চতুঃসপ্ততিতম অধ্যায় – অষ্টবিধ যোনিমুদ্রা ও মন্ত্ররহস্য
ভগবান বলিলেন,–পূর্বে মন্ত্রবিভাজনাবসরে যে যে মন্ত্র কথিত হইয়াছে, উহাদের মধ্যে যোনিমুদ্রা আট প্রকার। উহার মধ্যে প্রথমা যোনিমুদ্রা কীর্তিতা হইয়াছে। ১।
দ্বিতীয়া কামাখ্যার প্রিয় খেচরা মুদ্রা, ইহা অতি গুহ্য এবং অদ্ভুত, ইহা দেখাইলে চণ্ডিকা দেবী তুষ্ট হন। ২
দক্ষিণ হস্তের অনামিকা বাম হস্তের তর্জনীর সহিত যুক্ত করিবে এবং বামহস্তের অনামিকাকে দক্ষিণ হস্তের তর্জনীর সহিত যুক্ত করিবে, ঐ দুই কনিষ্ঠার অগ্রভাগ তর্জনীদ্বয়ের অগ্রভাগদ্বারা বেষ্টিত করিবে। ৩-৪
মধ্যমাদ্বয় অনামিকার অগ্রে বিন্যস্ত করিবে, তাহাদেরও পরস্পরে অগ্রভাগ সংযুক্ত করিয়া কনিষ্ঠাদ্বয় অগ্রভাগের সহিত যুক্ত করিবে। ৫
তাহাদের মূলে অঙ্গুষ্ঠদ্বয়ের বিন্যাস করিবে, এইরূপে খেচরীযোনিনামক যোনিমুদ্রা হয়, উহা কাম এবং অর্থপ্রদ। ৬
ইহার অধোদেশে যদি দুইটি কনিষ্ঠ অঙ্গুলীর যোগ করা হয় তাহা হইলে গুহ্যযোনি নামে মুদ্রা, উহা কামেশ্বরীর অত্যন্ত তুষ্টি প্রদ। ৭
পূৰ্ববৎ হস্ততলের কনিষ্ঠা এবং অনামিকাদ্বয় পরস্পর বেষ্টন করিয়া অধোভাগে নিয়োজিত করিয়া উদিকে দুইটি মধ্যমা স্থাপিত করিয়া পরস্পরের অগ্রভাগ সংযুক্ত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম ত্রিশঙ্করী যোনি, উহা ত্রিপুরার তুষ্টিপ্রদ। ৮-১০
মধ্যমা অঙ্গুলীদ্বয় পূর্ববৎ অনামিকা এবং কনিষ্ঠাদ্বারা বেষ্টন করিয়া তাহাদের সম্মুখে মূলপ্রদেশে অঙ্কুষ্ঠের ন্যাস করিলে যে মুদ্রা হয়, উহা শারদী-মুদ্রা, এই মুদ্রা শারদার তুষ্টিপ্রদ। ১১
বৈষ্ণবীতন্ত্র প্রসঙ্গে মূল যোনিমুদ্রা কথিত হইয়াছে। উভয় হস্তের তর্জনী অনামিকা, মধ্যমাদ্বয় ও কনিষ্ঠা ইহাদিগকে ক্রমে যুক্ত করিয়া কনিষ্ঠার মূল দেশে-অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ নিক্ষেপ করিলে মহযোনি মুদ্রা হয়। ১২-১৩
অঙ্গুষ্ঠদ্বয় সংবেষ্টন করিয়া এবং অবশিষ্ট হস্তাঙ্গুলি সকল অগ্রভাগে সংযুক্ত করিয়া করতলদ্বয়ের মধ্যে শূন্য করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম যোগিনী, ইহা যোগিনীদের প্রিয়করী। ১৪
এই কামেশ্বরী দেবীর প্রিয় আট প্রকার যোনিমুদ্রা কথিত হইল। ইহারা দেবীর ভিন্ন ভিন্ন মূর্তিতে এবং অন্য সকল দেবতারও তুষ্টিপ্রদ। ১৫
যাত্রাকালে, যুদ্ধবিষয়ে বকাবকি বা তর্ককালে, ঝগড়ার সময় যে ব্যক্তি এই আট প্রকার যোনিমুদ্রার স্মরণ করে, তাহার নিত্য জয় লাভ হয়। ১৬
বিসর্জনে, পূজনে, চণ্ডিকার স্মরণাদি ভিন্ন ভিন্ন কর্মে এবং চণ্ডিকা দেবীর পূজায় ইহারা যোনি নামে খ্যাত হয়। ১৭
বিসর্জন সময়ে এইরূপ ক্ৰমে মুদ্রা প্রদর্শন করিবে। এক্ষণে বাম, দাক্ষিণ্য, রহস্যনামক মন্ত্র শুদ্ধির বিষয় বলিতেছি, শ্রবণ কর। ১৮
মন্ত্র দ্বারা যে উত্তম শরীর নির্মাণ করা হয়, মন্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা উহাকে মন্ত্রের রহস্য বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। ১৯
কামাখ্যাদেবীর ষটকোণ যন্ত্রের দলান্তরে উর্দ্ধে তিন সন্ধিস্থলে তিনবার মূলমন্ত্র লিখিবে। ২০
অধঃস্থিত ত্রিসন্ধ্যাতে মদনের সহিত মিলিত ব্রহ্মা, ইন্দ্র ও মহাদেবকে ভূর্জত্বচে তিনবার অঙ্কিত করিবে। ২১
তাহাকে দক্ষিণ হস্ত দ্বারা গ্রহণ করিয়া উত্তরমুখ হইয়া তাহার উপর সহস্র বার জপ করিবে। ২২
সাধকোত্তমেরা জপান্তে লিখিত মন্ত্র দক্ষিণ বাহুতে ধারণ করিয়া সর্বত্র জয়ী, দীর্ঘায়ু, সর্ববশকৃৎ ও ধনধান্যসমৃদ্ধিমান হইয়া মরণান্তে দেবীগৃহে গমন করেন। ২৩-২৫
ষটকোণাভ্যন্তরকৃত অষ্ট দলে বেষ্টিত যন্ত্র, যাবক গলাইয়া তাহার রসদ্বারা ভূর্জপত্রে লিখিয়া উত্তরাদিক্রমে বৈষ্ণবীমন্ত্রান্তর্গত অষ্টবর্ণ ও কামরাজক পূর্ববৎ মধ্যভাগে লিখিয়া ত্রিকোণের অগ্রে নেত্রবীজের তিনটি বর্ণ লিখিবে এবং বাম করস্থিত যন্ত্রকে এইরূপে তিন ভাগ করিয়া দক্ষিণহস্তে মালা লইয়া তিনহাজার বার জপ করিবে। ২৬-২৮
জপের অবসানে বৈষ্ণবীরূপ ধ্যান করত অতন্দ্ৰিতভাবে সহস্র প্রাণায়াম করিয়া সেই উত্তমরূপে লিখিত যন্ত্র গ্রীবাদেশে ধারণ করিবে তাহাতে সর্বত্র বিজয়ী হইবে। ২৯-৩০
যদি রাজপুত্র ঐরূপ কবচ ধারণ করে, তাহা হইলে রাজা হয়, অপরে ঐরূপ কবচ ধারণ করিলে, রাজার মন্ত্রী হয়, ব্রাহ্মণ ঐরূপ কবচ ধারণ করিলে বিদ্বান, কবি এবং বাগ্মী হয়। ৩১
ঐরূপ কবচধারীর রাক্ষস, পিশাচ, ভূত বা অন্য হইতে ভয় হয় না এবং কখনও পরাজয় হয় না। সে ব্যক্তি দীর্ঘায়ু ও অধিক বুদ্ধিশালী হয় এবং মৃত হইয়া মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ৩২-৩৩।
ভূর্জপত্রে শ্রীফলের আটা দিয়া অষ্ট-পত্র-যুক্ত একটি সম্পূর্ণ মণ্ডল অঙ্কিত করিয়া তাহার মধ্যস্থলে একটি ঘটকোণ লিখিবে তাহার তিন কোণে ত্রিপুরা মন্ত্রের বর্ণ এবং অধোভাগে নেত্ৰবীজ লিখিবে। তাহার পর সংযত-মানস হইয়া তিন দিনে অযুতবার জপ করিবে। ৩৪-৩৭
তাহার পর হৃষ্ট হইয়া তিন সহস্র প্রাণায়াম করিয়া পণ্ডিত সাধক নবমীর দিন সন্ধ্যাকালে উহা মস্তকে ধারণ করিবে। ৩৮
তাহা হইলে সে শতায়ুঃ, বুদ্ধিমান, উত্তম পণ্ডিত, বল, বীর্য, ধন ও ঐশ্বৰ্য্য মুক্ত অথবা রাজা হয় এবং সেই মেধাবী মহামায়া কামাখ্যা, ত্রিপুরা এবং মহোৎসাহা শারদাকেও প্রত্যক্ষ দর্শন করে। ৩৯-৪০
বিষগ্রাহ, ভুজঙ্গ বা অপর যে কেহ তাহার হিংসক, তাহারা তাহার শরীর প্রাপ্ত হইয়া বিষাদ প্রাপ্ত হয়; সে বিষয়ে কোন সংশয় নাই। ৪১
সংগ্রামে বা শাস্ত্রের তর্কে এই মন্ত্রের মত জয় লাভের উপায় ত্রিভুবনে আর নাই, এই নিমিত্ত সেই মন্ত্র ধারণ করিবে। ৪২
এই মন্ত্রধারী, মরণের পর দেবীগৃহে গমন করিয়া পরে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। শারদাখ্যা মহামায়া, কামাখ্যা, ত্রিপুরা এবং মহোৎসাহ ইহাদের মন্ত্রের যোগে উহা অষ্টদল একটি মণ্ডল অঙ্কিত করিয়া তাহার মধ্যে যুগপৎ লিখিবে। ৪-৪৪
অপর দুইটি মন্ত্রের অক্ষর দ্বারা দ্বারদেশে এবং কোষ্ঠে লিখিবে। তাহার শুক্ল কৌশেয় বস্ত্র বহ্নিশিখরে রস দ্বারা রঞ্জিত করিয়া সেই বস্তুকে উত্তরীয়, করত জপ আরম্ভ করিবে। উপবাসী এবং শুদ্ধ হইয়া মাতৃকান্যাস করিবে। ৪৫-৪৬
তদনন্তর পাঁচদিনে পাঁচটি পঞ্চ সহস্রবার জপ করিবে। জপের অবসানে পাঁচদিনে পাঁচ হাজার প্রাণায়াম করিয়া তদন্তে কাত্যায়নী কবচ ন্যাস করিবে। ৪৭-৪৮
তদনন্তর মাতৃকা-মন্ত্র দ্বারা শ্বাসরোধপূর্বক কপিলার ক্ষীর তিনবার পান করিয়া রাত্রি জাগরণ করিবে। ৪৯
এইরূপে শুক্লবস্ত্র পরিধানপূর্বক যে ব্যক্তি শরীরে এই মন্ত্র ধারণ করে, সে অষ্ট সিদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া দেবীলোকে গমন করে। ৫০
যে ব্যক্তি নিত্য এই মন্ত্রে মন্ত্রিত বস্ত্রকে উত্তরীয় করে, হে মহাভাগদ্বয়! তাহার প্রভাবের বিষয় শ্রবণ কর। ৫১
তাহার দেহে কখন অস্ত্র প্রবেশ করে না। অগ্নি তাহার শরীর দগ্ধ করে না এবং জল তাহার শরীরকে ক্লিন্ন করে না। ৫২
রাক্ষস, পিশাচ এবং যাহারা প্রাণীর হিংসক, তাহারা তাহাকে সম্মুখে দখিয়া ভয়ে পলায়ন করে। ৫৩
সেই সাধকশ্রেষ্ঠ সৰ্ব্বত্র অবারিত হইয়া গমন করে। এবং দেবতা, রাজা ও স্ত্রীদিগকে বশীভূত করে। ৫৪
সে উৎসাহযুক্ত, মেধাবী, বাগ্মী, রাজতুল্য, চিরজীবী, মহাভাগ, ধন-ধান্য সমৃদ্ধিমান, কবি, প্রজ্ঞাশালী এবং শত্রুগণের অভেদ্য হয়। যে গৃহে সে বাস করে, সে গৃহে বজ্রপাত হয় না। ৫৫-৫৬
হে ভৈরব! সংগ্রামে দৃঢ়হস্তনিক্ষিপ্ত অস্ত্র সকলও তাহার শরীরের পীড়া করে না। কদাপি তাহার আধি ও ব্যাধি হয় না এবং সেই বুদ্ধিমান দেবীর পুত্রবৎ প্রিয় হইয়া মরণানন্তর মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ৫৭-৫৮
যে পতিব্রতা স্ত্রী স্বামিকৰ্তৃক মন্ত্রিত মন্ত্র ধারণ করে, সেই বধূ, পুত্র, ঐশ্বৰ্য্য, সুখ এবং দীর্ঘ আয়ুঃ প্রাপ্ত হয়। ৫৯
প্রত্যেকে এক একটি বৃদ্ধি করিয়া আমি ক্ৰমশঃ বিংশতি প্রকার মন্ত্র তোমার নিকট বলিলাম। ৬০
যে ব্যক্তি ঐ সকল মন্ত্রের এক একটি করিয়া চিন্তা করত সর্বদা হৃদয়ে রক্ষা করে অথবা সকল মন্ত্রের স্বরূপ লিখিয়া গলায় ধারণ করে, সে ভূতলে দেবে তুল্য প্রভাবশালী হস্তু এবং তৎক্ষণাৎ পূর্বোক্ত সমস্ত ফল প্রাপ্ত হয়। ৬১-৬২
সে এই লোকত্রয়ের মধ্যে গুপ্ত বস্তু সকল দর্শন করিতে সমর্থ হয়। এই সমস্ত আটপ্রকার মন্ত্র বর্গের সহিত পূর্বোক্ত সহস্র প্রকার শুক্লবস্ত্রে লিখিয়া দেহে ধারণ করিলে সে সমুদয় লাভ করে। ৬৩-৬৪
যে ক্ষত্রিয়জাতীয় যুদ্ধ সময়ে ইষ্টধাম কবচ হৃদয়ে ধারণ করে এবং দেবীর আদিকৃত আটটি মন্ত্রাক্ষর বাহ্যাঙ্গবিশেষে ধারণ করে। ৬৫
গলায় বিষ্ণু, বক্ষঃস্থলে ব্রহ্মা, স্তনদ্বয়ে পুত্রদ্বয়যুক্ত মহেশ্বর, বাহু ও অঙ্গের সন্ধিতে মিহির ও বৈষ্ণবী এবং বাহুদ্বয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে লিখিয়া সৰ্ব্বগাত্রে শিবা বৰ্ম্মস্বরূপ চিন্তা করে, ললাটে তিলকের মধ্যে এই উত্তম অষ্টাক্ষর লেখে, তাহার পর অষ্টধামে হস্ত দিয়া বৈষ্ণবী তন্ত্রমন্ত্র আটবার জপ করিয়া বক্ষঃস্থলে গমন করে। ৬৬-৬৭
সে সংগ্রামে আমার তুল্য বীর হয়। শত্রুনিঃক্ষিপ্ত অস্ত্রসমূহ তদ্দাহ তৃণবৎ প্রতিভাত হয়; সে অগ্নিমধ্যেও প্রবেশে সমর্থ হইয়া থাকে। ৬৮-৬৯
সিংহের সম্মুখ হইতে যেমন হরিণের পলায়ন করে, তেমনি তাহার সম্মুখ হইতে শত্রুগণ পলায়ন করে এবং সে নরশ্রেষ্ঠ বীর্যবান্ ও বলবান হয়। ৭০
হে ভৈরব! বৈষ্ণবীর মুখ্য মন্ত্রের মধ্যে কামাখ্যার এই রহস্য কথিত হইল, এক্ষণে ত্রিপুরাভৈরবীর মন্ত্রাদির বিষয় শ্রবণ কর। ৭১
ত্রিপুরার সকল মন্ত্র একত্র করিলে ত্রয়োদশাধিক বিংশতি সহস্র হয়। তাহার বাগভবাদি ত্রয়োদশ বীজই সর্বোৎকৃষ্ট। ৭২
ভৈরব; ত্রিপুরা বালার মন্ত্র শ্রবণ কর; ইহার বীজ বাগভব। এই ত্রিপুরা বালা। মধ্যা ত্রিপুরার কথা পূৰ্বেই বলা হইয়াছে; যিনি ত্রিপুর ভৈরবী, তিনি শেষা এবং তেজস্বিনী। ৭৩-৮৬
মধ্যার পূজাপরিপাটী বলা হইয়াছে; এক্ষণে ত্রিপুরা বালা ও ত্রিপুর ভৈরবীর সর্বসিদ্ধিপ্রদায়ক পূজাক্রম শ্রবণ কর। ৮৭
কুলকুণ্ডলিনীর সহিত জীবাত্মাকে ষট্চক্র ভেদ করাইয়া পরমাত্মার সহিত মিলাইবে। ৮৮
মধ্যাত্রিপুরার যাদৃশদ্বার মণ্ডলে কোণে যেরূপ লিখিতে হয়, ইহারও তাদৃশ দ্বার মণ্ডল করিয়া কোণে সেইরূপই লিখিবে। ৮৯
পূৰ্বে কামাখ্যাপূজন প্রসঙ্গে ত্রিপুরা-পীঠপূজা-প্রস্তাবে উত্তর তন্ত্রে কথিত পাপোৎসারণ, ভূমিশোধন, দহন, প্লাবন এবং পাত্র প্রতিপত্তি প্রভৃতি সমুদয় কাৰ্যই ইহাতে করিবে। ৯০-৯২
মন্ত্রবর্ণ ও মাতৃকাবর্ণ স্বরব্যঞ্জনসমূহ দ্বারা নিজদেহে ন্যাস করিয়া তাহার রূপ চিন্তা করিবে। ৯৩
ত্রিপুর-ভৈরবী দেবী, রক্তবর্ণা, রক্তবস্ত্রপরিধানা চতুর্ভূজা; তাহার উর্ধ্ব দক্ষিণহস্তে মালা, অধো দক্ষিণহস্তে উত্তম পুস্তক। ৯৪
বামহস্তযুগলে বরাভয়, দীপ্তি সহস্র সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল; তিনি ত্রিনয়না, গজেন্দ্রগমনা। ৯৫
উত্তুঙ্গপীন-স্তনযুগল-শোভিতা, শ্বেতপ্রেতোপরি আসীনা, সহাস্যবদনা, সৰ্বালঙ্কারভূষিতা। ৯৬
তাহার মস্তক, বক্ষঃস্থল এবং কটিদেশ তিনছড়া মুণ্ডমালা দ্বারা তিনফের বেষ্টিত। ১৭
নয়নত্ৰয় মধুপানে ঘূর্ণিত, ওষ্ঠাধর রক্তবর্ণ; বরদায়িনী দেবী ত্রিপুর-ভৈরবীকে এইরূপ চিন্তা করিবে। ১৮
ভৈরব! ত্রিপুরা-বালার রূপ পূৰ্বে পীঠ যোগক্রমে পূজা প্রস্তাবে কথিত হইয়াছে; তাহার কিঞ্চিৎ শ্রবণ কর। ৯৯
যিনি পুষ্পবাণ, পুষ্পধনু ও পাশ ধারণ করিয়া পঞ্চপ্রেতোপরি আসীনা, তিনিই ত্রিপুরা–বালা। ১০০
ঐঁ ত্রিপুরা দেবি! বিদ্মহে ক্লীঁ কামেশ্বৰ্য্যৈ ধীমহি তন্নঃ ক্লিন্নে প্রচোদয়াৎ, ইহা ত্রিপুরাগায়ত্রী। ১০১
আবাহনপূর্বক স্নানীয় ও অন্যান্য উপচার দ্বারা ত্রিপুরা বালার পূজা করিবে। ১০২
বেতাল-ভৈরব! ত্রিপুর-ভৈরবীর পূজাক্রমাদিতে যে বিশেষ আছে, মন্ত্রবৃন্দ সহিত তৎসমস্ত শ্রবণ কর। ১০৩
ব্রাহ্মমুহূর্তে গাত্রোত্থান করিয়া বিশুদ্ধচিত্তে পরম গুরু, গুরু এবং ত্রিপুর ভৈরবীকে স্মরণ করিবে। ১০৪
চতুর্ভুজ, শুক্লবর্ণ, বরাভয়-পুস্তক-অক্ষমালাধারী, সুবর্ণময় উত্তমাসনে আসীন, সুবর্ণময় উত্তরীয় ও সুবর্ণকুণ্ডলযুগলে শোভিত নিজ গুরুকে ধ্যান করিবে। ১০৫-১০৬
অনন্তর, ত্রিপুর-ভৈরবীর ধ্যান করিয়া গাত্রোত্থানপূর্বক ত্রিপুর-ভৈরবীর পূজাধিকারের জন্য শৌচ, আচমন, দন্তধাবন ও প্রাতঃস্নান করিবে। ১০৭-১০৮
সকল দেবী-মন্ত্রে এমন কি বৈদিক মন্ত্রেও ত্রিপুর-ভৈরবীর চিন্তা করিবে। ত্রিপুরাবীজ উচ্চারণ করিয়া তিনবার ডুব দিবে। ১০৯-১১০
সমস্ত দেব মন্ত্রে দেবনামের পর ভৈরব নাম দিবে, ভৈরব নাম শূন্য দেবনাম উচ্চারণ করিবে না। ১১১
“আপঃ পুনন্তু পৃথিবীং” ইত্যাদি মন্ত্রান্তে ত্রিপুরা ভৈরবীর স্মরণ অন্তে “দ্রুপদাদিব” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করিয়া আচমন করিবে। ১১২
“ইদং বিষ্ণুর্ভৈরব” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠপূর্বক মৃদালম্ভন কর্তব্য। গায়ত্রী ও ত্রিপুরভৈরবীর নামোচ্চারণপূর্বক মার্জনা করিবে। ১১৩
মার্তণ্ডভৈরবখ্য সূৰ্য্যকে অর্ঘ্য দিবে। “উদুত্যং জাতবেদসং” ইত্যাদি মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক শেষে ভৈরব পদ উচ্চারণ করিবে। ১১৪
তর্পণে “ব্ৰহ্ম-ভৈরবস্তৃপ্যতাং” ইত্যাদি, আবাহনাদিতে “পিত ন্ ভৈরবান” তর্পণে “পিতর্ভৈরব! মাতর্ভৈরবি।” ইত্যাদি কীৰ্ত্তন করিবে। ১১৫
তর্পণেও স্ত্রীলোকের পক্ষে প্রথমেই ত্রিপুরা পদ প্রয়োগ করিবে। জ্যোতি স্টোম অশ্বমেধাদি যজ্ঞে দেবতাকে ভৈরবরূপে ও দেবীকে ভৈরবীরূপে পূজা করিবে। ১১৬-১১৭
মদিরাপাত্র, রক্তবস্ত্র পরিধানা রমণী ও নরমুণ্ড দর্শন করিলে ভৈরবীকে চিন্তা করিবে। ১১৮
একত্র মনোহারিণী বহু যুবতী দর্শন করিলে ত্রিপুর-ভৈরবীর প্রীতির জন্য তাহাদিপের বন্দনাদি করিবে। ভৈরবীবোধে মনে মনে ভক্তিপূর্বক চিত্র করিবে। ১১৯-১২০
ত্রিপুরা-পূজক সাধক, বিবাহ করিবার সময় ভাবিবে–যাহাকে প্রতিগ্রহ করিতেছি ইনি সামান্য নারী নহেন–ভৈরবী; প্রতিগ্রহীতা–আমিও ভৈরব। ত্রিপুরা-পূজক কন্যাদাতা বলিবে আমি ভৈরবের হস্তে ত্রিপুর-ভৈরবীকে সম্প্রদান করিতেছি। ১২১-১২২
ত্রিপুর-ভৈরবীর পূজোপকরণ পাত্ৰাদি ও আসনাদি কদাচ অন্য পূজায় লাগাইবে না। ১২৩
সাধকদ্বিজ, অন্য দ্বারা একবার মাত্র দেবীকে মদিরা দেখাইবে। শূদ্রজাতি সর্বদা উত্তম মদ্য স্বয়ং দিতে পারিবে। ১২৪
ত্রিপুর-ভৈরবীকে এইরূপ বামাচারেই পূজা করিবে। ত্রিপুরা বালাকে বামাচার ও দক্ষিণমার্গেও পূজা করিতে পারিবে। ১২৫
শ্মশান-ভৈরবী, উগ্রতারা, উচ্ছিষ্ট-ভৈরবী, চণ্ডী, ত্রিপুর-ভৈরবী-ইহাদিগকে বামভাবেই পূজা করিবে; দক্ষিণভাবে পূজা করিবে না। ১২৬-১২৭
সাধক-ঋষি, দেব, পিতৃ-লোক মনুষ্য এবং ভূতবর্গকে পঞ্চযজ্ঞ দ্বারা পূজা, ঋষি প্রভৃতির ঋণ মোচন, যথাবিধি স্নান, দান যজ্ঞ এবং সরহস্য দেবপূজাদি যাহা করে, তাহাই দাক্ষিণ্য বা দক্ষিণ মার্গ। ১২৮-১২৯
সাধক, পিতৃদেবাদি সৰ্ব্বত্রই দক্ষিণ (অনুকূল) এবং দেবীও দক্ষিণা থাকেন, এইজন্য ইহাকে দক্ষিণ বলা হয়। ১৩০।
আর যে দেবী পূজিত হইয়া দেবাদির পূর্বেই সমস্ত যজ্ঞভাগাদি স্বয়ং গ্রহণ করেন, তিনিই বামা। ১৩১
হে পুত্র! তদীয় পূজকও বাম। পঞ্চযজ্ঞ করুক আর নাই করুক, ইষ্ট পূজনে বামাচার করিবে। ১৩২
বামাদেবী, অন্যের পূজাভাগ স্বয়ং গ্রহণ করেন। যে ব্যক্তি বামভাবে পূজা করে, তাহার কদাচ পিতৃদেব ও মনুষ্যাদির ঋণ হইতে মুক্তি হয় না। ১৩৩
তবে, সে ব্যক্তি যদি ত্রিপুরাযোগ অভ্যাস করিয়া তাহাতে সুবিজ্ঞ হয়, তবেই মুক্তি লাভ করিবে। ১৩৪
কিন্তু হে ভৈরব! ত্রিপুরাভক্ত ঋণ শোধ না হওয়াতে পাপে বহুকালে মুক্তি পাইবে। ১৩৫
ইহকালে তাহার অতুল ঐশ্বৰ্য্য ও কামকমনীয় সুন্দর দেহ হয়; সেই সাধক রাজ্য সমেত রাজাকে সম্পূর্ণরূপে বশবর্তী, মদবিহ্বলা মহিলাদিগকে মোহিত, সিংহ, ব্যাঘ্র, তরঙ্কু, ভূত, প্রেত, পিশাচাদিকে নিজের আয়ত্ত করিয়া বায়ুবেগে অবারিতভাবে বিচরণ করে। ১৩৬-১৩৮
যে ব্যক্তি, ত্রিপুরাবালা, ত্রিপুরামধ্যা বা ত্রিপুর-ভৈরবীকে পরম ভক্তি সহকারে পূজা করে সে পঞ্চশর সদৃশ কৃতী হয়। ১৩৯
যে ব্যক্তি কামাখ্যা কামেশ্বরীকে বাম ও দক্ষিণ ভাবে যথেচ্ছ পূজা করিবে সে সর্বতোভাবে সিদ্ধি লাভ করিবে। ১৪০
মহামায়া শারদা এবং শৈলপুত্রীকে যেরূপেই হউক দক্ষিণ ভাবেই পূজা করিবে। ১৪১
যে ব্যক্তি, মহামায়াকে দক্ষিণভাব ব্যতীত অর্চনা করে, সেই পাপিষ্ঠ, রোগমুক্ত হইয়া থাকে, এবং সৰ্ব্বলোক বহিষ্কৃত হয়। ১৪২
পূৰ্বে যে শিবদূতী প্রভৃতি অন্য দেবীগণের কথা বলিয়া গিয়াছে, সাধকগণ, তাঁহাদিগের পূজা বাম বা দক্ষিণ যে ভাবে ইচ্ছা তদ্বারাই করিতে পারিবে। ১৪৩
যে ব্যক্তি, বাম ভাবে পূজা করে, সে অন্য দেবতার আশা পূর্ণ করে না; কিন্তু যে দক্ষিণ ভাবের পূজক, সে সকলের আশা পূর্ণ করে; এই জন্য দক্ষিণই উত্তম। ১৪৪।
ভৈরব! অনন্তর ত্রিপুরভৈরবীর ন্যাস শ্রবণ কর; এই ন্যাস করিলে মনুষ্য দেবতার ন্যায় হয়। ১৪৫
এই ভৈরবী মন্ত্রের দক্ষিণামূর্তি ঋষি, পংক্তি ছন্দঃ, ত্রিপুর-ভৈরবী দেবতা; কাম অর্থ সাধনই ইহার উদ্দেশ্য। ১৪৬
নাভিতে হকার, বস্তিদেশে সকার, লিঙ্গে রকার, অপানে ঐকার, আবার ঊরুযুগলে হকার, জানুযুগলে সকার, জঙ্ঘাদ্বয়ে রকার এবং পাদযুগলে ঐকার ন্যাস করিবে। ১৪৭-১৪৯
এইরূপ নাভি হইতে আরম্ভ করিয়া পাদ পর্যন্ত তিনবার ন্যাস করিবে। ১৫০
ত্রিপুরার দ্বিতীয় বীজের আদি অক্ষর হকার হৃদয়ে, দ্বিতীয় অক্ষর সকার বাম স্তনে, তৃতীয় অক্ষর ককার দক্ষিণ স্তনে, চতুর্থ অক্ষর লকার উদরে, পঞ্চম অক্ষর রকার পার্শ্বদ্বয়ে, ষষ্ঠ অক্ষর ঈকার নাভিতে ন্যাস করিবে। এইরূপ তিন বার। ১৫১-১৫২
ত্রিপুরার তৃতীয় বীজের আদ্য অক্ষর হকার, মস্তকে দ্বিতীয় অক্ষর সকার কেশান্তে, তৃতীয় অক্ষর রকার বদনে, চতুর্থ অক্ষর ঔকার হৃদয়ে ন্যাস করিবে; এইরূপ তিনবার। ১৫৩
ত্রিপুরার প্রথম বীজের প্রথম অক্ষর হকার দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠে, সকার দক্ষিণ হস্তের তর্জনীতে, রকার দক্ষিণ হস্তের মধ্যমাতে, ঐকার দক্ষিণ হস্তের অনামিকাতে, দ্বিতীয় বীজের আদ্য অক্ষর হকার দক্ষিণ কনিষ্ঠাতে, সকার বাম হস্তের অঙ্গুষ্ঠে, ককার বাম হস্তের তর্জনীতে, লকার বাম হস্তের মধ্যমাতে, রকার বাম হস্তের অনামিকাতে, ঔকার বামহন্তের কনিষ্ঠাতে ন্যাস করিবে। এইরূপ তিনবার। ১৫৪-৫৫
তৃতীয় বীজের চারি অক্ষর, তন্মধ্যে দুই হস্তের অঙ্গুষ্ঠ হইতে অনামিকা পর্যন্ত একেবারে দুই দুই অক্ষর করিয়া ন্যাস করিবে, কনিষ্ঠাযুগলে সকল বীজ বর্ণই ন্যাস করিবে। ১৫৮
ত্রিপুরাদেবীর প্রথম বীজ করতলযুগলে, দ্বিতীয় বীজ করপৃষ্ঠদ্বয়ে ন্যাস করিবে। তৃতীয় বীজ ও ফট উচ্চারণ করিয়া তিনবার করতালি দিবে। ১৫১
কর্ণদ্বয় (২) চিবুক (৩) গণ্ড (৪) মুখ (৫) চক্ষুদ্বয় (৭) নাসিকাপুট (১) স্কন্ধযুগল (১১) কফোণীযুগল (১৩) উদর (১৪) লিঙ্গ (১৫) মস্তক (১৬) পাদ যুগল (১৮) পার্শ্বযুগল (২৫) হৃদয় (২১) স্তনযুগল (২৩) এবং কণ্ঠদেশে (২৪) ত্রিপুরা বীজত্রয়ের এক একটি করিয়া বর্ণ যথাক্রমে ন্যাস করিবে। তিনবীজে মোট চতুর্দশটি বর্ণ; আবার প্রথম ও দ্বিতীয় বীজের বর্ণ যোগ করিলে চতুর্বিংশতি বর্ণ হয়। ১৬০-৬১
সদ্যো দেবত্ব সিদ্ধির জন্য ‘ঐঁ রত্যৈ নমঃ’ এই মন্ত্র লিঙ্গে, ‘ওঁ ক্লীঁ প্রীত্যৈ নমঃ’ এই মন্ত্র হৃদয়ে এবং মনোভবায়ৈ নমঃ আদিতে ত্রিপুরা বালার তৃতীয় বীজাক্ষর ভ্রূযুগলে ন্যাস করিবে। ১৬২-৬৩
“ওঁ ঈঁ ঈশানরূপায় মনোভবায় নমঃ” বলিয়া মস্তকে ত্রিপুরার আদি বীজের সহিত তৎপুরুষ মকরধ্বজকে মুখে, ত্রিপুরার আদিবীজের সহিত অঘোর কন্দর্পকে হৃদয়ে, বাং বামদেব মন্মথকে লিঙ্গে, সদ্যোজাত কামদেবকে পদযুগলে ন্যাস করিবে। ১৬৪-৬৬
পুত্র! ‘সহরোং ওঁ ঈঁ ঈশানরূপায় মনোভবায় নমঃ’ এই মন্ত্র ঊর্ধ্বে, ‘সহরুং তৎপুরুষায় মকরধ্বজায় নমঃ’ এই মন্ত্র মুখের পূর্বভাগে, ‘সহরুং অঘোর কন্দর্পায় নমঃ’ এই মন্ত্র দক্ষিণ ভাগে, ‘সহরিং বাং বামদেবায় মন্মথায় নমঃ’ এই মন্ত্র পশ্চিমভাগে ন্যাস করিবে। * ১৬৭-৬৮ [* মস্তক, মুখ, হৃদয়, লিঙ্গ এবং পদযুগলেও এই সহরোং ইত্যাদি মন্ত্র ন্যাস করিবে। ইহা তন্ত্রসারকর্তা কৃষ্ণনন্দের মত। মূলের ভাব হইতেও কষ্টকল্পনা দ্বারা এ অর্থ করা যায়।]
ত্রিপুরার স্বর-হীন প্রথম বীজমন্ত্র আঁ ঈঁ ইত্যাদি ঊঁ ঐঁ ঔঁ যোগ করিয়া ষড়ঙ্গন্যাস করিবে। দ্রবণ প্রভৃতি পঞ্চবাণ, মস্তক, পদযুগ, মুখ, লিঙ্গ এবং হৃদয়ে যথাক্রমে ন্যাস করিবে। ১৬৯
ঐ কারাদি বীজযোগে সুভগা ভগা প্রভৃতি অষ্ট শক্তি, ললাট, ভ্রূমধ্য, মুখ, কর্ণ, কণ্ঠ, হৃদয়, নাভি এবং লিঙ্গ এই আট স্থানে বিন্যাস করিবে। ১৭০-৭৭
এই আট শক্তি রূপে ও ধ্যানে ত্ৰিপুর ভৈরব-সদৃশ। মস্তক (১) ললাট (২) ভ্রূযুগল (৩) কর্ণযুগল (৬) নেত্রযুগল (৮) গণ্ডদ্বয় (১০) নাসাপুট (১২) হৃদয় (১৩) এবং মুখ (১৪) এই চতুর্দশ স্থানে ত্রিপুর-ভৈরবীর বীজদ্বয়ের চতুর্দশ বর্ণ যথাক্রমে ন্যাস করিবে। ১৭৮
চিবুক, ত্বক, গ্রীবা, কণ্ঠদেশ, পার্শ্বযুগল, স্তনদ্বয়, স্কন্ধদ্বয়, কফোণীদ্বয় প্রভৃতি সপ্তবিংশতি স্থানে ককারাদি রকারান্ত সপ্তবিংশতিবর্ণ ন্যাস করিবে। ১৭৯-৮০
মেখলা, কণ্ঠদেশ, বাহুভূষণ, হার, মাল্য, কুণ্ডল, কেশপাশ এবং চূড়ামণিতে লকারাদি ক্ষকারান্ত অষ্ট অক্ষর বিন্যাস করিবে। মিলিত তিনটী বীজাক্ষর, প্রতিলোম ক্রমে তিন তিনবার ন্যাস করিবে। ১৮১-১৮৩
অমৃতা যোগিনী এবং বিশ্বযোনি এই তিন দেবী ত্রিবীজাত্মক ত্রিপুরা-বালা মন্ত্রের এক একটী বীজযোগে মস্তক, বাহু এবং হৃদয়ে বিন্যাস করিবে। ১৮৪
মন্ত্রজ্ঞ সাধক, পূর্ববৎ পূজা আরম্ভ করিবে। পীঠদেবী ব্যতীত পূর্ববৎ দেবীপূজা করিবে। ১৮৫
সুভগাদি তদীয় অষ্টশক্তিকে মণ্ডলের পূৰ্ব্বাদি অষ্টদিগভাগে চিন্তা করিবে। ১৮৬
ত্রিকোণের অগ্রে অমৃতা প্রভৃতি ত্রিযোনির এবং মধ্যে অষ্টভূষণের পূজা করিবে। ১৮৭
হে ভৈরব! আমার ঈশানাদি পঞ্চবক্ত্রের পূজা করিবে। মনোভবা দিকেও তথায় পূজা করা উচিত। ১৮৮
পুত্র! এতদ্ভিন্ন যে পূজাক্রম পূর্বে কথিত হইয়াছে, ত্রিপুরাপূজাতেও তাহার অনুসরণ করিবে। ১৮৯
চণ্ড ভৈরবী ত্রিপুর-ভৈরবীর নির্মাল্যধারিণী দেবী, উত্তর দিকে নির্মাল্য ত্যাগ করিয়া ত্রিপুর-ভৈরবীর বিসর্জন করিবে। ১৯০
ত্রিপুর-ভৈরবীর তিন মূর্তির পূজা করিবে। ত্রিশ বারের কম তাহার জপ করিবে না। ১৯১
অঙ্গুষ্ঠ, মধ্যমা এবং অনামা–এই তিন অঙ্গুলিযোগে ত্রিপুর-ভৈরবীকে পুষ্পাদি উপচার প্রদান করিবে। মূল্যেও ত্রিগুণ করিয়া দিবে। ১৯২
সাধক, চৰ্মাসনে বসিয়া পশ্চাৎ ভাগে পদদ্বয় রাখিয়া অনন্যচিত্তে নির্জন স্থানে এই দেবীর পূজা করিবে। ১৯৩
বিজ্ঞ সাধক, পুষ্প নৈবেদ্যাদি বামহস্ত দ্বারা আসাদন করিবে। ১৯৪
ত্রিচ্ছিদ্রা ত্রিপুরা যদি সম্পূর্ণরূপে পূজিত না হন, তাহা হইলে পূজকের শরীরে অবশ্যই নিন্দিত ব্যাধি উৎপন্ন হয়। ১৯৫
স্ত্রীপুত্র ভৃত্যাদি তাহার অংশীভূত হয় এবং শস্ত্রাঘাতে তাহার মৃত্যু হয়। ১৯৬
ত্রিপুর-ভৈরবী ইহার অন্যরূপে পূজিতা হইলে এইরূপ ছিদ্রত্রয় প্রদান করেন। ১৯৭
বেতাল ভৈরব। এই ত্রিপুরা দেবী এবং পূর্বকথিত সমস্ত ভৈরবী, যোগ নিদ্রা জগজ্জননী মায়ারই রূপ ভেদ। ১৯৮
সেই মায়াই বহুরূপে ক্রীড়া করেন। মহামায়াই মূলরূপা; তাহা হইতে শারদা। ১৯৯
তৎপরে উমা, তাহা হইতে শৈলপুত্রী ইহারা সকলেই আমার প্রিয়া। উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডাও আমার প্রিয়া। ২০০
ত্রিপুর-ভৈরবী প্রভৃতি ভৈরবীগণেরও আমিই মহাভৈরবরূপী নায়ক। ২০১
আমার ভৈরব মূর্তির মন্ত্র ও রূপ পূর্বে আমি বলিয়াছি, পূজনক্রম, ত্রিপুর ভৈরবীর ন্যায়ই জানিবে। ২০২
“মহাভৈরব বিদ্মহে, কেলিরুদ্রায় ধীমহি, তন্নঃ কামো ভৈরবঃ ক্লেদিন্নিত্যং প্রচোদয়াৎ” ভৈরবরূপী আমার এই গায়ত্রী। ২০৩-২০৪
এই আমার ভৈরব মূর্তি ইচ্ছামত মদ্য মাংস মৈথুনাদি সেবনে তৎপর। ২০৫
আমার এই মূর্তি বামভাগে মদ্যাদি দ্বারা পূজনীয়। ব্ৰহ্মারও মাংস মদ্যাদি ভোজননিরত একটি বাম দেহ আছে, তাহার নাম মহামোহ; মহামোহ হইতে চার্বাকাদি মতের উৎপত্তি। ২০৬-২০৭।
বিষ্ণুর বাম মূর্তি নরসিংহ; পণ্ডিতগণ বাম দক্ষিণ দুই ভাবেই এই মূর্তি পূজা করিতে পারে। ২০৮
জরায়ু-বেষ্টিত বাল-গোপাল মূর্তিও বিষ্ণুর বাম মূর্তি। এই বালগোপাল, মদ্যমাংসভোজী এবং সতত রমণীলোলুপ। চণ্ডিকা দেবীর অনেকগুলি বাম মূর্তি আছে। ২০৯
সেই মহালক্ষ্মী পূজিতা না হইলে গ্রাম, নগর ও গৃহদাহ করাইয়া দেন, এইজন্য দেহলীতে তাহার পূজা করিবে। ২১০-২১১
সরস্বতীর বামামূর্তি বাগভৈরবী; তাহার মন্ত্র পূর্বে কথিত হইয়াছে, তিনি শুক্লবর্ণা। ২১২
মধ্যাত্রিপুরার ধ্যান ত্রিপুর-ভৈরবীর রূপানুসারেই জানিবে। ভৈরব! তাহার পূজাক্রমও পূর্ববৎ জানিবে। ২১৩
সূর্যের বামমূর্তি মার্তণ্ড-ভৈরব; গণেশের বামমূৰ্ত্তি অগ্নিবেতাল। ইহাদিগের পূজা বামভাবেই কর্তব্য। ২১৪
আধ্যাত্রিপুরার ন্যায় মধ্যাত্রিপুরার মন্ত্রাদিও যথাযথ জানিবে। বাগভবাদি এই সকল মন্ত্র জপ করিলে, মনুষ্য সমস্ত অভিলষিত বস্তু লাভ করে। ২১৫-২২২
যে ব্যক্তি এই সকল মন্ত্র একবারও জপ করে এবং ত্রিপুর-ভৈরবীকে সম্পূর্ণ রূপে তিন দিন চিন্তা করে, সে সমস্ত অভিলষিত বস্তু প্রাপ্ত হয় এবং মদনোপম সুরূপ-সম্পন্ন হয়। ২২৩-২২৪
ক্ষত্রিয় এরূপ করিলে, ধার্মিক রাজা হয়, ব্রাহ্মণ দ্বিজশ্রেষ্ঠ হয়, পিশাচাদি তাহার শরীরের কোন বিঘ্ন করিতে পারে না। ২২৫
সে ব্যক্তি রোগশূন্য দীর্ঘজীবী এবং বলবান্ হয়। ত্রিপুর ভৈরবীর এইরূপ পূজাদি ক্ৰম কথিত হইল। ২২৬
মহাদেবী বৈষ্ণবীর ষোড়শ সহস্র মন্ত্র কথিত হইয়াছে। ভৈরব। একাগ্রচিত্রে তদীয় মন্ত্র শ্রবণ কর। মহাদেবীর মূর্তিভেদে অষ্টোত্তর সহস্র এবং চতুঃষষ্টি মন্ত্র কথিত হইয়াছে। ২২৭-২২৮
অনুস্বার ও বিসর্গযোগে এই সকল মন্ত্র দ্বিগুণ হইবে। দুই তিনটি কাদি ব্যঞ্জন যোগে উর্ধ্ব অধঃ ইত্যাদি বৈপরীত্যে সমস্ত-ব্যস্ত-সমন্বিত নানামন্ত্র হয়। ২২৯-২৩০
বিস্বর সস্বর সানুস্বার সবিসর্গ–ব্যস্ত সমস্ত ইত্যাদিরূপে মন্ত্রোদ্ধার করিবে। বৈষ্ণবীর যে সকল মন্ত্র বলিলাম, তাহা জানিলে মনুষ্য আমার সদনে গমন করে। ২৩১-২৩৪
যে ব্যক্তি অষ্টমী বা নবমী তিথিতে বৈষ্ণবীকে চিন্তা করত ষোড়শ সহস্র মন্ত্রবীজ জপ করিবে, সে নরপতি পণ্ডিত, দীর্ঘজীবী, সুখভোগী, ভৃত্যবাহনযুক্ত হইবে। ষোড়শ সহস্রের আটগুণ জপ করিলে, সার্বভৌম নরপতি হইবে। মরণান্তে গণাধ্যক্ষতা লাভপূর্বক মুক্তিলাভ করিবে। ২৩৫-২৩৭
এই মন্ত্র সকল গুণবিভূষিত সেই সাধকের সমস্ত কলুষরাশিনাশী এবং সম্পত্তি-কর হয়। যে ব্যক্তি, ত্রিপুর ভৈরবী ও বৈষ্ণবীর মন্ত্র অবগত আছেন, তিনি শত্রুজেতা এবং রোগশোকশূন্য হন। ২৩৮
চতুঃসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৪