নিমবাগান মাজারে এসে আলি কোন নতুনভাবে গুছিয়ে নিতে আরম্ভ করেছে। মাজার প্রাঙ্গণেই একটা বড়োসড়ো চালা ঘর উঠিয়ে নেয়। নাম ফেটে গিয়েছিলো। তাই বেড়ার ঘরে টিনের ছাউনি দিতে বিশেষ অসুবিধে হলো না। নিমবাগান মোটামুটি সম্পন্ন এলাকা। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা খোরাসানি বাবার মতো ওরশটিকে আলি কেনানের একটা বিশেষ কেরামতি বলে ধরে নিয়েছে। সুতরাং আলি কেনানের কোনো দাবি, কোনো অভাব তাদের কাছে অপূর্ণ থাকার কথা নয়।
এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা আলি কেনানের শরীরে ভর করেছে। গায়ে গতরে মেদও জমতে আরম্ভ করেছে। সর্বক্ষণ তার হাসফাঁস লাগে, কিন্তু নিমবাগানের অধিকাংশ মানুষ আলি কেনানের এই আকস্মিক শারীরিক পরিবর্তনকে তার পবিত্রতার চিহ্ন বলে মনে করতে থাকে। এটাও খুব আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। এই দেশের অলস নিষ্ক্রিয় মানুষেরা সবসময়ে সাধুপুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। কিন্তু আলি কেনানের মনের ঝড় থামে না। মিরপুর মাজারের বুড়ো মানুষটির কথা তার মনে হানা দিয়ে জাগ্রত হয়। তার ভেতর একটা আলো ছিলো। খুব নির্জন মুহূর্তে সে অনুভব করতো, ধোঁয়া বাষ্পের গভীরে অন্তরে ঘৃতের প্রদীপের মতো কি একটা জ্বলছে। এখন সে অনুভব করে সে আলোটা আর তার ভেতরে নেই। নতুন কর্মের প্রেরণা তাকে আর তাড়িত করে না। চোখের জলে তাকে স্বীকার করতে হয়, মানুষের মধ্যে আসমানের মতো উঁচু, পর্বতের মতো দৃঢ় কতিপয় বস্তু আছে, সারা জীবন সন্ধান করলেও সেগুলোর নাগাল সে পাবে না। সে গর্তের জীব গর্তের ভেতরই তাকে থাকতে হবে। তবু আলি কেনান ভেবে অবাক হয়, তার মতো মানুষের মনেও এক সময় অমর হওয়ার বাসনা মুকুল মেলেছিলো। আহা তার জীবনের বসন্ত শেষ হয়ে গেছে। অন্তরের আলোতে পথকেটে চলা তার পক্ষে অসম্ভব। এখন থেকে লাঠির ওপর ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। নিজেকে ভারবাহী পশুর মতো মনে হয়। একেকটা দিন আসে আর যায়। সে জড়পিণ্ডের মতো পড়ে থাকে। আগে অন্তর থেকে সে পেতো কর্মের প্রেরণা। সেই প্রেরণার বলে বাইরের জগতে তরঙ্গ সৃষ্টি করতো। অন্তরের আগুন ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসতো। সে আগুনে আত্মাহুতি দেয়ার জন্যে ছুটে আসতো মানুষ। আলি কেনানের জীবন ধারণের সমস্ত উল্লাস অবসিত হয়ে এসেছে।
এভাবে বেঁচে থাকার কোনো মানে সে খুঁজে পায় না। সে অনুভব করে হাড়ে মাংসে অস্থি মজ্জায় সে ভোলার একজন লাঠিয়াল। জীবন তার কাছে একটা উৎসব বিশেষ। এভাবে সে কি করে বেঁচে থাকবে? ভেতর থেকে প্রেরণা আসছে না বলে সে এমনভাবে স্থানুর মতো বসে থাকতে পারবে না। বাইরে থেকে প্রেরণার সন্ধান করতে হবে। নিজের অন্তরের শৃঙ্খলা বাইরে আরোপ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তাকে বাইরের শৃঙ্খলার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
উনিশশো উনসতুর সাল শেষ হয়েছে। সত্ত্বর সালের মাঝামাঝি অতীত প্রায়। বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনটি ভীষণ বেগবান হয়ে উঠেছে। জয়বাংলা ধ্বনির একাধিপত্য গোটা দেশটিকে ঢেকে রেখেছে। সকালে জয় বাংলা, দুপুরে জয় বাংলা, সন্ধ্যেয় জয়বাংলা, এমনিক রাত্রির গভীর অন্ধকারে জয়বাংলা ধ্বনি কামানের গোলার মতো ফেটে পড়ে। যে শিশুর মুখে সদ্য কথা ফুটতে আরম্ভ করেছে, মা বাবা উচ্চারণ করার আগে জয়বাংলা শব্দ দিয়ে কথা বলা শুরু করে।
আলি কেনান চিন্তা করে দেখলো এটা একটা সময় এবং সুযোগ বটে। এই তীব্র স্রোতের খর তরঙ্গে সে ভেসে পড়তে পারে। এই প্রচণ্ড ধারাস্রোত তাকে টেনে টেনে নিয়ে যাবে। এই জয়বাংলা ধ্বনির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার একটা ব্যক্তিগত কারণও সে নিজের মধ্যে আবিষ্কার করে। গভর্ণর সাহেবকে সে একবার প্রাণে বাঁচিয়েছিলো। আর সেই গভর্ণর সাহেবই তাকে রাস্তায় উলঙ্গ করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। আলি কেনানের মনের ভেতর তাঁর প্রতি একটা ঘৃণা শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে আছে। এতোদিন সেকথা মনেই হয়নি। এখন চিন্তা করে দেখলো এই জয় বাংলার মানুষদের সঙ্গে সে যদি নেমে পড়ে তাহলে একটা প্রতিশোধও নিতে পারবে। গভর্নর সাহেব নিজেও এখন গভর্ণর হাউজে নেই। আইয়ুব তাকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা থেকে বাধ্য হয়ে নিজেও সরে গেছেন। তবু গভর্ণর সাহেব গুলশানের রাজবাড়ির মতো বাড়িতে বহাল তবিয়তে আছেন। আলি কেনানের একান্ত ইচ্ছে একবার গভর্ণর সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়াবে। বলবেন, আমার নাম আলি কেনান। একদা আপনি যাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পেছনে আলখেল্লা পরা যাদের দেখছেন। এরা সবাই আমার শিষ্য। এখন আমি জয়বাংলার দরবেশ। আমার কথায় এরা প্রাণটি পর্যন্ত বিলিয়ে দেবে। কিন্তু আপনার কথায় এই বাংলাদেশের একটা কুত্তাও ঘেউ করবে না। এই খবরটি জানিয়ে দিতে কষ্ট করে আপনার কাছে এলাম।
আলি কেনান এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মনের বিমর্ষতা কেটে গেছে। তাকে ভেবেচিন্তে আর কাজ খুঁজে বের করতে হয় না। কাজ পায়ে হেঁটে তার কাছে এসে হাজির হয়। নিমবাগানের ছেলেরা মাজার প্রাঙ্গণে অফিস করছে। অধিক রাতে রাস্তায় পোস্টার লাগিয়ে কিংবা মিছিল করে আর ঘরে ফেরা সম্ভব হয় না। তাকে ডেকে বলে, দরবেশ বাবা বাড়ির দরোজা বন্ধ হয়ে গেছে। আজ রাতে তোমার এখানে ঘুমোতে হবে। আর থাকলে কিছু খেতে দাও। আলি কেনান বলে,
তরা যত ইচ্ছা খা। আর যতক্ষণ মন লয় ঘুমাইয়া থাক। বাবার দরজা তোগো লাইগ্যা কুনুদিন বন্ধ অইবো না। কেবল হপ্তায় হপ্তায় চাইল, ডাইল বাজার থন পাঠাবি। গভীর রাতে আলি কেনানের আস্তানায় রান্না চড়ানো হয়। ছেলেরা আলুর ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তারা বেরিয়ে যায়। দুপুরে আরেক দল আসে। তারপর আরেক দল। আলি কেনানের আস্তানাটি জয়বাংলা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। সে এক রোখা স্বভাবের মানুষ। দশজনের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে কাজ করার বিশেষ অভ্যেস তার নেই। এই সমস্ত পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান ধমক দেয়, চোখ রাঙায়। মাঝে মাঝে আলি কেনানের ধৈৰ্য্যচুক্তি ঘটে। সে সব সময় হুকুম দিয়ে অভ্যস্ত এবং হুকুম পালন করতে হলেও একজনের বেশী কর্তা সহ্য করতে পারে না। আগে গভর্ণর সাহেবের হুকুম মেনে কাজ করতে পারলে খুশি হতো। শেখ সাহেবকে সে আজকাল পছন্দ করতে আরম্ভ করেছে। কেননা শেখ সাহেব গভর্নর সাহেবের সঙ্গে টক্কর দিয়ে তাকে চিৎ করে ফেলেছেন। একটা বাঁশের মাথায় উঁচু করে শেখ সাহেবের ছবি টাঙিয়েছে বটে, কিন্তু তাঁর সমস্ত কাজকর্ম মেনে নিতে পারে না।
আলি কেনান আগে গভর্ণর সাহেবকে নানা বিষয়ে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই শেখ সাহেবকেও নানা বিষয়ে পরামর্শ দেবার অধিকার আছে। কিন্তু শেখ সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ার ক্ষীণতম সম্ভাবনাটিও আলি কেনান দেখতে পায় না। নিজের ওপর বিরক্ত হয়। শেখ সাহেব তাকে একি পরিস্থিতির মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েছেন। দুধের বাচ্চাও তাকে হুকুম করে, দরবেশ বাবা এটা করো ওটা করো। তার বর্তমান দুর্ভাগ্যের জন্য মনে মনে শেখ সাহেবকেই দায়ী করে। মনকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে, আলি কেনান যখন তর নিজের ভিতরে নূর নাই বাইরের ধুয়া থেইক্যা নিঃশ্বাস টানতে অইবো। গোস্বা টোস্থা কইরা আর কি লাভ?
শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তার একটা সাংঘাতিক অনুযোগ আছে। শেখ সাহেব জয়বাংলা করতে চান ভালো, বিহারী পাঞ্জাবিদের খেদিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে চান আরো ভালো। সেই জন্যই তো আলি কেনান তাঁর দলে যোগ দিয়েছে। কিন্তু তিনি ফকিরনির পোলাদের বুকে সাহস দিয়ে এমন বেয়াদব করে তুলেছেন, এটা ঠিক না। ফকিরনির পোলারা ফকিরনির পোলাই। যেহেতু নিজেকে জয়বাংলার দরবেশ বলে ঘোষণা করেছে, তাই আলি কেনান মনে করে শেখ সাহেবের সঙ্গে রাগ, অভিমান করার অধিকার তার আছে। আলি কেনান বুঝে নিয়েছিলো ছোকরাদের মন জুগিয়ে চলা তার কর্ম নয়। তারা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তার কোনো হদিশ নেই। সে নিয়মিত সংবাদ পাচ্ছে এখানে গুলি হচ্ছে, ওখানে ধরপাকড় চলছে। পাকিস্তান থেকে উড়োজাহাজে করে লাখে লাখে সৈন্য আসছে। কখন কি ঘটে বলা যায় না। আলি কেনান হুঁশিয়ার মানুষ। তাছাড়া মনের গভীরে এই বাঙালিদের সে মানুষ বলে মনে করে না। গভর্ণর হাউজে থাকার সময় এই একটা জিনিস তার উপলব্ধির মধ্যে গেঁথে গিয়েছিলো যে পাকিস্তানিরাই হলো আসল মানুষ। আর বাঙালিরা সব চুতিয়া। কেউ তাকে বলে দেয়নি। কিন্তু এই ধারণাটি তার মনে জন্ম নিয়েছে। পরিস্থিতির চাপে নিজেকে জয়বাংলার দরবেশ ঘোষণা করেছে বটে। কিন্তু জয়বাংলার মানুষদের সঙ্গে সে অধিকদূর যেতে চায় না।
একদিন আলি কেনান নিমবাগানের প্রভাবশালী কজন ছোকরার সামনেই শিষ্যদের কাছে বললো :
বাবা বু আলি কলন্দর আবার স্বপ্ন দর্শন দিয়া কইছেন, বিহারী আর পাঞ্জাবীরা নাপাক জন্তু। তাদের বাংলার মাটি থেইক্যা তাড়াইয়া দেওন লাগবো। সে জন্য বাবায় কইছেন জয় বাংলার নিশান নিয়ে মাজারে মাজারে যাওয়া লাগবে। শিষ্যরা বু আলি কলন্দরের স্বপ্নের ব্যাপারে কোনোদিন কোনো আপত্তি করেনি। আজকেও করলো না। আলি কেনান বললো, বাজান আরো একটি কথা কইছেন। শিকল পরা বাদ দিয়া জয় বাংলার নিশান বইতে অইবো এবং সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়া যাইতে অইবো। সবদিক রক্ষা পাওয়ার মতো এরকম একটি মৌলিক পরিকল্পনা তার মাথায় এসেছে, সে জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিলো।
ছোকড়াদের সঙ্গ ত্যাগ করে জয় বাংলার পতাকা এবং শেখ মুজিবের ছবি নিয়ে মাজারে মাজারে ঘুরতে আরম্ভ করলো। আলি কেনান বুঝতে পারেনি যে এই ছোকরাদের সঙ্গে থেকে তার শিষ্যদের মধ্যেও একটা ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। মাজার পরিক্রমার দ্বিতীয় দিনে অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে তাকে আবিষ্কার করতে হলো একসঙ্গে চারজন শিষ্য কোথাও কেটে পড়েছে। অনেক খোঁজ খবর নিয়েও কোনো কুল কিনারা করতে পারলো না। এখন তার সঙ্গে শুধু ফুলতলির কিশোরটি আছে। আলি কেনান তার এই দুর্ভাগ্যের জন্য পুরোপুরি বর্তমান পরিস্থিতিকেই দায়ী করলো। রাগে দুঃখে অপমানে তার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। সে রাতে আর নিমবাগানে ফিরতে প্রবৃত্তি হলো না। মিরপুর মাজারেই রয়ে গেলো।
সন্ধ্যে গড়িয়ে গেলো। মিরপুর মাজারের সেই বুড়োটির সঙ্গে আবার তার সাক্ষাৎ হলো। বুড়ো পরিহাস মিশ্রিত ভাসায় জিগগেস করলো, অ মিয়া, দেখছি শিকল টিকল সব খুইল্যা ফেলাইছ। হাতে কি? আর বুকে ঝুলাইছ এইড্যা কি? আলি কেনান বললো :
হাতে জয়বাংলার নিশান আর বুকে মুজিবরের ফটো। বুড়ো বললো, মিয়া ভং চং ত বেশ করতাছ। টের পাইবা আর দেরি নাই।
সেটা ছিলো পঁচিশে মার্চের রাত। সে রাতেই নিথর নিদ্রিত ঢাকা নগরীর বুকে বন্দুক কামান, ট্যাংক নিয়ে প্রচণ্ড হিংস্রতায় পাকিস্তানি সৈন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। আলি কেনান ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। সে মনে করেছিলো, পাকিস্তানি সেনা রাস্তায় মশাল জ্বালিয়ে একটা মানুষেরই খোঁজ করছে, তার নাম আলি কেনান। এক নাগাড়ে চারদিন মিরপুর মাজারে অবস্থান করতে হলো আলি কেনানকে। পঞ্চম দিন পাকিস্তানি সৈন্যদের আক্রমণ ধারা একটু শিথিল হতেই সে মনস্থ করলো নিমবাগান ফিরে যাবে। ডানে বাঁয়ে খোঁজ করলো কিন্তু ফুলতলির কিশোর শিষ্যটির কোথাও দেখা পেলো না। সুতরাং একাই তাকে পথে বেরোতে হলো।
এই পাঁচদিনে শহরের কি চেহারা হয়েছে দেখে তার কান্না পাচ্ছিলো। বাড়ির ছাদে আর জয় বাংলার নিশান ওড়ে না। রাস্তায় মানুষ জনের কোনো চিহ্ন নেই। কী ভূতুড়ে পরিবেশ। এখানে ওখানে মানুষের লাশ পড়ে আছে। মিলিটারী আর সাঁজোয়া গাড়ি রাস্তায় টহল দিচ্ছে। আলি কেনান উপলব্ধি করলো শেখ মুজিবরের বারোটা বেজে গেছে। এই অবস্থা হবে সেটা সে জানতো। ফকিরনির পোলাদের নিয়ে শেখ মুজিব রাজা হতে চেয়েছিলো।
সে যখন নিমবাগান মাজারের কাছে এলো তার চোখ ফেটে পানি এসে গেলো। তার থাকার ঘর এবং জয়বাংলার অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে। পোড়া মাটির গন্ধ তার নাকে এসে লাগলো। সবশেষে মাজারের ভেতরে ঢুকে আর কি হবে। উল্টোদিকে পা বাড়িয়েছিলো– পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ফিরে দাঁড়ালো। সেই পুরোনো খাদেম। চোখে প্রতিহিংসা চকচক করছে : অ মিয়া কই যাও, আইয়ো ভেড়ার গোশত খাইয়া যাও। ভেড়া পাকজন্তু, আমাগো নবী করিম ভেড়ার গোশত খাইতে পছন্দ করতেন। আলি কেনান ভালো করে তাকিয়ে দেখে শ্বেত করবী গাছের নিচে হোগলা বিছিয়ে বিশ, পঁচিশ জন মানুষ খেতে বসেছে। তাদের টুকরো টুকরো, কথা বার্তা তার কানে এলো। উর্দুতে কথাবার্তা বলছে। খাদেম মুহম্মদপুর থেকে বিহারীদের ডেকে এনে তার ভেড়া দুটো জবাই করে খাওয়াচ্ছে। আর ছমিরন বাসন পত্তর ধুয়ে দিচ্ছে। সবতো শেষ। আর কেননা, সে উল্টোদিক ফিরে হাঁটতে আরম্ভ করলো। কিছু দূর যেয়ে সে দেখে একটি রোগা ঘেয়ো কুকুর তার সঙ্গে সঙ্গে আসছে। সেই কুকুর ছানাটি যেটাকে সে একদিন পেটে লাথি দিয়ে ফেলে চলে গিয়েছিলো।