৬. The Life S.A.V.E.R.S

৬. The Life S.A.V.E.R.S 

ছয়টি অভ্যাস যা আপনাকে নিশ্চিতভাবে রক্ষা করবে সম্ভাবনাময় জীবনের অপূর্ণতা থেকে 
জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর প্রতি লাগাতার মনোনিবেশ ও উন্নতির ফলেই একটা সাধারণ জীবন উদাহরণে পরিণত হয়।
—রবিন শর্মা 

.

প্রচণ্ড চাপে আছেন, দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না, আপনি হতাশ, জীবনে শত অপূর্ণতা— বাজে কথা। 

দুঃখজনক হলেও সত্যি, ওপরের এই অসুন্দর শব্দগুলো একজন খুবই সাধারণ মানুষ প্রায় সময়ই ব্যবহার করেন তার সাধারণ, অধরা স্বপ্নপূর্ণ জীবনের প্রতিচ্ছবি বোঝানোর জন্যে। 

আপনি ও আমি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সব থেকে সমৃদ্ধ সময়ে বাস করছি। এত সুযোগ ও সামর্থ্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা পাননি। এত কিছুর পরও অধিকাংশ মানুষই তাদের ভেতর সুপ্ত সামর্থ্যের সামান্য অংশও ব্যবহার করছেন না। এই প্রবণতা আমার ভালো লাগে না। আপনার? 

সম্ভাবনা-হতাশা-সম্ভাবনা 

কখনো কি আপনার মনে হয়েছে, যে জীবন আপনি চান, যে ধরনের মানুষ আপনি হতে চান- তা আপনার সীমার বাইরে? কখনো কি এমন মনে হয়েছে, আপনি যে সম্ভাবনাটা খুঁজছেন- আপনি জানেন, আপনার ভেতর তা আছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন- কিন্তু সেখানে পৌঁছুতে পারছেন না? যখন আপনি দেখেন কেউ একজন নির্দিষ্ট একটা ক্ষেত্রে উৎকর্ষের চরমে পৌঁছেছেন, যেখানে আপনি পৌঁছুতে পারছেন না- মনে হচ্ছে সে গোপন কোনো উপায় জানে, যার জন্যে সে সেখানে এত সহজে পৌঁছুতে পেরেছে। মনে হয়েছে কি গোপন রাস্তাটা আপনি জানলে আপনার জন্যেও সহজ হতো সাফল্যের পথটা পাড়ি দেওয়া? 

সম্ভাবনা আর হতাশার মাঝে বেশ বড়-সড় একটা খাল আছে। যে খাল পার্থক্য গড়ে দেয় “বর্তমান আমি” আর “আমি কী হতে পারতাম” এই দুইয়ের ভেতর। বেশিরভাগ মানুষই ভুল পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা প্রায়ই নিজেদের নিয়ে হতাশ থাকি। হতাশ থাকি জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত আর তার ফলে ঘটে যাওয়া পতনের জন্যে; হতাশ থাকি প্রেরণার অভাবে। সাফল্যের চূড়ায় উঠতে আমাদের কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল এটা ভাবতেই আমাদের বেশিরভাগ সময় চলে যায় অথচ আমরা সেই পদক্ষেপগুলো নিই না। আমরা জানি আমাদের কী করা উচিত; কিন্তু আমরা সেগুলো করি না। 

সম্ভাবনা আর হতাশার এই খাঁড়ির প্রস্থ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। আপনার মনে হতে পারে আপনি সাফল্যের খুব কাছে, সামান্য একটু সাহায্যই আপনার দরকার। আবার উল্টোটাও মনে হতে পারে। মনে হতে পারে সাফল্যের দূরত্ব অনেক বেশি এবং আপনি এমনকি জানেনও না কোথা থেকে দৌড় শুরু করবেন। আপনার ক্ষেত্রে ঘটনা যা-ই হোক না কেন, বিশ্বাস করুন খাঁড়ির সৌভাগ্যের পাশে থাকা অবশ্যই আপনার পক্ষে সম্ভব। আপনি অবশ্যই সেই “মানুষ” হতে পারেন, যা আপনি হতে চেয়েছেন। 

আমরা দুটো পরিস্থিতি বিবেচনা করব। এক-আপনি হতাশার পাড়ে আছেন। ভাবছেন কীভাবে সৌভাগ্যের পাড়ে যাবেন। দুই-আপনি ইতোমধ্যে সাঁতার শুরু করেছেন। কিন্তু কিছুতেই উত্তাল ঢেউ ঠেলে ঐ পাড়ে পৌঁছাতে পারছেন না। দুই সিনারিওর জন্যেই এই অংশে আপনাকে ছয়টি উপকরণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে। যেগুলো আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে, আপনি যে অবস্থানেই থাকুন না কেন! 

যেমন ভাবছেন জীবনটা আসলে তেমন না 

জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই আমরা ব্যয় করি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে, সমঝোতা করতে এবং এসব করি শুধু এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্যে। আমরা ভুলে যাই আরও গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে, যা হচ্ছে আমাদের জীবন। পার্থক্য কী? পরিবেশ হলো কিছু বহিরাগত ঘটনা, মানুষ, স্থান ও এদের মিলিত অবস্থান। পরিবেশ আমি নই, আপনি নন। “আপনি” পরিবেশ কিংবা পারিপার্শ্বিকতা থেকে অনেক বেশি কিছু। 

আপনার মনের গহীনতম কোণের “আপনি”ই হচ্ছেন আসল “আপনি”। একজন সফল মানুষ গড়ে ওঠেন তার একান্ত চিন্তা, আচরণ ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ উপাদানের সমন্বয়ে। এই সব উপাদান একজন মানুষকে সক্ষমতা দেয় যে কোনো মুহূর্তে জীবনকে পরিবর্তন করার, পরিবর্ধন করার। 

আমাদের জীবন এগিয়ে যায় কিছু বস্তুগত, অবস্তুগত উপাদান, আবেগ ও ঐশ্বরিক শক্তির সমন্বয়ে। আপনার শরীর, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বস্তুগত উপাদান; অবস্তুগত উপাদান হচ্ছে আপনার কল্পনা, বুদ্ধিমত্তা ও তার প্রকাশ; আবেগের অংশে থাকে আপনার অনুভূতি ও তার বহিঃপ্রকাশ; ঐশ্বরিক ক্ষমতা হচ্ছে আত্মা এবং অদেখা সেই চরম শক্তি যা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। 

আপনার প্রকৃত সক্ষমতা নিহিত আছে আপনার গভীরে, আপনার অভ্যন্তরে যেখানে আপনি সৃষ্টি করতে পারেন নতুন অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস। এই সব নতুন সৃষ্টি দিয়ে আপনি পাল্টে ফেলতে পারেন আপনার বহির্জগতের পরিবেশ, সম্পর্ক, কর্মফল। যেমন অনেক বইপুস্তকেই লেখা থাকে যে, আপনার জাগতিক পরিবেশ হচ্ছে আপনার অভ্যন্তরীণ কাঠামোর প্রতিফলন। অন্যভাবে বলা যায়, আপনি যদি সেই সব মৌলিক বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানসমূহ যা আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে, সেই সব উপাদানের প্রতি অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে সেগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে পারেন, তাহলে আপনার বহির্জগত নিশ্চিতভাবে এবং নিজ থেকেই পরিবর্ধিত হবে। 

নিজেকে পালটে ফেলার যে যাত্রা আমি শুরু করেছি, তার আলোকে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে চাই- আমার জীবনেও এমন একটা সময় ছিল, যে সময়ে আমার এই অর্জনকে, সাফল্যকে দুঃস্বপ্ন মনে হত। দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে পরিবর্তন করার যে অঙ্গীকার এবং চেষ্টা আপনি করবেন সেটাই আপনার সাফল্যের উপাদান হিসেবে কাজ করবে, যেমন আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। 

আপনার স্বপ্নের জীবনের জন্যে সময় বাঁচান 

বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এই ঘটনাটা ঘটে। তারা যে জীবনের স্বপ্ন দেখে তা হচ্ছে “লেভেল ১০”-এর সমৃদ্ধ জীবন। সেই পরিপূর্ণ জীবন থেকে তাদেরকে আড়াল করে রাখে তাদের অসম্পূর্ণ বর্তমান জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তাদের বর্তমান জীবনের দায় ও কর্তব্য তাদের সময়ের বেশিরভাগটাই দখল করে রাখে; সব থেকে জরুরী বিষয়ে মনোযোগ দিতে দেয় না। 

লেভেল ১০-এর জীবনকে আপনি যত অবহেলা করবেন, বর্তমান জীবন আপনাকে তত অপূর্ণতা, হতাশার দিকে ঠেলে দেবে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায়- প্রতিদিনের জীবন থেকে আপনাকে কিছু সময় বরাদ্দ করতে হবে ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্যে। আসুন, গ্রহণ করি The Miracle Morning-এর Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ। এই প্যাকেজে ছয়টি খুব সাধারণ ধাপ। যেগুলো প্রতিনিয়ত চর্চার মাধ্যমে আপনার জীবনের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ঐশ্বরিক উপাদানগুলোর দৃশ্যমান উন্নতি ঘটবে। যা আপনাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনার আরাধ্য জীবনের দিকে। 

মনে রাখবেন, আপনার অভ্যন্তরীণ জীবনে পরিবর্তন আসা শুরু হলে একইসঙ্গে আপনার বাহ্যিক জীবনে, পরিপার্শ্বে ও আপনার সমগ্র অস্তিত্বে পরিবর্তন আসা শুরু হবে। 

Life S.A.V.E.R.S. 
S মানে নীরবতা (Silence) 

বই পড়ে সারা বছরে যা শেখা যায় 
এক ঘণ্টার নীরবতায় শেখা যায় তার চেয়ে বেশি 
— ম্যাথিউ কেলি 

S.A.V.E.R.S এর “S” 

না, S ফর Sleep না। দুঃখিত, আপনাকে ঘুমাতে বলতে পারছি না। অনেকেই যদিও ভাবেন একটা ঘুম দিয়ে উঠেই দেখবেন সাফল্য তার নাগালে। এটা ঘটতে পারে- সিনেমাতে যেমন দেখা যায় ক্রায়োজেনিক চেম্বারে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হলো। এবং এমন একটা সময় জাগানো হলো যখন পৃথিবীর সম্পদ সব মানুষকে ভাগ করে দিলেও সেটা যথেষ্ট থেকে বেশিই হবে। জীবন আসলে এতটা সরল না। সরল কি? 

S মানে নীরবতা (Silence) 

আমাদের S.A.V.E.R.S প্যাকেজে S ফর Silence, নীরবতা। নীরবতা প্যাকেজের প্রথম উপকরণ এবং সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের কোলাহলপূর্ণ, প্রচণ্ড গতিশীল ও বহুলচর্চিত জীবন থেকে উন্নতির পথে নীরবতা প্রথম পদক্ষেপ। আমি নীরবতা বলতে বোঝাচ্ছি উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরবতা; আক্ষরিক নীরবতা নয়। 

একজন সাধারণ মানুষ কিংবা আপনিই সকালটা কীভাবে শুরু করেন? ঘুম থেকে উঠেই বাথরুম, ব্রাশ, গোসল করা, ব্রেকফাস্ট ও ইত্যাদি। থামুন। দম নিন। আপনাকে দিন শুরু করতে হবে শান্ত হয়ে শান্তির সঙ্গে। এটা আপনাকে আপনার আরাধ্য জীবনের পথে এগিয়ে দেবে। এর জন্যে কী করতে হবে? আর দশটা-পাঁচটা সাধারণ মানুষ যা করে প্রচণ্ড তাড়াহুড়ায় দিন শুরু করে, আপনাকে ঠিক তার উল্টোটা করতে হবে; দিন শুরু করতে হবে নীরবতার সঙ্গে। 

সৃষ্টির শুরু থেকে আমার মতো অনেকেই জীবন উন্নয়নের বক্তব্য দিয়ে আসছে। এবং তারা সবাই অত্যন্ত জোরালোভা েনীরবতার শক্তি সম্পর্কে বলেছেন। প্রার্থনা, ধ্যান এগুলো সব নীরবতারই বিভিন্ন রূপ। ইতিহাসের অনেক নায়কই নীরবতাকে ব্যবহার করেছেন তাদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে ও অসাধারণ ফল পেতে। 

আমজনতার সকাল 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কি আপনি নিজেকে নিয়ে ভাবেন? কিংবা সারাদিনের কর্মকাণ্ডের জন্যে নিজেকে তৈরি করেন? আপনার দিনের শুরু কি নীরব? ক্লান্ত? যদি তাই হয়- অভিনন্দন। সমৃদ্ধ জীবনের পথে আপনি আমাদের সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে আছেন। 

ওপরের সিনারিও ছাড়াও আরও দুইভাবে আমরা দিন শুরু করি। একদল মানুষ সকাল শুরু করেন চাপ নিয়ে। ব্যস্ততা, গোলমাল, অস্থিরতা এগুলোই তাদের সকালের অনুষঙ্গ। আর একদল শুরু করেন আলস্য নিয়ে। তন্দ্রাচ্ছন্নতা থাকে এই দলের সকাল। আপনার সকাল কীভাবে শুরু হয়? ব্যস্ততা নিয়ে? আলস্য নিয়ে? 

কিছু মানুষের সকাল হয় ব্যস্ততাপূর্ণ, অগোছালো। ঘুম থেকে উঠেই আমরা সমগ্র দিনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আমাদের তাড়া থাকে, থাকে সময়কে ধাওয়া করার চাপ। আমরা শুরুই করি প্ল্যান করতে করতে। কোথায় কোথায় যেতে হবে, কীভাবে যেতে হবে, কার সঙ্গে দেখা করতে হবে, কোনটা ভোলা যাবে না, কোন কাজে ভুলে হলে কী অজুহাত দিতে হবে ইত্যাদি। আর কিছু মানুষের দিনের শুরু হয় তন্দ্রাচ্ছন্নতা, আলস্য নিয়ে। সুতরাং বোঝা গেল বেশিরভাগ মানুষ সকাল শুরু করেন হয় ব্যস্ততা নিয়ে অথবা আলস্যের হাত ধরে। ব্যস্ততা কিংবা আলস্য কোনটাই আমাদের কাম্য নয়। 

চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কার্যকরী উপায় নীরবতা। নীরবতা আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা আনে, একই সঙ্গে চিন্তায় আনে পরিচ্ছন্নতা-যা আপনাকে সহায়তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে। 

ফলপ্রসূভাবে নীরবতা অভ্যাস করার আমার পছন্দের কিছু উপায়ের তালিকা নিচে দেওয়া হলো। কোনো চাপ নেই। যে কোনো একটা দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। 

> মেডিটেশন 

> প্ৰাৰ্থনা 

> রিফ্লেকশন 

> গভীর শ্বাসক্রিয়া 

> কৃতজ্ঞতা জানানো 

কোনো কোনো সকাল আমি যে কোনো একটা দিয়ে শুরু করি। আবার কোন কোন সকালে আমি সবগুলোই করি। উপরের কাজগুলোর সবগুলোই আপনার শরীরকে শিথিল করবে, মনকে শান্ত করবে। সবথেকে বড় কথা আমাদের সম্পূর্ণ S.A.V.E.R.S প্যাকেজের উপযোগিতা গ্রহণের জন্যে আপনাকে তৈরি করবে। 

অবশ্যই মনে রাখতে হবে- আমরা যে ফলপ্রসূ নীরবতার অভ্যাস করতে যাচ্ছি, তা বিছানায় থেকে সম্ভব না। আপনাকে অবশ্যই বিছানা ছাড়তে হবে। খুব ভালো হয় যদি শোবার ঘর থেকে বেরই হয়ে যান। বিছানার কাছাকাছি থাকার অসুবিধা হলো নীরবতা পালন থেকে খুব সহজেই গড়াগড়িতে চলে যাওয়া যায় এবং সেখান থেকে ফের ঘুমে। আমি চলে যাই বসার ঘরে। যেখানে আগে থেকেই আমার মিরাকল মর্নিং শুরু করার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে। আমার ডায়েরি, যোগ ব্যায়ামের ডিভিডি, এখন যে বইটা পড়ছি- সব হাতের নাগালে। ব্যবস্থাটা এমন যে, ফলপ্রসূ নীরবতা পালনের জন্যে আমাকে অন্য কারো কিংবা অন্য কিছুর দ্বারস্থ হতে হয় না। 

মেডিটেশন 

এই একটা বিষয় শেখার ক্ষেত্রে উপকরণের অভাব নেই। প্রচুর বই পাবেন; আর্টিকেল, ব্লগ পাবেন ওয়েবসাইটে। মেডিটেশনের প্রমাণিত সাফল্য কিংবা উপায় নিয়ে আমরা খুব গভীর আলোচনায় যাব না। আমি খুব অল্প কথায় মেডিটেশনের কিছু উপকার এবং এই উপকারসমূহ কীভাবে খুব সহজে অর্জন করতে পারেন সেই বিষয়ে কিছু বলব। 

মেডিটেশনের মূল কথা হলো নীরবতা পালনের মাধ্যমে আপনার মনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি আবিষ্ট করে রাখা। গবেষণার পর গবেষণা প্রমাণ করেছে মেডিটেশন ওষুধের চেয়ে ভালো। আপনি সম্ভবত সচেতনও নন মেডিটেশনের শারীরিক উপকারিতা সম্পর্কে। গবেষণায় দেখা গেছে মেডিটেশন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে, মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়ায়। মেডিটেশন এমনকি ব্যথা ও চাপ দূর করতে সাহায্য করে। মেডিটেশনের পক্ষে ওকালতি করার সবথেকে বড় কারণ- এর জন্যে খুব অল্পসময় প্রয়োজন। মেডিটেশনের উপকার আপনি মাত্র কয়েক মিনিটের অভ্যাসে পেতে পারেন। 

খুব পরিচিত সেলিব্রেটি, বড় কর্পোরেশনের CEO ও তাদের মতো অনেক সফল ব্যক্তি যেমন Jerry Seinfeld, Sting, Russell Simmons, Oprah – এঁরা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন নিয়মিত মেডিটেশন করেন; মেডিটেশন তাঁদের জীবনের খুব মূল্যবান একটা অংশ। রিক গোয়িংস, Tupperware TM এর CEO, The Financial Times-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট মেডিটেশন করেন। তিনি বলেছেন, “আমার ক্ষেত্রে, এই অভ্যাসটা শুধু চাপ কমাতেই সাহায্য করে না বরং কী ঘটছে এবং কী ঘটতে চলেছে সেসবের প্রতি আমাকে স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করে।” Oprah মেডিটেশনের একটা বিশেষ শাখার চৰ্চা করেন, TranscendentalMeditation TM। তিনি Huffington Post-এর জন্যে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে Dr. Ozকে বলেছিলেন-এই বিশেষ মেডিটেশন তাঁকে ঐশ্বরিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। 

মেডিটেশনের অনেক ধরন আছে, কিন্তু মোটা দাগে মেডিটেশন দুই ধরনের- গাইডেড ও নন গাইডেড। গাইডেড মেডিটেশনে আপনি একজন বক্তার কণ্ঠ শুনবেন। যিনি আপনাকে আপনার চিন্তা, মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। নন গাইডেড মেডিটেশনে কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। আপনি নিজের মতো করে, নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপ অনুসরণ করবেন। 

মিরাকল মর্নিং-এর জন্যে মেডিটেশন 

এখানে খুব সহজ কিছু ধাপ বর্ণনা করা আছে, যা আপনি অনুশীলন করতে পারবেন খুব সহজে, এমনকি আগে কখনো যদি মেডিটেশন না-ও করে থাকেন। 

> আনুষ্ঠানিক মেডিটেশন শুরু করবার আগে আপনার মনকে প্রস্তুত করুন এবং উদ্দেশ্য নিশ্চিত করুন। এই সময়টাতে আপনার মনকে শান্ত করতে হবে। বিদায় দিতে হবে সেই সব জটিল চিন্তাভাবনাকে যা “বর্তমান” সময়কে অনুভব করতে দিচ্ছে না; আপনাকে ব্যস্ত রাখছে অতীতের ভুল পদক্ষেপের আফসোসে এবং ভবিষ্যতের ফলাফলের দুশ্চিন্তায়। চেষ্টা করুন চাপমুক্ত থাকতে, সমস্যাগুলোর কাছ থেকে ছুটি নিন, চেষ্টা করুন ‘বর্তমানে’ উপস্থিত থাকতে। এই সময়টাতে আপনি উপভোগ করবেন আপনার প্রকৃত সত্তাকে। সেই জ্যোতির্ময় সত্তার দিশা ধরে আপনি পৌঁছাবেন আরও গভীরে, যে গভীরতায় আপনার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা, কষ্ট কোনো অর্থই বহন করে না। আপনি পৌঁছে যাবেন সেই গভীরতায় যেখানে পৌঁছানোর ভাবনা একজন সাধারণ মানুষ তার সুন্দরতম স্বপ্নেও ভাবে না। সেই জ্যোতির্ময় সত্তা অধিগ্রহণের জন্যে আপনাকে শুধুমাত্র, আবারো বলছি, শুধুমাত্র উপস্থিত থাকতে হবে। কিচ্ছু ভাববার দরকার নেই, করার দরকার নেই, শুধু উপস্থিত থাকুন আকাঙ্ক্ষিত “আপনি”তে। একটু কি “কী রকম যেন” মনে হচ্ছে? ঠিক আছে, মনে হতেই পারে। আমারও মনে হয়েছিল। এরকম মনে হওয়ার কারণ আপনি এর আগে কখনো এই জিনিস করতে চেষ্টা করেননি। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমরা এখনই শুরু করব। 

> আরামদায়ক, নীরব জায়গা নির্দিষ্ট করুন বসার জন্যে। আপনি খাটে, চেয়ারে কিংবা মেঝেতে বসতে পারেন। কিংবা একটু আরাম করে কুশনের উপরও বসতে পারেন। 

> মেরদণ্ড সোজা রেখে আসনের ভঙ্গিতে বসুন। চোখ বন্ধ করেও নিতে পারেন, খোলাও রাখতে পারেন। খোলা রাখলে দুই হাত সামনে রেখে মেঝেতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। 

> নিঃশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন। ধীরে কিন্তু গভীর শ্বাস নিন। শ্বাস নিন নাক দিয়ে, ছাড়ুন মুখ দিয়ে। খেয়াল রাখুন শ্বাস নেওয়া কিংবা ছাড়ার জন্যে পেট ব্যবহার করুন, বুক নয়। নিঃশ্বাস যদি বুকে না নিয়ে পেটে নেন সেটা সর্বাধিক কার্যকরী হয়। 

> শ্বাসক্রিয়ায় এবার আমরা একটু গতি আনব। শ্বাস নিন, তিন সেকেন্ড ধরে। সেকেন্ড গুনবেন কীভাবে— ধীরে ধীরে গুনুন এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন। শ্বাস তিন সেকেন্ডের জন্যে ধরে রাখুন- একই ছড়া- এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন। ছাড়ুন তিন সেকেন্ড ধরে- এক হাজার এক, এক হাজার দুই, এক হাজার তিন। অনুভব করুন আপনার চিন্তা, আপনার আবেগ ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে আপনার গভীরে স্থায়ী হচ্ছে। মনে রাখবেন যদিও মেডিটেশনের সময় আপনি বাস্তব জগত থেকে সরে আসতে চাচ্ছেন, বাস্তবতা কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। প্রতি নিশ্বাসের সঙ্গে তারা স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিতি জানান দেবে। আসতে দিন এবং তাদের থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিন। মনোযোগ নিবদ্ধ করতে চেষ্টা করুন শ্বাসক্রিয়ায়। 

> মনে রাখবেন এই সময়টা হচ্ছে বাস্তবতার চিরন্তন জটিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করার। এই সময়েই আপনি সব চাপ, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলবেন। এই সময়ে আপনি শুধুমাত্র এই সময়টাতেই অবস্থান করবেন। এই প্রক্রিয়াটাকে আমরা বলি “উপস্থিত থাকা”। এখানে আপনি কিচ্ছু ভাববেন না, কিচ্ছু করবেন না। শুধু বেঁচে থাকবেন, উপস্থিত থাকবেন। মনোযোগ দিন আপনার তিন সেকেন্ডের শ্বাসনৃত্যে। প্রতি নিঃশ্বাসের সঙ্গে আপনি ভেতরে নিচ্ছেন ইতিবাচকতা, ভালোবাসা, শান্তি; বের করে দিচ্ছেন সব চাপ আর দুশ্চিন্তা। বর্তমান সময়টাকে উপভোগ করুন; শুধু শ্বাস নিন, ছাড়ুন… নিজের অস্তিত্বকে উপভোগ করুন। 

> দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা যদি আপনাকে মেডিটেশনের সময় খুব বেশি বিরক্ত করে আপনি কিছু শব্দ, কিছু বাক্য ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই নির্দিষ্ট শব্দ আপনাকে বারবার বলতে হবে, শ্বাস নেওয়ার সময়- ছাড়ার সময়। যেমন: শ্বাস নেওয়ার সময় ভাবুন- আমি শান্তি নিচ্ছি, যখন শ্বাস ছাড়ছেন- আমি ভালোবাসা বিতরণ করছি। এবং আবার এবং পুনরায়। “শান্তি” কিংবা “ভালোবাসা”- এই শব্দগুলোই ব্যবহার করতে হবে এমন নয়। আপনি “আত্মবিশ্বাস” কিংবা “বিশ্বাস” কিংবা আপনার পছন্দের যে-কোন উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। 

> মেডিটেশন এমন এক উপহার যা আপনি রোজ ব্যবহার করতে পারবেন। এটা সত্যিই অসম্ভব উপকারী এক উপহার। আমি রোজ মেডিটেশনে বসি। এই সময় আমি আক্ষরিক অর্থেই শান্তি অনুভব করি, মন খুলে কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি। মেডিটেশনকে ভাবুন দৈনন্দিন সব ঝামেলা থেকে নেওয়া ছুটি হিসেবে। মেডিটেশন আপনাকে বাস্তব ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে না বরং এই ঝামেলাগুলোকে সামলাতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, নতুন উপায় উদ্ভাবনে সক্ষম করবে। 

নীরবতার ব্যাপারে শেষ কিছু কথা 

নীরবতার সর্বাঙ্গ সুন্দর উপায় বলতে আসলে কিছু নেই। আপনি প্রার্থনা করতে পারেন, মেডিটেশন করতে পারেন, কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন কিংবা অন্য যে- কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন হতে পারেন। আমার জন্যে শুরুর দিকে- নীরবে একা বসে থাকা— বিশেষ করে মেডিটেশনের জন্যে একাগ্র মনোযোগ— খুব কঠিন ছিল। দুর্ঘটনার পরে ডাক্তার আমার ADHD (Attention deficit hyperactivity disorder-মনোযোগের ঘাটতি সংক্রান্ত সিনড্রোম) নিশ্চিত করেন। আমার পক্ষে কিছুতেই আমার আগের জীবন, প্রেমিকা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি ভুলে থাকা সম্ভব ছিল না। কিছুতেই আমি একাগ্র মনঃসংযোগ করতে পারতাম না। 

যদিও আমি শান্ত পরিবেশে বসতাম, মেডিটেশনের উদ্দেশ্যে, আমার ভাবনাগুলো শান্ত থাকত না। তারা ছোটাছুটি করত। যেহেতু আমার প্রচণ্ড সমস্যা হতো মেডিটেশনে। আমি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি মনোযোগ ধরে রাখতে। একটি উপায়ে ব্যর্থ হয়েছি, সেটা বাতিল করে নতুন পথে এগিয়েছি এবং এভাবে বারবার। এখন আমি সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি- এবং এই জন্যেই মনে হয় আমি মেডিটেশনে সফল হওয়ার সব অলিগলি আমি জানি। আমার মোটামুটি তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লেগেছে। আমি বসতাম, দুশ্চিন্তাগুলো ভিড় করত। আমি সেগুলোকে বলতাম — ঠিক আছে, আমি জানি তোমরা আছো। আপাতত বিশ্রাম নাও, আমি দেখছি তোমাদের ব্যাপারে কী করা যায়’। এবং আবার চেষ্টা করতাম মনঃসংযোগে। আপনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন হতে পারে। হতাশ হবেন না, নিরুৎসাহিত হবেন না। চেষ্টা করতে থাকুন। 

কতক্ষণ মেডিটেশন করবেন, এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। অনুরোধ করব অন্তত পাঁচ মিনিট বসুন। যদিও পরের অধ্যায়ে আপনাদের জানাব কীভাবে মাত্র ষাট সেকেন্ডে মেডিটেশনের সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যায়। যখন এই অনুশীলন শুরু করি, আমি নীরবতায় বসে যেতাম ভাবনাহীন শান্ত মনে; প্রার্থনা করতাম, ধ্যানে বসতাম, কৃতজ্ঞতায় নিমগ্ন হতাম এবং ঠিক মাত্র পাঁচ মিনিট গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতাম। একটি দিন শুরু করার এটাই সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ সঠিক উপায়। 

S.A.V.E.R.S-এর “A” 

“A” মানে “Affirmations” বা ইতিবাচক আত্মকথন 

নিজেকে বোঝান, আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে। আপনার বিশ্বাস যখন গভীরে গ্রোথিত হবে, ঘটনা নিজে থেকেই ঘটতে থাকবে।
— মোহাম্মদ আলী 

ততক্ষণ আপনি ব্যর্থ যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজে বিশ্বাস করছেন যে, আপনি সফল। আর সফলতার এই বিশ্বাস আসে নিজেকে বোঝান থেকে, যা সবসময় কার্যকরী। 
—Florence Scovel Shinn 

.

“আমিই সেরা!” মোহাম্মদ আলী এই কথাটা নিজেকে শোনাতেন, বারবার- এবং তিনি সেরাদের একজনে পরিণত হয়েছিলেন। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব অর্জনের জন্যে আত্মকথন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আপনাকে সাহায্য করবে জীবনের সব চাওয়া পূরণে। আত্মকথন আপনাকে শুধু লক্ষ্য নির্ধারণেই সহায়তা করে না বরং সেই লক্ষ্য পূরণের ধাপও তৈরি করে দেয়। 

বর্তমান সময়ের সফল মানুষদের ভেতর অনেকেই, যেমন-Will Smith, Jim Carrey, Suze Orman, Muhammad Ali, Oprah, উচ্চকণ্ঠে, প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন তাঁদের সফল, সমৃদ্ধ জীবনের পেছনে আত্মকথন এর ভূমিকা। এত সব বিখ্যাত ব্যক্তি যখন স্বীকার করছেন তখন ব্যাপারটা কিছুতেই কাকতালীয় হতে পারে না। 

নিজের সঙ্গে কথোপকথন-ব্যাপারটা পাগলামি নয়। একটু ভেবে দেখুন তো- আমরা সবাই, নিয়মিত ও অবিরতভাবে নিজেদের সঙ্গে কথোপকথন করে যাচ্ছি না? যখনই আপনার মন মুক্ত তখনই এই কথোপকথন শুরু হয়ে যায়। এই নাটকে অভিনয় করে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা- খারাপ কিংবা ভালো। এই ব্যাপারটা একদমই স্বাভাবিক এবং আমাদের উচিত ব্যাপারটার কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে নেওয়া। ঘটনাটা যখন ঘটছেই তখন কেন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা আমরা নিজেদের সুবিধামত সাজিয়ে নিই না? খুব কম মানুষই ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং সুচিন্তা, সু-বাক্য দিয়ে নিজেদের সুবিধামত নাটক সাজিয়ে নিয়েছেন। 

আমি ইদানীং একটা গবেষণাপত্রে পড়েছি শতকরা আশি ভাগ নারী নিজের নেতিবাচকতা (ফিগার, চাকরি, সংসার, প্রতিবেশীর কমেন্ট) নিয়ে নিজের সঙ্গে কথোপকথন করেন। পুরুষেরাও করেন, কিন্তু কম। আপনি নিজেকে নিয়ে কী ভাবছেন সেটা সাফল্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আপনার আত্মকথন হয় আপনার পক্ষে ভূমিকা রাখছে অথবা বিপক্ষে। নির্ভর করে আপনার নিয়ন্ত্রণের ওপর। 

আপনি অবশ্যই আপনার অতীতের ভুল ও ভয় এড়িয়ে যাওয়ার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করেন। আপনি যদি আপনার আত্মকথন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে এবং সেগুলো নিয়মিত নিজেকে শোনান (জোর গলায়, অনুরোধ করব নিজেকে শোনান জোরে, পরিষ্কার ভাবে) তাহলে এটা অবশ্যই আপনার অবচেতন মনে তাৎক্ষণিক ছাপ ফেলবে। ইতিবাচক আত্মকথন আপনার চিন্তাভাবনা থেকে ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করে দেবে। সফল হওয়ার জন্যে যেভাবে চিন্তা করা দরকার সেভাবেই আপনাকে ভাবতে সাহায্য করবে। 

ইতিবাচক আত্মকথন যেভাবে আমার জীবনে পরিবর্তন এনেছে

Matt Recore, আমার সফল বন্ধুদের একজন। ম্যাটের সঙ্গে থাকাকালীন ইতিবাচক আত্মকথনের বিষয়টি প্রথম জানতে পারি। প্রতিদিন সকালে আমি শুনতাম Matt শাওয়ারের নিচ থেকে চিৎকার করছে। আমি ভাবতাম ও হয়তো আমাকে কিছু বলছে। ওর বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আমি শুনতাম ওর চিল্লানি, “আমিই আমার ভাগ্যের নিয়ন্তা, সাফল্য আমার অধিকার। স্বপ্ন পূরণের জন্যে যা যা করা দরকার তার সবই আমি করব, নিঃশঙ্ক চিত্তে।” আমি ভাবতাম নতুন পাগলামি! 

ম্যাটের সঙ্গে থাকার আগেও ইতিবাচক আত্মকথনের বিষয়টি জানতাম, একটু ভিন্নভাবে। নব্বইয়ের দশকে Saturday Night Live নামে টিভিতে একটা হালকা মেজাজের প্রোগ্রাম হতো। ওই প্রোগ্রামে Stuart Smalley নামের আমি এক চরিত্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করত, “আমি যথেষ্ট পরিণত, যথেষ্ট স্মার্ট এবং মানুষ আমাকে পছন্দও করে।” ওই সময়ে আমি ব্যাপারটাকে কৌতুক হিসাবেই নিয়েছিলাম। ম্যাটের ধারণা আমার থেকে ম্যাচিউরড ছিল। সে আত্মকথনকে নিজের সফলতার পক্ষে কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে। পঁচিশ বছর বয়সেই তার পাঁচটা বাড়ি ছিল, সে তখন সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারদের একজন ছিল। শাওয়ারে দাঁড়িয়ে চিল্লানোর ব্যাপারটাকে আমার পাগলামি ভাবা উচিত হয়নি। হাজার হলেও ম্যাটের বাড়িতে আমি ভাড়াটে ছিলাম। দুঃখের বিষয় হলো, ইতিবাচক আত্মকথনের তাৎপর্য বুঝতে আমার আরও কিছু বছর সময় লেগেছিল। 

আত্মকথনের ব্যাপারে আমি সিরিয়াস হই নেপোলিয়ন হিলের Think And Grow Rich পড়ার সময়। বইটা আপনাকেও পড়ার জন্যে অনুরোধ করব। যদিও আমি তখনও ভাবতাম একই কথা নিজেকে শোনানো পাগলামিরই একটা ধরন তারপরও একবার চেষ্টা করে দেখতে চাইলাম। এই পাগলামি ম্যাটের জীবনে জাদুর মত কাজ করেছে, আমার ক্ষেত্রে হতেও পারে। 

দুর্ঘটনার জন্যে প্রচণ্ড শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে অপূরণীয় মানসিক ক্ষতিও আমার হয়। খুব সহজে বলতে চাইলে এভাবে বলা যায়, আমি শর্টটার্ম মেমরির নতুন একটা কেসে পরিণত হই। হাসপাতালে অনেকেই আমাকে দেখতে আসতেন। বাবা, মা, বন্ধু, সহকর্মী অনেকেই। যাদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ভুলে থাকা কোনভাবেই সম্ভব হতো না। অথচ তাদেরকে হাসপাতালে এসে প্রতিবার আমার সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হতে হতো। এমনকি ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এলেও আমি তাদের চিনতে পারতাম না। আবার শুরু থেকে শুরু করতে হতো। 

দুর্ঘটনার পর প্রায় ৭ বছর এভাবে চলেছে। একসময় আমি নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমি চিনতে পারতাম না কিন্তু এটা বুঝতে পারতাম ব্যাপারটা বিরক্তিকর। সেই প্রথম আমি আত্মকথনের সিদ্ধান্ত নিই। নিজেকেই বোঝাই এখন সময় হয়েছে বিশ্বাস করার, নিজেকে বিশ্বাস করানোর। আমি নিজেকে বলতে শুরু করি, “আমার মস্তিস্ক শরীরের সব থেকে আশীর্বাদপূর্ণ অংশ, সবথেকে স্মার্ট অংশ। আমার মস্তিষ্কের জাদুকরী ক্ষমতা আছে নিজেকে মেরামত করার। এখন থেকে আমি বিশ্বাস করব আমার মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে।” 

যদিও আমার স্মৃতিশক্তির রাতারাতি উন্নতি হয়নি এবং মাঝে মাঝে সন্দেহ ও হতো এর সুফল নিয়ে। তবু আমি রোজ সকালে বিশ্বাসের ওই ছোট্ট মন্ত্র নিজেকে শুনাতাম। আরও দুই মাস কেটে গেল। এবং একদিন সকালে এমন এক ঘটনা ঘটল, যা গত সাত বছরে ঘটেনি। এক বন্ধু দেখা করতে এসেছিল। বরাবরের মতো (যদিও ‘বরাবর’ মনে রাখার মতো পরিস্থিতিতে আমি ছিলাম না) স্বাভাবিক রোগী দেখা পর্ব শেষ করে যাওয়ার সময় সে বলল, “সকালে আমাকে ফোন দিও।” আমার মুখ থেকে খুব স্বাভাবিক গতি ও ভঙ্গিতে বের হয়ে গেল “অবশ্যই, নিশ্চিন্ত থাক।” কথাটা বলা ও শোনার পর বুঝতেই পারছেন আমার মনের অবস্থা কী হয়েছিল। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার ওপর আমার বিশ্বাস তার ক্ষমতা হারাতে শুরু করেছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে আত্মকথনের সাহায্যে গ্রোথিত নতুন বিশ্বাস। 

ওই মুহূর্ত থেকে আমার জীবনের মোড় নতুন বাঁক নিল। দুটো নতুন পরীক্ষিত বিশ্বাসের গাছ শিকড় গাড়ল। এক— ইতিবাচক আত্মকথন সত্যিই কাজ করে, দুই- আমি আবার পারব। ওই দিন থেকে আমার আত্মকথনে নতুন নতুন বাক্য যুক্ত হলো। জীবনের প্রতিটা অংশের উন্নতির জন্যে আমি নতুন বিশ্বাস আরোপ করা শুরু করলাম। স্বাস্থ্য, সুখ, সম্পর্ক, অর্থ, আত্মবিশ্বাস- সবকিছুর উন্নতির জন্যে আমি নিজেকে ইতিবাচক আত্মকথনের শরণাপন্ন হলাম। ওই দিন থেকে আমি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম সুযোগ সীমিত নয়, আসলে সবই অসীম। 

আপনার প্রোগ্রামিং কেমন? 

ডিজিটাল এই সময়ে আমরা সবাই জানি প্রোগ্রামিং কী জিনিস। আধুনিক স্মার্ট সব যন্ত্রের প্রত্যেক অংশের যেমন আলাদা আলাদা প্রোগ্রামিং (নির্দেশনা) করা আছে, তেমনি আমাদেরও মনের গভীর অবচেতনে- চিন্তার, বিশ্বাসের, কাজের প্রোগ্রামিং করা আছে। আমাদের প্রোগ্রামার অনেক বেশি স্মার্ট এবং তাঁর প্রোগ্রামও। আমাদের প্রোগ্রাম নিজে থেকে পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত হতে পারে। এজন্যেই আমাদের আচরণের, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ এটা হয়ে থাকে ডিফল্ট সেটিংস ইভন্তু করে বাইরের ভ্যারিয়েবলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এই ভ্যারিয়েবলগুলো হলো- আমাদেরকে অন্যরা যা বলে, আমরা নিজেদের যা বলি, আমাদের অতীতের ভালো কিংবা মন্দ অভিজ্ঞতা এবং এরকম আরও কিছু। আমাদের কারো কারো ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং হয় সুখ ও সফলতার জন্যে। অন্যদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত এবং এই পৃথিবীতে তারাই সংখ্যাধিক। 

সুতরাং কষ্টের খবর হচ্ছে- আপনার অতীতের ভয়, হতাশা, প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি কখনোই পরিবর্তিত হবে না। আপনার সম্পর্কে আপনার আশেপাশের মানুষের মনোভাবও এমনিতে পরিবর্তিত হবে না। এখন আপনি যদি নিজে থেকে আপনার কোর প্রোগ্রামিং-এ পরিবর্তন না আনেন তো এই সব প্রতিকূল ভ্যারিয়েবল আপনাকে হতাশার শেষ সীমায় পৌঁছে দেবে, ধ্বংসোন্মুখ করে তুলবে। 

আনন্দের খবর হচ্ছে, আপনি যে-কোন সময় নিজের প্রোগ্রামিং-এ পরিবর্তন আনতে পারেন। অতীতের ভয়, হতাশা, প্রত্যাখ্যানের অপমান ইত্যাদির বিরুদ্ধে আপনি নিজের প্রোগ্রামিংকে আরও বেশি রক্ষণাত্মক করতে পারেন। এবং সফল হওয়ার জন্যে যে-সব ভ্যারিয়েবলের প্রতি অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন, সেগুলির দিকে নিজের অবচেতন মনকে এগিয়ে নিতে পারেন। 

নিজেকে প্রোগ্রামিং করতে পারেন আত্মবিশ্বাসী হতে। খুব সহজেই এটা করা যায়। প্রতিদিনের জীবনে আপনি কী হতে চান, কী অর্জন করতে চান, কীভাবে অর্জন করতে চান, সেগুলোই নিজেকে বারবার বলুন। যথেষ্ট পরিমাণ বলার পর, একটা সময়, আপনার অবচেতন মনে আপনি আপনার লক্ষ্যে বিশ্বাস করতে শুরু করবেন, সেই অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করবেন এবং আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করবেন, আপনার দৈনন্দিন জীবনে আপনার ইতিবাচক আত্মকথন প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলা শুরু করেছে। 

সবথেকে ভালো হয়, আপনি যদি আপনার আত্মকথনের ধাপগুলো লিখে ফেলেন। লিখে ফেলার সুবিধা হলো- আত্মউন্নয়নের সিঁড়ির ধাপগুলো অর্থাৎ প্রোগ্রামিং-এর ফ্লো চার্টের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত থাকবেন। কোথাও ভুল হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা নজরে পড়বে এবং শুধরে নেওয়া যাবে। আর একটা বড় সুবিধা হলো- লক্ষ্য অনুযায়ী আত্মকথন তৈরির প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শেখা যাবে। 

আপনার নিজস্ব আত্মকথন তৈরির পাঁচটি সাধারণ ধাপ 

ধাপ ১ : আপনি জীবন থেকে আসলে কী পেতে চান 

আত্মকথন লেখার উদ্দেশ্য হলো- প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে যে সব বিশ্বাস, আচরণ, পদক্ষেপের প্রয়োজন সেগুলোর জন্যে আপনার মনকে প্রস্তুত করা। সুতরাং আপনাকে আত্মকথন লিপিবদ্ধ করতে হবে আপনার স্বপ্নের সাফল্যপূর্ণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের শেষ ধাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে। সফল হওয়ার জন্যে যে সব ক্ষেত্রে আপনার উন্নতি করতে হবে (যেমন: স্বাস্থ্য, মানসিকতা, আবেগ, সামর্থ্য, সম্পর্ক, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি) সগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন করুন। নিজেকে বুঝুন, নিজেকে বোঝান- এবং লিখে রাখুন। 

ধাপ ২ : কেন চান 

আমার খুব ভালো একজন বন্ধু Adam Stock, Rising Stock Inc’. এর প্রেসিডেন্ট, একবার আমাকে বলেছিলেন, “জ্ঞানীরা শুরু করেন কেন দিয়ে।” সবাই চায় সুখ, স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি। কিন্তু চাইলেই পাওয়া যায় না। গড়পড়তা জীবনের কু-চক্র থেকে বেরিয়ে যারা সামগ্রিক সাফল্য অর্জন করেন তাদেরকে তাড়িত করে এই “কেন”। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যকে তারা এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন যে, জীবনের সব ছোটখাটো সমস্যার সমষ্টিও তাদের বিশ্বাস টলাতে পারে না। তারা রোজ ঘুম থেকে ওঠেন, দৈনিক জীবনের অনিবার্য সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করেও তারা এগিয়ে যান সাফল্যের দিকে। মননের গভীরে গেঁথে যাওয়া আপনার চাহিদার তালিকা এবং কেন সেগুলো চান- এই দুইই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল “কেন”-এর ব্যাপারে স্ফটিক স্বচ্ছ ধারণা ও বিশ্বাসই পারে উদ্দেশ্য পূরণে আপনাকে অপ্রতিরোধ্য করতে। 

ধাপ ৩ : ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করার জন্যে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন

আমার প্রথম পরামর্শক, Jeff Sooey’র মতে এটাই সেই ধাপ যখন নতুন গাড়ি প্রথম রাস্তায় বের হয়। অন্যভাবে বলা যায়, আপনার জীবন উন্নত হবে যখন আপনি উন্নত হবেন; আপনার বহির্জগত পরিবর্তিত হবে আপনার মনোজগতের পরিবর্তন অনুযায়ী। স্বপ্নের লাইফ লিড করার পূর্বশর্ত হলো আপনি কী হতে চান এবং তা হতে আপনি কী পদক্ষেপ নেবেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা। আপনার জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক ইত্যাদি অনন্য উচ্চতায় নিতে লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখুন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। 

ধাপ ৪ : কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে আপনি কী কী করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? 

আপনার স্বপ্নের লক্ষ্যকে বাস্তব করার জন্যে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, ভাবুন। ওজন কমাতে চান? আপনার আত্মকথন এমন হওয়া উচিত- আমি অবশ্যই সপ্তাহে পাঁচ দিন ভোরে জগিং করতে বের হবো; প্রতিদিন অন্তত বিশ মিনিট দৌড়াব। আপনি যদি সেলসম্যান হন, আপনার আত্মকথন এরকম হতে পারে- আমি অবশ্যই দিনে বিশ জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলব; পাঁচ জনের সঙ্গে দেখা করব; সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কাজ করব। সংখ্যার প্রতি নজর দিন- কতক্ষণ পরপর করবেন, কতবার করবেন, কত সময় ধরে করবেন। শুরু করুন অল্প থেকে। সপ্তাহে এক দিন দৌড়াতে বলুন নিজেকে, দশ মিনিট দৌড়াতে বলুন। শুরুতেই পাঁচ দিন পঞ্চাশ মিনিট করে দৌড়াতে আপনি পারবেন না, সেটা বাস্তবসম্মত না, ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ছোট লক্ষ্য নিন, দ্রুত সফল হবেন, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ধীরে ধীরে বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। একবারে গাছে উঠতে গেলে পড়ে ব্যথা পাবেন, হতাশ হবেন, আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরবে। প্রথম সপ্তাহে রোজ দশ জন সম্ভাবনাময় ক্রেতার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করুন, তিন জনের সঙ্গে দেখা করুন। সপ্তাহ শেষে পরিধি একটু বাড়ান। ধীরে ধীরে বড় হোন। 

ধাপ ৫ : সফলদের গল্প ও দর্শন মাথায় রাখুন 

আমি সবসময় সফলদের কথা ও দর্শন আত্মকথনে রাখার চেষ্টা করি। যেমন আমার একটা আত্মকথন আমি নিয়েছি মার্শাল গোল্ডস্মিথের What Got You Here Won’t Got You There বই থেকে। এটা এরকম : প্রভাবশালী মানুষের সব থেকে মূল্যবান গুণ হচ্ছে তারা মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারেন, ওই ব্যক্তিই এই মুহূর্তে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। Bill Clinton, Oprah Winfrey, Bruce Goodman সবাই নিজেদের ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন এই কৌশল ব্যবহার করেই। আমিও এই কৌশলই ব্যবহার করব আমার সঙ্গে পরিচিত প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে। 

আর একটা আত্মকথন আছে টিম ফেরিসের উপদেশ অনুসারে। সেটা এরকম: ইতিবাচক ফলাফলের জন্যে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের পেছনে একটানা খাটুন। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে টানা কয়েক ঘণ্টা একজনের পেছনে কিংবা একটা কাজের পেছনে খাটুন। প্রতি ঘণ্টায় নতুন কাজ করার চেয়ে এটা অনেক বেশি ফলদায়ক। 

যখনই আপনার সামনে কোনো সাফল্যের উদাহরণ, অনুপ্রেরণামূলক উক্তি আসবে— নিজেকে বলুন- এই ব্যাপারটাতে আমারও উন্নতি করার দরকার আছে। এটা আত্মকথনে রাখি। এবং প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মনোযোগ দেবার ফলে আপনার দর্শন, আপনার অবচেতন মনের ভাবনা, আপনার কর্মপরিকল্পনা আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হবে, যা আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে সঠিক ভূমিকা রাখবে। 

আত্মকথন সম্পর্কে শেষ কথা 

> আত্মকথন প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ ফলদায়ক করার জন্যে আপনার আবেগের রাশ ঢিল করতে হবে। কোনো আবেগ ছাড়া, সত্যকে উপলব্ধি না করে একই কথা বারবার বলে গেলে কোনো ফল পাবেন না। আত্মকথনের প্রতিটি শব্দের তাৎপর্য, প্রতিটি শব্দের সত্য আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। বাক্যগুলো বলার সময় আবেগকে দায়িত্ব দিন- সে জ্বলে উঠুক, বাধ্য করুক। আপনি এই জ্বলে উঠাটা অনুভব করুন, উপভোগ করুন। 

> আত্মকথনের সময় যদি কিছু শারীরিক কসরত করতে পারেন- ভালো হয়। যেমন যখন নিজেকে শোনাচ্ছেন সোজা হয়ে দাঁড়ান; গভীরভাবে শ্বাস নিন- ছাড়ুন; আবেগের তীব্রতা অনুভব করে হাত মুঠো করুন, ছুডুন শূন্যে। কিংবা এই সময়ে কোন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। শারীরিক কসরত ও আত্মকথনের সমন্বয়ে শরীর-মনের মিলিত শক্তিকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। 

> মনে রাখবেন আপনার আত্মকথনের বর্তমান কথাগুলোই কিন্তু চূড়ান্ত না বরং এই কথাগুলোকে প্রতিনিয়ত উন্নত করতে হবে। আপনি যত শিখবেন, লক্ষ্যে অগ্রসর হবেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যত খাপ খাওয়াতে পারবেন ততই আপনার আত্মকথন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। প্রতিদিন আপনি নতুন বাধার সম্মুখীন হবেন, সেই বাধার বিরুদ্ধে আপনার আত্মকথনে নতুন সংযুক্তি আসবে। আবার প্রতিদিন আপনি কিছু বাধা অতিক্রম করে যাবেন এবং সেই বাধা অতিক্রমের জন্যে যে সব বাক্য আত্মকথনে ছিল, তা প্রয়োজনীয়তা হারাবে। সুতরাং আপনি সেগুলো বাদ দিয়ে যাবেন। 

> এবং আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত আত্মকথন অনুশীলন করতে হবে। মাঝে মাঝে ব্যায়াম করে যেমন কোনো ফায়দা হয় না, তেমনি মাঝে মাঝে নিজেকে শুনিয়েও কোনো ফায়দা হয় না। 

> আর একটা জিনিস লক্ষ রাখবেন : এই বই কিংবা অন্য যেকোনো বই পড়াটাও আত্মকথনের একটা ধরন। যে-বই কিংবা আর্টিকেল আপনার চিন্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, আপনার ভেতর ইতিবাচকতা জাগিয়ে তোলে তার উপর ভিত্তি করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। 

আত্মকথন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে www.tmmbook.com ভিজিট করতে পারেন। এই ওয়েবসাইট আপনাকে নিজস্ব আত্মকথন তৈরিতে সাহায্য করবে। এখানে আমার নিজস্ব আত্মকথনের কিছু নমুনা দেওয়া আছে। এবং কিছু অপরিহার্য বাস্তব সমস্যা যেমন: ওজন কমানো, সম্পর্ক উন্নয়ন, এনার্জি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, সামর্থ্য অর্জন করা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু পরিক্ষিত ও কার্যকরী আত্মকথনের নমুনাও আছে। 

S.A.V.E.R.S এর “V” 

V ফর Visualization (দৃশ্যায়ন [কল্পনা]) 

সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন স্বাভাবিক সম্ভাব্য ঘটনায়। অসাধারণ মানুষ শুধু সম্ভাব্য স্বাভাবিক পরিস্থিতিই দেখতে পান না বরং তারা অসম্ভবকেও দেখতে পান। এবং যেহেতু তারা অসম্ভবকে দেখতে পান, তারা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার রাস্তাও দেখতে পান।
— চেরি কার্টার স্টক 

বাস্তবকে বাস্তবের মতো না দেখে বাস্তবকে আপনি যেভাবে চান সেভাবে দেখুন।
–রবার্ট কলার 

Visualization কিংবা দৃশ্যায়নকে আমরা সৃষ্টিশীল দৃশ্যায়ন কিংবা মানসিক মহড়াও বলতে পারি। সহজে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়-একটা সম্ভাব্য পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার হাজারটা উপায় থাকতে পারে এবং প্রতিটা উপায়ের ফলাফল একই না-ও আসতে পারে। আমরা দৃশ্যায়নের মাধ্যমে কল্পনায় নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের সব সম্ভাব্য উপায় ব্যবহার করব, ফলাফল পর্যালোচনা করব। যে ফলাফল আমাদের সর্বাপেক্ষা সুবিধার সেই ফলাফল অর্জনের জন্যে যে প্ল্যান অব অ্যাকশন, সেটি বাস্তবে ব্যবহার করব। অ্যাথলেটদের ভেতর এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়। তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের একাধিক উপায় কল্পনায় অনুশীলন করে সহজ ও কার্যকরী উপায় বাছাই করেন। বাস্তবেই সেই উপায়টিই অনুশীলনের মাধ্যমে অভ্যস্ত হন ও প্রয়োগ করেন। 

আবারও আমি কিছু সফল মানুষের নাম করব, যারা দৃশ্যায়ন প্রক্রিয়ার সফল ব্যবহারের জলজ্যান্ত উদাহরণ এবং আমজনতাকেও তারা সেটা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। Bill Gates, Arnold Schwarzenegger, Anthony Robbins, Tiger Woods, Will Smith, Jim Carey ও অবশ্যই Oprah। (হুম.. এই Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ ও অপরাহ’র সাফল্যের ভেতর কোনো যোগাযোগ আছে কি?) 

নিঃসন্দেহে সর্বকালের সেরা গলফার Tiger Woods। তিনি তাঁর বিখ্যাত সুইংগুলো ব্যবহার করার আগে হাজারবার কল্পনায় অনুশীলন করে নেন। আর একজন বিখ্যাত গলফার Jack Nicklaus আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, “কল্পনায় নিখুঁত অনুশীলন না করে এমনকি আমি বাস্তবে প্রাকটিসের জন্যে কোনো সুইং করি না।” 

Jack Nicklaus জানিয়েছেন, সফল হওয়ার অনেক আগেই তিনি কল্পনায় সাফল্য দেখেছেন, চর্চা করেছেন। ভিজ্যুয়ালাইজেশনের সবথেকে উৎকৃষ্ট খেলোয়াড় Jim Carrey। ১৯৮৭ সালে তিনি ১০ মিলিয়ন ডলারের একটি চেক লেখেন, তারিখ দেন “থ্যাংকস গিভিং, ১৯৯৫”, এক লাইনের একটা মেমো লেখেন “ অভিনয় শিল্পে অবদানের জন্যে”। এরপর তিনি অসংখ্যবার ব্যাপারটা ভিজ্যুয়ালাইজ করেছেন। এবং অতি আশ্চর্যের বিষয় ১৯৯৪ সালে তিনি Dumb and Dumber ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন ১০ মিলিয়ন ডলারে! 

আপনি কী ভিজ্যুয়ালাইজ করবেন? 

আমরা অধিকাংশই ও অধিকাংশ সময়ই আগের ভুল ও হতাশাগুলোই কল্পনাতে দেখি। সৃষ্টিশীল দৃশ্যায়ন আপনার মনকে ব্যস্ত রাখবে এবং আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করবে। আমি কীভাবে ভিজ্যুয়ালাইজ করি তার বিস্তারিত বর্ণনা দেব। 

আমি তিনটা সাধারণ ধাপ অনুসরণ করি। আত্মকথন শেষে আমি খাটে সোজা হয়ে বসি, চোখ বন্ধ করি, লম্বা শ্বাস নিই। পরবর্তী পাঁচ মিনিট আমি খুব সাধারণ একটা দৃশ্য দেখি। আমি আমার কাঙ্ক্ষিত জীবনযাপন করছি; খুব স্বাচ্ছন্দ্যে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, মজা নিয়ে আমি আমার দৈনন্দিন কাজ করছি। 

যখন আমি এই বই লেখা শুরু করি, ভিজ্যুয়ালাইজেশন ছিল এমন- আমি খুব সৃজনশীলতার সঙ্গে সাবলীলভাবে লিখে যাচ্ছি; চাপ, ভয় কোনো কিছুই আমাকে স্পর্শ করছে না। আমি এমনকি বই প্রকাশের পরের অবস্থাটাও দেখতাম। দেখতাম- মানুষ আমার বইটা পড়ছে, তাদের ভালো লেগেছে, তারা বইটা নিয়ে পরিচিতজনদের সঙ্গে আলোচনা করছে। দৃশ্যায়ন আমাকে জীবন উপভোগ করতে সাহায্য করে, চাপমুক্ত থাকতে এবং অলসতা ত্যাগ করে কর্তব্য পালনেও সাহায্য করে। 

Miracle Morning-এর জন্যে উপযুক্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশন-এর তিনটি ধাপ 

আত্মকথনের ঠিক পরেই ভিজ্যুয়ালাইজেশন শুরু করা সবথেকে কার্যকরী। আত্মকথনের পরেই স্বপ্নের জীবনের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার যে বিষয়গুলো প্রয়োজনীয় সেগুলো একসঙ্গে করুন এবং মনোযোগ দিন। 

ধাপ ১ : তৈরি হোন 

কিছু মানুষ এই সময় ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক পছন্দ করেন। চাইলে আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন, তবে ভলিউম কম রাখুন। এবার সোজা হয়ে আরামদায়ক পজিশনে বসুন; বসতে পারেন চেয়ারে, সোফায়, মেঝেতে। যেভাবে আমরা দম নেওয়া ও ছাড়া শিখেছি, সেভাবেই শুরু করুন। চোখ বন্ধ করুন, মন থেকে সব চিন্তা দূর করে দিন, তৈরি হোন দৃশ্যায়ন প্রক্রিয়ার জন্যে। 

ধাপ ২ : আপনি ঠিক পরবর্তী চরম চাওয়াটাই কল্পনা করুন 

অনেকেই এমনকি সাফল্যের দৃশ্যায়নেও ভয় পান। নিজেদেরকে সফল ভাবতে অপরাধী বোধ করেন। A Return To Love, ম্যারিয়ান উইলিয়ামসনের বেস্টসেলিং বই। এই বইয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন যা এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। তিনি বলেছেন 

“আমাদের সামান্য অক্ষমতাকে আমরা ভয় পাই না। আমরা ভয় পাই আমাদের সীমাহীন শক্তিকে। আমাদের অন্ধকার আমাদের দাবিয়ে রাখে না বরং আমাদের উজ্জ্বল রশ্মি আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। ভেবে দেখুন তো, কেন আমরা বুদ্ধিমান হবো না? কেন সামর্থ্যবান হবো না? আমাদের ছোট হয়ে থাকা জগতের কোনো মঙ্গল করবে না। আপনার পাশেরজনকে নিরাপদ রাখতে নিজের ছোট হয়ে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা সবাই সফল হতে জন্মেছি; যেমন প্রতিটি শিশুই বড় হওয়ার জন্যেই জন্মায়। সৃষ্টিকর্তার আলো সবার ভেতর ছড়িয়ে দিতেই তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন। এই দায়িত্ব গুটিকয়েক মানুষের নয়। এই দায়িত্ব সবার। এই সামর্থ্যও আমাদের সবার ভেতর আছে। আমরা আলোকিত হলেই সেই রশ্মিতে পাশের জনও আলোকিত হবেন। নিজেদের ভয় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেই আপনাকে দেখে আরও দশজন মুক্ত হবার রাস্তা খুঁজবেন।” 

আপনার পছন্দের মানুষের কথা চিন্তা করুন, যাদের ভালোবাসেন, যাদের মঙ্গল চান। আপনি কষ্টে থাকলে তারা সুখী হবেন না, বরং আপনি সাফল্যপূর্ণ, সমৃদ্ধ জীবনযাপন করলেই তারা সুখী হবেন। আপনার সাফল্যকে আপনি কীভাবে দেখেন? আপনি কী চান? ভুলে যান যুক্তি, সীমাবদ্ধতা কিংবা বাস্তবতা। আপনার যা খুশি আপনি যদি তাই হতে পারতেন, সব চাওয়া যদি পূর্ণ হতো, যা খুশি তাই যদি করতে পারতেন- আপনি কী হতে চাইতেন? কী পেতে চাইতেন? কী করতে চাইতেন? 

ভিজ্যুয়ালাইজ করুন আপনার শেষ লক্ষ্যটাকে, আপনার গভীরতম কল্পনাকে, আপনার সব থেকে রোমাঞ্চকর স্বপ্নকে- যেগুলো আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে। দেখুন, অনুভব করুন, শুনুন, ছুঁয়ে দেখুন, স্বাদ নিন, গন্ধ নিন প্রতিটি কল্পনার। যত বেশি বিস্তারিত কল্পনা করতে পারবেন তত বেশি সেগুলো পাওয়ার জন্যে কাজ করার তাড়না অনুভব করবেন। 

আসুন, লাফ দিই ভবিষ্যতে, কল্পনা করুন আপনার কাঙ্ক্ষিত জীবন এবং তার প্রভাব সম্পর্কে। আপনি কল্পনা করতে পারেন নিকট ভবিষ্যৎ- যেমন আজকের দিনটার শেষ- কিংবা কল্পনা করতে পারেন আরও দূরের ভবিষ্যৎ- যেমন, যখন আমি এই বই লিখছিলাম, তখন আমি ভিজ্যুয়ালাইজ করতাম মানুষ আমার বইটা পড়ছে, পছন্দ করছে, আলাপ করছে, বন্ধুদের পড়ার জন্যে উৎসাহিত করছে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আপনাকে আপনার সাফল্য অনুভব করতে হবে, অনুভব করতে হবে তার পারিপার্শ্বিক ফলাফলকেও। 

ধাপ ৩ : ভিজ্যুয়ালাইজ করুন আপনি কী হতে চান এবং কেন তা হতে চান 

একবার যখন আপনার কাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা এসে যাবে আপনি কল্পনায় সেই সমৃদ্ধ জীবনে বসবাস করা শুরু করবেন। সমৃদ্ধ জীবনে যেতে আপনার রোজকার করণীয়গুলোকে (পড়াশোনা, ব্যায়াম, লেখালেখি, সামাজিক যোগাযোগ, ইত্যাদি) ভিজ্যুয়ালাইজ করুন। এবং অনুভব করুন আপনি এই কাজগুলোতেই মজা পাচ্ছেন। যখন ব্যায়াম করছেন তখন ব্যায়াম করার সিদ্ধান্তের জন্যে আত্মতুষ্টি অনুভব করুন, সময়ানুবর্তিতার জন্যে গর্ব অনুভব করুন। নিজের চেহারায় আত্মবিশ্বাসের আভা অনুভব করুন। যখন ফোনে কথা বলছেন, কোন রিপোর্টে কাজ করছেন সেই ব্যক্তিত্বের উত্তাপ অনুভব করুন। কল্পনা করতে চেষ্টা করুন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আপনার প্রতি আপনার সহকর্মী, বন্ধু কিংবা পরিবারের লোকজনের প্রতিক্রিয়া। 

ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ব্যাপারে শেষ কথা 

সকালে আত্মকথনের সঙ্গে সঙ্গে ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ফলে আপনার অবচেতন মনের প্রোগ্রামিং-এ এক নতুন গতির আবির্ভাব ঘটবে। আপনার কল্পিত, আকাঙ্ক্ষিত জীবন আর বাস্তব জীবনের ভেতর সমন্বয় ঘটতে শুরু করবে এবং আপনি তা অনুভব করবেন। 

আপনার লক্ষ্যগুলোকে কল্পনা করার মাধ্যমে, কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, সাফল্যকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। আপনি চুম্বকের ব্যাপারটা বুঝবেন। এর দুই মেরুই পরস্পরকে আকর্ষণ করে। ঠিক তেমনি ফিজিক্যাল না হলেও ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও সাফল্য একই কাজ করে। আপনি যখন সাফল্য কল্পনা করেন তখন আপনার আবেগ জেট ফুয়েলের কাজ করে। সে আপনার বিশ্বাসকে এমন গতি প্রদান করে যার অন্তিম লক্ষ্য আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যপূর্ণ জীবন। সাফল্য অর্জনের পরের অনুভূতি আপনি এখনই অনুভব করবেন। এই অনুভূতি ততটাই তীব্র হবে যত বিস্তারিতভাবে আপনি কল্পনা করতে পারবেন সাফল্যের রাস্তার প্রতিটি কর্তব্যকে। 

ভিজ্যুয়ালাইজেশন রোজ করতে হবে। কারণ একদিনেই সম্পূর্ণ নিখুঁত দৃশ্যায়ন সম্ভব না। রোজ আপনার কল্পনায় নতুন নতুন বাধা ধরা দেবে- সেই বাধা অতিক্রম করার উপায়ও আপনি বের করে ফেলবেন- নতুন নতুন মানুষ, ঘটনা আপনার কল্পনাতে আসবে- যারা আপনার সাফল্যে কিংবা ব্যর্থতায় প্রভাব বিস্তার করবে- আপনি সেগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সাহস এবং প্রস্তুতি নেবেন। এবং এই পুরো ব্যাপারটাই আপনার বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলবে। বাস্তব জীবনের অগ্রগতি কল্পনার মতো দ্রুত হবে না। কিন্তু, সেটাই কি মঙ্গলজনক নয়? আপনি সব বাধা দূর করার অস্ত্র ও মানসিক শক্তি নিয়েই শত্রুর সামনে উপস্থিত হবেন। ভিজ্যুয়ালাইজেশন বাস্তব বাধা সম্পর্কে আপনাকে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে; প্ল্যান অফ অ্যাকশন পছন্দ করা আপনার জন্যে সহজ করে দেবে। রোজ পাঁচ মিনিট ভিজ্যুয়ালাইজেশনের পেছনে ব্যয় করতে বলব আপনাদের; যদিও পরবর্তী চ্যাপ্টারে আপনারা কীভাবে মাত্র এক মিনিটে ভিজ্যুয়ালাইজেশনের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবেন সে সম্পর্কে বলব। 

[TMM বোনাস] তৈরি করুন আপনার ভিশন বোর্ড 

বেস্টসেলিং বই ও চলচ্চিত্র “The Secret” ভিশন বোর্ডের ব্যাপারটাকে জনপ্রিয় করে। এটা খুব সাধারণ একটা দেয়ালচিত্র। যে দেয়ালচিত্রে আপনি সেই সব ছবি পিন করবেন যা রিপ্রেজেন্ট করবে ভবিষ্যতে আপনি কী হতে চান, কী করতে চান, কাদের সঙ্গে কোথায় বাস করতে চান। 

ভিশন বোর্ড তৈরি করাটা মজার। আপনি নিজেও করতে পারেন, বন্ধু বান্ধব কিংবা বিশেষ কারো সাহায্যও নিতে পারেন। ভিশন বোর্ড ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ব্যাপারে আপনার মনকে এগিয়ে রাখে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ক্রিস্টিন কেনের ব্লগ “How To Make A Vision Board” এবং The Complete Guide To Make A Vison Board নামের বই পড়তে পারেন। বই ও ব্লগ দুটোই পাবেন www . Christinekane . com-এ। 

মনে রাখবেন যদিও ভিশন বোর্ড স্রেফ একটা মজার কাজ, কিন্তু কিছুই পরিবর্তিত হয় না প্রাসঙ্গিক ক্রিয়া ছাড়া। আপনার দেয়ালে একটা চকচকে, স্বপ্নময় ভিশন বোর্ড থাকার অর্থ হল স্বপ্ন তাড়া করতে আপনি উৎসাহী হবেন, আপনার মনোযোগ আপনার লক্ষ্যে নিবদ্ধ হবে এবং বাস্তব জীবনে স্বপ্ন পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আপনি দ্বিধান্বিত হবেন না। 

S.A.V.E.R.S এর “E” 

E ফর Exercise (শরীরচর্চা) 

আপনি যদি ব্যায়ামের জন্যে সময় বের না করতে পারেন, আপনাকে অসুস্থতার জন্যে সময় রাখতে হবে।
— রবিন শর্মা 

বেশিরভাগ মানুষ এই ব্যায়ামগুলো করে থাকেন— ঝুপ করে সমাপ্তিতে পৌঁছে যাওয়া, বন্ধুদের পেছনে ছোটা, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, সৌভাগ্যকে দূরে সরিয়ে রাখা। 
–Unknown 

.

প্রতি সকালে ব্যায়াম করা আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাস হওয়া উচিৎ। আপনি যদি কয়েক মিনিটের জন্যেও ব্যায়াম করেন- আপনার শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সক্ষমতা বাড়বে। এতটাই ব্যস্ত আপনি যে ব্যায়াম করার সময় পাচ্ছেন না? নো টেনশন— এখানে আপনি মাত্র এক মিনিটে ব্যায়াম করার কিছু টিপস পাবেন। 

Eben Pagan, একজন কোটিপতি উদ্যোক্তা ও পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাকে কিছুদিন আগে চমৎকার একটা ভিডিওতে দেখি আমি। ইবেন পেগানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন আর একজন বেস্টসেলিং লেখক, Anthony Robbins। তিনি জিজ্ঞেস করেন, “ইবেন, আপনার সাফল্যের প্রধান সূত্র কী?” ইবেনের জবাব আমাকে খুবই উৎসাহিত করেছিল, “সফলতার জন্যে সবার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে, সেই নিয়মগুলো মেনেই সকাল শুরু করা উচিত। এটাই সাফল্যের পথে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” এরপর সে সকালের ব্যায়াম ও তার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে শুরু করেন। 

ইবেন পেগান বলেন : 

“প্রতি সকালে, আমাদের হৃৎপিণ্ডকে দৈনিক কর্মকাণ্ডের জন্যে প্রস্তুত করতে হবে, রক্তের প্রবাহ বাড়াতে হবে এবং ফুসফুস ভর্তি করতে হবে অক্সিজেন দিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “দিনের শেষে কিংবা অন্য সময় যখনই আপনি ব্যায়াম করুন না কেন, এমনকি তখন ব্যায়াম করাটাই যদি আপনার পছন্দ হয় তবুও প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০ থেকে ২০ মিনিট দৌড়ানো কিংবা অন্য কোনো অ্যারবিক্স প্র্যাকটিস করুন।” 

সকালে ব্যায়াম করার উপকারিতা এত বেশি যে, তা অগ্রাহ্য করা বোকামি। ঘুম থেকে ওঠার পর মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ান থেকে শুরু করে সারা দিনের জন্যে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শক্তি আরোহণে আপনাকে বাড়তি সাহায্য করবে ব্যায়াম। 

ব্যায়াম করার পদ্ধতি আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে। আপনি জিমে যেতে পারেন, দৌড়াতে পারেন কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। তবে এখানে কিছু বিষয়ে আমি সুপারিশ করব, ভেবে দেখবেন। 

ব্যক্তিগতভাবে, আমাকে যদি সারাজীবনের জন্যে নির্দিষ্ট একটি ব্যায়াম বেছে নিতে হয়- আমি যোগব্যায়াম বেছে নেব। আমি বহুবছর ধরে যোগব্যায়াম অভ্যাস করে আসছি, সত্যি কথা বলতে, এটা আমার জীবনের একটা প্রয়োজনই নয়, আমি যোগব্যায়াম পছন্দ করি, করতে মজা পাই। যোগব্যায়াম আপনার শরীরের জড়তা কাটাতে, শক্তি বৃদ্ধি করতে এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। যোগব্যায়ামকে আপনি এমনকি মেডিটেশনের একটা ধরন হিসাবেও ব্যবহার করতে পারেন। 

পরিচিত হোন একমাত্র এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী দশমার (Dashama) সঙ্গে

আমার বন্ধু দশমার পরিচয় না দিয়ে যোগব্যায়ামের ব্যাপারে কথা বলা আমার জন্যে দুঃসাহসের শামিল। কয়েকবছর আগে তারই এক শিক্ষার্থী তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। আমার পরিচিত যোগব্যায়াম প্রশিক্ষকদের ভেতর দশমা সব থেকে প্রামাণিক প্রশিক্ষক, যে একই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক যোগব্যায়াম শেখায়। আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম যোগব্যায়ামের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার জন্যে। 

দশমা এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন: যোগব্যায়াম একটি বহুমুখী বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থা যা একই সঙ্গে আপনার শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। যখন Hal (লেখক) তার বইয়ের জন্যে যোগব্যায়ামের উপকারিতা বা একটা ভুমিকা লিখে দিতে বলেন, আমি অনুভব করেছিলাম- মিরাকল মর্নিং-এর সঙ্গে যোগব্যায়াম খুবই প্রাসঙ্গিক। আমি বিশ্বাস করি, যোগব্যায়াম বাস্তবে অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে। আমার জীবনে এরকম ঘটনা ঘটেছে এবং আমি যাদের শিখিয়েছি তাদের জীবনেও অলৌকিক ইতিবাচক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। 

এটা জানা দরকার যে, যোগব্যায়ামের হাজারো ধরন আছে। আপনি বসে শ্বাস নেওয়ার মতো সহজ অভ্যাস করতে পারেন যা আপনার ফুসফুসকে প্রসারিত করবে অথবা মেরদণ্ড বাঁকা করার মতো কঠিন অভ্যাসও করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক টেকনিকটা শেখা এবং সেটা থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল বের করে আনা। 

নিখুঁত যোগব্যায়ামের অভ্যাস আপনার জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাল কেটে যাওয়া জীবনে সুর ফিরিয়ে আনতে পারে, শরীরের স্থবির শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে, রক্ত ও শক্তি প্রবাহের জন্যে শরীরে নতুন পথ খুঁজে বের করতে পারে। আমি বলব, আপনার শরীরের ভাষা বুঝুন এবং চাহিদা অনুযায়ী সঠিক টেকনিকটি অনুশীলন করুন। যোগব্যায়াম সম্পর্কে আরো জানার জন্যে এবং শেখার জন্যে আমার ওয়েবসাইট www. Pranashama . com থেকে ঘুরে আসতে পারেন। শুভকামনা এবং ভালবাসা, 

দশমা 

.

ব্যায়ামের ব্যাপারে শেষ কথা 

আর সবার মতই আপনি ব্যায়ামের সুফল সম্পর্কে জানেন এবং এটাও জানেন, ব্যায়াম নিয়মিত করতে হয়। খুবই স্বাভাবিক কথা। আরও স্বাভাবিক কথা হচ্ছে- ব্যায়াম না করা কিংবা নিয়মিত না করার পেছনে যুক্তিরও অভাব হয় না। সব থেকে বেশি যে যুক্তি দুটো শোনা যায়, তা হলো- আমার এত সময় নেই এবং আমি খুব ক্লান্ত। এবং মজাটা হচ্ছে, আপনি যত সৃষ্টিশীল হবেন আপনার অজুহাতও ততই অথেনটিক হবে। 

মিরাকল মর্নিং-এর উপকারিতা এখানেই। এই প্যাকেজে আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে সকালে। যখন আপনার কোনো ক্লান্তি থাকবে না, যখন আপনার সময়ের অভাব হবে না। ফলে আপনি অন্তত প্ৰাথমিক দুটো অজুহাত থেকে মুক্তি পাবেন, যা আপনাকে ব্যায়ামের বিরুদ্ধে আকৃষ্ট করে। 

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : যে কোনো ধরনের ব্যায়াম অনুশীলন করার আগে আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্তার কিংবা প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেবেন। যদিও কোনো ধরনের শারীরিক ব্যাথা কিংবা অক্ষমতা থেকে থাকে তবে ডাক্তার কিংবা প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন, নিয়ম কিংবা সময় পরিবর্তন করুন। 

S.A.V.E.R.S এর “R” 

R ফর Reading (পড়া) 

যিনি পড়েন না তিনি কোনভাবেই পড়তে না জানা মানুষটা থেকে উৎকৃষ্ট নন। 
— মার্ক টোয়েন 

ব্যায়াম যেমন শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, পঠন প্রভাব ফেলে মনের ওপর এবং প্রার্থনা প্রভাব রাখে আত্মার ওপর। 
আমরা যা পড়ি তার আলোকেই আমাদের ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়। 
— মাথ্যিউ কেলি 

.

পড়া, আমাদের Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজের পঞ্চম উপাদান হলেও জীবনের যে কোনো ধরনের পরিবর্তনের জন্যে এটাই প্রথম উপাদান। জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করার জন্যে যে জ্ঞান ও পরিকল্পনা প্রয়োজন তা অর্জন করতে ‘পঠন’ই সব থেকে কার্যকরি উপায়। 

কৌশলটা নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে আপনাকে শিখতে হবে; সেই সব বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে, যারা ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন। সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার চাকা। আপনি যখন সভ্যতায় অবদান রাখা শুরু করবেন আপনাকে ঢাকা আবার আবিষ্কার করতে নিশ্চয়ই হবে না। যে কোনো জিনিস খুব দ্রুত পাওয়ার উপায় হচ্ছে সেই রাস্তা অনুসরণ করা- যে রাস্তায় চলে অগ্রজেরা আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি নিজেরা পেয়েছেন এবং আপনাকে জানিয়ে গেছেন কীভাবে সহজে তা অর্জন করা যায়। এবং তা করার সব থেকে সহজ উপায় হচ্ছে পড়া; সফলদের কাহিনী, স্ট্যাটেজি ইত্যাদি। পৃথিবীর সব বিষয়ে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে এবং প্রতিদিনের পঠন থেকে আপনি কতটুকু শিখবেন সেই ব্যাপারটাতেও সীমারেখা টানা সম্ভব না। 

কিছু উপহাসের সম্মুখীন আমি হয়েছি, “এই ধরনের উপদেশ আমার জন্যে না” কিংবা “নিজেকে জানো টাইপের বই আমি পড়ি না” ইত্যাদি। ব্যাপারটা এভাবে বলা হয় যেন এই ধরনের বই তাদের চেয়ে অনেক নিচু স্তরের। এদের জন্যে আমার দুঃখ হয়। আমি বুঝতে অক্ষম এটা কি সচেতনতার অভাব নাকি অহঙ্কারের বহিঃপ্রকাশ! সে বা তারা জ্ঞানের একটা অফুরন্ত উৎসকে অবহেলা করলেন। জীবনের বাধা কীভাবে অতিক্রম করতে হয় তা সব থেকে ভালো কে শেখাতে পারবেন- যিনি তা অতিক্রম করেছেন তার চেয়ে?। সজ্ঞানে থাকা একজন মানুষ কেন বাধা দূর করার এই পরীক্ষিত কৌশল শিখতে চাইবেন না? 

জীবনের জন্যে আপনি যাই চান না কেন, অগণিত বই লেখা হয়েছে সেই জিনিসটা অর্জনের উপায় নিয়ে। আপনি কোটিপতি হতে চান? এমন অসংখ্য মানুষ কোটিপতি হওয়ার উপায় নিয়ে বই লিখেছেন যারা আর্থিক সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছেন। আমার কিছু প্রিয় বই এর উল্লেখ করলাম- 

>Think and Grow Rich – Napoleon Hill 

>Secrets of the Millionaire Mind- T. Harv Eker 

>Total Money Makeover- Dave Ramsey 

তৈরি করতে চান একটা সুন্দর, ভালবাসাপূর্ণ, স্নেহময় সম্পর্ক? যে সম্পর্কে সুখে-অসুখে, সামর্থ্যে- অভাবে পরষ্পরের সমর্থন পাওয়া যাবে? এত বই আছে এই বিষয়ে, যা সম্ভবত আপনি সারা জীবন একটানা পড়েও শেষ করতে পারবেন না। এবং আমার প্রিয় কিছু বই- 

>The Five Love Languages – Gary D. Chapman 

>The Soul Mate Experience- Jo Dunn 

>The Seven Principles For Making a Marriage Work- John M. Gottman and Nan Silver 

সম্পর্ক উন্নয়ন, আত্মউন্নয়ন, যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়ন, অধিক উপার্জন- জীবনের যে ক্ষেত্রেই পরিবর্তন চান- আপনার কাছের বইয়ের দোকানে কিংবা লাইব্রেরিতে যান। আপনি কোনো না কোনো বই পেয়ে যাবেন। যদি আপনি কাগজের বই থেকে ডিজিটাল বই বা ই-বুক পড়তে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন, খুব ভালো, আপনি আমার থেকে বেশি জানেন কোন বই কোন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। তবু www . Amazan . com এবং www . paperbackswap . com আমার দুটি পছন্দের ওয়েবসাইট। এছাড়াও এই বইয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www. Tmmbook . com-এ আমার পছন্দের কিছু আত্মউন্নয়ন সম্পর্কিত বইয়ের তালিকা দেওয়া আছে, যেগুলো আমার জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। 

কতটুকু আপনি পড়বেন? 

অনুরোধ করব, দিনে অন্তত দশ পৃষ্ঠা করে পড়ুন। আপনি যদি ধীর গতির পড়ুয়া হয়ে থাকেন কিংবা একদমই পড়ুনা না হন, দৈনিক পাঁচ পৃষ্ঠা দিয়ে শুরু করুন। সোজা হিসাব, প্রতিদিন দশ পৃষ্ঠা আপনাকে ভেঙে ফেলবে না, আপনাকে গড়ে তুলবে। কত সময় লাগবে? বড়জোর দশ থেকে পনের মিনিট; আপনি ধীর গতির পড়ুয়া হলে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা! 

এভাবে দেখা যাক। আপনি যদি প্রতিদিন দশ পৃষ্ঠা করে পড়েন তাহলে বছরে পড়বেন তিন হাজার ছয়শত পঞ্চাশ পৃষ্ঠা। একটা সাধারণ আয়তনের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখার বই দুই শত পৃষ্ঠাও যদি ধরেন সেক্ষেত্রে আপনি বছরে শেষ করতে পারবেন কমপক্ষে আঠারোটি বই! আঠারো!! আপনাকে জিজ্ঞেস করি, বছরে যদি আপনি আঠারোটি আত্মনিয়ন্ত্রণ (নিজেকে জানা) ধরনের বই শেষ করতে পারেন তাহলে বছর শেষে আপনি কি আপনাকে আরো বেশি জানতে পারবেন না? নিজের ওপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না? এক বছর আগের আপনার তুলনায় আঠারোটি বই শেষ করা আপনি কি আরো বেশি উন্নত, নিয়ন্ত্রিত হবেন না? অবশ্যই হবেন। এবং সেটা আপনার বাস্তব জীবনেও প্রতিফলিত হবে। 

পঠনের ব্যাপারে শেষ কথা 

> ফলাফল নিয়ে ভাবুন। দৈনিক পঠন শুরু করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: কেন আপনি এই বইটা পড়বেন, কী শিখতে চাচ্ছেন এখান থেকে, জবাব এবং ফলাফল মনে গেঁথে রাখুন। একটু সময় নিয়ে ভাবুন, আপনি কি সত্যিই বইটা শেষ করতে চান? সব থেকে বড় প্রশ্ন, The Miracle Morning-এর যে ৩০ দিনের প্রোগ্রাম এটা শেষ করে যে জ্ঞান আপনি অর্জন করবেন সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে তা দৈনিক জীবন যুদ্ধে ব্যবহার করবেন কি? 

> Miracale Morning প্রোগ্রামিং-এ অংশ নেওয়া অনেকেই তাদের পাঠ্যাভাসে ধর্মীয় গ্রন্থাদি রাখেন। 

> আশা করছি, আপনি পড়া শুরু করেছেন, বইয়ের বিশেষ অংশ হাইলাইট করছেন, মার্ক করছেন, মার্জিনে নোট লিখছেন কিংবা বিশেষ পৃষ্ঠাগুলোকে ভাঁজ করে রাখছেন। যে কোনো বই থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়ার জন্যে আপনাকে এই কাজগুলো করতেই হবে। বুকমার্ক ব্যবহার করলে কিংবা হাইলাইটিং-এর অভ্যাস থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অংশে সহজেই ফিরে আসা যায়, বারংবার চর্চা করা যায়। ফলে আপনি সেই অংশ তাড়াতাড়ি কার্যকরি উপায়ে আত্মস্থ ও সেই সঙ্গে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন। 

> ভালো, বিখ্যাত আত্মনিয়ন্ত্রণের বইগুলো বারবার পড়তে অনুরোধ করব। একবার পড়েই এ ধরনের বইগুলো থেকে পরিপূর্ণ উপলব্ধি পাওয়া মুশকিল। জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্যে পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন। আপনি প্রথমবারেই সাইকেল চালান শেখেননি; চকচকে হস্তাক্ষরও একদিনেই আসেনি। তেমনি একটা বইয়ের সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত করতে তা বারবার পড়া জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কৌশল ইত্যাদি নিয়ে বারংবার ভাবা প্রয়োজন। আপনি যতবেশি বিষয়গুলো নিয়ে ভাববেন, ততবেশি সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন, ততবেশি বিষয়গুলো আপনার অবচেতন মনে গেঁথে যাবে। ফলে বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রয়োগ আরো বেশি সহজ ও ফলপ্রসূ হবে। একটা বই শেষ করেই নতুন আর একটা ধরবেন না। অন্তত এইমাত্র শেষ করা বইটার হাইলাইট করা অংশগুলো আবার পড়ন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন এই বইয়ে এমন কিছু কি আছে যেটা আরো ভাল করে বোঝা দরকার, আবারও চর্চা করা দরকার? এমন কোন অংশ আছে কি যেটা পড়ে খুব মজা পেয়েছেন? প্রশ্নগুলোর উত্তর যতক্ষণ “হ্যাঁ” হচ্ছে ততক্ষণ নতুন বই শুরু না করে এটাই পড়তে থাকুন। যেমন Think and Grow Rich বইটা আমি বারবার পড়ি। একটা শেষ করা বই বারবার পড়ার জন্যে আসলে কিছুটা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য এবং সময়ানুবর্তিতার প্রয়োজন আছে। একই জিনিস বারবার অনুশীলন করা একটা সময় ক্লান্তিকর এবং বিরক্তিকর হয়েদাঁড়ায়। এজন্যেই বেশিরভাগ মানুষ কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। আসুন কোনো একটা বই বারবার পড়ার অভ্যাস এই বইটা দিয়েই শুরু করি। এখনই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন যতক্ষণ না The Miracle Morning-এর ওপর আপনি পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন ততক্ষণ পযন্ত আপনি বারবার এই বইটি পড়তেই থাকবেন : 

.

S.A.V.E.R.S এর”S” 

S ফর Scribing (লিখন) 

আপনি যাই লিখুন না কেন, কাগজে অক্ষর প্রতিস্থাপন করা থেরাপির একটা ধরন যার জন্যে আপনাকে এক পয়সা খরচ করতে হয় না। 
— ডায়ান র‍্যাব 

আইডিয়া যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতে আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখার ঝামেলা হচ্ছে তা খুব দ্রুত এবং নিয়মিত বিরতিতে বিস্মৃত হয়। 
–রলফ স্মিথ 

.

Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজের শেষ অনুশীলন হচ্ছে Scribing – সাদামাটা বাংলা হচ্ছে লেখা। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের প্যাকেজের নামে কোন W নেই যে, আমরা Writing ব্যবহার করব! সুতরাং আমরা Scribing-ই ব্যবহার করব। 

ডায়েরি লেখা 

মনের কথা লিখে রাখার অনেক ধরন আছে. আমার পছন্দের ধরন ডায়েরি লেখা। আমার Miracle Morning প্যাকেজ চলার সময় আমি রোজ পাঁচ থেকে দশ মিনিট লিখতাম। আপনার মনের কথা, কল্পনা, ফ্যান্টাসি যা-ই বলেন না কেন, সেটা ভৌত কাগজে বাস্তবে লেখার অনুভূতিই অন্যরকম। এর ফলে আপনি বহুভাবে উপকৃত হবেন। আপনার কল্পনা কখনই চর্চার অভাবে ফিঁকে হয়ে যাবে না, কারণ সেগুলো লেখা আছে। আপনি যখনই ডায়েরির পাতা উল্টাবেন তখন ভাবনাগুলো আবার ফিরে আসবে। আপনার কল্পনা থেকে এককালীন যে নির্যাস আপনি পাবেন সেটা লিখে রাখার সময় এবং পরবর্তীকালে তা আরও বিকশিত হবে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের পথে আপনার কল্পনার পদক্ষেপের সঙ্গে পরিপার্শ্বের সঙ্গে সমন্বয় বাড়বে। সব থেকে বড় কথা, দিন শেষে আপনার ধারণা, ভয়, হতাশা, সাফল্য, আত্মবিশ্বাস, উপলব্ধি ইত্যাদি শুধু মনের এক কোনেই জমা হবে না, তা ডায়েরির পাতায় কালির আঁচড়ে লেখা থাকবে। ফলে আপনার উন্নতির দৃশ্যমান হিসাব আপনি করতে পারবেন। 

ডায়েরি লেখা শুরু করার অনেক আগে থেকেই আমি এর উপকারিতা সম্পর্কে শুনেছিলাম। সত্য কথা বলতে কি, আমি চেষ্টাও করেছিলাম লেখার। কিন্তু হয়নি। কেন হয়নি সেই গল্প করি, ডায়েরি আমার বিছানার পাশে রাখা থাকত। দিন শেষে যখন ডায়েরির দিকে নজর দিতাম তখন মনে হতো আমি ক্লান্ত, অনেক ক্লান্ত। পরে লিখব। এভাবেই চলছিল। ডায়েরির পাতা বেশিরভাগ অংশই শূন্য থাকত। বিরক্ত হয়ে আরও বেশি ডায়েরি কিনতাম। নিজেকে বোঝাতাম যে, এই ডায়েরির পেছনে অনেক খরচ হয়ে গেছে, কিছু লিখে খরচটা উশুল করা দরকার। কিন্তু সেই পুরোনো অজুহাত এবং বরাবরের মত ডায়েরি শুন্যই থেকে যেত। 

এই ঘটনা Miracle Morning শুরু করার আগের। মিরাকল মর্নিং-এর একদম প্রথম দিন থেকেই আমি ডায়েরি লেখা শুরু করতে পেরেছিলাম। কারণ Miracle Morning প্যাকেজের স্বার্থেই আমাকে দিনের শুরুর একটা নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ রাখতে হয়েছিল। এই সময়ের ভেতর ডায়েরি লেখার জন্যেও সময় বরাদ্দ ছিল। এবং যেহেতু সময়টা নির্ধারিত ছিল সকালে, কাজেই সময়ের অভাব এবং ক্লান্তির অজুহাত দেওয়ার সুযোগ ছিলনা। খুব শিগশিরই ডায়েরি লেখা আমার প্রিয় অভ্যাসগুলোর একটাতে পরিণত হল। এমন একটা অভ্যাস, যার জন্যে আমি কৃতজ্ঞতা অনুভব করি, এখনও। এবং এর উপকারিতা! এটা শুধু আমার ক্ষণস্থায়ী ভাবনাগুলোর লেখ্যরূপই ছিল না বরং দিন শেষে, বছর শেষে, আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যেত যে, সাফল্যের যাত্রায় কোন কোন ক্ষেত্রে আমার উন্নতি সন্তোষজনক নয়, কোথায় আমি প্রত্যাশার চেয়েই বেশি উন্নতি করেছি, কোন বিষয়গুলো আমার নজর এড়িয়ে গেছে, কোন অর্থহীন বিষয়গুলো আমাকে অযথা ব্যস্ত রেখেছে। ফলে প্ল্যান করা এবং তা বাস্তবায়ন আমার জন্যে অনেক সহজ হয়ে যায়। 

প্রথম ডায়েরি যখন শেষ হলো 

নিয়মিত ডায়েরি লেখা শুরু করি Miracle Morning শুরুর দিন থেকেই। সে বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর আমি শেষ হয়ে যাওয়া বছরের ডায়েরি নিয়ে বসেছিলাম। প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়লাম, তারপর ধীরে ধীরে প্রতিদিনের টুকে রাখা অংশ পড়তে শুরু করলাম। আমি যেন তখনকার ভাবনাগুলো আবার পরিষ্কার দেখতে থাকলাম। কখন কোন পরিস্থিতিতে কী ভেবেছিলাম, কী করেছিলাম, সেই নির্দিষ্ট আবেগ— সব আমি আবার অনুভব করেছিলাম। আমার পদক্ষেপ, দৈনন্দিন অভ্যাস, উন্নতি ইত্যাদি আমি নিবিষ্ট চিত্তে পরীক্ষা করলাম। ফলে গত বছরের উন্নতি সম্পর্কে আমার ভেতর একটা পরিষ্কার ধারণা চলে এলো। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক দরকারি জিনিস আমি আবার মনে করতে পারলাম যা সময়ের স্রোতে ভুলে গিয়েছিলাম। 

…… কৃতজ্ঞতা ২.০. নিজের জীবন এবং তা যাপন করা নিয়ে আমি বরাবরই কৃতজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু বিগত সনের ডায়েরি পড়ে কৃতজ্ঞতাবোধের একটা নতুন স্তর উন্মোচিত হলো, যা আগে কখনো অনুভব করিনি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- একবার ঠাণ্ডা আবার পরক্ষণেই গরম (আরামদায়ক) পানিতে গা ভেজানোর মতো। ডায়েরি পড়ে আমি আরও একবার মনে করতে পারছিলাম প্যাকেজ শুরু করার সময় আমি কার কার প্রতি কতখানি কৃতজ্ঞ ছিলাম এবং আজ ডায়েরি শেষ করার পরে কার কার প্রতি কতখানি কৃতজ্ঞ আছি। কৃতজ্ঞতা জানানোর তালিকায় অনেক নতুন নাম এসেছে, অনেক নাম বাদ পড়েছে। আবার কৃতজ্ঞতার পরিমাণও ব্যক্তিভেদে কমেছে, বেড়েছে। এই যে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে তুলনা করতে পারা, এটা এক অনন্য অনুভূতি, ঐশ্বরিকও বটে। 

ত্বরান্বিত উন্নয়ন 

এরপর আমি ভাবতে বসলাম, এই যে প্যাকেজের সঙ্গে বেশ কিছুদিনের যাত্রা, এই যাত্রায় আমার সব থেকে মূল্যবান অর্জন ও শিক্ষা কী? আমি একটা সাদা কাগজ নিলাম; মাঝবরাবর একটা দাগ দিলাম। দুই অংশে দুইটা শিরোনাম লিখলাম : (১) যা শিখেছি এবং (২) নতুন লক্ষ্য। ডায়েরিটা আবার সম্পূর্ণ পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম ভুলে যাওয়া অনেক মূল্যবান শিক্ষাই আবার মনে পড়ে গেছে। 

এই যে ডায়েরি পড়ে পুরনো শিক্ষাগুলো মনে করা এবং তা আবার বাস্তবে কাজে লাগানো : সাফল্যে পৌঁছাতে এই প্রক্রিয়াটা আমাকে সব থেকে বেশি সাহায্য করেছে। 

ডায়েরি লেখার ইতিবাচক ফলের অভাব নেই। বিভিন্ন জায়গায় আপনি হাজারো সুফলের উল্লেখ পাবেন। আমি এইমাত্র কয়েকটি উল্লেখ করেছি। আরো কিছু সুফল যেগুলো অর্জন করে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব উপকৃত হয়েছি, সেগুলো এরকম : 

(১) পরিচ্ছন ধারণা : যে কোনো বিষয় সম্বন্ধে কিছু লিখতে চাইলে ওই বিষয় সম্পর্কে আপনাকে যথেষ্ট বুঝতে হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে যেহেতু আপনি লিখছেন, সেক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আপনার ধারণা আগের থেকে পরিপক্ক। ডায়েরি লেখার ফলে আপনি মাথা খাটানো শিখবেন, কোনো বিষয় সম্পর্কে আপনি গভীর চিন্তা করতে পারবেন এবং চিন্তার সুফল বাস্তব জীবনে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারবেন। 

(২) ধারণা আত্মীকরণ : ডায়েরি লেখার ফলে আপনি শুধু নতুন নতুন ধারণার সংস্পর্শেই আসবেন না, বরং কিছু ধারণা যা আমরা সবসমই ভুলে যাই, তা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন। 

(৩) ফিরে দেখা : ডায়েরি লেখার ফলে আপনি আপনার পুরনো কৰ্ম, কর্মধারা, অনুভূতি ইত্যাদির পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন। 

(৪) অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা : এক বছর, দু’বছর কিংবা আরো আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়ে সেই সময় থেকে কতটুকু অগ্রসর হলেন তা উপলব্ধি করা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এটা আপনাকে উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী করবে। এবং বিশ্বাস করুন, এই অভিজ্ঞতা অন্য কোনোভাবেই পরিপূর্ণভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। 

শূন্যস্থানে মনোযোগ : ক্ষতি হচ্ছে না লাভ হচ্ছে?

শুরুতেই আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ আমরা ব্যবহার করব “কী পারতাম” আর “কী করেছি’র মধ্যকার শূন্যস্থান পূরণে। মানব সম্প্রদায়ের আত্মনিহিত শর্তগুলোর একটা হচ্ছে এই শূন্যস্থানের প্রতি মনযোগ প্রদান। জীবনের বর্তমান অবস্থান আর কোথায় থাকতে পারতাম, কী অর্জন করতে পারতাম আর কী অর্জন করেছি এবং একজন মানুষ হিসেবে আমি আর কী কী হতে পারতাম- এই সব শূন্যস্থানের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের জন্মলব্ধ প্রবৃত্তি। 

এই শূন্যস্থানের প্রতি অধিক মনোযোগ খুব স্বাভাবিক একটা সমস্যার সৃষ্টি করে। শূন্যস্থানের প্রতি বারংবার মনোযোগ আমাদেরকে খুব যৌক্তিক এই উপলব্ধি দিতে পারে: যতখানি করতে পারতাম সেটা পারিনি, যতখানি সাফল্য পেয়েছি তার থেকে বেশি পেতে পারতাম। এই উপলব্ধি আমাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। 

অধিক সাফল্য অর্জনকারীদের ভেতর এই সমস্যা আরও ব্যাপক। বারবার নিজেদের অর্জন এবং লক্ষ্যের ভেতর তুলনা করে তারা নিজেদের ছোট করেন, কষ্ট দেন। ব্যর্থতা আর অক্ষমতা তাদের কাছে বড় মনে হয়। নিজের হাজারো অর্জন যথেষ্ট মনে হয় না। 

মজার বিষয় হলো, শূন্যস্থানের প্রতি অধিক মনোযোগই একজন সফল ব্যক্তিকে ঈর্ষণীয় সফলতার উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। শূন্যস্থান পূরণের এই উন্মত্ত তাড়নাই সাফল্যের পথে তাদের গতিতে জ্বলানি সরবরাহ করে। শূন্যস্থানে মনোযোগ দেওয়া স্বাস্থ্যকর ও সৃষ্টিশীল হতে পারে যদি তা ইতিবাচকভাবে দেখা হয় এবং কর্মে রূপান্তর করা যায়। একটি প্রতিশ্রুতি ও সেই সঙ্গে সম্ভাবনা পূরণে দায়বদ্ধতার ভাবনা থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত সাধারণ মানুষ এমনকি সাধারণ সফল মানুষও এরকম ভাবেন না। তারা শূন্যস্থানের নেতিবাচক দিকের প্রতিই অধিক মনোযোগ দেন। 

শূন্যস্থানের প্রতি নেতিবাচক মনোযোগ থেকে রক্ষা পাবার সহজ উপায় আছে। যে সব সফল মানুষদের আমরা অনুসরণ করব, যারা সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছেন তারা এই পদ্ধতি চর্চা করেন। তারা প্রচণ্ড কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন তাদের বর্তমানের জন্যে, তারা নিজেদের ধন্যবাদ দেন সকল অর্জনের জন্যে এবং তারা সকল সময় বাস্তবতার সঙ্গে শান্তি চুক্তি মেনে চলেন। এটা একই সঙ্গে দুইটা ধারণার সমন্বয়; আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যেটা সর্বোচ্চ তা আমি এই মুহূর্তে করছি এবং ভবিষ্যতে আমি আরও ভালো করার চেষ্টা করব। এই নিয়ন্ত্রিত আত্ম-মূল্যায়ন তাদেরকে রক্ষা করে শূন্যস্থানের নেতিবাচক প্রভাব থেকে। তারা যা পাননি, যা করতে পারেননি ইত্যাদি থেকে মনোযোগ সরিয়ে রাখতে পারেন এবং মনোযোগ দিতে পারেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কীভাবে শূন্যস্থান কমিয়ে আনা যায় সেই প্ল্যান ও অ্যাকশনে। 

সাধারণত দিন, সপ্তাহ, মাস কিংবা বছর শেষে যখন আমরা শূন্যস্থানের প্রতি নজর দিই তখন অপূর্ণতার জন্যে নিজেদেরকে দায়ী না ভাবা কিংবা নেতিবাচকতাকে প্রাধান্য না দেওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে যায়। ধরুন দিনের শুরুতে আপনি দশটি বিষয় ‘টু ডু’ লিস্টে রেখেছিলেন। দিন শেষে আপনি যদি ছয়টি কাজও সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেন, তবু শূন্যস্থান অনেক বড় হয়েই দেখা দেবে। বেশিরভাগ মানুষই দিনে ডজন, এমনকি শতটি সঠিক কাজ করেন, আর সামান্য কিছু ভুল। ভাবুন তো, দিন শেষে কোন দিকে নজর দেওয়াটা উপভোগ্য? অবশ্যই সঠিক কাজের লিস্টের উপর। এটা অনেক বেশি উপকারী ও উপভোগ্য। 

এই সব বিষয়ের সঙ্গে ডায়েরি লেখার কী সম্পর্ক? সঠিক কৌশলগত উপায়ে ও ধারাবাহিকভাবে ডায়েরি লেখার অভ্যাস আপনাকে আপনার অর্জনের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে, আপনাকে কৃতজ্ঞ থাকার প্রবণতা বাড়ায় এবং আপনার ভেতর আরো অধিক চেষ্টার মনোভাব অর্জনে সাহায্য করে। ও এইভাবেই আপনি আপনার রোজকার অগ্রযাত্রাকে উপভোগ করতে শিখবেন, সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পা ফেলা শিখবেন, আপনার পরিকল্পনায় আসবে স্ফটিক স্বচ্ছতা, যার প্রভাব আপনি প্রতিটি ফলাফলে লক্ষ্য করবেন। 

ডায়েরি লেখার কার্যকরী উপায় 

মাত্র তিনটি ধাপ জানাবো। ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনার ডায়েরি লেখার ধরন ও ফলাফলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। 

(১) নির্দিষ্ট একটি ফরম্যাট ব্যবহার করুন- সিদ্ধান্ত নিন। ক্ল্যাসিক কাগজের ডায়েরি ব্যবহার করবেন না ডিজিটাল ডায়েরি? (অনলাইন ডায়েরি, সফটওয়্যার কিংবা অ্যাপ) সুখবর হচ্ছে যে The Miracle Morning নামের একটা অ্যাপ আমাদের আছে, যা আইফোন ও এ্যান্ড্রয়েড উভয় মাধ্যমেই ব্যবহারযোগ্য। এই অ্যাপটির সঙ্গে Miracle Morning Journal নামে একটি ডায়েরিও সংযুক্ত আছে। যেহেতু কাগজের ডায়েরি ও ডিজিটাল জার্নাল দুটিই সহজলভ্য, আপনাকে আপনার পছন্দ আর সুবিধানুযায়ী একটি পদ্ধতি বাছাই করতে হবে। উভয় পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাগজে, কলম দিয়ে লিখতেই পছন্দ করি। 

(২) একটি ডায়েরি নিন, ধরন পছন্দ করেছেন? আসুন সুবিধা, অসুবিধাগুলো দেখি। যখন আপনি গতানুগতিক ডায়েরি ব্যবহার করছেন তখন পছন্দ ও সাধ্য অনুযায়ী যে কোনো একটা নিতে পারেন। তবে কথা হচ্ছে, যেহেতু এটা আপনি সারা জীবনের জন্যেই কিনছেন, একটু সুন্দর দেখে কিনুন যেন ব্যবহার করতে উৎসাহী হন; একটু মজবুত কাঠামো দেখে কিনুন যেন অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। যে ডায়েরিটা কিনবেন খেয়াল রাখুন সেটাতে যেন দাগ কাটা থাকে, তারিখ দেওয়া থাকে, বছরের প্রতিটা দিনের তথ্য লেখার মতো যথেষ্ট জায়গা থাকে। যে সব ডায়েরিতে আগে থেকেই তারিখ দেওয়া থাকে সেগুলোতে লেখার জন্যে একটা মানসিক চাপ থাকে। যদি কোনো কারণে কোনো একদিন আপনি লিখতে ভুলে যান, পরেরবার লিখতে বসলেই ওই খালি পৃষ্ঠাগুলো আপনাকে যন্ত্রণা দেবে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আপনি হয়ত স্মৃতি থেকে খুঁড়ে দুই লাইন লিখলেন। এই দুই লাইনও আপনার উপকারে আসবে। আগে থেকেই তারিখ দেওয়া ডায়েরির সব থেকে বড় সাফল্য হলো, আপনি নির্দিষ্ট একটা ঘটনার সঙ্গে অনেক বেশি একাত্মতা অনুভব করতে পারবেন। আমিও এমন একটা ডায়েরি ব্যবহার করতাম। The Winners Journal, এটা আমি ব্যবহার করেছি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত। এমনকি এটা আমাকে Miracle Morning-এর জন্যে ডায়েরির পরিকল্পনায় সহায়তা করেছে। The Winners Journal আপনি পাবেন www . thewinnersjournal .com এ। আর Miracle Morning এর জার্নাল পাবেন www. Amazon .com এ। ডিজিটাল ডায়েরির বেলায় (অনলাইন, সফটওয়্যার কিংবা অ্যাপ) অনেক বিকল্প আছে। Day Dav one নামে একটা আইফোন অ্যাপ আছে, যেটা গতবছর ব্যবহার করে আমি খুব মজা পেয়েছি। আপনি অনলাইন জার্নাল Penzu (www. penzu. com) ব্যবহার করতে পারেন, এটা খুবই জনপ্রিয়। সম্পূর্ণ আপনার পছন্দ এবং ফিচারের ওপর নির্ভর করে আপনি ব্যবহার করা শুরু করুন। Online Journal লিখে Google-এ কিংবা সঅ্যাপ স্টোরে সার্চ করুন। হাজারো সার্ভিস পেয়ে যাবেন। এবং অবশ্যই আমাদের অতি নিজস্ব Miracle Morning Journal 1 ব্যবহার করে দেখতে পারেন; আইফোন, অ্যান্ড্রয়েড দুই প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ স্টোরেই পাবেন। 

(৩) সিদ্ধান্ত নিন কী লিখবেন- কী লিখবেন এই ব্যাপারে আসলে খুব বেশি বলার নেই। যা খুশি তাই লিখুন। কৃতজ্ঞতার কথা লিখতে পারেন; লিখতে পারেন স্বপ্নের কথা; লিখুন লক্ষ্য আর তা পূরণের পরিকল্পনার ব্যাপারে; পরিবার, প্রতিজ্ঞা, শিক্ষার ব্যাপারেও লিখতে পারেন। মনে রাখবেন, যা-ই লিখুন সেটা যেন আপনার লক্ষ্যের প্রতি আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে রাখতে সাহায্য করে। কারণ এখানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাফল্য। আমার ডায়েরি লেখার ব্যাপারটা খুব সহজ। আমি লিখি কোন বিষয়ে আমি কৃতজ্ঞ, কী কী অর্জন করলাম, কোন বিষগুলো আরো ভালোভাবে করার জন্যে চেষ্টা করবো এবং সেটা করার জন্যে কী কী পদক্ষেপ নেব। The Miracle Morning Journal-এর ফ্রি স্যাম্পল পেতে ভিজিট করুন www. Tmmbook .com-এ। 

[TMM বোনাস] বই লিখতে চান? 

এক সমীক্ষা অনুযায়ী ইদানিংকালের আমেরিকানদের শতকরা বিরাশি ভাগ বই লিখতে চান। অনেক! কিন্তু এত বই তো বাজারে আসছে না। আসছে না তার কারণ তারা সময় পান না। যদি আপনিও একটা বই লিখতে চান এবং সময়ের অভাবে ভোগেন, Miracle Morning প্যাকেজ আপনার জন্যেই। সত্য কথা বলতে কি, আমি এখন লিখছি, সকাল ছয়টা বেজে তিন মিনিট, আমার প্যাকেজের অন্তর্ভুক্তি হিসাবে। 

আমি বিশ্বাস করি, সবার ভেতরই একটা রচয়িতা সত্তা আছে। সবাই তাদের জীবন দর্শন, বিশ্বাস ইত্যাদি লিখতে চান। মজার বিষয় হলো, আমি এই মুহূর্তে আমার কিছু প্রাইভেট ক্লায়েন্টকে শিখাচ্ছি, কীভাবে প্রথম বই লিখতে হয় এবং কীভাবে সেটা সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় উঠাতে হয়। যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার বইয়ের প্রকাশনা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে কোনো সাহায্য দরকার, নিঃশঙ্কচিত্তে helpmewithmybook @ miracleniorning .com-এ যোগাযোগ করুন। অবশ্যই আপনার বইয়ের একটা বিশদ বর্ণনা দিতে ভুলবেন না। 

The Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজকে নিজের সুবিধানুযায়ী ব্যবহার করা 

সবার জীবনধারা এক নয়। যদিও গড়পড়তা মানুষের কথা মাথায় রেখেই Miracle Morning প্যাকেজের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আপনি চাইলে আপনার জীবনধারা অনুযায়ী এই প্যাকেজকে সাজিয়ে নিতে পারবেন। সাজানোর এই পদ্ধতিও পরবর্তীকালে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে এই প্যাকেজের সময় ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের ব্যাপারে সামান্য একটু ধারণা দেবো। আপনি সম্ভবত এখন কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিটের প্যাকেজের ভেতর আছেন। একটা নমুনা দিচ্ছি The Life S.A.V.E.R.S ব্যবহার করে এই সময়টাকে কীভাবে ষাট মিনিটে উন্নীত করতে পারবেন সেই বিষয়ে। 

The Miracle MorningTM এর ৬০ মিনিটের নমুনা সময়সূচি 

The Life S.A.V.E.R.STM উপাদানসমূহের ব্যবহার: 

নীরবতা- ৫ মিনিট 

আত্মকথন- ৫ মিনিট 

দৃশ্যায়ন- ৫ মিনিট 

শরীরচর্চা- ২০ মিনিট 

পঠন-২০ মিনিট 

লেখা- ৫ মিনিট 

মোট সময়- ৬০ মিনিট 

The Life S.A.V.E.R. STM উপাদানসমূহ ব্যবহারের যে ক্রম ব্যবহা করা হয়েছে আপনি চাইলে সেটাও সুবিধামত পরিবর্তন করে নিতে পারেন। কেউ কেউ ব্যায়াম আগে করতে পছন্দ করেন। ঘুম ঘুম ভাব দূর করে দ্রুত সজাগ হওয়ার এটা একটা পরীক্ষিত উপায়। আবার অনেকে ব্যায়াম সব শেষে করতে পছন্দ করেন, যেন পুরো প্রক্রিয়াতে তারা কোনো রকম ক্লান্তি অনুভব না করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নীরবতা দিয়ে শুরু করতে পছন্দ করি- ধীরে ধীরে সজাগ হওয়া, পরিচ্ছন্ন মন আর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে এই প্রক্রিয়া আমাকে সাহায্য করে। ব্যায়াম আমি সব শেষে করি। ফলে চট করে শাওয়ার নিয়েই দৈনিক অন্যান্য কাজ শুরু করতে পারি। যাই হোক, এটা আপনার Miracle Morning, আমার না; আপনার সুবিধামত উল্টে পাল্টে পরীক্ষা করুন, সব থেকে সুবিধাজনক ক্রমে স্থায়ী হন। 

The Life S.A.V.E.R.S সম্পর্কে শেষ কথা 

সহজ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সবকিছুই কঠিন। যে কোনো নতুন অভিজ্ঞতাই অস্বস্তিকর, অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। The Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ আপনি যত বেশি চর্চা করবেন, ততই এটা আপনার জন্যে সহজ ও স্বাভাবিক হতে থাকবে। প্রথমবার মেডিটেশনে বসার পর আমার মনে হয়নি আমি দ্বিতীয়বার আবার ধ্যানে বসব। আমার মন সেই সময় জেট প্লেনের গতিতে ছিল। চিন্তাভাবনাগুলো যেন ছিল পিনবল মেশিনের পিতলের বল, এখানে ধাক্কা খেয়ে ওখানে যাচ্ছে তো ওখানে ধাক্কা খেয়ে এখানে। এখন আমি মেডিটেশন ভালবাসি, আমি প্রফেশনাল নই কিন্তুবিষয়টা জানি, অনুভব করি। একই অনুভূতি ছিল যখন প্রথম যোগব্যায়াম শুরু করি। এই মাত্র পানি থেকে তুলে আনা মাছ মনে হতো নিজেকে। পোজগুলো (অঙ্গবিক্ষেপ) সঠিকভাবে করতে পারতাম না, শরীর নমনীয় ছিল না, অস্বস্তি লাগত, নিজেকে ছোট মনে হতো। এখন যোগ ব্যায়াম আমার অস্তিত্বের একটা অংশ হয়ে গেছে। আমি কৃতজ্ঞ যে, এর সঙ্গে লেগে থাকার মতো ধৈর্য্য আমার হয়েছিল। 

The Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজ এখনই শুরু করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। যেন জীবন বদলে দেওয়া ৩০ দিনের The Miracle Morning প্যাকেজ শুরু করার আগেই আপনি S.A VERS প্যাকেজের সব বিষয়ে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন। এখনও যদি আপনার মনে সংশয় থাকে সময়ের ব্যাপারে, তাহলে নিশ্চিত থাকুন; এখনই দৈনিক মাত্র ছয় মিনিটের একটা শিডিউলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে যেন এই ছয় মিনিটেই আপনি Life S.A.V.E.R.S প্যাকেজের ছয়টা উপাদানেরই সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *