ত্রিসপ্ততিতম অধ্যায় – মাতৃকা-ন্যাস
ভগবান বলিলেন,–হে বেতাল ও ভৈরব! এক্ষণে মাতৃকান্যাসের কথা বলিতেছি, শ্রবণ কর-যাহার অনুষ্ঠান দ্বারা মনুষ্য দেবত্ব প্রাপ্ত হয়। ১
বাক ব্রহ্মাণী আদি দেবী মাতৃকা বলিয়া কীৰ্তিত হইয়াছেন। চন্দ্রবিন্দু যুক্ত সমুদয় স্বর ও ব্যঞ্জন তাহাদের মন্ত্র, ইহারা সৰ্ব্বকাম প্রদান করেন। ২-৩
মাতৃকাদিগের ঋষি ব্রহ্মা, ছন্দঃ গায়ত্রী এবং দেবতা সরস্বতী। ৪
শরীরশুদ্ধি আদি সকল প্রকার কাম এবং অর্থের সাধনকার্যে এবং মন্ত্র দিগের ন্যূনতাপূরণে ইহার প্রয়োগ। ৫
অকারের সহিত ককারাদি যে প্রথম বর্গ, তাহার অন্তর্গত অক্ষর সকলকে চন্দ্রবিন্দুর সহিত যুক্ত করিবে। ৬
তদনন্তর আকার উচ্চারণ করিয়া ‘অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ’ এই বলিয়া প্রথম অঙ্গুষ্ঠদ্বয়ে মাতৃকা ন্যাস করিবে। ৭
অনন্তর অপর অপর বর্ণ স্বরের সহিত সম্যক্ প্রকারে চন্দ্রবিন্দুযুক্ত করিয়া ন্যাস-কার্যে নিযুক্ত করিবে। ৮
তর্জনীদ্বয়ে প্রথম হ্রস্ব ইকার, তাহার পর চবর্গ এবং অন্তে দীর্ঘ-ঈকার চন্দ্রবিন্দুযুক্ত করিয়া তর্জনীভ্যাং স্বাহা বলিয়া পূর্বের মত ন্যাস করিবে। মধ্যমাদ্বয়ে হ্রস্ব উকার তবর্গ ও দীর্ঘ উকার যথাক্রমে চন্দ্রবিন্দুযোগে উচ্চারণ করিয়া ‘মধ্যমাভ্যাং বষট’ এই বলিয়া ন্যাস করিবে। ৯
অনামিকাযুগলে এ, টবর্গ এবং ঐকার যথাক্রমে চন্দ্রবিন্দুযুক্ত করিয়া উচ্চারণ করত ‘অনামিকাভ্যাং হূং ফট’ বলিয়া ন্যাস করিবে। ১১
কনিষ্ঠাদ্বয়ে ওকার, পবর্গ এবং ঔকার ঐরূপ বিন্দুমুক্ত করিয়া উচ্চারণ করত ‘কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্’ এই বলিয়া কাৰ্যসিদ্ধির নিমিত্ত বিন্যাস করিবে। ১২
করতল ও তাহার পৃষ্ঠদ্বয়ে অং, য হইতে ক্ষ পর্যন্ত বর্ণ, অনন্তর অ উচ্চারণ করিয়া ‘অস্ত্রায় ফট” বলিয়া ন্যাস করিবে। ১৩
অন্যাসের শেষভাগে ‘বষট্’ এই শব্দের প্রয়োগ করিবে। হৃদয়াদি ষড়ঙ্গে পূর্ববৎ যথাক্রমে অঙ্গষ্ঠাদিতে উক্ত ছয় ছয়টি অক্ষর দ্বারা ন্যাস করিবে। ১৪
এইরূপ পাদ, জানু, সকথি, গুহ্য, পার্শ্ব এবং বস্তিতে পূর্বোক্তক্ৰমে ন্যাস করিবে। ১৫
তাহার পর বাহুদ্বয়, করতলদ্বয়, কোটিদ্বয়, নাভি, জঠর ও স্তনদ্বয়ে পূর্বোক্ত রীতিতে ন্যাস করিবে। ১৬
বক্ত্র, চিবুক, গণ্ড, কর্ণদ্বয়, ললাট, অঙ্গ এবং কক্ষ এই সকল অঙ্গেও পূর্বের মত ন্যাস করিবে। ১৭
রোমকূপে, ব্রহ্মরন্ধ্রে, অপানদেশে, জঙ্ঘাযুগলে, নখে, পাদ এবং করতলেও পূর্বের মত ন্যাস করিবে। ১৮
যে মনুষ্যশ্রেষ্ঠ সকল প্রকার যজ্ঞকাৰ্যে ও পূজায় এইরূপ মাতৃকাবর্গের ন্যাস করে, সে সুপূত এবং যোগ্য হয়। ১৯
ইহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মন্ত্র আর কোন স্থানে মেলে না। ইহা সকল প্রকার কামদ, পবিত্র চতুৰ্বর্গপ্রদ ও শুভ। ২০
যে ব্যক্তি হৃদয়ে বাগদেবতার, ও মস্তকে সমুদয় অক্ষরের ধ্যান করিয়া ক্রমের সহিত মাতৃকা মন্ত্রসকল তিনবার উচ্চারণ করিয়া জল পান করে, সে বাগ্মী, পণ্ডিত, বুদ্ধিমান এবং কবি হয়। পণ্ডিত মনুষ্য প্রথমে চন্দ্রবিন্দুযুক্ত স্বর সকলের উচ্চারণ করিবে। ২১-২২
তাহার পর ব্যঞ্জনগুলির পাঠ করিবে। অকারাদি ক্ষকারান্ত বর্ণের ন্যাস করিয়া করতলে জল গ্রহণপূর্বক অক্ষরসমূহ পাঠ করিয়া ঐ জলে অভিমন্ত্রিত করত প্রথম পূরক মন্ত্র দ্বারা ঐ জল পান করিবে। ২৩-২৪
তাহার পর স্তম্ভক দ্বারা, তাহার পর রেচক দ্বারা পান করিবে। ২৫
এইরূপে একবার বা তিন বার পূরক, কুম্ভক ও রেচক দ্বারা জল পান করিলে দৃঢ়াঙ্গ, পণ্ডিত এবং পুত্রপৌত্রযুক্ত হয়। ২৬
মাতৃকামন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত জল ত্রিসন্ধ্যা পান করিলে কবিত্ব এবং সকল প্রকার কাম প্রাপ্ত হয়। ২৭
হে মহাভাগ। যে পূরক, কুম্ভক ও রেচক দ্বারা মাতৃকা মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত জল সৰ্ব্বদা পান করে, সে সকল প্রকার কাম, পুত্র, পৌত্র এবং সমৃদ্ধি লাভ করে এবং ইহলোকে মহাকবি, বলবান ও সত্যবিক্রম হয়। ২৮-৩০
এইরূপে সর্বত্র দুর্লভ হইয়া অন্তে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। মাতৃকা মন্ত্রের সাধনা করিলে রাজা, রাজপুত্র বা রাজভাৰ্য্যা বশীভূত হয়। ৩০
ন্যাসক্ৰমে যে বর্ণক্রম উক্ত হইয়াছে, ঐরূপ অক্ষরক্ৰমে জলপান করিবে।৩১
দেবতা, ঋষি বা রাক্ষসদিগের যে সকল মন্ত্র, ঐ সকল মন্ত্রই মাতৃকামন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ৩২
ইহা সৰ্বমন্ত্রময়, সর্বদেবময় এবং এই মাতৃকামন্ত্র চতুৰ্বর্গপ্রদায়ক। ৩৩
হে পুত্রদ্বয় বেতাল ও ভৈরব! তোমাদের নিকট সেই অদ্ভুত মাতৃকা ন্যাসের বিষয় বলিলাম, এক্ষণে মুদ্রাদিগের বিভাগ শ্রবণ কর। ৩৪
ত্রিসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭৩