অপলক চোখে সুমির দিকে তাকিয়ে রইল জয়।
একি সত্যি সুমি?
নাকি সে স্বপ্ন দেখছে?
সুমিও তাকিয়ে ছিল জয়ের দিকে। জয়ের চোখে পলক পড়ছে না দেখে মিষ্টি হেসে, স্নিগ্ধ গলায় বলল, কী দেখছ?
সঙ্গে সঙ্গে চোখে পলক পড়ল জয়ের। মুগ্ধ গলায় সে বলল, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না?
এই তুমি কি সত্যি সেই তুমি?
হ্যাঁ এই আমিই সেই আমি।
মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।
জয়ের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে সুমি বলল, ছুঁয়ে দেখ।
সঙ্গে সঙ্গে সুমির হাতটা ধরল জয়। বুক কাঁপিয়ে একটা শ্বাস পড়ল তার।
সুমি বলল, দীর্ঘশ্বাস ফেলছ কেন?
দীর্ঘশ্বাস না। হাঁপ ছাড়লাম।
কেন?
মনে হলো বহুদিন ধরে হাজার মন ওজনের এক পাথর আমার বুকে চেপেছিল। এই মাত্র সেই পাথর নেমে গেল। বুকটা হালকা হলো আমার। আমি। যেন বেঁচে উঠলাম।
কিন্তু আমাকে কি তুমি বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে?
জয়দের উত্তরার বাড়িতে জয়ের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ওরা। খানিক আগে এই বাড়ির গেটে এসে স্কুটার থেকে নেমেছে সুমি। স্কুটার ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকেছে। লেবার ধরনের একজন লোক লম্বা একটা কাঠ কাঁধে। করে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছিল, সুমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল জয় আছে কি না। তারপর জয়ের বন্ধরুমে এসে নক করেছে।
এখন বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবার কথা বলায় জয় কেমন লজ্জা পেল। তখনও সুমির হাতটা সে ধরে রেখেছে। সেই হাত ধরেই ভেতরে নিয়ে এল তাকে।
রুমে ঢুকে সুমি বলল, খুব সুন্দর রুম।
জয় কী বলবে কিছু বুঝতে পারছ না। তখনও সুমির হাতটা ধরা।
জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে সুমি বলল, একটা কথা কি তুমি জানো?
কী?
আজই প্রথম তুমি যে আমাকে স্পর্শ করলে?
সঙ্গে সঙ্গে সুমির হাতটা ছেড়ে দিল জয়। কেমন নার্ভাস হলো। আবার কি আমার কোনও ভুল হয়ে গেল?
সুমি হাসল। কিসের ভুল?
আমার তো শুধুই ভুল হয়। মিলাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে গিয়ে…।
হাত তুলে জয়ের ঠোঁটে ছোঁয়াল সুমি। পুরনো কথা আমরা সব ভুলে যাব।
তারপরই বলল, না না সব ভুলব না। মধুর স্মৃতিগুলো মনে রাখব, সুন্দর কথাগুলো মনে রাখব। ভুলে যাব শুধু ভুল বোঝাবুঝি, শুধু দুঃখের স্মৃতি।
একথা শুনে কী যে খুশি হলো জয়!
দুহাতে সুমির হাতটা ধরল সে। তাই ভাল। তাই ভাল।
উচ্ছল কিশোরীর ভঙ্গিতে জয়ের বিছানায় বসল সুমি।
জয় বলল, এই বাড়ি তুমি চিনলে কী করে?
মিলার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েছি।
কিন্তু আমাকে তো ফোন করনি?
ইচ্ছে করেই করিনি।
কেন?
তোমাকে চমকে দিতে চেয়েছি।
যদি আমি না থাকতাম?
যেখানেই থাকতে খুঁজে বের করতাম তোমাকে।
সুমি হাসল। হঠাৎ করেই আমি আবার তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছি।
কবে থেকে?
কাল মাঝরাত থেকে।
মাঝরাতে কী হয়েছিল?
সে কথা তোমাকে বলব না।
একটু থামল সুমি। তারপর বলল, এই, কেমন লাগছে আমাকে?
জয় মুগ্ধ গলায় বলল, অপূর্ব।
তোমার জন্য এই নীল শাড়িটা আমি আজ পরেছি।
শাড়িতে তোমাকে অসাধারণ লাগছে। সবাই কিন্তু সুন্দর করে শাড়ি পরতে পারে না।
আমি পারি।
সত্যি তুমি পার। এত সুন্দর করে শাড়ি পরতে কোনও মেয়েকে আমি কখনও দেখিনি।
কিন্তু অতোদূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার প্রশংসা করছ কেন? কাছে এসো। আমার পাশে এসে বোস।
জয় এসে সুমির পাশে বসল। সঙ্গে সঙ্গে জয়ের গা থেকে ওয়ান ম্যান শোর পাগল করা গন্ধটা এল। এই গন্ধে আপাদমস্তক কেঁপে উঠল সুমি। দিশেহারা গলায় বলল, তুমি কি ওয়ান ম্যান শো ইউজ করেছ?
হ্যাঁ। আমার খুব প্রিয় পারফিউম। কেন তোমার খারাপ লাগছে?
না না।
আমি যেদিন তোমার সঙ্গে দেখা করেছিলাম সেদিনও কি তুমি এই। পারফিউমটাই ইউজ করেছিলে?
হ্যাঁ। কেন বল তো?
সুমি মিষ্টি করে হাসল। না কিছু না।
তারপর দুহাতে জয়ের একটা হাত ধরল। অভিমানী শিশুর মতো আদুরে। গলায় বলল, তুমি আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছ।
জয় কাতর গলায় বলল, আমি আর কখনও এমন করব না।
করো না। এবার আমি বেঁচে উঠেছি, আরেকবার করলে বোধহয় বাঁচবোই না। এই জানো, কী হয়েছিল আমার?
না। কী হয়েছিল?
আমাকে একটা বদজীনে ধরেছিল।
কী?
সত্যি। এমন কিন্তু হয়। কোনও কোনও মেয়েকে কিন্তু সত্যি বদজীনে ধরে।
জীনটা কী কী করেছে বল তো?
একদিন গভীর রাতে প্রথমে অনেকক্ষণ ধরে আমার পায়ে সুরসুরি দিয়েছে। তারপর, তারপর…। ধুৎ আমার বলতে লজ্জা করছে।
জয় কী রকম যেন উত্তেজিত হলো। বল না আমাকে, না বললে বুঝব কী করে?
সুমি মিষ্টি করে হেসে বলল, আমার তলপেটের কাছে, নাভীর কাছে আলতো করে সুরসুরি দিয়েছে।
যাহ্!
সত্যি।
তারপর?
তারপর ঘাড়ে গলায় গালে আস্তে আস্তে মুখ ঘষে দিয়েছে। জীনটি বোধহয় সেদিন সেভ করেনি। দাড়ি গোঁফগুলো একটু একটু ধারাল লাগছিল।
ফ্যাল ফ্যাল করে সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল জয়। কী বলছ এসব?
আমি মিথ্যে বলছি না। এবং জীনটির গা থেকে তখন ওয়ান ম্যান শোর গন্ধ আসছিল।
এবার একটু থতমত খেল জয়। যাহ্!
সত্যি।
জীনরা সেভ করে, পারফিউম ইউজ করে এমন তো কখনও শুনিনি।
সুমি গম্ভীর গলায় বলল, কালরাতেও জীনটা আমার ঘরে ঢুকেছিল। প্রথমদিন যা যা করেছে কালও তাই তাই করেছে। তারপরই তোমার জন্য পাগল হয়েছি আমি। সম্ভব হলে ওই মুহূর্তেই আমি তোমার কাছে চলে আসতাম।
জয় অসহায় গলায় বলল, তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। জীন ওই ধরনের রোমান্টিক আচরণ করবে আর তোমার মনে পড়বে আমার কথা, মানে কী এসবের?
দুহাতে জয়ের গলা জড়িয়ে ধরল সুমি। আমার সেই জীনটা যে তুমি! তবুও আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
একদিনের কথা বলি তাহলেই বুঝতে পারবে। টেলিফোনে তুমি আমাকে একদিন বলেছিলে না, যেদিন প্রথম আমাকে তুমি স্পর্শ করবে, আমাকে প্রথম আদর করবে, সেদিন আদরটা শুরু করবে আমার পায়ের পাতা থেকে। আমার পায়ের পাতা থেকে চুমু খেতে শুরু করবে। তারপর আস্তে আস্তে হাঁটু অব্দি উঠবে। তারপর আমার তলপেট এবং নাভিমূলে চুমু খাবে। আমার গালে গলায় গ্রীবায় চুমু খাবে। এই কথাগুলো এমন করে আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল, চেতন। অবচেতন মনে আমি কেবল একথাই ভেবেছি। ভাবতে ভাবতে বাস্তবে এক সময় তেমন অনুভূতি হতে শুরু করেছিল আমার। আর প্রথম দিন সেই যে তোমার গা থেকে ওয়ান ম্যান শোর গন্ধ পেয়েছিলাম, সেই গন্ধটাও আমার স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছিল।
সুমির কথা শুনে অদ্ভুত এক ভাল লাগায় মন ভরে গেল জয়ের। অপলক চোখে সুমির মুখের দিকে সে তাকিয়ে রইল।
সুমি বলল, তোমার ভালবাসায় শরীর মন, অন্তর আত্মা সব ভরে গেছে আমার। বেঁচে থাকলে তোমার হাত ধরে বেঁচে থাকব, মরে গেলেও তোমার হাত ধরে মরে যাব।
জয় স্বরাচ্ছন্ন গলায় বলল, আমিও।
তারপর জয়ের বিছানায় শুয়ে পড়ল সুমি। এই, তুমি যেমন যেমন বলছিলে তেমন করে আদর কর আমাকে। পায়ের পাতায়, নাভিমূলে, গালে গলায় গ্রীবায়। তোমার ছোঁয়ায় ভালবাসাকে ছুঁয়ে দেখব আমি।