৬.২ রাঙা নাও
সেইদিন বিকালবেলা, মাগন সরকার মামলা লাগাইয়া ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হইতে বাড়ি ফিরিতেছিল। তিতাস-নদীর তীর ধরিয়া পথ। সূর্য এলাইয়া পড়িয়াছে। তিতাসের ঐ পারে মাঠ ময়দান ছাড়াইয়া অস্পষ্ট গ্রামের রেখা। তারই ওপারে সূর্য একটু পরেই অস্ত যাইবে। পশ্চিমাকাশ লাল হইয়া উঠিয়াছে। তার সেই লালিমা আবার মেঘের স্তরে স্তরে নানা রঙের পিচকারী ছুড়িয়া মারিতেছে। ঠাণ্ডা হাওয়া দিয়াছে। চারিদিকে শান্ত, সমাহিত ভাব। কাছেই বাড়িঘর। গাইগরু ধীরেসুস্থে আপন মনে বাড়িতে ফিরিতেছে। রাখালের তাড়া করার অপেক্ষা রাখিতেছে না। বামদিকে তটরেখা, ডানদিকে বেড়া। কি সব ক্ষেত লাগাইয়াছে, তারই জন্য বেড়া। গলায় ঝুলানো রেশমী চাঁদর হাওয়ায় উড়িয়া এক একবার বেড়ার কঞ্চিতে গিয়া লাগিতেছিল। পায়ের মসৃণ জুতায় লাগিতেছিল জমিনের ধূলা। সব কিছু বাঁচাইয়া পথ চলিতে মাগন সরকারের মন চিন্তায় উদ্বেল হইয়া উঠিল। এ মাঠেও তার অনেক জমি আছে। কত জমি, সে নিজেই অনেক সময় ঠাহর রাখিতে পারে না। মাঝে মাঝে গোলাইয়া যায়, কত জমি সে করিয়াছে; কিন্তু কি করিয়া সে-সব জমি করিয়াছে, সে-খবর জ্বলন্ত অঙ্গারের মতই তার চোখের সামনে আজ যেন জ্বলজ্বল করিয়া দুই একবার জ্বলিয়া উঠিল।
এমন সময় পথে রশিদ মোড়লের সঙ্গে দেখা।
রশিদ মোড়লের খালি পা, লুঙ্গি পুরা, গায়ে একটা ফতুয়া। বয়সে মাগন সরকারের মতই প্রবীণ।
‘রসিদ ভাই!’
‘কি?’
‘দোলগোবিন্দ সা’র খবর শুনছ ত?’
‘তা আর শুনছি না। কলিকাতা থাইক্যা তার ভাতিজার নামে চিঠি আইছে।’
‘অবস্থা নাকি খারাপ?’
‘হ। একেবারে হাতে-বৈঠা-ঘাটে-নাও অবস্থা।‘
‘কি হইব দাদা!’
‘কি অরে হইব, মরব!’
‘মইরা কি হইব?’
রশিদ একটু হাসিল, কিন্তু জানিল না যে, মাগনের একটা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস তিতাসের ছোট ঢেউয়ের মত বাতাসে একটু ঢেউ খেলাইয়া দিয়া গেল!
পরের দিন সকালে কাদির মিয়া আসিয়া ডাক দিল।
তার চোখ দুইটি দেখিয়া মাগন সত্যই আঁতকাইয়া উঠিল। সে-দুটি চোখ জবাফুলের মত লাল। সারারাত তার ঘুম হয় নাই। কেবল ভাবিয়াছে, আল্লা মানুষ এত বেইমান হয় কেন? মানুষে মানুষকে এতটুকু বিশ্বাস করিবে না কেন? আর কেনই বা মানুষ বিশ্বাসের মাথায় এভাবে নিজ হাতে মুগুর মারিতে থাকিবে। মানুষ না দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জীব?
এদিকে মাগনেরও সারারাত ঘুম নাই। কাল রাত্রিতে বাড়িতে আসিয়া শুনিয়াছে, দোলগোবিন্দ সাহা আর ইহজগতে নাই। টেলি আসিয়াছে তার ভাইপোর নামে। হায় দোলগোবিন্দ! তুমি, আমি, রসিক ভাই একই ডিঙ্গার কাণ্ডারী, একই চাকরিতে ঘুষ খাইয়া পয়সা করিয়াছি, একই উপায়ে লোককে ঋণের জালে জড়াইয়া ভিটামাটি ছাড়া করিয়াছি, জমিজিরাত দেনার দায়ে নিলাম করিয়াছি; আজি তুমি মরিয়া গিয়াছ। আমিও তো মরিয়া যাইব। হায় দোলগোবিন্দ! তুমি মরিয়া গিয়াছ।
কাদির দেখিয়া অবাক হইল, তারও চোখ দুইটি সন্ধ্যার অস্তরাগের মতই লাল।
কাদির কিছু বলিল না। চুপ করিয়া তার সামনে দাঁড়াইয়া রহিল।
মাগন শিহরিয়া উঠিল, দোহাই তোমার কাদির মিয়া। শুধু একটিবারের জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা কর। জীবনে সর্বনাশ তো অনেকেরই করিলাম। আর কারোর সর্বনাশ আমি করিব না, শেষবারের মতো শুধু তোমার এই সর্বনাশটুকু করিতে দাও। বাধা দিওনা, প্রতিবাদ করিও না, শুধু সহ্য করিয়া যাও। এই আমার শেষ কাজ। দেখিবে, তোমাকে ঠকানোর পর থেকে আমি ভাল মানুষ হইয়া যাইব। আর কাউকে ঠকাইব না; এই শেষবারের মত শুধু তোমাকে ঠকাইতে দাও। কাদির হতভম্ভ হইয়া গেল। কিছু না বুঝিয়াই বলিল, তাই হোক মাগন বাবু, আমি সহ্যই করিয়া যাইব। তোমার কোন ভয় নাই, নিৰ্ভয়ে তুমি মামলা চালাও। কোনো সাক্ষীসাবুদ আমি খাড়া করিব না। নীরবে সব স্বীকার করিয়া লইব এবং টাকা ডিগ্রি হওয়ার পর নগদ না থাকে তো জমি বেচিয়া শোধ করিব। তবু তুমি ভাল হও।
পরের দিন খবর পাওয়া গেল, মাগন সরকার মরিয়া গিয়াছে। বড় বীভৎস সে-মৃত্যু। একটা নারিকেল গাছে উঠিয়া মাটির দিকে নাকি সে লাফ দিয়াছিল।
এই সংবাদে কাদিরের মনটা কেমন যেন উদাস হইয়া গেল।
কাজেই ছাদির যখন একদিন প্রস্তাব করিল, এবার শ্রাবণে সে নৌকা দৌড়াইবে, এজন্য দৌড়ের নৌকা একটা বানাইতে হইবে, তার জন্য টাকা চাই, কাদির তখন ঝাঁপি খুলিয়া চার শ টাকা তার হাতে তুলিয়া দিয়া বলিল, নে, নাও বানা, ঘর বানা, পানিতে ফালাইয়া দে। যা খুশি কর।’
অত সহজে কাজ হাসিল হইয়া গেল দেখিয়া ছাদিরের খুশি আর ধরে না।
ছাদিরের কাঠ কেনার প্রসঙ্গে একদিন ঘরে আলোচনা হইল। ছাদির বলিল, ‘সে এক পরস্তাব।‘
গল্পের আভাস পাইয়া রমু তার কোল ঘেঁষিয়া বসিল এবং প্রকাণ্ড একটা বিস্ময়-ভরা জিজ্ঞাসা লইয়া বাপের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল।
তারা নাকি দুজন মালো। গায়ে নাকি তাদের হাতীর মতন জোর। নামও তাদের তেমনি জমকালো—একজনের নাম ইচ্ছারাম মালো, আরেকজনের নাম ঈশ্বর মালো—নিবাস নবীনগর গাঁয়ে।
তারা কি করিয়াছে, না, পাহাড় হইতে বহিয়া আসে যে জলের স্রোত, তারই সঙ্গে সঙ্গে কোমরে কাছি বাঁধিয়া বড় বড় গাছের গুঁড়ি টানিয়া নামাইয়াছে। সে গাছের গুঁড়ি চিরিয়া তক্তা করা হইবে, তাহাতে তৈয়ারী হইবে ছাদিরের দৌড়ের নৌকা, সে নৌকা সে হাজার বৈঠা ফেলিয়া আরও দশবিশটা দৌড়ের নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিয়া দৌড়াইবে, আর সব নৌকাকে পাছে ফেলিয়া জয়লাভ করিবে, করিয়া মেডেল পাইবে, পিতলের কলসী পাইবে আর পাইবে বড় একটা খাসি।
‘বেহুদা—একেবারে বেহুদা! এর লাগি কত হাঙ্গামা কইরা নাও গড়াইবি?’ কাদির টাকা দিবার পর একদিন প্রশ্ন করিয়াছিল।
ছাদিরও জবাব দিয়াছিল, ‘জিনিসগুলি খুব থোরা দেখলা, না? কিন্তুক, জিত্লে খালি তোমার আমার গৈরব না, সারা বিরামপুর গাঁওয়ের গৈরব।’
‘একদিন হৈ-হাঙ্গামা করবি, জিতবি, পিতল। কলস পাইবি, মানলাম। তারপর এই-নাও দিয়া তুই করবি কি? কি কামে লাগব এই দেড়শ-হাতি লিক্লিকা পাতাম নাও?’
—কেন, অনেক কাজে লাগিবে। বর্ষার যে-কয়মাস ক্ষেতে-খামারে পানি থাকিবে, এ নৌকা লইয়া বিলে গিয়া বোঝাই-ভরতি ঘাস কাটিয়া আনা যাইবে গাই-গরুর জন্য।
—সে কাজ তো একটা ঘাস কাটা পাতাম দিয়াই চলে?
—চলে, কিন্তু ঘাস কাটা পাতাম দিয়া তো আর নাওদৌড়ানি চলে না। আর এই নাও দিয়া দৌড়ানিও চলে ঘাস কাটাও চলে।
—বিলের পানি শুকাইয়া গেলে তো এ নাও অচল, তখন তারে দিয়া কি করিবি? রোদে তখন সেত খালি ফাটিবে।
–ফাটিবে কেন? গেরাপি দিয়া তারে তিতাসের পানিতে ডুবাইয়া রাখিব, তার পেটে কতগুলি ডালপালা রাখিয়া দিব, আশ্রয় পাইয়া মাছের আসিয়া জমিবে; তখন সময়-সময় জল সেঁচিয়া সে-মাছ ডোলা ভরিয়া বাড়িতে আনিব।
ছাদিরের বুদ্ধি দেখিয়া কাদির অবাক হইল, বলিল, ‘মিয়া, বুদ্ধি বাৎলাইছ চমৎকার।’
রমু কয়েক রাত স্বপ্ন দেখিয়াছে সেই মালো দুজনকে—যে ছজন কোমরে কাছি বাঁধিয়া নদী নালা ভাঙ্গিয়া তার বাপের জন্য কাঠ লইয়া আসিতেছে।
একদিন তিতাসের পারে গিয়া দেখে, দূর হইতে একখানা কাঠের ‘চালি’ ভাসিয়া আসিতেছে, ভেলার মত। তাহাতে ছোট একখানা ছই।
সেই দুজনকেও দেখা গেল। তার চালির দুই পাশ হইতে মোট লগি ঠেলিতেছে। সেই ঈশ্বর মালো আর ইচ্ছারাম মালো নামে রূপকথার মানুষ দুইটা। পাহাড় পর্বত ভাঙ্গিয়া, খালবিল ডিঙ্গাইয়া, কত দেশদেশান্তরের বুক চিরিয়া তারা যেন এক বোঝাই গল্প লইয়া আসিয়াছে। ছোট ছইখানার ভিতরে দুইজনার সংক্ষিপ্ত ঘরকরন। পরণে দুইজনেরই এক একখানা গামছা, গাঁ মসৃণ কালো। শুশুকের মতই যেন জল হইতে ভাসিয়া উঠিয়া কাঠের চালিতে লগি ঠেলিতেছে। কাঠ বিক্রি হইয়া গেলে, আবার যখন শুশুকের মতো একডুবে জলের ভিতর তলাইয়া যাইবে, তখন আর তাহদের কোন চিহ্নই জলের বাহিরের এই সংসারে দেখিতে পাওয়া যাইবে না।
ছাদিরের সঙ্গে সামান্য দুই একটি কথাবার্তা শেষ করিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই তাহারা প্রকাণ্ড একটা গুঁড়ি, চালির বাঁধন হইতে খুলিয়া রাখিয়া আবার আগাইয়া চলিল। ছাদির বলিতেছিল, মালোর পুত, আজ পুরে এখানে পাকসাক কর, থাক, খাও, কাল ফজরে উঠিয়া চালি চালাইও।
শুধু একটি মাত্র কথা তাহারা বলিল, না শেখের পুত। এখানে চালি থামাইব না, রমারম্ গোকনের ঘাটে গিয়া পাক বসাইব।
বলিয়াই তাহার লগি ঠেলা দিল। মুখে কত বড় ব্যস্ততা কিন্তু চলনে কতখানি ধীর। কোন আদিম যুগের যেন যান একখানা, একালের চলার দ্রুততার সঙ্গে এর যেন কোন পরিচয়ই নাই। অত ধীরে চলে, কিন্তু থামিয়া সময় নষ্ট করে না। রমু ভাবিয়াছিল, এই দুইজনের কাছে একবার সাহস করিয়া ঘেষিতে পারিলে অনেক কিছু জানিয়া লওয়া যাইবে। কিন্তু তাহারা ধীরে ধীরে চলিয়া যাইতেছে। এমন ধীরে ধীরে, যেন হাঁটিয়া গিয়া অনায়াসে ইহাদিগকে পিছনে ফেলিয়া রাখা যাইবে—এত ধীরে—কিন্তু কি গম্ভীর সে-চলা। দ্রুত হাঁটার মধ্যে কোথায় সেই গাম্ভীর্য।
রমু এই বলিয়া নিজের মনকে প্রবোধ দিল, যারা অনেক দূরের অনেক কিছু খবরাখবর বহিয়া বেড়ায়, তারা অধিকক্ষণ থাকে না, এমনি ধীরে ও দৃঢ়তায়, এমনি ধীরে ও নিষ্ঠুরতায় তারা চলিয়া যায়।
পরের দিন সকালে প্রকাণ্ড একটা করাত কাঁধে লইয়া চারিজন করাতী আসিল। তিতাসের পারে একখণ্ড আকৰ্ষিত জমির উপর একটা আড়া বাঁধিয়া, পাড়ার লোকজন ডাকিয়া প্রকাণ্ড গাছের গুঁড়িটাকে আড়াআড়িভাবে তাহাতে স্থাপন করিল, তারপর নিচে দুইজন উপরে দুইজন করাতী চান চুন্ চান চুন্ করিয়া করাত চালাইয়া দিল।
দুইদিনে সব কাঠ চেরা হইয়া গেলে, তক্তাগুলি পাট করিয়া রাখিয়া পারিশ্রমিক লইয়া করাতীরা বিদায় হইল, আর রমুর বয়সের ছেলেমেয়ের একগাদা করাতের গুঁড়ায় দাপাদাপি করিয়া খেলায় মাতিয়া গেল।
বাপ আচ্ছা এক মজার কাও শুরু করিয়া দিয়াছে। এ গাঁয়ে যা কোনদিন কেউ করে নাই, তেমনি এক কাণ্ড। রমু মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
তারপর একদিন দেখা গেল, তিতাসের পারে একখানা অস্থায়ী চালাঘর উঠিয়াছে। কয়েকদিন পরে সে-ঘরের বাসিন্দারাও ছোট ছোট কয়েকখানা কাঠের বাক্স মাথায় করিয়া হাজির হইল। তারা চারিজন ছুতার মিস্ত্রী। নাও গড়াইবার যাবতীয় হাতিয়ার লইয়া সে-ঘরে বসতি স্থাপন করিয়াছে।
আগাপাছার ‘ছেউ’ ঠিক করিয়া যেদিন তাহারা নাও ‘টাঙ্গিল’, সেদিন রমুর বিস্ময়ের সীমা রহিল না। নৌকার মেরুদণ্ড মাত্র পত্তন করা হইয়াছে। সেই মেরুদণ্ডের ডগা আড় হইয়া আকাশ ঠেলিয়া কতখানি যে উপরে উঠিয়াছে, রমুর ক্ষুদ্র দৃষ্টি তার কি পরিমাপ করিবে! কিন্তু মিস্ত্রী দুইজন অত উঁচুতে গিয়া বসিয়াও কেমন হাতুড়ি পিটাইতেছে, আর পেরেক ঠুঁকিতেছে!
মাপজোখ লইয়া এই মেরুদণ্ড ঠিক করিতে কয়েকদিন লাগিল। তারপর পুরাদমে শুরু হইল কাজ। এক একটা তক্তায় কাদা মাখাইয়া আগুনে পোড়াইয়া টানা দিয়া মোড়ন দিয়া বাঁকাইয়া, খাঁজ কাটিয়া জোড়া দেয়, আর পাতাম লোহার একদিক বসাইয়া আস্তে হাতুড়ির টোকা দেয়, একদিক সামান্ত একটু বসিলে, আরেকদিক ঘুরাইয়া খাজের উপর বসাইয়া হাতুড়ি দিয়া পিটিতে থাকে—ডুম্ ডুম্–টাকুর টাকুর ডুম্!
দেখিতে দেখিতে নৌকার অস্থিমাংস জোড়া লাগিতে লাগিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পাইতে এখনও অনেক বাকি।
ছাদির বলিল, ‘রমু, বা’জি একটা কাম কর। আমি ক্ষেতে যাই, তুমি মেস্তুরেরে তামুক জ্বালাইয়া দিও, কেমুন!’
