৬. প্রতিমাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে

প্রতিমাকে নিয়ে আমি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে এসেছি। ওয়েটিং রুমে বসে আছি। প্রতিমা আমাকে বলেছে, আমি এমন সব কথা বলব যে সাইকিয়াট্রিস্টের মাথা ভনভন করে ঘুরবে।

আমি বললাম, তাতে লাভ কী?

কাউকে ভড়কে দিতে পারলে আমার ভালো লাগে, এইটাই লাভ। আমি তোর আহসান সাহেবকে কী পরিমাণ ভড়কে দিয়েছি এটা জানিস?

না।

তোর মনে নাই তোকে উনি সাভারে নিতে চাইলেন? তুই রাজি হলি না, গটগট করে চলে গেলি। আর আমি উনার গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার এক কথা–চাচা, আমি সাভার যাব। আমাকে নিয়ে যেতেই হবে।

আমি শুরু করলাম কান্না। উনি পড়লেন মহাবিপদে। গাড়ির চারপাশে লোক জমে গেল। সবাই জানতে চায় ঘটনা কী?

তারপর?

তারপর কী হলো বলব না। তুই তোর আহসান সাহেবের কাছে জেনে নিস। তবে এই লোক কিন্তু ভালো। একজন ভালো মানুষকে খারাপ বানানো খুব শক্ত।

খারাপ বানানোর চেষ্টা করেছিলি?

হুঁ।

কীভাবে চেষ্টা করলি?

 বলব না।

 তুই এরকম কেন?

প্রতিমা হাসতে হাসতে বলল, জানি না কেন? সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাচ্ছি, উনি হয়তো বলতে পারবেন আমি এরকম কেন।

আমি বললাম, সাইকিয়াট্রিস্টকে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা না করে চিকিৎসা নিয়ে তুই ঠিক হয়ে যা।

প্রতিমা বলল, আমি ঠিক হব না। যা আছি তারচেয়ে আরও খারাপ হব। একসময় পাগল হয়ে যাব। পাগল হয়ে গুলিস্তানে লাঠি হাতে ট্রাফিক কনট্রোল করব।

এই বলেই প্রতিমা উঠে দাঁড়াল। কঠিন গলায় বলল, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাব। চল বাসায় যাই।

দেখাবি না কেন?

প্রতিমা বলল, সাইকিয়াট্রিস্ট যা জানে আমি তারচেয়ে বেশি জানি এইজন্যে দেখাব না। আমার কথা কি তোর বিশ্বাস হয়?

হয়।

আমরা সাইকিয়াট্রিস্টের ঘর থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠতে যাব, হঠাৎ দেখি আহসান সাহেবের গাড়ি। তিনি আমাদের জন্যে গাড়ি পাঠিয়েছেন। আমি যে প্রতিমাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে আসব তা তাঁকে জানাই নি। আমার মনে হয় উনার সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধু জানিয়েছেন।

আমরা দুই বন্ধু তাঁর গাড়িতে উঠে অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালাম। প্রতিমা সারাক্ষণই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদল। কেন কাঁদল আমি জানি না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *