৭. ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের পরিচয়

সপ্তম অধ্যায় – ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহের পরিচয়

১. কেল্‌টিক

কেল্‌টিক শাখার ভাষা একদা সমগ্র পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপে বিশেষ প্রবল ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে ইটালিক এবং জার্মানিক ভাষার দ্বারা কোণঠাসা হইতে হইতে এখন লুপ্তপ্রায় হইয়া আসিয়াছে। এখন জীবিত কেল্‌টিক ভাষাগুলির মধ্যে আয়ার্লাণ্ডের ভাষা আইরিশ প্রধান। আইরিশের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতাব্দের প্রত্নলিপিতে এবং অষ্টম শতাব্দে লিখিত কতিপয় গ্রন্থে।

কেল্‌টিক শাখার সহিত ইটালিক শাখার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সম্ভবত এই দুইটি শাখা মূলভাষা হইতে স্বতন্ত্রভাবে বহির্গত হয় নাই, একজোড়ে অঙ্কুরিত হইয়া পরে দুই ভাষায় পরিণত হইয়াছিল। এই ভাবিয়া কোনো কোনো ভাষাতাত্ত্বিক কেল্‌টিক ও ইটালিক ভাষাকে মূলভাষার দুই স্বতন্ত্র শাখা না ধরিয়া ইটালো-কেল্‌টিক বলিয়া একটিমাত্র শাখা কল্পনা করেন॥

২. ইটালিক

লাটিনের কথা ছাড়িয়া দিলে ইটালিক শাখার দুইটি লুপ্ত প্রাচীন ভাষার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে, ওস্‌কান্‌ (Oscan) এবং উম্‌ব্রিয়ান (Umbrian)। উম্‌ব্রিয়ানের নিদর্শন যৎকিঞ্চিৎ মিলিয়াছে। ওস্‌কানে লেখা ছোট ছোট প্রত্নলিপি (খ্রীস্টপূর্ব প্রথম দুই শতাব্দে) অনেকগুলি পাওয়া গিয়াছে। গ্রীকের মতো ওস্‌কান-উম্‌ব্রিয়ানেও মূলভাষার কণ্ঠৌষ্ঠ্য ক-বর্গ প-বর্গে পরিণত হইয়াছিল। যেমন, *qwis > ওস্‌কান পিস্‌, উম্‌ব্রিয়ান পিসি, কিন্তু লাটিন কিস।

লাটিন আসলে ছিল ইতালীর লাটিউম (Latium) প্রদেশের ভাষা, কিন্তু লাটিউমের কেন্দ্রীয় নগর রোমের উপভাষাটি প্রধান হইয়া উঠিয়াছিল বলিয়া লাটিনকে রোমের ভাষা বলাই সঙ্গত। লাটিনের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দে। খ্রীস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দ হইতে লাটিনের চর্চা চলিতে থাকে এবং ইহাতে বেশ বড়দরের সাহিত্য সৃষ্ট হয়। আমাদের দেশে সংস্কৃতের মতো সমগ্র ইউরোপে লাটিন ঊনবিংশ শতাব্দের মধ্যভাগ অবধি পণ্ডিত-ধর্মাচার্যদের ব্যবহার্য লেখাপড়ার প্রধান ভাষারূপে প্রচলিত ছিল। রোমক সাম্রাজ্যের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে লাটিন ইউরোপে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ অংশে ছড়াইয়া পড়ে এবং সেইসব দেশের কথ্যভাষাকে (—প্রধানত কেল্‌টিক—) দূর করিয়া একচ্ছত্র হইয়া উঠে। লাটিনের এই বিভিন্ন স্থানীয় কথ্য রূপগুলি হইতেই আধুনিক ইটালিক বা রোমান্‌স্‌ (Romance) ভাষাগুলির উদ্ভব হইয়াছে। এগুলির মধ্যে প্রধান হইয়াছে—খাস ইটালিতে ইটালীয়, ফ্রান্সে ফরাসী, পোর্তুগালে পোর্তুগীস, স্পেনে স্পেনীয় ও কাতালান, রুমানিয়ায় রুমানীয় এবং সুইট্‌জারল্যাণ্ডে রেটোরোমেক॥

