সপ্তসপ্ততিতম অধ্যায় – কামরূপ প্রদর্শন—জল্পীশলিঙ্গমাহাত্ম্য
ঔৰ্ব বলিলেন,–তাঁহার পর কামরূপের বায়ুকোণে মহাদেব জল্পীশনামক আপনার লিঙ্গ দেখাইয়াছিলেন। ১
যে স্থানে নন্দী জগৎপতি মহাদেবের আরাধনা করিয়া, এক শরীরেই গাণপত্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ২
তাঁহার পর নন্দিকুণ্ড, যে স্থলে পূৰ্ব্বে নন্দী তপশ্চৰ্য্যা করিয়াছিলেন, সেই পবিত্র জলশালী সর্বোত্তম লব্ধবরনামক অভিষেকজলাশয়। ৩
যেখানে স্নান করিয়া ও যাঁহার জল পান করিয়া মনুষ্য কৃতকৃত্য হয় এবং নন্দীর সমান প্রিয় হইয়া মহাদেবের সদনে গমন করে। ৪
তাঁহার অদূরে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী জগন্ময়ী যোনিরূপা মহাদেবীকে– মহাদেব, মহাত্মা ভৈরবকে দেখাইলেন। ৫
যেখানে নন্দী মহাদেবের আজ্ঞায় স্তুতি এবং নুতি দ্বারা মহামায়ার আরাধনা করিয়া, গণের আধিপত্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ৬
ঐ স্থানে সুবর্ণমানস নামে মনোহর একটি নদ আছে। ঐ নদ স্বয়ং মানস সরোবর, পূৰ্ব্বকালে মহাদেবের আজ্ঞায় তপশ্চরণকারী নন্দীর উপর অনুগ্রহ করিবার নিমিত্ত ঐ স্থানে আসিয়াছিল। ৭
সেই স্থানে হিমালয় হইতে নিঃসৃত শুভরূপা জটোদ্ভবা নামে নদী আছে, যে নদীতে স্নান করিয়া মনুষ্য গঙ্গাতুল্য পুণ্য লাভ করে। ৮
পূর্বে গৌরীর বিবাহ সময়ে সমুদয় মাতৃগণ মহাদেবের জটাজূটে জলাভিষেক করিয়াছিলেন। ১০
সেই জল একত্র হইয়া নদীরূপে পরিণত হইয়াছিল বলিয়া ঐ নদী জটোদা নামে বিখ্যাত। হে নরশ্রেষ্ঠ! চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ঐ নদীতে স্নান করিয়া মনুষ্য দীর্ঘায়ু হয় ও মহাদেবের সদনে গমন করে। দ্বাপর যুগে ত্রিঃস্রোতানামে যে সরিৎশ্রেষ্ঠা গঙ্গা ছিল। ১১-১২
সেই শুক্লা নদী হিমালয়-নিৰ্গত এবং চন্দ্রবিম্ব হইতে উৎপন্ন। এই নদীতে মহামাঘীর দিনে স্নান করিলে মনুষ্যের পুনর্বার আর মাতৃগর্ভে জন্ম হয় না।১৩
চন্দ্র ও সূৰ্য্য গ্রহণের দিবস স্নান করিলে মনুষ্য কৈবল্য প্রাপ্ত হয়। সিতপ্রভা নামে একটি নদী আছে, উহা মহাদেবকর্তৃক মর্ত্যলোকে অবতারিত হইয়াছে, উহার জল শ্বেতবর্ণ এবং গতি দক্ষিণ সমুদ্র অবধি। ১৪-১৫
শুক্লপক্ষে দশহরা নামক দশমী তিথিতে ঐ নদীতে স্নান করিয়া মনুষ্য পাপ বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুগৃহে গমন করে। উহা হইতে কিঞ্চিৎ পূৰ্বে নবতোয়া নামে নদী অবস্থিত। ১৬
উহা প্রতিক্ষণ মনুষ্যকে নূতন নূতন করিয়া পবিত্র করে। এই নিমিত্ত উহা নবতোয়া নামে অভিহিত হয়। ১৭
মহামাঘীতে মনুষ্য উহাতে স্নান করিয়া দেবত্ব লাভ করে এবং সম্পূর্ণ মাঘমাস অবিচ্ছেদে স্নান করিয়া বিষ্ণুগৃহে গমন করে। ১৮
ঐসকল নদীর পতি অগদ নামক একটি নদ আছে, উহা পূর্বপীঠে অবস্থিত, পবিত্র এবং ব্ৰহ্মপাদ হইতে উৎপন্ন। ১৯
সেই দেব ও গন্ধৰ্ব্ব-সেবিত নদ হিমালয় হইতে নির্গত হইয়াছে, উহাতে স্নান করিলে এবং উহার জল পান করিলে মনুষ্য ব্ৰহ্মগৃহে গমন করে। যে মনুষ্য সমস্ত কার্তিকমাস অবিচ্ছেদে অগদনামক মহানদে স্নান করে, তাঁহার পুণ্যফল শ্রবণ কর। ২০২১
সে মনুষ্য ইহলোকে নীরোগ হইয়া সকল প্রকার সুখভোগ করিয়া পরকালে দেবগৃহে গমন করে এবং অবশেষে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ২২
মনুষ্য নন্দিকুণ্ডে স্নান করিয়া রাত্রে নক্তব্ৰত করিবে। তাঁহার পর দিন জল্পীশ দেবের মন্দিরে গমন করিবে। ২৩
সেই স্থানে মহানদীতে স্নান করিয়া এবং জল্পীশ লাভ করিয়া হবিষ্যাশী হইয়া সেই রাত্রি যাপন করিবে। ২৪
অনন্তর দিবা আগত হইলে শিবদায়িনী সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দিরে গমন করিবে। অষ্টমীতে তাঁহার পূজা ও উপবাস করিবে। ২৫
সেই দেবী চতুর্ভুজা, পীনোন্নতপয়োধরা, সিন্দুরপুঞ্জসদৃশ আভাশালিনী এবং দক্ষিণ বাহুদ্বয়ে কর্তী ও খৰ্পরধারিণী। ২৬
বাম-বাহুযুগলে অভীতি ও বরদায়িনী, মস্তকে জটাধারিণী, আর রক্তবর্ণ প্রেতের উপর অবস্থিতা। ২৭
ইহার মন্ত্র পঞ্চাক্ষর ও কামাখ্যাতন্ত্র অনুসারেই ইহার পূজা হইয়া থাকে। বিধানপূর্বক ইহার পূজা করিলে মনুষ্য পুনর্বার আর যোনিতে জন্ম গ্রহণ করে না। ২৮-২৯
পূর্বে জামদগ্ন্যের ভয়ে ভীত কতকগুলি ক্ষত্রিয় ম্লেচ্ছত্ব প্রাপ্ত হইয়া জল্পীশের শরণাগত হইয়াছিল। ৩০
তাহারা জল্পীশ দেবের সেবা করত সৰ্ব্বদা ম্লেচ্ছভাষায় কথাবার্তা কহিয়া এবং আর্যভাষা পরিত্যাগ করিয়া জল্পীশ দেবকে গোপন করিয়া রাখে। ৩১
হে মহারাজ! তাহারা জল্পীশ দেবের গণস্বরূপ হইয়াছে, অতএব তাহা দিগের সকলকে সন্তুষ্ট করিয়া জল্পীশ দেবের পূজা করিবে। ৩২
এই জল্পীশ বরদাভয়হস্ত কুন্দতুল্য শ্বেতবর্ণ। ইহাকে তৎপুরুষের মন্ত্রে পূজা করিবে। ৩৩
জল্পীশ দেবের পীঠ অতি পূণ্যকর। যে মনুষ্য ইহার বিষয় সম্যক্ বিদিত হয়, সে মহাদেবের গৃহে গমন করে। ৩৪
সপ্তসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৭