একোনাশীতিতম অধ্যায় – তীর্থ-প্রসঙ্গ
ঔর্ব বলিলেন,–হে মহারাজ! তাঁহার পূর্বে দর্পণ নামে পৰ্বত, এই পৰ্বতে যক্ষগণের সহিত কুবের সৰ্ব্বদা বাস করেন। ১
ইহার মধ্যভাগে রোহিত মৎস্যের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট রোহিত নামে একটি পৰ্বত আছে। ২
যাঁহার স্পর্শে লৌহাদি তৎক্ষণাৎ সুবর্ণত্ব প্রাপ্ত হয়। তাঁহার অনতিদূরে দর্পণ নামে একটি নদ আছে, উহা হিমালয় হইতে প্রসূত এবং ফলদানে লৌহিত্যের তুল্য। লৌহিত্য উৎপন্ন হইলে শ্রীকৃষ্ণ সকল দেবগণের সহিত সকল তীর্থোদক দ্বারা স্নান করিয়াছিলেন। ৩-৪
তাঁহার স্নান হইতে পাপ ও দৰ্পের পাটল রঙ উদগত হইয়াছিল। এই নিমিত্ত পূর্বকালে দেবগণ ইহাকে দর্পণ নামে অভিহিত করিয়াছেন। ৫
যে মনুষ্য কার্তিক মাসের শুক্লপ্ৰতিপদ তিথিতে ঐ শ্রেষ্ঠ নদে স্নান করিয়া দর্পণাচলে কুবেরকে পূজা করে, সে শত ঐশ্বৰ্যযুক্ত হইয়া ব্ৰহ্মসদনে গমন করে। ৬-৭
দর্পণের পূর্বদিকে অগ্নিমাল নামে পৰ্বত আছে, উহার আকার সর্পের মত এবং দীর্ঘতা, উচ্চতা এবং বিস্তৃতিও ঐরূপ। ৮
সেই পৰ্বতের অগ্নি-জ্বলিত উৰ্দ্ধভাগে সিন্দুর-পুঞ্জ-সঙ্কাশ মনোহর দারু শিলাতলে অগ্নিদেব অবস্থান করেন। ৯
সেই পর্বতে অদ্যাপি জ্বলন দ্রব্য-শূন্য বহ্নি এখনও দেখা যায়। ভৈরবের হিত এবং কামাখ্যার সেবনের নিমিত্ত প্রথম হইতেই বহ্নি আপনার দলবলের সহিত সাক্ষাৎরূপে সেইস্থানে বাস করিতেন। ১০
লৌহিত্যের জলে স্নান এবং বহ্নিমান পৰ্বতে আরোহণ করিয়া যে মনুষ্য বহ্নিদেবের পূজা করে, সে বিষ্ণু-মন্দিরে আমোদ উপভোগ করে। ১১
অগ্নিমান্ পৰ্বতের সম্মুখে বরুণনামক একটি কুণ্ড আছে, তাঁহার তীরে কংসকর নামে একটি শ্রেষ্ঠ পৰ্বত আছে। সেই স্থানে জলাধিপ বরুণ নিত্য বাস করেন। ১২-১৩
সেই কংসকর পর্বতে বরুণদেবের পূজা এবং সেই বারুণকুণ্ডে স্নান করিয়া মনুষ্য বরুণলোক প্রাপ্ত হয়। ১৪
আদ্য ব্যঞ্জন ককার পঞ্চমস্বর উ এবং অর্ধচন্দ্রযুক্ত হইলে তাহা কৌবের বীজ নামে খ্যাত। ১৫
প হইতে সপ্তম অক্ষর অর্থাৎ ‘র’কার চন্দ্রবিন্দু যুক্ত হইলে তাহা বহ্নির বীজ হয়, এই বীজ দ্বারা বহ্নিদেবের পূজা করিবে। ১৬
ম হইতে পঞ্চম (ব) উহা অনুস্বারযুক্ত হইলে বরুণ বীজ হয়, এই সকল মন্ত্র দ্বারা ঐ পূর্বোক্ত দেবগণের পূজা করিবে। ১৭
বরুণাচলের পূব্বদিকে বায়ুকূটনামক পৰ্ব্বত আছে। উহা দ্বিখণ্ড বায়ুবীজাকার মণ্ডল দ্বারা যুক্ত। ১৮
হে ভূপতি! বায়ুলোকে চন্দ্র অবস্থান করেন, সেই চন্দ্র হইতে বায়ু নিঃসৃত হইয়া নিত্য উর্ধ্ব, ও অধোভাগে বহিতেছে। ১৯
সেই স্থানে বায়ুকে পূজা করিলে বায়ুলোক প্রাপ্তি হয়। ২০
বায়ুগিরির পূর্বে চন্দ্রকূট নামে আর একটি পর্বত আছে, উহা ত্রিকোণ এবং তাম্রের মত রক্তবর্ণ, উহার উর্দ্ধে চন্দ্রমণ্ডল। ২১
দ্বিতীয় বর্গের আদ্যক্ষর (চ) অর্ধচন্দ্র ও অনুস্বার দ্বারা অলঙ্কৃত হইলে চন্দ্র বীজ হয়। ২২
উহা দ্বারা চন্দ্রের পূজা করিবে। চন্দ্র অদ্যাপি দশ অশ্বযুক্ত হইয়া সৰ্ব্বদা ইহাকে প্রদক্ষিণ করেন। ২৩
তাঁহার পূর্বভাগে সোমকুণ্ড নামে সরোবর আছে, তাহাতে স্নান ও তাঁহার জল পান করিয়া মনুষ্য কৈবল্য প্রাপ্ত হয়। ২৪
কামাখ্যার সেবনের নিমিত্ত চন্দ্র, যখন স্বর্গ হইতে ভূমিতলে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, তখন তাঁহার কিরণরাশি হইতে জলরাশি নিঃসৃত হয়। ২৫
সেই জলরাশিদ্বারা ইন্দ্র, পবিত্র মধ্যস্থলে ব্ৰহ্মশিলার উপর স্বনামে এবং চন্দ্রের নামে একটি কুণ্ড করেন। ২৬
‘হে চন্দ্ররশ্মিসমূদ্ভূত মহোদধি-স্বরূপ চন্দ্রকুণ্ড! তুমি শ্রুতিদ্বারা লোকের আনন্দ উৎপাদন কর, তুমি আমার পাপ হরণ কর’। ২৭
এই মন্ত্র পাঠ করিয়া চন্দ্র-সরোবরের জলে স্নান এবং চন্দ্রকূট পর্বতে আরোহণপূর্বক যে চন্দ্রমার পূজা করে, তাঁহার পত্নীর কখন সন্ততি বিচ্ছেদ হয় না। ২৮-২৯
মরণান্তে সেই মনুষ্য চন্দ্রপদ ভেদ করিয়া পরম পদ প্রাপ্ত হয়। চন্দ্রকূটের তীরে নন্দন নামে একটি পৰ্বত আছে, সেই স্থানে কামাখ্যার সেবনে আসক্ত সুরপতি ইন্দ্র বাস করেন এবং সর্ব দেবেশ্বর হরিও সেই স্থানে ত্রিদশগণসেবিত আত্মভাব রক্ষা করিয়া সর্বদা বাস করেন। ৩০-৩১
প্রতি অমাবস্যায়, চন্দ্র তিনবার চন্দ্রকূট এবং নন্দন পৰ্বত প্রদক্ষিণ করেন। ৩২
চন্দ্রকূটজলে স্নান এবং চন্দ্রপর্বতে আরোহণ ও লোকপাল শক্রের পূজা করিলে মনুষ্য মহাফল প্রাপ্ত হয়। ৩৩
নন্দনের পূর্বভাগে ভস্মকূট নামে একটি পৰ্বত আছে। সেই স্থানে গমন করিলে লোকে উত্তম শান্তিলাভ করে। ৩৪
ভস্মকূটের দক্ষিণে উৰ্বশী নামে খ্যাত ইন্দ্রের প্রীতিকরী অমৃতধারিণী দেবী আছেন। ৩৫
পূৰ্বে দেবগণ ভোজনের নিমিত্ত যে অমৃত রক্ষা করিয়াছিলেন, উর্বশী কামাখ্যার নিমিত্ত উহা গ্রহণ করিয়া এই স্থানে আগমন করেন। ৩৬
শিলারূপী মহাদেব তাহাকে পরিবেষ্টিত করিয়া রহিয়াছেন। সেই উর্বশী পূর্বোক্ত অমৃতরাশিকে কিছু কিছু অংশ করিয়া প্রত্যহ কামাখ্যার যোনিমণ্ডলে অর্পণ করেন। ৩৭
ঊর্বশী সুধা-শিলার অন্তরে উৰ্বশী-কুণ্ডে বাস করেন। ঐ উর্বশীকুণ্ড ভস্মকূট পর্বতের মধ্যে অবস্থিত। ৩৮
ঐ কুণ্ড বত্রিশ ধনু বিস্তীর্ণ এবং পঞ্চাশ ধনু দীর্ঘ। এই স্থানে স্থান এবং ইহার জল পান করিয়া মনুষ্য মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ৩৯
কামাখ্যা-যোনি-যোগিনী সৰ্ব্বদা ঈশানকোণের দিকে গমন করেন এবং উর্বশীকুণ্ডেও প্রবেশ করেন। ৪০-৪১
সেই স্থানে প্রত্যহ অমৃতদ্বারা আপ্যায়িত হইয়া অতিশয় আনন্দ প্রাপ্ত হন এবং আনন্দযুক্ত হইয়া কামসহ রমণ করেন। ৪২-৪৩
ভস্মকূটের ঈশানকোণে মণিকূট নামে একটি পৰ্বত,–সেই স্থানে মণিকর্ণ নামে একটি শিবলিঙ্গ আছে। ৪৪
সেই শিবলিঙ্গ সদ্যোজাতেরই প্রতিমূর্তি, সদ্যোজাতের মন্ত্রের দ্বারা তাঁহার পূজা করিবে। ৪৫
চন্দ্রতীর্থের জলে স্নান, বাসবের সহিত চন্দ্রের স্পর্শ, মণিকর্ণেশ্বরের দর্শন এবং ভস্মাচলে গমন করিলে মুক্তি লাভ হয়। ৪৬
চন্দ্র–শ্বেতবর্ণ, শ্বেতবস্ত্র পরিধানকারী, দশঅশ্বযুক্ত, সুবর্ণালঙ্কৃত, গদাপাণি, দ্বিহস্ত এবং বরপ্রদ। ৪৭।
ইন্দ্র, সহস্ৰনেত্র, গৌরাঙ্গ, দ্বিভুজ, বামহস্তে বজ্র এবং দক্ষিণ হস্তে অঙ্কুশধারী। ৪৮
ঐরাবতনামক হস্তীর পৃষ্ঠে স্থিত, বাণ ও তূণীরযুক্ত, কক্ষে ধনু এবং মহেশ্বরীর সেবায় নিরত। ৪৯
বকার যাঁহার অনন্তর বর্ণ, তাহা অর্থাৎ লকার অর্ধচন্দ্র এবং অনুস্বার যুক্ত হইলে ইন্দ্রের বীজ হয়, উহা দ্বারা ইন্দ্রের পূজা করিবে। ৫০
হিমালয় পৰ্বত হইতে নির্গত সুমঙ্গলা নামক শোভনা নদী, মণিকূটের পূর্বদিকে সর্বদা প্রবাহিত হইতেছে। ৫১
যে মনুষ্য, মণিকূটে আরোহণ করিয়া সেই নদীকে দর্শন করে, সে গঙ্গাস্নান জন্য ফলপ্রাপ্ত হইয়া স্বর্গে গমন করে। ৫২
মণিকূট-অচলের পূর্বে মৎসধ্বজনামক একটি কুল পর্বত আছে; যে স্থানে কাম মহাদেবের নেত্ৰবহ্নিদ্বারা দগ্ধ হইয়া তপস্যা দ্বারা বৃষধ্বজকে আরাধনা করিয়া পুনর্বার শরীর প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ৫৩
মৎস্যরূপধারী বিষ্ণু সেই স্থানে অধিত্যকা ভূমিতে পৃথিবী অবলোকন করত অবস্থান করিতেছেন। ৫৪
সেই স্থানে দক্ষিণবাহিনী শাশ্বতী নামে নদী এবং কামসরো নামক সরোবর বিদ্যমান আছে। ৫৫
শাশ্বতীর জলে স্নান এবং কামসরোবরের জল পান করিলে সকল কাম হইতে বিমুক্ত হইয়া শিবলোকে সম্মান প্রাপ্ত হয়। ৫৬
গন্ধমাদনের পূর্বে সুকান্তনামে একটি পৰ্বত আছে, তাহার প্রান্তে ইন্দ্রের কুণ্ড, উহার নাম বাসবামৃত-ভোজন। ৫৭
পূৰ্ব্বে শচীপতি ইন্দ্র, কামরূপে তাহার দক্ষিণে অবস্থিত হইয়া শরীরের শ্রান্তিবশত অমৃতপান করিয়াছিলেন। ৫৮
বাসবকুণ্ডে স্নান এবং সুকান্তক পৰ্বতে আরোহণ করিলে বাসবের প্রিয় হইয়া শত্রুলোকে গমন করে। ৫৯
সুকান্তের পূর্বদিকে রক্ষঃকূট নামে পর্বত, এইখানে সর্বদা রাক্ষসেশ্বর নিঋতি বাস করেন। ৬০
তিনি খড়গহস্ত, তাঁহার শরীর অতি বৃহৎ, বামহস্তে ঢাল, মস্তকে জটাজূট উন্নত, দেখিতে একটি কৃষ্ণবর্ণ পৰ্ব্বতের তুল্য, দ্বিভুজ, কৃষ্ণবস্ত্র পরিহিত এবং গর্দভোপরি আরূঢ়। ৬১
আদি, প্রান্ত এবং উপান্ত বর্ণ, অনুস্বার ও বিসর্গের সহিত হইয়া যে বীজ হয়; উহার দ্বারা তাঁহার পূজা করিবে। ৬২
যে মনুষ্য রক্ষঃকূট পৰ্ব্বতে আরোহণ, রাক্ষসেশ্বর নিঋতি এবং রাক্ষসেশ্বরী চণ্ডিকাকে পূজা করে, তাহার আর রাক্ষস হইতে কখন ভয় হয় না। ৬৩
হে রাজন! রাক্ষস, পিশাচ, বেতাল এবং গণনায়কগণ তাহাকে দেখিয়া সর্বদা ভয় পায়। ৬৪
রক্ষঃকূট হইতে পূৰ্ব্বদিকে ভৈরবরূপী মাধব অবস্থান করেন, তাঁহার নাম পাণ্ডুনাথ এবং তাঁহার রূপ অতি ভয়ঙ্কর। ৬৫
সেই পাণ্ডুনাথ দেবতাকে এবং পাণ্ডুনাথ পৰ্ব্বতকেও সর্বদা অষ্টাক্ষর মন্ত্র দ্বারা পূজা করিবে। ৬৬
হে রাজন! যাঁহার বর্ণ রক্ত ও গৌর, বাম হস্তে গদা এবং পদ্ম, দক্ষিণ হস্তে চক্র এবং শক্তি, হস্ত চারিখানি, আসন রক্তপদ্ম, মস্তকে মুকুট, কর্ণে বিশুদ্ধ কুণ্ডল, বক্ষস্থলে উত্তম শ্রীবৎস,-তাঁহাকে “নমো নারায়ণায়” এই বিষ্ণুর মূলমন্ত্র উচ্চারণ করিয়া পূজা করিলে, চতুর্বর্গ সিদ্ধি হয়। ৬৭-৬৯
পাণ্ডুনাথের উত্তরে ব্রহ্মকুণ্ড নামে সরোবর, ইহা পূর্বে ব্রহ্মা স্বর্গবাসীদিগের স্নানের নিমিত্ত নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন। ৭০
ইহার দীর্ঘতা একশত ব্যাম-পরিমিত এবং বিস্তার তাহার অর্ধ। ইহা সকল পাপহর, পবিত্র এবং দেবলোক হইতে আগত। ৭১
‘হে ব্ৰহ্মকুণ্ড! তুমি কমণ্ডলু হইতে উৎপন্ন হইয়াছ, তুমি অমৃতের সরোবর। আমার সকল পাপ হরণ কর এবং স্বর্গ ও পুণ্যের সাধন কর’। ৭২
মনুষ্য তাহার জলে এই মন্ত্র বলিয়া স্নান এবং পাণ্ডুনাথকে পূজা করিয়া বিষ্ণুর সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়। ৭৩।
মনুষ্য ব্ৰহ্মকুণ্ডে স্নান, উমাপতির পূজা এবং বায়ুকূট পৰ্বতে আরোহণ করিয়া মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। ৭৪
পাণ্ডুনাথের পূর্বদিকে চিত্ৰবহনামক পৰ্বত, সেখানে বিষ্ণু সর্বদা বরাহরূপ ধারণ করত বাস করেন। ৭৫
ইহার পূর্বে কামাখ্যা দেবীর আবাস,-নীলকূট পৰ্বত এবং তাহার পূর্ব ভাগে ব্রহ্মার আবাস স্থান। ৭৬
ব্রহ্মগিরি ব্ৰহ্মশৈলের পূর্বভাগে মাটির উপর শুভাবর্ত, মনোহর এবং গভীর কামাখ্যার নাভিমণ্ডল অবস্থিত। ৭৭
সেইস্থানে পরমেশ্বরী উগ্রতারারূপে রমণ এবং বাস করে। সেইস্থানে সেই শুভকারিণী দেবীকে সেই রূপেই পূজা করিবে। ৭৮
তাঁহার বীজমন্ত্র পূর্বে উত্তরতন্ত্রে প্রতিপাদিত হইয়াছে। হে নরশ্রেষ্ঠ! সেই শিবার ধ্যানযোগ্য রূপ শ্রবণ কর। ৭৯
তিনি কৃষ্ণবর্ণা, লম্বোদরী এবং দীর্ঘা, তাঁহার দন্তগুলি ছাড়া ছাড়া এবং রাঙা রাঙা, তাঁহার অঙ্গ কৃশ, হস্ত চারিখানি, দক্ষিণ দিকের দুই হাতে কাতারি এবং খর্পর, বাম দিকের দুই হাতে খড়্গ এবং ইন্দীবর, মস্তকে কেবল একটা জটা। তিনি বাম পাখানি শবের ঊরুদ্বয়ে এবং দক্ষিণ পাখানি একটু উঠাইয়া শবের বক্ষঃস্থলে রাখিয়া অট্টহাস করিতেছেন। তাঁহার গলায় সর্পের হার এবং মুণ্ডমালা, তিনি কামপ্রদায়িনী। ৮০-৮২
এই দেবীর মণ্ডল ত্রিকোণ, বীজ হুঁকার-মধ্য, দ্বারে নানাবিধ যোগিনী; হে নরশার্দূল! তাহাদের নাম ইহার পূজা-তন্ত্রে উক্ত হইয়াছে, ইহা সেই স্থান হইতে জানিবে। উৰ্বশীতে যথাবিধি স্নান, পাণ্ডুশিলাস্পৰ্শন এবং নীলকুটে আরোহণ করিলে মনুষ্য আর যোনিতে জন্মগ্রহণ করে না। ৮৩-৮৪
‘হে উৰ্বশি! তুমি ইন্দ্রপুরী হইতে আগত, বারাণসী অপেক্ষাও অধিক ফলদায়িনী, তোমার শরীর অমৃত দ্বারা ব্যাপ্ত; তুমি আমার পাপ হরণ কর। ৮৫
হে দেবি উর্বশি! তুমি অমৃতস্রাবিণী, অমৃত রাশি দ্বারা পরিপূর্ণ তোমার ঐ অমৃত দ্বারাই আমাকে মোক্ষ প্রদান কর। ৮৬
হে দেবি উৰ্বশি! তুমি ইন্দ্রের প্রিয়া, বারাণসী অপেক্ষাও অধিক ফল দায়িনী এবং লৌহিত্য-হ্রদের সহিত সঙ্গতা, তুমি আমার পাপ নাশ কর। ৮৭
এইরূপ স্তুতিবাচক মন্ত্র পাঠ করিয়া উর্বশীর জলে স্নান করিয়া মনুষ্য সকল প্রকার পাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুলোকে বিরাজ করে। ৮৮
উৰ্বশী-দ্বিভুজা সুবর্ণকঙ্কণধারিণী, অমৃত স্রাবণের নিমিত্ত তাঁহার হাতে একটী সুবর্ণের পাত্র আছে। ৮৯
তিনি শুক্লবস্ত্রা, গৌরবর্ণা, পীনোন্নত-পয়োধরা, সৰ্বাঙ্গসুন্দরী, শুদ্ধা এবং সৰ্বাভরণভূষিতা। ৯০
ইহার নামের আদ্যাক্ষর (উকার) ই ইহার বীজ অর্থাৎ উমার যাহা মন্ত্র, ইহারও সেই মন্ত্র। কামাখ্যা পৰ্বতের পূৰ্ব্বদ্বারে গণেশ এবং মনোহর অগ্নিবেতাল অবস্থান করিতেছেন। ৯১-৯২
ইহাদের স্বরূপ এবং মন্ত্র মহাদেব পূর্বে যেরূপ বলিয়াছেন, তাহা আমি বলিতেছি, হে মহারাজ! শ্রবণ কর। ৯৩
‘ওঁ নমো উল্কামুখায়’ মূল বীজাদি-সঙ্গত এই মন্ত্রই দ্বারে স্থিত সিদ্ধ গণেশের মূলমন্ত্র বলিয়া কীর্তিত হইয়াছে। ৯৪
এক্ষণে তাঁহার রূপ বর্ণন করিতেছি,–তিনি গজমুখ, ত্রিলোচন, লম্বোদর, চতুর্হস্ত, সর্পের যজ্ঞোপবীতধারী, শূৰ্পকর্ণ অর্থাৎ শুণ্ড দুটি কুলার মত, বৃহৎ শুণ্ড, একদন্ত, স্থূলোদর। ৯৫-৯৬
তাঁহার দক্ষিণ দিকের হস্তদ্বয়ে দণ্ড এবং উৎপল ও বামদিকের হস্তদ্বয়ে লড্ডুক এবং পরশু শোভা পাইতেছে। ৯৭
তাহার শরীরের অতিশয় বৃহত্ত্ব হেতু গগন ভিন্ন হইয়াছে, তাঁহার স্কন্ধ, চরণ এবং করতলদ্বয় স্থূল। তিনি সুবুদ্ধি এবং কুবুদ্ধি দ্বারা যুক্ত এবং মুষিকের উপর অবস্থিত। ৯৮
পঞ্চবক্ত্রের পূজায় যে মন্ত্র ও বিধি নির্দিষ্ট হইয়াছে, ইহার পূজাতেও সেই মন্ত্র ও সেই বিধির অনুসরণ করিবে। ১৯
অগ্নিবেতাল দ্বিভুজ, স্কুলাস্য, রক্তনেত্র এবং দেখিতে অতি ভয়ঙ্কর, ইহার ডান হাতে একখানি ছুরি এবং বাঁ হাতে রুধিরের পাত্র, ইহার দাঁতের জন্য মুখ আরও বিকট হইয়াছে, শরীর ক্ষীণ, সর্বাঙ্গে শির উঠিয়াছে, মাথায় একটা লম্বা জটা এবং মুখ হইতে অতি বিকট শব্দ উচ্চারিত হইতেছে। ১০০-১০১
প হইতে চতুর্থ বর্ণ অগ্নিবীজ এবং ষষ্ঠ স্বর যুক্ত হইলে অগ্নিবেতালের মন্ত্র, ইহা সৰ্ব্বত্র ভয়ের নাশকারী। ১০২
এই মন্ত্রদ্বারা অগ্নিবেতালের যে পূজা করে, তাঁহার ভূতাদির ভয় থাকে না। ১০৩
হে নৃপ! শৈলপুত্রী প্রভৃতি অষ্ট যোগিনীর অষ্টাক্ষর মন্ত্র পূৰ্ব্বে বৈষ্ণবী তন্ত্রে ক্রমশঃ প্রতিপাদিত হইয়াছে। হে নৃপ-শার্দূল! পূর্বে শৈলপুত্রীর অপর যোগিনীগণের অঙ্গমন্ত্র ও স্বরূপ বিশেষ করিয়া প্রতিপাদিত হইয়াছে। ১০৪-১০৫
হে নৃপসত্তম! এই সমুদয় যোগিনীগণকে প্রত্যক্ষর বীজ, দুর্গাবীজ অথবা নেত্ৰবীজদ্বারা পূজা করিবে। ১০৬
কাত্যায়নী এবং পাদদুর্গার দুর্গাতন্ত্রদ্বারা পূজা করিবে এবং ঐ পূজার নিয়ম পূর্বে প্রতিপাদিত হইয়াছে। ১০৭
কালরাত্রির মন্ত্রদ্বারা কালরাত্রির পূজা করিবে। কালরাত্রির রূপ এবং মন্ত্ৰ পূৰ্বেই প্রতিপাদিত হইয়াছে। ১০৮
মহামায়ার তন্ত্র ও মন্ত্র দ্বারা ভুবনেশ্বরীর পূজা করিবে। এই সকল যোগিনীগণ কামাখ্যার ন্যায় ফলদায়িনী। ১০৯
যে পূজার কোন প্রকার মন্ত্র বা দেবতার স্বরূপ বলা হয় নাই, সেই পূজা দুর্গাতন্ত্রোক্ত মন্ত্রদ্বারাই সম্পন্ন করিবে। ১১০
যে নরশ্রেষ্ঠ এক এক করিয়া সকল যোগিনীর পূজা করে, সে সমুদয় যজ্ঞানুষ্ঠানের ফল প্রাপ্ত হয়। ১১১
নাভিমণ্ডলের পূর্বে এবং ভস্মকূটের দক্ষিণে নীল শৈলের স্বরূপ পূর্বেই প্রতিপাদিত হইয়াছে। ১১১
পূর্বে যমের প্রতিমূর্তিধারী কর্পট নামে পৰ্ব্বত আছে। সেই স্থানে নীলাঞ্জনতুল্য কৃষ্ণবর্ণ যাম্য শিলা অবস্থিত। হে রাজেন্দ্র! ঐ শিলা পর্বতের অধিত্যকায় অবস্থিত পঞ্চ বাণ বিস্তৃত। ১১৩-১৪
নিত্য প্রাণদণ্ডের সাধকদণ্ড যাঁহার হস্তে, ঐ শিলায় সেই যমের পূজা করিবে। ১১৫
যম–কৃষ্ণবর্ণ, দ্বিভুজ; তাঁহার মস্তক উজ্জ্বল কিরীট এবং মুকুট বিরাজমান, বামহস্তে সর্বদা একখানি ছুরিকা আছে, বস্ত্র কৃষ্ণবর্ণ, পা দুখানি স্থূল, দাঁতগুলি বাহিরে আসিয়া পড়িয়াছে। তিনি মনুষ্যগণকে নিত্য ভয় এবং অভয় প্রদান করেন, তাঁহার বাহন মহিষ। ১১৬-১৭
সাধক যাম্য বীজ দ্বারা পরম ভক্তিসহকারে যমের পূজা করিবে। উপান্তবর্ণের আদি বর্ণ (য) অর্ধচন্দ্র এবং অনুস্বার যুক্ত হইলে, যমবীজ হয়। ইহা যমের প্ৰীতিকারক। ১১৮
কর্পটনামক পৰ্ব্বতে এই মন্ত্র দ্বারা যে যমের পূজা করে, তাহার আর মৃত্যু হয় না। ১১৯
কর্পট পৰ্বতের পূর্বে চিত্ৰনামক একটি পৰ্বত আছে। উহা ভৃঙ্গেশীর অগ্নিকোণে অবস্থিত। ১২০
ব্ৰহ্মপীঠের নীচে অৰ্বাক্ নামে পৰ্বত আছে, উহাতে নবগ্রহগণ যথেচ্ছাক্রমে বাস করেন। ১২১
সেই পৰ্ব্বতের উপর যে ব্যক্তি ঐ গ্রহদিগের পূজা করে, সে কখনও আপদ প্রাপ্ত হয় না। ১২২
চন্দ্র ও সূর্যের রূপ ও মন্ত্র পূর্বে প্রতিপাদিত হইয়াছে। এক্ষণে অবশিষ্ট সাত জন গ্রহের মন্ত্র ও রূপের বিষয় আমার নিকট শ্রবণ কর। ১২৩
মঙ্গল–রক্তবস্ত্রধারী, শূলী, শক্তি ও গদাধর, চতুর্ভূজ, মেষবাহন এবং বরদ। ১২৪
বুধ-পীতবস্ত্রধারী, শূলী; পীতবর্ণের মালায় ভূষিত এবং পীতবর্ণের অনুলেপনে অনুলেপিত। তাঁহার হস্তে খড়্গ, চর্ম এবং গদা, বাহন সিংহ এবং তিনি বরদ। ১২৫
দেবগুরু বৃহস্পতি,–সুবর্ণের মত গৌরবর্ণ, পীতবস্ত্রধারী, সুবর্ণ পঙ্কজের উপর উপবিষ্ট, তিনি চতুর্ভূজ, চারি হস্তে মালা, কমণ্ডলু এবং পদ্ম ধারণ ও বর দান করিতেছেন। ১২৬-২৭
দৈত্যগুরু শুক্র,–সকল দেবগণের মান্য, মনোহর শুক্লবর্ণ, শুক্লবস্ত্রধারী, শঙ্খনাগের উপর উপবিষ্ট, চতুর্ভূজ; দক্ষিণ হস্তে অক্ষ মালা এবং পুস্তক ধারণ, বাম হস্তে বর ও অভয় প্রদান করিতেছেন। ১২৮
শনৈশ্চর,-ইন্দ্রনীলের ন্যায় নীলবর্ণ, শূলী, বরদাতা, গৃধ্রবাহন, পাশ এবং ধনুকধারী। ১২৯
কামদেবের বীজ মঙ্গলের মন্ত্র বলিয়া কীৰ্তিত হইয়াছে। দুর্গার নেত্রবীজের মধ্যস্থিত অক্ষরই বুধের বীজ, উহা সর্বকামফলপ্রদ। ১৩০-১৩১
তকার পঞ্চম চতুঃষট স্বর সংযুক্ত হইলে গণেশবীজ অন্তে–ইহা বৃহস্পতির মন্ত্র। ১৩২
সকল গ্রহদিগের মন্ত্রের বর্ণ কীৰ্তিত হইল। মহামতি ধীর মনুষ্য ঐশ্বৰ্য্যাভিলাষী হইয়া শান্তি ও পৌষ্টিক-কাৰ্যে পূর্বোক্ত মন্ত্রদ্বারা ঐ সকল গ্রহদিগের পূজা করিবে। ১৩৩-১৩৭
রাহু,-একদিকের হস্তে বর এবং অভয়দান করিতেছেন। অপরদিকের হস্তে খড়্গ এবং চর্ম ধারণ করিতেছেন। সিংহাসনের উপর উপবিষ্ট এবং কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া পণ্ডিতগণকর্তৃক অভিহিত হন। ১৩৮
কেতু-ধূমবর্ণ, বিশালাক্ষ, পুচ্ছরূপী চতুর্ভূজ, খড়্গ, চর্ম, গদা এবং বাণধারী ও শবের উপরে স্থিত। ১৩৯
মনুষ্য চিত্রশৈলে এইরূপে নবগ্রহগণের পূজা করিয়া অভীপ্সিত এবং উত্তম শান্তি লাভ করে। ১৪০-৪২
চিত্রকূটের পূর্বদিকে কজ্জল নামক একটি উত্তম পর্বত আছে। সেই স্থানে বিদ্যাধর-আদি সকলপ্রকার দেবযোনি বাস করেন। ১৪৩
সেই পৰ্ব্বতে আরোহণপূৰ্ব্বক সকল দেবগণকে নমস্কার করিলে মনুষ্য ইহলোকে অতুল লক্ষ্মী লাভ করিয়া অন্তে স্বর্গে গমন করে। ১৪৪
কজ্জলাচলের পূর্বদিকে শুভনামে একটি পৰ্ব্বত আছে, সেই পৰ্ব্বতে পূৰ্ব্বকালে সুরেশ্বর ইন্দ্র, শচীর সহিত রমণ করিয়াছিলেন। ১৪৫
তাঁহার পূৰ্ব্বে কপিলগঙ্গা নামে নদী আছে, সেই স্থানে স্নান করিয়া মনুষ্য গঙ্গাস্নানের ফল প্রাপ্ত হয়। ১৪৬
হে নরেশ্বর! কামাখ্যা-নিলয়ের পূর্ব এবং দক্ষিণদিকে ব্ৰহ্মবিল নামক একটি মহৎ আবৰ্ত্ত আছে। ১৪৭
উহার পরিমাণ পঞ্চবিংশতি যোজন। ঐ পূর্বোক্ত আবৰ্ত্ত হইতেই শ্বেতবর্ণ মেঘরাশির ন্যায় দৃশ্যমান নদী নিঃসৃত হইয়াছে। ১৪৮
দেবগণ ‘ক’ শব্দের অর্থ ব্ৰহ্মা বলিয়া নির্ধারণ করিয়াছেন, যেহেতু সেই ব্ৰহ্মার বিল হইতে নিঃসৃত হইয়াছে এবং গঙ্গার মত ফল দান করে এই নিমিত্ত উহার নাম কপিলগঙ্গা। ১৪৯
মন্বন্তরার দিন এই কপিলগঙ্গায় স্নান করিলে মনুষ্য প্রথমে স্বর্গ এবং তাহার পর ব্রহ্মলোকে গমন করে। ১৫০
ঐ নদী অতিক্রম করিয়া দমনিকা নামে আর একটি নদী আছে, উহার জল অতিশয় কৃষ্ণবর্ণ এবং ঐ নদী পাপের দমনকারিণী। ১৫১
তাহার পর ঐ নদীর পূর্ব্বভাগে বৃদ্ধা নামে আর একটি উত্তম নদী আছে, উহা গঙ্গার মত ফলদায়িনী। ১৫২
সমুদয় মাঘমাস ঐ নদীতে এবং দমনিকা নদীতে স্নান করিয়া মনুষ্য নির্বাণপদ প্রাপ্ত হয়। ১৫৩
দমনিকা নদীর পূর্বোত্তর কোণে যমুনাসদৃশ ফলদায়িনী দিব্যযমুনা নাম্নী এক মহতী নদী আছে। ১৫৪
দক্ষিণ-পৰ্বত হইতে উৎপন্ন হইয়া সেই দিব্যযমুনা দক্ষিণ-সমুদ্রাভিমুখে প্রবাহিত। যে কোন মাসে এক মাস কাল তথায় স্নান করিলে মুক্তিলাভ হয়, এবং উত্তম ভোগ-সৌভাগ্য প্রাপ্তি হয়। ১৫৫-১৫৬
তন্মধ্যে, দুৰ্জ্জয়নামক গিরিবনে শিব-সম্ভোগ-সম্ভূত ভৈরবদেব এবং শরভরূপী মহাদেবের মহাভৈরব নামে প্রসিদ্ধ মধ্যখণ্ড বর্তমান। ১৫৭
যে জ্ঞানী পঞ্চবক্ত্র মন্ত্র দ্বারা তাহাকে পূজা করে, সে শিবলোকে গমন করে। ১৫৮
নীলতন্ত্রে কামেশ্বরের যে পূজা কথিত হইয়াছে, দুর্জয় পৰ্ব্বতে তদনুসারেই তাহার পূজা করিবে। ১৫৯
সেখানে, ভৈরব-গঙ্গা এবং ভৈরবসবোবর আছে, মনুষ্য, তথায় স্নান করিলে অমর হইয়া শিব-লোকে বাস করে। ১৬০
দুর্জয় পৰ্ব্বতের দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব কোণে বরাহ নামে এক নগর আছে, ঐ নগরের দক্ষিণে ক্ষোভক নামে এক নগর এবং তাহার দক্ষিণে ক্ষোভক নামে মহাশৈল আছে। সেই পৰ্ব্বতে রক্তশিলা-পৃষ্ঠে দেবী অবস্থিতা আছেন। তিনি পঞ্চযোনি-স্বরূপা এবং তাঁহার নাম পঞ্চ-পুষ্করিণী। ১৬১-৬২
হিমালয়-নন্দিনী দুর্গা, নিত্য একত্রই পঞ্চবক্ত্রকে পঞ্চযোনি দ্বারা সুখান্বিত করিতে তথায় বর্তমান আছেন। ১৬৩
সেই পৰ্ব্বতের পূর্বভাগে কান্তা নামে মহানদী; এই মহানদী উত্তর হইতে আসিয়া দক্ষিণ সাগরে গমন করিতেছে। ১৬৪
সেই পৰ্ব্বতের উপত্যকা ভূমিতে দিব্যকুণ্ড নামে মহাকুণ্ড বর্তমান। তথায় স্নান করিয়া সেই দেবীকে পূজা করিবে। ১৬৫
যে সৌভাগ্যশালী মনুষ্য, দিব্যকুণ্ডে স্নান করিয়া পঞ্চপুষ্করিণী দেবীকে পূজা করে, তাঁহার আর জন্ম হয় না। ১৬৬
তথায় পঞ্চযোনি পুষ্করিণীরূপে বৰ্ত্তমান, এইজন্যই ঐ দেবীর নাম পঞ্চ পুষ্করিণী। ১৬৭
কুশ-পুষ্প যেরূপ ভাবে থাকে, পঞ্চপুষ্করিণীর দেবীর সর্ব কামপ্রদ প্রচণ্ড পঞ্চযোনিও সেইরূপ ভাবেই আছেন। ১৬৮
সাধক-শ্রেষ্ঠগণ ত্রিপুর মন্ত্র বা কামেশ্বরী-মন্ত্র ও তদীয় পূজাবিধি অনুসারে তাঁহাকে পূজা করিবে। ১৬৯
ত্রিপুরা-বালা এবং কামেশ্বরীর যে মন্ত্র, ইহারও সেই মন্ত্র। ১৭০
উগ্রচণ্ডা, প্রচণ্ডা, চণ্ডোগ্রা, চণ্ডনায়িকা এবং চণ্ডা–পঞ্চপুষ্করিণী দেবীর এই পাঁচজন যোগিনী। ১৭১
সেই শিলাপৃষ্ঠে দেবীর দক্ষিণ-পূৰ্বকোণে পঞ্চ পুষ্করিণী আছে, তথায় নায়ক হেরুকনামে শিব-লিঙ্গ আছেন, সাধক, তাহাকেও পূজা করিবে। ১৭২
ভৈরব মন্ত্রে তাহাকে পূজা করিলে স্বর্গ লাভ হয়। ১৭৩
হে নরশ্রেষ্ঠ! শিব বলিয়াছেন–দেবী চণ্ডগৌরী এই পঞ্চপুষ্করিণী দেবীর নির্মাল্যধারিণী। ১৭৪
হে নরশ্রেষ্ঠ! বসন্তকালে কান্তা-সলিলে স্নান করিলে ইহলোকে রূপ-গুণ সম্পন্ন হয় এবং অন্তে শিবলোক লাভ করে। ১৭৫
সেই ক্ষোভক পর্বতের ঈশানকোণে উত্তুঙ্গ সন্ধ্যাচল, বসিষ্ঠ এইখানে থাকিয়াই উগ্রতারাদেবী প্রভৃতিকে শাপ দেন। ১৭৬
পূৰ্ব্বকালে ব্ৰহ্ম-নন্দন বসিষ্ঠ, নিমিরাজার শাপে দেহ-হীন হন; রাজর্ষি নিমিও বসিষ্ঠ-শাপে দেহহীন হন। ১৭৭
তখন বসিষ্ঠ ব্ৰহ্মার উপদেশে নির্জন কামরূপপীঠে সন্ধ্যাচলে তপস্যা করেন, তাহাতে বিষ্ণু তাঁহার প্রত্যক্ষগোচর হইলেন। ১৭৮
বিষ্ণু বরদান করিলে, মহর্ষি, সেই বরপ্রভাবে সন্ধ্যা-গিরি-প্রস্থে অমৃতানয়ন পূৰ্ব্বক মহাকুণ্ড নিৰ্মাণ করিয়া তথায় স্নান ও তদীয় জল পান করিবামাত্র পূৰ্ব্ববৎ সম্পূর্ণ শরীর প্রাপ্ত হন। ১৭৯-১৮০
সেই অমৃতকুণ্ড হইতে সন্ধ্যানদী নিঃসৃত হইয়াছেন, তথায় স্নান করিলে মনুষ্য চিরজীবী এবং নীরোগ হয়। ১৮১
সেই নদীর পূর্বে ললিতানাম্নী মনোহারিণী দক্ষিণ-সাগর-গামিনী এক মহতী নদী আছে; মহাদেব ঐ নদীকে অবতারিত করেন। ১৮২
যে মনুষ্য, বৈশাখমাসের শুক্লতৃতীয়াতে ললিতা-স্নান করে, সে শিবলোক প্রাপ্ত হয়। ১৮৩
ললিতা নদীর পূর্বতীরে ভগবান্ নামে এক পৰ্ব্বত আছে; ভগবান্ বিষ্ণু, লিঙ্গরূপে তথায় বর্তমান আছেন। ১৮৪
যে মনুষ্য, শুক্লপক্ষের দ্বাদশীতে ললিতা-স্নান করিয়া ভগবৎ-পর্বতে আরোহণপূৰ্ব্বক পরমেশ্বর বিষ্ণুর পূজা করে, সে সশরীরে বিষ্ণুলোকে গমন করে। ১৮৫
পূর্বোক্ত এবং এই সমস্ত নদী–সকলেই উত্তরবাহিত এবং দক্ষিণ-সাগর গামিনী; এইসকল নদীই গঙ্গাসদৃশ। ১৮৬
উনাশীতিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৯