৩. জার্মানিক

জার্মানিক শাখায় ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষার স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনগুলি পরিবর্তিত হইয়াছিল। এই পরিবর্তনের নিয়ম যাকোব গ্রিম (Jacob Grimm) প্রথমে সূত্রাকারে প্রদর্শন করেন। সেই হইতে জার্মানিক ভাষার এই ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম গ্রিমের সূত্র (Grimm’s Law) নামে পরিচিত হইয়া আসিতেছে। নিয়মটি এই:— মূল ভাষার বর্গের চতুর্থ তৃতীয় এবং প্রথম ধ্বনি জার্মানিক শাখায় যথাক্রমে বর্গের তৃতীয় প্রথম এবং দ্বিতীয় (উষ্ম) ধ্বনিতে পরিণত হইয়াছে। দ্বিতীয় বর্গের (সম্ভবত তৃতীয় বর্গেরও) ধ্বনিগুলি স্পৃষ্ট নয়, উষ্ম। যেমন, *পেকু (*image > গ ফেখু (faihu), ইং ফী। *দ্বে > গ ট্বা (twa), ইং টু। *ভেরো (*bherō) > গ বেরা (baira) ইং বেয়ার্‌। *দোন্‌ত (*dont), * দেন্‌ত (*dent) > ইং টুথ্‌। * ঘোন্‌সো (*ghonso) > ইং গূজ্‌। *ধে (*dhē) ধাতু> ইং ডু।

গ্রিমের সূত্র দ্বারা জার্মানিক শাখার মূলভাষায় স্পষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনের মোটামুটি ব্যাখ্যা মিলিলেও বিস্তর ব্যতিক্রম রহিয়া যায়। অনেককাল পরে গ্র্যাস্‌ম্যান (W. Grassmann) ও বের্‌নের্‌ (K. Verner) তাহার মধ্যে অনেকগুলির মীমাংসা করিয়া দেন। গ্র্যাস্‌ম্যান্ দেখাইলেন যে সং বন্ধ্‌ = ইং বাইণ্ড (bind) ইত্যাদিতে যে ব্যতিক্রম দেখা যাইতেছে তাহা বিষমীভবনের ফলে। সংস্কৃতভাষায় প্রাপ্ত ব্যঞ্জনধ্বনির সহিত মূলভাষার ধ্বনিকে অভিন্ন মনে করাতেই এখানে গরমিল ঠেকিতেছে। সং বন্ধ্‌ ধাতু মূলভাষায় ছিল *ভেন্‌ধ্‌ *বেন্‌ধ নয়। সুতরাং মূলভাষার *ভেনধ্‌ হইতে ইং বাইণ্ড্‌ (bind) হওয়া গ্রিমের সূত্রেই সিদ্ধ হয়। গ্র্যাস্‌ম্যানের আবিষ্কৃত ধ্বনিসূত্রের দ্বারা এইভাবে কতকগুলি আপাত ব্যাতিক্রমের মীমাংসা হইয়া গেল। গ্র্যাস্‌ম্যানের সূত্র এই:—মূলভাষার কোনো পদে পাশাপাশি দুই অক্ষরে মহাপ্রাণ (aspirate) ধ্বনি থাকিলে তাহার মধ্যে একটি (প্রায়ই প্রথমটি) গ্রীকে ও আর্যশাখায় অল্পপ্রাণ (non-aspirate) ধ্বনিতে পরিবর্তিত হইয়াছে। যেমন *ভেন্‌ধ (*bheudhe->সং বনধ্‌ গ্ৰী পেন্‌থ্‌। *ভেউধ্‌ (*bhendhē->সং বোধ্‌, গ্রী পেউথ; *ধুঘতের্‌ (*image) > সং দুহিতা, গ্রী থুগতের্‌ ইত্যাদি। (গ্রীকে মূলভাষার চতুর্থ বর্ণ আগেই দ্বিতীয় বর্ণে পরিণত হইয়াছিল।)

বাকি যে সব ব্যতিক্রম রহিয়া গেল, তাহার অধিকাংশ ব্যাখ্যাত হইল বের্‌নের কর্তৃক আবিষ্কৃত ধ্বনিপরিবর্তন-সূত্রের সাহায্যে। বের্‌নের সূত্র এই:— মূলভাষায় পদটি একাক্ষর না হইলে ব্যঞ্জনধ্বনির অব্যবহিত পূর্ববর্তী অক্ষরে স্বর (accent) না থাকিলে বর্ণের প্রথম ধ্বনি ও ‘স’ (s) জার্মানিক শাখায় যথাক্রমে বর্গের তৃতীয় ধ্বনিতে এবং জ-কারে পরিণত হইয়াছে। যেমন, *imagelutos গ্রী ক্লুতোস, সং শ্রুতস্‌) > প্রাচীন ইং খ্‌লুদ (hlud), ইং লাউড। *imagemtom > গ খুন্দ্‌ image, ইং হনড্রেড। *imageasá (সং *শস > শশ) > ইং হেয়র্‌ (*haza হইতে)। *bhéronto> গ বেরন্দ্‌ ইত্যাদি।

জার্মানিক শাখার ভাষাগুলি তিনটি উপশাখার অন্তর্গত— (১) পূর্ব জার্মানিক (২) উত্তর জার্মানিক, এবং (৩) পশ্চিম জার্মানিক। পূর্ব জার্মানিক এখন বিলুপ্ত। ইহার অন্যতম প্রাচীন ভাষা গোথিক; ইহাতে বাইবেলের কিয়দংশের অনুবাদ পাওয়া গিয়াছে। বুল্‌ফিলা (Wulfila) বা উল্‌ফিলাস্‌ (Ulfilas) নামক ধর্মাচার্য খ্রীস্টীয় চতুর্থ শতাব্দে এই অনুবাদ করিয়াছিলেন। এই গোথিক বাইবেলই জার্মানিক শাখায় প্রাপ্ত প্রাচীনতম এবং প্রধান রচনা। নরওয়ে সুইডেন ও আইস্‌ল্যাণ্ডের ভাষা উত্তর জার্মানিক উপশাখার অন্তর্গত। জার্মানিক জাতির পৌরাণিক কাহিনী আইস্‌ল্যাণ্ডের ভাষায় ‘এড্‌ডা’ (Edda) নামক সংহিতায় সংকলিত আছে। পশ্চিম জার্মানিক উপশাখার ভাষার মধ্যে প্রধান হইতেছে ইংরেজী জার্মান ও ওলন্দাজ। ব্রিটেনে প্রথম কেল্‌টিক শাখার ভাষা প্রচলিত ছিল। খ্রীস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দে জার্মানিক জাতির অন্তর্ভুক্ত আঙ্গ্‌ল্‌ স্যাকসন ও য়ুট উপজাতিরা সেখানে গিয়া উপনিবিষ্ট হয়। ইহাদের ব্যবহৃত জার্মানিক শাখার উপভাষাগুলি ব্রিটেনে কেল্‌টিক ভাষাকে স্থানচ্যুত করে। ইংরেজী ভাষার নিদর্শন সপ্তম শতাব্দ হইতে মিলিতেছে। সাহিত্য-গৌরবে শক্তিমত্তায় লোকসংখ্যায়,— সব বিষয়ে ইংরেজী এখন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং পৃথিবীর মুখ্য ভাষা॥

৪. গ্রীক

প্রাচীন কালে গ্রীক শাখা গ্রীসে, এশিয়া মাইনরের উপকূল অঞ্চলে, সাইপ্রাস দ্বীপে এবং ইজিয়ান উপসাগরের দ্বীপপুঞ্জে প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রীকের অনেকগুলি উপভাষা ছিল। তাহার মধ্যে প্রধান হইতেছে আট্টিক-ইওনিক (Attic-Ionic) ও ডোরিক (Doric)। হোমরের মহাকাব্যদ্বয় ‘ইলিয়দ’ এবং ‘ওদিসি’ ইওনিক উপভাষায়, এবং পরবর্তী কালের গদ্যসাহিত্য প্রধানত আট্টিক উপভাষায় রচিত। ডোরিকে মূলভাষার দীর্ঘ ‘আ’ বজায় ছিল, ইওনিক-আট্টিক ইহা দীর্ঘ এ-কারে পরিণত হইয়াছিল। ক্রীট দ্বীপে প্রাপ্ত কোনো কোনো প্রত্নলেখের পাঠ সম্প্রতি মাইকেল ভেন্‌ট্রিস ও জন চ্যাডউইক কর্তৃক নির্ধারিত হইয়াছে। ইহাদের আবিষ্কৃত পাঠে খ্রীস্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দে কথিত গ্রীক ভাষার নিদর্শন পাইতেছি। তাহার দীর্ঘকাল পরে হোমরের মহাকাব্য দুইটিতে গ্রীকের প্রাচীনতম রূপ রক্ষিত হইয়াছে। (কাব্য দুইটির সংগ্রহ বা রচনাকাল আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব নবম শতাব্দ)। আথে্‌নসের গৌরবের যুগে আট্টিকে গ্রীক সাহিত্যের বিখ্যাত নাটক ও গদ্যগ্রন্থ লেখা হইয়াছিল। গ্রীক সাহিত্যের মতে ঐশ্বর্যশালী প্রাচীন সাহিত্য ইউরোপে দ্বিতীয়রহিত। আধুনিক ইউরোপীয় সংস্কৃতির মূলে প্রাচীন গ্রীক শিল্প সাহিত্য ও দর্শনের প্রেরণা রহিয়াছে। খ্রীস্টজন্মের কাছাকাছি সময়ে গ্রীক উপভাষাগুলির সংমিশ্রণ ঘটিয়া এক সাধু বা স্ট্যাণ্ডার্ড ভাষার উদ্ভব হইয়াছিল। ইহার নাম কোইনে (Koinē)। এই ভাষাই গ্রীসে এবং তৎপ্রভাবিত অঞ্চলে সর্বজনীন কথ্যভাষা হইয়া উঠে এবং ইহা হইতেই আধুনিক গ্রীক ভাষার উৎপত্তি। ইটালিক জার্মানিক বাল্‌টো-স্লাবিক এবং ইন্দো-ইরানীয় শাখার তুলনায় আধুনিক কালে গ্রীক ভাষার প্রসার কিছুই ঘটে নাই॥

৫. বাল্‌টো-স্লাবিক

বাল্‌টো-স্লাবিক শাখার ভাষাগুলি দুইটি উপশাখায় পড়ে, বাল্‌টিক (Baltic) এবং স্লাবিক (Slavic)। বাল্‌টিক উপশাখার ভাষার মধ্যে নাম করিতে হয় লিথুয়ানিয়ায় লিথুয়ানীয় এবং লাট্‌বিয়ায় লেট্‌। ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের সকল আধুনিক ভাষার মধ্যে লিথুয়ানীয় সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ধরনের। বিদেশের ভাষা-স্রোত ও ভাবধারা অতীতে লিথুয়ানিয়ায় প্রবাহিত হইবার বিশেষ সুযোগ পায় নাই বলিয়া এখানে ভাষার পরিবর্তন কালপরিবর্তনের তুলনায় নগণ্য। স্লাবিক উপশাখার অনেকগুলি ভাষা এখনও প্রচলিত আছে। দক্ষিণ স্লাবিক ভাষার মধ্যে প্রধান সার্বীয় ও বুল্‌গারীয়। শেষের ভাষায় খ্রীস্টীয় নবম শতাব্দে বাইবেল অনূদিত হইয়াছিল। ইহাই বাল্‌টো-স্লাবিক শাখার প্রাচীনতম রচনা। পশ্চিম স্লাবিক ভাষার অন্তর্গত হইল চেখ, স্লোবাকীয় এবং পোল। প্রথম দুইটি ভাষা চেখোস্লোবাকিয়ায় এবং আশেপাশে বলা হয়। রুশ এবং তাহার উপভাষাগুলি পূর্ব-স্লাবিকের অন্তর্গত॥

৬. আলবানীয়

আড্রিয়াটিক সাগরের পূর্ব উপকূলে আল্‌বানিয়ায় আধুনিক আল্‌বানীয় শাখার ভাষার প্রচলন আছে। খ্রীস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দের পূর্বে আল্‌বানীয় ভাষার কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নাই। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্টীর মধ্যে আলবানীয় ভাষা সর্বাধিক বিকৃতিপ্রাপ্ত। লাটিন গ্রীক স্লাবিক ইতালীয় তুর্কী প্রভৃতি প্রাচীন ও আধুনিক ভাষা ভাষার শব্দ এই ভাষার ভাণ্ডারে স্থান পাইয়াছে॥

৭. আর্মেনীয়

এশিয়া মাইনরের আর্মেনিয়া অঞ্চলে আর্মেনীয় শাখার ভাষা খ্রীস্টপূর্ব সপ্তম-অষ্টম শতাব্দ হইতে প্রচলিত ছিল। বর্তমান সময়ে আর্মেনিয়ার বাহিরেও কোনো কোনো অঞ্চলে ও দেশে আধুনিক আর্মেনীয় ভাষা বলা হয়। আর্মেনীয় ভাষায় হিট্টীয় শাখার কিছু প্রভাবচিহ্ন আছে। কয়েকটি বিশিষ্ট শব্দের আদিতে ইন্দো-হিট্টীয় কণ্ঠনালীর ধ্বনির রেশ হ-কার রূপে রহিয়া গিয়াছে। যেমন, [হব] হিট্টীয় (‘হুহ্‌হস্‌’, লাটিন ‘আবুস্‌’) “পিতামহ-মাতামহ”, [হন্‌] (হিট্টীয় ‘হন্‌নস্, লাটিন ‘অনুস’) “বৃদ্ধ স্ত্রীলোক”॥

৮. তোখারীয়

হিট্টীয়ের মতো তোখারীয় শাখারও আবিষ্কার হয় বর্তমান শতাব্দের প্রথমে। মধ্য এশিয়ার চীনীয় তুর্কীস্তানের বালুকাস্তূপের মধ্য হইতে ইংরেজ ফরাসী রুশ ও জার্মান পণ্ডিতদের অনুসন্ধানের ফলে বহু পুথিপত্রের ও প্রত্নবস্তুর আবিষ্কার হইয়াছিল। এই প্রত্নলেখগুলি প্রায় সবই প্রাচীন ভারতীয় খরোষ্ঠী অথবা ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা। খ্রীস্টীয় সপ্তম হইতে দশম শতাব্দের মধ্যে লেখা অনেকগুলি লিপির পাঠ উদ্ধারের ফলে একটি সম্পূর্ণ নূতন ইন্দো-ইউরোপীয় শাখার নিদর্শন মিলিয়াছে। তুখার (বা তুষার) জাতির ভাষা ছিল, এই অনুমানে এই ভাষার নামকরণ হইয়াছে তোখারীয় (বা তুখারীয়)। খ্রীস্টীয় সপ্তম শতাব্দের পরে এই ভাষা লুপ্ত হইতে শুরু করিয়াছিল বলিয়া পণ্ডিতেরা অনুমান করেন। তোখারীয় লিপিগুলি প্রধানত দুইটি ভাষায় লেখা। একটি ছিল পূর্ব অঞ্চলের ভাষা। ইহাতে ভাষাটির নাম পাই তোখ্‌ড়ী। এই উপভাষাকে বলা হয় তোখারীয় ক (Tokharian A) অথবা অগ্নীয় (Agnaean)। দ্বিতীয় উপভাষা পশ্চিম অঞ্চলের—কুচার। তাই ইহাকে বলা হয় তোখারীয় খ (Tokharian B) অথবা প্রাচীন কুচীয়। এশিয়ায় অবস্থিত হইলেও তুখারীয় বালটো-স্লাবিক আর্মেনীয় ও ইন্দো-ইরানীয় শাখাত্রয়ের সহিত সম্পৃক্ত নহে। কেল্‌টিক এবং ইটালিক শাখার সহিত ইহার সম্পর্ক ঘনিষ্ট॥

৯. ইন্দো-ইরানীয়

ইন্দো-ইরানীয় শাখার সেই সঙ্গে ভারতীয়-আর্য উপশাখারও অস্তিত্বের প্রমাণ মিলিয়াছে খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দে। হিট্টীয় প্রত্নলেখগুলির মধ্যে একটি অশ্ববিদ্যা সম্বন্ধীয় নিবন্ধ পাওয়া গিয়াছে। সেই গ্রন্থের কয়েকটি পারিভাষিক শব্দে ভারতীয়-আর্য ভাষার বিশিষ্ট রূপের আভাস মিলিয়াছে। যেমন, ‘অইকবর্তন’, সংস্কৃত একবর্তন। (সংস্কৃত ‘এক’ শব্দের প্রাচীন রূপ ছিল ‘অইক’; ইহা অন্যত্র নাই, এমন কি ইরানীয় উপশাখাতেও নাই।) মেসোপটেমিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত মিটান্নির রাজসভার ভাষা যে সম্ভবত ভারতীয়-আর্য ভাষার সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল, সে অনুমানের সমর্থনেও কিছু প্রমাণ মিলিতেছে। একটি মূল্যবান হিট্টীয় প্রত্নলেখ হইতেছে হিট্টীয় রাজা সুপিলুল্যুমস ও মিটান্নি-রাজ মতিবাজ এই দুইজনের পুত্র-কন্যার মধ্যে বিবাহের চুক্তিপত্র। এই চুক্তিপত্রে কয়েকটি বিশিষ্ট বৈদিক দেবতার নাম করা হইয়াছে। যেমন, ‘নশত্তিয়ন’ অর্থাৎ “নাসত্যানাম্‌”, ‘ইন্‌দর’ অর্থাৎ ইন্দ্র, ‘মিউইত্তর’ অর্থাৎ ‘মিত্র’, ‘ঊরুবন’ অর্থাৎ বরুণ। কয়েকটি মিটান্নি ব্যক্তিনামেও ভারতীয়-আর্য ভাষার বিশিষ্টতা আছে। যেমন, শুবন্দু (=সুবন্ধু), দুশ্‌রত্ত (=দূরথ), মত্তিবজ বা মত্তিউজ (=মতিবাজ), অর্তমনিঅ (ঋতমন্য) অৰ্ততম (=ঋতধাম বা ঋততম), অৰ্তশশুমর (=ঋতস্মর)।

ইন্দো-ইরানীয় শাখা-ভাষীরা নিজেদের ‘অর্য’ বা ‘আর্য’ বলিয়া গৌরব বোধ করিত, তাই ইহার নামান্তর আর্য শাখা। (আর্য আসিয়াছে ‘অর্য’ হইতে, মানে “বিদেশীয়”।) আর্য শাখার ধ্বনিগত প্রধান বিশেষত্ব হইতেছে এই দুইটি:

(ক) মূল ভাষার হ্রস্ব এবং দীর্ঘ [অ, এ, ও] যথাক্রমে [অ] এবং [আ] ধ্বনিতে পরিণত। মূল ভাষার অতি হ্রস্ব [অ] ই-কারে পরিণত। উদাহরণ ষষ্ঠ অধ্যায়ে মিলিবে।

(খ) হ্রস্ব ও দীর্ঘ-এ-কার এবং ঈ-কারের পরবর্তী কণ্ঠ্য ও কণ্ঠৌষ্ঠ্য বর্গের ধ্বনি চ-বর্গীয় ধ্বনিতে পরিণত। যেমন, *ক্ক > সং চ, আ চ, প্ৰা পা চা। *গ্বীবোস > সং জীবস, প্রা পা জীব ইত্যাদি। এই ধ্বনিপরিবর্তন কোলিৎজ (H. Collitz) প্রথম লক্ষ্য করিয়াছিলেন বলিয়া ইহা কোলিৎজের সূত্র (‘Collitz’ Law) বলিয়া প্রসিদ্ধ।

আর্য শাখার দুইটি প্রধান উপশাখা,—ইরানীয় এবং ভারতীয়-আর্য॥

১০. ইরানীয় উপশাখা

ইরানীয় উপশাখার অন্তর্গত দুইটি প্রাচীন ভাষার নিদর্শন মিলিয়াছে। এই দুইটি ভাষা হইতেছে আবেস্তীয় ও প্রাচীন পারসীক। জরথুশ্‌ত্রীয় মতাবলম্বীদের বেদকল্প প্রাচীন শাস্ত্র আবেস্তার ভাষাই আবেস্তীয়। ইহার মূলে ছিল ইরানের উত্তর অঞ্চলের কথ্যভাষা-বিশেষ। আবেস্তার প্রাচীনতম অংশ হইতেছে কয়েকটি গাথা বা স্তব। গাথাগুলির ভাষা আবেস্তার অপর অংশের ভাষার তুলনায় বেশ পুরাতন। বৈদিকের সঙ্গে এই গাথিক আবেস্তীয় (Gathic Avestan) ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। গাথাগুলি আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব সপ্তম-অষ্টম শতাব্দে সুবিখ্যাত ধর্মাচার্য জরথুশ্‌ত্র (=সংস্কৃত জরদুষ্ট্র) কর্তৃক রচিত হইয়াছিল। অর্বাচীন আবেস্তার অধিকাংশ যে খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ-তৃতীয় শতাব্দের পূর্বেই রচিত হইয়াছিল, এমন অনুমান করিতে পারা যায়। কিন্তু আবেস্তার সঙ্কলন হয় অনেককাল পরে, সাসানীয় বংশের রাজ্যকালে খ্রীস্টীয় তৃতীয় হইতে সপ্তম শতাব্দের মধ্যে। তাহার অনেক আগে প্রাচীন আবেস্তা-সাহিত্যের বৃহৎ অংশ নষ্ট হইয়া যায়। সুতরাং সঙ্কলিত আবেস্তায় যাহা রক্ষিত হইয়াছে তাহা আমাদের বেদের মত এক বিস্তীর্ণ ধর্মসাহিত্যের নিতান্ত খণ্ডিত অংশ মাত্র।

জরথুশ্‌ত্র-প্রবর্তিত নীতিমূলক ধর্ম অবলম্বন করিবার আগে ইরানীয় আর্যেরা ভারতীয় আর্যদের মতোই যজ্ঞপরায়ণ এবং দেবোপাসক ছিল। আবেস্তার মধ্যে এই প্রাচীনতর ধর্মের কিছু কিছু চিহ্ন রহিয়া গিয়াছে। জরথুশ্‌ত্রীয় মত পুরাপুরি গ্রহণের ফলে ইরানীরা দেববিদ্বেষী হইয়া পড়িল এবং ‘দেব’ (আবেস্তীয় ‘দএব’) শব্দের অর্থ দাঁড়াইল “অপদেবতা”। প্রাচীন দেবতারা (যেমন নাসত্য, ইন্দ্র) অপদেবতা হইয়া গেলেন। তেমনি আবার দুই একটি দেবতা (যেমন মিত্র, অর্যমা, অগ্নি এবং সোম) তাঁহাদের আসন অক্ষুণ্ণ রাখিতে পারিয়াছিলেন। আবেস্তার ‘দেব’ শব্দের যেমন অর্থাবনতি ঘটিয়াছে সংস্কৃত সাহিত্যেও তেমনি অসুর শব্দের অর্থবিপর্যয় হইয়াছে। ঋগ্বেদের প্রাচীন অংশে অসুর শব্দ বরুণ প্রভৃতি প্রধান দেবতার বিশেষণ রূপেই ব্যবহৃত (তুলনীয় “মহদ্‌ দেবানাম্‌ অসুরত্বমেকম্‌”)। আবেস্তায়ও পরমেশ্বরের নাম ‘আহুর-মজদা’ (অর্থাৎ ‘অসুরমেধাঃ’ “দিব্যজ্ঞানময় প্রভু”)। কিন্তু অর্বাচীন বৈদিক এবং সংস্কৃতে ‘অসুর’ শব্দের অর্থ “দেববিরোধী, ব্রাহ্মণ্যদ্বেষী দুষ্টশক্তি।”

আবেস্তা যখন সঙ্কলিত এবং লিপিবদ্ধ হইতেছিল তখন প্রাচীন ইরানীয় ভাষা দ্বিতীয় অর্থাৎ প্রাকৃত স্তরে পৌঁছিয়াছে। এইজন্য বানানে যথেষ্ট অসঙ্গতি রহিয়াছে। নূতন স্বরধ্বনির উদ্ভব, হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বরের বিপর্যয়, অপিনিহিতির আতিশয্য এবং কোনো কোনো ব্যঞ্জনধ্বনির উষ্মীভবন— এইগুলি অর্বাচিন আবেস্তার ধ্বনিবৈশিষ্ট্য। গাথিক আবেস্তায় বানানে ও উচ্চারণে এমন অরাজকতা নাই।

আবেস্তার সঙ্গে বেদের মৌলিক গভীর সম্বন্ধ বেশ স্পষ্ট করিয়া বোঝা যায় ভাষায় ও ছন্দে। নিন্মোদ্ধৃত আবেস্তীয় শ্লোকটির ভাষা বৈদিকের মতো এবং ছন্দ পুরোপুরি গায়ত্রী।

তম্ অমবন্তম্‌ যজতন্‌

সুরম্‌ দামোহু সবিশ্‌তম্‌।

মিথ্রম্‌ যজই জওথ্রাব্যো॥

সংস্কতে আক্ষরিক অনুবাদ করিলে এই রকম হইবে

তম্‌ অমবন্তং যজতং

সুরং ধামসু শবিষ্ঠম্‌

মিত্রং যজৈ *হোত্রেভ্যঃ॥

প্রাচীন পারসীক ছিল ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অর্থাৎ পার্‌স (পারস্য) প্রদেশের ভাষা। এই প্রদেশের অধিবাসী হখামনীয়ীয় (Achaemenian) বংশের সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহাদের মাতৃভাষা প্রাচীন পারসীক সমগ্র ইরানের রাজভাষা হইয়া দাঁড়ায়। এই বংশের সম্রাটদের (খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ হইতে চতুর্থ শতাব্দের মধ্যে) বিশেষ করিয়া দারয়বহুশ্‌ (অর্থাৎ ধারয়বসুঃ বা ধারয়দ্বসুঃ, Dereios, Darius; খ্রীস্টপূর্ব ৫২১-৪৮৫) এবং তৎপুত্র খ্‌শয়র্শা (অর্থাৎ ক্ষয়ার্ষা, Xerxes)— প্রধানত এই দুইজনের শিলালিপি ও ধাতুলিপি হইতে প্রাচীন পারসীকের প্রায় যাবতীয় নিদর্শন মিলিয়াছে। প্রাচীন কালে মেসোপোটেমিয়া ও এশিয়া মাইনর অঞ্চলে যে বাণমুখ লিপির প্রচলন ছিল, তাহারই এক সরলতর ছাঁদে প্রাচীন পারসীক অনুশাসনগুলি লেখা।

প্রাচীন পারসীকের সহিত সংস্কৃতের মিল কতটা গভীর ছিল তাহা নীচের উদ্ধৃতি হইতে বোঝা যাইবে।

তুবম্ কা হ্য অপর যদি মনিয়াহঈ শিয়াত অহনী জীব উতা মৃতা ঋতবা অহনী অবনা

দাতা পরী দী ত্য অহুরমজ্‌দা নিয়শ্‌তার। অহুরমজ্‌দাম্‌ য়দইশা ঋতাচা ব্রজ্‌মনী।

অর্থাৎ ‘যদি তুমি—কোনো অপর লোক—ভাব, জীবৎকালে সুখী হইব এবং মৃত হইলে পুণ্যবান্ হইব তবে সেই বিধান পালন কর যাহা অসুরমেধা স্থাপন করিয়াছেন। অসুরমেধাকে ভজনা কর এবং ঋত ব্রহ্মকে।’

প্রাচীন ভারতীয়-আর্য (বৈদিক ও সংস্কৃত) যেমন কালক্রমে পরিবর্তিত হইয়া মধ্য ভারতীয়-আর্য ভাষায় অর্থাৎ পালি-প্রাকৃতে পরিণত হইয়াছিল সেইরূপ প্রাচীন পারসীকের পরিবর্তনের ফলে ইহার প্রাকৃতস্থানীয় পহ্লবী উৎপন্ন হইয়াছিল (আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দ)। পহ্লবী ছাড়া আরো দুই একটি মধ্য-ইরানীয় ভাষার নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে, তাহার মধ্যে শক ভাষা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই ভাষায় অনেক বৌদ্ধ গ্রন্থ অনূদিত হইয়াছিল।

পহ্লবী বা মধ্য-পারসীক হইতেছে ফারসীর অর্থাৎ নব্য-পারসীকের জননী। আনুমানিক খ্রীস্টীয় অষ্টম শতাব্দে ফারসীর উৎপত্তি হয়। ইহাই এখন ইরান দেশের এবং ইরানের বাহিরে অনেক লোকের মাতৃভাষা। ইংরেজীর মতো ফারসীও ব্যাকরণের বন্ধন অনেকটাই কাটাইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু ফারসীতে আরবী শব্দের এত বেশি বাহুল্য যে, সহজে ইহা ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের ভাষা বলিয়া মনে হয় না। ফারসী লেখা হয় আরবী লিপিতে। আধুনিক ইরানীয় ভাষার মধ্যে ফারসীর পর নাম করিতে হয়— আফগানিস্তানের ভাষা আফঘান বা পশ্‌তো (বা পখ্‌তো “অর্থাৎ পাঠানদের ভাষা”), এবং বেলুচিস্তানে কথিত বেলুচী। কাম্পিয়ান সাগরতীরেও ইরানীয় উপশাখার দুই চারটি ভাষা প্রচলিত আছে॥

১১. দরদীয় উপশাখা

প্রবীণ ভাষাতত্ত্ববিদেরা আর্য শাখায় ইরানীয় এবং ভারতীয় উপশাখার মধ্যবর্তী দরদীয় (Dardic) নামে তৃতীয় একটি উপশাখা কল্পনা করিয়াছেন। এই কল্পিত উপশাখার ভাষাগুলির মধ্যে ইরানীয় ও ভারতীয় দুইয়েরই বিশেষত্ব কিছু কিছু দৃষ্ট হয়। তথাকথিত দরদীয় ভাষাগুলি ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে হিন্দুকুশে এবং পামীর উপত্যকায় প্রচলিত আছে। তাহাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হইতেছে কাশ্মীরী। এই ভাষাগুলির খুঁটিনাটি আলোচনা করিয়া এখন বোধ হইতেছে যে, তথা-কথিত দরদীয় উপশাখার ভাষাগুলির কতক হয়ত মূলত ভারতীয়। তবে তাহাদের উপর ভারতীয়-আর্য সাহিত্যের ভাষা সংস্কৃতের প্রভাব এক কাশ্মীরী ছাড়া অন্যগুলিতে অধিক পরিমাণে পড়ে নাই, এবং ইরানীয় ভাষার ছাপ কিছু বেশিই পড়িয়াছে। তবে এ বিষয়ে পণ্ডিতেরা এখনো একমত হইয়া স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেন নাই। আলোচনার সুবিধার জন্যই দরদীয় শাখা ধরা হয়॥

গ্রিমের সূত্রে স-কারের বিকৃতি নাই।

সংস্কৃত ছায়া—ত্বম্‌ কঃ স্যঃ অপরঃ যদি মন্যাসে *চ্যাতঃ অসানি জীবঃ উত মৃতঃ ঋতবা অসানি অনেন হিতা পরী-হি ত্যৎ অসুরমেধাঃ ন্যস্থাপয়ৎ। অসুরমেধাম্‌ যজ্ঞেঃ ঋতা-চা ব্রহ্ম্যণি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *