একসপ্ততিতম অধ্যায় – নমস্কার
ভগবান বলিলেন,– দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিয়া স্বয়ং নম্রশিরা হইয়া দেবতাকে নিজের দক্ষিণ পার্শ্ব দেখাইয়া মনে মনে উদারভাব অবলম্বন করিয়া একবার বা তিনবার যে দেবতার প্রীতিকর বেষ্টন করা হয়, তাহার নাম প্রদক্ষিণ। ইহা সকল দেবতার তুষ্টিপ্রদ। ১-২
হে ব্যক্তি দেবীর অষ্টোত্তর শত প্রদক্ষিণ করে, সে সকল প্রকার কামনা লাভ করিয়া অন্তে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। ৩
তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তিরা কায়িক, বাচিক এবং মানসিক-নমস্কারের এই তিন প্রকার ভেদ করিয়াছেন। ৪
ইহারা প্রত্যেকে আবার উত্তম অধম এবং মধ্যম এই তিন প্রকার। জানুদ্বয় এবং মস্তক দ্বারা পৃথিবী স্পর্শ করিয়া যে নমস্কার করা হয়; তাহা উত্তম কায়িক নমস্কার। ৫
জানু দ্বারা পৃথিবী স্পর্শ না করিয়া কেবল মস্তক দ্বারা পৃথিবী স্পর্শ করিয়া যে নমস্কার করা হয়, তাহা মধ্যম কায়িক। ৬
জানু বা মস্তক এই উভয়ঙ্গ দ্বারা পৃথিবী স্পর্শ না করিয়া কেবল দুটি হাত একত্র করিয়া মস্তকে ঠেকাইয়া যে নমস্কার করা হয় তাহার নাম অধম নমস্কার। নিজে গদ্য পদ্য রচনা করিয়া ভক্তিপূর্বক যে নমস্কার করা হয় তাহার নাম উত্তম বাচিক। ৭-৮
পৌরাণিক বা বৈদিক নমস্কার মন্ত্র উচ্চারণ মাত্র করিয়া যে নমস্কার করা হয়, তাহার নাম মধ্যম বাচিক। ৯
ভাষাবাক্য দ্বারা যে নমস্কার করা হয়, হে পুত্রদ্বয়। উহা বাচিক নমস্কারের মধ্যে অধম জানিবে। ১০।
ইষ্ট, মধ্য এবং অনিষ্টগত মন দ্বারা যে তিন প্রকার নমস্কার করা হয়, উহাদের নাম মানস নমস্কার এবং উহারাও যথাক্রমে উত্তম, মধ্যম এবং অধম বলিয়া প্রসিদ্ধ। ১১
তিন প্রকার নমস্কারের মধ্যে কায়িক নমস্কারই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই কায়িক নমস্কার দ্বারাই দেবী সর্বদা তুষ্ট হন। ১২
এই নমস্কারই দণ্ডাদি প্রতিপত্তি দ্বারা যুক্ত হইয়া প্রণাম নামে অভিহিত হয়, ইহা পূৰ্বেই প্রতিপাদিত হইয়াছে। ১৩
নৈবেদ্য দ্বারা সকল সিদ্ধ হয়, নৈবেদ্য দ্বারা অমৃত লাভ হয়। ধর্ম, কাম, অর্থ এবং মোক্ষ, ইহারা সকলে নৈবেদ্যেই প্রতিষ্ঠিত আছে। ১৪
নৈবেদ্য সৰ্ব্বযজ্ঞময় এবং সকলের তুষ্টি প্রদ, ইহা জ্ঞান ও কামদায়ক, পবিত্র এবং সকল ভোগ্যস্বরূপ। ১৫।
যে মনুষ্য মহাদেবীকে মনঃকল্পিত নৈবেদ্যও দান করিতে ইচ্ছা করে, সে দীর্ঘায়ুঃ এবং সুখী হয়। ১৬
যে ব্যক্তি দেবী মহামায়াকে শক্তি অনুসারে নানাবিধ নৈবেদ্য দ্বারা পূজা করিব, এইরূপ চিন্তায় আকুল হয়, সে সকল প্রকার কাম প্রাপ্ত হইয়া আমার লোকে পূজিত হয়। ১৭
যে ব্যক্তি দেবীকে মনে মনেও ভক্তিপূর্বক প্রদক্ষিণ করে, তাহার দক্ষিণ দিকে যমের গৃহে নরক দেখিতে হয় না। ১৮
দেব, মানুষ, গন্ধৰ্ব্ব, যক্ষ, রাক্ষস, পন্নগ এবং সকল মহাত্মাগণ নমস্কার দ্বারা তুষ্টি লাভ করেন। ১৯
মহামতি মনুষ্য নমস্কারদ্বারাই চতুৰ্বর্গ প্রাপ্ত হয়। সৰ্বত্ৰ সৰ্ব্ব সিদ্ধির নিমিত্ত নমস্কারই প্রশস্ত উপায়। ২০
নমস্কার দ্বারা লোক সকল বিজিত হয়, আয়ু বর্ধিত হয়, প্রজাগণ নমস্কার দ্বারা অচ্ছিন্ন দীর্ঘায়ুঃ লাভ করে। ২১
“মহাদেবীকে নমস্কার এবং প্রদক্ষিণ কর এবং বিপুল নৈবেদ্য দান কর” যে ব্যক্তি বারংবার এই বাক্য উচ্চারণ করে, সে ব্যক্তি ইহলোকে সমুদয় কাম প্রাপ্ত হইয়া অন্তে আমার লোকে পূজ্য হয়। ২২-২৩
যে ভক্তিমান মনুষ্য মহাদেবীকে নৈবেদ্য দান করিবার নিমিত্ত বিধানও করে, সে দেবীলোক প্রাপ্ত হয়। ২৪
এই তোমাদের নিকট ষোড়শ উপচারের বিষয় বলিলাম, এক্ষণে আর শুনিতে তোমাদের ইচ্ছা হয়, জিজ্ঞাসা কর; আমি বলিব। ২৫ একসপ্ততিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৭১