সকলের) মনোরঞ্জনযোগ্য পরম বাপটুতা প্রাপ্ত হওয়া যায়। (অতঃপর ভূমিদুন্দুভি, শঙ্খ ইত্যাদি নানা বাদ্যধ্বনি, ব্রাহ্মণ ও শুদ্রের মধ্যে চর্মের নিমিত্ত কলহ, আক্রোশ ও তার প্রশংসা, কিছু সামবিশেষের কথা, ব্রহ্মচারী-পুংশ্চলীর মিথুনীভাব ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে) ॥৯॥
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- চৰ্মাব ভিন্দন্তি পাশ্মনমেবৈষমব ভিস্তি মাহপ রাৎসীৰ্ম্মাহতি ব্যাৎসীরিত্যাহ সম্প্রত্যেবৈষাং পানমব ভিদকুন্তানাধিনিধায় দাস্যো মার্জালীয়ং পরি নৃত্যন্তি পদো নিগ্নতীরিদমুধুং গায়স্ত্যো মধু বৈ দেবানাং পরমময়াদ্যং পরমমেবান্নাদ্যমব রুন্ধতে পদো নি মুন্তি মহীয়ামেবৈষু দধতি ॥১০৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ দশমে দাসীনৃত্যমুচথে। অর্থাৎ–গবাময়নের মহাব্রত সম্পর্কিত এই দশম অনুবাকে দাসীনৃত্যের কথা বলা হয়েছে]
.
মর্মার্থ- চর্মবেধের (অর্থাৎ চর্ম বিদ্ধ করণের) দ্বারা যজমানগণের পাপসমূহের বিদারণ হয়। জলপূর্ণ কলসী মস্তকে ধারণ করে অগ্নির চারিদিকে দাসীগণ নৃত্য করে। (কিরকম দাসী? না,) নৃত্যকালে নৃত্যের তালে তালে দক্ষিণ পাদের দ্বারা ভূমিতে তাড়ন করে এবং মধুর সুরে গান করে। মধু হলো দেবতাগণের অত্যন্ত প্রিয় অন্নস্বরূপ; অতএব সেই গানের দ্বারা পরম অন্ন প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই পাদ-তাড়নায় যজমানগণের পূজা সম্পন্ন হয়। (চর্মবেধের পূর্বে বেধ-মন্ত্র উল্লিখিত আছে) ॥১০৷
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- পৃথিব্যৈ স্বাহাহন্তরিক্ষায় স্বাহা দিবে স্বাহা সংগপ্লাষ্যতে স্বাহা সংপ্লবমানায় স্বাহা সংতায় স্বাহা মেঘায়িষ্যতে স্বাহা মেঘায়তে স্বাহা মেঘিয় স্বাহা মেঘায় স্বাহা নীহারায় স্বাহা নিহাকায়ৈ স্বাহা প্রাসায় স্বাহা প্ৰচলাকায়ৈ স্বাহা বিদ্যোতিষ্যতে স্বাহা বিদ্যোমানায় স্বাহা সাম্বদ্যোমানায় স্বাহা স্তনয়িষ্যতে স্বাহা স্তনয়তে স্বাহোগ্ৰং স্তনয়তে স্বাহা বষিষ্যতে স্বাহা বর্ষতে স্বাহাইভিবৰ্ষতে স্বাহা পরিবৰ্ষতে স্বাহা সম্বৰ্ষতে স্বাহাইনুবৰ্ষতে স্বাহা শীকায়িষ্যতে স্বাহা শীকাযতে স্বাহা শীকিতায় স্বাহা প্রোষিষ্যতে স্বাহা প্ৰষ্ণতে স্বাহা পরিঞ্চতে স্বাহোগ্ৰহীষ্যতে স্বাহোগৃহ্নত স্বাহোগৃহীতায় স্বাহা বিপ্লোষ্যতে স্বাহা বিপ্লবমানায় স্বাহা বিপ্লতায় স্বাহাহত্যতে স্বাহাহতপতে স্বাহোমাতপতে স্বাহগর্ভঃ স্বাহা যজুর্ভঃ স্বাহা সামভ্যঃ স্বাহাহঙ্গিরোভ্যঃ স্বাহা বেদভ্যঃ স্বাহা গাথাভ্যঃ স্বাহা নারাশংসীভ্যঃ স্বাহা রৈভীভ্যঃ স্বাহা সৰ্ব্বম্মৈ স্বাহা ॥১১৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন-অথোত্তরেধনুবাকেশ্বমেধাঙ্গমা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-পরবর্তী অনুবাকগুলিতে অশ্বমেধের অঙ্গভূত মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে।]
মর্মার্থ– এই অনুবাকের পঞ্চাশটি মন্ত্রই অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত অন্নহোমের মন্ত্র ॥১১৷৷
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- দত্বতে স্বাহাহদন্তকায় স্বাহা প্রাণিনে স্বাহাইপ্রাণায় স্বাহা মুখবতে স্বাহাহমুখায় স্বাহা নাসিকবতে স্বাহাহনাসিকায় স্বাহাহক্ষতে স্বাহাইনক্ষিকায় স্বাহা কর্ণিনে স্বাহাহকর্ণকায় স্বাহা শীৰ্ষতে স্বাহাহশীর্ষকায় স্বাহা পদ্বতে স্বাহাইপাদকায় স্বাহা প্রাণতে স্বাহাইপ্রাণতে স্বাহা বদতে স্বাহাইদতে স্বাহা পশ্যতে স্বাহাহপশ্যতে স্বাহা শৃথতে স্বাহাহশৃথতে স্বাহা মনস্বিনে স্বাহা অমনসে স্বাহা রেতস্বিনে স্বাহাইরেতস্কায় স্বাহা প্রজাভ্যঃ স্বাহা প্রজননায় স্বাহা নোমবতে স্বাহাইলো মকায় স্বাহা ত্বচে স্বাহাহত্বকায় স্বাহা চৰ্ম্মন্থতে স্বাহাহচর্মকায় স্বাহা লোহিতবতে স্বাহাহলোহিতায় স্বাহা মাংসম্বতে স্বাহাহমাংসকায় স্বাহা স্নাবভ্যঃ স্বাহাহবকায় স্বাহাইস্থম্বতে স্বাহাহনস্থায় স্বাহা মজ্জম্বতে স্বাহাহমজ্জকায় স্বাহাহঙ্গিনে স্বাহাহনঙ্গায় স্বাহাত্মনে স্বাহাহনত্মানে স্বাহা সৰ্বম্মৈ স্বাহা ॥১২৷৷
মর্মার্থ– এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত শরীর-হোমমন্ত্র ॥১২।
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- কস্তুা যুনক্তি সত্বা যন বিষ্ণুত্ত্বা যুন্য যজ্ঞস্যৰ্দ্ধৈ মহাং সন্নত্যা অমুষ্মৈ কামায়য়ুষে ত্বা প্রণায় ত্বাহপানায় ত্বা ব্যানায় ত্বা বুষ্ট্যৈ ত্ব রষ্যৈ রাধসে ত্বা ঘোযায় ত্বা পোয় ত্বাহরাদঘোষায় ত্বা প্রচুত্যৈ ত্বা ॥১৩৷৷
মর্মার্থ- এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত পরিধি-মন্ত্র নামে অভিহিত ॥১৩৷৷
.
চতুর্দশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নয়ে গায়ত্রায় ত্রিবৃতে রাথন্তরায় বাসায়ান্টাকপাল ইন্দ্রায় ত্ৰৈষ্ঠুভায় পঞ্চদশায় বাহায় গ্রৈম্মায়ৈকাদশাকপালো বিশ্বেতভা দেবেভ্যো জাগতেভ্যঃ সপ্তদশেভ্যো বৈরূপেভ্যো বার্ষিকেভ্যো স্বাদশকপালো মিত্রাবরুণাভ্যামানুষ্ঠু ভাভ্যামেকবিংশাভ্যাং বৈরাজাভ্যাং শারদাভ্যাং পস্যা বৃহস্পতয়ে পাঙক্তায় ত্ৰিণবায় শারায় হৈমন্ত্রিকায় চরুঃ সবিত্র আতিচ্ছন্দসায় ত্রয়স্ত্রিংশায় রৈবতায় শৈশিরায় দ্বাদশকপালোহদিতে বিষ্ণুপত্নৈ চরুগ্নয়ে বৈশ্বানরায় দ্বাদশ কপালোহনুমত্যৈ চরুঃ কায় এককপালঃ ॥১৪৷
মর্মার্থ– এই অনুবাকের মন্ত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত ছয়টি হবিঃ গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দের স্তোমের ও সামের দ্বারা দেবতার উদ্দেশে সমর্পিত হয় ॥১৪।
.
পঞ্চদশ অনুবাক
মন্ত্র- যো বা অগ্নাবগ্নিঃ প্রহ্নিয়তে যশ্চ সোমো রাজা তয়োরেষ আতিথ্যং যদষ্মীযোমীয়োহথৈষ রুদ্ৰো যশ্চীয়তে যৎসঞ্চিতেইগ্নাবেতানি হবীংযি ন নিৰ্বপেদেষ এব রুদ্রোহশান্ত উপোয় প্রজাং পশুন্যজমানস্যাভি মন্যেত যৎসফিতেদাবেনিহীংষি নির্বপতি ভাগধেয়েনৈৰৈনং শময়তি নাস্য রুদ্রোহশান্তঃ উপোয় প্রজা পশূনভি মন্যতে দশ হবীংষি ভবন্তি নব বৈ পুরুষে প্রাণা নাভির্দশমী প্রাণানে যজমানে দধাত্যথো দশাক্ষরা বিরাডম্নং বিরাডুবি রাজ্যেবান্নাদ্যে প্রতি তিষ্ঠতৃতুভিব্বা এষ ছন্দোভিঃ স্তোমৈঃ পৃষ্ঠেশ্চেতব্য ইত্যাহূর্যদেতানি হবীংষি নির্বপতৃতুভিরেবৈনং ছন্দোভিঃ স্তোমৈঃ পৃষ্ঠেশ্চিনুতে দিশঃ সুষুবাণেন অভিজিত্যা ইত্যাহুর্যদেতানি হবীংষি নির্বপতি দিশামভিজিত্যা এতয়া বা ইন্দ্রং দেবা অজয়স্তম্মাদিন্দ্রসব এতয়া মনুং মনুষ্যাস্তস্মানুসবো যথেন্দ্রো দেবানাং যথা মনুৰ্ম্মনুষ্যাণামেবং ভবতি য এবং বিদ্বানেতয়েষ্ট্যা যজতে দিগ্বতীঃ পুরোনুবাক্যা ভবন্তি সৰ্বাং দিশামতিজিত্যৈ ॥১৫৷
মর্মার্থ– এই অনুবাকের মন্ত্রে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত পাঠপ্রাপ্ত হবির সংখ্যা ও দেবতা বিশেষের প্রশংসা করা হয়েছে ॥১৫৷
.
ষোড়শ অনুবাক
মন্ত্র- যঃ প্রাণততা নিমিষতে মহিত্বৈক ইদ্রাজা জগতত বভূব। য ঈশে অস্য দ্বিপদশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। উপযামগৃহীতোহসি প্রজাপতয়ে ত্বা জুষ্টং গৃহ্নামি তস্য তে দৌৰ্ম্মহিমা নক্ষত্রাণি রূপমাদিত্যস্তে তেজস্তস্মৈ ত্বা মহিম্নে প্রজাপতয়ে স্বাহা ॥১৬৷
মর্মার্থ- অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত এই অনুবাকে মহিমা নামে আখ্যাত গ্রহের মন্ত্র কথিত হয়েছে। ১৬।
.
সপ্তদশ অনুবাক
মন্ত্র- য আত্মদা বলদা যস্য বিশ্ব উপিসতে প্রশিষং যস্য দেবাঃ। যস্য ছায়ামৃতং যস্য মৃত্যুঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। উপযামগৃহীতোহসি প্রজাপতয়ে ত্বা জুষ্টং গৃহ্নামি তস্য তে পৃথিবী মহিমৌষধয়ো বনস্পতয়ো রূপমগ্নিস্তে তেজস্তস্মৈ ত্বা মাহিম্নে প্রজাপতয়ে স্বাহা ॥১৭ মর্মার্থ-এই অনুবাকে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত দ্বিতীয় গ্রহের মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে ॥১৭।
.
অষ্টাদশ অনুবাক
অ ব্রাহ্মন ব্ৰহ্মণো ব্ৰহ্মবৰ্চসী জায়মাহস্মিন রাষ্ট্রে রাজন্য ইযব্যঃ শুরো মহারথো জায়তাং দোঞ্জী ধেনুৰ্বোঢ়াহনানাশুঃ সপ্তিঃ পুরান্ধির্যোষা জিষ্ণু রথেষ্ঠাঃ সভয়ো যুবাহস্য যজমানস্য বীরো জায়তাং নিকামেনিকামে নঃ পজ্জনন্যা বর্ষ ফলিন্যো ন ওষধয়ঃ পচ্যাং যোগক্ষেমমা নঃ কল্পতাম্ ॥১৮
মর্মার্থ– এই অনুবাকে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত অন্ন-হোমের মন্ত্রগুলি ব্যক্ত হয়েছে ॥ ১৮।
.
ঊনবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- আহাজী পৃথিবীমগ্নিং যুজমকৃত ৰাজ্যৰ্বাহক্ৰাজ্যন্তরিক্ষং বায়ুং যুজমকৃত বাজ্যৰ্বা দ্যাং বাজাংস্ত সূৰ্য্যং যুজমকৃত বাজ্যৰ্বাহগ্নিস্তে বাজিঙনু ত্বইরভে স্বস্তি মা সং পারয় বায়ুস্তে বাজিঙনু ত্বাহরভে স্বস্তি মা সম পরায়াহদিত্যস্তে বাজিঙনু ত্বাহরভে স্বস্তি মা সং পারয় প্রাণধৃগসি প্রাণং মে দহ ব্যানভৃগসি ব্যানং মে দৃহাপানধৃগস্যপিনং মে দস্ব চক্ষুরসি চক্ষুৰ্ম্ময়ি ধেহি শ্রোমসি শ্রোত্ৰং ময়ি ধোয়ুরস্যায়ুৰ্ম্ময়িধেহি ॥১৯৷
মর্মার্থ–এই অনুবাকে অশ্বানুমন্ত্র কথিত হয়েছে ॥১৯৷
.
বিংশ অনুবাক
মন্ত্র- জজ্ঞি বীজং বা পর্জন্যঃ পক্তা সস্যং সুপিপ্পলা ওষধয়ঃ স্বধিচরণেয়ং সুপসদ নোহগ্নিঃ স্বধ্যক্ষমন্তরিক্ষং সুপাবঃ পবমানঃ সুপস্তানা দৌঃ শিবমসৌ তপন্যথাপূর্ব মহোরাত্রে পঞ্চদশিনোহৰ্দ্ধ মাসাস্ত্রিংশনো মাসাঃ কুপ্তা ঋতবঃ শান্তঃ সম্বৎসর ॥২০৷
মর্মার্থ–এই অনুবাকে অন্য অন্নহোমমন্ত্র কথিত হয়েছে ॥ ২০৷৷
.
একবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- আগ্নেয়োহাকপালঃ সৌম্যশ্চঃ সাবিত্রোহাকপালঃ পৌষ্ণশ্চরু রৌদ্রশ্চান্নয়ে বৈশ্বানরায় দ্বাদশকপালো মৃগাখরে যদি নাহগচ্ছেদগয়েহংহো মুচেষ্টাকপালঃ সৌর্যং পয়ো বায়ব্য আজ্যভাগঃ ॥ ২১৷৷
মর্মার্থ–এই অনুবাকে অশ্বের রোগ ইত্যাদি নিমিত্ত প্রায়শ্চিত্তবিধি কথিত হয়েছে । ২১।
.
দ্বাবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নয়েহংহোমচেষ্টাকোল ইন্দ্রায়াংহোমুচ একাদশকপালো মিত্রাবরুণ ভ্যামাগোমুগভ্যাং পয়সা বায়োসাবিত্র আগোমুগভ্যাংচরুশ্বিভ্যা মাগোমুভ্যাংধানা মরুদ্যা এনোমুভ্যঃ সপ্তকপালো বিশ্বেতভা দেবেভ্য এনোমুগভ্যো দ্বাদশকপালোহনুমত্যৈ চরুগ্নয়ে বৈশ্বানরায় দ্বাদশকপালো দ্যাবাপৃথিবীভ্যামংহোমুগভ্যাং দিকপালঃ ৷৷ ২২৷৷
মর্মার্থ– এই অনুবাকের মন্ত্রগুলিও পূর্ববর্তী অনুবাকের মন্ত্রের অনুরূপ ॥২২।
.
ত্রয়োবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নয়ে সমনমৎ পৃথিব্যৈ সমনমদ্যথাহগ্নিঃ পৃথিব্যা সমনমদেবং মহং ভদ্রাঃ সন্নতয়ঃ সন্নমস্তু বায়বে সমনমদন্তরিক্ষায় সমনমদ্যথা বায়ুরন্তরিক্ষেণ সূর্যায় সমনমদ্দিবে সমনমদ্যথা সূৰ্য্যে দিবা চন্দ্রমসে সমনমগ্নক্ষত্রেভ্যঃ সমনমদ্যথা চন্দ্রমা নক্ষত্রৰ্ব্বরুণায় সমনমদঃ সমনমদ্যথা বরুণোহদ্ভিঃ সান্নে সমনমচে সমনমদ্যথা সামৰ্চা ব্ৰহ্মণে সমনমৎ ক্ষত্রায় সমনদ্যথা ব্ৰহ্ম ক্ষত্রেণ রাজ্ঞে সমনমদ্বিশে সমনমদ্যথা রাজা বিশা রথায় সমনম-দশ্বেভ্যঃ সমনমদ্যথা রতোহশ্বৈঃ প্রজাপতয়ে সমনমস্তুতেভ্যঃ সমনমদ্যথা প্রজাপতিতৈঃ সমনমদেবং মহং ভদ্রাঃ সন্নতয়ঃ সন্নমস্তু৷ ২৩
মর্মার্থ–এই অনুবাকে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পর্কিত সন্নতি হোমের মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে ॥ ২৩।
.
চতুর্বিশ অনুবাক
মন্ত্র- যে তে পন্থানঃ সবিতঃ পূর্ব্যাসোহরেণবো বিততা অন্তরিক্ষে। তেভির্নো অদ্য পথিভিঃ সুগেভী রক্ষা চ নো অধি চ দেব ধ্রুহি। নমোহগ্নয়ে পৃথিবিক্ষিতে লোকতে লোমস্মৈ যজমানায় দেহি নমো বায়বেহন্তরিক্ষক্ষিতে লোকশৃতে লোকমস্মৈ যজমানায় দেহি নমঃ সূৰ্য্যায় দিবিক্ষিতে লোকশৃতে লোকমস্মৈ যজমানায় দেহি ॥২৪৷৷
মর্মার্থ—এই অনুবাকে যজ্ঞের সাফল্য এবং যজমানের মঙ্গলের নিমিত্ত প্রার্থনা করা হয়েছে।–হে সবিত দেব, আপনার সম্বন্ধি পূর্বসিদ্ধ অন্তরিক্ষলোকে যে বিস্তৃত ধুলিরহিত মাগসমূহ আছে, সুষ্ঠু গমনযোগ্য সেই মার্গ অবলম্বন করে আমাদের এই যজ্ঞকর্মে আগত হয়ে আমাদের রক্ষা করুন। সেইভাবে, দেবতাগণের সম্মুখে আমাদের ও যজমানের বিষয়ে অধিকরূপে বিবৃত করুন (কথয়)।–ভূমিবাসী, লোকের প্রীতিকারক অগ্নিকে নমস্কার করছি। (হে অগ্নিদেব!) আপনি এই যজমানকে উত্তম স্থান প্রদান করুন। অন্তরিক্ষবাসী, লোকের প্রীতিকারক বায়ুকে নমস্কার করছি। আপনি এই যজমানকে উত্তম স্থান প্রদান করুন। দ্যুলোকবাসী, লোকের প্রীতিকারক সূর্যকে নমস্কার করছি। আপনি এই যজমানকে উত্তম স্থান প্রদান করুন ॥২৪৷৷
.
পঞ্চবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- যো বা অস্বস্য মেধ্যস্য শিরো বেদ শীর্ষাশ্বাম্মেধ্যো ভবত্যুষা বা অশ্বস্য মেধ্যস্য শিরঃ সূৰ্য্যশ্চক্ষুবান্তঃ প্রাণশ্চন্দ্ৰমাঃ শ্রোত্রং দিশঃ পাদা অবান্তরদিশাঃ পর্শবোহহোরাত্রে নিমেষোর্ধমাসাঃ পর্বণি মাসাঃ সন্ধানান্তবোহঙ্গানি সম্বৎসর আত্মা রশ্ময়ঃ কেশা নক্ষত্রাণি রুপং তারকা অস্থানি নভো মাংসান্যোষধয়ো লোমানি বনস্পতয়ো বালা অগ্নিমুখং বৈশ্বানররা ব্যাত্তম সমুদ্র উদরমন্তরিক্ষং পায়ুৰ্দাবাপৃথিবী আণ্ডেী গ্রাবা শেপঃ সোমমা রেতো যজুঞ্জভ্যতে তদ্বি দ্যোততে যদ্বিধূনুতে তৎ স্তনয়তি যন্মেহতি তদ্বতি বাগেবাস্য বাগহব্বা অশ্বস্য জায়মানস্য মহিমা পুরস্তাজ্জায়তে রাত্রিরেনং মহিমা পশ্চাদন জায়ত এতৌ বৈ মহিমানাবশ্বমভিঃ সং বভূবতুয়ো দেবানবহদৰ্বাহসুরাহ্মজী গন্ধৰ্বানশ্বে মনুষ্যাৎসমুদ্ৰো বা অশ্বস্য যোনিঃ সমুদ্ৰো বন্ধুঃ ২৫৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–অথান্তিমেহনুবাকে সর্বজগদাত্মকত্বেনাশ্ব ভুয়তে। অথবা বিরাড়পেণাশ্বেপাসন প্রতিপাদকোহয়মনুবাকঃ প্রকরণাদুকৃষ্যোপনিষদাদৌ দ্রষ্টব্যঃ। অর্থাৎ–এই শেষ অনুবাকে সর্ব জগতের আত্মভূত (স্বরূপ) অশ্বের স্তুতি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিরাট্ররূপে (বিশেষভাবে ব্রহ্মরূপে রাজমান) অশ্বের উপাসনা প্রতিপাদক এই অনুবাকটি বিশিষ্ট উপনিষদ ইত্যাদিতে দ্রষ্টব্য]
মর্মার্থ–যে মনুষ্য অশ্বমেধের যোগ্য এই অশ্বের শির প্রভৃতি অবয়বভূত ঊষাকাল ইত্যাদিরূপে উপাসনা করেন (উপাস্তে), তিনি শির প্রভৃতির ন্যায় বিরাট অবয়বযুক্ত পবিত্র (মেধ্য) যাগফলের যোগ্য হয়ে থাকেন; এবং যাগানুষ্ঠানের ও উপাসনার সমান ফল প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। (পঞ্চম কাণ্ডের তৃতীয় প্রপাঠকের দ্বাদশ অনুবাকে ব্রহ্মহত্যা ইত্যাদি সকল উপপাতক ও মহাপাতকের প্রায়শ্চিত্ত রূপে অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে)। অতঃপর অশ্বের কোন অবয়বে ব্রহ্মরূপী বিরাটের কোন্ অবয়ব ধ্যান কর্তব্য (ধ্যাতব্য) তা সবই বলা হচ্ছে।–মেধ্য অশ্বের যে শির, তা উষাকালরূপ; সেই অশ্বের যে চক্ষু তা সূর্যরূপ; তার যা প্রাণ, তা হলো বাহ্য বায়ু; তার যা শ্রোত্র, তা হলো চন্দ্রমা; তার যা পাদ তা হলো পূর্ব দিক; তার পার্শ্বের যে অস্থিবিশেষ, সেগুলি আগ্নেয় ইত্যাদি (অর্থাৎ ঈশান, নৈঋত, অগ্নি, বায়ু) সামান্য দিমূহ। তার যা উন্মেষের সাথে নিমেষ (অর্থাৎ নেত্র-উন্মীলনের ও নেত্ৰ-মুদ্রণের কাল) এই উভয়ই দিন ও রাত্র; তার হস্ত পদ ইত্যাদিগত যে সকল পর্ব (অর্থাৎ দেহসন্ধি বা গাঁট) তা শুক্ল বা কৃষ্ণপক্ষ সমন্বিত অর্ধমাস (অর্থাৎ পুর্ণিমা বা অমাবস্যার কাল); এবং তার দেহসন্ধির যে স্থলগুলি তা চৈত্র ইত্যাদি মাস; তার যে খুর ইত্যাদি অঙ্গসমুহের উল্লেখ হয়নি (অনুক্ত), সেইগুলি বসন্ত ইত্যাদি ঋতু; তার যে মধ্যদেহ, তা সম্বৎসরকাল; তার যে কেশসমূহ, তা সূর্যরশ্মি। এই অশ্বের যে ভাস্বর রূপ, তা কৃত্তিকা ইত্যাদি নক্ষত্রসমূহ; তার অঙ্গের যে সকল স্থান অনুক্ত হয়েছে, বৃহস্পতি-শুক্র-ধ্রুব ইত্যাদি প্রৌঢ় তারকা; তার অঙ্গস্থ যে মাংসখণ্ডসমূহ, তা আকাশ; তার যে ক্ষুদ্র লোমসমূহ, তা ওষধী; তার পুচ্ছগত যে দীর্ঘকেশসমূহ, তা বনস্পতি; তার যে মুখ, তা লোকপ্রসিদ্ধ অগ্নি; তার মুখের যে বিদারণ, তা বৈশ্বানর নামক দেবতা বিশেষ; তার যে উদর, তা সমুদ্র;তার যে পায়ু, তা অন্তরিক্ষ; তার যে অণ্ড, তা দ্যাবাপৃথিবী, তার যে শিশ্ন (লিঙ্গ), তা পর্বত; তার যে রেত; তা সোমরস; তার যে গাত্রভঙ্গ, তা বিদ্যুৎ এবং তার যে সশব্দে শরীর-কম্পন্ন, তা সেই বিদ্যুতের গর্জন; তার যে মূত্র, তা বৃষ্টি; তার হ্রেষা বা শব্দরূপ যে বাক্, তা বেদরূপ বাক্য।-যজ্ঞে প্রযুজ্যমান অশ্বের সংজ্ঞপনের (অর্থাৎ বধের) পূর্বে মহিমা নামক যে রাজতগ্রহ, তা এই দিনরূপ (অহরেব) এবং সংজ্ঞপনের পরে যে মহিমা নামক সুবর্ণগ্রহ, তা রাত্রি। এই উভয় মহিমা-গ্রহ অশ্বের সংজ্ঞপনের পূর্বে ও পরে ব্যবস্থিত। হয়, অর্বা, বাজী, অশ্ব–এইরকম গৌণ জাতিবিশেষরূপে (অর্থাৎ নামযুক্ত হয়ে) এ দেবতা, অসুর, গন্ধর্ব, মনুষ্য ইত্যাদিকে বহন করে থাকে। এইরকম এই বিরাট্রপ অশ্বের সৃষ্টিস্থান হলো সমুদ্র। সম্যক্রপে যা হতে জগৎ উৎপন্ন, তা হলো সমুদ্র; এবং সেই সমুদ্রই পরমাত্মা। পরমাত্মা ব্যতীত অন্য কোথা হতে এই বিরাটের (অর্থাৎ অশ্বের) উৎপত্তি হতে পারে না (নাহ্যন্যস্মৃদয়ং বিরাডুৎপমহতি)। (এই অশ্ব এই জগতের স্থিতির কারণ–এটাই অর্থ)। এইভাবে যাঁরা উপাসনা করেন, পাপক্ষয়ের দ্বারা তারা বিরাটরূপকে প্রাপ্ত হন। এই নিমিত্তই শ্রুতিতে বলা হয়েছে–তং যথা যথোপিসতে তথৈব ভবতি। এবং এই বিরাটপ্রাপ্তি হলো ক্রমমুক্তির হেতু। তত্র (অর্থাৎ এই বিরাট পুরুষে) জ্ঞানের উৎপত্তি হলে জীব মুক্তি লাভ করে থাকে। ২৫৷৷
–সপ্তম কাণ্ড সমাপ্ত —
(সায়ণাচার্য কৃত ভাষ্যাবলম্বনে কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয়সংহিতা সমাপ্ত)