একটা কাজ পাইয়া রমু বর্তাইয়া গেল। সেই হইতে বাড়িতে বড় একটা সে আসেই না। কেবল ঠিক-দুপুরে মিস্ত্রিরা যখন কাজ থামাইয়া রান্না চড়ায়, তখন সে একবার নিজের ক্ষুধাটা অনুভব করিয়া বাড়িতে আসে। কিন্তু মন পড়িয়া থাকে মিস্ত্রিদের উন্মুক্ত ছোট সংসারখানাতে। সেখানে শুধু কয়েকটি হাতুড়ি আর বাটালির কারসাজিতে কেমন লম্বা লিকলিকে একটা নৌকা গড়িয়া উঠিতেছে।
রমুর ভবিষ্যৎ লইয়া একদিন বাপ-ছেলেতে কথা কাটাকাটি হইয়া গেল। ছাদির বলিল, তারে কিতাব হাতে দিয়া মক্তবে পাঠাইব। কাদির হাসিয়া বলিল, না, তারে পাচন হাতে দিয়া গরুর পিছে পিছে মাঠে পাঠাইব।
মাঠে পাঠাইলে সে আমার মত মূৰ্খ চাষাই থাকিয়া যাইবে। দুনিয়ার হাল-অবস্থা কিছুই জানিতে পারিবে না। মানুষ হইতে পারিবে না।
আর ইশ্কলে পাঠাইলে, তোর শ্বশুরের মত মুহুরী হইতে পারিবে আর শাশুড়ীর বিছানায় বৌকে ও বৌয়ের বিছানায় শাশুড়ীকে শোয়াইয়া দিয়া দূরে সরিয়া ঘুষের পয়সা গুণিতে পারিবে। কাজ নাই বাবা অমন লেখাপড়া শিখিয়া।
রমুর মার রাগ হইল। যত দোষ বুঝি আমার বাপের। আমার বাপ ঘুষ খায়; আমার বাপ চুরি করে; আমার বাপ ফল্না করে, তস্কা করে—কি যে না করে!
তুষ্ট থাম, ছাদির ধমক দিল।
না, থামিব না, আমার বাপ যখন অত দোষের দোষী, তখন জানিয়া শুনিয়া এমন চোরের মাইয়া ঘরে আনিলে কেন? আর আনিলেই যদি, খেদাইয়া দিলে না কেন?
খেদাইয়া দিলে আরেক খানে গিয়া খুব সুখে থাকিতে পারিতিস্, না?
আহা, কত সুখেই না আছি এখানে!
বিষমুখী তুই থামিবি, না চোপা বাজাইবি?
ইস থামিবে। আমি বিষমুখী, আমার বাপ চোর, আবার থামিবে।
রাগে ছাদির উঠিয়া গিয়া মারে আর কি। কাদির তাহাকে ঘাড় ধরিয়া বসাইয়া দিল।
মেয়েটার মধ্যে এক বিদ্রোহের মূর্তি দেখা গেল এই প্রথম। কাদিরের মনের কোথায় যেন একটু খোঁচা লাগিল। মুহুরীর মেয়ে জোর গলায় বলিয়া চলিল, ‘চোর হোক ধাওর হোক, তারইত আমি মাইয়া। বাপ হইয়া মার মতন পালছে, খাওয়াইছে ধোয়াইছে—হাজার হোক, তবু বাপ। চোর হইলেও আমারই বাপ, আর কাউর বাপ না। আমি মরলে এই বাপেরই বুক খালি হইব। আর কোন বাপের বুক খালি হইব না।
না হইব না! চোরের মাইয়ার আবার টাস-টাইস্যা কথা। খালি হইব না তোমারে কইল কেডায়?—কাদিরের চোখ ছলছল করিয়া উঠিল। তার জমিলার কথা মনে পড়িয়া বেদনায় বুকটা টনটন করিতে লাগিল, মনে মনে বলিল, মুহুরী যত দোষের দোষী না, তার চাইতে অধিক দোষী করিয়া আমরা এই অসহায় মেয়েটাকে সকলে মিলিয়া জর্জরিত করিতেছি। আমি যত দোষের দোষী না, তার চাইতেও অধিক দোষের দোষী করিয়া তারাও যদি আমার জমিলাকে এমনি জর্জরিত করিতে থাকে, জমিলা কি তখন নিথর পাষাণের মত চুপ করিয়া শোনে আর চেখের জল ফেলে? জমিলা কি তার এতটুকু প্রতিবাদ করে না? করিলে তবু মেয়েটা বাঁচিয়া যাইত মন হালকা করিয়া, কিন্তু না করিলে, সে যখন নিরুপায়ের মত সহিতে হইবে মনে করিয়া তিলে তিলে ক্ষয় হইতে থাকিবে, তখন তাহাকে দুইটা সান্তনার কথা শুনাইবে কে? জমিলা। সে ও মা-মরা মেয়ে। এ যেমন মুহুরীর বুক-সেঁচা ধন, জমিলাও তেমনি কাদিরের বুক-সোঁচ ধন। তবে, বাপ হিসাবে মুহুরীতে আর কাদিরেতে তফাৎ কি? তফাৎ শুধু এই যে, মুহুরী আবার একটা শাদি করিয়াছে। কাদির তার ছেলের দিকে চাহিয়া তাহা করে নাই। আরেকটা শাদি করিয়াও যখন মুহুরী মেয়েটাকে ভুলিতে পারে নাই, তখন কাদির ঘরে একটা গৃহিণী না আনিয়া, ছেলেটার ও মেয়েটার উপর হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা উজাড় করিয়া দিয়া, জমিলাকে কেমন করিয়া ভুলিয়া থাকিবে? কিন্তু তবু ভুলিয়া সে আছে ইহা ঠিক। যদি ভুলিয়া না থাকিত, কতদিন আগে একবার সে দুই দিনের জন্য এখানে আসিয়াছিল —সেই গত অম্ৰাণে—দুই দিন থাকিয়া চলিয়া গিয়াছে। অতদিন আগে সে আসিয়াছিল, ভুলিয়া না থাকিলে এতদিনের মধ্যে দুইবারও কি জমিলাকে এখানে আনা হইত না? কিন্তু কেন কাদির অত আদরের জমিলাকেও ভুলিয়া থাকিতে পারে? কেন? এই রাক্ষুসী মেয়েটারই জন্য নয় কি? সে আসিয়া এ বাড়িতে কাদিরের বুকে জমিলার যে স্থানটুকু ছিল, সেটুকু যদি অধিকার করিয়া না বসিত, বুড়া কাদির কি তাহা হইলে পরের ঘরে মেয়ে দিয়া বাঁচিতে পারিত!
রমুর মা খুশী তখনও গজরাইতেছে, সাধে কি লোকে বলে পরের ঘর। পরের ঘরই ত। যে-ঘরে আসিয়া বাপ হয় চোর, আর নিজে হয় বিষমুখী, সে-ঘর কি আপনা-ঘর! সে ঘর কি পরের ঘর নয়?
হ, হ, পরের ঘর। মুহুরীর মেয়েট বলে কি? রাত না পোহাইতে উঠিয়া বিশটা গরুর গোয়াল সাফ করা, খইলভূষি দেওয়া, ঝাঁটা হাতে বাহির হইয়া এত বড় উঠানবাড়ি পরিষ্কার করা, কলসের পর কলস পানি তোলা, রান্ধ, খাওয়ানো, ধান শুকানো, কাক তাড়ানো, উঠান-ভরতি ধান রোদে হাঁটিয়া পা দিয়া উল্টানো পাল্টানো, তারপর খড় শুকানো, শোলা শুকানো, পাট ইন্দুরে কাটে, তারে দেখা, অত অত ধান ভানা, ফের রান্নাবাড়া করা–এত হাজার রকমের কাজ —পরের ঘরে কি কেউ এত কাজ করে কোন দিন? শরীর মাটি করিয়া এত কাজ যে-ঘরের জন্য করিতেছে, তারে কয় কিনা পরের ঘর। কহিলেই হইল আর কি, মুখের ত আর কেরায়া নাই।
খুশীর চোখে এবার দ্বিগুণ বেগে জল আসিয়া পড়িল। এবার সে ফোঁপাইয়া কাঁদিয়া উঠিল। অনেক কাঁদিবার পর তাহার মনে হইল, এমন কাঁদন কাঁদিয়াও সুখ।
পরিশেষে কাদির বলিল, ‘দে, তোর পুতেরে মক্তবে দে, কিন্তু কইয়া রাখলাম, যদি মিছাকথা শিখে, যদি জালজুয়াচুরি শিখে, যদি পরেরে ঠকাইতে শিখে, তবে তারে আমি কিছু কমু না, শুধু তোমার মাথাটা আমি ফাটাইয়া দিমু, ছাদির মিয়া।’
পরের দিন রমু নূতন লুঙ্গি জামা পরিয়া নূতন টুপি মাথায় দিয়া মক্তবে গেল। পড়িয়া আসিয়া মার কাছ হইতে কিছু খাবার খাইয়া হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল, সেই চারজনকে ত নূতন লুঙ্গি গেঞ্জি টুপি দেখানে হয় নাই। মক্তবের ছেলেরা কতবার চাহিয়া দেখিয়াছে। আর সেই চারজন দেখিবে না।
নূতন পোষাকে সজ্জিত রমুকে তাহাদের জন্য তামাক সাজিতে বসিতে দেখিয়া তাহাদের একজনের বড় মায়া হইল, বলিল, থাক থাক মুনশীর পুত। তোমার আর টিকার কালি ঘাঁটিয়া দরকার নাই।
বেলা পড়িয়া আসিতেছে। অদূরেই ঘাটের পথ। লালকালো, ডুরি-ডুরি শাড়ি পরা গেরস্থ বৌ-ঝিরা সেই পথ দিয়া তিতাসের ঘাটে যাইতেছে। কারে হাতে চালের ধুচ্নি, কারে কাঁখে কলসী। কারো পায়ে রূপার মল ৷
দেখিয়া জনৈক ছুতারের গলায় গান জমিয়া উঠিল : ছোট লোকের খানা-পিনা রে বিহানে বৈকালে, বড় লোকের খানপিনা রাত্র নিশা কালেরে –হায় কান্দে, কান্দে রে দেওয়ান কটু মিয়ার মায় ॥
সকলের বয়োজ্যেষ্ঠ ছুতার বাধা দিল, দেখ বুদ্ধিমানের পুত, ইহাদিগকে শুনাইয়া গান গাহিলে মাথা লইয়া দেশে যাইতে পারিবে না।
মাথা না হয় রাখিয়াই যাইব।
একটা লোক মাথা রাখিয়া আবার যায় কি করিয়া রমু ভাবিয়া পাইল না। তবে গানটা শুনিতে তার খুব ভাল লাগিল।
থামিলে কেন, গাওনা তোমার গান।
বড় মিস্ত্রী তার দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল, ছপুর বেলা আসিলে আমি গান শুনাইতে পারি, সকালে বিকালে পারি না।
দুপুরে যে আমি পড়িতে যাই।
তবে গান শুনিয়া কাজ নাই।
কাজ নাই কেন?
পড়িতে হইলে গান শোনা হয় না, আর গান শুনিতে হইলে পড়া হয় না, এই রকম যখন অবস্থা, তখন পড়াই ভাল, গান শুনিয়া কাজ নাই।
শুক্রবারে মক্তব ছুটি থাকে। দুপুর বেলা রমু লুঙ্গি পরিল, টুপি পরিল, কিন্তু গেঞ্জি পরিতে ভুলিয়া গেল। তারপর সে মিস্ত্রিদের নিকট হাজির হইল। কিন্তু বড় মিস্ত্রী তাহাকে নিরাশ করিয়া জানাইল, হাতে বড় কাজ এখন সুবিধা হইবে না। আরও বলিয়া দিল, বাড়িতে গিয়া বল, দুধ জ্বাল দেওয়ার ঝামেলা পোহাইবার আজকাল আর সময় নাই। দুধ যেন বাড়ি হইতেই জাল দিয়া চিড়াগুড়ের সঙ্গে পাঠাইয়া দেয়।
রমুর মা দুধ জ্বাল দেওয়ার কড়াখানাকে ঝামা দিয়া দুই তিন বার মাজিয়া দুধ ফুটাইল এবং বড় একটা লোটার গলায় ফাস পরাইয়া রমুকে দিয়া পাঠাইল। মাথায় চিড়ার বোঝা, হাতে দড়ি-বাঁধা দুধের লোটা এই বেশে রমুকে দেখিয়া মিস্ত্রিরা হাসি সম্বরণ করিতে পারিল না।
তারপর দেখিতে দেখিতে একদিন গোটা একটা নৌকা তৈয়ার হইয়া গেল। এখন শুধু বাকি রহিল, নৌকা কাত করিয়া তলার দিকটা পালিশ করা। সে কাজের ভার ছোট তিনজনার হাতে ছাড়িয়া দিয়া বড় মিস্ত্রী হুকা হাতে লইয়া বসিল এবং আস্তে আস্তে গান জুড়িয়া দিল—হস্তেতে লইয়া লাঠি, কান্ধেতে ফেলিয়া ছাতি, যায়ে বুরুজ দীঘল পরবাসে ॥
তারপর, পথশ্রমে বুরুজ ক্লান্ত হইল এবং—চৈত্রি না বৈশাখ মাসে, পিঙ্গল রোদ্রির তাপে, লাগিল দারুণ জল-পিপাসা ॥ তখন সে জলের জন্য এদিক ওদিক তাকাইতে লাগিল, কিন্তু কোথাও না নদী, না পুষ্করিণী। কিন্তু সহসা তার চোখে পড়িল–ঘরখানা লেপাপুছা, দুয়ারে চন্দনের ছিটা, এটা বুঝি ব্রাহ্মণের বাড়ি ॥ বুরুজ নিজে ব্রাহ্মণ, কাজেই ব্রাহ্মণের বাড়ি চিনিতে তাহার বিলম্ব হইল না। এত যখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, তখন এটা কোনও ব্রাহ্মণের বাড়ি না হইয়া যায় না। বুরুজ তখন আগাইয়া ডাক দিল—ঘরে আছ ঘরণীয়া ভাই, জল নি আছে খাইতে চাই, পরবাসী তিয়াস লেগে মরি। তাহার আহ্বান ব্যর্থ হইল না—ডান হস্তে জলের ঝারি, বাম হস্তে পানের খাড়ি, যায়ে কন্যা জলপান করাইতে।। পিপাসাকাতর বুরুজ— জল খাইয়া শান্ত হইয়া, জিগাস করে তুমি কোন জাতের মাইয়া, ( বলে ) জাতে আমরা গন্ধভূঁইমালী।। বুরুজের জাতি গেল, হায় হায়, ব্রাহ্মণ বুরুজের জাতি গেল। আগে পরিচয় জিজ্ঞাসা না করিয়া যার হাতের জল সে পান করিল, সে ত ব্রাহ্মণের মেয়ে নয়। সে ছোট জাতের মেয়ে –আছাড় খাইয়া বুরুজে কান্দে, পিছাড় খাইয়া বুরুজে কান্দে, জাতি গেল ভূঁইমালিয়ার ঘরে।। বুরুজের জাতি গিয়াছে। সে কি করিবে? না গেল প্রবাসে না গেল দেশে, ফিরিয়া যেখানে তাহার জাতি নষ্ট হইল, সেখানেই সে রহিয়া গেল, আর বলিয়া দিল-—সঙ্গের যত সঙ্গীয়া ভাই, কইও খবর মা বাপের ঠাঁই, জাতি গেল ভূঁইমালিয়ার ঘরে।
বেঘোরে একটা লোকের জাতি নষ্ট হইয়াছে শুনিয়া রমুর খুব দুঃখ হইল। জীবনে ব্রাহ্মণ সে দেখে নাই। তবে তার সম্বন্ধে যতটুকু শুনিয়াছে, মনে মনে বিচার করিয়া রাখিয়াছে, সাধারণ মানুষ অপেক্ষা তাহারা মাথায় অনেক উঁচু। তারা নাকি মন্ত্র বলে। তারা নাকি অনেক মোটা মোটা কিতাব পড়িয়া শেষ করিয়া রাখিয়াছে। আর মালী! তারা তো শুনিয়াছি হিন্দু বাড়ির বিবাহে কলাগাছ পুঁতিয়া দেয়। এ আর তেমন কি কাজ তারা করে। আর এইরকম এক মালীর ঘরেই অমন-একটা পণ্ডিত মানুষের জাতি নষ্ট হইয়া গেল। ব্রাহ্মণত্ব খোয়াইয়া সে মালী হইয়া মালী-বাড়িতে রহিয়া গেল। এখন কি আর সে বিবাহ-বাড়িতে গিয়া মন্ত্র পড়িবে, না মোট মোটা কিতাব মুখস্থ করিবে? এখন হইতে সে শুধু বিবাহবাড়িতে গিয়া কয়েকটা কলাগাছ পুতিয়া দিবে। এই সামান্ত কাজের দরুণ কেউ তাহার দিকে ফিরিয়াও তাকাইবে না। কিন্তু তার অত বড় জাতি, সেটা নষ্ট হইল কেন? এ ত সাংঘাতিক কথা।
—তিয়াস লাগিল, একগেলাস পানি খাইল, আর জাতি গেল!
‘গেল ত!’
‘কেনে গেল!’
‘কেনে জানি না। কিন্তুক গেল।’
—গেল যে, তাই বা সে জানিতে পারিল কি করিয়া!
বড় মিস্ত্রী চুপ করিয়া রহিল। ছোট মিস্ত্রিদের একজন রাগিয়া উঠিল : ভারী ত চাষার ছেলে, পাঁচন হাতে গরু রাখিবে, তার কথার কেমন প্যাঁচ দেখ না।
সে-কথায় কান না দিয়া রমু বলিল, আমার হাতের পানি খাইলে তোমার জাত যাইবে?
শক্ত প্রশ্ন। বড় মিস্ত্রী চট করিয়া মীমাংসা করিয়া বলিল, না।
—-আমার মার হাতের পানি খাইলে?
–না।
-—আমার বাপের হাতের? নানার হাতের?
–না, না, না। তোমাদের সাথে জানা-পরিচিতি হইয়া গিয়াছে।
—জানা-পরিচিতি হইলে জাত যায় না?
–না।
–তবে বুরুজ ঠাকুরের যদি ঐ মালীর-ছেমরীর সাথে জানাপরিচিতি হইয়া যাইত তবে পানি খাইলে জাত যাইত না?
বড় মিস্ত্রী হাঁ না কিছুই বলিল না।
তাহাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া রমু সহসা হাততালি দিয়া হাসিয়া উঠিল।
বড় মিস্ত্রী বিরক্ত হইয়া বলিল, হাসিলে যে।
—হাসিলাম একটা কথা মনে করিয়া। কথাটা এই, আমার ছোঁয়া পানি খাইলে তোমাদের যদি জাত যাইত তবে বেশ হইত।
বড় মিস্ত্রীর দুই চোখ বিস্ফারিত হইল, কি রকম?
—বুরুজ ঠাকুরের মত তোমাদিগকেও আমাদের বাড়িতে থাকিয়া যাইতে হইত।
বড় মিস্ত্রী ঠকিয়া গিয়া কাজে মন দিল।